নমস্কার!
এই কর্মসূচিতে আমাদের সঙ্গে উপস্থিত লোকসভার মাননীয় অধ্যক্ষ শ্রী ওম বিড়লাজি, রাজ্যসভার মাননীয় উপ-সভাপতি শ্রী হরিবংশজি, হিমাচল প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শ্রী জয়রাম ঠাকুরজি, হিমাচল বিধানসভার বিরোধীপক্ষের নেতা শ্রী মুকেশ অগ্নিহোত্রীজি, হিমাচল বিধানসভার অধ্যক্ষ শ্রী বিপিন সিং পরমারজি, দেশের বিভিন্ন আইনসভার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রিসাইডিং অফিসার বা আধিকারিকগণ এবং উপস্থিত ভদ্রমহিলা ও ভদ্রমহোদয়গণ,
দেশের প্রিসাইডিং অফিসারদের এই গুরুত্বপূর্ণ কনফারেন্স প্রত্যেক বছর কিছু নতুন আলোচ্য বিষয় এবং নতুন নতুন সঙ্কল্প নিয়ে শুরু হয়। প্রত্যেক বছর এই আলাপ-আলোচনার মন্থন থেকে কিছু না কিছু অমৃত উঠে আসে যা আমাদের দেশকে, দেশের সংসদীয় ব্যবস্থাকে গতিশীল করে, নতুন প্রাণশক্তি সঞ্চার করে, নতুন নতুন সঙ্কল্প গ্রহণের জন্য প্রেরণা যোগায়। এটাও অত্যন্ত সুখকর বিষয় যে আজ এই পরম্পরার ১০০ বছর পূর্ণ হচ্ছে। এটা আমাদের সকলের সৌভাগ্য এবং ভারতের গণতান্ত্রিক বিস্তারের প্রতীকস্বরূপ। আমি এই গুরুত্বপূর্ণ পরম্পরার শতাব্দী উদযাপন কনফারেন্সে দেশের সংসদ এবং সকল বিধানসভা ও বিধান পরিষদের সমস্ত সদস্যদের এবং সমস্ত দেশবাসীকে শুভকামনা জানাই।
বন্ধুগণ,
ভারতের জন্য গণতন্ত্র নিছকই একটি ব্যবস্থা নয়, গণতন্ত্র তো ভারতের স্বভাবের মধ্যে রয়েছে, ভারতের সহজ প্রকৃতির অঙ্গ। আপনাদের এই যাত্রা সেজন্য আরও বিশেষ হয়ে উঠেছে, কারণ, এই সময় ভারত তার স্বাধীনতার ৭৫তম বর্ষপূর্তি উৎসব উদযাপন করছে, অমৃত মহোৎসব পালন করছে। এই সংযোগ এই কর্মসূচির বৈশিষ্ট্যকে তো সমৃদ্ধ করেই, পাশাপাশি আমাদের দায়িত্বগুলিকেও অনেকগুণ বাড়িয়ে দেয়।
বন্ধুগণ,
আমাদের আগামী বছরগুলিতে দেশকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে হবে, অসাধারণ লক্ষ্যগুলি পূরণ করতে হবে – এই সঙ্কল্প ‘সবকা প্রয়াস’ বা সকলের প্রচেষ্টাতেই সম্পূর্ণ হবে। আমাদের গণতন্ত্রে ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় যখন আমরা এই ‘সবকা প্রয়াস’-এর কথা বলি, তখন সকল রাজ্যের ভূমিকা তার একটি বড় ভিত্তি। দেশ বিগত বছরগুলিতে যা অর্জন করেছে সেই সাফল্যে রাজ্যগুলির সক্রিয় অংশীদারিত্ব বড় ভূমিকা পালন করেছে, তা সে উত্তর-পূর্ব ভারতের অনেক দশক পুরনো সমস্যাগুলির সমাধান হোক কিংবা অনেক দশক ধরে থেমে থাকা, ঝুলে থাকা উন্নয়নের বড় বড় প্রকল্পগুলিকে আবার চালু করে সম্পূর্ণ করা হোক। এরকম কত না কাজ দেশে বিগত বছরগুলিতে সম্পূর্ণ হয়েছে এবং তা সকলের প্রচেষ্টাতেই সম্ভব হয়েছে। এখন আমাদের সামনে সবচাইতে বড় উদাহরণ হল করোনার বিরুদ্ধে লড়াই। এতবড় লড়াই দেশ সমস্ত রাজ্যগুলিকে সঙ্গে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়েছে। এটা একটা ঐতিহাসিক লড়াই। আজ ভারত ১১০ কোটি টিকার ডোজের মতো বড় পরিসংখ্যান অতিক্রম করেছে। যা কখনও অসম্ভব বলে মনে হত তা আজ সম্ভব হচ্ছে। সেজন্য আমাদের সামনে ভবিষ্যতের যত স্বপ্ন রয়েছে, যত অমৃত সঙ্কল্প রয়েছে, সেগুলিও নিশ্চিতভাবেই বাস্তবায়িত হবে। কেন্দ্র এবং রাজ্যগুলির ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টাতেই এই সঙ্কল্পগুলি বাস্তবায়িত হবে। এই সময়টা হল আমাদের সাফল্যগুলিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময়, যা বাকি রয়েছে তা সম্পূর্ণ করার সময়। পাশাপাশি, একটি নতুন ভাবনা, নতুন দৃষ্টিকোণ নিয়ে আমাদের ভবিষ্যতের জন্য নতুন নিয়ম এবং নীতিও রচনা করতে হবে। আমাদের আইনসভাগুলির পরম্পরা এবং ব্যবস্থাগুলি যেন স্বভাবে ভারতীয় হয়, আমাদের নীতিগুলি যেন ভারতীয় হয় এবং আমাদের আইনেও যেন ভারতীয় স্বত্ত্বা থাকে। এগুলি যেন ‘এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারত’-এর সঙ্কল্পকে শক্তিশালী করে তোলে আর সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ, আইনসভায় আমাদের নিজেদেরও আচার-ব্যবহার যেন ভারতীয় মূল্যবোধ অনুসারে হয়, এটা দেখা আমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব। এই লক্ষ্যে আমাদের এখনও অনেক কিছু করার সুযোগ রয়েছে।
বন্ধুগণ,
আমাদের ভারত অনেক বৈচিত্র্যময় দেশ। আমাদের হাজার হাজার বছর প্রাচীন সভ্যতার বিকাশ যাত্রায় আমরা এই বিষয়টিকে সুনিশ্চিত করেছি যে এত শত বৈচিত্র্যের মধ্যেও এদেশে ঐক্যের সৌন্দর্য এবং একতার দিব্য অখণ্ড ধারা অনন্তকাল ধরে অবিরাম প্রবহমান। একতাই এই অখণ্ড ধারা, আমাদের দেশের বৈচিত্রের ঐতিহ্যকে সাজিয়ে রাখে, তার সংরক্ষণ করে। আজকের এই পরিবর্তিত সময়েও আমাদের আইনসভাগুলির বিশেষ দায়িত্ব হল দেশের একতা ও অখণ্ডতার প্রতিকূল যদি একটিও ভিন্ন স্বর শোনা যায়, তাহলে সে সম্পর্কে সতর্ক থাকা। বৈচিত্র্য যেন আমাদের ঐতিহ্য রূপে গৌরবান্বিত করতে থাকে, আমাদের নিজস্ব বৈচিত্র্যের উৎসব পালন করতে থাকে, আমাদের আইনসভাগুলিতেও এই বার্তা যেন নিরন্তর সূচিত হয়।
বন্ধুগণ,
সাধারণতঃ, রাজনৈতিক নেতাদের সম্পর্কে, জনপ্রতিনিধিদের সম্পর্কে কিছু মানুষ এই ভাবমূর্তি তৈরি করে নেয় যে এঁরা নেতা, তাই ২৪ ঘন্টা রাজনৈতিক উত্থান-পতনের সঙ্গেই এঁরা যুক্ত, এঁরা ক্ষমতার লোভে সব সময় দল বদল ও নানারকম টানাপোড়েনে ব্যস্ত থাকেন। কিন্তু আপনারা খেয়াল করে দেখবেন, প্রত্যেক রাজনৈতিক দলে এরকম অনেক জনপ্রতিনিধিও থাকেন যাঁরা রাজনীতির ঊর্ধ্বে গিয়ে তাঁদের সময়, তাঁদের জীবন সমাজের সেবায়, সমাজের দুর্বল অংশের উত্থানের খাতিরে আত্মোৎসর্গ করেন। তাঁদের এই সেবাকর্ম রাজনীতির প্রতি মানুষের আস্থাকে, বিশ্বাসকে মজবুত করে রাখে। এ ধরনের সমর্পিতপ্রাণ জনপ্রতিনিধিদের প্রতি আমার একটি উপদেশ রয়েছে। আমরা নিজেদের সংশ্লিষ্ট আইনসভায় অনেক ধরনের বৈচিত্র্য নিয়ে কাজ করি। যেমন প্রাইভেট বিল আনি, তার জন্য সময় বের করি, আইনসভায় জিরো আওয়ারের জন্য কিছুটা সময় বের করি। আমরা কি বছরে ৩-৪ দিন, সম্ভব না হলে কোনও আইনসভায় অন্ততঃপক্ষে একদিন কিংবা দু’দিন এরকম রাখতে পারি, যেদিন সমাজের জন্য যাঁরা বিশেষ কিছু কাজ করছেন, সাফল্যের সঙ্গে করেছেন, সেরকম জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে তাঁদের অভিজ্ঞতার কথা শুনব। তাঁরা সকলকে নিজের অভিজ্ঞতার কথা শোনাবেন। আমাদের সমাজ জীবনের সেই দিকটি নিয়েও সকলকে বলবেন, যাঁদের নিয়ে তিনি কাজ করছেন। আপনারা দেখবেন, এর ফলে অন্যান্য জনপ্রতিনিধির পাশাপাশি সমাজের অন্যান্য মানুষেরাও অনেক কিছু শিখতে পারবেন। রাজনীতির, রাজনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে সৃষ্টিশীল অবদান কিভাবে রাখা যায়, সেটাও উঠে আসবে আর সৃষ্টিশীল কাজে যাঁরা নিজেদের ব্যস্ত রাখেন, তাঁদের মধ্যে রাজনীতি থেকে দূরত্ব বজায় রাখার যে প্রবৃত্তি, যে অনীহা, সেটাও ক্রমবর্ধমান। এর বিপরীতে এ ধরনের ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে যাঁরা কাজ করেন, এ ধরনের মানবতার সেবা যাঁরা করেন, তেমন মানুষেরা যদি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন, তাহলে রাজনীতিও নিজে থেকেই সমৃদ্ধ হবে। এক্ষেত্রে আমার উপদেশ, আর আমি মনে করি যে একটি ছোট কমিটি তৈরি করা উচিৎ। যেমন, অভিজ্ঞতাগুলির বিবরণকে স্ক্রিনিং করা যেতে পারে, ভেরিফাই করা যেতে পারে, তারপর কমিটি ঠিক করবে যে এতজন ব্যক্তির বক্তব্য দেখা যেতে পারে। আপনারা দেখবেন, তখন কোয়ালিটেটিভলি অনেক পরিবর্তন আসবে, মানোন্নয়ন হবে, উৎকৃষ্ট আবহ তৈরি হবে, আর আমি জানি যে প্রিসাইডিং অফিসাররা এইসব বিষয় খুব ভালো করেই জানেন যে কিভাবে ভালো ভালো জিনিস খুঁজেপেতে তুলে ধরা যায়। কিন্তু আমি মনে করি, এ ধরনের আয়োজনের মাধ্যমে বাকি সদস্যদের মনেও রাজনীতি থেকেও বেশি করে, রাজনীতি থেকেও আলাদা কিছু না কিছু করার প্রেরণা সৃষ্টি হবে আর পাশাপাশি দেশবাসীও এ ধরনের প্রচেষ্টাগুলি সম্পর্কে জানার সুযোগ পাবেন।
বন্ধুগণ,
আমাদের ‘কোয়ালিটি ডিবেট’ বা উচ্চমানসম্পন্ন বিতর্ককে উৎসাহিত করতে কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। আমরা আইনসভার অধিবেশনে ক্রমাগত কিছু না কিছু সৃষ্টিশীল বিষয় রাখতে পারি। বিতর্কে মূল্য সংযোজন কিভাবে হবে, উন্নতমানের বিতর্ক ক্রমাগত কিভাবে নতুন স্ট্যান্ডার্ডে পৌঁছবে, আমাদের ‘কোয়ালিটি ডিবেট’কেও আলাদাভাবে সময় নির্ধারিত করা সম্পর্কে আমরা ভাবতে পারি কি? এরকম বিতর্কের যাতে মর্যাদা রক্ষা করা হয়, গাম্ভীর্যকে সম্পূর্ণভাবে পালন করা হয়, এর মধ্যে কোনও রাজনৈতিক কাদা ছোঁড়াছুড়ি না হয়, একভাবে তা আইনসভার সবচাইতে স্বাস্থ্যকর সময় যেন হয়, স্বাস্থ্যকর দিন যেন হয়। আমি প্রতিদিনকার জন্য বলছি না। কখনও পূর্ব নির্ধারিত দুই ঘন্টা, কখনও আধা-ঘন্টা, কখনও একটি সারাদিন আমরা কি এই ধরনের কিছু প্রচেষ্টা শুরু করতে পারি? স্বাস্থ্যকর দিন, স্বাস্থ্যকর বিতর্ক, উৎকৃষ্ট বিতর্ক, মূল্য সংযোজনকারী বিতর্ক, দৈনন্দিনতার রাজনীতি থেকে সম্পূর্ণভাবে মুক্ত বিতর্ক।
বন্ধুগণ,
এটা আপনারাও খুব ভালোভাবে জানেন, যখন দেশের সংসদ বা কোনও বিধানসভা তার নতুন কার্যকাল শুরু করে, তখন তাতে অধিকাংশ সদস্য ফার্স্ট টাইমার হন, যাঁরা প্রথমবার নির্বাচিত হয়ে এসেছেন। আমরা জানি রাজনীতিতে ক্রমাগত পরিবর্তন আসে। জনগণ ক্রমাগত নতুন নতুন মানুষদের, নতুন নতুন শক্তিকে সুযোগ দেন, আর জনগণের প্রচেষ্টায় প্রতিটি আইনসভায় সব সময় একটি তাজা বাতাস, নতুন উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়, আমাদের এই নতুনত্বকে, নতুন কার্যপ্রণালীতে রূপান্তরিত করার প্রয়োজন আছে কি নেই? আমার মনে হয়, এই পরিবর্তন অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। সেজন্য এটাও জরুরি যে নতুন সদস্যদের আইনসভার সঙ্গে যুক্ত চালু কার্যপ্রণালী সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেওয়া হোক, আইনসভার গরিমা এবং মর্যাদা সম্পর্কেও তাঁদেরকে বলা হোক। আমাদের ‘অ্যাক্রস দ্য পার্টি’ বা দলমত নির্বিশেষে সব সময় বার্তালাপের দিকে, পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার ওপর জোর দিতে হবে। রাজনীতির নতুন মাপকাঠিও তৈরি করতে হবে। এতে আপনাদের মতো সমস্ত প্রিসাইডিং অফিসারদের ভূমিকাও হবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বন্ধুগণ,
আমাদের সামনে একটি অত্যন্ত বড় অগ্রাধিকার আইনসভার উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির ওপরও ন্যস্ত। সেজন্য আইনসভায় নিয়ম-শৃঙ্খলা বজায় রাখা যতটা প্রয়োজনীয়, ততটাই প্রয়োজনীয় প্রতিটি নির্ধারিত নিয়মের প্রতি দায়বদ্ধতাও অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। আমাদের আইনগুলিতে ব্যাপকতা তখনই আসবে, যখন সেগুলির সঙ্গে জনগণের কল্যাণের প্রত্যক্ষ সম্পর্ক থাকবে আর সেজন্য আইনসভাগুলিতে সার্থক আলাপ-আলোচনা, তর্ক-বিতর্ক অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। বিশেষ করে, প্রতিটি আইনসভায় নির্বাচিত হয়ে আসা যুব সদস্যদের, উচ্চাকাঙ্ক্ষী ক্ষেত্রগুলি থেকে নির্বাচিত হয়ে আসা জনপ্রতিনিধিদের ও মহিলাদের বেশি করে বলার সুযোগ দেওয়া উচিৎ। আমাদের সমিতিগুলিকেও এভাবে বেশি ব্যবহারিক এবং প্রাসঙ্গিক করে তোলার উপযোগী ভাবনাচিন্তা করতে হবে। এভাবে কাজ করলে আমাদের জন্য শুধু দেশের সমস্যাগুলিকে ভালোভাবে বুঝতে পারা এবং সেগুলির সমাধানের পথ খুঁজে বের করা সহজ হবে তাই নয়, পাশাপাশি আইনসভাতেও নতুন নতুন ভাবনাচিন্তার বিকাশ ঘটবে।
বন্ধুগণ,
আপনারা সবাই এই বিষয়ের সঙ্গে পরিচিত যে বিগত বছরগুলিতে কেন্দ্রীয় সরকার ‘ওয়ান নেশন, ওয়ান রেশন কার্ড’, ‘ওয়ান নেশন, ওয়ান মোবিলিটি কার্ড’ – এরকম কিছু ব্যবস্থা চালু করেছে। এ ধরনের পরিষেবার সঙ্গে আমাদের অধিকাংশ জনগণও অবলীলায় যুক্ত হচ্ছেন আর গোটা দেশে একসঙ্গে আমরা একটি নতুন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হচ্ছি। দেশের উত্তর থেকে দক্ষিণ, পূর্ব থেকে পশ্চিম – প্রতিটি প্রান্ত পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে। আমি চাইব যে আমাদের সকল বিধানসভা ও রাজ্যগুলি স্বাধীনতার ৭৫তম বর্ষপূর্তি এই অমৃতকালে এই অভিযানকে একটি উচ্চতায় নিয়ে যায়। আমার একটি ভাবনা – ‘ওয়ান নেশন, ওয়ান লেজিসলেটিভ প্ল্যাটফর্ম’। এটা কি সম্ভব? এমন একটি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম, এমন একটি পোর্টাল যা শুধু আমাদের সংসদীয় ব্যবস্থার জন্য প্রয়োজনীয় টেকনলজিক্যাল বুস্ট বা প্রযুক্তিগতভাবে উন্নতিই ঘটাবে না, এটি দেশে সমস্ত গণতান্ত্রিক এককগুলিকে, সমস্ত আইনসভাগুলিকে যুক্ত করার কাজও করবে। আমাদের আইনসভাগুলির সমস্ত রিসোর্স, সমস্ত সম্পদ ও উৎস এই পোর্টালগুলিতে পাওয়া যাবে। কেন্দ্র এবং রাজ্য আইনসভাগুলি ‘পেপারলেস মোড’-এ কাজ করতে পারে। লোকসভার মাননীয় অধ্যক্ষ এবং রাজ্যসভার উপ-সভাপতি মহোদয়ের নেতৃত্বে আপনারা, প্রিসাইডিং অফিসাররা এ ধরনের ব্যবস্থাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন। আমাদের সংসদ এবং সমস্ত বিধানসভা ও বিধান পরিষদের লাইব্রেরীগুলিকেও ডিজিটাইজ করা আর অনলাইন ব্যবস্থায় যাতে তা পাওয়া যায় তা সুনিশ্চিত করার যে প্রক্রিয়া চলছে তাকেও ত্বরান্বিত করতে হবে।
বন্ধুগণ,
স্বাধীনতার এই অমৃতকালে আমরা দ্রুতগতিতে স্বাধীনতার ১০০ বছর পূর্তির দিকে এগিয়ে যাব। আপনাদের ৭৫ বছরের যাত্রাপথ এই বাস্তবের সাক্ষী যে সময় কত দ্রুতগতিতে পরিবর্তিত হয়। আগামী ২৫ বছর ভারতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ২৫ বছর পর আমরা স্বাধীনতার ১০০ বছর পূর্তি পালন করতে চলেছি। আর সেজন্য এই অমৃতকাল, এই ২৫ বছর সময় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা কি এই সময়ে অত্যন্ত শক্তি দিয়ে একটি মন্ত্র নিয়ে এগিয়ে যেতে পারি, সম্পূর্ণ সমর্পণভাব নিয়ে কাজ করতে পারি, সম্পূর্ণ দায়িত্ব নিয়ে একটি মন্ত্রকে চরিতার্থ করতে পারি? আমার দৃষ্টিতে সেই মন্ত্রটি হল – কর্তব্য, কর্তব্য, কর্তব্য, এবং কর্তব্য। আইনসভাতেও কর্তব্যের কথা, আইনসভার সমস্ত বার্তাতেও কর্তব্যের উল্লেখ, আইনসভার সদস্যদের বক্তব্যেও কর্তব্যের সুরভী, তাঁদের বক্তব্যেও কর্তব্যের পরিপাটি, তাঁদের পরম্পরাতেও শতাব্দী প্রাচীন জীবনশৈলী, তাঁদের আচার-বিচারেও কর্তব্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া হলে সদস্যদের আলাপ-আলোচনায়, তর্কে-বিতর্কে, বার্তালাপে, সমাধানে, প্রত্যেক বিষয়ে কর্তব্যকে সর্বোপরি রাখলে, চারিদিকে শুধু কর্তব্যের কথা বললে, কর্তব্যের বোধকে জাগিয়ে রাখলেই দেশকে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দেওয়া সম্ভব। আমাদের আগামী ২৫ বছরের কর্মশৈলীর প্রতিটি ক্ষেত্রে কর্তব্যকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হোক। আমাদের সংবিধানও আমাদের এ কথাই বলে। যখন আইনসভাগুলি থেকে এই বার্তা যাবে, যখন আইনসভাগুলিতে এই বার্তা বারবার পুনরুচ্চারিত হবে, তখন এর প্রভাবও গোটা দেশের ওপর পড়বে, দেশের প্রত্যেক নাগরিকের ওপর পড়বে। দেশ বিগত ৭৫ বছরে যে গতিতে এগিয়েছে, তার থেকে অনেকগুণ বেশি গতিতে এগিয়ে যাওয়ার একটাই মন্ত্র, তা হল – কর্তব্য। ১৩০ কোটি দেশবাসীর কর্তব্যের একটি মহান সঙ্কল্পের বাস্তবায়নের জন্য কর্তব্য। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আজ যখন সংসদীয় ব্যবস্থার শতবর্ষ পূর্তি এই নতুন উদ্যোগের জন্য আপনারা একত্রিত হয়েছেন, আপনাদের এই শীর্ষ সম্মেলন নিশ্চিতভাবেই অত্যন্ত সফল হবে। ২০৪৭-এ দেশকে কোথায় নিয়ে যেতে হবে, আইনসভাগুলি সেক্ষেত্রে কী ভূমিকা পালন করবে, তার স্পষ্ট রূপরেখা নিয়েই আপনারা এখান থেকে নিজের নিজের কর্মক্ষেত্রে ফিরে যাবেন। দেশ অনেক বড় শক্তি পাবে। আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক শুভকামনা। আমি আরও একবার আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই।
অনেক অনেক ধন্যবাদ!