নরেন্দ্র মোদীর কি বৈশিষ্ট্য
প্রশ্ন উঠতেই পারে, অন্যদেরথেকে মোদীর পার্থক্য কোথায়, কিসে তিনি স্বতন্ত্র। তার সঙ্গে দেখা হলেই এক সহজাতঅনুভূতি আসে যে এই মানুষটা অন্যরকম। এই মনে হওয়ার কথা ছেড়ে দিয়ে স্বাধীন ভারতেরইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায় বেশ কয়েকটি বস্তুনিষ্ঠ কারণ তাকে অসাধারণ করেতুলেছে। ক্ষমতা এবং উৎসাহ-উদ্দীপনা দুই-ই আছে এই নেতার।
আমরা দেখেছি দূরদর্শীচিন্তাভাবনার অধিকারী কিছু নেতা, আমরা দেখেছি খুঁটিনাটি দিকে নজর রাখা কিছুনেতাকে, নরেন্দ্র মোদীর কিন্তু এ দুয়ের-ই এলেম আছে। উঁচুর দিকে তাঁর নজর নিবন্ধথাকলেও, মাটি অর্থাৎ তৃণমূল স্তরের সংগে তাঁর বাঁধন খুবই আঁটোসাটো। তাঁকেস্বতন্ত্র ও বিশিষ্ট করে তোলার পিছনের কিছু গুন আমরা খতিয়ে দেখব এখানে।
এক জননেতা
তিনি যেভাবে মানুষের কাছেপৌঁছে গেছেন তা পেরেছেন ভারতের মাত্র গুটিকয়েক রাজনীতিকই। এটা রাজনৈতিক দাসত্ব নয়,এ এক আবেগসঞ্জাত সমন্বয় যা কিনা নরেন্দ্র সাধারণ মানুষের সঙ্গে গড়ে তুলতে সক্ষমহয়েছেন। তার অনুরাগীদের মধ্যে কে নেই- শহরের বুদ্ধিজীবী থেকে গ্রামের মানুষ,প্রবীণ ও যুবা, পুরুষ-মহিলা, দেশে ও বিদেশে। বিভিন্ন মহাদেশে ছড়িয়ে থাকা বেশিরভাগঅভিবাসী তাকে পছন্দ করে খুব। আর সারা ভারতে বিভিন্ন শ্রেণীর লোকজনের সঙ্গে সংযোগরাখতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি এবং সোশ্যাল মিডিয়াকে তিনি কাজে লাগিয়েছেন অভিনবউপায়ে।
উন্নয়নই ধ্যানজ্ঞান:
নরেন্দ্র মোদীর মনে নিয়ত একভাবনা- উন্নয়ন আর উন্নয়ন। একটা দৃষ্টান্ত উল্লেখ করি, বছর কয়েক আগে গুজরাট বিধানসভানির্বাচনের নির্ঘন্ট ঘোষণা হতে বাকি ছিল মাত্র একমাস তিনি রাজ্যে লগ্নি টাকার জন্যপাড়ি দিয়েছেন সুইজারল্যান্ড। সেভাবেই, ২০১২ সালে ভোট কড়া নাড়ছে প্রায়দোরগোড়ায়, কিন্তু নরেন্দ্র মোদীর চললেন জাপান। সেই সফরের সুবাদে গুজরাট-জাপানঅর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সহযোগিতায় এল জোয়ার। ভোটের এক বছর আগে একজন রাজনীতিকেরকাছে পুননির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় ফিরে আসাটাই স্বাভাবিক ভাবে অগ্রাধিকার। নির্বাচনেরবছরেও নরেন্দ্র মোদীর কাছে কিন্তু রাজনৈতিক কাজকর্মের চেয়ে রাজ্যে লগ্নি আনাটাইবেশি গুরুত্বপূর্ণ।
সমস্যা সমাধানেবিজ্ঞানসম্মত দৃষ্টিভঙ্গি :
যে কোন সমস্যার কিনারা করতেনরেন্দ্র মোদীর কর্মকৌশলের দৌলতেই গুজরাটের এত সাফল্য। প্রথমত বিচ্ছিন্ন করে নয়,তিনি সমস্যাটি দেখেন সার্বিকভাবে। সম্ভাব্য সব দিক থেকে সমস্যাটি বুঝতে তিনিযথেষ্ট সময় দেন, কারণ তার জানা আছে যে কোন সমস্যা ভালোভাবে বুঝেসুঝে উঠলে তার আধাহিল্লে হয়ে গেল। তিনি প্রথমে বেশ ভালো করে শোনেন। তারপর ভাবেন সমাধানের উপায় নিয়ে।তিনি আপাতত কাজ চলার মত কোন পদক্ষেপ করেন না বা সংক্ষেপে সারার কিংবা ওপর ওপর বদলতার অপছন্দ। ভবিষ্যতের পানে তাকিয়ে এবং আমূল রদবদলের মাধ্যমে তিনি স্হায়ী ও দীর্ঘমেয়াদে সমাধানের ভাবনাচিন্তা করেন। তারপর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বেছে ফেলেন। তার নজরথাকে নজরদারি বা দেখভাল করার পন্হাপদ্ধতি ঠিক করার দিকেও। এরপর তিনি হাত দেনরূপায়ণের ব্যবস্হাদিতে।
শুধুমাত্র উপযুক্ত প্রক্রিয়াবাছাই করেই তিনি ক্ষান্তি দেন না, বেছে নেন সংস্হা বা এজেন্সি এবং দক্ষ লোক। সবশেষেএটাও উল্লেখ করা দরকার, নজর রাখা এবং একটানা লেগে থাকার ক্ষমতা তাঁর আছে। তিনিম্যানেজমেন্ট বা ব্যবস্হাপনায় ডিগ্রিধারী নন, কিন্তু তাঁর ভাষণ ও উদ্ভাবনী ক্ষমতাব্যবস্হাপনা শিক্ষায়তনের বিদ্যাকে অতিক্রম করে যায়।
দেশ ও গুজরাটের একোণ ওকোণপ্রচুর ঘোরাঘুরি করার অভিজ্ঞতার সুবাদে তৃণমূল বা নিচের তলার সমস্যাদি বিষয়ে তিনিযথেষ্ট ওয়াকিবহাল। দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দুনিয়াকে চেনা-জানার সুযোগ এবংপ্রচুর পড়াশুনোর দরুন এমন সমস্যার সমাধান খোঁজার সঠিক প্রেক্ষিত ও ধারণা তারআয়ত্তে।
বিস্তর প্রভাবকারীপ্রকল্প :
স্ট্র্যাটেজিস্ট হিসেবে তিনিতড়িদবেগে প্রকল্পের ভাবনাচিন্তা ও তা রূপায়ণ করার এলেম রাখেন, এর সুফল পেয়েছেগুজরাট। মাঝে সাঝে এই ফল দেখার জন্য তাকে অস্হির দেখায়। দেশের বাদবাকি অংশে নদীসংযুক্তির বিষয়টি নিয়ে আজও চলছে বিতর্ক, গুজরাট রাজ্যে খান বারো নদীকে তিনিসাফল্যের সংগে জুড়ে দিয়েছেন। এর ফলে বহু আগে শুকিয়ে যাওয়া নদীতে খেলছে জলের ঢেউ।অনুরূপভাবে, মাত্র তিন বছরের মধ্যে ৩০০ কিমি খাল কাটা, সুজলম-সুফলম প্রকল্পেরাজ্যের রুখো-শুখো এলাকায় জলের বন্দোবস্ত, ৩০ মাসে জ্যোতিগ্রাম কর্মসূচির আওতায়৫৬৫৯৯ কিমি নতুন বিদ্যুৎ পরিবাহী লাইন পাতা ও ১২৬২১টি ট্রান্সফর্মার বসানোয় উপকার হয়েছে১৮ হাজারের বেশি গ্রাম এবং ৯৬৮১-টি শহরতলি-টোলার। রাজ্যজুড়ে হয়েছে জল ও গ্যাস গ্রিডেরব্যবস্হা, ই — গ্রাম বিশ্বপ্রকল্পের অধীনে সমস্ত গ্রামে মিলছে ব্রডব্যান্ডের সুযোগ। ব্যাপক বহরের প্রকল্পদ্রুত রূপায়নের নজির এসব কর্মসূচি।
বড় ভালো, ছোটও ভালো:
বহু কোটি টাকায় বৃহৎ প্রকল্পেরভাবনাচিন্তা ও রূপায়ণে দড় হলেও, তিনি ছোটখাট উদ্যোগ বা স্হানীয় প্রযুক্তিকেঅবহেলা করেন না। তাঁর কথা : ‘ বিজ্ঞান বিশ্বজনীন হওয়া উচিত, তবে প্রযুক্তি হবে স্হানীয় ’ । জলের ক্ষেত্রে, তিনি বোরি বাঁদের মত স্হানীয়পদ্ধতিকে (খালি চটের বস্তায় বালি ও পাথর টুকরো ভরা এবং এসব বস্তা পেতে জলের প্রবাহনিয়ন্ত্রণ) ছড়িয়ে দিতে পেরেছেন। খামার পুকুরের জনপ্রিয় হয়ে ওঠার মূলেও তিনি।ভাইব্র্যান্ট বা চনমনে গুজরাট শীর্ষ সম্মেলনের সময় আলোচনাচক্রে তিনি আর্ন্তজাতিকদক্ষতার দিকে নজর দেওয়ার পাশাপাশি স্হানীয় চাষির অভিজ্ঞতা এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষাকেওউ ৎসাহ যোগান, শোনেন সরকারি কর্মীদের মতামত এবং সাধারণ মানুষের কাছ থেকে নিত্য শশ চিঠি ও ই-মেল মারফত পাওয়া ভাবনাচিন্তা ও মতামত খুঁটিয়ে দেখেন।
রাজনীতিরনিয়ন্ত্রণমুক্ত প্রশাসন:
তিনি বস্তুনিষ্ঠ একসিদ্ধান্তকার। রাজনৈতিক খাই-এর সঙ্গে তিনি প্রশাসনের বিচক্ষণতাকে গুলিয়ে ফেলেন না।প্রশাসনিক কোন সিদ্ধান্তের রাজনৈতিক পরিণামের কথা মনে করিয়ে দিলেও তিনিবস্তুনিষ্ঠতার পক্ষ নেন। এটাই নিজের পায়ে দাঁড়াতে, পেশাদারিত্বের সঙ্গে এবংবিশ্বসেরা রীতিনীতি মেনে কাজ করতে সাহায্য করেছে গুজরাট প্রশাসনকে। রাজ্যপ্রশাসনের পক্ষে সাধারণত আবশ্যিক না হলেও আইএসও শংসাপত্র নিয়েছে গুজরাট সরকারেরবেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান।
মানুষজনের মন বোঝা :
শ্রী মোদী পিছিয়ে পড়াসম্প্রদায়ের মানুষ এবং তিনি উঠে এসেছেন নিজের রাজ্য গুজরাটের এক পশ্চাৎপদ অঞ্চলথেকে। কম বয়সে, সাধারণ লোকের মত তাকেও পড়তে হয়েছে বেশ কিছু সমস্যার মুখে, বিশেষতজল ও বিদ্যুতের বেলায়। এসব ক্ষেত্রে কিছু করার মওকা মেলায়, সমস্যা সমাধানেব্যবস্হাদির পরিকল্পনা ও ডিজাইন বা ছক কষতে তিনি খুব উদ্যম নিয়ে কৌশলগতভাবেঝাঁপিয়ে পড়েছেন।
সবার অন্তর্ভুক্তিরবিকাশ :
শিল্প ও পরিকাঠামো উন্নয়নেবেশি নজর এবং পিছিয়ে পড়া অঞ্চল ও শ্রেনীর প্রতি তেমন একটা মনোযোগ না দেওয়ার একটাসমালোচনা প্রায়ই ওঠে তার বিরুদ্ধে। এর চেয়ে বড় ভুল হতে পারেনা আর কিছু।রাজ্যজুড়ে জ্যোতিগ্রাম কর্মসূচি চলার সময়, তিনি কোন বিশেষ অঞ্চল বা শ্রেণি বাছাইকরেননি, সবাই এর অন্তর্ভুক্ত। রাজ্যে গ্যাস গ্রিড এর ব্যবস্হা সমাজের কোন বিশেষঅংশের কথা ভেবে হয়নি, তা সবার জন্য। বনবন্ধু যোজনা, সাগরখেড়ু যোজনা, গরিব সম্রুদ্ধিযোজনার মত বড়সড় কর্মসূচি ঘোষণা করা হয় বিশেষত অসুবিধাগ্রস্ত মানুষের দিকে লক্ষ্যরেখে ; তবে এসব প্রকল্পেও সেইঅঞ্চলে সমাজের কোন অংশকে বাদ দেওয়া হয়নি। তিনি কাজ করেন সাড়ে পাঁচ কোটি গুজরাটিরসবার জন্য।
প্রশাসন ও উন্নয়নে জনগণের অংশগ্রহণ :
মানুষেরমধ্যে বড় হয়ে এবং কাজ করে, তার দৃঢ় ধারনা জনগণ হচ্ছে পরিবর্তনের সত্যিকারপ্রতিনিধি। তিনি বলেন যে উন্নয়ন কর্মসূচিকে গণ-আন্দোলনের রূপ দিতে পারলে তারপ্রকৃত ফল উপভোগ করা যাবে। কিছুটা হালকা সুরে তার কথা, “ জন্মাষ্টমীর মাঝরাতে লোকজনকে মন্দিরে জড়ো হওয়ার জন্য থোড়াই কোন সরকারিনির্দেশ আছে ”!
এক স্ট্রাটেজি হিসেবে তিনি তাই জনগণকে সামিল করেন উন্নয়ন কর্মসূচিতে। রাজ্যজুড়ে বৃষ্টির জল জমানোর লাখ লাখ স্ট্রাকচার সৃষ্টি, কৃষি মহো ৎসব এবং গুজরাটেশিশুকন্যার লেখাপড়ার জন্য কন্যাকেলবানী যাত্রা হচ্ছে সরকারি প্রকল্পকে মানুষেরঅংশগ্রহণের মাধ্যমের গণ-আন্দোলনের রূপ দেওয়ার সেরা দৃষ্টান্ত।
শাসনকে সহজ, কার্যকরও স্বচ্ছ করা :
তিনি বলে আসছেন “ ন্যূনতম শাসন হচ্ছে সেরা শাসন ” । এই উদ্দেশ্যে প্রশাসনকে সহজ-সরল ও কার্যকরী করারজন্য তিনি কাজে লাগিয়েছেন তথ্য প্রযুক্তিকে। ২০০১ সালে বৈদ্যুতিক শাসন এবংতথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর পরিষেবায় যে রাজ্যের হাল আদৌ কহতব্য ছিলনা তা আজবৈদ্যুতিক-শাসনে সেরার তকমাধারী। তথ্য প্রযুক্তি শিল্পের স্বার্থের নিমিত্ত নয়,সরকারের সঙ্গে কাজকর্মের সময় সাধারণ মানুষকে স্বস্তি-স্বাচ্ছন্দ্য দেওয়াই এর লক্ষ।রাজ্যের অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ অফিস-কাছারিতে খোলা হয়েছে এক-দিন-শাসনকেন্দ্র। এখানথেকে অবিশ্বাস্য কম সময়ে পাওয়া যায় নথিপত্র ও শংসাপত্র। অধুনা আরও এক ধাপ এগিয়ে সবগ্রাম পঞ্চায়েতে কম্পিউটার এবং ব্রডব্যান্ডের বন্দোবস্ত হচ্ছে। বৈদ্যুতিক-শাসনস্বচ্ছতাও আনে বইকি !
নীতি চালিত শাসন :
নরেন্দ্রবলেন যে “ আমার সরকার কোন ব্যক্তির খেয়ালখুশিবা মর্জিমাফিক চলেনা। আমাদের প্রগতি হচ্ছে সংস্কার চালিত, আমাদের সংস্কার নীতিচালিত আর আমাদের নীতিকে চালনা করে জনগণ ” । এই দৃষ্টিভঙ্গি তার আধিকারিকদের এক স্পষ্ট দিশা দেয়, জুতসই ও চটপট সিদ্ধান্তনেওয়ার আস্হা যোগায় এবং ব্যবস্হায় স্বচ্ছতা ও এক ছাঁদ বা অভিন্নতা এনে দেয়।
ক্ষোভ-অভিযোগের সুরাহা :
আম-জনতারঅভিযোগ নিষ্পত্তির দিকে খুব নিষ্ঠার সঙ্গে নজর দেওয়া হয়। গুজরাটের ‘ স্বাগত ’ কর্মসূচি মারফত মানুষের অভাব-অভিযোগ তিনি তদারক করেন নিজে। এরফলে প্রশাসনেএকটা বার্তা পৌঁছে যায়। প্রশাসন এসব ক্ষোভ নিরপেক্ষতা এবং নিষ্ঠার সঙ্গে খতিয়েদেখছে এটা সুনিশ্চিত করেই তিনি ক্ষান্ত হননি, অভিযোগ মীমাংসার ব্যবস্হায় আধুনিকপ্রযুক্তি ব্যবহারের বন্দোবস্তও করেছেন। এর মূল কথা হচ্ছে শুধুমাত্র মুখ্যমন্ত্রীনন, মানুষের এসব ক্ষোভে সাড়া দেওয়া এবং দায়বদ্ধ থাকা উচিত গোটা সরকারি ব্যবস্হার।
নতুন দৃষ্টিভঙ্গী:
জনগণনরেন্দ্র মোদী ও প্রশাসনের সামনে উপস্হিত বেশ কিছু সমস্যা মেটানোর অভিনব উপায় বাতলিয়েছেনযা কিনা এতবার যাব ৎ চিন্তা করে উঠতে পারেননি প্রশাসন এবং ব্যবস্হাপনা বিশেষজ্ঞরাও।
ভূকম্পনের পর জনগণের কমিটিকেপুনগর্ঠন করে সামিল করা এবং নিয়মকানুনের নিগড়ে বাঁধা আমলা নয়, বরং সংবেদনশীলব্যক্তি হিসেবে তাদের একাজে লাগানো তার অভিনব দৃষ্টিভঙ্গির প্রথম দৃষ্টান্ত।অন্যান্য উদাহরণের মধ্যে আছে আদালত ও জেলে থাকা আসামীর মধ্যে ভিডিও সম্মেলনের মতআধুনিক হাতিয়ার ব্যবহার করে জলদি বিচারের ব্যবস্হা, সান্ধ্য এবং মহিলা আদালত গঠন,পানীয় ও সেচের জন্য বরাদ্দ জলসম্পদ সামলাতে জনগণের কমিটি তৈরি, চিরন্জীবী যোজনা(বিপিএল অর্থাৎ গরিবি রেখার নিচের মহিলাদের সন্তান প্রসবকালে প্রাইভেট স্ত্রীরোগচিকিৎসকদের সঙ্গে চুক্তি) রোমিং রেশন কার্ড, সয়েল হেলথ কার্ড ইত্যাদি ইত্যাদি।
তার নিজের জন্য কোনকিছুই নয় :
ক্ষমতাসীন ব্যক্তিদেরবিরুদ্ধে স্বজনপোষণ ও পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ ওঠে হামেশাই। এ ধরণের অপবাদ এতটুকুছুঁতে পারেন নরেন্দ্র মোদীকে। তিনি এক নিষ্কলুষ ও সৎ ভাবমূর্তির অধিকারী। তারব্যক্তিগত এবং পরিজনদের স্বার্থের দিকে তিনি তাকান না বিন্দুমাত্র। সাধারণ কোনমানুষের জন্য এটা এক নেতিবাচক লক্ষণ হিসেব ভাবা যেতে পারে কিন্তু একজনরাষ্ট্রনেতার এই বৈশিষ্ট্য সমাজের প্রতি অবদান হিসেবে গণ্য হয়। তার কড়াসমালোচকরাও স্বীকার করেন যে সরকারের সব স্তরে কমেছে দুর্নীতির বহর।
দস্তুর অনুযায়ি, মুখ্যমন্ত্রীহিসেবে নরেন্দ্র মোদীর পাওয়া উপহারাদি জমা দিতে হবে সরকারি তোশাখানায়। উপহারসামগ্রী নিলাম করে টাকা জমা পড়বে সরকারি তহবিলে। তিনি এ টাকা কাজে লাগানোর একঅভিনব উপায় বের করেন। নিলামের টাকা পাঠানো হয় কন্যাশিশুদের লেখাপড়ার জন্য গঠিতকন্যাকেলবানী নির্বিতে। এর ফলে তাদের প্রিয় নেতার দ্বারা প্রভাবিত হয়ে মানুষ এইতহবিলের জন্য আজকাল তাকে উপহার দেন লক্ষ লক্ষ টাকার চেক।
ভিন্নভাবে কাজ করা :
গুজরাটে নরেন্দ্র মোদীশাসনের বা মডেল বা ছাঁচের বিকাশ ঘটিয়েছেন তার ভিত্তি হচ্ছে পারফরম্যান্স বা কৃতি,তোষণ-তোয়াজ নয়। বিদ্যুতের উচিত দাম স্হির করার সময় তিনি মেনে নেন পেশাদারপ্রতিষ্ঠান বিদ্যুৎ নিয়ামক কমিশনের পরামর্শ। চাষিদের আন্দোলন সত্ত্বেও তিনি নতিস্বীকার করে সিদ্ধান্ত বদলাননি। বরং আন্দোলনকারীদের আশ্বস্ত করেছেন এই বলে যে তিনিতাদের প্রয়োজন বোঝেন। শুধুমাত্র বিদ্যুৎ নয়, চাষির চাই জল ও। পরের কয়েক
বছরে, তিনি রূপায়ণ করেন সুজলসুফলম এর মত ভূতল জল প্রকল্প। জলতল উঁচুতে তুলতে পারায় সেচের জল মিলছে এখন ঢের কমখরচায়। শহরাঞ্চলে বহু জবরদখলদারকে হটানো হয়েছে সরকারি জমি থেকে। কোনবিক্ষোভ-আন্দোলন নেই, নেই কোন তিক্ততা। মানুষ জানে ভবিষ্যতে এসবের দরুন ভালোই হবেতাদের। এহেন দৃষ্টান্ত এক-আধটা নয়, আছে বেশি কিছু। তাঁর বস্তুনিষ্ঠতা,পেশাদারিত্ব, ব্যক্তিগত সততা, সাধারণ মানুষের সুবিধে-অসুবিধে বোঝার মন তাঁকে করেতুলেছে দেশ-বিদেশের অন্যান্য নেতা থেকে স্বতন্দ্র। উদ্দেশ্যের প্রতি তাঁর দৃঢ়বিশ্বাস ও আন্তরিকতার দৌলতে শুধুমাত্র গুজরাট নয়, গোটা দেশে তিনি জনপ্রিয়। লাগাতারচার বছর তিনি দেশের সেরা মুখ্যমন্ত্রী। সেইসঙ্গে গুজরাটে সবচেয়ে বেশি মেয়াদে থাকারকৃতিত্বও তার ঝুলিতে। তিনি প্রমাণ করেছেন যে “ সুশাসন হচ্ছে ভালো রাজনীতিও বটে ” । শুধু কি তাই, তিনি তোষণের রাজনীতি থেকে বেরিয়ে উন্নয়নমূলক রাজনীতিতে উত্তরণেযুগান্তকারি পরিবর্তন ধারার প্রবর্তক বা স্রষ্টা। নরেন্দ্র মোদীকে স্বতন্ত্র ধাঁচেপরিণত করার বৈশিষ্ট্যগুলির মধ্যে এসব হচ্ছে কয়েকটি এবং ভারত এই পরিবর্তনের জন্যউন্মুখ হয়ে কাল গুনছে।