নমস্কার,
পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল শ্রী সি ভি আনন্দ বোসজী, মুখ্যমন্ত্রী মাননীয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়জী, আমার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সদস্য শ্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবজী, ডাঃ সুভাষ সরকারজী, শ্রী নিশীথ প্রামাণিকজী, শ্রী জন বার্লাজী, পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শ্রী শুভেন্দু অধিকারীজী, সাংসদ প্রসূনজী, মঞ্চে উপস্থিত অন্যান্য সম্মানিত ব্যক্তিবর্গ, ভদ্রমহিলা ও ভদ্র মহোদয়গণ!
আজ আমার আপনাদের সবার মাঝে সশরীরে উপস্থিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নানা ব্যক্তিগত কারণে আপনাদের সকলের মাঝে আসতে পারলাম না, সেজন্য আমি আপনাদের সকলের কাছে, বাংলার জনগণের কাছে ক্ষমা চাইছি। বাংলার এই পবিত্র মাটি, কলকাতার এই ঐতিহাসিক ভূমিকে আজ আমার প্রণাম জানানোর সৌভাগ্য হ’ল। বাংলার প্রতিটি ধূলিকণায় স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাস সম্পৃক্ত রয়েছে। যে ভূমিতে বন্দে মাতরম্ শব্দের জয় জয়কার হয়েছিল, সেখানে এখন বন্দে ভারত ট্রেনের সবুজ পতাকা দেখানো হ’ল। আজ ৩০ ডিসেম্বর তারিখটি ভারতের ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৪৩ সালের ৩০ ডিসেম্বর ভারতের সর্বমান্য নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুজী আন্দামানে ত্রিবর্ণরঞ্জিত জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে ভারতের স্বাধীনতার বিউগল বাজিয়েছিলেন।
এই ঘটনার ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে ২০১৮ সালে আমি আন্দামানে গিয়েছিলাম এবং সেদিন নেতাজীর নামে একটি দ্বীপের নামকরণও করেছিলাম। আর এখন দেশ যখন স্বাধীনতার ৭৫তম বর্ষ পূর্তি উৎসব পালন করছে, অমৃত মহোৎসব পালন করছে – সেই অমৃত মহোৎসবে দেশ ৪৭৫টি বন্দে ভারত ট্রেন চালু করার সংকল্প নিয়েছে। আজ তার মধ্যে একটি হাওড়া – নিউ জলপাইগুড়ি বন্দে ভারত ট্রেন কলকাতা থেকে রওনা হ’ল। আজই রেলওয়ে এবং মেট্রো যোগাযোগ ব্যবস্থার অন্যান্য কিছু প্রকল্পেরও উদ্বোধন ও শিলান্যাস হ’ল। তাছাড়া প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে যে জোকা – বিবাদি বাগ মেট্রো প্রকল্পের কাজ চলছে, সেই প্রকল্পেরই কিছুটা অংশ জোকা – তারাতলা মেট্রো রুট ইতিমধ্যেই জনগণকে পরিষেবা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত। এতে এই মহানগরের জনগণের যাতায়াত আরও সহজ হবে, ‘ইজ অফ লিভিং’ আরও বৃদ্ধি পাবে।
বন্ধুগণ,
কিছুক্ষণ পরই আমার মা গঙ্গার স্বচ্ছতা এবং পানীয় জল সংক্রান্ত একাধিক প্রকল্প পশ্চিমবঙ্গকে সমর্পণের সৌভাগ্য হবে। নমামি গঙ্গে মিশনের মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গে পয়ঃপ্রণালী ব্যবস্থার ২৫টিরও বেশি প্রকল্পকে মঞ্জুর করা হয়েছে। এর মধ্যে ১১টি প্রকল্প আগেই সম্পূর্ণ হয়েছে। আর আজ আরও ৭টি প্রকল্প সম্পূর্ণ হচ্ছে। আজ দেড় হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে ৫টি নতুন প্রকল্পের কাজও শুরু হচ্ছে। এর মধ্যে বিশেষ করে আদি গঙ্গানদীর পুনরুজ্জীবন প্রকল্পের কথা আমি উল্লেখ করতে চাই। আমাকে বলা হয়েছে যে, এখন দুর্ভাগ্যজনকভাবে আদি গঙ্গার পরিস্থিতি অত্যন্ত শোচনীয়। এতে যত নোংরা – আবর্জনা ফেলা হয়, আর পয়ঃপ্রণালীর দূষিত জল প্রবাহিত হয়। সেই আদি গঙ্গাকে পরিস্কার করে আধুনিক ব্যবস্থার মাধ্যমে পুনর্ব্যবহারযোগ্য করে তুলতে ৬০০ কোটি টাকারও বেশি বিনিয়োগে আধুনিক পরিকাঠামো নির্মাণ করা হচ্ছে।
আমরা প্রায়ই ব্যক্তির জীবনে প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্যের দিকে নজর দেওয়ার কথা বলি। আর আমরা বলি যে, আমাদের দৈনন্দিন অভ্যাস এমন হওয়া উচিৎ, যাতে অসুস্থ হয়ে পড়ার কোনও কারণ না ঘটে। ঠিক তেমনই, কেন্দ্রীয় সরকার নদীর আবর্জনা পরিস্কার করার পাশাপাশি নদী যাতে আর নোংরা না হয়, সেই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গড়ে তোলার দিকেও জোর দিচ্ছে। আর এই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গড়ে তোলার সব চেয়ে বড় এবং আধুনিক পদ্ধতি হ’ল যত বেশি সম্ভব সিউয়েজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট বা আধুনিক নিকাশি ব্যবস্থা গড়ে তোলা।
দেশের সর্বত্রই এখন আগামী ১০-১৫ বছরের প্রয়োজনের কথা মাথায় রেখে আধুনিক নিকাশি ব্যবস্থা গড়ে তোলা হচ্ছে। স্বাধীনতার অমৃতকালে আমাদের সবাইকে সুদূরপ্রসারী ভবিষ্যতের কথা ভেবে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা ভাবতে হবে।
বন্ধুগণ,
আজ এই একবিংশ শতাব্দীর ভারতকে দ্রুতগতিতে উন্নয়নের পথে নিয়ে যেতে ভারতীয় রেলের দ্রুত বিকাশ, ভারতীয় রেলের দ্রুত সংস্কার – এই ধরণের পদক্ষেপ নেওয়া অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। সেজন্য আজ কেন্দ্রীয় সরকার ভারতীয় রেলকে আধুনিক করে তুলতে, রেলের পরিকাঠামোকে অত্যাধুনিক করে তোলার জন্য রেকর্ড পরিমাণ বিনিয়োগ করছে। আজ ভারতে ভারতীয় রেলের পুনর্নবীকরণের জন্য দেশব্যাপী অভিযান চলছে।
আজ বন্দে ভারত, তেজস, হামসফর – এর মতো আধুনিক বেশ কিছু ট্রেন দেশের মধ্যেই তৈরি হচ্ছে। আজ অত্যাধুনিক ভিস্টাডোম কোচগুলি রেল যাত্রীদের নতুন নতুন অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ এনে দিচ্ছে। আজ সুরক্ষিত আধুনিক কোচগুলির সংখ্যা গুণীতক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। আজ দেশের রেল স্টেশনগুলিকেও বিমানবন্দরের মতো পরিষেবাসম্পন্ন করে বিকশিত করা হচ্ছে। নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনও সেই তালিকার অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
আজ অনেকগুলি রেল লাইনের ডবলিং আর দেশের সর্বোত্র রেললাইনের বৈদ্যুতিকীকরণ যে গতিতে সম্পন্ন হচ্ছে, তা আগে কখনও হয়নি। দেশের যে ইস্টার্ন ও ওয়েস্টার্ন ডেডিকেটেড ফ্রেড করিডর গড়ে তোলা হচ্ছে, তা পণ্য পরিবহণ ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে চলেছে। নিরাপত্তা থেকে শুরু করে পরিচ্ছন্নতা, সামর্থ্য থেকে শুরু করে সামঞ্জস্য, সমায়ানুবর্তিতা থেকে শুরু করে করে যাত্রীদের স্বাচ্ছন্দ্য – এই সমস্ত ক্ষেত্রেই আজ এক নতুন পরিচয় গড়ে তোলার আমাদের যে প্রচেষ্টা ভারতীয় রেল তাকে নতুনভাবে রঙিন করে তুলছে।
বিগত ৮ বছরে ভারতীয় রেল নিজেকে আধুনিক করে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় ভিত্তি গড়ার কাজ করেছে। এখন আগামী ৮ বছরে আমরা ভারতবাসী ভারতীয় রেলকে আধুনিকতার নতুন যাত্রাপথে এগিয়ে যেতে দেখবো। ভারতের মতো তারুণ্যে ভরা দেশের জন্য ভারতীয় রেলও ‘যুব অবতার’ হয়ে উঠতে চলেছে। এক্ষেত্রে নিশ্চিতভাবেই ৪৭৫টিরও বেশি বন্দে ভারত ট্রেন অনেক বড় ভূমিকা পালন করবে।
বন্ধুগণ,
ভারতে স্বাধীনতার পর সাত দশকে মাত্র ২০ হাজার রুট কিলোমিটার রেল লাইনের বৈদ্যুতিকীকরণ হয়েছিল। এরপর ২০১৪ সালে আমাদের সরকার গঠিত হওয়ার পর বিগত ৭ - ৮ বছরে দেশ ৩২ হাজার রুট কিলোমিটারেরও বেশি রেল লাইনের বৈদ্যুতিকীকরণ সম্পন্ন হয়েছে। এটাই হ’ল আমাদের দেশের জন্য কাজ করার গতি। এটাই আমাদের রেলের আধুনিকীকরণের গতি। আর এই গতিকে আরও বাড়ানোর জন্য এখন ভারতে বিশ্বের সর্বাধিক শক্তিশালী বিদ্যুৎ চালিত রেল ইঞ্জিনও দ্রুতগতিতে নির্মিত হচ্ছে।
বন্ধুগণ,
আজকের ভারতে উন্নয়নের নতুন গতি ও পরিমাণের আরেকটি প্রমাণ হ’ল আমাদের মেট্রো রেল সিস্টেম। কলকাতার মানুষ জানেন যে, অনেক দশক ধরেই মেট্রো রেল কিভাবে গণপরিবহণ ব্যবস্থার কত উন্নত একটি মাধ্যম। ২০১৪ সালের আগে দেশে সব মিলিয়ে ২৫০ কিলোমিটারের মতো মেট্রো নেটওয়ার্ক ছিল। এর মধ্যে অধিকাংশ মেট্রো নেটওয়ার্ক ছিল দিল্লি এনসিআর – এ। আমাদের কেন্দ্রীয় সরকার এই পরিস্থিতিতেও পরিবর্তন এনেছে। একে পরিবর্তনের জন্য উঠে-পড়ে লেগেছে এবং অত্যন্ত দ্রুতগতিতে পরিবর্তন এনেওছে।
বিগত ৮ বছরে আমরা দেশে মেট্রো নেটওয়ার্ক’কে দু’ডজনেরও বেশি শহরে সম্প্রসারিত করেছি। ফলে আজ দেশের ভিন্ন ভিন্ন শহরে প্রায় ৮০০ কিলোমিটার ট্র্যাকে মেট্রো রেল চলছে। আরও প্রায় ১০০০ কিলোমিটার নতুন মেট্রো রুট গড়ে তোলার কাজ দ্রুতগতিতে চলছে। জোকা – বিবাদিবাগ মেট্রো প্রকল্প এই কর্মযজ্ঞেরই অংশ।
বন্ধুগণ,
বিগত শতাব্দীর ভারতে আরও দুটো বড় চ্যালেঞ্জ ছিল, যা দেশের উন্নয়নে অত্যন্ত নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছিল। এর মধ্যে একটি চ্যালেঞ্জ হ’ল – পরিকাঠামো নির্মাণ কাজে বিভিন্ন এজেন্সির মধ্যে যথাযথ যোগাযোগের অভাব। আর দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জটি ছিল – যানবাহন ব্যবস্থার বিভিন্ন মাধ্যমের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়ার অভাব। এর ফলে সরকারের একটা বিভাগ জানতো না যে অন্য বিভাগ কোথায় নতুন কাজ শুরু করতে চলেছে। এই যোগাযোগের অভাব, এই ভারসাম্যহীনতার কুফল দেশের সৎ করদাতাদের বহন করতে হ’ত।
দেশের সৎ করদাতারা সর্বদাই সরকারি অর্থ অপচয়, বিভিন্ন প্রকল্প সম্পাদনে বিলম্ব আর দুর্নীতিকে ঘৃণা করেন। তাঁরা যখন দেখেন যে, তাঁদের রক্ত জল করা উপার্জন থেকে দেওয়া করের টাকায় গরীব মানুষের উন্নয়ন না হয়ে কোনও কোনও দুর্নীতি বাজের উপকার হচ্ছে, তখন তাঁদের খিন্ন হওয়াই স্বাভাবিক।
জনগণের টাকার এরকম অপচয় রুখতে ও সরকারের বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে যোগাযোগ বাড়াতে পিএম গতিশক্তি ন্যাশনাল মাস্টার প্ল্যান চালু করা হয়েছে। এখন বিভিন্ন রাজ্য সরকারের বিভাগগুলির পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন বিভাগের কাজ, স্থানীয় প্রশাসনগুলির বিভিন্ন কর্মযজ্ঞ, নির্মাণ সংক্রান্ত বিভিন্ন এজেন্সির কাজ, এমনকি বেসরকারি শিল্প জগতের বিভিন্ন কাজকে একই প্ল্যাটফর্মে আনা হচ্ছে।
আমাদের পিএম গতিশক্তি ন্যাশনাল মাস্টার প্ল্যান দেশের ভিন্ন ভিন্ন যানবাহন মাধ্যমকে পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত করতে মাল্টি-মডেল কানেক্টিভিটির কাজকেও গতিশীল করে তুলছে। আজ দেশে রেকর্ড পরিমাণ দ্রুতগতিতে হাইওয়ে তৈরি হচ্ছে, বিমানবন্দর তৈরি হচ্ছে, নতুন নতুন জলপথ চালু হচ্ছে, নতুন নতুন সমুদ্র ও নদী বন্দর গড়ে উঠছে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় কথা হ’ল – এগুলিকে এখন এমনভাবে গড়ে তোলা হচ্ছে, যাতে পরিবহণের প্রতিটি মাধ্যম অন্য মাধ্যমের সহায়ক হয়ে ওঠে। অর্থাৎ, হাইওয়ে দিয়ে যাঁরা যাবেন, তাঁরা যেন সহজেই রেল স্টেশনে পৌঁছতে পারেন, রেলপথে যাঁরা যাত্রা করবেন তাঁরা যেন প্রয়োজনে দ্রুত বিমানবন্দরে যেতে পারেন, জনগণ যেন যাত্রী ও পরিবহণের ক্ষেত্রে বাধাহীন যোগাযোগ ব্যবস্থার পরিষেবা পান – তা সুনিশ্চিত করা হচ্ছে।
বন্ধুগণ,
একবিংশ শতাব্দীতে দেশকে দ্রুতগতিতে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমাদের দেশের নিজস্ব সামর্থ্যকে যথাযথভাবে ব্যবহার করতে হবে। আমি দেশের জনগণের সামনে আমাদের জলপথের উদাহরণ তুলে ধরতে চাই। একটা সময় ছিল, যখন ভারতে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং পর্যটনের জন্য জলপথকেই সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হ’ত। সেজন্য অসংখ্য শহর নদীতীরে গড়ে উঠেছে, নদী তীরেই গড়ে উঠেছে দেশের বহু শিল্প নগরী। কিন্তু, এই সামর্থ্যকে, এই ব্যবস্থাকে কয়েকশো বছরের দাসত্ব আর তারপর দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সরকারি উদাসীনতা নষ্ট করে দিয়েছে।
এখন ভারত তার এই জলশক্তিকে পুনরুদ্ধার করার কাজ শুরু করেছে। ইতিমধ্যেই দেশে ১০০টিরও বেশি জলপথ গড়ে তোলা হয়েছে কিংবা গড়ে তোলার কাজ চলছে। ভারতের নদীগুলিতে যাতে নিয়মিত আধুনিক ক্রুজ যাতায়াত শুরু হয়, পণ্য পরিবহণের পাশাপাশি, পর্যটনও দ্রুতগতিতে বাড়ে, সেই লক্ষ্যে আমরা দ্রত কাজ করছি। কেন্দ্রীয় সরকার এবং বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতায় গঙ্গা নদী ও ব্রহ্মপুত্র নদের মধ্যে জলপথে যোগাযোগ স্থাপন করার কাজও সম্পন্ন হয়েছে।
আমি আজ দেশের জনগণকে এই সংক্রান্ত একটি তথ্য দিতে চাই। ২০২৩ সালের ১৩ জানুয়ারি বারাণসী থেকে একটি ক্রুজ রওয়ানা হবে, যেটি গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্রে ৩ হাজার ২০০ কিলোমিটার দীর্ঘ জলপথ অতিক্রম করে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে আসামে ঢুকে ডিব্রুগড় পর্যন্ত যাবে। এটি গোটা বিশ্বে এ ধরনের অভূতপূর্ব অনুপম ক্রুজ যাত্রা হয়ে উঠবে। এটি ভারতে ক্রমবর্ধমান ক্রুজ পর্যটনের উদাহরণ সৃষ্টি করবে। আমি পশ্চিমবঙ্গের জনগণকেও অনুরোধ জানাবো যে, আপনারাও এই পরিষেবাকে নিজেদের ব্যবসা-বাণিজ্য ও পর্যটনের জন্য ব্যবহার করুন।
এমনিতে আমি আরেকটি বিষয়ের জন্য বঙ্গবাসীদের বিশেষভাবে প্রণাম জানাতে চাই। বাংলার জনগণের মনে দেশের মাটির প্রতি যে ভালোবাসা - আমি সর্বদাই তার অনুরাগী। দেশের বিভিন্ন অংশকে জানার জন্য, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ভ্রমণের জন্য বাংলার জনগণের যে উৎসাহ তা সত্যিই অতুলনীয়।
অনেক মানুষ প্রথমবার সুযোগ পেলেই অন্য দেশে ঘুরতে চলে যান। কিন্তু বাঙালীরা ভ্রমণের ক্ষেত্রে সর্বদাই দেষের নানা অঞ্চলকে অগ্রাধিকার দেন। বাংলার জনগণ পর্যটনের ক্ষেত্রেও ‘নেশন ফার্স্ট’ বা ‘দেশ সর্বাগ্রে’ – এই ভাবনা নিয়ে পথে বেরোন। সেজন্য বলছি, আজ যখন দেশে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হচ্ছে, রেলওয়ে, হাইওয়ে, ওয়াটারওয়ে, এয়ারওয়ে এবং আইওয়ে আধুনিক হচ্ছে, তখন দেশে ‘ইজ অফ ট্রাভেল’ও নিঃসন্দেহে ততটাই উন্নত হচ্ছে। এর ফলে, পশ্চিমবঙ্গবাসী সবচাইতে বেশি উপকৃত হবেন।
বন্ধুগণ,
গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত বিখ্যাত পঙক্তি আমার মনে পড়ছে,
“ও আমার দেশের মাটি, তোমার পরে ঠেকাই মাথা’!
অর্থাৎ ‘হে আমার দেশের মাটি, আমি তোমার সামনে নিজের মাথা নত করছি!’। স্বাধীনতার এই অমৃতকালে মাতৃভূমিকে সর্বোপরি রেখে আমাদের সবাইকে মিলেমিশে কাজ করতে হবে। আজ গোটা বিশ্ব ভারতের দিকে অত্যন্ত ভরসা নিয়ে তাকিয়ে রয়েছে। এই ভরসাকে অব্যাহত রাখতে আমাদের প্রত্যেক ভারতবাসীকে পূর্ণ শক্তি দিয়ে সক্রিয় থাকতে হবে। আমাদের প্রত্যেক দিন দেশ গঠনের কাজ করে যেতে হবে। আমাদের প্রতিটি মুহূর্ত দেশ গঠনের কাজে উৎসর্গ করতে হবে। দেশ সেবার কাজ যেন কখনও না থামে – তা আমাদের সুনিশ্চিত করতে হবে।
এই কামনা করে আজ উদ্বোধন ও শিলান্যাস হওয়া প্রকল্পগুলির জন্য পশ্চিমবঙ্গবাসীকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই। আরেকবার আপনাদের সবাইকে অভিবাদন জানিয়ে আমি আমার আজকের বক্তব্য সম্পূর্ণ করছি।
অনেক অনেক ধন্যবাদ।