আমি এই দশকের প্রথম বাজেটের জন্য, যাতে দূরদর্শিতা ও তৎপরতাও রয়েছে – এর জন্য অর্থমন্ত্রী শ্রীমতী নির্মলা সীতারমনজী এবং তাঁর টিমকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই।
এই বাজেটে যে নতুন সংস্কারগুলির কথা ঘোষণা করা হয়েছে, তা দেশের অর্থ-ব্যবস্থাকে গতি প্রদান করবে, দেশের প্রত্যেক নাগরিকের আর্থিক ক্ষমতায়নের মাধ্যমে এই দশকের অর্থ-ব্যবস্থার ভিত্তি শক্তিশালী করবে।
রোজগারের প্রধান ক্ষেত্রগুলি হ’ল – কৃষি, পরিকাঠামো ক্ষেত্র, বস্ত্র শিল্প এবং প্রযুক্তি। বাজেটে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির জন্য এই চারটি ক্ষেত্রের ওপরেই জোর দেওয়া হয়েছে।
কৃষকের আয় দ্বিগুণ করে তোলার প্রচেষ্টার পাশাপাশি, ১৬টি অ্যাকশন পয়েন্ট নির্দিষ্ট করা হয়েছে, যেগুলির মাধ্যমে গ্রামীণ ক্ষেত্রে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করা হবে। বাজেটে কৃষির জন্য সুসংহত দৃষ্টিকোণ গ্রহণ করা হয়েছে, যাতে পরম্পরাগত পদ্ধতিগুলির পাশাপাশি, বাগিচা শিল্প, মৎস্যচাষ এবং পশুপালনের মাধ্যমে মূল্য সংযোজন বৃদ্ধি পাবে, এর ফলে, রোজগারও বৃদ্ধি পাবে। নীল অর্থনীতিতে যুবসম্প্রদায় মৎস্য প্রক্রিয়াকরণ এবং বাজারজাত করার নতুন সুযোগ পাবেন।
বস্ত্রশিল্পে প্রযুক্তি ব্যবহার বৃদ্ধির জন্য নতুন মিশন ঘোষণা করা হয়েছে। মনুষ্য সৃষ্ট তন্তু ভারতে উৎপাদনের জন্য কাঁচামালের জন্য প্রদত্ত শুল্ক কাঠামোর সংস্কার করা হয়েছে। এই সংস্কারের জন্য বিগত তিন দশক ধরে দাবি উঠছিল।
আয়ুষ্মান ভারত যোজনা দেশের স্বাস্থ্য পরিষেবাকে আরও সম্প্রসারিত করেছে। স্বাস্থ্য পরিষেবার জন্য মানবসম্পদ – চিকিৎসক, নার্স বা সেবিকা, চিকিৎসা ক্ষেত্রে যুক্ত পরিষেবাদাতা এবং চিকিৎসা সরঞ্জাম নির্মাণ শিল্পে অনেক সুযোগ বেড়েছে। সরকার এই ক্ষেত্রটিকে আরও সম্প্রসারিত করার নতুন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
প্রযুক্তি ক্ষেত্রে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির জন্য এই বাজেটে আমরা বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছি। নতুন নতুন স্মার্টসিটি, বৈদ্যুতিন নির্মাণ শিল্প, ডেটা সেন্টার পার্কস্, জৈব প্রযুক্তি এবং কোয়ান্টাম প্রযুক্তির মতো ক্ষেত্রের জন্য অনেক নীতিগত উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে ভারত আন্তর্জাতিক মূল্য শৃঙ্খলের একটি অভিন্ন অঙ্গ হয়ে ওঠার দিকে দৃঢ় পদক্ষেপে এগিয়ে যাবে।
বাজেটে যুবসম্প্রদায়ের দক্ষতা উন্নয়নের জন্যও নানা সৃষ্টিশীল উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যেমন – ডিগ্রি কোর্সগুলিতে অ্যাপ্রেন্টিসশিপ, স্থানীয় প্রশাসনগুলিতে ইন্টার্নশিপ এবং নানা অনলাইন ডিগ্রি কোর্সের ব্যবস্থা। ভারত থেকে যে যুবক-যুবতীরা চাকরির জন্য বিদেশ যেতে চান, তাঁদের জন্য বিভিন্ন ব্রিজ কোর্সের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
রপ্তানি এবং ক্ষুদ্র, অতিক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা হয়েছে। বাজেটে রপ্তানি বৃদ্ধির জন্য নতুন নতুন প্রকল্প ঘোষণা করা হয়েছে। ক্ষুদ্র, অতিক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে অর্থ প্রদানের জন্য বেশ কিছু নতুন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
আধুনিক ভারতের জন্য আধুনিক পরিকাঠামোর গুরুত্ব অপরিসীম। পরিকাঠামো ক্ষেত্র কর্মসংস্থান সৃষ্টিও করে। ১০০ লক্ষ কোটি টাকা বিনিয়োগে ৬ হাজার ৫০০টি প্রকল্প নির্মাণ অনেক নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে। জাতীয় লজিস্টিক পলিসির মাধ্যমেও বাণিজ্য, লেনদেন ও কর্মসংস্থান – এই তিনটি ক্ষেত্রই লাভবান হবে। দেশে ১০০টি বিমানবন্দর উন্নীতকরণের লক্ষ সাধারণ মানুষের বিমানযাত্রাকে নতুন মানে পৌঁছে দেওয়া হ’ল। ভারতের পর্যটন ক্ষেত্রকে নতুন গতি প্রদান করবে। পরিকাঠামো ক্ষেত্রে আমরা স্টার্ট আপের মাধ্যমে এবং প্রকল্প উন্নয়নের মাধ্যমে যুবসম্প্রদায়ের প্রাণশক্তিকে নতুন শক্তি যোগাবো।
কর কাঠামোতে মৌলিক পরিবর্তনের ফলে ভারতে অনেক ক্ষেত্রে মূল্য সংযোজনের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাবে। কর্মসংস্থানের জন্য বিনিয়োগ সবচেয়ে বড় চালিকাশক্তি। এই লক্ষ্যে বেশ কিছু ঐতিহাসিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বন্ড মার্কেটকে শক্তিশালী করতে এবং পরিকাঠামোর দীর্ঘ মেয়াদী বিনিয়োগের জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ডিবিডেন্ট ডিস্ট্রিবিউশন ট্যাক্স বাতিল করার ফলে কোম্পানিগুলির হাতে ২৫ হাজার কোটি টাকা আসবে, যা তাঁদের ভবিষ্যতে বিনিয়োগ করতে সাহায্য করবে। ভারতে বিদেশি বিনিয়োগে আকর্ষণ বৃদ্ধি করতে আমরা বিভিন্ন কর ছাড় দিয়েছি। স্টার্ট আপ এবং রিয়েল এস্টেটের জন্যও কর ছাড় দেওয়া হয়েছে। এই সমস্ত সিদ্ধান্ত অর্থ-ব্যবস্থাকে দ্রুতগতিতে এগিয়ে নিয়ে যেতে এবং এর মাধ্যমে যুবসম্প্রদায়ের জন্য নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে কার্যকরি ভূমিকা পালন করবে।
এখন আমরা আয়কর ব্যবস্থায় বিবাদ থেকে বিশ্বাসের যাত্রাপথে এগিয়ে চলেছি।
আমাদের কোম্পানি আইনে এখন কিছু দেওয়ানি প্রকৃতির ত্রুটি হলে, সেগুলিকে এখন অপরাধের আওতায় বাইরে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ট্যাক্স পেয়ার চার্টারের মাধ্যমে করদাতাদের অধিকারগুলি স্পষ্ট করা হবে।
আমাদের সরকার সর্বদাই ক্ষুদ্র, অতিক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পপতিদের উপর আস্থা রেখেছে। এখন বছর ৫ কোটি টাকা লেনদেনের ক্ষেত্রে কোনও অডিট করানোর প্রয়োজন হবে না। ডিপোজিটার্স বিমার ক্ষেত্রে আরেকটি বড় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ব্যাঙ্কে যাঁরা টাকা জমা রেখেছেন, তাঁদের অর্থ যে সুরক্ষিত এই বিশ্বাস প্রদানের জন্য এখন ডিপোজিটার্স বিমার সীমা ১ লক্ষ থেকে বাড়িয়ে ৫ লক্ষ টাকা করা হয়েছে।
ন্যূনতম সরকার, অধিকতম প্রশাসন – এর দায়বদ্ধতাকে এই বাজেট আরও শক্তিশালী করেছে।
ফেসলেস আবেদনের ব্যবস্থা, প্রত্যক্ষ করের নতুন ও সরল কাঠামো, বিলগ্নিকরণের ওপর জোর, অটো-এনরোলমেন্টের মাধ্যমে ইউনিভার্সাল পেনশনের ব্যবস্থা, ইউনিফায়েড প্রকিওরমেন্টের দিকে এগিয়ে যাওয়া – এমন কিছু পদক্ষেপ জনগণের জীবনে সরকারের দখলদারি কম করবে এবং তাঁদের ইজ অফ লিভিং বৃদ্ধি করবে।
অধিকতম প্রশাসনের লক্ষ্যে ১ লক্ষ গ্রাম পঞ্চায়েতে অঙ্গনওয়াড়ি, বিদ্যালয়, হেলথ অ্যান্ড ওয়েলনেস সেন্টার এবং থানাগুলিকে ব্রডব্যান্ডের মাধ্যমে যুক্ত করা একটি ঐতিহাসিক সূত্রপাত রূপে পরিগণিত হবে।
আজ সরকারি চাকরির জন্য যুবসম্প্রদায়কে নানা পরীক্ষায় বসতে হয় – এই ব্যবস্থা বদলে এখন ন্যাশনাল রিক্রুটমেন্ট এজেন্সি আয়োজিত অনলাইন কমন এক্সামের মাধ্যমে কর্মী নিয়োগ করা হবে।
কৃষকদের জন্য নিজেদের ফসল সঠিকভাবে বাজারীকরণের জন্য, পরিবহণের জন্য, ‘কিষাণ রেল’ এবং ‘কৃষি উড়ান’ – এর নতুন ব্যবস্থা চালু করা হবে।
আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে, এই বাজেট আয় এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধি করবে, চাহিদা এবং উপভোগ বৃদ্ধি করবে। অর্থ ব্যবস্থা এবং ক্রেডিট লেনদেনে নতুন প্রাণশক্তি সঞ্চার করবে।
এই বাজেট দেশের বর্তমান প্রয়োজনগুলির পাশাপাশি, এই দশকের ভবিষ্যৎ প্রত্যাশা পূরণেরও কাজ করবে।
অনেক অনেক ধন্যবাদ।