মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কিশিদা, সম্মানিত প্রতিনিধিবৃন্দ,
নমস্কার!
জাপানের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে প্রথম ভারত সফরের সময় প্রধানমন্ত্রী কিশিদাকে স্বাগত জানাতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত।
দিন কয়েক আগে জাপানে ভূমিকম্পের কারণে যে প্রাণহানি ও জীবনহানির ঘটনা ঘটেছে, তার জন্য ভারতের সকলের পক্ষ থেকে আমি সমবেদনা জানাই।
বন্ধুগণ,
প্রধানমন্ত্রী কিশিদা ভারতের পুরনো বন্ধু। বিদেশ মন্ত্রী হিসাবে তিনি ভারতে অনেকবার সফর করেছেন। তাঁর সঙ্গে মতবিনিময় করার সুযোগ আমার হয়েছে। বিগত কয়েক বছর ধরে ভারত – জাপান বিশেষ কৌশলগত ও আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্বের মূল কারিগর প্রধানমন্ত্রী কিশিদা। তাঁর জন্যই এই অংশীদারিত্বের অভূতপূর্ব অগ্রগতি হয়েছে।
আজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক সময়ে এই শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হল। কোভিড-১৯ এর প্রভাবে সারা পৃথিবী এখনও নানা সমস্যায় দীর্ণ।
আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে অর্থনীতির পুনরুদ্ধার এখনও ব্যহত হচ্ছে।
ভূ-রাজনৈতিক ঘটনাবলীও নতুন চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে।
এই প্রেক্ষাপটে ভারত ও জাপানের মধ্যে অংশীদারিত্ব আরও দৃঢ় হওয়ার গুরুত্ব শুধু দুটি দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এর ফলে, ভারত – প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল এবং এই অঞ্চলের বাইরে শান্তি, সমৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত হবে।
আমাদের সম্পর্কের মূলে রয়েছে – আমাদের পারস্পরিক আস্থা, আমাদের পারস্পরিক মূল্যবোধ, যেমন – আমাদের দুটি দেশের সভ্যতার সম্পর্ক, গণতন্ত্র, স্বাধীনতা এবং আইন মেনে চলা।
আজ আমাদের মধ্যে যে আলোচনা হয়েছে, তা আমাদের পারস্পরিক সহযোগিতাকে নতুন এক উচ্চতায় নিয়ে যাবে।
দ্বিপাক্ষিক বিষয় ছাড়াও, আমারা বেশ কিছু আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিষয় নিয়ে মতবিনিময় করেছি।
আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, রাষ্ট্রসংঘ এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংগঠনে আমাদের সহযোগিতাকে বৃদ্ধি করবো।
বন্ধুগণ,
বিগত কয়েক বছর ধরে ভারত ও জাপানের মধ্যে অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বর অভূতপূর্ব অগ্রগতি হয়েছে। দুটি দেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে বিপুল আস্থা ও উৎসাহ রয়েছে। ভারতের সবচেয়ে বড় বিনিয়োগকারী দেশ জাপান, আন্তর্জাতিক স্তরে এই দেশ আমাদের অংশীদার।
এর জন্য আমরা অত্যন্ত কৃতজ্ঞ।
মুম্বাই – আমেদাবাদ দ্রুতগতির রেল প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলেছে। ‘ওয়ান টিম, ওয়ান প্রোজেক্ট’ (একটি প্রকল্পের জন্য একটি দল) ভাবনা নিয়ে দুটি দেশ একযোগে কাজ করে চলেছে। ভারত ও জাপানের অংশীদারিত্বের আদর্শ উদাহরণ এই প্রকল্প।
আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে, ২০১৪ সালে এদেশে জাপানের বিনিয়োগের জন্য ৩ লক্ষ ৫০ হাজার কোটি জাপানী ইয়েনের যে লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছিল, তা ইতিমধ্যেই অতিক্রম করা গেছে।
এখন আমরা আমাদের উচ্চাকাঙ্খাকে আরও উঁচুতে বেঁধেছি। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আগামী পাঁচ বছরে ৫ লক্ষ কোটি জাপানী ইয়েন বা ৩ লক্ষ ২৫ হাজার কোটি ভারতীয় টাকার বিনিয়োগ হবে।
আপনারা জানেন, বিগত কয়েক বছরে ভারতে সর্বাঙ্গীন অর্থনৈতিক সংস্কার হাতে নেওয়া হয়েছে। এর ফলে, সহজে ব্যবসা-বাণিজ্য করার ক্ষেত্রে সুবিধা হয়েছে।
‘মেক ইন ইন্ডিয়া ফর দ্য ওয়ার্ল্ড’ (সারা বিশ্বের জন্য মেক ইন ইন্ডিয়া প্রকল্প) - এর জন্য ভারত সকলের জন্য সীমাহীন সুযোগ নিয়ে এসেছে।
এই প্রেক্ষিতে বলা ভালো, জাপানী কোম্পানিগুলি দীর্ঘদিন ধরে আমাদের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডারের কাজ করছে।
প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন ক্ষেত্রেও এই অংশীদারিত্ব নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
ভারতে জাপানী সংস্থাগুলি যাতে অনুকূল পরিবেশ পায়, তা নিশ্চিত করতে আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ।
ভারত ও জাপানের মধ্যে শিল্প ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতামূলক অংশীদারিত্ব সংক্রান্ত যে পরিকল্পনা আজ নেওয়া হয়েছে, তা ফলপ্রসূ হবে বলে আমরা নিশ্চিত।
জাপানের সঙ্গে আমাদের দক্ষ অংশীদারিত্ব এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
বন্ধুগণ,
নিশ্চিত, আস্থাশীল ও স্থিতিশীল জ্বালানী সরবরাহের গুরুত্ব সম্পর্কে ভারত ও জাপান ওয়াকিবহাল।
স্থিতিশীল অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে পৌঁছনোর জন্য এবং জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত সমস্যার মোকাবিলায় এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
আমাদের পরিবেশ-বান্ধব জ্বালানী সংক্রান্ত অংশীদারিত্ব একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে প্রমাণিত হবে।
আজ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আমরা সহমত হয়েছি। এ সম্পর্কে ঘোষণাও করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী কিশিদার এই সফর ভারত ও জাপানের মধ্যে বিশেষ কৌশলগত ও আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্বকে নতুন এক মাত্রা এনে দিল।
আরও একবার আমি প্রধানমন্ত্রী কিশিদা এবং তাঁর সঙ্গে ভারত সফররত প্রতিনিধিদলকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানাই।
ধন্যবাদ!