আমার প্রিয় দেশবাসীগণ
,
স্বাধীনতার এই পবিত্র দিবসে সব দেশবাসীকে অনেক অনেক শুভকামনা। আজ রাখিবন্ধনেরও উৎসব।শত–শত বছর ধরে ভাই-বোনের চিরাচরিত ভালবাসার অভিব্যক্তি ঘটে এই উৎসবে। আমি সমস্ত দেশবাসীকে সমস্ত ভাই ও বোনেদের এই রাখিবন্ধনের পবিত্র উৎসবে অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। স্নেহ–ভালোবাসার এই উৎসব যেন আমাদের সব ভাই-বোনেদের জীবনের আশা–আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ করে, স্বপ্ন সফল করে এবং স্নেহের রসধারা অব্যাহত রাখে।
আজ দেশ যখন স্বাধীনতা উদযাপন করছে, তখন দেশের অনেক জায়গায় অতিবর্ষণের ফলে, বন্যার কারণে মানুষ সমস্যার সঙ্গে লড়াই করছেন।অনেকে স্বজন হারিয়েছেন। আমি তাদের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করছি। আর রাজ্য সরকার, কেন্দ্রীয় সরকার, এন ডি আর এফ – সমস্ত সংগঠন মানুষের কষ্ট কীভাবে কমে, সাধারণ পরিস্থিতি দ্রুত কীভাবে ফিরিয়ে আনা যায়, তার জন্য দিন রাত চেষ্টা চালাচ্ছেন। আজ আমরা যখন স্বাধীনতার এই পবিত্র দিবস উদযাপন করছি, তখন স্বাধীনতার জন্য যাঁরা প্রাণ দিয়েছেন,যাঁরা নিজেদের যৌবন দিয়েছেন, জেলেই কাটিয়েছেন, যাঁরা ফাঁসির দড়িকে চুম্বন করেছেন, যাঁরা সত্যাগ্রহের মাধ্যমে স্বাধীনতার বিউগলে অহিংসার স্বর তুলেছেন… পূজনীয় বাপু’র নেতৃত্বে দেশ স্বাধীনতা পেয়েছে। আমি আজ দেশের স্বাধীনতার সেই সমস্ত আত্মবলিদানকারীদের, ত্যাগী–তাপসদের সাদর প্রণাম জানাই।তেমনি স্বাধীন হওয়ার পর এত বছরে দেশের শান্তির জন্য, নিরাপত্তার জন্য, সমৃদ্ধির জন্য, লক্ষ-লক্ষ মানুষ অংশ নিয়েছেন। আমি আজ স্বাধীন ভারতের উন্নতির জন্য, শান্তির জন্য, সমৃদ্ধির জন্য, জনসাধারণের আশা–আকাঙ্ক্ষাকে পূর্ণ করার যারা কাজ করেছেন, আজ আমি তাদেরও প্রণাম জানাই। নতুন সরকার আসার পর লালকেল্লা থেকে আজ আরও একবার সকলকে গর্বিত করার সুযোগ পেয়েছি। এখন এই নতুন সরকারের দশ সপ্তাহও হয়নি, কিন্তু দশ সপ্তাহের ছোট সময়কালের মধ্যেই সব ক্ষেত্রে, সমস্ত দিকে, সব ধরনের প্রয়াসকে জোর দেওয়া হয়েছে, নতুন মাত্রা দেওয়া হয়েছে আর সাধারণ মানুষ যে সব আশা, প্রতীক্ষা ও প্রত্যাশার সঙ্গে আমাদের সেবা করার সুযোগ দিয়েছেন, সেগুলো পূর্ণ করায় এক মুহূর্তও দেরি না করে, আমরা পূর্ণ সক্ষমতার সঙ্গে, পূর্ণ সমর্পণ ভাবনার সঙ্গে, আপনাদের সেবায় মগ্ন।
দশ সপ্তাহের মধ্যেই অনুচ্ছেদ ৩৭০ ধারা সরিয়ে নেওয়া, ৩৫-এঅপসারণ, সর্দার বল্লবভাই প্যাটেলের স্বপ্ন পূরণ করার লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। দশ সপ্তাহের মধ্যেই আমাদের মুসলমান মা ও বোনেদের তাদের অধিকার দেওয়ার জন্য তিন তালাকের বিরুদ্ধে আইন তৈরি করা, সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে যুক্ত আইনে আমূল পরিবর্তন আনা, তাকে এক নতুন শক্তি দেওয়া, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সংকল্পকে আরও মজবুত করা এবংআমাদের কৃষক ভাইদের ‘প্রধানমন্ত্রী সম্মান–নিধি’র মাধ্যমে ৯০ হাজার কোটি টাকা কৃষকদের অ্যাকাউন্টে ট্রানস্ফার করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ।আমাদের কৃষক ভাই-বোন ও ছোট ব্যবসায়ী ভাই-বোনেরা কল্পনাও করেননি যে, কখনও তাদের জীবনেও পেনশনের ব্যবস্থা হতে পারে। ষাট বছর বয়সের পর তাঁরাও সম্মানের সঙ্গে বাঁচতে পারেন। শরীর যখন বেশি কাজ করার অনুমতি দেয় না, সে সময় যদি কোনও সাহায্য পাওয়া যায়, আমরা তেমন পেনশন যোজনা চালু করার কাজ করেছি।
জলসংকট নিয়ে অনেক আলোচনা হচ্ছে।বলা হচ্ছে যে আমাদের ভবিষ্যৎ জলসংকটের মধ্যে কাটবে। এই সমস্যার মোকাবিলায় যাতে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলি মিলেমিশে আগে থেকেই ভেবে প্রকল্প তৈরি করে,তার জন্য একটা পৃথক জলশক্তি মন্ত্রণালয় গঠন করা হয়েছে।
আমাদের দেশে অনেক বেশি সংখ্যায় চিকিৎসকদের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে, আরোগ্যের সুবিধা ও ব্যবস্থার দরকার আছে। তা পূরণ করতে নতুন আইন আছে, নতুন ব্যবস্থা এবং নতুন ভাবনার প্রয়োজন রয়েছে।দেশের যুবক–যুবতিদের চিকিৎসক হওয়ার সুযোগ দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। এইসব মনে রেখে, স্বাস্হ্য শিক্ষাকে আরও উন্নত করতে আমরা অনেক গুরুত্বপূর্ণ আইন বানিয়েছি, অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছি।আজ গোটা বিশ্বে শিশুদের সঙ্গে অত্যাচারের ঘটনা শোনা যাচ্ছে। ভারতও আমাদের ছোট শিশুদের অসহায় রাখতে পারে না। সেই শিশুদের সুরক্ষার জন্য কঠোর আইন প্রনয়নের দরকার ছিল। আমরা এই কাজটাও সম্পূর্ণ করেছি।
ভাই ও বোনেরা, ২০১৪ থেকে ২০১৯, পাঁচ বছর আপনারা আমাকে সেবা করার সুযোগ দিয়েছেন।অনেকগুলো বিষয় এমন ছিল… … সাধারণ মানুষ নিজেদের প্রয়োজনের তাগিদে লড়াই করতেন। আমরা পাঁচ বছরে লাগাতর চেষ্টা করেছি যে, আমাদের নাগরিকদের দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োজনীয়তা, বিশেষ করে গ্রামের, গরিব- কৃষক- দলিত- পীড়িত- শোষিত- বঞ্চিত ও আদিবাসীদের— অগ্রাধিকার দিয়েছি।উন্নয়নের গাড়িকে আমরা ঠিক পথেই এনেছিলাম, আজ সেটি সঠিক লক্ষ্যে খুব দ্রুত কাজ করে চলেছে।কিন্তু সময় বদলাচ্ছে। যদি ২০১৪ থেকে ২০১৯ প্রাথমিক প্রয়োজনীয়তা মেটানোর সময় হয়ে থাকে, তাহলে ২০১৯–এর পরবর্তী সময়কাল দেশবাসীর আকাঙ্ক্ষা পূরণের সময়কাল। তাদের স্বপ্নকে সফল করার সময়।আর তাই, একুশ শতকের ভারত কেমন হবে, কত দ্রুত গতিতে চলবে, কতটা ব্যাপকভাবে কাজ করবে,কতটা উঁচুতে ওঠার চিন্তা করবে, এই সমস্ত বিষয়কে মাথায় রেখে আগামী পাঁচ বছরের সময়কালকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার নকশা তৈরি করে আমরা একের পর এক পদক্ষেপ নিচ্ছি।
২০১৪ সালে আমি দেশের জন্য নতুন ছিলাম। ২০১৩–১৪ সালে নির্বাচনের আগে সারা ভারত ঘুরে দেশবাসীর ভাবনা বোঝার চেষ্টা করেছি। কিন্তু সবার চেহারায় একটা নিরাশা ছিল, একটা আশংকা ছিল।মানুষ ভাবতেন যে, এই দেশ কি বদলাতে পারবে? সরকার বদলালে কি দেশ বদলাবে? একটা নিরাশা জনসাধারণের মনে বাসা বাঁধছিল। দীর্ঘ সময়ের অনুভবে এই ফল পাওয়া গেল, আশা দীর্ঘস্থায়ী হয় না, আশা কিছু সময়ের মধ্যেই নিরাশার গর্ভে ডুবে যায়। কিন্তু যখন ২০১৯–এ, পাঁচ বছরের কঠোর পরিশ্রমের পর, জনসাধারণের সঙ্গে শুধু সমর্পন ভাবনা নিয়ে, মনে ও চেতনায়- শুধু আমার দেশ, আর শুধু আমার দেশের কোটি কোটি দেশবাসী, এই ভাবনা নিয়ে এগিয়ে গেছি, প্রতিটি মুহূর্ত তার জন্য ব্যয় করেছি, আর যখন ২০১৯-এ পৌঁছালাম, তখন আমি অবাক হলাম। দেশবাসীর মেজাজ বদলে গেছে সমস্ত নিরাশা আশায় বদলে গেছে, সমস্ত স্বপ্ন সংকল্পের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে, সাফল্য সামনে দেখা যাচ্ছিল, আর সাধারণ মানুষের একটাই স্বর ছিল– হ্যাঁ, আমার দেশ বদলাতে পারে! সাধারণ মানুষের একটিই আওয়াজ ছিল– হ্যাঁ,আমরাও দেশ বদলাতে পারি, আমরা পেছনে থাকব না!
১৩০ কোটি নাগরিকের চেহারায় এই মনোভাবের ছাপ, ভাবনার এই গুঞ্জন আমাদের নয়া শক্তি, নতুন বিশ্বাস দেয়। আমরা ‘সব কা সাথ, সব কা বিকাশ’-এর মন্ত্র নিয়ে এগিয়ে চলেছি। কিন্তু পাঁচ বছরের মধ্যেই দেশবাসী সকলের বিশ্বাসের রঙে সমস্ত পরিবেশকে রঙিন করেছেন। এই সবার বিশ্বাসই পাঁচ বছরে জন্মেছে, যা আমাদের আগামী দিনে আরও বেশি দক্ষতার সঙ্গে দেশবাসীর সেবায় প্রেরণা দেবে।
এই নির্বাচনে আমি দেখেছি, আর আমি সেই সময়েও বলেছি, না কোনও নেতা নির্বাচনে লড়ছেন, না কোনও দল নির্বাচনে লড়ছে, না মোদী নির্বাচনে লড়ছে, না মোদীর কোনও সাথী ভোটে লড়ছেন ; দেশের সাধারণ মানুষ, জনতা-জনার্দন নির্বাচনে লড়ছেন। ১৩০ কোটি দেশবাসী ভোটে লড়েছেন, নিজেদের স্বপ্নের জন্য লড়ছিলেন, গণতন্ত্রের প্রকৃত স্বরূপ এই ভোটে দেখা যাচ্ছিল।
আমার প্রিয় দেশবাসীগণ, সমস্যার সমাধান, এর সঙ্গে স্বপ্নগুলি, সংকল্পগুলি ও সাফল্যের সময়কালে আমাদের একসঙ্গে চলতে হবে। এটা পরিষ্কার যে, সমস্যার যখন সমাধান হয়, তখন আত্মনির্ভরতার মনোভাব গড়ে ওঠে। সমাধান থেকে স্বাবলম্বনের দিকে গতি বাড়ে।কেউ যখন স্বাবলম্বী হয়, তখন আপনা থেকেই স্বাভিমান জাগ্রত হয়। আর স্বাভিমানের ক্ষমতা হয় অনেক বেশি। আত্মসম্মানের শক্তি যে কোনও কিছু থেকে বেশি হয় এবং যখন সমাধান থাকে, সংকল্প থাকে, সামর্থ্য থাকে, স্বাভিমান থাকে, তখন সফলতার পথে কিছুই বাধা হয়ে দাঁড়ায় না। আর আজ দেশ সেই আত্মসম্মানের সঙ্গে সফলতার নতুন উচ্চতাকে পার করতে এগিয়ে যেতে দৃঢ় সংকল্প নিয়েছে। যখন আমরা সমস্যার সমাধান দেখি, তখন বিচ্ছিন্নভাবে দেখা উচিত নয়। সমস্যা আসবেই, একসাথে প্রশংসা কুড়ানোর জন্য কোনো কাজে হাত দিয়ে পরে ছেড়ে দেওয়া- এই পদ্ধতি দেশের স্বপ্নকে পূর্ণ করাতে কাজে আসবে না। আমাদের সমস্যাকে শেকড় থেকে সমাধানের চেষ্টা করতে হবে। আপনারা দেখে থাকবেন, আমাদের মুসলমান মেয়েরা, আমাদের বোনেরা, তাদের মাথার ওপর তিন তালাকের তলোয়ার ঝুলছিল। তাঁরা ভয়ে ভয়ে জীবন-যাপন করতেন।তিন তালাকের শিকার যারা হননি, কিন্তু যে কোনও সময় তিন তালাকের শিকার হতে পারেন— এই ভয় তাদের নিশ্চিন্তে বাঁচতে দিত না। তাদের অসহায় করে দিত। পৃথিবীর কোনও দেশে এটা আর নেই। ইসলামিক দেশগুলিও এই কু–প্রথাকে আমাদের অনেক আগেই শেষ করেছে। কিন্তু কোনও না কোনও কারণে আমাদের মুসলিম মা-বোনেদের অধিকার দিতে আমরা ইতস্তত করছিলাম। যদি এই দেশে সতীপ্রথা সমাপ্ত করতে পারি, আমরা ভ্রূণ হত্যা সমাপ্ত করার আইন তৈরি করতে পারি, যদি বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে আওয়াজ ওঠাতে পারি, আমরা পণপ্রথার লেনদেনের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারি, তাহলে কেন আমরা তিন তালাকের বিরুদ্ধেও আওয়াজ তুলব না? আর সেজন্য ভারতের গণতন্ত্রের চেতনা, ভারতের সংবিধানের ভাবনা, বাবাসাহেব আম্বেদকরের ভাবনাকে সম্মান করে, আমাদের মুসলিম বোনেরা যাতে সমান অধিকার পান, তাদের মনে যাতে এক নতুন বিশ্বাস তৈরি হয়, ভারতের উন্নয়নের যাত্রায় তাঁরাও যাতে সক্রিয় অংশগ্রহণ করতে পারেন, তা সুনিশ্চিত করতে আমরা এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এই সিদ্ধান্ত রাজনীতির দাড়িপাল্লায় ওজন করার সিদ্ধান্ত নয়, এই সিদ্ধান্ত শতাব্দীর পর শতাব্দীকাল ধরে মা বোনেদের জীবন রক্ষার নিশ্চয়তা দেবে।
একইরকম ভাবে আমি দ্বিতীয় একটি উদাহরণ দিতে চাই— ৩৭০ ধারা, ৩৫(এ) ধারা কেন বিলোপ করার প্রয়োজন ছিল? এই সরকারের পরিচয় হচ্ছে— আমরা সমস্যাকে সরিয়ে দিই না, আবার তা জিইয়েও রাখি। এখন সমস্যাকে সরানোর সময়ও নেই, তা জিইয়ে রাখারও সময় নেই। যে কাজ গত ৭০ বছরে হয়নি, নতুন সরকার হওয়ার পর, ৭০ দিনের মধ্যেই ৩৭০ ধারা এবং ৩৫(এ)-কে সরানোর কাজ ভারতের সংসদের দুই কক্ষ –রাজ্যসভা ও লোকসভা, দুই-তৃতীয়াংশ গরিষ্ঠতায় পাশ করেছে। এর অর্থ হল,প্রত্যেকের মনেই এই বিষয়টি ছিল, কিন্তু শুরুটা কে করবেন, সামনে কে আসবেন, তারই অপেক্ষাই ছিলেন, আর দেশবাসী আমাকে এই কাজ দিয়েছেন, আর যে কাজ আপনারা আমাকে দিয়েছেন, আমিও করার জন্য এগিয়ে এসেছি। আমি নিজের জন্য কিছু করিনি।
আমরা জম্মু-কাশ্মীরের পুনর্গঠনের লক্ষ্যেও এগিয়ে যাচ্ছি। ৭০ বছর প্রত্যেকেই কিছু-না-কিছু চেষ্টা করেছেন, প্রতিটি সরকারই কিছু না কিছু চেষ্টা করেছে, কিন্তু কাঙ্ক্ষিত পরিণাম আসেনি। আর যখন কাঙ্ক্ষিত পরিণাম আসেনি, তখন নতুন পদ্ধতিতে ভাবার, নতুন পথে পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা ছিল।আর জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখের নাগরিকের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ হোক, এটা আমাদের সবার দায়িত্ব। তাদের স্বপ্নের নতুন ডানা হোক, এটা আমাদের সবার দায়িত্ব। সেজন্য ১৩০ কোটি দেশবাসীকে এই দায়িত্ব পালন করতে হবে। আর এই দায়িত্ব পূরণ করতে, যে বাধাই সামনে আসুক, তাকে দূর করার চেষ্টা আমরা করেছি।
গত ৭০ বছরে এই ব্যবস্থা বিচ্ছিন্নতাবাদীদের শক্তি দিয়েছে, সন্ত্রাসবাদের জন্ম দিয়েছে, পরিবারতন্ত্র চালিয় গেছে, আর একরকম ভাবে দুর্নীতি ও ভেদাভেদের নীতিকে প্রধান্য দিয়েছে। আর সেজন্য সেখানকার মহিলারা যাতে অধিকার পান, সেখানে থাকা আমার দলিত ভাইবোনেরা, সারা দেশে দলিতরা যেসব অধিকার পেয়ে থাকেন, তা পেতেন না। আমাদের দেশের নানা জনজাতির মানুষ, আদিবাসীরা যেসব অধিকার পান, তা জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখের আদিবাসীদেরও তা পাওয়া উচিত। সেখানে আমাদের এমন সমাজ ও ব্যবস্থার মানুষ, তা সে গুর্জর হোক, বকরওয়াল হোক, গদ্দি হোক, সিপ্পি হোক, বাল্টি হোক —এমন অনেক জনজাতি, তাদের রাজনৈতিক অধিকারও পাওয়া উচিত। সেটা দেওয়ার লক্ষ্যেই… অবাক হয়ে যাবেন, সেখানকার সাফাই কর্মচারী ভাই ও বোনেদের ওপর আইনি বাধা আরোপ করা হয়েছিল। তাদের স্বপ্নকে চূর্ণ করে দেওয়া হয়েছিল। আজ আমরা তাদের স্বাধীনতা দেওয়ার কাজ করেছি।
দেশ ভাগের সময় লক্ষ-কোটি মানুষ উদ্বাস্তু হয়ে এসেছেন, তাঁরা কোনও অন্যায় করেননি, কিন্তু যারা জম্মু-কাশ্মীরে এসে থেকেছেন, তাঁরা মানবিক অধিকারও পাননি, নাগরিক অধিকারও পাননি। জম্মু-কাশ্মীরে আমার পাহাড়ি ভাই-বোনেরাও আছেন। তাদের নিয়েও চিন্তা করার লক্ষ্যে আমরা পদক্ষেপ নিতে চাই।
আমার প্রিয় দেশবাসীরা, জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখ সুখ সমৃদ্ধি এবং শান্তির জন্য ভারতের প্রেরণা হয়ে উঠতে পারে। ভারতের উন্নয়ন যাত্রায় অনেক বড় অংশ নিতে পারে। তাদের জীবনে আগের সেই সম্মানজনক দিনগুলো ফিরিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে আমরা সবাই চেষ্টা করতে পারি। এইসব চেষ্টা নিয়ে যে নতুন ব্যবস্থা গড়ে ওঠেছে, তা সরাসরি নাগরিকদের হিতে কাজ করার সুযোগ তৈরি করবে। এখন দেশের, জম্মু-কাশ্মীরের সাধারণ নাগরিকও দিল্লি সরকারকে প্রশ্ন করতে পারে। মাঝে কোনও বাধা আসবে না। এই সরাসরি প্রশ্ন করার ব্যবস্থা আজ আমরা চালু করতে পেরেছি। কিন্তু যখন গোটা দেশ, সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একটি রাজনৈতিক দলও—এর ব্যতিক্রম নয়—৩৭০ ধারা, ৩৫-(এ) কে সরানোর জন্য কেউ তীব্রভাবে, কেউ নীরবে সমর্থন দিচ্ছে। কিন্তু রাজনীতির গলিখুঁজির মধ্যে নির্বাচনের দাড়িপাল্লায় মাপার জন্য কিছু মানুষ ৩৭০-এর পক্ষে কিছু না কিছু বলছেই। যারা ৩৭০-এর পক্ষে ওকালতি করেন, তাদেরকে দেশ জিজ্ঞাসা করছে, যদি ৩৭০ আর ৩৫(এ) ধারা এতোটাই গুরুত্বপূর্ণ ছিল, এতটাই প্রয়োজন ছিল, এগুলিই যদি ভাগ্য বদলানোর ছিল, তাহলে ৭০ বছর পর্যন্ত, এত সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকা সত্ত্বেও, একে স্থায়ী করেননি কেন? কেন অস্থায়ী করে রেখেছিলেন? যদি এতটাই প্রত্যয় ছিল, তাহলে সামনে এগিয়ে এসে একে স্থায়ী করতেন। কিন্তু এর অর্থ হচ্ছে, আপনারাও জানতেন, যা স্থির হয়েছিল, তা সঠিক ছিল না।কিন্তু সংশোধন করার মতো সাহস আপনাদের ছিল না, অভিপ্রায় ছিল না। আপনাদের রাজনৈতিক ভবিষ্যতের ওপর প্রশ্নচিহ্ন লেগে যাওয়ার ভয় পাচ্ছিলেন। কিন্তু আমার জন্য দেশের ভবিষ্যতই সব কিছু, রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ বলে কিছু নেই।
আমাদের সংবিধানের রচয়িতারা, সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের মত মহাপুরুষ, দেশের একতার জন্য, রাজ্যগুলির সংযুক্তির জন্য কঠিন সময়েও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। সাহসের সঙ্গে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।দেশকে ঐক্যবদ্ধ করতে সফল প্রয়াস করেছেন। কিন্তু ৩৭০ ধারার জন্য, ৩৫(এ) ধারার জন্য কিছু বাধাও এসেছিল।
আজ লালকেল্লা থেকে যখন আমি দেশের উদ্দেশ্যে বলছি, এটা গর্বের সঙ্গে বলছি যে, আজ সব ভারতবাসী বলতে পারে, এক জাতি, এক সংবিধান।আর আমরা সর্দার সাহেবের ‘এক ভারত – শ্রেষ্ঠ ভারত’- এই স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে সক্রিয় রয়েছি। তখন এটা পরিষ্কার হয়ে যায়, আমরা এমন ব্যবস্থাকে বিকশিত করব, যা দেশের একতাকে শক্তি দেবে, দেশকে জুড়তে অমোঘ শক্তি হিসেবে উঠে আসবে এবং এই প্রক্রিয়া নিরন্তর চলা উচিত। এটা অল্প সময়ের জন্য হলে চলবে না, অবিরাম চালিয়ে যেতে হবে।
জিএসটি-’র মাধ্যমে আমরা ‘এক জাতি, এক কর ব্যবস্হা’– এই স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করেছি। এভাবেই কিছুদিন আগে বিদ্যুতের ক্ষেত্রে ‘এক জাতি, এক গ্রিড’ এই প্রকল্পকেও আমরা সাফল্যের সঙ্গে সম্পন্ন করেছি।
সেভাবেই ‘এক জাতি-এক পরিবহন ব্যবস্হা’- এই ব্যবস্থাও আমরা বিকশিত করেছি। আর আজ দেশে ব্যাপক আলোচনা চলছে, ‘এক দেশ, একসঙ্গে নির্বাচন’। এই আলোচনা হওয়া উচিত, গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে হওয়া উচিত, আর কখনও না কখনও ‘এক ভারত – শ্রেষ্ঠ ভারত’ স্বপ্নের বাস্তবায়নে আরও এমন নতুন বিষয়কে আমাদের যুক্ত করতে হবে।
আমার প্রিয় দেশবাসীরা, দেশকে নতুন উচ্চতা পার করতে হবে, দেশকে বিশ্বের মধ্যে নিজের স্থান প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আমাদেরকে নিজেদের ঘরেও দারিদ্র্য থেকে মুক্তির ভাবনায় জোর দিতে হবে। এটা কারও জন্য অনুগ্রহ নয়। ভারতের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য, আমাদের দারিদ্র্য থেকে মুক্ত হতে হবে। গত পাঁচ বছরে দারিদ্র্য কমানোর লক্ষ্যে, যাতে মানুষ দারিদ্র্য থেকে বেরিয়ে আসতে পারেন সেই লক্ষ্যে অনেক সফল প্রচেষ্টা হয়েছে। আগের তুলনায় বেশি দ্রুততায় ও আরও ব্যাপকতার সঙ্গে এই লক্ষ্যে সাফল্য অর্জন করা গেছে। গরিব ব্যক্তি যদি সম্মান পান, তাহলে তাঁর স্বাভিমান জাগে, তাহলে তিনি দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করার জন্য সরকারের অপেক্ষা করবেন না। তিনি নিজের ক্ষমতাতেই দারিদ্র্যকে পরাস্ত করতে এগিয়ে আসবেন। আমাদের মধ্যে যদি বিপরীত পরিস্থিতির সঙ্গে লড়াই করার শক্তি কারও থেকে থাকে, তা দরিদ্র ভাই-বোনেদের মধ্যেই রয়েছে। যত ঠান্ডাই পড়ুক না কেন, তাঁরা হাত মুঠো করে কাটিয়ে দিতে পারেন।তাঁদের ভেতর এই ক্ষমতা আছে। আসুন আমরা এই ক্ষমতার উপাসক হই, আর সেজন্য তাদের জীবনের দৈনন্দিন সমস্যাগুলিকে আমরা দূর করি।
কী কারণে আমাদের গরিবদের শৌচালয় থাকবে না, ঘরে বিদ্যুৎ থাকবে না, বসবাসের ঘর থাকবে না, জলের সুবিধা থাকবে না, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থাকবে না, ঋণ নিতে মহাজনের ঘরে গিয়ে এক অর্থে সব কিছু বন্ধক রাখতে হবে? আসুন, গরিবদের আত্মসম্মান, আত্মবিশ্বাস, তাদের স্বাভিমানকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য, শক্তি দেওয়ার জন্য আমরা চেষ্টা করি।
ভাই ও বোনেরা, স্বাধীনতার ৭০ বছর হয়ে গেছে। অনেক কাজ আগের সরকারগুলি নিজেদের মত করে করেছে। সরকার যে দলেরই হোক না কেন, কেন্দ্রের হোক বা রাজ্যের হোক, প্রত্যেকেই নিজস্ব পদ্ধতিতে চেষ্টা করেছে। কিন্তু এটাও সত্য যে, আজও ভারতে প্রায় অর্ধেক পরিবার এমন আছে, যেখানে পানীয় জল পাওয়া যায় না।তাদের পানীয় জল জোগাড়ের জন্য কঠোর পরিশ্রম করতে হয়। মা-বোনেদের মাথায় বোঝা নিয়ে, কলসী নিয়ে দুই-দুই তিন-তিন, পাঁচ-পাঁচ কিলোমিটার যেতে হয়। জীবনের অনেকটা সময় শুধু জলের জন্য চলে যায়। আর সেজন্য এই সরকার একটি বিশেষ কাজের দিকে গুরুত্ব দেওয়ার জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছে— আর তা হল— আমাদের সবার ঘরে জল কীভাবে পৌঁছাবে? প্রতিটি ঘরে জল কীভাবে যাবে?পান করার শুদ্ধ জল কীভাবে আসবে? আর সেজন্য আজ আমি লালকেল্লা থেকে ঘোষণা করছি যে, আমরা আগামী দিনে ‘জল-জীবন মিশন’-কে এগিয়ে নিয়ে যাব। এই ‘জল-জীবন মিশন’-এর জন্য কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলি একসঙ্গে কাজ করবে ও আগামী বছরে সাড়ে তিন লক্ষ কোটি টাকারও বেশি অর্থ এই ‘জল-জীবন মিশন’-বাবদ খরচ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। জল সঞ্চয় হোক, জল সিঞ্চন হোক, বর্ষার বিন্দু বিন্দু জল ধরে রাখার কাজ হোক, সমুদ্রের জল বা বর্জ্য জল শুদ্ধিকরণ প্রকল্প হোক, কৃষকদের জন্য ‘প্রতি বিন্দুতে অধিক ফসল-’, ক্ষুদ্র চাষের প্রকল্প হোক, জল বাঁচানোর অভিযান হোক, জলের প্রতি সাধারণ মানুষ সচেতন হোন, সংবেদনশীল হোন, জলের গুরুত্ব বুঝুন, আমাদের শিক্ষাক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রীদেরও ছোটবেলা থেকেই জলের গুরুত্ব সম্পর্কে শিক্ষা দেওয়া হোক। জল সংগ্রহের জন্য, জলস্রোতের পুনর্জীবনের জন্য আমরা অনবরত চেষ্টা করব এবং এই বিশ্বাস নিয়ে এগোব যে, জলের জন্য গত ৭০ বছরে যা কাজ হয়েছে, আমাদের ৫ বছরে তার চারগুণেরও বেশি কাজ করতে হবে। এখন আমরা আর বেশি অপেক্ষা করতে পারব না। আর এই দেশের মহান সন্ন্যাসী, কয়েকশো বছর আগে সন্ত তিরুবল্লুবর জি সেই সময়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছিলেন। কয়েকশো বছর আগে, তখন তো কেউ জলের সংকটের কথা ভাবেনওনি, জলের গুরুত্ব নিয়ে হয়তো ভাবেননি। তখন সন্ন্যাসী বলেছিলেন, “নিরুন্ডি অভিয়াদু উল্গ নিরুন্ডি উল্গ’ মানে যখন জল সমাপ্ত হয়ে যায়, তখন প্রকৃতির কাজও থেমে যায়। আটকে যায়। বলতে গেলে বিনাশ শুরু হয়।
আমার জন্ম হয়েছে গুজরাটে, গুজরাটের তীর্থস্থান মহডি রয়েছে উত্তর গুজরাটে। জৈন সম্প্রদায়ের মানুষ সেখানে যাতায়াত করেন। আজ থেকে ১০০ বছর আগে সেখানে একজন জৈন মুনি ছিলেন। তিনি কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, কৃষক ছিলেন, ক্ষেতে কাজ করতেন, কিন্তু জৈন পরম্পরার সঙ্গে যুক্ত হয়ে তিনি দীক্ষিত হন এবং জৈন মুনি হয়ে ওঠেন।
প্রায় ১০০ বছর আগে তিনি লিখে গেছেন, সেই বুদ্ধিসাগরজী মহারাজ লিখেছেন যে, একদিন এমন আসবে যে, যখন জল মুদির দোকানে বিক্রি হবে। আপনারা কল্পনা করতে পারেন, ১০০ বছর আগে একজন সন্ন্যাসী লিখে গেছেন যে, জল মুদির দোকানে বিক্রি হবে! আর, আজ আমরা পাণীয় জল মুদির দোকান থেকে কিনি। আমরা কোথা থেকে কোথায় পৌঁছে গেছি।
আমার প্রিয় দেশবাসীরা, আমরা ক্লান্ত হব না, আমরা থামব না, আমরা থামব না আর এগিয়ে যেতে দ্বিধাগ্রস্ত হব না। এই অভিযান সরকারি হয়ে উঠলে চলবে না। জলসঞ্চয়ের এই অভিযান, যেমন স্বচ্ছতা অভিযান হয়েছিল, জনসাধারণের অভিযান হয়ে উঠতে হবে। জনগণের আদর্শ নিয়ে, জনগণের প্রত্যাশাগুলি নিয়ে, জনগণের ক্ষমতা নিয়ে আমাদের এগোতে হবে।
আমার প্রিয় দেশবাসীরা, এখন আমাদের দেশ সেই পর্যায়ে পৌঁছেছে, যখন অনেক বিষয় আর আমাদের নিজেদের কাছে লুকিয়ে রাখার প্রয়োজন নেই। চ্যালেঞ্জগুলিকে সামনে থেকে স্বীকার করার সময় এসে গেছে।কখনও আমরা রাজনৈতিক লাভ-লোকসানের নিরিখে সিদ্ধান্ত নিই, কিন্তু এর ফলে দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের অনেক ক্ষতি হয়।
তেমনি একটি বিষয় হল, যা আমি লালকেল্লা থেকে স্পষ্ট করতে চাই, আর সেই বিষয় হল, আমাদের দেশে অপরিকল্পিত জনসংখ্যা বিস্ফোরণ। এই জনসংখ্যা বিস্ফোরণ আমাদের জন্য, আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য, অনেক নতুন সংকটের জন্ম দেয়। কিন্তু একথা মানতে হবে যে, আমাদের দেশে একটি সচেতন অংশ রয়েছে, যারা একথা খুব ভালভাবে বোঝেন। তাঁরা নিজেদের বাড়ির শিশুদের নিয়ে চিন্তাভাবনা করেন।তাঁরা ভাবেন যে, আমি তার প্রতি কোনও অন্যায় করছি না তো? তার যে মানবিক প্রয়োজন, সেগুলি মেটাতে পারব তো? এই সমস্ত মাপকাঠিতে নিজের পরিবারের হিসেব-নিকেশ করে আত্মপ্রেরণার মাধ্যমে আজও আমাদের দেশে একটি ক্ষুদ্র অংশ পরিবারকে সীমিত রেখে নিজের পরিবারের উপকার করেন এবং দেশের কল্যাণে অনেক বড় অবদান রাখেন। তাঁরা সম্মানের যোগ্য, সমাদরের যোগ্য। ছোট পরিবার বজায় রেখেও তাঁরা দেশভক্তিই প্রকাশ করেন। আমি চাই যে, আমরা সমাজের প্রত্যেক মানুষ তাঁদের জীবনকে খতিয়ে দেখি, যে তাঁরা নিজেদের পরিবারকে জনসংখ্যা বৃদ্ধি থেকে দূরে রেখে কতটা পরিবারের সেবা করেছেন। দেখতে দেখতে এক দুই প্রজন্ম নয়, পরিবার কিভাবে এগিয়ে গেছে, ছেলেমেয়েরা কিভাবে শিক্ষিত হয়েছে, সেই পরিবারগুলি কিভাবে রোগমুক্ত থেকেছে, সেই পরিবারগুলি নিজেদের প্রাথমিক প্রয়োজন সমুহ কেমন সুন্দরভাবে মেটায়, আমরা তাঁদের কাছ থেকে শিখব। আর আমাদের বাড়ির কোনও শিশু জন্মানোর আগে আমরা যেন ভাবি, যে শিশু আমাদের ঘরে জন্ম নেবে, আমরা কি তার প্রয়োজন মেটাতে নিজেদের প্রস্তুত করেছি? আমরা কি তাকে সমাজের ভরসায় ছেড়ে দেব? আমি তাকে তার ভাগ্যের হাতে ছেড়ে দেব? কোনও মা-বাবা এমন হতে পারেন না, যাঁরা নিজেদের সন্তান জন্ম দিয়ে এই ধরণের জীবন ধারণের জন্য বাধ্য করতে চান। আর সেইজন্য একটি সামাজিক সচেতনতার প্রয়োজন রয়েছে।
যারা এতবড় ভুমিকা পালন করেছেন, তাদের সম্মান দিতে হবে। আর সেই প্রচেষ্টার উদাহরণ থেকে সমাজের বাকি অংশ, যারা এখনও এর বাইরে আছে, তাদের সামিল করে জনসংখ্যা বিস্ফোরণ প্রতিরোধে আমাদের চিন্তা করতে হবে।
সরকারকেও আলাদা-আলাদা প্রকল্প নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে, তা সে রাজ্য সরকার হোক কিংবা কেন্দ্রীয় সরকার- প্রত্যেককে এই দায়িত্ব নিয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলতে হবে। আমরা অসুস্থ সমাজের কথা ভাবতে পারি না, আমরা অশিক্ষিত সমাজের কথাও ভাবতে পারিনা। একবিংশ শতাব্দীর ভারতের স্বপ্ন পূর্ণ করার ক্ষমতা ব্যক্তির থেকে শুরু হয়, পরিবার থেকে শুরু হয়। কিন্তু যদি জনসমাজ শিক্ষিত না হয়, স্বাস্থ্যবান না হয়, তাহলে সেই পরিবার সুখী হয় না, সেই দেশও সুখী হয় না।
জনগণ শিক্ষিত হোক, সক্ষম হোক, দক্ষতা সম্পন্ন হোক এবং নিজের ইচ্ছা ও প্রয়োজন মেটাতে উপযুক্ত পরিবেশ পাক, তার প্রয়োজনীয় সম্পদ পাক, তাহলে আমি মনে করি, দেশ এই সমস্ত চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম।
আমার প্রিয় দেশবাসীরা, আপনারা ভালই জানেন যে দুর্নীতি, স্বজনপোষণ আমাদের দেশের কল্পনাতীত ক্ষতি করেছে এবং ঘুনের মতো আমাদের জীবনে ঢুকে গেছে। সেগুলি বার করতে আমরা ক্রমাগত প্রয়াস চালাচ্ছি। সাফল্যও পেয়েছি, কিন্তু রোগ এতই গভীরে, এতই ব্যাপক এবং এতটাই প্রসারিত যে আমাদের আরও বেশি চেষ্টা চালাতে হবে। আর সেটাও শুধু সরকারি স্তরে নয়, সব স্তরেই চালিয়ে যেতে হবে। আর এমনটাই নিরন্তর করে যেতে হবে। একবারে সব কাজ হয় না। খারাপ স্বভাব পুরনো রোগের মতো, কখনও ঠিক হয়, কিন্তু সুযোগ পেলেই ফের মাথাচাড়া দেয়। এমনই এক রোগ, যার নিরন্তর প্রযুক্তি প্রয়োগ করেন তাকে নিরস্ত করার লক্ষ্যে আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি। প্রত্যেক স্তরেই সততা আর দক্ষতা উৎসাহিত হয়,তারজন্য পরিপূর্ণ প্রয়াস চালানো হয়েছে।
আপনারা দেখেছেন, গত ৫ বছরে, এবারেও দায়িত্ব গ্রহণের পর সরকারে থাকা বড় বড় লোকদের বিদায় দেওয়া হয়েছে। আমাদের এই অভিযানে যারা বাধা দিতেন, তাদের বলা হয়েছে, আপনি আপনার কাজ গোটান, দেশের আর আপনার সেবার প্রয়োজন নেই।
আমি স্পষ্ট মানি, ব্যবস্থাপনায় বদল দরকার। একই সঙ্গে সামাজিক জীবনও বদল চাই। তার সঙ্গে ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের চিন্তা-চেতনায় অবশ্যই পরিবর্তন আনতে হবে, তবেই গিয়ে আমরা কাঙ্ক্ষিত ফল পেতে পারি।
ভাই ও বোনেরা, দেশ স্বাধীনতার এতো বছর পর একভাবে বলতে গেলে পরিণত হয়েছে। আমরা স্বাধীনতার ৭৫ বছর উদযাপন করতে যাচ্ছি। তখন এই স্বাধীনতা সহজ সংস্কার, সহজ স্বভাব, সহজ অনুভুতি- এটাও প্রয়োজন। আমি যখন আমার অফিসারদের সঙ্গে বসি, তখন একটা কথা বলি, সবার সামনে বসে বলি না, কিন্তু আজ মন চাইছে তো বলেই ফেলি। আমি অফিসারদের বারবার বলি যে, স্বাধীনতার এত বছর পরেও কি দৈনন্দিন জীবনে, সাধারণ নাগরিকের জীবনে সরকারের নাক গলানো প্রয়োজন, আমরা কি দখলদারি কম করতে পারি না? স্বাধীন ভারতের অর্থ আমার কাছে হল, সরকার মানুষের জীবন থেকে ধীরে ধীরে সরে আসুক। মানুষ নিজের জীবন নির্ণয় করার জন্য, এগিয়ে যাওয়ার জন্য, সব পথ তাদের কাছে খোলা থাকা উচিত। নিজের মর্জি অনুযায়ী সেই লক্ষ্যে, দেশের হিতের জন্য আর পরিবারের ভালোর জন্য নিজের স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে যাবে, এরকম বাস্তু ব্যবস্হা আমাদের গড়ে তুলতে হবে। আর সেজন্য সরকারের চাপ থাকা উচিত না। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে যেখানে সংকট আসবে, তখন সরকারের অভাব যেন অনুভূত না হয়। সরকারের চাপ থাকবে না, কিন্তু সরকারের অভাবও থাকবে না, কিন্তু আমরা স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে যাই। সরকার আমাদের এক সাথী হিসেবে সবসময় হাজির থাকুক। প্রয়োজন হলে যেন মনে হয়, হ্যাঁ, আমাদের কেউ আছে, চিন্তার কিছু নেই। আমরা কি এমন ব্যবস্থা তৈরি করতে পারি?
আমরা অপ্রয়োজনীয় কিছু আইন সমাপ্ত করেছি। গত ৫ বছরে আমরা প্রতিদিন প্রায় একটি করে অপ্রয়োজনীয় আইন বাতিল করেছি। দেশের মানুষের কাছে হয়তো একথা পৌঁছেনি। প্রতিদিন একটি করে আইন বাতিল করে প্রায় ১,৪৫০টি আইন বাতিল করেছি। সাধারণ মানুষের জীবনে আইনের বোঝাপড়া কমুক। এখন সরকারের ১০ সপ্তাহ হয়েছে, এই ১০ সপ্তাহেই আমরা এমন ৬০টি আইন সমাপ্ত করেছি।
‘ইজ অফ লিভিং’ বা সহজে জীবন ধারণ, স্বাধীন ভারতে প্রয়োজন। আর সেজন্য আমরা ‘ইজ অফ লিভিং’-এ জোর দিতে চাই। একে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। আজ ‘ইজ অফ ডুইং বিজনেস’-এ আমরা অনেকটা এগিয়েছি। প্রথম ৫০-এ পৌঁছানোর স্বপ্ন আছে, সেজন্য কিছু সংস্কার করার প্রয়োজন আছে, কিছু ছোটখাটো বাধাও রয়েছে। কোনও ব্যক্তি ছোট কোনও ব্যবসা করতে চায়, কেউ ছোটখাটো কাজ করতে চায়, তাহলে এখানে ফর্ম ভর্তি করো, সেখানে ফর্ম ভরো, এখানে যাও, ওখানে যাও, ওই অফিসে যাও, শত শত অফিসে চক্কর লাগানোর মতো সমস্যায় ব্যস্ত থাকেন। সে সময়ই পায় না। এগুলো সমাপ্ত করতে করতে, সংস্কার করতে করতে, কেন্দ্র ও রাজ্যকেও সঙ্গে নিয়ে যেতে যেতে, মিউনিসিপ্যালিটি আর কর্পোরেশনকে সঙ্গে নিয়ে যেতে যেতে, আমরা ‘ইজ অফ ডুইং বিজনেস’-এর কাজে অনেক কিছু করার ক্ষেত্রে সফল হয়েছি।আর বিশ্বেও বিশ্বাস তৈরি হয়েছে যে, ভারতের মতো এত বড় উন্নয়নশীল দেশ এত বড় স্বপ্ন দেখতে পারে, এতো বড় লাফ দিতে পারে। ‘ইজ অফ ডুইং বিজনেস’ হচ্ছে একটা পদক্ষেপ, আমার লক্ষ্য হল ‘ইজ অফ লিভিং’— সাধারণ মানুষের জীবনে তাকে সরকারি কোনও কাজে কোনও অতিরিক্ত পরিশ্রম না করতে হয়।তার অধিকার যেন সে সহজে পায়, সেজন্য আমাদের এগিয়ে যেতে হবে, সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করতে চাই।
আমার প্রিয় দেশবাসীগণ, আমাদের এটা দেখতে হবে, ধাপে ধাপে উন্নতির জন্য বেশিদূর অপেক্ষা করা যাবে না, আমাদের ‘হাই জাম্প’দিতে হবে।আমাদের বিশাল লাফ দিতে হবে। আমাদের ভাবনাচিন্তাও বদলাতে হবে। ভারতকে বিশ্ব মানের সমপর্যায়ে নিয়ে আসতে আমাদের আধুনিক পরিকাঠামোর দিকেও এগিয়ে যেতে হবে। আর কেউ যা–ই বলুক বা যা খুশি লিখুক, কিন্তু সাধারণ মানুষের ভালো ব্যবস্থাপনার স্বপ্ন থাকেই।ভালো জিনিস সবারই ভালো লাগে। তাতে ভালো রুচিবোধ তৈরী হয়। আর এজন্য আমরা ঠিক করেছি, এই মেয়াদের মধ্যে ১০০ লক্ষ কোটি টাকা আধুনিক পরিকাঠামো গড়ে তুলতে খরচ করা হবে। এতে কর্মসংস্হান হবে, জীবনে এক নতুন ব্যবস্থা বিকশিত হবে, যা নাকি বিভিন্ন প্রয়োজন মেটাবে। তা সে সাগরমালা প্রকল্প হোক, ভারতমালা প্রকল্প হোক বা আধুনিক রেলওয়ে স্টেশন হোক, বাস স্ট্যান্ড হোক, বিমানবন্দর হোক,চাই কি আধুনিক হাসপাতাল হোক, বা বিশ্বমানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কাজ হোক পরিকাঠামো দিক থেকেও আমরা এই সমস্ত কিছুকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। এখন সমুদ্র বন্দরের জন্যও চাহিদা বাড়ছে। সাধারণ মানুষের জীবনেও ভাবনাচিন্তায় বদল এসেছে। আমাদের এটা বুঝতে হবে। আগে একটা সময় ছিল। যদি কাগজে কিছু একটা ঠিক হয়ে যায় যে, একটি রেল স্টেশন হবে, তো মাসের পর মাস, বছরের পর বছর ধরে একটা ইতিবাচক আলোড়ন হত, চল, আমাদের এখানে একটা রেল স্টেশন হতে যাচ্ছে। কিন্তু এখন সময় বদলেছে। এখন সাধারণ মানুষ রেল স্টেশন পেলে বলেন, আমাদের এখানে বন্দে ভারত এক্সপ্রেস কবে আসছে। আমরা যদি একটা দারুন বাস স্ট্যান্ড করে দিই, একটা পাঁচতারা মানের রেল স্টেশন করে দিই তো বলবেন, সাহেব, বিমানবন্দর কবে হচ্ছে? তার মানে এখন সত্যিই চিন্তাধারা পাল্টে গেছে।আগে রেল স্টপেজ পেলে সন্তুষ্ট থাকতেন যে দেশবাসী তাঁরা এখন দারুণ একটা রেলস্টেসন পাওয়ার পর তখনই বলেন, সাহেব, এটাতো ঠিকই আছে। বিমানবন্দর কবে হবে?
আগে কোনও সাধারণ মানুষের সঙ্গে দেখা হলে জিজ্ঞাস করতেন, পাকা সড়ক কবে পাব। এখন কিছু পেলে সঙ্গে সঙ্গে জিজ্ঞেস করেন, এর পর চার লেন সড়ক হচ্ছে না ৬ লেনের? কেউ কমে সন্তুষ্ট হচ্ছেন না। এই যে উচ্চাকাঙ্খা- ভারতের জন্য এটা একটা বিরাট ব্যাপার।
আগে গ্রামে বিদ্যুতের খুঁটি এনে গ্রামের বাইরে এনে শুইয়ে দিলেই মানুষ বলত, চল ভাই, গ্রামে বিদ্যুৎ এসে গেছে। এখন বিদ্যুতের তার এসে আলো জ্বলে গেলেও মানুষ জিজ্ঞেস করে, আচ্ছা, ২৪ ঘন্টা বিদ্যুৎ কবে থেকে আসবে? এখন শুধু খুঁটি ও তারে বা মিটারে সন্তুষ্ট নয়।
যখন প্রথম মোবাইল ফোন এলো, আমরা ভাবলাম যাক মোবাইল তো এসে গেছে।তখন মানুষ সন্তোষ অনুভব করতো। কিন্তু এখন সে দ্রুত জিজ্ঞাসা করে, ডেটার স্পিড কত?
তাই এই পরিবর্তিত মেজাজকে, পরিবর্তনশীল সময়কে আমাদের বুঝতে হবে। সেই ভাবেই বিশ্বমানের সাথে আমাদের নিজের দেশের আধুনিক পরিকাঠামোর সাথে নির্মল শক্তি উৎপাদন হোক কিংবা গ্যাস ভিত্তিক অর্থনীতি, গ্যাস গ্রিডহোক কিংবা ই-মোবাইলিটি- সমস্ত বিষয়ে অনেক এগিয়ে যেতে হবে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, সাধারণভাবে আমাদের দেশে সরকারের পরিচয় এইভাবে তৈরি হয়, সরকার কিছু এলাকার জন্য কী করেছে? সরকার কোন অংশের জন্য কী করেছে? কোন সম্প্রদায়ের জন্য কী করেছে? সাধারণভাবে কী দিয়েছে, কাকে দিয়েছে, কতটুকু দিয়েছে – এই সব নিয়েই সরকার আর জনমানস ভেবেছে এবং তাকেই ভাল ভেবে নিয়েছে। হয়তো সেই সময় এটা দাবি ছিল, প্রয়োজন ছিল, কিন্তু এখন কে কী পেয়েছে, কিভাবে পেয়েছে, কখন পেয়েছে, কতটুকু পেয়েছে – এসব সত্ত্বেও আমরা সবাই মিলে দেশকে কোথায় নিয়ে যাব, সকলে মিলে দেশকে কোথায় পৌঁছে দেব, সবাই মিলে দেশের জন্য কি অর্জন করব, এই স্বপ্ন নিয়ে বাঁচার লড়াই করার এবং এগিয়ে যাওয়া – এটাই এই সময়ের দাবি। এবং এই জন্য ৫ লক্ষ কোটি ডলারের অর্থনীতির স্বপ্ন দেখা হয়েছে। ১৩০ কোটি দেশবাসীর ছোট ছোট বিষয় আঁকড়ে চলতে থাকে, তাহলে ৫ লক্ষ কোটি ডলারের অর্থনীতির স্বপ্ন কঠিন মনে হবে, এটা ভুল কিছু নয়। কিন্তু কঠিন কাজ যদি না করেন, তাহলে দেশ এগোবে কি করে? কঠিন পরীক্ষা না দিলে এগিয়ে চলার আনন্দ কি করে পাওয়া যাবে? মনোবৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোন থেকেও আমাদের উচ্চাশা রাখা উচিত, আর আমরা সেটাই রেখেছি।সেটা বায়বীয় ছিল না। স্বাধীনতার ৭০ বছর পর আমরা দুই লক্ষ কোটি ডলার অর্থনীতির স্বপ্নেপৌঁছেছিলাম।৭০ বছরের প্রগতির যাত্রা আমাদের দুই লক্ষ কোটি ডলার অর্থনীতিতে পৌঁছে দিয়েছে। কিন্তু ২০১৪ থেকে ২০১৯ – পাঁচ বছরের মধ্যেই আমরা দুই লক্ষ কোটি থেকে তিন লক্ষ কোটি –এ পৌঁছে গেছি।এত লক্ষ কোটি আমরা যোগ করেছি। যদি পাঁচ বছরে, ৭০ বছরে যা হয়েছে, এত বড় লাফ দিতে পেরেছি, তাহলে আগামী পাঁচ বছরে আমরা ৫ লক্ষ কোটি ডলার অর্থনীতির দেশে পরিণত হতেই পারি। এবং এই স্বপ্নই সমস্ত ভারতীয়ের দেখা উচিত। যখন অর্থনীত বড় হয়, জীবনকেও সুন্দর করার সুযোগ পাওয়া যায়।ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্র মানুষের স্বপ্ন পূরণের সুযোগ তৈরি হয়। এই স্বপ্ন পূরণের জন্য দেশের অর্থনীতিকে আমাদের এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
যখন আমরা স্বপ্ন দেখি দেশের কৃষকের আয় দ্বিগুন হওয়া উচিত, যখন স্বপ্ন দেখি যে স্বাধীনতার ৭৫ বছরে দেশের অনেক পরিবার, দরিদ্র থেকে দরিদ্রতর, তাদেরও নিজস্ব পাকা বাড়ি হওয়া চাই। যখন আমরা স্বপ্ন দেখি, স্বাধীনতার ৭৫ বছর উদযাপনের, তখন দেশের সব পরিবারে বিদ্যুৎ পৌঁছে যাওয়া উচিত। যখন আমরা স্বপ্ন দেখি, স্বাধীনতার ৭৫ বছর উদযাপনের, তখন ভারতের সব গ্রামে অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্ক ব্রডব্যান্ড হোক, ব্যান্ড কানেক্টিভিটি হোক, দূরশিক্ষা প্রকল্পের সুবিধা চালু হোক- এই সব স্বপ্ন যখন দেখি, আমাদের সমুদ্র সম্পদ, নীল অর্থনীতির ক্ষেত্রেও আমরা এগিয়ে যাব। আমাদের মৎস্যচাষী ভাইবোনেদের আমরা শক্তি জোগাব। আমাদের কৃষক, যারা অন্নদাতা, তাঁরা শক্তিদাতা হবে। আমাদের কৃষকরাও কেন রপ্তানীকারক হবেন না? বিশ্বের মধ্যে আমাদের কৃষকের উৎপাদিত ফসলের দুন্দুভি কেন বেজে উঠবে না? এইসব স্বপ্ন নিয়ে আমরা এগোতে চাই। আমাদের দেশের রপ্তানী বাড়াতেই হবে। আমরা শুধু ভারতকে বিশ্বের বাজারে পরিণত হতে দেখেছি, এখন আমরাও বিশ্বের বাজারে যতটা সম্ভব পৌঁছানোর চেষ্টা করব। আমাদের প্রত্যেক জেলায়, বিশ্বের একেকটি দেশের মতো ক্ষমতা আছে। ছোট ছোট দেশের মতো, ক্ষমতা আমাদের প্রত্যেক জেলায় আছে। আমাদের এই ক্ষমতাকে বুঝতে, সেই ক্ষমতাকে সুনির্দিষ্ট পথে পরিচালিত করতে হবে, আর আমাদের প্রত্যেক জেলা রপ্তানীর হাব হয়ে ওঠার কথা কেন ভাববে না?প্রত্যেক জেলার নিজস্ব হস্তশিল্প আছে, প্রত্যেক জেলার নিজস্ব বিশেষত্ব আছে। কোনও জেলার হয়তো আতরের বিশেষত্ব আছে, তো অন্য জেলার কাছে শাড়ির বিশেষত্ব আছে, কোনও জেলার যদি বাসনের বিশেষত্ব থাকে, তো কোনও জেলার মিস্টি খুব বিখ্যাত। প্রত্যেকের কাছে অনন্যতা আছে, ক্ষমতা আছে, আমরা বিশ্ব বাজারের জন্য ‘জিরো ডিফেক্ট, জিরো এফেক্ট’ মানের পণ্য উৎপাদনের কথা ভাবতে হবে।আর সেই বৈচিত্র্যকে বিশ্বের সাথে পরিচয় করিয়ে আমরা যদি তার রপ্তানীর উপর জোর দিই, বিশ্বের মার্কেট দখল করার লক্ষ্যে কাজ করি, তাহলে দেশের তরুণদের কর্মসংস্হান হবে। আমাদের ক্ষুদ্র শিল্পগুলি, অতিক্ষুদ্র শিল্পগুলি তখন একটি বিরাট বড় ক্ষমতা অর্জন করবে আর আমাদের সেই শক্তিকে বাড়াতে হবে।
আমাদের দেশ পর্যটন গন্তব্য হিসাবে বিশ্বে অতুলনীয় হয়ে উঠতে পারে, কিন্তু কোনও না কোনও কারণে যত দ্রুত আমাদের সে কাজ করা উচিত, তা আমরা করে উঠতে পারিনি। আসুন, আমরা সমস্ত দেশবাসী ঠিক করি যে, আমাদের দেশের পর্যটনকে গুরুত্ব দিতে হবে। যখন পর্যটন বাড়ে, ন্যূনতম পুঁজিনিবেশে অধিকতম কর্মসংস্থান হয়। দেশের অর্থনীতি চাঙ্গা হয়, আর বিশ্ববাসী আজ ভারতকে নতুন দৃষ্টিতে দেখার জন্য তৈরি। আমাদের ভাবতে হবে যে, বিশ্ববাসীকে আমাদের দেশে কিভাবে আনা যায়। আমাদের পর্যটনকে কিভাবে জোর দেওয়া যায়। আর তার জন্য পর্যটন গন্তব্যের ব্যবস্থা করতে হবে। সাধারণ মানুষের রোজগার বৃদ্ধি করতে হবে। উন্নত শিক্ষা, নতুন রোজগারের সুযোগ হবে, মধ্যবিত্তদের উন্নতির স্বপ্নকে সার্থক করাতে উঁচু উড়ানের সমস্ত উৎক্ষেপন ক্ষেত্র তাঁদের জন্য গড়ে তুলতে হবে। আমাদের বৈজ্ঞানিকদের কাছে উন্নত সম্পদসমুহের সম্পূর্ণ পরিষেবা থাকবে, আমাদের সেনার কাছে উন্নত ব্যবস্থা থাকবে, তাও দেশে উৎপাদিত, তাহলে আমার বিশ্বাস, এমন অনেক ক্ষেত্র যা ৫ লক্ষ কোটি ডলার অর্থনীতির জন্য ভারতকে নতুন শক্তি যোগাতে পারে।
আমার প্রিয় ভাই ও বোনেরা, আজ দেশে আর্থিক সাফল্য অর্জনের জন্য খুবই অনুকূল পরিবেশ রয়েছে, যখন সরকার স্হিতিশীল হয়, নীতি অনুমানযোগ্য হয়, ব্যবস্থাগুলি স্হিতিশীল হলে, বিশ্ববাসীর ভরসা বৃদ্ধি পায়। দেশের জনগণ এ কাজ করে দেখিয়েছেন। বিশ্ববাসীও ভারতের রাজনৈতিক স্হিতিশীলতাকে বেশ গর্ব ও সমাদরের দৃষ্টিতে দেখছে। আমাদের এই সুযোগ হাতছাড়া করলে চলবে না। আজ বিশ্ববাসী আমাদের সঙ্গে বাণিজ্য করতে ইচ্ছুক। তাঁরা আমাদের সঙ্গে যুক্ত হতে চান। আজ আমাদের জন্য গর্বের বিষয় হল যে, মূল্যবৃদ্ধিকে নিয়ন্ত্রণ করে আমাদের উন্নয়নের হার বাড়ানোর উপযোগী একটি সমীকরণ নিয়ে এগিয়ে চলেছি।কখনও উন্নয়নের হার বেড়ে যায়, কিন্তু মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে থাকে না। কখনও মূল্যবৃদ্ধি হলেও উন্নয়নের হার নিয়ন্ত্রণে থাকে না। কিন্তু এই সরকার এমনই যে মূল্যবৃদ্ধিকেও নিয়ন্ত্রণ করেছে আর উন্নয়নের হারকেও এগিয়ে নিয়ে গেছে।
আমাদের অর্থব্যবস্থার ভিত্তিগুলি অনেক শক্তিশালী। এই শক্তি আমাদের এগিয়ে নিয়ে যেতে ভরসা দেয়।তেমনই জিএসটি-র মতো ব্যবস্থার বিকাশ ঘটিয়ে আইবিসি-র মতো সংস্কার আনা- নিজের মধ্যেই একটি নতুন বিশ্বাসের জন্ম দিতে চায়। আমাদের দেশে উৎপাদন বাড়াতে আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদের প্রক্রিয়াকরণ বাড়াতে, মূল্য সংযোজন করতে, মূল্য সংযোজন সম্পন্ন পণ্যগুলি বহির্বিশ্বে রপ্তানী করতে, বিশ্বের অনেক দেশে রপ্তানী করতে হবে। আমরা কেন স্বপ্ন দেখব না যে, বিশ্বে এমন কোনও দেশ থাকবে না, যেখানে কোনও না কোনও পণ্য ভারত থেকে যায় না। ভারতের এমন কোনও জেলা এমন থাকবে না, যেখান থেকে কিছু না কিছু রপ্তানী হবেনা। যদি এই দুটো ভাবনা নিয়ে আমরা এগোই, তাহলে আমরা রোজগার বাড়াতে পারব। আমাদের কোম্পানিগুলি, আমাদের শিল্পপতিরাও বিশ্ববাজারে পৌঁছানোর স্বপ্ন দেখেন। বিশ্বের বাজারে গিয়ে ভারতের উৎকর্ষ সর্বত্র সুনাম অর্জন করবে। আমাদের বিনিয়োগকারীরা অধিক উপার্জন করবেন।আমাদের বিনিয়োগকারীরা অধিক বিনিয়োগ করবেন। আমাদের বিনিয়োগকারীরা অধিক কর্মসংস্থান করবেন। এই প্রক্রিয়াকে উৎসাহ যোগাতে আমরা এগিয়ে আসতে সম্পূর্ণ প্রস্তুত।
আমাদের দেশে কিছু এমন ভুল ধারণা বাসা বেধেছে। এই ধারণাগুলি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। যা দেশের সম্পদ সৃষ্টি করে, সম্পদ সৃষ্টিতে অবদান রাখে, তা দেশের সেবা করছে। আমরা যেন সম্পদ সৃষ্টিকারীদের আশঙ্কার দৃষ্টিতে না দেখি, তাঁদের প্রতি হীনভাব নিয়ে না দেখি। দরকার হল, যারা দেশে সম্পদ সৃষ্টি করছেন, তাঁদেরও ততটাই মানসম্মান দিতে হবে, উৎসাহ যোগাতে হবে। তাঁদের গৌরব বৃদ্ধি পাওয়া উচিত। আর সম্পদ সৃষ্টি যদি না হয়, তাহলে সম্পদ বিতরণও হবে না।
যদি সম্পদ বিতরণ না হয়, তাহলে দেশের গরিব মানুষের কল্যাণ হবে না। আর সেজন্যই তো সম্পদ সৃষ্টিও আমাদের মতো দেশের জন্য একটি গুরুত্ব বহন করে, আর তাকেও আমাদের নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। যারা সম্পদ সৃষ্টি করার লক্ষ্যে নিয়োজিত, আমার জন্য তারাও আমাদের দেশের সম্পদ সৃষ্টি। সম্মান আর তাঁদের গৌরব, এই পদক্ষেপকে নতুন শক্তি জোগাবে।
আমার প্রিয় দেশবাসীগণ, আজ শান্তি এবং নিরাপত্তা উন্নয়নের আবশ্যিক শর্ত। বিশ্ব আজ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। বিশ্বের কোনও না কোনও অংশে, কোনও না কোনও রূপে মৃত্যুর ছায়া ঘিরে আছে। বিশ্ব শান্তিকে সমৃদ্ধ করতে ভারতকে নিজস্ব ভূমিকা পালন করতে হবে। বিশ্ব পরিবেশে ভারত মূক দর্শক হয়ে থাকতে পারে না। আর ভারত সন্ত্রাস সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে শক্ত হাতে লড়াই করছে। বিশ্বের যে কোনও প্রান্তে সন্ত্রাসের ঘটনা মানবতাবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে! সেই জন্যই এই আহ্বান যে, বিশ্বের মানবতাবাদী শক্তিগুলি একজোট হোক। সন্ত্রাসবাদকে আশ্রয় দেওয়া, সন্ত্রাসবাদকে উৎসাহ জোগানো, সন্ত্রাসবাদ রফতানিকারী এমন সমস্ত শক্তিগুলিকে বিশ্বের সামনে তাঁদের মুখোস খুলে দিয়ে বিশ্বের শক্তিকে যুক্ত করে সন্ত্রাসবাদকে ধ্বংস করার কাজে ভারত নিজের ভূমিকা পালন করুক, আমরা এটাই চাই।
কিছু মানুষ শুধু ভারত নয়, আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলিকেও সন্ত্রাসবাদের শিকার হতে হয়েছে।বাংলাদেশও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়ছে, আফগানিস্তানও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়ছে। এই সন্ত্রাস শ্রীলঙ্কায় চার্চে বসে থাকা নির্দোষ মানুষদের মৃত্যুর পথে ঠেলে দিয়েছে। কত বড় দুঃখের কথা, আর সেজন্য সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যখন আমরা লড়াই করি, তখন আমরা এই গোটা পৃথিবীর শান্তি এবং নিরাপত্তার স্বার্থে আমাদের ভূমিকা পালন করার জন্যেও সক্রিয়ভাবে কাজ করছি।
আমাদের প্রতিবেশী, আমাদের এক ভাল বন্ধু দেশ আফগানিস্তান, চারদিন পর তাঁদের স্বাধীনতার উৎসব পালন করবে। আর এবার তাঁদের স্বাধীনতার শততম বছর। আমি আজ লাল কেল্লা থেকে আমার আফগানিস্তানের বন্ধুদের, যাঁরা চারদিন পর শততম স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করবেন, অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই।
সন্ত্রাস, ভয় আর হিংসার পরিবেশ সৃষ্টিকারীও, এর প্রসারকারীদের, মোকাবিলা করা আমাদের সরকারের নীতি এবং আমাদের সরকারের রণনীতি খুবই স্পষ্ট। আমাদের কোনও দ্বিধা নেই। আমাদের সৈনিকরা, আমাদের নিরাপত্তা বাহিনীগুলি, সুরক্ষা এজেন্সিগুলি অত্যন্ত প্রশংসনীয় কাজ করেছে। সংকটের সময় দেশে শান্তি বজায় রাখতে ইউনিফর্ম পরে দাঁড়িয়ে থাকা আজ নিজেদের জীবন আহুতি দিয়ে আমাদের আগামীকালকে উজ্জ্বল করার নয়, উৎসর্গীকৃত। আমি তাঁদের সবাইকে স্যালুট জানাই। আমি তাঁদের প্রণাম জানাই। কিন্তু সময় থাকতে সংস্কারেরও অনেক প্রয়োজন রয়েছে।
আপনারা হয়তো দেখেছেন, আমাদের দেশে সৈন্যব্যবস্থা, সৈন্যশক্তি, সৈন্যসম্পদ সংক্রান্ত সংস্কার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা চলছে। অনেক সরকার এই নিয়ে আলোচনা করেছে। অনেক কমিশন বসেছে, অনেক রিপোর্ট এসেছে এবং সমস্ত রিপোর্ট প্রায় একই স্বরে কথা বলে গেছে। পার্থক্য ১৯-২০, বেশি পার্থক্য নেই।কিন্তু এই কথাগুলি লাগাতার বলা হয়েছে। আমাদের তিন বাহিনী – জল, স্থল ও বায়ুসেনার মধ্যে সমন্বয়-তো রয়েছে, আমরা গর্ব করতে পারি, এমনই আমাদের সামরিক ব্যবস্থা। যে কোনও ভারতবাসী তা নিয়ে গর্ব করতে পারে। তাঁরা নিজের নিজের মতো করে আধুনিক হয়ে উঠতে সচেষ্ট রয়েছে। কিন্তু আজ যেমন বিশ্বে পরিবর্তন আসছে, আজ যুদ্ধের পরিধি বদলাচ্ছে, রূপ রঙ বদলাচ্ছে, আজ যেভাবে প্রযুক্তি নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থা তৈরি হচ্ছে, তখন ভারতকেও বিচ্ছিন্নভাবে ভাবলে চলবে না। আমাদের সম্পূর্ণ সৈন্য শক্তিকে একজোট হয়ে একসাথে এগিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে কাজ করতে হবে। জল, স্থল, আকাশের মধ্যে কেউ এগিয়ে যাবে আর কেউ দু-পা পিছিয়ে পড়বে, তিন পা পিছিয়ে থাকবে, এটা চলবে না। তিনটি শক্তিকেই একই উচ্চতায় এগিয়ে যেতে হবে।সমন্বয় ভাল হোক, সাধারণ মানুষের আশা আকাঙ্খার অনুরূপ হোক, বিশ্বে পরিবর্তনশীল যুদ্ধ এবং নিরাপত্তার পরিবেশের অনুরূপ হোক, এই বিষয়গুলি মাথায় রেখে আজ আমি লালকেল্লা থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ঘোষণা করতে চাই। এই বিষয়ে যারা জানেন, তাঁরা অনেক দিন ধরেই এটার জন্যই দাবি করে আসছিলেন।
আজ আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, এখন আমরা চিফ অফ ডিফেন্স- সিডিএস এর ব্যবস্থা করব, আর এই পদ সৃষ্টির পর সেনাবাহিনীগুলি শীর্ষস্তরে কার্যকরী নেতৃত্ব পাবে। ভারতের সামরিক ক্ষেত্রের গতিতে এই সিডিএস একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং সংস্কারের ক্ষেত্রে আমাদের যে স্বপ্ন, সেই ক্ষেত্রে এই পদক্ষেপ শক্তি জোগাবে।
আমার প্রিয় দেশবাসীগণ, আমরা ভাগ্যবান যে আমরা একটি এমন কালখণ্ডে জন্মগ্রহণ করেছি, আমরা একটি এমন কালখণ্ডে বেঁচে আছি, আমরা একটি কালখণ্ডে রয়েছি যে যখন আমরা কিছু না কিছু করার সামর্থ্য রাখি। কখনও কখনও মনে হয় যে যখন স্বাধীনতা সংগ্রাম চলছিল, ভগত সিংহ, সুখদেব, রাজগুরুর মতো মহাপুরুষরা নিজেদের উৎসর্গ করার প্রতিযোগিতায় নেমেছিলেন। মহাত্মা গান্ধির নেতৃত্বে স্বাধীনতা সংগ্রামীরা বাড়িতে বাড়িতে, গলিতে গলিতে গিয়ে স্বাধীনতার স্বপ্নকে সাকার করতে দেশকে জাগিয়ে তুলছিলেন। আমরা সেই সময় ছিলাম না, আমাদের জন্ম হয়নি, দেশের জন্য আত্মবলিদানের সুযোগ আমরা পাইনি, কিন্তু দেশের জন্যে বাঁচার সুযোগ অবশ্যই পেয়েছি। আর এটা সৌভাগ্য যে, বর্তমান কালখণ্ডে এমন এবছর আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পূজনীয় বাপু মহাত্মা গান্ধী, তাঁর ১৫০তম জন্মজয়ন্তীর এটা উৎসব। এই সুযোগ আমরা আমাদের এই সময়ে পাচ্ছি, এটাই আমাদের সৌভাগ্য। আর দ্বিতীয়তঃ, আমাদের স্বাধীনতার ৭৫ বছর, দেশের স্বাধীনতার জন্য আত্মবলিদানকারীদের স্মরণে আমাদের কিছু করার প্রেরণা জোগায়। এই সুযোগ আমাদের হাতছাড়া করা উচিত নয়। ১৩০ কোটি দেশবাসীর হৃদয়ে মহাত্মা গান্ধীর স্বপ্নের অনুরূপ, দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের স্বপ্নের অনুরূপ, স্বাধীনতার ৭৫ বছর এবং গান্ধীর ১৫০ বছর, এই উৎসবকে আমাদের প্রেরণার মহান সুযোগে পরিণত করে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।
আমি এই লালকেল্লা থেকে ২০১৪ সালে স্বচ্ছতা নিয়ে কথা বলেছিলাম। ২০১৯-এ কয়েক সপ্তাহ পরেই, আমার বিশ্বাস, ভারত নিজেকে উন্মুক্ত স্হানে শৌচমুক্ত ঘোষণা করতে পারবে।দেশের সমস্ত রাজ্য, গ্রামগুলি,পুরসভাগুলি সবাই, সংবাদমাধ্যমগুলিও গণ-আন্দোলন গড়ে তুলেছে। সরকারকে কোথাও দেখা যায়নি, জনগণ দ্বায়িত্ব নিয়ে কাজ করেছে, আর এই পরিণাম সামনে এসেছে।
আমার প্রিয় দেশবাসীগন, আমি একটি ছোট্ট প্রত্যাশা আজ আপনাদের সামনে তুলে ধরতে চাই। আগামী ২রা অক্টোবর আমরা ভারতকে ‘সিঙ্গল ইউজ প্লাসটিক’ থেকে কি মুক্তি দিতে পারি? আমরা দলবেঁধে বেরিয়ে পড়ি, স্কুল, কলেজ থেকে আমরা সবাই পূজ্য বাপুর কথা মনে রেখে বেরিয়ে পড়ি।বাড়িতে প্লাস্টিক থাকলে, কিম্বা ‘সিঙ্গল ইউজ প্লাসটিক’ বাইরে চৌমাথায় পড়ে থাকলে, নোংরা নর্দমায় পড়ে থাকলে, সেগুলি একত্রিত করে পুরসভাগুলি, পুরনিগমগুলিতে, গ্রাম পঞ্চায়েতে সবাই এগুলি জমা করার ব্যবস্থা করতে পারি? আমরা প্লাস্টিককে বিদায় দেওয়ার লক্ষ্যে ২রা অক্টোবর প্রথম শক্তিশালী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারি?
আসুন আমার প্রিয় দেশবাসীগণ, আমরা একে এগিয়ে নিয়ে যাই। আর তারপর আমি স্টার্ট-আপ ওয়ালাদের, টেকনিশানদের, শিল্পপতিদের অনুরোধ জানাই যে, আমরা এই প্লাস্টিক রিসাইকেলের জন্য কি করব? যেমন, হাইওয়ে নির্মাণের ক্ষেত্রে প্লাস্টিক ব্যবহৃত হচ্ছে, এরকম অনেক উপায় বেরতে পারে, কিন্তু যার জন্য অনেক সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে, তা থেকে মুক্তির জন্য আমাদেরই অভিযান শুরু করতে হবে। কিন্তু পাশাপাশি আমাদের বিকল্প ব্যবস্থাও দিতে হবে। আমি তো সমস্ত দোকানদারদের অনুরোধ করব, আপনারা যেমন নিজেদের দোকানের নানা বোর্ড টাঙান, আরেকটি বোর্ডে তেমনি লিখে দিন, দয়া করে আমার কাছে প্লাস্টিক ব্যাগ আশা করবেন না। আপনারা নিজেদের বাড়ি থেকে কাপড়ের থলে নিয়ে আসুন, অথবা আমরা কাপড়ের থলেও বিক্রি করব, নিয়ে যান। আমরা একটি পরিবেশ গড়ে তুলি। দীপাবলীতে যেখানে আমরা নানারকম উপহার দিই, আসুন এবার এবং প্রত্যেকবার, কাপড়ের থলেতে উপহার দিই। যাতে কেউ কাপড়ের থলে নিয়ে বাজারে গেলে আপনার কোম্পানীর বিজ্ঞাপনও হবে। আপনি শুধু ডায়েরি দিলে কিছুই হয় না, ক্যালেন্ডার দিলেও কিছু হয় না, থলে দিলে তা যেখানেই যাবে, থলে আপনার বিজ্ঞাপনও করতে থাকবে।পাটের থলে হোক, আমার কৃষকদের সাহায্য করবে। কাপডের থলে হোক, আমার কৃষকদের সাহায্য করবে।ছোট ছোট পেশা রয়েছে, গরিব বিধবা মা, যিনি সেলাইয়ের কাজ করেন, তাঁকে সাহায্য করবে। অর্থাৎ, আমাদের ছোট ছোট সিদ্ধান্তও সাধারণ মানুষের জীবনে কিভাবে পরিবর্তন আনতে পারে, আমাদের সেই লক্ষ্যে কাজ করতে হবে।
আমার প্রিয় দেশবাসীরা, ৫ লক্ষ কোটি ডলার অর্থনীতির স্বপ্ন হোক কিংবা স্বাবলম্বী ভারতের স্বপ্ন হোক, আমরা মহাত্মা গান্ধীর আদর্শগুলি নিয়ে আজও বাঁচতে প্রস্তুত। মহাত্মা গান্ধীর ভাবনা আজও প্রাসঙ্গিক। সেজন্য মেক ইন ইন্ডিয়ার যে মিশন আমরা নিয়েছি, তাঁকে আমাদের এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।মেক ইন ইন্ডিয়া পণ্য আমাদের অগ্রাধিকার কেন হবে না। আমাদের ঠিক করতে হবে, আমাদের জীবনে আমাদের দেশে যা উৎপাদিত হয়, পাওয়া যায়, তাঁকে আমাদের অগ্রাধিকার দিতে হবে। আর আমরা তো ভাগ্যবান, আগামীকালের জন্য ভাগ্যবান। আগামী দিনের জন্য স্হানীয় পণ্যকে গুরুত্ব দিতে হবে।ভাগ্যবান আগামীকালের জন্য স্হানীয়, সুন্দর আগামীর জন্য স্হানীয়, উজ্জ্বল আগামীর জন্য স্হানীয়, যা গ্রামে উৎপাদিত হয়, আগে সেগুলিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
এখানে না হলে মহকুমায়, মহকুমার বাইরে যেতে হলে জেলায়, জেলার বাইরে যেতে হলে রাজ্যে, আর আমি তো মনে করি তার পরেও নিজের দরকারে কোথায় যেতে হবে। বত বড় শক্তি পাওয়া যাবে? আমাদের গ্রামীণ আর্থব্যবস্থা কতটা শক্তি পাবে? ছোট উদ্যোগগুলি কত শক্তি পাবে? ভাইবোনেরা, আমাদের মোবাইল ফোন ভাল লাগে, আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ পাঠাতে ভাল লাগে, আমাদের ফেসবুক-টুইটারে থাকতে ভাল লাগে, কিন্তু দেশের অর্থনীতিতেও একারণে আমরা সাহায্য করতে পারি। জানার জন্য প্রযুক্তির যতটা ব্যবহার, আধুনিক ভারত তৈরির জন্যও প্রযুক্তির ততটাই ব্যবহার হয়, আর সাধারণ নাগরিক ডিজিটাল লেনদেনের দিকে কেন যাবে না? আজ আমরা গর্ব করতে পারি যে আমাদের সিঙ্গাপুরেও চলছে, আমাদের‘রুপে কার্ড’আগামী দিনে অন্যান্য দেশেও চালু হয়ে যাবে। আমাদের একটা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম দারুণ শক্তিশালী হয়ে গড়ে উঠছে, কিন্তু আমাদের গ্রামে, ছোট ছোট দোকানগুলি, আমাদের শহরের ছোট ছোট মলগুলি কেন ডিজিটাল লেনদেনকে অগ্রাধিকার দেবে না? আসুন সততার জন্য, স্বচ্ছতার জন্য আর দেশের অর্থনীতিকে জোরদার করতে ডিজিটাল লেনদেন শুরু করি। আর আমি তো ব্যবসায়ীদের বলব, আপনারা বোর্ড লাগিয়ে অধিকাংশ গ্রামে যান, ব্যবসায়ীদের বোর্ড হয় – আজ নগদ, কাল ধার। আমি চাই যে, এবার আপনারা বোর্ড লাগান, ‘ডিজিটাল লেনদেন হোক, নগদ নয়’। এমন একটা পরিবেশ বানাতে হবে।আমি দেশের ব্যাঙ্ক ব্যবস্থাকে অনুরোধ করছি, আমি ব্যবসায়ী জগতকে অনুরোধ করছি যে, আসুন, এই বিষয়গুলির উপর জোর দিই।
আমাদের দেশে মধ্যবিত্ত, উচ্চ মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, ভাল কথা। বছরে দুয়েকবার পরিবারের সঙ্গে, বাচ্চাদের নিয়ে বিশ্বের নানা দেশে পর্যটক রূপেও ঘুরতে যান। বাচ্চাদের সাধারণ জ্ঞান বাড়ে- খুব ভাল কথা। কিন্তু আমি আজ এমন পরিবারগুলিকে অনুরোধ জানাই, দেশের জন্যে যখন স্বাধীনতার ৭৫ বছর পালন করছি, দেশের জন্যে এত মহাপুরুষেরা বলিদান দিয়েছেন তখন, জীবন উৎসর্গ করেছেন তখন আপনারা চান কি না যে আপনাদের সন্তানও আমাদের দেশকে পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে চিনুক? কোন মা- বাবা চান না যে আমার আপনার ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এই মাটির সঙ্গে যুক্ত হোক, এর বাতাস থেকে, এর জল থেকে নতুন প্রাণশক্তি পাক। এটা আমাদের সযত্নে করতে হবে। আমরা যতই আগে এগোই, কিন্তু শিকড় থেকে কাটলে আমাদের কখনই বাঁচাতে পারবে না, বাড়তেও দেবে না। আর এইজন্য বিশ্বের অন্যত্র পর্যটক হিসাবে যান, কিন্তু আমি কি আপনাদের থেকে একটি জিনিস চাইতে পারি? লালকেল্লা থেকে দেশের তরুণদের রোজগারের জন্য, বিশ্বে ভারতের পরিচিতি বানানোর জন্য, ভারতের ক্ষমতা প্রকাশের জন্য, আমার প্রিয় দেশবাসীদের থেকে আমি আপনাদের কাছে একটি ছোট্ট দাবি রাখছি—আপনি কি সিদ্ধান্ত নিতে পারেন যে, ২০২২ সালে ভারতের স্বাধীনতার ৭৫ বছরে আমরা নিজেদের পরিবারকে নিয়ে নিদেনপক্ষে দেশের ১৫টি পর্যটন গন্তব্যে যাবেন।জানি খুব সমস্যা হবে, তবু যাবেন। সেখানে ভাল হোটেল থাকবে না, তবু যাবেন। কখনও কখনও সমস্যাও জীবনকে জয় করার জন্য কাজে আসে। আমরা বাচ্চাদের এই অভ্যাস বানাই যে, এতাই আমাদের দেশ। একবার যেতে শুরু করলে সেখানে ব্যবস্থার বিকাশে জড়িত লোকেরা সেখানে আসতে শুরু করবে। কেন আমরা আমাদের দেশে ১০০টি ভাল পর্যটন গন্তব্য গড়ে তুলবো না?কেন প্রতিটি রাজ্যে ২টি থেকে ৫টি বা ৭টি উন্নত মানের পর্যটন গন্তব্য গড়ে তুলবো না?আসুন, আমরা লক্ষ্য স্হির করে তা গড়ে তুলি, আমরা সিদ্ধান্ত নিই… আমাদের উত্তরপূর্বে এত প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে, কিন্তু দেশে কতগুলি বিশ্ববিদ্যালয় আছে যারা উত্তরপূর্ব ভারতকে তাঁদের পর্যটন গন্তব্য করে তোলে? এরজন্য বেশি কষ্ট করতে হবে না, আপনাকে ৭ থেকে ১০ দিন বার করতে হবে, কিন্তু সেটা দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখুন।
আপনি দেখুন, আপনি যেথানে যেখানে ঘুরে আসবেন, সেখানেই নতুন দুনিয়া বানিয়ে আসবেন, বীজ রোপন করে আসবেন, আর জীবনে আপনিও আনন্দ পাবেন। ভারতের লোক যাওয়া শুরু করলে বিশ্বের লোক আসতে শুরু করবে। আমরা বিশ্বে যাব আর বলব, আপনি ওই জায়গাটা দেখেছেন? কোনও পর্যটক আমাদের জিজ্ঞাসা করবেন, আপনি ভারত থেকে আসছেন, আপনি তামিলনাড়ুর অমুক মন্দির দেখেছেন? আর আমরা বলব, না, যাইনি, তখন সে বলবে, সেকি! আমি তো তোমাদের দেশে তামিলনাড়ুর অমুক মন্দির দেখতে গিয়েছিলাম। আর তুমি এখানে দেখতে এসেছো? আমরা অন্য দেশে যাব, কিন্তু নিজের দেশকে দেখার পর যাব। আমরা এতটুকু কাজ করতেই পারি।
আমি আমার কিষাণ ভাইদের আজ অনুরোধ করতে চাই। আপনাদের কাছে আমি কিছু চাইছি। আমার কৃষকদের জন্য, আমার দেশবাসীর জন্য, এই পৃথিবী আমাদের মা। ভারত মাতা কি জয় বলতেই আমাদের ভিতরে শক্তির সঞ্চার হয়। বন্দে মাতরম বললেই এই ধরিত্রী মায়ের জন্য উৎসর্গিত হওয়ার প্রেরণা মেলে।এক দীর্ঘ সময়ের ইতিহাস আমাদের সামনে উঠে আসে। কিন্তু কখনও আমরা এই ধরিত্রী মায়ের স্বাস্থ্য নিয়ে ভেবেছি? আমরা যেভাবে রাসায়নিক ব্যবহার করছি, রাসায়নিক সার ব্যবহার করছি, কীটনাশক প্রয়োগ করছি, আমরা এই পৃথিবীর সর্বনাশ করছি। এই মায়ের সন্তান হিসাবে, এক কৃষক হিসাবে, ধরিত্রী মায়ের সর্বনাশ করার কোনও অধিকার নেই। আমাদের ধরিত্রী মাকে দুঃখ দেওয়ার অধিকার নেই। আমাদের ধরিত্রী মাকে অসুস্থ করারও অধিকার নেই।
আসুন, স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্ণ হতে যাচ্ছে। পূজনীয় বাপু আমাদের পথ দেখিয়েছেন। আমরা কি ১০ শতাংশ, ২০ শতাংশ, ২৫ শতাংশ নিজেদের জমিতে রাসায়নিক সারের প্রয়োগ কমাব না? সম্ভব হলে সম্পূর্ণ রাসায়নিক মুক্ত করার অভিযান চালাবো। আপনারা দেখবেন, সেটাই হবে কতবড় দেশসেবা। আমাদের ধরিত্রী মাকে বাঁচানোয় আপনাদের কতবড় যোগদান হবে সেটা। বন্দে মাতরম বলে যারা ফাঁসির দড়িতে ঝুলেছিলেন, তাঁদের স্বপ্ন পূরণ করতে এই ধরিত্রী মাকে বাঁচাতে আপনাদের প্রয়াস তাঁদের আশীর্বাদ লাভ করবে। যারা ফাঁসি কাঁঠে দাঁড়িয়ে বন্দে মাতরম ধ্বনি দিতেন। এইজন্য আমি আপনাদের অনুরোধ করছি, এবং আমার বিশ্বাস যে, আমার দেশবাসী এটা করে দেখাবেন। আমাদের কৃষকরা আমার এই অনুরোধ রাখবেন, এতা আমার দৃঢ় বিশ্বাস।
আমার প্রিয় ভাই ও বোনেরা, আমাদের দেশের পেশাদারদের, আজ গোটা বিশ্বে প্রতিপত্তি রয়েছে। তাঁদের দক্ষতা উচ্চ প্রশংসিত।বিশ্ববাসী তাদের দক্ষতা স্বীকার করে নিয়েছে।মহাকাশ হোক, প্রযুক্ত হোক, আমরা নতুন উচ্চতা ছুঁয়েছি। আমাদের জন্য এটা খুশির খবর যে, আমাদের চন্দ্রযান দ্রুত চাঁদের সেই অংশের দিকে ধেয়ে যাচ্ছে, যে অংশে আজ পর্যন্ত কেউ পৌঁছায়নি।এটা আমাদের বৈজ্ঞানিকদের সাফল্য।
একইভাবে খেলার দুনিয়ায় আমরা খুব কমই নজর কাড়তাম। আজ বিশ্বের খেলার মাঠে আমাদের দেশের ১৮-২০ বছরের, ২২ বছরের ছেলেমেয়েরা তেরঙ্গা পতাকা তুলে ধরছে। কতটা গর্ব হয়। দেশের ক্রীড়াবিদরা দেশের নাম উজ্জ্বল করছে। আমার দেশবাসীরা, আমাদের দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।আমাদের দেশে পরিবর্তন আনতে হবে। আমাদের দেশকে নতুন উচ্চতা পেরোতে হবে এবং সেটা সবাই মিলেই করতে হবে। সরকার ও জনগণকে একসঙ্গেই করতে হবে।
আগামী দিনে গ্রামে দেড় লাখ ‘ওয়েলনেস সেন্টার’বানাতে হবে, স্বাস্হ্যকেন্দ্র বানাতে হবে, প্রত্যেক তিনটে লোকসভার মধ্যে একটি মেডিকেল কলেজ আমাদের তরুণদের ডাক্তার বানানোর স্বপ্ন পূরণ করতে হবে। দু কোটির বেশি গরিবদের জন্য বাসস্থান তৈরি করতে হবে। আমাদের ১৫ কোটি গ্রামীণ বাড়িতে পানীয় জল পৌঁছে দিতে হবে। সোয়া লাখ কিলোমিটার গ্রামীণ সড়ক তৈরি করতে হবে। প্রত্যেক গ্রামে ব্রডব্যান্ড সংযুক্তি,অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্কে জুড়তে হবে। ৫০ হাজারের বেশি নতুন স্টার্ট আপের জাল তৈরি করতে হবে। ওদের স্বপ্ন নিয়ে এগোতে হবে। এইজন্য, ভাই ও বোনেরা, আমরা দেশবাসীরা একসাথে স্বপ্ন নিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পথে চলব। এবং স্বাধীনতার ৭৫ বছর তার এক বড় প্রেরণা।
আমি জানি যে, লাল কেল্লার প্রাকারে সময়ের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। ১৩০ কোটি ভারতবাসীর স্বপ্ন আছে।১৩০ কোটি ভারতবাসীর নিজস্ব চ্যালেঞ্জও আছে। সব স্বপ্ন, সব চ্যালেঞ্জের নিজস্ব গুরুত্ব আছে।কোনওটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ, কোনওটা কম গুরুত্বপূর্ণ, এমন নয়। কিন্তু বর্ষাকাল, দীর্ঘ বলতে বলতে ভাষণ সম্পূর্ণ হওয়ার সম্ভাবনা নেই। এইজন্য বিষয়ের নিজস্ব গুরুত্ব থাকা সত্ত্বেও যা বলতে পারলাম আর যা বলতে পারলাম না, সবই সমান গুরুত্বপূর্ণ। এই কথাগুলি নিয়ে এগিয়ে যাব, দেশকে আমাদের এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। স্বাধীনতার ৭৫ বছর, গান্ধীজির ১৫০ বছর এবং ভারতীয় সংবিধানের ৭০ বছর হয়ে গেছে।বাবাসাহেব আম্বেদকরের স্বপ্ন এবং এই বছর গুরুত্বপূর্ণ। গুরু নানক দেবের ৫৫০ বছরও এটা। আসুন, বাবাসাহেব আম্বেদকরের, গুরু নানক দেবের শিক্ষা নিয়ে আমরা এগিয়ে যাই এবং উত্তম দেশ গঠন, উত্তম সমাজ গঠন এবং বিশ্বের আশা-প্রত্যাশার অনুরূপ ভারত আমাদের গড়তে হবে।
আমার প্রিয় ভাই ও বোনেরা, আমি জানি যে আমাদের লক্ষ্য হিমালয়ের মতোই উঁচু, আমাদের স্বপ্ন অগণিত, অসংখ্য তারার চেয়েও বেশি। কিন্তু আমরা এটাও জানি যে, আমাদের মনোবলের ঊড়ানের সামনে আকাশও কিছুই না। এটাই সংকল্প, আমাদের ক্ষমতা ভারত মহাসাগরের মতো অথৈ, আমাদের প্রচেষ্টা গঙ্গার ধারার মতো পবিত্র, নিরন্তর। আর সবথেকে বড় কথা, আমাদের মূল্যের পিছনে হাজার হাজার বছরের প্রাচীন সংস্কৃতি, ঋষি আর মুনিদের তপস্যা, দেশবাসীর ত্যাগ, কঠোর পরিশ্রম – এসবই আমাদের প্রেরণা।
আসুন, আমরা এই ভাবনার সঙ্গেই, এই আদর্শের সঙ্গেই, এই শপথের সঙ্গেই সফলতার লক্ষ্য সামনে রেখে আমরা পথে নামি, নতুন ভারত নির্মাণের জন্য, আমাদের দায়িত্ব পালন করে, নতুন আত্মবিশ্বাস, নতুন সংকল্প, নতুন ভারত নির্মাণের জড়িবুটি হোক। আসুন, আমরা সবাই মিলে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাই। এই একমাত্র প্রত্যাশা নিয়ে আমি আরেকবার দেশের জন্য বেঁচে থাকা, দেশের জন্য সংগ্রামী, দেশের জন্য আত্মত্যাগী, দেশের জন্য কিছু করতে চান এমন মানুষদের জন্য প্রত্যেক মানুষকে প্রণাম জানাচ্ছি। আমার সঙ্গে বলুন –
জয় হিন্দ
জয় হিন্দ
ভারত মাতা কি জয়
ভারত মাতা কি জয়
বন্দে মাতরম
বন্দে মাতরম
অনেক অনেক ধন্যবাদ।