সুধীবৃন্দ, ভদ্রমহোদয়া ও ভদ্রমহোদয়গণ, নমস্কার!
আমি আপনাদের সকলকে অতুল্য ভারতে স্বাগত জানাই। পর্যটন মন্ত্রী হিসেবে আপনারা ২ লক্ষ কোটি ডলারের একটি ক্ষেত্রকে নিয়ন্ত্রণ করেন। আপনাদের নিজেদের পক্ষে পর্যটক হিসেবে ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ খুব কম থাকে। কিন্তু আপনারা এখন গোয়ায় আছেন যা ভারতের এক আকর্ষণীয় পর্যটন স্থল। তাই আমি আপনাদের সকলের কাছে অনুরোধ রাখব যে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা থেকে একটু সময় বের করে গোয়ার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও আধ্যাত্মিক দিকগুলি অনুসন্ধান করুন।
সুধীবৃন্দ,
আমাদের প্রাচীন শিলালিপিতে ‘অতিথি দেব ভবঃ’ কথাটির উল্লেখ রয়েছে যার অর্থ অতিথি ঈশ্বরসম। পর্যটন ক্ষেত্রে আমাদের উদ্যোগও এই ভাবনার সঙ্গে সাযুজ্য রেখে নেওয়া হয়। আমাদের পর্যটনের অর্থ শুধু কোনও জায়গা ঘুরে দেখা নয়, নানা বিষয়ে এখানে প্রচুর অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করা হয়। সঙ্গীত অথবা খাদ্য, শিল্প অথবা সংস্কৃতি - ভারতের বৈচিত্র্য রাজকীয় মহিমায় আবির্ভূত। সুউচ্চ হিমালয় থেকে গভীর অরণ্য, শুষ্ক মরুভূমি থেকে সুন্দর সমুদ্র সৈকত, অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস থেকে ধ্যান – ভারতে সকলের জন্যই কিছু না কিছু রয়েছে। জি-২০ গোষ্ঠীর সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় আমরা দেশজুড়ে ১০০টি পৃথক পৃথক স্থানে প্রায় ২০০ বৈঠকের আয়োজন করেছি। আপনাদের যেসব বন্ধুরা ইতোমধ্যেই বৈঠকগুলির জন্য ভারত সফর করেছেন তাঁদের যদি আপনারা এ দেশ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন, আমি নিশ্চিত প্রত্যেকের মতামত আলাদা হবে।
সুধীবৃন্দ,
ভারতে পর্যটন ক্ষেত্রের বিষয়ে আমাদের মূল লক্ষ্য হল সমৃদ্ধ ঐতিহ্যকে রক্ষা করা। একইসঙ্গে, পর্যটনের জন্য আন্তর্জাতিক মানের পরিকাঠামো গড়ে তোলা। আমরা আধ্যাত্মিক পর্যটনের উন্নয়নের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছি। মনে রাখতে হবে, পৃথিবীর প্রধান প্রধান ধর্মগুলির তীর্থযাত্রীরা ভারতে আসেন। পরিকাঠামোর মানোন্নয়নের ফলে শাশ্বত শহর বারাণসীতে ৭ কোটি পর্যটক এসেছেন যা আগের চাইতে দশগুণ বেশি। আমরা স্ট্যাচু অফ ইউনিটির মতো নতুন নতুন পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তুলছি। বিশ্বের উচ্চতম মূর্তিটি দেখতে এক বছরের মধ্যে ২৭ লক্ষ পর্যটক এসেছেন। গত ৯ বছরে দেশজুড়ে পর্যটন ক্ষেত্রের বিকাশের জন্য আমরা বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছি। পরিবহণ ক্ষেত্রের পরিকাঠামো গড়ে তোলা, আতিথেয়তা, দক্ষতা বিকাশ এমনকি, আমাদের ভিসা প্রদান ব্যবস্থাতেও আমরা পর্যটনকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছি। আতিথেয়তা ক্ষেত্রটি কর্মসংস্থান সৃষ্টির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এর মধ্য দিয়ে সামাজিক অন্তর্ভুক্তি এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত হয়। অন্যান্য অনেক ক্ষেত্রের চাইতেও এই ক্ষেত্রটিতে আরও বেশি মহিলা এবং যুবক-যুবতী যুক্ত হতে পারেন। সুস্থায়ী উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জনে পর্যটন ক্ষেত্রের গুরুত্বটিকে আমরা এখন স্বীকৃতি দিচ্ছি যা অত্যন্ত আনন্দের।
সুধীবৃন্দ,
আপনারা পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত পাঁচটি ক্ষেত্রকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন – পরিবেশ-বান্ধব পর্যটন, ডিজিটালাইজেশন, দক্ষতা বিকাশ, পর্যটন ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ এবং নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছনোর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাপনা। এই ক্ষেত্রগুলিক অগ্রাধিকার দেওয়ার মধ্য দিয়ে ভারত এবং গ্লোবাল সাউথ-এর অন্যান্য রাষ্ট্রগুলিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। আমরা কৃত্রিম মেধার মতো অত্যাধুনিক প্রযুক্তিকে আরও কাজে লাগাব এবং বিভিন্ন উদ্ভাবনমূলক কর্মকাণ্ডে নিজেদের আরও বেশি যুক্ত করব। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ভারতে বিভিন্ন ভাষায় কথা বলা হয়। এই ভাষাগুলির অনুবাদের জন্য আমরা এখন কৃত্রিম মেধার সাহায্য নিচ্ছি। আমি মনে করি, পর্যটন ক্ষেত্রে এই ধরনের প্রযুক্তির ব্যবহারকে বাড়াতে সরকার, শিল্প সংস্থা, বিনিয়োগকারী এবং শিক্ষাবিদদের মধ্যে সমন্বয় থাকা প্রয়োজন। পর্যটন শিল্পের সঙ্গে যুক্ত সংস্থাগুলি আর্থিক ব্যবস্থাপনা, ব্যবসা-বাণিজ্যের নিয়ন্ত্রণ এবং দক্ষতা বিকাশে বিনিয়োগ করার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সাহায্য করার জন্য আমাদের একযোগে কাজ করত হবে।
সুধীবৃন্দ,
বলা হয়, সন্ত্রাসবাদ বিভেদের সৃষ্টি করে, আর পর্যটন ঐক্যের। প্রকৃতপক্ষেই একটি সম্প্রীতিপূর্ণ সমাজ গড়ে তোলার জন্য সমাজের সবস্তরের মানুষকে একজোট করার ক্ষমতা পর্যটনের রয়েছে। আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে রাষ্ট্রসঙ্ঘের বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে জি-২০ গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলির একটি পর্যটন সংক্রান্ত ড্যাশবোর্ড গড়ে তোলা হবে। এর ফলে, সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রের বিষয়ে সবথেকে ভালো নিয়ম, বিভিন্ন বিষয় নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষার ফলাফল এবং অনুপ্রেরণাদায়ক নানা ঘটনাকে আমরা এক জায়গায় নিয়ে আসতে পারব। এ ধরনের মঞ্চ এর আগে কখনও গড়ে তোলা হয়নি। পর্যটন ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনার বিষয়ে আমাদের যৌথ উদ্যোগ আপনাদের আলোচনায় সহায়ক হয়েছে। গোয়া রোডম্যাপ তৈরিতেও যা সাহায্য করেছে। আন্তর্জাতিক পর্যটনের ক্ষেত্রে ‘বসুধৈব কুটুম্বকম’ – ‘এক বিশ্ব, এক পরিবার, এক ভবিষ্যৎ’ ধারণাটি কাজে লাগাতে হবে।
সুধীবৃন্দ,
ভারত উৎসবের ভূমি হিসেবে পরিচিত। দেশের সর্বত্র সারা বছর জুড়ে নানা উৎসব পালন করা হয়। গোয়ায় সাও জোয়াও উৎসব খুব শীঘ্রই উদযাপিত হবে। তবে, আরও একটি উৎসবে আপনাদের সামিল হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। সেটি হল, গণতন্ত্র মাতার উৎসব। আগামী বছর ভারতে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এক মাসের বেশি সময় ধরে প্রায় ১০০ কোটি ভোটদাতা এই উৎসবে অংশগ্রহণ করবেন। ১০ লক্ষেরও বেশি ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে আপনারা এই উৎসব প্রত্যক্ষ করতে পারবেন যার মধ্যে বৈচিত্র্য থাকবে। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই আন্তর্জাতিক উৎসবে সামিল হতে আমি আপনাদের সকলকে ভারতে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। আর এই আমন্ত্রণের সঙ্গে আমিীই সম্মেলনে আপনাদের আলোচনার সাফল্য কামনা করি।
ধন্যবাদ!