গায়ত্রী পরিবারের পুণ্যার্থীবর্গ, সমাজকর্মীবৃন্দ, উপস্থিত ভাইবোনেরা,
গায়ত্রী পরিবারের যে কোনো অনুষ্ঠানই পবিত্র এবং তাতে যোগদান সৌভাগ্যের বিষয়। আজ দেব সংস্কৃতি বিশ্ববিদ্যালয়ের অশ্বমেধ যজ্ঞে অংশ নিতে পেরে আমি খুশি। যখন গায়ত্রী পরিবারের পক্ষ থেকে এই আমন্ত্রণ এলো, তখন সময়ের অভাবের কারণে আমি বেশ চিন্তায় পড়ে যাই। এই অনুষ্ঠানে ভিডিও সংযোগের মাধ্যমে যোগদান নিয়েও বেশ সংশয় ছিল। কারন, সাধারণ মানুষ অশ্বমেধ যজ্ঞের সঙ্গে ক্ষমতার বিস্তৃতিকে এক করে দেখেন। আসন্ন নির্বাচনের প্রেক্ষিতে অশ্বমেধ যজ্ঞকে অন্যভাবে ব্যাখা করার একটা প্রবণতা থাকতেই পারে। কিন্তু, যখন আমি দেখলাম যে, এই অশ্বমেধ যজ্ঞের লক্ষ্য আচার্য শ্রীরাম শর্মার আদর্শকে তুলে ধরার জন্য, তখন আমার যাবতীয় সংশয় দূর হল।
আজ গায়ত্রী পরিবারের অশ্বমেধ যজ্ঞ সামাজিক দায়বদ্ধতা পালনের এক বিরাট অভিযান হয়ে উঠেছে। লক্ষ লক্ষ যুবা এই অভিযানের মাধ্যমে মাদকাসক্ত হয়ে পড়া থেকে রক্ষা পাবেন এবং তাঁদের শক্তি ও সামর্থ্য দেশ ও জাতি গঠনের কাজে লাগবে। যুব সমাজ আমাদের ভবিষ্যৎ। ‘অমৃতকাল’-এ ভারতকে আরও উন্নত করে তোলার দায়িত্ব রয়েছে তাদেরই হাতে। এই যজ্ঞের জন্য আমি গায়ত্রী পরিবারের প্রতি আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই। এই সংগঠনের অনেককেই আমি ব্যক্তিগতভাবে জানি। আপনারা ভক্তিমার্গের মাধ্যমে সামাজিক ক্ষমতায়নের কাজ করে চলেছেন। শ্রীরাম শর্মাজির আদর্শই হল অশুভের বিরুদ্ধে লড়াই করা। শুদ্ধাচারী এই মানুষটি সকলেরই প্রেরণের উৎস। তাঁকে সামনে রেখে আপনারা যেভাবে কাজ করে চলেছেন, তা সত্যই প্রশংসাযোগ্য।
বন্ধুরা,
আসক্তি এমন এক অভ্যাস যা নিয়ন্ত্রণ করা যায় না এবং একজন ব্যক্তির জীবনকে শেষ করে দিতে পারে। এরফলে, ক্ষতিগ্রস্ত হয় দেশ ও সমাজ। এজন্যই আমাদের সরকার ৩-৪ বছর আগে মাদকমুক্ত ভারত গড়ে তোলার লক্ষ্যে জাতির স্তরে একটি কর্মসূচী হাতে নেয়। আমার মন কি বাত-এও এই বিষয়টির উল্লেখ করেছি। এখনও পর্যন্ত ওই কর্মসূচীতে যোগ দিয়েছেন ১১ কোটির বেশি মানুষ। প্রয়োজনীয় সচেতনতার প্রসারে আয়োজন করা হচ্ছে বাইক মিছিল, শপথগ্রহন অনুষ্ঠান এবং পথ নাটিকার। এই অভিযানে যোগ দিয়েছে বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। এতে সামিল হয়েছে গায়ত্রী পরিবারও। যখন কোথাও আগুন লাগে, তখন কেউবা তাতে ঘাসের গোছা ছুঁড়ে মারে, কেউবা ছোঁড়ে মাটি। বুদ্ধিমান ব্যক্তি আগুনের থেকে ঘাস রক্ষা করার চেষ্টা করেন। গায়ত্রী পরিবারের অশ্বমেধ যজ্ঞ সেই কাজটিই করে থাকে। তরুণ প্রজন্মকে মাদকাশক্তি থেকে দূরে রাখতে হবে, যারা আসক্ত হয়ে পড়েছে, তাদের নেশামুক্ত করতে হবে।
বন্ধুরা,
দেশের যুবাদের সামনে বড় লক্ষ্য রাখলে তাদের ভুল পথে যাওয়ার প্রবণতা কমবে। ‘আত্মনির্ভরতা’-র আদর্শকে পাথেয় করে আজ ‘বিকশিত ভারত’ গড়ে তোলায় উদ্যোগী সারা দেশ। আপনারা জানেন, ভারতের নেতৃত্বে জি-২০ শিখর সম্মেলনের মূল মন্ত্র ছিল ‘এক পৃথিবী, এক পরিবার, এক ভবিষ্যৎ’। সারা বিশ্ব এখন ‘এক সূর্য, এক বিশ্ব, এক গ্রিড’-এর ধারণাকে বাস্তবায়িত করতে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে প্রকল্প রূপায়নে আগ্রহী। ‘এক বিশ্ব, এক স্বাস্থ্য’-এর ধারণারও বাস্তবায়ন হচ্ছে জরুরি ভিত্তিতে। যুব সমাজের সামনেও এই ধরণের বড় লক্ষ্য রাখতে হবে। সরকার এখন খেলাধুলোয় বিশেষ জোর দিচ্ছে। বিজ্ঞান ও গবেষণার ক্ষেত্রেও নেওয়া হচ্ছে নানান উদ্যোগ। চন্দ্রযানের সাফল্য প্রযুক্তি সম্পর্কে যুব সমাজকে যেভাবে আগ্রহী করে তুলেছে, তা প্রত্যক্ষ করেছেন আপনারা। সঠিক দিশায় যুবা শক্তিকে কাজে লাগানোর জন্য ফিট ইন্ডিয়া কিম্বা খেলো ইন্ডিয়ার মতো আয়োজনে সামিল হয়েছে সরকার। ‘আমার যুব ভারত’ শীর্ষক একটি বিশাল ব্যবস্থাপণা গড়ে তোলা হয়েছে। মাত্র ৩ মাসের মধ্যে তাতে যোগ দিয়েছেন ১.৫ কোটি যুবক-যুবতী।
বন্ধুরা,
মাদকাশক্তির সমস্যা মোকাবিলায় পরিবার এবং পারিবারিক মূল্যবোধের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। পরিবারগত অবক্ষয়ের নেতিবাচক প্রভাব সর্বগ্রাসী। বাড়ির সবাই যদি পরস্পরের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কেবলমাত্র নিজেদের মোবাইল ফোন নিয়েই ব্যস্ত থাকেন, তবে আদান প্রদানের পরিসর ছোটো হয়ে যায়। নেশামুক্ত দেশ গড়তে পারিবারিক বন্ধন অত্যন্ত জরুরি।
বন্ধুরা,
রামমন্দিরের উদ্বোধনের সময়ে আমি ভারতের হাজার বছরব্যাপী নবযাত্রার সূচনার কথা বলেছিলাম। স্বাধীনতার ‘অমৃত কাল’-এ আমরা নতুন এক উষালগ্ন প্রত্যক্ষ করছি। ব্যক্তিভিত্তিক বিকাশের মাধ্যমে দেশ গঠনের এই মহাযজ্ঞ সফল হবে বলে আমি প্রত্যয়ী। আপনাদের সকলকে আরও একবার হার্দিক অভিনন্দন।
অনেক ধন্যবাদ!
(প্রধানমন্ত্রীর মূল ভাষণটি ছিল হিন্দীতে)