“যৌথ উদযাপন ভারতের সেই ভাবনার অমর যাত্রার প্রতীক, যা বিভিন্ন সময়ে ভিন্ন মাধ্যমে এগিয়ে চলেছে”
“আমাদের শক্তির কেন্দ্রগুলি নিছক তীর্থস্থান নয়, তারা কেবল বিশ্বাসের কেন্দ্র নয়, তারা ‘এক ভারত, শ্রেষ্ঠ ভারত’ চেতনার জাগ্রত স্থাপনা”
“ভারতে, আমাদের ঋষি ও গুরুরা সর্বদা চিন্তাভাবনাকে পরিমার্জিত করেছেন এবং আমাদের আচরণকে উন্নত করেছেন”
“শ্রী নারায়ণ গুরু জাতপাতের নামে চলা বৈষম্যের বিরুদ্ধে একটি যৌক্তিক ও কার্যকরি লড়াই করেছিলেন। আজ নারায়ণ গুরুজীর অনুপ্রেরণায় দেশ দরিদ্র, পিছিয়ে পড়া ও প্রান্তিক মানুষের সেবা করছে এবং তাঁদের অধিকার দিয়েছে”
“শ্রী নারায়ণ গুরু ছিলেন একজন সহজাত চিন্তাবিদ ও একজন বাস্তব সংস্কারক”
“যখন আমরা সমাজ সংস্কারের পথে হাঁটি, তখন সমাজে আত্মোন্নয়নের একটি শক্তি জাগ্রত হয়, ‘বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও’ এর একটি উদাহরণ”
প্রত্যেককে নমস্কার!
শ্রী নারায়ণ ধর্ম সংঘম ট্রাস্টের সভাপতি স্বামী সচ্চিদানন্দজী, সাধারণ সচিব স্বামী রিতাম্ভরনন্দজী, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পরিষদে আমার সহকর্মী ও কেরলের ভূমিপুত্রদ্বয় শ্রী ভি মুরলীধরণজী ও শ্রী রাজীব চন্দ্রশেখরজী, শ্রী নারায়ণ গুরু ধর্ম সংঘম ট্রাস্টের আধিকারিকগণ, দেশ-বিদেশের পুণ্যার্থী তথা ভদ্রমহোদয় ও ভদ্রমহোদয়াগণ,
সাধু-সন্তদের চরণধূলি আজ আমার ঘরে পড়েছে, আপনারা কল্পনাও করতে পারবেন না, আমি কত আনন্দিত। শ্রী নারায়ণ গুরুর আশীর্বাদ ও সাধু-সন্তদের কৃপায় আপনাদের মধ্যে উপস্থিত হওয়ার সুযোগ আমার আগেও হয়েছিল। শিবগিরিতে এসে আপনাদের আশীর্বাদ নেওয়ার সৌভাগ্যও আমার হয়েছে। আমি যখনই শিবগিরিতে গিয়েছি, প্রত্যেকবার আমি আধ্যাত্মিক এই ভূমির মাহাত্ম্য উপলব্ধি করেছি। আমি আজ অত্যন্ত আনন্দিত যে, শিবগিরি তীর্থযাত্রার ৯০তম বার্ষিকী এবং ব্রহ্ম বিদ্যালয়ের সুবর্ণ জয়ন্তী অনুষ্ঠানে আমাকে সামিল হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন।
আপনাদের সঙ্গে আমার কি ধরনের সম্পর্ক, তা আমার অজানা! কিন্তু, আমি একথা কখনই ভুলতে পারবো না, যখন এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনা কেদারনাথজীর উপর আঘাত হেনেছিল। এই দুর্ঘটনায় সারা দেশের পুণ্যার্থীরা জীবন-মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছিলেন। সেই সময় উত্তরাখন্ডে কংগ্রেস সরকার এবং দেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী শ্রী এ কে অ্যান্টনি। তা সত্ত্বেও, আমি তখন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী, শিবগিরি মঠ থেকে আমার কাছে ফোন এসেছিল। সেই ফোনে আমি জেনেছিলাম, কেদারনাথে অনেক সাধু-সন্ত আটকে পড়েছেন। এমনকি, তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগও সম্ভব হচ্ছে না। শিবগিরি মঠ থেকে সেই ফোনে আমাকে বলা হয়েছিল যে, তাঁরা কেদারনাথের পরিস্থিতি সম্পর্কে কিছুই জানেন না। তাই, তাঁদের আমার সাহায্য প্রয়োজন। ঐ রাজ্যে ও কেন্দ্রে শাসন ক্ষমতায় একই সরকার থাকা সত্ত্বেও শিবগিরি মঠের পক্ষ থেকে আমার সাহায্য চাওয়া হচ্ছে – এটা আমি কল্পনাও করতে পারিনি। অবশ্য, এটা নারায়ণ গুরুর কৃপা যে, আমি মহান কাজ করার সুযোগ পেয়েছিলাম। শুধু তাই নয়, গুজরাটে আমার কাছে সীমিত সম্পদ থাকা সত্ত্বেও আটকে পড়া সেই সমস্ত সাধু-সন্তদের নিরাপদের শিবগিরি মঠে ফিরিয়ে নিয়ে আসা হয়েছিল। শিবগিরি মঠের পক্ষ থেকে সেই ফোন আমার মর্মস্পর্শ করেছিল এবং মহৎ এই কর্মের জন্য আমাকেই বেছে নেওয়ায় আমি আশীর্বাদধন্য হয়েছিলাম।
আজ আরও একটি পবিত্র মুহূর্তে আমি আপনাদের সঙ্গে যোগ দেওয়ার সুযোগ পেয়েছি। শিবগিরি তীর্থযাত্রার ৯০তম বার্ষিকী এবং ব্রহ্ম বিদ্যালয়ের সুবর্ণ জয়ন্তী বর্ষ উদযাপন কেবল একটি প্রতিষ্ঠানের এগিয়ে চলার যাত্রা নয়। আসলে এটা ভারতের সেই ধ্যান-ধারণার এক চিরন্তন যাত্রা, যা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে দেশকে এগিয়ে নিয়ে চলেছে। ভারতের আদর্শকে জীবন্ত রেখে কেরলবাসী সর্বদাই ভারতের আধ্যাত্মিক ও বিজ্ঞানধর্মী উন্নয়নের যাত্রাপথে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছেন। শুধু তাই নয়, প্রয়োজনের সময় কেরলবাসী অগ্রণী ভূমিকাও পালন করেছেন। দশকের পর দশক ধরে ভার্কলাকে দক্ষিণের কাশী বলা হয়ে আসছে। কাশী দেশের উত্তরেরই হোক বা দক্ষিণের, শিব শহর বারাণসীতেই হোক বা ভার্কালার শিবগিরিতে – ভারতের আধ্যাত্মিক শক্তির প্রতিটি কেন্দ্রের জন্যই দেশবাসীর হৃদয়ে বিশেষ জায়গা রয়েছে। এগুলি কেবল তীর্থস্থান নয়, আস্থার কেন্দ্র নয়, বরং এগুলি সবই ‘এক ভারত, শ্রেষ্ঠ ভারত’ মানসিকতার এক জাগ্রত প্রতিষ্ঠান।
এই উপলক্ষে আমি শ্রী নারায়ণ ধর্ম সংঘম ট্রাস্ট, স্বামী সচ্চিদানন্দজী, স্বামী রিতাম্ভরানন্দজী এবং স্বামী গুরুপ্রসাদজীকে আমার আন্তরিক অভিনন্দন জানাই। এই তীর্থযাত্রা এবং ব্রহ্ম সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনের মধ্যে কোটি কোটি ভক্তের চিরন্তন আস্থা ও অবিশ্রান্ত প্রয়াস জড়িয়ে রয়েছে। আমি শ্রী নারায়ণ গুরুর সমস্ত অনুগামী এবং সমস্ত ভক্তদের উষ্ণ শুভেচ্ছা জানাই। আজ আমি যখন সাধু-সন্ত ও গুণী আত্মাদের মধ্যে আরও একবার উপস্থিত হওয়ার সুযোগ পেয়েছি, তখন আমি একথা বলতে চাই, ভারতের বিশেষত্বই হ’ল – সমাজের চেতনা যখন দুর্বল হতে থাকে এবং আধারের পরিধি বাড়ে তখন নতুন আশার আলো নিয়ে গুণী আত্মাদের উদয় ঘটে। বিশ্বের বহু দেশ ও সভ্যতা যখন ধর্ম থেকে বিচ্যুত হয়, তখন আধ্যাত্মিকতাবাদের জায়গা নেয় বস্তুবাদ। তাই, শূন্যতার কোনও অস্তিত্ব নেই, বস্তুবাদ শূন্যতা পরিপূর্ণ করে। কিন্তু, এসব থেকে ভারত সম্পূর্ণ পৃথক। ভারতের সাধু-সন্ত ও গুরুরা সর্বদাই তাঁদের চিন্তাভাবনা ও ধ্যান-ধারণা পরিমার্জন তথা সংশোধন করেছেন।
শ্রী নারায়ণ গুরু আধুনিকতার কথা বলতেন। একই সঙ্গে, তিনি ভারতীয় সংস্কৃতি ও মূল্যবোধকে সমৃদ্ধ করতে নিরলস কাজ করে গেছেন। তিনি একদিকে যেমন শিক্ষা ও বিজ্ঞানের কথা বলতেন, একই সঙ্গে আবার আমাদের হাজার হাজার বছরের প্রাচীণ ধর্ম ও আস্থার প্রতি ঐতিহ্যের কথাও গৌরবান্বিত করতে কুন্ঠাবোধ করেননি। আজ শিবগিরি মন্দিরের মাধ্যমে বৈজ্ঞানিক চিন্তাভাবনার উত্থান ঘটছে। এমনকি, সারদা মঠেও দেবী সরস্বতী পুজিত হচ্ছেন। নারায়ণ গুরুজী ধর্মচারণে পরিমার্জন করেছেন এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাতে পরিবর্তন এনেছেন।
নারায়ণ গুরুজী সমাজের কুসংস্কারের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়েছেন এবং সমগ্র দেশকে বাস্তবতা সম্পর্কে অবহিত করেছেন। কিন্তু সেই সময় পরিস্থিতি অনুকূল ছিল না। কুসংস্কারের বিরুদ্ধে লড়াই চালানো কখনই সহজ কাজ ছিল না। কিন্তু, আজ আমরা একথা কল্পনাও করতে পারি না যে, নারায়ণ গুরুজী তা করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তিনি জাতি বৈষম্যের বিরুদ্ধেও লড়াই চালিয়েছিলেন। আজ নারায়ণ গুরুজীর ঐ আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে দেশ দরিদ্র, পিছিয়ে পড়া ও বঞ্চিত মানুষের সেবা করছে। এদের প্রত্যেককে তাঁদের প্রাপ্য অধিকার দেওয়া আমাদের অগ্রাধিকার। আর এই কারণেই দেশ আজ ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ, সবকা বিসওয়াস ও সবকা প্রয়াস’ মন্ত্রে এগিয়ে চলেছে।
বন্ধুগণ,
শ্রী নারায়ণ গুরুজী কেবল আধ্যাত্মিক চেতনার অঙ্গ ছিলেন না। আসলে তিনি ছিলেন, আধ্যাত্মিক প্রেরণার এক উজ্বল জ্যোতিষ্ক। এটাও সমান সত্য যে, শ্রী নারায়ণ গুরুজী ছিলেন এক সমাজ সংস্কার, চিন্তাবিদ এবং দূরদৃষ্টিসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব। তিনি সময়ের তুলনায় অনেক এগিয়েছিলেন। তিনি ভবিষ্যৎ উপলব্ধি করতে পারতেন। তিনি ছিলেন এক প্রগতিশীল চিন্তাবিদ তথা প্রকৃত সংস্কারক। তিনি বলতেন যে, আমরা এখানে জোর করে কিছু ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য আসিনি। আমরা এসেছি, জানতে ও শিখতে। তিনি জানতেন, বাদানুবাদে যুক্ত থেকে সমাজে পরিবর্তন আনা সম্ভব নয়। সমাজের পরিবর্তন সম্ভব মানুষের সঙ্গে কাজ করে, তাঁদের অনুভূতি উপলব্ধি করে এবং আমাদের অনুভূতি তাঁদেরকে উপলব্ধি করার মাধ্যমে। তিনি বলতেন, আমরা যখনই অন্য কোনও ব্যক্তির সঙ্গে তর্ক-বিতর্ক শুরু করি, তখন উভয় পক্ষই নিজেদের যুক্তি প্রতিষ্ঠার জন্য আরও তর্ক-বিতর্ক চালিয়ে যায়। কিন্তু, যখন আমরা অন্য কোনও ব্যক্তিকে বোঝার চেষ্টা করি, তখন সেই ব্যক্তিও আমাদের উপলব্ধি করার চেষ্টা করেন। নারায়ণ গুরুজী সর্বদাই এই নীতি অনুসরণ করেছেন। তিনি অন্যদের অনুভূতি বোঝার চেষ্টা করেছেন এবং সেই অনুযায়ী, মতামত দিয়েছেন।
আমরা যখন সমাজ সংস্কারের পথে যাত্রা শুরু করি, তখন আত্মোন্নতির চেতনাও সমাজে জাগ্রত হয়। উদাহরণ-স্বরূপ বলতে পারি, আমাদের সরকার ‘বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও’ অভিযান শুরু করেছে। আগেও দেশে অনেক আইন ছিল। কিন্তু, শিশুকন্যাদের সংখ্যায় বৃদ্ধির ঘটনা সাম্প্রতিক কয়েক বছরে প্রতিফলিত হচ্ছে। এটা সম্ভব হয়েছে সরকার সঠিক বিষয় সম্পর্কে সমাজকে জাগ্রত করা ও অনুকূল বাতাবরণ গড়ে তোলার মাধ্যমে। সাধারণ মানুষ যখন এটা উপলব্ধি করেছেন যে, সরকার সঠিক কাজই করছেন, তখন থেকেই পরিস্থিতি দ্রুত উন্নতি ঘটছে। ‘সবকা প্রয়াস’ উদ্যোগের পরিণাম আজ প্রকৃত অর্থেই আমাদের সামনে প্রতিফলিত হচ্ছে। আর এটাই সমাজের অগ্রগতির একমাত্র উপায়। তাই, আমরা যত বেশি শ্রী নারায়ণ গুরুজী সম্পর্কে পড়বো, জানবো ও উপলব্ধি করবো, আমাদের অগ্রগতির পথ ততই সুগম হবে।
বন্ধুগণ,
শ্রী নারায়ণ গুরুজী এক জাতি, এক ধর্ম ও এক ঈশ্বরের কথা বলেছিলেন। তাই আমরা যদি নারায়ণ গুরুজীর এই মতাদর্শ গভীরভাবে অনুভব করি, তা হলে এর মধ্যে যে বার্তা নিহিত রয়েছে, তা উপলব্ধি করতে পারবো। তাঁর এই বার্তা আত্মনির্ভর ভারত গঠনের পথ আরও সুগম করবে। শ্রী নারায়ণ গুরুজীর এক জাতি, এক ধর্ম ও এক ঈশ্বরের মতাদর্শ আমাদের দেশপ্রেমের চেতনাকে এক নতুন আধ্যাত্মিক মাত্রা দেয়। আমাদের দেশপ্রেম কেবল ক্ষমতা প্রদর্শন নয়, বরং আমাদের দেশাত্মবোধ ভারতমাতার পুজো করা তথা দেশবাসীর সেবায় ব্রতী থাকা। আমরা এই উপলব্ধি নিয়ে যদি এগিয়ে চলি এবং শ্রী নারায়ণ গুরুজীর বার্তা অনুসরণ করি, তা হলে বিশ্বের কোনও শক্তিই ভারতীয়দের মধ্যে বিভেদ তৈরি করতে পারবে না। আমরা এটাও জানি যে, ভারতীয়রা যদি সংঘবদ্ধ হন, তা হলে কোনও লক্ষ্য পূরণই আমাদের কাছে অসম্ভব নয়।
বন্ধুগণ,
শ্রী নারায়ণ গুরুজী স্বাধীনতার অনেক আগেই তীর্থযাত্রার পরম্পরার সূচনা করেছিলেন। দেশ এখন স্বাধীনতার ৭৫ বছর উপলক্ষে অমৃত মহোৎসব উদযাপন করছে। ঠিক এই সময় আমরা এটাও স্মরণ করবো যে, আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম কেবল প্রতিবাদ ও রাজনৈতিক রণকৌশলের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না। এই সংগ্রাম কেবল দাসত্বের শিকল থেকে মুক্ত করাই নয়, বরং কিভাবে চিন্তাভাবনা ও আলোচনার মাধ্যমে আমরা দেশকে স্বাধীন করে তুলতে পারি, সে সম্পর্কেও ছিল। এভাবেই আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় থেকে বহু চিন্তাভাবনা ও আদর্শের সূচনা হয়েছে। আমরা প্রতিটি যুগেই নতুন চিন্তাবিদ পেয়েছি। এমনকি, ভারতের জন্য সৃজনশীল ধ্যান-ধারণা ও দৃষ্টিভঙ্গীও পেয়েছি। দেশের বিভিন্ন অংশ থেকে নেতা-নেত্রী ও মহান ব্যক্তিরা একে-অপরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন এবং পরস্পরের কাছ থেকে জানার চেষ্টা করতেন।
বর্তমান প্রযুক্তির যুগে আমাদের কাছে এরকম ভাবা খুব সহজ মনে হতেই পারে। কিন্তু, সেই সময় সোশ্যাল মিডিয়া ও মোবাইল ফোন ছিল না। এ সত্ত্বেও মহান নেতা-নেত্রী ও চিন্তাবিদরা মগ্ন থাকতেন কিভাবে আধুনিক ভারতের রূপরেখা প্রণয়ন করা যায়, তা নিয়ে। আপনারা জানেন, দেশের পূর্ব প্রান্ত থেকে গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯২২ সালে দেশের দক্ষিণ প্রান্তে এসে নারায়ণ গুরুজীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন। সাক্ষাতের পর গুরুদেব বলেছিলেন, আজ পর্যন্ত আমি নারায়ণ গুরুজীর মতো মহান আর কোনও আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্বের সংস্পর্শে আসিনি। ১৯২৫ সালে দেশের পশ্চিমপ্রান্ত গুজরাট থেকে মহাত্মা গান্ধী এখানে এসেছিলেন। তিনি শ্রী নারায়ণ গুরুজীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন। এই সাক্ষাৎ গান্ধীজীকে দারুণভাবে প্রভাবিত করেছিল। এমনকি, স্বয়ং স্বামী বিবেকানন্দও এখানে এসে নারায়ণ গুরুজীর সান্নিধ্য নিয়েছিলেন। অসংখ্য মহান ব্যক্তিত্ব নারায়ণ গুরুজীর চরণতলে বসার সৌভাগ্য পেয়েছেন। তাঁদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে গভীর আলাপ-আলোচনা হয়েছে। আসলে শত শত বছরের দাসত্বের পর নারায়ণ গুরুজীর সঙ্গে এই সমস্ত আলাপ-আলোচনা ছিল এক নতুন ভারত গঠনে বীজ বপণের মতো। অসংখ্য সামাজিক, রাজনৈতিক ও আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ব একত্রিত হয়ে দেশে সচেতনতার বার্তা প্রচার করেছেন এবং দেশকে সঠিক দিশায় এগিয়ে নিয়ে যেতে আপামোর মানুষকে উজ্জীবিত করেছেন। আজ আমরা যে ভারতকে দেখছি, স্বাধীনতার ৭৫ বছরে যে যাত্রাপথ আমরা দেখেছি, তা সবই মহান ঐ ব্যক্তিত্বদের সুচিন্তিত ও সুপরিকল্পিত চিন্তাভাবনার পরিণাম।
বন্ধুগণ,
স্বাধীনতার সময় আমাদের সাধু-সন্তরা যে দিশা দেখিয়েছিলেন, ভারত আজ সেই লক্ষ্য পূরণের পথে এগিয়ে চলেছে। এখন সময় এসেছে আমাদের নতুন লক্ষ্য ও নতুন সংকল্প গ্রহণ করার। দেশ ২৫ বছর পর স্বাধীনতার শতবর্ষ উদযাপন করবে। ১০ বছর পর আমরা শিবগিরি তীর্থযাত্রার শতবার্ষিকী উদযাপন করবো। শতবর্ষের এই যাত্রাপথে আমাদের সাফল্যগুলিকে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে হবে। একই সঙ্গে, আমাদের চিন্তাভাবনাও বিশ্ব কল্যাণের স্বার্থবাহী হবে।
ভাই ও বোনেরা,
আজ সমগ্র বিশ্ব বহু অভিন্ন চ্যালেঞ্জ ও সঙ্কটের সম্মুখীন। করোনা মহামারীর সময় আমরা তার আভাস পেয়েছি। সমগ্র মানবজাতির ভবিষ্যৎ প্রশ্নের জবাব কেবল ভারতের অভিজ্ঞতা এবং ভারতের সাংস্কৃতিক সম্ভাবনা থেকেই পাওয়া যেতে পারে। আধ্যাত্মিক গুরুদের মহান পরম্পরা এক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করতে পারে। আমাদের নতুন প্রজন্ম আধ্যাত্মিক উপদেশ এবং শিবগিরি তীর্থযাত্রার মহৎ প্রয়াস থেকে অনেক কিছু শিখতে পারে। শিবগিরি তীর্থযাত্রার অগ্রগমন অব্যাহত থাকবে বলেই আমার বিশ্বাস। সার্বিক কল্যাণ, একতা ও প্রগতিশীলতার প্রতীক এই তীর্থযাত্রা ভারতকে তার গন্তব্যে নিয়ে যেতে এক যথপোযুক্ত মাধ্যম হয়ে উঠবে। আপনারা সকলেই এখানে উপস্থিত হয়েছেন – এজন্য আমি আপনাদের কাছে আন্তরিক কৃতজ্ঞ। আপনাদের সমস্ত স্বপ্ন ও দৃঢ় সংকল্পে যুক্ত হতে পারলে নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করবো। আপনাদের সকলকে স্বাগত জানাই। আরও একবার ধন্যবাদ জানাই।