উপ-রাষ্ট্রপতিশ্রী হামিদ আনসারিকে আজ আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় সংবর্ধনা জানান রাজ্যসভার সদস্যরা। প্রধানমন্ত্রীশ্রী নরেন্দ্র মোদীও যোগ দেন এই বিশেষ কর্মসূচিতে।
বিগত ১০০বছরের জনজীবনেরইতিহাসে শ্রী আনসারির পারিবারিক ঐতিহ্যের কথা বিবৃত করেনপ্রধানমন্ত্রীতাঁর এদিনের বক্তব্যে। তিনি বলেন, উপ-রাষ্ট্রপতি শ্রী হামিদ আনসারিতাঁর কর্মজীবনে একজন সফল কূটনীতিবিদ হিসেবে যথেষ্ট বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছেন। বহুক্ষেত্রেই কূটনৈতিক বিষয়ে উপ-রাষ্ট্রপতির অভিজ্ঞতা ও অন্তর্দৃষ্টি দেশেরপ্রধানমন্ত্রী হিসাবে তাঁকেও নানাভাবে সাহায্য করেছে বলে এদিন উল্লেখ করেন শ্রীনরেন্দ্র মোদী।
শ্রী হামিদআনসারির ভবিষ্যৎ জীবনে সুখ ও সমৃদ্ধি কামনা করে শুভেচ্ছাও জানান প্রধানমন্ত্রী।
আসুন পড়ুন, প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য
মাননীয় সভাপতি মহোদয়,
এক দীর্ঘকালীন দেশসেবার পর, আজ আপনি নতুন কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করবেন বলেআমার বিশ্বাস। কারণ, আপনি নিজেকে শারীরিকভাবে যথেষ্ট সুস্থ ও সবল রেখেছেন। আপনিএমন এক দেশপ্রেমিক পরিবারের সন্তান, যে পরিবারের একশো বছরেরও বেশি একটি জাতীয় দলেনেতৃত্ব দেওয়ার ইতিহাস রয়েছে। আপনার দাদু, আপনার ঠাকুরদা কখনও ঐ জাতীয় দলেরঅধ্যক্ষ ছিলেন, কখনও সংবিধানসভার সদস্য ছিলেন, খিলাফত আন্দোলনে কংগ্রেস দলেরসমর্থনের ক্ষেত্রে তাঁর অবদান অবিস্মরণীয় ছিল। আপনি ব্যক্তিগত জীবনে ছিলেন একজন সফল কূটনীতিজ্ঞ। পেশাদার কূটনীতিজ্ঞ কাকেবলে, তা আমি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর বুঝতে পারি।তাঁর হাসির মানে, করমর্দনের নানাপদ্ধতির মানে তৎক্ষণাৎ বুঝতে পারা যায় না। কারণ, তাঁদের প্রশিক্ষণই সেরকমভাবে হয়।কিন্তু বিগত ১০ বছর ধরে দেশের উপরাষ্ট্রপতি রূপেও তিনি হয়তো অনেকবার সেসবআন্তর্জাতিক কৌশল প্রয়োগ করেছেন। রাজ্যসভার প্রবীণ সাংসদদের আবেগ ও রাজনৈতিক ওপ্রশাসনিক পদক্ষেপকে তিনি সুচারুভাবে নিয়ন্ত্রণ করতেও হয়তো সেই দক্ষতা কাজেলাগিয়েছেন। ফলে, রাজ্যসভা লাভবান হয়েছে।
আপনার চাকরিজীবনের একটা বড় সময় পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলিতে রাজদূত হিসাবে গুরুদায়িত্ব পালন করেছেন। সেসব দেশে ভারতের সঙ্গে তাঁদের সুসম্পর্ক বজায় রাখা ও অনেকবিতর্কিত বিষয় নিয়ে আলোচনা চালাতে হয়েছে। সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে হয়েছে। সেখানথেকে অবসর গ্রহণের পর আপনি অধিকাংশ সময় কাজ করেছেন ‘মাইনরিটি কমিশন’ এবং আলিগড়বিশ্ববিদ্যালয়ে। আর তারপর গত ১০ বছর ভারতের উপরাষ্ট্রপতির গুরুদায়িত্ব আপনিঅত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করেছেন। সংবিধানের আওতায় রাজ্যসভাকে প্রতিনিয়তসুন্দরভাবে নিয়ন্ত্রণ করেছেন।
সেই কর্তব্য পালন করতে গিয়ে আপনার মনে কখনও হয়তো চাঞ্চল্যও এসেছে আজ থেকেআপনার জীবনে সেসব সমস্যা আর থাকবে না! মুক্তির আনন্দ পাবেন, নিজের আদর্শ অনুযায়ীভাবতে, লিখতে এবং কাজ করতে পারবেন।
আপনার সঙ্গে আমার পরিচয় বেশিদিনের নয়। কিন্তু যখনই দেখা হয়েছে, আপনার কাছেঅনেক কিছু জানতে ও বুঝতে পেরেছি। যে কোনও বিদেশ যাত্রার আগে কিংবা ফিরে এসে যখনইসুযোগ পেয়েছি, আপনার পরামর্শ নিতে এসেছি। আমি যা মনে করি, তা ছাড়া আর কী কী হতেপারে, সে সম্পর্কে আপনি আমাকে অবহিত করেছেন। সেজন্য আমি আপনার কাছে হৃদয় থেকেকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আমার পক্ষ থেকে আপনাকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা।
দেশের উপরাষ্ট্রপতি রূপে, আপনার সুযোগ্য নেতৃত্বের জন্য সংসদের উভয় কক্ষেরপক্ষ থেকে আপনাকে কৃতজ্ঞতা জানাই। আপনার এই কর্তৃত্ব, এই অভিজ্ঞতা, এই সুউচ্চ পদথেকে অবসর গ্রহণ, দীর্ঘ সময় ধরে, সমাজ জীবনে সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলেছে। দেশেরসংবিধানের মর্যাদা রক্ষায়, সংসদ সদস্যদের পথপ্রদর্শনে আপনার সময় ও শক্তি ভবিষ্যতেওআমাদের পথ দেখাবে। এই প্রত্যাশা রেখে আপনাকে শুভেচ্ছা জানাই।
অনেক অনেক ধন্যবাদ।