আবুধাবিতে প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহীর প্রেসিডেন্ট শেখ মহম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান-এর বৈঠক হয় ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ তারিখে। আমিরশাহীর প্রেসিডেন্ট প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান এবং ১৪ ফেব্রুয়ারি দুবাইতে ওয়ার্ল্ড গভর্নমেন্ট সামিটে বক্তব্য রাখতে রাজি হওয়ায় ধন্যবাদ জানান।
৯ বছরে এই নিয়ে সাতবার আমিরশাহী গেলেন প্রধানমন্ত্রী। এর আগে, শেষবার যান ২০২৩-এর পয়লা ডিসেম্বর দুবাই-এ আয়োজিত রাষ্ট্রসংঘের জলবায়ু সম্মেলন সিওপি-২৮-এ যোগ দিতে। সেবারও সম্মেলের ফাঁকে আমিরশাহীর প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তাঁর আলাদা করে কথা হয়। জলবায়ু সম্মেলনে আমিরশাহীর দক্ষ সভাপতিত্বের ভূয়সী প্রশংসা করে ভারত। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ওই সম্মেলনের ‘ট্রান্সফর্মিং ক্লাইমেট ফিন্যান্স’ অধিবেশনে যোগ দেন। আমিরশাহীর প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিনি যৌথভাবে ‘গ্রিন ক্রেডিটস প্রোগ্রাম’-এর আয়োজন করেন। আমিরশাহীর প্রেসিডেন্ট গত ৮ বছরে চারবার ভারতে এসেছেন। তাঁর সাম্প্রতিকতম ভারত সফর এবছর ৯ থেকে ১০ জানুয়ারি। সেসময় ভাইব্রেন্ট গুজরাট গ্লোবাল সামিটে মুখ্য অতিথি হিসেবে তিনি যোগ দেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে সাক্ষী থাকেন বিনিয়োগ সহযোগিতা বিষয়ক একাধিক দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষরের।
এবারের বৈঠকে দুই নেতা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন। ২০১৭ সালে আমিরশাহীর প্রেসিডেন্টের ভারত সফরের সময় দুদেশের সম্পর্ক সার্বিক কৌশলগত অংশীদারিত্ব স্তরে উন্নীত হয়েছে। পারস্পরিক সহযোগিতার ক্রমবর্ধমান বিস্তারে সন্তোষ প্রকাশ করেন দুই নেতা।
আমিরশাহীর প্রেসিডেন্ট শেখ মহম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান এবং প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী আরও কয়েকটি চুক্তি স্বাক্ষরের সাক্ষী হন। সেগুলি হল –
I. দ্বিপাক্ষিক বিনিয়োগ চুক্তি
II. ভারত – মধ্য প্রাচ্য – ইউরোপ ইকনমিক করিডর (আইএমইইসি) সংক্রান্ত আন্তঃসরকার কাঠামো চুক্তি
III. ডিজিটাল পরিকাঠামো প্রকল্পে সহায়তা সংক্রান্ত সমঝোতাপত্র
IV. বিদ্যুৎ আদান-প্রদান এবং বাণিজ্য সংক্রান্ত সমঝোতাপত্র
V. গুজরাটের লোথালে ন্যাশনাল মেরিটাইম হেরিটেজ কমপ্লেক্স সংক্রান্ত সমঝোতা
VI. আমিরশাহীর জাতীয় গ্রন্থাগার ও প্রত্নশালা এবং ভারতের জাতীয় প্রত্নশালার মধ্যে সমঝোতা
VII. ভারতের তাৎক্ষণিক লেনদেন মঞ্চ (ইউপিআই) এবং আমিরশাহীর সমধর্মী মঞ্চ এএএনআই-এর মধ্যে সংযুক্তি সংক্রান্ত সমঝোতা
VIII. ভারতের রূপে কার্ড এবং আমিরশাহীর জেএওয়াইডাব্লুএএন-এর মধ্যে আন্তঃসংযুক্তি সংক্রান্ত সমঝোতা।
প্রধানমন্ত্রীর সফরের আগে রাইটস লিমিটেড - আবুধাবি পোর্টস কোম্পানি এবং গুজরাট মেরিটাইম বোর্ড – আবুধাবি স্পোর্টস কোম্পানির মধ্যে দুটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
২০২২-এর পয়লা মে ভারত ও আমিরশাহীর মধ্যে সার্বিক অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি কার্যকর হওয়ার পর দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের প্রসার হয়েছে অনেকখানি। ২০২২-২৩-এর হিসাব অনুযায়ী আমিরশাহী ভারতের তৃতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার এবং ভারতের রপ্তানির প্রশ্নে দ্বিতীয় বৃহত্তম গন্তব্য। সংযুক্ত আরব আমিরশাহীর দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার হল ভারত। ২০২২-২৩-এ দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ দাঁড়ায় ৮৫০০ কোটি মার্কিন ডলার। ২০৩০ নাগাদ এই পরিমাণ ১০,০০০ কোটি মার্কিন ডলারে পৌঁছোবে বলে আশাবাদী দুই নেতা। ২০২৩-এর হিসেবে ভারতে লগ্নিকারী দেশগুলির তালিকায় আমিরশাহীর স্থান চতুর্থ। প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগের প্রশ্নে তার স্থান সপ্তম। আমিরশাহী – ভারত সিএপিএ পর্ষদ (ইউআইসিসি)-এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের বিষয়টিতেও দু-দেশের নেতা গুরুত্ব আরোপ করেন।
বহুপাক্ষিক বাণিজ্যেক মঞ্চগুলির সুষ্ঠু পরিচালন সারা বিশ্বের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির অন্যতম শর্ত বলে মনে করেন আমিরশাহীর প্রেসিডেন্ট ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী। ২৬-২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ আবুধাবিতে হতে চলা বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার মন্ত্রিপর্যায়ের বৈঠক এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বলে দুজনেই মনে করেন।
জেবেল আলি-তে ভারত মার্ট গড়ে তোলার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন দুদেশের নেতা। এর ফলে, সার্বিক অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি আরও কার্যকর হয়ে উঠবে এবং সেক্ষেত্রে জেবেল আলি বন্দরের উপযুক্ত ব্যবহার হবে বলে মনে করা হচ্ছে। এই ভারত মার্ট ভারতের ক্ষুদ্র ও মাঝারি সংস্থাগুলির পণ্য মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা এবং ইউরেশিয়ায় পৌঁছে দেওয়ার পক্ষে সহায়ক হবে।
শক্তি ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক অংশীদারিত্ব আরও প্রসারিত করা নিয়ে দুই নেতার মতবিনিময় হয়। সম্প্রতি দুদেশের মধ্যে এসংক্রান্ত দুটি দীর্ঘমেয়াদী চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এই চুক্তি দুটির আওতায় এডিএনওসি গ্যাস এবং ভারত অয়েল কর্পোরেশন লিমিটেড-এর মধ্যে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ ব্যবস্থা গড়ে উঠবে। বিদ্যুৎ সরবরাহ ক্ষেত্রেও পারস্পরিক বোঝপড়া আরও বাড়ানো নিয়ে দুই নেতার কথা হয়। এসংক্রান্ত দ্বিপাক্ষিক চুক্তির ফলে সিওপি ২৬-এ প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রস্তাবিত ওয়ান সান ওয়ান ওয়ার্ল্ড ওয়ান গ্রিড ক্রমসূচি জোরদার হবে এবং তৈরি হবে পরিবেশবান্ধব বিদ্যুৎ সংবহন ব্যবস্থা।
আবুধাবিতে বিএপিএস মন্দির গড়ে তোলায় আমিরশাহীর প্রেসিডেন্টের ব্যক্তিগত উৎসাহ ও সহায়তার জন্য প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী তাঁকে ধন্যবাদ জানান। পুরাতত্ত্ব ও সংস্কৃতি ক্ষেত্রে পারস্পরিক বোঝাপড়া দুই দেশের সম্পর্ককে আরও গাঢ় করবে বলে তাঁরা মনে করেন।