উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথজি, গোরক্ষপুরের সাংসদ শ্রী রবি কিষাণ শুক্লাজি, তরুণ খেলোয়াড়, প্রশিক্ষক, অভিভাবক ও অভিভাবিকা এবং আমার সহকর্মীরা!
অনুষ্ঠানের শুরুতেই আমি মহাযোগী গুরু গোরক্ষনাথের এই পবিত্র ভূমিকে প্রণাম জানাই। সংসদ খেল-এর এই প্রতিযোগিতায় যেসব খেলোয়াড়রা অংশগ্রহণ করেছেন আমি তাঁদের সকলকে অভিনন্দন জানাই। আপনারা কঠোর পরিশ্রমী। এখানে আপনাদের মধ্যে কেউ কেউ পদক জয় করবেন, বাকিরা পরাজয় স্বীকার করবেন। কিন্তু, খেলার মাঠই হোক বা দৈনন্দিন জীবন, জয়-পরাজয় জীবনের এক অঙ্গ। তাই, যাঁরা এতদূরে এসে পৌঁছেছেন তাঁদের কাছে এটা পরাজয় নয়। আপনারা এখান থেকে অনেক কিছু শিখেছেন, প্রচুর অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছেন। আর এটাই হল আপনাদের জয়ের বড় মূলধন। আপনারা ভবিষ্যতে উপলব্ধি করবেন খেলোয়াড়োচিত মানসিকতা আপনাদের জীবনে সাফল্যের চাবিকাঠি হয়ে উঠবে।
আমার তরুণ বন্ধুরা,
আমি শুনলাম এখানে কুস্তি, কাবাডি, হকির মতো খেলার পাশাপাশি ছবি আঁকা, পল্লী গান, স্থানীয় নৃত্য, তবলা, বাঁশি বাজানোর মতো বিষয়েও প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এটি অত্যন্ত প্রশংসনীয় ও অনুপ্রেরণাদায়ক উদ্যোগ। খেলাধূলা, শিল্প-সংস্কৃতি বা সঙ্গীত – যাই হোক না কেন, সব জায়গায় প্রতিভার স্বীকৃতির জন্য এই উৎসাহের প্রয়োজন। আমাদের ভারতীয় ঐতিহ্যকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, এর জন্য আমরা দায়বদ্ধ। রবি কিষাণজি নিজে একজন প্রতিভাবান শিল্পী। তাই স্বাভাবিকভাবেই তিনি শিল্পকলার গুরুত্ব উপলব্ধি করেন। এই কারণে এ ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। আমি তাঁকে অভিনন্দন জানাই।
বন্ধুগণ,
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে আমি সংসদ খেল মহাকুম্ভে অংশগ্রহণ করছি। এটি তৃতীয় খেল মহাকুম্ভ। আমি মনে করি ভারত যদি ক্রীড়াক্ষেত্রে মহাশক্তিধর হয়ে উঠতে চায়, তাহলে আমাদের নতুন পন্থাপদ্ধতি ভাবতে হবে, নতুন নতুন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। সংসদ খেল মহাকুম্ভ এ ধরনের একটি ব্যবস্থাপনা। স্থানীয় স্তরে খেলোয়াড়দের প্রতিভার বিকাশের জন্য নিয়মিত ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ। প্রতিটি লোকসভা কেন্দ্রে এই ধরনের প্রতিযোগিতা আয়োজনের মধ্য দিয়ে স্থানীয় প্রতিভা যেমন বিকশিত হয়, পাশাপাশি সমগ্র অঞ্চলের খেলোয়াড়দের মনোবলও বৃদ্ধি পায়। আপনারা দেখুন, এই গোরক্ষপুরে প্রথম যখন খেল মহাকুম্ভের আয়োজন করা হয়েছিল তখন সেখানে ১৮ থেকে ২০ হাজার খেলোয়াড় অংশ নিয়েছিলেন। এবার সেই সংখ্যাটি বেড়ে হয়েছে ২৪ থেকে ২৫ হাজার। এই তরুণ খেলোয়াড়দের মধ্যে মেয়ে প্রতিযোগীর সংখ্যা ৯ হাজার। আপনাদের মধ্যে অনেকে ছোট ছোট গ্রাম ও শহর থেকে এসেছেন। এর মধ্য দিয়ে এটি স্পষ্ট যে সংসদ খেল প্রতিযোগিতা উদীয়মান খেলোয়াড়দের জন্য নতুন একটি মঞ্চ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে।
বন্ধুগণ,
আমরা প্রায়শই দেখতে পাই, লম্বা হওয়ার জন্য কৈশোরে অনেকেই গাছের ডালে বা কোথাও ঝুলছেন। বয়স ভেদে এই একটি মানসিকতা আসলে সকলের মধ্যে আছে তা হল, নিজেকে সুস্থ রাখা। একটা সময় ছিল যখন গ্রামীণ মেলায় নানা ধরনের খেলাধূলার ব্যবস্থা থাকত। আখড়াগুলিতেও নানা ধরনের খেলাধূলা হত। কিন্তু সময়ের পরিবর্তন হয়েছে আর পুরনো সেই ব্যবস্থাগুলি হারিয়ে যেতে বসেছে। পরিস্থিতি এমন এক পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছিল যখন স্কুলের পিটি ক্লাসগুলিকে নিছক সময় কাটানোর পিরিয়ড বলে ভাবা হত। এই ধরনের মানসিকতা গড়ে ওঠার ফলে দেশের ৩-৪টি প্রজন্ম ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ভারতে নতুন নতুন ক্রীড়া ব্যবস্থাপনা যেমন গড়ে ওঠেনি, একইসঙ্গে খেলাধূলাতেও উল্লেখযোগ্য কিছু হয়নি। আপনি যখন টিভিতে প্রতিভা অন্বেষণের বিভিন্ন অনুষ্ঠান দেখেন তখন দেখবেন, ছোট ছোট শহর থেকে প্রচুর ছেলে-মেয়ে অংশ নিয়েছে। আমাদের দেশে এরকম অনেক লুকনো সম্ভাবনা আছে যারা ঘেরাটোপ থেকে বেরিয়ে আসতে চায়। ক্রীড়া জগতে এই লুকিয়ে থাকা প্রতিভাদের সামনে নিয়ে আসার ক্ষেত্রে সংসদ খেল মহাকুম্ভ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। আজ শত শত বিজেপি সাংসদরা দেশজুড়ে এরকম ক্রীড়ানুষ্ঠানের আয়োজন করছে। বিপুল সংখ্যায় তরুণ খেলোয়াড়রা এই সুযোগগুলি পাচ্ছেন। এঁদের মধ্যে অনেকেই একে কাজে লাগিয়ে রাজ্য বা জাতীয় স্তরে এগিয়ে যাচ্ছেন। আপনাদের মধ্যে অনেকেই হয়তো আগামীদিনে অলিম্পিক্সের মতো আন্তর্জাতিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় পদক জয় করতে পারবেন। আর তাই আমি মনে করি, সংসদ খেল মহাকুম্ভ আপনাদের ভবিষ্যতের ভিতটি শক্তিশালী করছে।
বন্ধুগণ,
খেল মহাকুম্ভ আয়োজনের পাশাপাশি দেশের ছোট ছোট শহরে খেলাধূলার ব্যবস্থা গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। গোরক্ষপুরের আঞ্চলিক স্পোর্টর্স স্টেডিয়ামটি তার উদাহরণ। গোরক্ষপুরের গ্রামীণ অঞ্চলে তরুণ-তরুণীদের জন্য ১০০টির বেশি খেলার মাঠ গড়ে তোলা হয়েছে। শুনলাম, চৌরি চৌরায় একটি গ্রামীণ মিনি স্টেডিয়াম গড়ে তোলা হবে। ‘খেলো ইন্ডিয়া’ আন্দোলনের মাধ্যমে খেলাধূলার বিভিন্ন ব্যবস্থা যেমন গড়ে তোলা হচ্ছে, পাশাপাশি খেলোয়াড়রা যাতে যথাযথ প্রশিক্ষণ পান, সেদিকেও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। দেশ এখন এক সর্বাত্মক প্রয়াস নিয়ে এগিয়ে চলেছে। এবারের বাজেটে খেলাধূলার জন্য বেশ কিছু ব্যবস্থার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। ২০১৪-র সঙ্গে তুলনা করলে বলা যাবে, ক্রীড়া মন্ত্রকের এবারের বাজেটের পরিমাণ প্রায় তিনগুণ বেড়েছে। আজ দেশে অনেক অত্যাধুনিক স্টেডিয়াম গড়ে তোলা হচ্ছে। টপস-এর মতো কর্মসূচির মাধ্যমে খেলোয়াড়দের প্রশিক্ষণের জন্য লক্ষ লক্ষ টাকার অর্থ সাহায্য করা হচ্ছে। ‘খেলো ইন্ডিয়া’র পাশাপাশি ‘ফিট ইন্ডিয়া’ এবং যোগও বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। ভালো পুষ্টির জন্য দানাশস্য ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। আজ জোয়ার, বাজরা ইত্যাদি দানাশস্য প্রধান খাদ্যের তালিকায় রাখা হচ্ছে। দেশ মোটা দানাশস্যকে এখন নতুন নামে ভূষিত করেছে - ‘শ্রী অন্ন’। আপনারা সকলে এই কর্মসূচিগুলিতে অংশ নিয়েছেন এবং একে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন। আজ অলিম্পিক্সের মতো বড় বড় প্রতিযোগিতায় ভারতীয় খেলোয়াড়রা পদক জয় করছেন। আপনাদের মতো তরুণ খেলোয়াড়রা এই ধারাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে।
আপনাদের সকলের প্রতি আমার আস্থা রয়েছে যে আগামীদিনে আপনাদের সাফল্যে দেশ গর্ববোধ করবে। আপনাদের সকলকে আবারও শুভেচ্ছা জানাই। অনেক অনেক ধন্যবাদ!
প্রধানমন্ত্রীর মূল ভাষণটি হিন্দিতে দিয়েছেন