আমার প্রিয় ১৪০ কোটি পরিবারের সদস্যবৃন্দ, বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের নাগরিক আপনারা এবং অনেকেই মনে করেন জনসংখ্যার নিরিখে আস্থার বিচারে আমরা প্রথম । এই বিশাল দেশে ১৪০ কোটি দেশবাসী, আমার ভাই ও বোনেরা, আমার পরিবারের সদস্যরা আজ স্বাধীনতার উৎসব উদযাপন করছেন । এই মহান স্বাধীনতা উৎসবে দেশের কোটি কোটি মানুষকে এবং সারা পৃথিবীর সেইসব মানুষ যারা ভারতকে ভালোবাসেন, ভারতকে শ্রদ্ধা করেন, ভারতের জন্য গর্ববোধ করেন – তাঁদের আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই । 

পূজনীয় বাপুর নেতৃত্বে অসহযোগ আন্দোলন, সত্যাগ্রহ সংগঠিত হয়েছিল । ভগত সিং, সুখদেব, রাজগুরুর মতো অগণিত নায়কের আত্মবলিদানের মাধ্যমে এই স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে । সেইসময়ে এমন কাউকে পাওয়া যাবে না, স্বাধীনতা অর্জনে যার কোনো ভূমিকা ছিল না । আজ দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে যারা অবদান রেখেছেন, আত্মত্যাগ করেছেন, তাদের সকলকে আমি সশ্রদ্ধ প্রণাম জানাই, অভিনন্দন জানাই । 

আজ ১৫-ই অগাস্ট মহান বিপ্লবী এবং আধ্যাত্মিক জগতের পথপ্রদর্শক শ্রী অরবিন্দের ১৫০-তম জন্মবার্ষিকীর সমাপ্তি ঘটতে চলেছে । এবছর স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতীর ১৫০-তম জন্মবার্ষিকী । এই বছর রাণী দুর্গাবতীর ৫-শোতম জন্মবার্ষিকী, যা সারা দেশ উৎসাহ-উদ্দীপনায় উদযাপন করবে । এবছর ভক্তিযোগের প্রধান মীরাবাঈের ৫২৫-তম বর্ষ উপলক্ষ্যে পবিত্র উৎসব উদযাপিত হবে । 

এবার ২৬-শে জানুয়ারিতে আমরা আমাদের সাধারণতন্ত্র দিবসের ৭৫-তম বার্ষিকী উদযাপন করব । এরফলে বিভিন্ন সুযোগ নানা ভাবে আমাদের সামনে উপস্থিত হবে । প্রত্যেকটি মুহূর্ত হবে অনুপ্রেরণাদায়ক । নতুন নতুন ভাবনা, স্বপ্ন এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে দেশ গঠনের কাজে আমরা এগিয়ে যাব । এর থেকে ভালো সুযোগ আর কী হতে পারে ।

গত কয়েক সপ্তাহ ধরে উত্তর-পূর্বে বিশেষত মণিপুরে এবং দেশের অন্যকিছু অংশে অনেকে প্রাণ হারিয়েছেন, মা ও বোনেদের সম্মানহানি হয়েছে । তবে গত কয়েকদিনে মণিপুর থেকে শান্তির খবর আসছে । শান্তির এই উৎসবকে আমাদের এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে । মণিপুরের জনসাধারণ গত কয়েকদিন ধরে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে বসবাস করছেন । শুধুমাত্র শান্তির মাধ্যমেই যে কোন সমস্যার সমাধান খুঁজে পাওয়া সম্ভব । সংশ্লিষ্ট সমস্যাগুলির সমাধানে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকার একযোগে কাজ করছে । ভবিষ্যতেও তারা এই প্রয়াস অব্যাহত রাখবে । 

অমৃতকালের প্রথম বর্ষে আমরা এই সময়কালে সেইসব পদক্ষেপগুলি গ্রহণ করব যার মাধ্যমে দেশের স্বর্ণযুগ রচিত হবে । আগামী ১ হাজার বছর ধরে যার সুফল মানুষের কাছে পৌঁছোবে ।

ভারতমাতা জাগ্রত হয়েছেন । বন্ধুগণ আমি স্পষ্টতই দেখতে পাচ্ছি গত ৯-১০ বছরে সারা বিশ্বের ভারতের প্রতি নতুন এক আশা, আস্থা জন্মেছে । ভারতের সম্ভাবনাকে সবাই গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করছে । ভারত থেকে যে আশার আলো সঞ্চারিত হচ্ছে সারা বিশ্ব তা প্রত্যক্ষ করছে । 

ভারতে প্রতিটি স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করার জন্য এদেশের জনসাধারণ, গণতন্ত্র এবং বৈচিত্র্যের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে । আজ অন্যান্য দেশের নিরিখে আমাদের দেশেই ৩০-এর নীচে থাকা নাগরিকদের সংখ্যা সবথেকে বেশি । আমাদের দেশে লক্ষ লক্ষ হাত, মস্তিষ্ক, স্বপ্ন, অধ্যাবসায়ের সাহায্যে আমার ভাই ও বোনেরা, আমার পরিবারের সদস্যরা নির্ধারিত সাফল্য অর্জন করতে পারবে । 

আজ সারা বিশ্বের স্টার্টআপ উদ্যোগের নিরিখে ভারতের স্থান তৃতীয় । ভারতের যুব সম্প্রদায়ের কারণে প্রথম তিনটি স্থানের মধ্যে ভারত জায়গা করে নিয়েছে । ভারতের ক্ষমতা দেখে সারা বিশ্বের যুব সম্প্রদায় শিহরিত হচ্ছে । বর্তমান যুগ প্রযুক্তি নির্ভর । আগামী দিনেও প্রযুক্তির প্রভাবে আমরা এগিয়ে যাবো । সে দিক থেকে প্রযুক্তি ক্ষেত্রে ভারতের প্রতিভা নতুন এক ভূমিকা পালন করবে ।  


সম্প্রতি আমি জি-২০ গোষ্ঠীর শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে বালি গিয়েছিলাম । বালিতে বিশ্বের সম্পদশালী দেশগুলির নেতৃবৃন্দ এবং উন্নয়নশীল দেশগুলিও ভারতের ডিজিটাল ইন্ডিয়ার সাফল্যের সম্পর্কে জানতে আগ্রহ প্রকাশ করে । আমি তাদেরকে জানাই, ভারতের এই সাফল্য শুধুমাত্র দিল্লি, মুম্বাই বা চেন্নাই শহরের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, আমাদের দেশের দ্বিতীয় এবং তৃতীয় পর্যায়ের শহরগুলির যুব সম্প্রদায়ও নতুন নতুন কাজ করে চলেছেন । যার মাধ্যমে আজ আমাদের দেশের ভাগ্য নির্ধারিত হচ্ছে । 

আজ খেলাধুলার জগতে বস্তি থেকে আসা ছেলেমেয়েরা নজরকাড়া সাফল্য দেখাচ্ছেন । ছোট ছোট গ্রাম-শহরের আমাদের ছেলেমেয়েরা নানা আশ্চর্যজনক কাজ করে চলেছে । আমাদের দেশে ১০০টি স্কুলে ছাত্রছাত্রীরা কৃত্রিম উপগ্রহ তৈরি করছে এবং সেগুলিকে উৎক্ষেপণের প্রস্তুতি নিচ্ছে । আজ হাজার হাজার অটল টিঙ্কারিং ল্যাব থেকে নতুন নতুন বিজ্ঞানী তৈরি হচ্ছে, লক্ষ লক্ষ শিশু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নিয়ে পড়াশুনা করছেন ।

গত ১ বছরে জি-২০ গোষ্ঠীর বিভিন্ন অনুষ্ঠান দেশের প্রতিটি প্রান্তে অনুষ্ঠিত হয়েছে । এর মাধ্যমে ভারতের সাধারণ মানুষের ক্ষমতা সম্পর্কে সারা বিশ্ব অবগত হচ্ছে । ভারতের বৈচিত্র্যের বিষয়ে তাদের মনে একটি ধারনা তৈরি হচ্ছে । 

আমি স্পষ্টতই দেখতে পাচ্ছি, করোনা পরবর্তী সময়ে বিশ্বজুড়ে নতুন এক ব্যবস্থা কার্যকর হচ্ছে । একটি নতুন ভূ-রাজনৈতিক সমীকরণ দ্রুত কার্যকর হচ্ছে । আজ আমার ১৪০ কোটি দেশবাসী তাদের দক্ষতার মাধ্যমে পারিপার্শিক জগতের যে পরিবর্তন আনছেন, তা সকলেই প্রত্যক্ষ করছেন । আপনারা এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে রয়েছেন । কোভিডের সময়কালে ভারত যেভাবে এগিয়ে এসেছে সারা বিশ্ব তার মাধ্যমে ভারতের ক্ষমতা প্রত্যক্ষ করেছে । 

ভারত আজ উন্নয়নশীল রাষ্ট্রগুলির কন্ঠস্বর হয়ে উঠেছে । ভারতের সমৃদ্ধি এবং তার ঐতিহ্যের সুফল সারা বিশ্বের কাছে পৌঁছোচ্ছে । বর্তমান যুগে যে সুযোগ আমরা পেয়েছি তার অপব্যবহার করতে দেওয়া যায়না । আমার দেশবাসী ২০১৪ সালে ৩০ বছরের অভিজ্ঞতা অর্জন করে তাদের সমস্যাগুলির মূল কারণ উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন, তাই তারা একটি স্থায়ী ও শক্তিশালী সরকার গঠনের পক্ষে মত দিয়েছিলেন । এরজন্য আমি আপনাদের সকলকে অভিনন্দন জানাই । 

২০১৪ এবং ২০১৯ সালে আপনারা যখন একটি সরকার গঠন করলেন তখন সংস্কার সাধনের সাহস মোদী অর্জন করেছিলেন । আর মোদী যখন একটির পর একটি সংস্কারকে বাস্তবায়িত করা শুরু করেন তখন আমার আমলাতন্ত্রের বন্ধুরা, আমার লক্ষ লক্ষ হাত ও পা যারা দেশের প্রতিটি প্রান্তে সরকারের জন্য কাজ করে চলেছে, তারা এই ব্যবস্থার পরিবর্তন আনতে শুরু করেন । আর তাই সংস্কার, তা সম্পাদন করা এবং পরিবর্তন আনার এই সময়কালে ভারত তার ভবিষ্যত গড়তে চলেছে । 

আমরা দক্ষতা বিকাশের জন্য একটি পথক মন্ত্রক গঠন করেছি । এটি ভারতের চাহিদাই পূরণ করবে না, পাশাপাশি সারা বিশ্বের চাহিদাপূরণের ক্ষমতাও এর রয়েছে । আমরা জলশক্তি মন্ত্রক গঠন করেছি । দেশের প্রত্যেক নাগরিকের কাছে যাতে বিশুদ্ধ পানীয় জল পৌঁছায় তা নিশ্চিত করতেই এই উদ্যোগ । আমাদের পরিবেশকে রক্ষা করার জন্য জলসংবেদী বিভিন্ন ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে হবে । এক সর্বাঙ্গীন স্বাস্থ্য পরিষেবা গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে । আমরা পৃথক আয়ুষ মন্ত্রক গঠন করেছি । আজ যোগ এবং আয়ুষ সারা বিশ্বের কাছে অনুকরণীয় এক উপাদান হয়ে উঠেছে ।

আমাদের কোটি কোটি মৎস্যজীবী ভাইবোনেদের কল্যাণের বিষয়টিও আমরা বিবেচনা করি । আর তাই মৎস্য ও পশুপালন এবং ডেয়ারী বা দোহ মন্ত্রক গড়ে তোলা হয়েছে । এর মাধ্যমে সমাজের যেসব অংশের মানুষ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত ছিলেন তারা প্রয়োজনীয় সহায়তা পাবেন । 

আমাদের সমাজের অর্থনীতির একটি বড় অংশ সমবায় আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত । এই আন্দোলনকে আরও শক্তিশালী করে তুলে তার আধুনিকীকরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে । দেশের প্রতিটি প্রান্তে গণতন্ত্রের সবথেকে বড় একক হল এই সমবায় ব্যবস্থাপনা, তাই আমরা একটি পৃথক সমবায় মন্ত্রক গড়ে তুলেছি । আমরা সহযোগিতার মাধ্যমে সমৃদ্ধির পথকে অনুসরণ করছি । 

২০১৪ সালে যখন আমরা ক্ষমতা গ্রহণ করি সেইসময় বিশ্ব অর্থনীতির নিরিখে ভারতের অবস্থান ছিল ১০ । আজ আমরা পঞ্চম স্থানে উঠে এসেছি । ভর্তুকির জন্য বরাদ্দ অর্থ নির্দিষ্ট সুবিধাভোগীর কাছেই যাতে পৌঁছোয় সেটি নিশ্চিত করতে আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি । একটি শক্তিশালী অর্থনীতি গড়ে তোলার জন্য আমরা উদ্যোগী হয়েছি । দরিদ্রদের কল্যাণে আরও বেশি করে অর্থব্যয় করা হচ্ছে । 

ত্রিবর্ণরঞ্জিত পতাকাকে সাক্ষি করে এই লালকেল্লার প্রাকার থেকে আমি গত ১০ বছর কী কী করা হয়েছে সেবিষয়ে আমার দেশবাসীকে বিস্তারিত জানাচ্ছি – 

১০ বছর আগে কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যগুলিকে ৩০ লক্ষ কোটি টাকা বরাদ্দ করতো । গত ৯ বছরে এই পরিমাণ ১০০ লক্ষ কোটি টাকায় পৌঁছেছে । 

আগে কেন্দ্রীয় সরকার স্থানীয় প্রশাসনগুলির জন্য ৭০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করতো । বর্তমানে এখাতে ব্যয় করা হয় ৩ লক্ষ কোটি টাকার বেশি ।

আগে দরিদ্রদের জন্য গৃহনির্মাণে ৯০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হতো । আজ তা চারগুণ বৃদ্ধি করে ৪ লক্ষ কোটি টাকায় পৌঁছেছে । 

পৃথিবীর কোনো কোনো দেশে এক ব্যাগ ইউরিয়া ৩ হাজার টাকায় বিক্রি হয় । আমার কৃষক বন্ধুদের কাছে আমরা তা ৩০০ টাকায় বিক্রি করি । এরজন্য সরকারকে ১০ লক্ষ কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হয় । 

স্বনির্ভর হয়ে ওঠার জন্য আমাদের দেশের যুব সম্প্রদায়কে ২০ লক্ষ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে । এই অর্থ দিয়ে তারা তাদের ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার ঘটাতে পারবেন । 

আমরা অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র, মাঝারি শিল্পোদ্যোগ সংস্থাগুলিকে আরও শক্তিশালী করার জন্য ৩ লক্ষ ৫০ হাজার কোটি টাকা দিয়েছি । 

আমাদের দেশের সৈনিকদের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য এক পদ এক পেনশন ব্যবস্থা কার্যকর হয়েছে । এরজন্য সরকারি কোষাগার থেকে ৭০ হাজার কোটি টাকা আমার অবসরপ্রাপ্ত প্রতিরক্ষা বাহিনীর নায়ক এবং তাদের পরিবারের কাছে পৌঁছেছে ।

আজ আমাদের বিভিন্ন উদ্যোগের সুফল পাওয়া যাচ্ছে । দারিদ্রের নাগপাশ থেকে আমাদের ১৩ কোটি ৫০ লক্ষ ভাইবোন মুক্ত হয়ে নব্য মধ্যবিত্ত শ্রেণীতে প্রবেশ করেছেন । জীবনে এর থেকে বড় আনন্দ আর কী হতে পারে । 

পিএম স্বনিধি প্রকল্পের মাধ্যমে রাস্তার হকারদের ৫০ হাজার কোটি টাকা প্রদান করা হয়েছে । আগামী দিনে আমরা বিশ্বকর্মা জয়ন্তীতে আরেকটি কর্মসূচীর সূচনা করব । ওইদিন মূলত অন্যান্য পিছিয়ে পড়া শ্রেণীর মানুষদের, যারা হাত দিয়ে অথবা ছোটোখাটো যন্ত্রপাতির সাহায্যে তাদের চিরায়ত দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে উপার্জন করেন – সেই মানুষগুলির জন্য ১৩-১৫ হাজার কোটি টাকা বিতরণ করা হবে । 

আমরা পিএম কিষাণ সম্মান নিধি প্রকল্পে কৃষকদের অ্যাকাউন্টে আড়াই লক্ষ কোটি টাকা সরাসরি পাঠিয়েছি । জলজীবন মিশনের আওতায় প্রত্যেক বাড়িতে বিশুদ্ধ পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার জন্য ২ লক্ষ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে । 

আমরা আত্মনির্ভর ভারত প্রকল্পের সূচনা করেছি । দরিদ্র মানুষরা অসুস্থ হলে হাসপাতালে যান । সেখানে তারা যে সমস্যার সম্মুখীন হতেন, তার সুরাহার জন্যই এই প্রকল্পের সূচনা করা হয়েছে । এখন তারা ওষুধ পাচ্ছেন, চিকিৎসা পরিষেবা পাচ্ছেন, ভালো হাসপাতালে অস্ত্রপচারের সুযোগও পাচ্ছেন । আমরা আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পে ৭০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করেছি । 

দেশবাসীর মনে রয়েছে করোনা টিকার জন্য আমরা  ৪০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করেছিলাম । পাশাপাশি গৃহপালিত পশুর টিকাকরণের জন্যও ১৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে ।  

বাজারে যে ওষুধ ১০০ টাকায় পাওয়া যায়, তা আমরা জনৌষধি কেন্দ্র থেকে ১০-১৫-২০ টাকায় মানুষের কাছে পৌঁছে দিচ্ছি । এরফলে দেশবাসীর ২০ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে । এখন আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, জনৌষধি কেন্দ্রের সংখ্যা ১০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ২৫ হাজারে নিয়ে যাওয়া হবে । 

গত কয়েক বছর আমার পরিবারের যেসব সদস্যরা শহরে থাকেন তাদের জন্য আরেকটি প্রকল্পের সূচনা করা হয়েছে । যারা ভাড়া বাড়ি, বস্তি, চাউল, অনুমোদনহীন কলোনিতে বাস করেন, তারা যদি নিজেদের বাড়ি তৈরি করতে চান, তাহলে আমরা তাদের সাহায্য করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি । ব্যাঙ্ক থেকে তারা যে ঋণ পাবেন, সেই ঋণে সুদের ওপর ছাড় দেওয়ার ফলে তাদের লক্ষ লক্ষ টাকার সাশ্রয় হবে । 

যদি আয়করের ঊর্ধ্বসীমা ২লক্ষ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭ লক্ষ টাকা করে দেওয়া হয় তাহলে তার সবথেকে সুফল পান বেতনভুক্ত শ্রেণীর নাগরিকরা, আমার পরিবারের মধ্যবিত্ত শ্রেণীর সদস্যরা । ২০১৪ সালের আগে ইন্টারনেট ডেটা অত্যন্ত ব্যয়বহুল ছিল । বর্তমানে পৃথিবীর সবথেকে সস্তায় ইন্টারনেট পাওয়ার ফলে প্রত্যেক পরিবারের আর্থিক সাশ্রয় হচ্ছে । 

আজ দেশ পুনর্নবীকরণযোগ্য জ্বালানির ক্ষেত্রে নানা দক্ষতা অর্জন করছে । পরিবেশবান্ধব হাইড্রোজেন জ্বালানি ক্ষেত্রে নানা পরীক্ষা নিরীক্ষা চলছে । মহাকাশ ক্ষেত্রে দেশের দক্ষতা ক্রমশ বাড়ছে । গভীর সমুদ্রের জন্য ডিপ সি মিশনও সফলভাবে কার্যকর হয়েছে । দেশের রেল ব্যবস্থা আধুনিক হয়ে উঠেছে । বন্দেভারত, বুলেট ট্রেন নিয়ে কাজ চলছে । আজ প্রতিটি গ্রামে ইন্টারনেট পরিষেবা পৌঁছে গেছে । দেশ এখন কোয়ান্টাম কম্পিউটার নিয়ে কাজ করছে । ন্যানো ইউরিয়া এবং ন্যানো ডিএপি সার নিয়েও কাজ হচ্ছে । পাশাপাশি জৈব পদ্ধতিতে কৃষিকাজের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে । আমরা সেমিকন্ডাক্টর শিল্প নিয়েও কাজ করছি । 

স্বাধীনতার অমত মহোৎসব উপলক্ষ্যে আমরা ৭৫ হাজার অমৃত সরোবর খননের সঙ্কল্প নিয়েছিলাম । আজ ৭৫ হাজার অমৃত সরোবর খননের কাজ চলছে । এটি একটি বিরাট কর্মযজ্ঞ । এই জনশক্তি এবং জলশক্তি ভারতের পরিবাশ রক্ষার ক্ষেত্রে কার্যকর হবে । ১৮ হাজার গ্রামে বিদ্যুৎ সংযোগ পৌঁছে দেওয়া, ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্ট খোলা, মেয়েদের জন্য শৌচাগার নির্মাণ – প্রত্যেকটি প্রকল্প নির্ধারিত সময়ের আগে শেষ হয়েছে ।

কোভিডের সময়কালে ভারত ২-শো কোটি টিকার ডোজ দেওয়ায় সারা বিশ্ব আশ্চর্য হয়েছিল । আমার দেশের অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী, আশাকর্মী, স্বাস্থ্য কর্মীরা এটিকে সম্ভব করে তুলেছিলেন । আমার দেশে ৫জি পরিষেবা দ্রুততার সঙ্গে পৌঁছে দেওয়ার কাজ শেষ হয়েছে । আজকের তারিখ অনুযায়ী ইতোমধ্যেই ৭-শোটি জেলায় ৫জি পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে - যা বিশ্বে দ্রুততম । এখন আমরা ৬জি পরিষেবা নিয়ে কাজ করছি ।  

২০৩০ সালের মধ্যে পুনর্ণবীকরণযোগ্য জ্বালানী সংক্রান্ত যে লক্ষ্যমাত্রা আমরা ধার্য করেছিলাম, তা ২০২১-২২ সালেই পূরণ করা হয়েছে । আমরা পেট্রোলে ২০ শতাংশ ইথানল মিশ্রণের যে লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করেছিলাম, তাও নির্ধারিত সময়ের ৫ বছর আগে শেষ হয়েছে । আমরা ৫০ হাজার কোটি মার্কিন ডলারের পণ্যসামগ্রী রপ্তানী করার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম তাও নির্ধারিত সময়ের আগেই অর্জিত হয়েছে । এখন আমরা ৫০ হাজার কোটি মার্কিন ডলারেরও বেশি পণ্যসামগ্রী রপ্তানী করছি ।  

আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম একটি নতুন সংসদ ভবন গড়ে তুলবো । ২৫ বছর ধরে সেই আলোচনা চলছে । আমার প্রিয় ভাই ও বোনেরা, মোদীই হল সেই মানুষ যিনি নির্ধারিত সময়ের আগেই নতুন সংসদ ভবনের কাজ শেষ করেছেন । 

আজ সারা দেশ নিজেকে সুরক্ষিত বলে মনে করে । বর্তমানে জঙ্গি হানার সংখ্যা বিপুল পরিমাণে হ্রাস পেয়েছে । নকশাল প্রভাবিত অঞ্চলেও বিরাট পরিবর্তন দেখা দিয়েছে । 

আগামী ২৫ বছর আমরা একটি মন্ত্র অনুসরণ করে চলবো । আমাদের যে জাতীয় চরিত্র তা হল, ভারতের ঐক্য। এই ঐক্যই আমাদের শক্তি । উত্তর-দক্ষিণ-পূর্ব-পশ্চিম, গ্রাম বা শহর, পুরুষ বা মহিলা সকলের ক্ষেত্রেই ঐক্যই হল মূল শক্তি । আমরা চাইব ২০৪৭ সালের মধ্যে উন্নত ভারত গড়ে তুলতে । আমরা এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারত ভাবনাকে অনুসরণ করে চলব । 

দেশের অগ্রগতির জন্য অতিরিক্ত যে ক্ষমতার প্রয়োজন তা আমরা মহিলাদের নেতৃত্বে উন্নয়নের থেকে অর্জন করব । জি-২০ গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলির সম্মেলনেও আমি মহিলাদের নেতৃত্বে উন্নয়নের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছি । জি-২০ গোষ্ঠীও এই বিষয়টির গুরুত্ব স্বীকার করেছে । 

আজ ভারত গর্বের সঙ্গে বলতে পারে বিশ্বে অসামরিক ক্ষেত্রে মহিলা পাইলটের সংখ্যা সবথেকে বেশি আমাদের দেশে রয়েছে । চন্দ্রযানের গতিই হোক অথবা মুন মিশন – প্রত্যেক ক্ষেত্রে আমাদের মহিলা বিজ্ঞানীরা নেতৃত্ব দিচ্ছেন । 

আজ ১০ কোটি মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত । আপনারা যে কোনো গ্রামে গেলে দেখতে পাবেন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর দিদিরা ব্যাঙ্ক, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র, ওষুধ বিতরণ – সব জায়গাতেই কাজ করছেন । এখন আমার স্বপ্ন হল ২ কোটি লাখপতি দিদি তৈরি করা, অর্থাৎ ঐ সব মহিলারা প্রতিবছর কমপক্ষে ১ লক্ষ টাকা আয় করবেন । 

আজ দেশ দ্রুত আধুনিক হচ্ছে । মহাসড়ক, রেলপথ, বিমানপথ, তথ্যপথ (ইনফরমেশন ওয়েজ), জলপথ-দেশের এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে উন্নতির জন্য কাজ চলেছে । গত ৯ বছরে আমরা উপকূলবর্তী অঞ্চল, আদিবাসী অধ্যুষিত অঞ্চল এবং পার্বত্য অঞ্চলে উন্নয়নের জন্য বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছি । 

আমরা আমাদের দেশের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে প্রাণোচ্ছ্বল সীমান্ত গ্রাম প্রকল্পের সূচনা করেছি । এতদিন সীমান্তবর্তী গ্রামগুলিকে দেশের শেষ গ্রাম বলে বিবেচনা করা হত । আমরা এই ভাবনার পরিবর্তন ঘটিয়েছি । এখন আর এগুলিকে দেশের শেষ গ্রাম নয়, প্রথম গ্রাম বলে বিবেচনা করা হয় । 

আমরা দেশকে এতটাই শক্তিশালী করে তুলবো যাতে আমাদের দেশ বিশ্বের কল্যাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে । করোনার পর বর্তমানে আমি দেখছি, বিভিন্ন সঙ্কটের সময় বিশ্বকে ভারত নানাভাবে সাহায্য করছে, তার ফলে আমাদের দেশ আজ সারা পৃথিবীর বন্ধু হয়ে উঠেছে । আজ ভারত এক নতুন পরিচয়ে পরিচিত হচ্ছে । 

স্বপ্ন অনেক, সঙ্কল্প আমাদের স্পষ্ট, আমাদের নীতি স্বচ্ছ । আমার উদ্দেশ্য সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন নেই ।কিন্তু আমাদের কিছু বাস্তবতাকে মেনে নিতে হবে । আমার প্রিয় পরিবারের সদস্যরা সেগুলির সমাধানের জন্য আজ এই লালকেল্লা থেকে আমি আপনাদের সহায়তা প্রার্থনা করি । লালকেল্লা থেকে আপনাদের আশীর্বাদ প্রার্থনা করছি । 

অমৃতকালে ২০৪৭ সালে আমরা যখন আমাদের স্বাধীনতার শততম বার্ষিকী উদযাপন করবো, তখন সারা বিশ্ব উন্নত ভারতে ত্রিবর্ণরঞ্জিত জাতীয় পতাকা উত্তোলন প্রত্যক্ষ করবে । আমরা থামবো না, ইতস্তত করবো না । এরজন্য স্বচ্ছতা এবং সুষ্ঠভাবে বিভিন্ন কার্য সম্পাদনের প্রয়োজন । 

স্বপ্ন যদি পূরণ করতে হয়, যদি সঙ্কল্প বাস্তবায়ন করতে হয় তাহলে প্রতিটি স্তর থেকে তিন শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই করার এটিই সঠিক সময় । এই তিন শত্রু হল – দুর্নীতি, পরিবারতন্ত্র এবং তোষণ । 

দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইকে আমি এগিয়ে নিয়ে চলেছি । এখন বিভিন্ন আদালতে অনেক বেশি সংখ্যায় চার্জশীট দাখিল করা হচ্ছে । বর্তমানে জামিন পাওয়া শক্ত হচ্ছে । আমরা এমন এক কঠোর ব্যবস্থা গড়ে তুলছি, যেখানে সৎভাবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করা যাবে ।

প্রতিভার বড় শত্রু হল পরিবারতন্ত্র । পরিবারতন্ত্র দক্ষতা এবং সম্ভাবনাকে গ্রহণ করেনা । আর তাই এদেশের গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করার জন্য পরিবারতন্ত্র থেকে মুক্তির অত্যন্ত প্রয়োজন । সর্বজন হিতায়, সর্বজন সুখায় ভাবনায় প্রত্যেকে যাতে তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত না হন এবং সকলের সামাজিক ন্যায় যাতে নিশ্চিত হয়, তা কার্যকর করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । 

তোষণের কারণে ভাবনাচিন্তা, রাজনীতি এবং বিভিন্ন সরকারি প্রকল্প সামাজিক ন্যায়কে হত্যা করেছে । আর তাই আমরা দেখেছি উন্নয়নের সবথেকে বড় শত্রু দুর্নীতি এবং তোষণ । দেশ যদি উন্নত হতে চায়, ২০৪৭ সালের মধ্যে উন্নত ভারত গড়ার স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে চায়, তাহলে দুর্নীতির সঙ্গে কোনো পরিস্থিতিতেই আপোষ করা চলবে না । 

আমাদের প্রত্যেকের একটি কর্তব্য রয়েছে – এই অমৃতকাল হল কর্তব্যকাল । আমরা আমাদের কর্তব্য থেকে পিছু হটতে পারিনা । পূজনীয় বাপুর স্বপ্নকে সফল করে তুলতে, আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে আমাদের দেশকে গড়ে তুলতে হবে । দেশের জন্য যারা প্রাণ উৎসর্গ করেছেন, তাদের স্বপ্নকে কার্যকর করতে হবে । 

এই অমৃতকাল হল আমাদের সকলের কর্তব্য পালনের সময়, ভারত মাতার জন্য কিছু করার সময় । ১৪০ কোটি দেশবাসীর সঙ্কল্পকে সফল করে তুলতে হবে, যাতে ২০৪৭ সালে আমরা যখন ত্রিবর্ণরঞ্জিত জাতীয় পতাকা উত্তোলন করবো সেইসময় সারা বিশ্ব উন্নত ভারতের প্রশংসা করবে । এই বিশ্বাস ও সঙ্কল্প নিয়ে আপনাদের সকলকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই, অভিনন্দন জানাই ।

 

Explore More
৭৮ তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে নয়াদিল্লির লালকেল্লার প্রাকার থেকে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ ১৫ই আগস্ট , ২০২৪

জনপ্রিয় ভাষণ

৭৮ তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে নয়াদিল্লির লালকেল্লার প্রাকার থেকে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ ১৫ই আগস্ট , ২০২৪
PLI, Make in India schemes attracting foreign investors to India: CII

Media Coverage

PLI, Make in India schemes attracting foreign investors to India: CII
NM on the go

Nm on the go

Always be the first to hear from the PM. Get the App Now!
...
PM Modi visits the Indian Arrival Monument
November 21, 2024

Prime Minister visited the Indian Arrival monument at Monument Gardens in Georgetown today. He was accompanied by PM of Guyana Brig (Retd) Mark Phillips. An ensemble of Tassa Drums welcomed Prime Minister as he paid floral tribute at the Arrival Monument. Paying homage at the monument, Prime Minister recalled the struggle and sacrifices of Indian diaspora and their pivotal contribution to preserving and promoting Indian culture and tradition in Guyana. He planted a Bel Patra sapling at the monument.

The monument is a replica of the first ship which arrived in Guyana in 1838 bringing indentured migrants from India. It was gifted by India to the people of Guyana in 1991.