ব্রহ্মকুমারী সংগঠনের প্রমুখ রাজ যোগিনী দাদী রতন মোহিনীজি, কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় আমার সহকর্মী গজেন্দ্র সিং শেখাওয়াতজি, ব্রহ্মকুমারী সংগঠনের সব সদস্যবৃন্দ, অন্য আমন্ত্রিতগণ, ভদ্রমহিলা ও ভদ্রমহোদয়গণ! ব্রহ্মকুমারীদের দ্বারা চালু হওয়া ‘জল-যান অভিযান’-এর সূচনায় এখানে উপস্থিত হতে পেরে আমি খুশি। আপনাদের মধ্যে আসা এবং আপনাদের কাছ থেকে শেখা সব সময় আমার কাছে আকর্ষণের বিষয়। প্রয়াত রাজ যোগিনী দাদী জানকী জীর আশীর্বাদ আমার কাছে সর্বোচ্চ সম্পদ। তাঁর প্রয়াণের পর আবু রোডে দাদী প্রকাশ মাণিজীকে শ্রদ্ধা নিবেদনের কথা আমার মনে আছে। গত কয়েক বছর ধরে ব্রহ্মকুমারী ভগিনীদের কাছ থেকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে উষ্ণ আমন্ত্রণ পেয়েছি। আমি সবসময়ই এই আধ্যাত্মিক পরিবারের এক সদস্য হিসেবে আপনাদের মধ্যে থাকার চেষ্টা করি।
যখনই আমি আপনাদের মধ্যে আসি তা ২০১১ সালে আমেদাবাদে ‘শক্তির ভবিষ্যৎ’ সংক্রান্ত অনুষ্ঠান, প্রতিষ্ঠানের ৭৫ বছর, ২০১৩র সঙ্গম তীর্থ ধাম, ২০১৭তে ব্রহ্মকুমারী সংগঠনের ৮০তম প্রতিষ্ঠা দিবস অথবা গত বছর অমৃত মহোৎসবের সঙ্গে জড়িত অনুষ্ঠানই হোক আপনাদের ভালোবাসা এবং আত্মিক সম্বন্ধ সব সময় আমাকে অভিভূত করেছে। ব্রহ্মকুমারীদের সঙ্গে আমার বিশেষ সম্পর্কের কারণ আত্মকেন্দ্রিকতার ঊর্ধ্বে উঠে সমাজের জন্য সব কিছু উৎসর্গ করা আপনাদের আধ্যাত্মিক অনুশীলনের অঙ্গ স্বরূপ।
বন্ধুগণ,
জল-যান অভিযান হচ্ছে এমন এক সময় যখন সারা বিশ্বজুড়ে জল সংকটকে ভবিষ্যতের সংকট হিসেবে দেখা হচ্ছে। একবিংশ শতাব্দীর বিশ্ব পৃথিবীর বুকে সীমিত জল সম্পদের গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারছে। বিপুল জনসংখ্যার দেশ হওয়ায় ভারতের কাছে জল সুরক্ষা এক গুরুত্বপূর্ণ দায়বদ্ধতার মধ্যে পড়ে। এই কারনবশত স্বাধীনতার অমৃতকালে আজ দেশে একথা বলা হচ্ছে ‘জল হ্যায় তো কাল হ্যায়’ অর্থাৎ জলকে আগামীদিন হিসেবে দেখা হচ্ছে। জল থাকলেই তবে আগামীর আবির্ভাব হবে। ফলে আজ থেকেই এক্ষেত্রে আমাদের সম্মিলিত প্রয়াস গড়ে তুলতে হবে। আমি সন্তুষ্ট যে দেশ আজ জল সংরক্ষণকে জন-আন্দোলন হিসেবে এগিয়ে নিয়ে চলেছে। ব্রহ্মকুমারীদের জল-যান অভিযান জন-অংশীদারি বাড়ানোর লক্ষ্যে নতুন শক্তি যোগাবে। এটা জল সংরক্ষণ অভিযানের বিস্তার ঘটাবে তাই নয়, এর কার্যকারিতাকেও আরও বৃদ্ধি করবে। ব্রহ্মকুমারী সংগঠনের সঙ্গে জড়িত প্রবীণ নেতৃবৃন্দ এবং লক্ষ লক্ষ অনুগামীকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাই।
বন্ধুগণ,
হাজার হাজার বছর আগে ভারতীয় ঋষিগণ প্রকৃতি, পরিবেশ এবং জল নিয়ে ভারসাম্য যুক্ত নিয়ন্ত্রিত এবং বিবেচনাধর্মী ব্যবস্থা গড়ে তুলেছিলেন। আমাদের দেশে বলা হয়ে থাকে জলের অপচয় কোরোনা বরং তা সংরক্ষণ করো। হাজার হাজার বছর ধরে এই অনুভূতি আমাদের আধ্যাত্মিক চেতনা এবং আমাদের ধর্মের এক অঙ্গ স্বরূপ হয়ে রয়েছে। এটাই আমাদের সমাজের সংস্কৃতি এবং আমাদের সামাজিক চিন্তার ভরকেন্দ্র। ফলে জলকে আমরা ভগবান হিসেবে সেবা করি এবং নদীকে আমরা মাতৃস্বরূপ বিবেচনা করি। কোনো একটা সমাজ যখন প্রকৃতির সঙ্গে এ রকম এক ভাবানুসঙ্গ করে তোলে সুস্থায়ী উন্নয়ন তখন জীবনের এক স্বাভাবিক পথ হয়ে দাঁড়ায়। ফলে প্রকৃতির আজকের সংকটের সমাধান সূত্র খুঁজতে আমাদেরকে অতীতের চেতনাকে পুনরায় জাগ্রত করতে হবে। জল সংরক্ষণের মূল্য বোঝাতে দেশবাসীর মধ্যে অনুরূপ উপলব্ধির সঞ্চার করতে হবে। যেসব কারণে জল দূষণ ঘটছে তার নির্মূল করতে হবে এবং সব সময় যা হয়েছে ব্রহ্মকুমারীদের মতো ভারতের আধ্যাত্মিক প্রতিষ্ঠানে এক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
বন্ধুগণ,
গত দশকগুলিতে দেশজুড়ে এমন নেতিবাচক চিন্তার সঞ্চার ঘটেছে যাতে জল সংরক্ষণ এবং পরিবেশের ক্ষেত্রে সমস্যাদীর্ণ বিষয়গুলিকে আমরা উপেক্ষা করে গেছি। কেউ কেউ মনে করেছিলেন এই সমস্ত চ্যালেঞ্জিং ক্ষেত্রে কোনো নিবারণ করা সম্ভব নয়। কিন্তু গত ৮-৯ বছরে দেশে এই মানসিকতার বদল ঘটেছে এবং পরিস্থিতিও বদলাচ্ছে। নমামী গঙ্গে এক্ষত্রে এক প্রকৃষ্ট উদাহরণ স্বরূপ। আজ কেবলমাত্র গঙ্গাই নয় তার শাখা প্রশাখাগুলিকেও পরিষ্কার করা হচ্ছে। গঙ্গার ধারে প্রাকৃতিক চাষের প্রচারাভিযান শুরু হয়েছে। নমামী গঙ্গে প্রচারাভিযান দেশের বিভিন্ন রাজ্যের কাছে এক আদর্শ হিসেবে দেখা দিয়েছে।
বন্ধুগণ,
জল দূষণের মতো ভূগর্ভস্থ জলস্তর হ্রাস পাওয়া দেশের কাছে আরও একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এক্ষেত্রে ‘বৃষ্টি ধরে রাখো’ আন্দোলন দেশে শুরু হয়েছে এবং তা দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে। অটল ভূজল যোজনার মাধ্যমে দেশের হাজরও গ্রাম পঞ্চায়েতে জল সংরক্ষণ প্রসার লাভ করছে। জল সংরক্ষণের লক্ষ্যে দেশের প্রত্যেকটি জেলায় ৭৫টি অমৃত সরোবর গড়ে তোলার অভিযান এক্ষেত্রে আরও একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ।
বন্ধুগণ,
আমাদের দেশের মহিলারা জীবনে জল সংরক্ষণের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে প্রথাগতভাবে আলোক বর্তিকা বহন করে আনছে। আজ আমাদের দেশের গ্রামের মেয়েরা ‘পানি সমিতি’ (জল কমিটি)র মাধ্যমে জল জীবন মিশনের মতো প্রকল্পে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। আমাদের ব্রহ্মকুমারী ভগিনীরা দেশে এমনকি বিশ্বজুড়ে অনুরূপ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন। জল সংরক্ষণের মতো প্রকৃতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সমস্ত বিষয়কে অনুরূপ উদ্যমের সঙ্গে আমাদের তুলে ধরতে হবে। কৃষিতে জলের পরিমিত ব্যবহারের জন্য বিন্দু সেচের কৌশলকে দেশে তুলে ধরা হচ্ছে। কৃষকরা যাতে তার ব্যাপক ব্যবহার করেন আপনাদের উচিত তাদের সে ব্যাপারে অনুপ্রাণিত করা। আজ সমগ্র বিশ্ব ভারতের উদ্যোগে আন্তর্জাতিক বাজরা বর্ষ উদযাপন করছে। শত শত বছর ধরে বাজরা অর্থাৎ শ্রী আন্না বাজরা, শ্রী আন্না জোয়ার আমাদের কৃষি এবং আমাদের খাদ্যাভ্যাসের অঙ্গ। বাজরা পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ এবং তার ফলনে কম জলের প্রয়োজন হয়। ফলে আপনারা যদি মানষকে মোটা দানার শস্য খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করতে উৎসাহিত করতে পারেন তাহলে এই অভিযান আরও শক্তিশালী হবে এবং জল সংরক্ষণে গতি সঞ্চার হবে।
আমি নিশ্চিত আমাদের যৌথ প্রয়াস জল-যান অভিযানকে সফল করবে এবং আমরা উন্নত ভারত এবং এক উন্নত ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে পারবো। আপনাদের সবাইকে আরও একবার অনেক অনেক শুভেচ্ছা। ওম শান্তি!
প্রধানমন্ত্রীর মূল ভাষণটি হিন্দিতে দিয়েছেন।