দেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী শ্রী রাজনাথ সিং-জি, চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ জেনারেল বিপিন রাওয়াত, স্থলসেনা, নৌ-সেনা এবং বায়ুসেনার অধ্যক্ষ, প্রতিরক্ষা সচিব, এনসিসি-র মহানির্দেশক এবং সারা দেশ থেকে এখানে সমাগত দেশ ভক্তির প্রাণশক্তিতে পরিপূর্ণ এনসিসি ক্যাডেটগণ। আপনাদের মতো নবীন বন্ধুদের সঙ্গে যতটা সময় কাটানোর সুযোগ পাই তা আমার জন্য অত্যন্ত আনন্দঘন অনুভব এনে দেয়। এখন আপনারা এখানে যে মার্চ-পাস্ট করলেন, কিছু ক্যাডেট প্যারা-সেইলিং-এর দক্ষতা দেখালেন, তাছাড়া যে সাংস্কৃতিক প্রদর্শন হল, এগুলি দেখে শুধু আমি নয়, আজ টেলিভিশনের মাধ্যমেও যাঁরা দেখছেন প্রত্যেকেই হয়তো গর্ব অনুভব করছেন। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসে আপনারা ২৬ জানুয়ারির প্যারেডেও অসাধারণ প্রদর্শন করেছেন। আপনাদের এই পরিশ্রম গোটা বিশ্ব দেখেছে। আমরা দেখেছি, বিশ্বের যে দেশগুলির সমাজ জীবনে অনুশাসন থাকে, সেই দেশগুলিই সকল ক্ষেত্রে নিজেদের জয়ের পতাকা ওড়ায়। আর ভারতে সমাজ জীবনে অনুশাসন আনার ক্ষেত্রে এনসিসি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই প্রশিক্ষণ চলাকালীন সময়ে আপনাদের চরিত্রে যে শিষ্টাচারগুলি প্রোথিত হয় তা যেন সারা জীবন আপনাদের সঙ্গে থাকে! এনসিসি-র পরেও এই অনুশাসনের ভাবনা আপনাদের সঙ্গে থাকা উচিৎ। শুধু তাই নয়, আপনারা নিজেদের চারপাশে সমস্ত মানুষকেও নিরন্তর এই অনুশাসনের প্রেরণা জুগিয়ে যাবেন, তাহলেই ভারতের সমাজ আরও মজবুত হবে, দেশ মজবুত হবে!
বন্ধুগণ,
বিশ্বের সর্ববৃহৎ ‘ইউনিফর্মড ইয়ুথ অর্গানাইজেশন’ রূপে এনসিসি-র যে ভাবমূর্তি তৈরি হয়েছে তা প্রতিদিন আরও মজবুত হচ্ছে। আর যখন আমি আপনাদের প্রচেষ্টা দেখি, তখন খুব আনন্দ পাই, আপনাদের ওপর ভরসা আরও মজবুত হয়। শৌর্য এবং সেবাভাবের ভারতীয় পরম্পরাকে যেখানে লালন-পালন করা হয়, সেখানেই এনসিসি ক্যাডেটদের দেখা যায়। যেখানে সংবিধানের প্রতি জনগণের মনে সচেতনতা বৃদ্ধির অভিযান চলে সেখানেও এনসিসি ক্যাডেটদের দেখা যায়। পরিবেশ নিয়ে যত ভালো কাজ হয়, জল সংরক্ষণ থেকে শুরু করে পরিচ্ছন্নতার অভিযান, সর্বত্র এনসিসি ক্যাডেটদের দেখা যায়। সঙ্কটের সময়ে আপনারা সবাই যে অদ্ভূত পদ্ধতিতে সকলকে সংগঠিত করার কাজ করেন, তার উদাহরণ অন্য কোথাও খুব কম দেখা যায়। বন্যা হোক কিংবা অন্য যে কোনও বিপর্যয়, বিগত বছরগুলিতে এনসিসি ক্যাডেটরা বিপর্যস্ত মানুষদের যেভাবে ত্রাণ ও সুরক্ষা পৌঁছে দিয়েছেন তা প্রশংসার যোগ্য। করোনার এই গোটা সঙ্কটকালে লক্ষ লক্ষ ক্যাডেট সারা দেশে যেভাবে প্রশাসনের সঙ্গে মিলে সমাজের সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করেছেন তা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। আমাদের সংবিধানে যে নাগরিক কর্তব্যগুলির কথা বলা হয়েছে সেখানে আমাদের কাছ থেকে যা যা প্রত্যাশা করা হয়েছে সেগুলি পালন করা আমাদের সকলের দায়িত্ব।
আমরা সবাই এর সাক্ষী যে যখনই অসামরিক সমাজ, স্থানীয় নাগরিক নিজেদের কর্তব্যকে অগ্রাধিকার দেয়, তখন বড় থেকে বড় সমস্যাগুলি সহজেই সমাধান করা যায়। যেমন আপনারা খুব ভালোভাবেই জানেন যে আমাদের দেশে এক সময় নকশালবাদ, মাওবাদ কত বড় সমস্যা ছিল। দেশের কয়েকশ' জেলা এর দ্বারা প্রভাবিত ছিল। কিন্তু স্থানীয় নাগরিকদের এই কর্তব্যভাব এবং আমাদের নিরাপত্তা বাহিনীগুলির শৌর্যের যখন সমন্বয় ঘটে তখন নকশালবাদের কোমড় ভাঙতে শুরু করে। এখন দেশে কয়েকটি হাতেগোনা জেলায় নকশালবাদীরা গুটিয়ে রয়েছে। এখন দেশে শুধু নকশাল হিংসা কম হয়েছে তা নয়, আরও অনেক সন্ত্রাসবাদী হিংসার পথ ছেড়ে উন্নয়নের পথে যুক্ত হতে শুরু করেছেন। একজন নাগরিক হিসেবে নিজেদের কর্তব্যগুলিকে অগ্রাধিকার দেওয়ার প্রভাব আমরা এই করোনাকালে দেখেছি। যখন দেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে নিজেদের দায়িত্ব পালন করেছে, তখনই দেশ খুব ভালোভাবে করোনার মোকাবিলা করতে পেরেছে।
বন্ধুগণ,
এই করোনার সময়টি যেমন অত্যন্ত সমস্যাসঙ্কুল ছিল, তেমনই সঙ্গে করে অনেক সুযোগও এনেছে। তেমন সুযোগ সমস্যার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সুযোগ, বিজয়ী হওয়ার সুযোগ, দেশের কোনকিছু করার সুযোগ, দেশের ক্ষমতা বৃদ্ধির সুযোগ, আত্মনির্ভর হয়ে ওঠার সুযোগ। সাধারণ থেকে অসাধারণ এবং অসাধারণ থেকে সর্বশ্রেষ্ঠ হয়ে ওঠার সুযোগ। এই সমস্ত লক্ষ্য প্রাপ্তির ক্ষেত্রে ভারতের যুবশক্তি ভূমিকা ও অবদান সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ। আপনাদের সকলের ভেতরেও একজন রাষ্ট্রসেবকের পাশাপাশি, আমি একজন রাষ্ট্র রক্ষককে দেখতে পাচ্ছি। সেজন্য সরকার বিশেষ চেষ্টা করেছে যাতে এনসিসি-র ভূমিকাকে আরও বিস্তারিত করা যায়। দেশের সীমান্তবর্তী এবং সমুদ্র তটবর্তী অঞ্চলের নিরাপত্তার নেটওয়ার্ককে আরও শক্তিশালী করার জন্য এনসিসি-র অংশীদারিত্বকে বাড়ানো হচ্ছে।
গত বছর ১৫ আগস্ট এটা ঘোষণা করা হয়েছে যে সমুদ্র তটবর্তী এবং সীমান্তবর্তী এলাকার প্রায় ১৭৫টি জেলায় এনসিসি-কে নতুন দায়িত্ব দেওয়া হবে। সেজন্য প্রায় ১ লক্ষ এনসিসি ক্যাডেটকে আর্মি, নেভি এবং এয়ারফোর্স প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। এক্ষেত্রেও এক-তৃতীয়াংশ আমাদের গার্ল ক্যাডেটদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এই ক্যাডেটদের নির্বাচন সকল স্কুল ও কলেজে, তা সে সরকারি হোক কিংবা বেসরকারি, কেন্দ্র হোক কিংবা রাজ্য সরকার সকলকে এক্ষেত্রে সামিল করা হচ্ছে। এনসিসি-র প্রশিক্ষণ ক্ষমতাগুলিকেও সরকার দ্রুতগতিতে বাড়াচ্ছে। এখন পর্যন্ত আপনাদের কাছে শুধু একটিই ফায়ারিং সিমুলেটর থাকত। এখন এটি বাড়িয়ে ৯৮টি করা হচ্ছে, প্রায় ১০০টি। কোথায় ১ আর কোথায় ১০০। মাইক্রো-লাইট ফ্লাইট সিমুলেটরও পাঁচটি থেকে বাড়িয়ে ৪৪টি করা হচ্ছে। রোবিন সিমুলেটরও ১১ থেকে বাড়িয়ে ৬০টি করা হচ্ছে। এই আধুনিক সিমুলেটরগুলি এনসিসি প্রশিক্ষণের উৎকর্ষকে আরও উন্নত করার ক্ষেত্রে সাহায্য করবে।
বন্ধুগণ,
এই আয়োজন এখন যে ময়দানে হচ্ছে তার নাম ফিল্ড মার্শাল কে এম কারিয়াপ্পাজির নামে রাখা হয়েছে। এটা আপনাদের জন্য অনেক বড় প্রেরণা। কারিয়াপ্পাজির জীবন অনেক বীরগাথায় ভরপুর। ১৯৪৭-এ তাঁর রণনৈতিক দক্ষতার ফলেই ভারত যুদ্ধ জিতেছিল। আজ ফিল্ড মার্শাল কে এম কারিয়াপ্পাজির জন্মজয়ন্তী। আমি সমস্ত দেশবাসীর পক্ষ থেকে, আপনাদের সকলের পক্ষ থেকে তাঁকে সাদর শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করছি।
আপনাদের মধ্যেও অনেক বন্ধুরও হয়তো বিভিন্ন সেনাবাহিনীতে যোগদানের প্রবল ইচ্ছা রয়েছে। আপনাদের প্রত্যেকের মধ্যেই সেই সামর্থ্য আছে এবং সরকার আপনাদের জন্য সুযোগও বাড়াচ্ছে। বিশেষভাবে ‘গার্লস ক্যাডেট’দের আমি অনুরোধ, আপনাদের জন্য অনেক সুযোগ অপেক্ষা করছে। আমি নিজের সামনেই দেখতে পাচ্ছি, আর পরিসংখ্যানও দিচ্ছি। বিগত বছরগুলিতে এনসিসি-তে গার্লস ক্যাডেটদের সংখ্যা প্রায় ৩৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন আমাদের নিরাপত্তা বাহিনীগুলিতেও প্রত্যেক বিভাগ আপনাদের জন্য খোলা হচ্ছে। ভারতের বীর কন্যারা প্রত্যেক ফ্রন্টে শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য নিজেদের প্রস্তুত করছে। আপনাদের শৌর্য দেশের প্রয়োজন। আর অনেক নতুন সাফল্য আপনাদের জন্য অপেক্ষা করছে। আর আমি আপনাদের মধ্যে ভবিষ্যতের অফিসারদের দেখতে পাচ্ছি। আমার মনে পড়ছে, এই দুই-আড়াই মাস আগে দীপাবলির সময় জয়সলমীরের কাছেই লঙ্গোয়ালা পোস্টে গিয়েছিলাম। তখন অনেক নবীন অফিসারদের সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হয়েছিল। দেশ রক্ষার জন্য তাঁদের উৎসাহ, উদ্দীপনা, সাহস ও দৃঢ়তা তাঁদের চেহারায় দেখা যাচ্ছিল। তাঁদের চেহারায় অদম্য ইচ্ছাশক্তি থেকে জেগে ওঠা প্রত্যয় আমি কখনও ভুলতে পারব না।
বন্ধুগণ,
লঙ্গোয়াল পোস্টেরও নিজস্ব একটি গৌরবময় ইতিহাস আছে। ১৯৭১-এর যুদ্ধে লঙ্গোয়ালে আমাদের বীর যোদ্ধারা নির্ণায়ক বিজয় লাভ করেছিল। তখন পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ চলছিল। পূর্ব এবং পশ্চিমে হাজার হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্তে ভারতীয় সেনারা তাঁদের পরাক্রমে শত্রুদের পরাস্ত করেছিল। সেই যুদ্ধে পাকিস্তানের হাজার হাজার সৈনিক ভারতের পরাক্রমী সৈন্যদের সামনে আত্মসমর্পণ করেছিল। ১৯৭১-এর সেই যুদ্ধ ভারতের মিত্র এবং আমাদের প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশ সৃষ্টিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছিল। এ বছর সেই যুদ্ধে বিজয়ের ৫০ বছরে আমরা পা রাখতে চলেছি। আমরা ভারতীয়রা ১৯৭১-এর যুদ্ধে দেশকে জয় এনে দেওয়া বীর পুত্র-কন্যাদের সাহস, তাঁদের শৌর্যের জন্য গর্বিত। আজ গোটা দেশ তাঁদেরকে স্যালুট করছে। এই যুদ্ধে দেশের জন্য যাঁরা শহীদ হয়েছেন আজ আমি তাঁদেরকেও শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করছি।
বন্ধুগণ,
আপনারা সবাই যখন দিল্লিতে এসেছেন, তখন জাতীয় যুদ্ধ স্মারকে স্বাভাবিকভাবেই যাবেন। দেশ রক্ষার জন্য জীবন উৎসর্গকারীদের সম্মান প্রদর্শন আমাদের সকলের দায়িত্ব। এবারের সাধারণতন্ত্র দিবসে আমাদের যে ‘গ্যালান্টারি অ্যাওয়ার্ড পোর্টাল’ আছে, www.gallantaryawards.gov.in - এটিকে নতুনভাবে সাজিয়ে ‘রি-লঞ্চ’ করা হয়েছে। এতে পরমবীর এবং মহাবীর চক্রের মতো সম্মান পাওয়া সৈনিকদের জীবন সংক্রান্ত তথ্যাদি আপনারা এই পোর্টালে গিয়ে দেখতে পাবেন এবং তাঁদের শৌর্যকে প্রণাম জানাতে পারবেন। আর আমার এনসিসি-র বর্তমান এবং প্রাক্তন সমস্ত ক্যাডেটদের প্রতি অনুরোধ, আপনারা অবশ্যই এই পোর্টালে যাবেন, এর সঙ্গে যুক্ত হবেন।
বন্ধুগণ,
আমাকে এটাও বলা হয়েছে যে ‘এনসিসি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম’ তৈরি করা হয়েছে। সেখানে এখন পর্যন্ত ২০ হাজারেরও বেশি ক্যাডেট যুক্ত হয়েছেন। এই ক্যাডেটরা নিজেদের অভিজ্ঞতা, নিজেদের ভাবনা শেয়ার করা শুরু করেছেন। আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে আপনারা সবাই বেশি বেশি করে এই প্ল্যাটফর্মটিকে ব্যবহার করবেন।
বন্ধুগণ,
দেশভক্তি এবং দেশসেবার যে মূল্যবোধ নিয়ে আপনারা এগিয়ে চলেছেন, সেগুলির ক্ষেত্রে এ বছর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ বছর ভারত তার স্বাধীনতার ৭৫তম বর্ষে প্রবেশ করতে চলেছে। এ বছর নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বোসের ১২৫তম জন্মজয়ন্তীও। জীবনে একসঙ্গে এতবড় প্রেরণার সুযোগ খুব কমই আসে। নেতাজী সুভাষ! যিনি তাঁর পরাক্রমের মাধ্যমে বিশ্বের সবচাইতে বড় ক্ষমতাশালী দেশকে নাড়িয়ে দিয়েছিলেন। আপনারা নেতাজী সম্পর্কে যত পড়বেন, ততই বুঝতে পারবেন যে, কোনও সমস্যা এত বড় হতেই পারে না যাতে আপনাদের উৎসাহ ও উদ্দীপনা অতিক্রম করতে পারে না। দেশের স্বাধীনতার জন্য নিজের সবকিছু উৎসর্গকারী এরকম অনেক বীর আপনাদের, তাঁদের স্বপ্নের ভারত নির্মাণ করতে দেখতে চান। আর আপনাদের জীবনের আগামী ২৫-২৬ বছর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই ২৫-২৬ বছর ভারতের জন্য ততটাই গুরুত্বপূর্ণ।
২০৪৭ সালে যখন দেশ তার স্বাধীনতার শতবর্ষ পূর্ণ করবে, তখন আপনাদের আজকের প্রচেষ্টা ভারতের এই যাত্রাপথকে আরও শক্তিশালী করবে। অর্থাৎ এ বছর একজন ক্যাডেট রূপে এবং একজন নাগরিক রূপেও নতুন শপথ নেওয়ার বছর। দেশের জন্য সঙ্কল্প গ্রহণের বছর। দেশের জন্য নতুন স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে চলার বছর। বিগত বছরে বড় বড় সঙ্কটগুলিকে আমরা যে সামগ্রিক শক্তি দিয়ে একটি রাষ্ট্র, একটি মন হিসেবে মোকাবিলা করেছি, সেই ভাবনাকেই আমাদের আরও শক্তিশালী করে তুলতে হবে। আমাদের দেশের অর্থনীতিতে এই মহামারীর ফলে যে কু-প্রভাব পড়েছে, তাকেও আমাদের সম্পূর্ণরূপে নাস্তানাবুদ করতে হবে। আর আত্মনির্ভর ভারতের স্বপ্নকেও আমাদের বাস্তবায়িত করে দেখাতে হবে।
বন্ধুগণ,
গত বছর ভারত দেখিয়েছে যে ভাইরাস হোক কিংবা সীমান্তে শত্রুর আক্রমণ, ভারত নিজেকে রক্ষার করার ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ শক্তি নিয়ে প্রতিটি পদক্ষেপ নিতে সক্ষম। টিকাকরণের মাধ্যমে সুরক্ষা কবচ হোক কিংবা ভারতকে প্রতিস্পর্ধা দেখানোর সাহস যারা দেখাবে তাঁদেরকে আধুনিকতম মিসাইলের মাধ্যমে জলে, স্থলে, অন্তরীক্ষে ধ্বংস করতে ভারত সমর্থ। আজ আমরা টিকার ক্ষেত্রে আত্মনির্ভর হয়ে উঠেছি। আমাদের সেনাবাহিনীগুলির আধুনিকীকরণের ক্ষেত্রেও ততটাই দ্রুতগতিতে চেষ্টা করছি। ভারতের সমস্ত সেনাদলগুলি যাতে সবদিক থেকে সর্বশ্রেষ্ঠ হয় তা সুনিশ্চিত করতে প্রতিটি পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। আজ ভারতের কাছে বিশ্বের উন্নততম ওয়ার মেশিনগুলি রয়েছে। আপনারা আজ হয়তো সংবাদমাধ্যমেও দেখেছেন গতকালই ভারতে ফ্রান্স থেকে আরও তিনটি রাফাল ফাইটার বিমান এসেছে। ভারতের এই ফাইটার বিমানগুলি আকাশে উড়তে উড়তেই রি-ফুয়েলিং করে নিয়েছে। আর এই রি-ফুয়েলিং ভারতের বন্ধু ইউনাইটেড আরব এমিরেটস-এর বিমান করেছে। আর এক্ষেত্রে আমাদের আরও দুটি বন্ধু দেশ, গ্রীস এবং সৌদি আরব সহযোগিতা করেছে। এই বিমানগুলি ভারতের সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলির সম্পর্ক কত মজবুত তারও একটি চিত্র তুলে ধরেছে।
বন্ধুগণ,
নিজেদের সেনাবাহিনীর অধিকাংশ প্রয়োজন যেন ভারতেই পূরণ করা যায় সেজন্যও ভারত সরকার বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ১০০টিরও বেশি নিরাপত্তা সংক্রান্ত সরঞ্জাম বিদেশ থেকে কেনা বন্ধ করে সেগুলি ভারতেই তৈরি করা হচ্ছে। এখন ভারতের নিজস্ব তেজস ফাইটার প্লেনও সমুদ্র থেকে শুরু করে আকাশ পর্যন্ত তার তেজ বিকিরণ করছে। সম্প্রতি বিমানবাহিনীর জন্য ৮০টিরও বেশি তেজস বিমানের অর্ডার দেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নির্ভর ওয়ারফেয়ারের ক্ষেত্রেও ভারত যাতে কারোর থেকে পিছিয়ে না পড়ে, সেজন্য প্রয়োজনীয় গবেষণা ও উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। সেদিন আর দূরে নেই যখন ভারত প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের বড় বাজারের পরিবর্তে একটি বড় উৎপাদক দেশ হিসেবে পরিচিত হবে।
বন্ধুগণ,
আত্মনির্ভরতার অনেক লক্ষ্য পূরণ হতে আজ আপনারা যখন দেখছেন, তখন আপনাদের মনে গর্বের অনুভব হওয়া অত্যন্ত স্বাভাবিক। আপনারাও এখন নিজের মধ্যে এবং বন্ধুদের মনে স্থানীয় পণ্যের প্রতি উৎসাহ অনুভব করছেন। আমি দেখতে পাচ্ছি, ব্র্যান্ডের ক্ষেত্রে ভারতের যুবক-যুবতীদের পছন্দে এখন অনেক বড় পরিবর্তন এসেছে। উদাহরণস্বরূপ, খাদির কথা বলতে পারি। একটা সময় খাদিকে নেতারা তাঁর নিজের মতো করে ছেড়ে দিয়েছিল। আজ সেই খাদি নবীন প্রজন্মের পছন্দের ব্র্যান্ড হয়ে উঠেছে। খাদির কুর্তা থেকে শুরু করে জ্যাকেট বা অন্যান্য পরিধেয় আজ যুব সমাজের কাছে ফ্যাশনের প্রতীক হয়ে উঠেছে। এভাবে আজ বস্ত্রশিল্প থেকে শুরু করে ইলেক্ট্রনিক্স, ফ্যাশন থেকে শুরু করে প্যাশন, উৎসব থেকে শুরু করে বিয়ে - সর্বক্ষেত্রে স্থানীয় পণ্যের ব্যবহারের জন্য প্রত্যেক ভারতীয় উচ্চকিত হয়ে উঠছেন। করোনার কঠিন সময়েও ভারতে রেকর্ড সংখ্যক স্টার্ট-আপ চালু হয়েছে এবং রেকর্ড সংখ্যক ইউনিকর্ন দেশের যুবকরা তৈরি করেছে।
বন্ধুগণ,
একবিংশ শতাব্দীর ভারতের জন্য আত্মবিশ্বাসী যুবক-যুবতীদের প্রয়োজন সবচাইতে বেশি। এই আত্মবিশ্বাস ফিটনেস থেকে তৈরি হয়। শিক্ষা থেকে তৈরি হয়। দক্ষতা এবং যথোচিত সুযোগ থেকে তৈরি হয়। আজ সরকার দেশের যুব সম্প্রদায়ের জন্য প্রয়োজনীয় এই দিকগুলি নিয়ে কাজ করছে এবং সেজন্য ব্যবস্থায় সমস্তরকম প্রয়োজনীয় সংস্কারও আনা হচ্ছে। কয়েক হাজার অটল টিঙ্কারিং ল্যাব গড়ে তোলা থেকে শুরু করে বড় বড় আধুনিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পর্যন্ত, স্কিল ইন্ডিয়া মিশন থেকে শুরু করে মুদ্রা যোজনা পর্যন্ত সরকার প্রত্যেক দিশায় প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আজ ভারত ফিটনেস এবং ক্রীড়াক্ষেত্রকে অভূতপূর্ব অগ্রাধিকার দিচ্ছে। 'ফিট ইন্ডিয়া’ অভিযান এবং 'খেলো ইন্ডিয়া’ অভিযান দেশের গ্রামে গ্রামে উন্নত ফিটনেস এবং উন্নত মেধাকে উৎসাহিত করছে। 'ফিট ইন্ডিয়া’ অভিযান এবং 'যোগ'কে উৎসাহ যোগানোর জন্য এনসিসি-তেও বিশেষ কর্মসূচি চালু হয়েছে।
নতুন জাতীয় শিক্ষানীতির মাধ্যমে ভারতের শিক্ষা ব্যবস্থাকে প্রি-নার্সারি থেকে শুরু করে পিএইচডি পর্যন্ত ছাত্র-কেন্দ্রিক করে তোলা হচ্ছে। আমাদের শিশুদের, নবীন বন্ধুদের অনাবশ্যক চাপ থেকে মুক্ত করে তাদের নিজেদের, নিজেদের রুচি অনুসারে এগিয়ে চলার জন্য অবসর গড়ে তোলা হচ্ছে। চাষের কাজ থেকে শুরু করে মহাকাশ ক্ষেত্র পর্যন্ত প্রত্যেক স্তরে আমাদের নবীন প্রতিভাদের, নবীন শিল্পোদ্যোগীদের জন্য সুযোগ সৃষ্টি করা হচ্ছে। আপনারা এই সুযোগগুলি থেকে যতটা লাভবান হবেন, ততটাই দেশ এগিয়ে যাবে। আমাদের 'বয়ং রাষ্ট্র জাগ্রিয়ামঃ' এই বৈদিক আহ্বানকে একবিংশ শতাব্দীর নবীন প্রাণশক্তির জয়ঘোষে পরিণত করতে হবে। আমাদের 'ইদম্ রাষ্ট্রায় ইদম্ ন মম্’ অর্থাৎ, এই জীবন রাষ্ট্রকে সমর্পিত। এই ভাবনা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। আমাদের 'রাষ্ট্র হিতায় রাষ্ট্র সুখায়চ’ এই শপথ নিয়ে প্রত্যেক দেশবাসীর জন্য কাজ করতে হবে। 'আত্মবৎ সর্বভূতেষু’ আর 'সর্বভূত হিতেরতা’ অর্থাৎ, 'সবকা সাথ, সবকা বিকাশ, সবকা বিশ্বাস' এই মন্ত্র সঙ্গে নিয়েই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।
আমরা যদি এই মন্ত্রগুলি নিজেদের জীবনে মেনে চলি তাহলে আত্মনির্ভর ভারতের সঙ্কল্প থেকে সিদ্ধি পেয়ে বেশিদিন লাগবে না। আরেকবার আপনাদের সবাইকে সাধারণতন্ত্র দিবস প্যারেডে অংশগ্রহণ করার জন্য অনেক অনেক অভিনন্দন এবং ভবিষ্যতের জন্যও অনেক অনেক মঙ্গল কামনা করছি।
অনেক অনেক ধন্যবাদ!