নমস্কার,
আমার সমস্ত দেশবাসীকে 'আন্তর্জাতিক যোগ দিবস' উপলক্ষ্যে অনেক অনেক শুভেচ্ছা। প্রতি বছর যোগ দিবস উপলক্ষ্যে আমি আপনাদের সকলের মাঝে কোন না কোন অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকি। বিশেষ করে আপনাদের সবার সঙ্গে যোগব্যায়াম করার আনন্দটাও স্মরণীয় হয়ে ওঠে। কিন্তু এবার বিভিন্ন দায়িত্বের কারণে আমি বর্তমানে আমেরিকায় আছি। সেজন্য আমি ভিডিও বার্তার মাধ্যমে আপনাদের সকলের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছি।
বন্ধুগ্ণ,
আমি আপনাদের এটাও বলে রাখি যে আমি আপনাদের মধ্যে থেকে যোগব্যায়াম করতে না পারলেও, আমি যোগাভ্যাস করার কর্মসূচি থেকে পালাচ্ছি না। সেজন্য আমি আজ সন্ধ্যায় ভারতীয় সময় সাড়ে পাঁচটা নাগাদ রাষ্ট্রসংঘের সদর দফতরে আয়োজিত একটি যোগাভ্যাস অনুষ্ঠানে যোগ দেব। এখানে ভারতের আহ্বানে ১৮০টিরও বেশি দেশের প্রতিনিধিদের একত্রিত হওয়া একটি ঐতিহাসিক এবং নজিরবিহীন ঘটনা। আপনাদের সবার মনে থাকবে, ২০১৪ সালে যখন রাষ্ট্রসংঘ সাধারণ পরিষদে যোগ দিবস পালনের প্রস্তাব পেশ করা হয়েছিল, তখন রেকর্ড সংখ্যক দেশ একে সমর্থন করেছিল। তখন থেকে আজ পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক যোগ দিবস পালনের মাধ্যমে যোগ একটি বিশ্বব্যাপী আন্দোলন, একটি বিশ্ব চেতনায় পরিণত হয়েছে।
বন্ধুগ্ণ,
এই বছর আন্তর্জাতিক যোগ দিবসের অনুষ্ঠানগুলিকে 'ওশান রিং অফ যোগ' আরও বিশেষ করে তুলেছে। 'ওশান রিং অফ যোগ'-এর এই ধারণাটি যোগের ধারণা এবং সমুদ্রের বিস্তৃতির মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্কের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। সেনা কর্মীরা আমাদের জলাশয়গুলির মাধ্যমে যোগাযোগের ভিত্তিতে একটি 'যোগ ভারতমালা এবং যোগ সাগরমালা' কর্মসূচি গড়ে তুলেছে। একইভাবে, আর্কটিক থেকে অ্যান্টার্কটিকা পর্যন্ত ভারতের দুটি গবেষণা কেন্দ্র অর্থাৎ পৃথিবীর দুটি মেরুকেও যোগের মাধ্যমে যুক্ত করা হয়েছে। এমন স্বতঃস্ফূর্তভাবে যোগের এই অনন্য উদযাপনে দেশ ও বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের অংশগ্রহণ যোগের প্রচার, প্রসার ও খ্যাতির গুরুত্বকে তুলে ধরছে।
ভাই ও বোনেরা,
আমাদের ঋষিরা যোগের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন- 'যুজ্যতে এতদ ইতি যোগঃ'। অর্থাৎ যা যুক্ত করে তাই হল যোগ। অতএব, যোগব্যায়ামের এই প্রসার সেই দর্শনেরই একটি সম্প্রসারণ যে সমগ্র বিশ্ব একটি পরিবার রূপে সমাহিত। যোগের প্রসার মানে 'বসুধৈব কুটুম্বকম'-এর চেতনার বিস্তৃতি! তাই, এই বছর ভারতের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়ে চলা G-20 শীর্ষ সম্মেলনের মূল ভাবনাও 'এক পৃথিবী, এক পরিবার, এক ভবিষ্যত' রাখা হয়েছে৷ আর আজ সারা বিশ্বে কোটি কোটি মানুষ 'বসুধৈব কুটুম্বকমের জন্য যোগ' মূল ভাবনা নিয়ে একসঙ্গে যোগব্যায়াম করছেন।
বন্ধুগণ ,
আমাদের যোগ সম্পর্কে শাস্ত্রে বলা হয়েছে – ব্যায়ামত লভতে স্বাস্থ্যম, দীর্ঘ আয়ুষ্যম বলম্ সুখম! অর্থাৎ যোগব্যায়ামের মাধ্যমে, শরীরচর্চার মাধ্যমে আমরা স্বাস্থ্য, দীর্ঘ আয়ু এবং শক্তি পাই। আমরা যারা বছরের পর বছর ধরে নিয়মিত যোগব্যায়ামে জড়িত আছি তারা যোগের শক্তি অনুভব করেছি। আমরা সকলেই জানি যে ব্যক্তিগত স্তরে ভাল স্বাস্থ্য আমাদের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ। আমরা আরও দেখেছি যে যখন আমরা স্বাস্থ্যের ঝুঁকি থেকে নিরাপদ থাকি তখন আমাদের পরিবার অনেক সমস্যা থেকে মুক্ত থাকে। যোগ এমন একটি সুস্থ ও শক্তিশালী সমাজ তৈরি করে, যার সম্মিলিত প্রাণশক্তি বহুগুণ বেশি। বিগত বছরগুলিতে, স্বচ্ছ ভারতের মতো সংকল্প থেকে শুরু করে স্টার্টআপ ইন্ডিয়ার মতো প্রচারাভিযান, স্বনির্ভর ভারত গড়ার অভিযান থেকে সাংস্কৃতিক ভারতের পুনর্গঠন পর্যন্ত যে সব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, সেখানে দেশ এবং দেশের যুবকদের এই প্রাণশক্তি অনেক অবদান রেখেছে। আজ দেশের মন পরিবর্তন হয়েছে, তাই বদলে গেছে জনগণ ও তাঁদের জীবনধারা।
বন্ধুগ্ণ,
ভারতের সংস্কৃতি হোক বা সামাজিক কাঠামো, ভারতের আধ্যাত্মিকতা হোক কিম্বা আদর্শ, ভারতের দর্শন হোক কিম্বা দৃষ্টিকোণ, আমরা সবসময় এমন ঐতিহ্যকে লালন করেছি যা সবাইকে একসঙ্গে জোড়ে, একত্রিত করে, গ্রহণ করে এবং আলিঙ্গন করে। আমরা সর্বদাই নতুন নতুন ধারণাকে স্বাগত জানিয়েছি, সেগুলির পৃষ্ঠপোষকতা করেছি। আমরা বৈচিত্র্যকে সমৃদ্ধ করেছি, সেগুলোকে উদযাপন করেছি। যোগব্যায়াম এই ধরনের প্রতিটি অনুভূতিকে শক্তিশালী করে তোলে, প্রবল থেকে প্রবলতর করে তোলে। যোগব্যায়াম আমাদের অভ্যন্তরীণ দৃষ্টিকে প্রসারিত করে। যোগ আমাদের সেই চেতনার সঙ্গে যুক্ত করে, যা আমাদের প্রত্যেক জীবের সঙ্গে একাত্মতা অনুভব করায়, যা আমাদের প্রত্যেক জীবের প্রতি ভালবাসার ভিত্তি রচনা করে। তাই যোগের মাধ্যমে আমাদের দ্বন্দ্ব ও অন্তর্বিরোধ দূর করতে হবে। যোগের মাধ্যমে আমাদের সমস্ত বাধা ও প্রতিকূলতা দূর করতে হবে। আমাদের 'এক ভারত, শ্রেষ্ঠ ভারত'-এর চেতনাকে বিশ্বের সামনে উদাহরণ রূপে উপস্থাপন করতে হবে।
ভাই ও বোনেরা,
যোগকে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলা হয়েছে- 'যোগ: কর্মসু কৌশলম'। অর্থাৎ কর্মে দক্ষতাই হল প্রকৃত যোগ। ভারতের স্বাধীনতার অমৃতকালে এই মন্ত্রটি আমাদের সকলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যখন আমরা আমাদের কর্তব্যে নিবেদিত হই, তখনই আমরা নিজেদের যোগের পরিপূর্ণতায় পৌঁছাই। যোগের মাধ্যমে আমরা নিঃস্বার্থ কর্মকে জানি, আমরা কর্ম থেকে কর্মযোগের যাত্রাকে নির্ধারণ করি। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, যোগব্যায়ামের মাধ্যমে আমরা আমাদের স্বাস্থ্যেরও উন্নতি করব এবং এই সংকল্পগুলিকেও আত্মস্থ করব। আমাদের শারীরিক শক্তি, আমাদের মানসিক বিস্তার, আমাদের চেতনা শক্তি, আমাদের মিলিত প্রাণশক্তি একটি উন্নত ভারতের ভিত্তি হয়ে উঠবে। এই সংকল্প নিয়ে, আবারও আপনাদের সকলকে আন্তর্জাতিক যোগ দিবস উপলক্ষ্যে অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই!
ধন্যবাদ।