লোকসভার অধ্যক্ষ শ্রী ওম বিড়লা জি, রাজ্যসভার ডেপুটি চেয়ারম্যান শ্রী হরিবংশ জি, মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডে জি, বিধানসভার অধ্যক্ষ রাহুল নারেকার জি এবং বিভিন্ন রাজ্যের বিধানসভার প্রিসাইডিং অফিসারগণ,
মহোদয়া ও মহোদয়গণ,
সারা ভারত প্রিসাইডিং অফিসার সম্মেলন উপলক্ষে আপনাদের সকলকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানাই! এ'সম্মেলনের এক বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। ৭৫তম সাধারণতন্ত্র দিবসের পরেই এটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ২৬ জানুয়ারি আমাদের সংবিধান কার্যকরি হয়। এটি তার ৭৫ বছর। আমি দেশবাসীর পক্ষ থেকে গণপরিষদের সমস্ত সদস্যকে সম্মানজনক শ্রদ্ধা জানাই।
বন্ধুগণ,
এই সম্মেলনে প্রিসাইডিং অফিসারদের আমাদের গণপরিষদ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। গণপরিষদের সদস্যদের বিভিন্ন ধারণা, বিষয় এবং মতামতের মধ্যে সমন্বয় গড়ার দায়িত্ব ছিল। তাঁরা অত্যন্ত কর্তব্য নিষ্ঠার সঙ্গে তা সম্পাদন করেছেন। এই সম্মেলন প্রিসাইডিং অফিসারদের গণপরিষদের আদর্শ থেকে অনেক কিছু শেখার সুযোগ করে দিতে পারে। আপনাদের প্রত্যেককেই এমন কিছু করে যেতে হবে যা আগামী প্রজন্মের কাজে যা দৃষ্টান্তস্বরূপ হতে পারে।
বন্ধুগণ,
আমাকে জানানো হয়েছে যে এবারের সম্মেলনের মূল উদ্দেশ্য হল বিধানসভাগুলি এবং কমিটিগুলির কার্যকারিতাকে বাড়ানো। এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আজকের দিনে দেশের মানুষ প্রত্যেক প্রতিনিধির ওপর সতর্ক নজর রাখেন। ফলে, এই জাতীয় আলোচনা এবং পর্যালোচনার যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। দেশের সংসদীয় ব্যবস্থাকে গড়ে তুলতে সভার প্রতিনিধিদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। সভার প্রতিনিধিরা কিভাবে তাদের সদর্থক ব্যবহার বজায় রাখবেন এবং সভার কার্যকারিতাকে বৃদ্ধি করবেন তা নিয়ে এই সম্মেলনে সুনির্দিষ্ট মতামতের যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে।
বন্ধুগণ,
এমন একটা সময় ছিল যখন সদস্যরা সভার আচরবিধি ভঙ্গ করলে এবং আইন অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলে সভার বর্ষীয়ান সদস্যরা তাকে বোঝাতেন ভবিষ্যতে সভার শৃঙ্খলা রক্ষায় তিনি যাতে অনুরূপ ভুল না করেন। কিন্তু আজকের দিনে দেখা যাচ্ছে কিছু রাজনৈতিক দল এই জাতীয় সদস্যদের ভুলকেই সমর্থন করছেন। এই অবস্থাটি সংসদ বা বিধানসভা কোন জায়গায় গ্রহণযোগ্য নয়। সভার শৃঙ্খলা কিভাবে বজায় রাখা যায় তা নিয়ে এই সম্মেলনে আলোচনার বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে।
বন্ধুগণ,
আজ আমরা আরও একটি পরিবর্তন প্রত্যক্ষ করছি। অতীতে সভার কোন সদস্য দুর্নীতিতে অভিযুক্ত হলে জনজীবনে প্রত্যেকে তার সঙ্গে দূরত্ব রাখতেন। কিন্তু আজ আমরা দেখছি আদালতে দুর্নীতির দায়ে শাস্তি প্রাপ্ত কোন সদস্যকেও জনসমক্ষে গৌরবান্বিত করা হচ্ছে। এটি কার্যনির্বাহী বিভাগ, বিচার বিভাগ, প্রশাসনিক বিভাগ, এমনকি ভারতের মহান সংবিধানকে অসম্মান করা। এই বিষয় নিয়ে সম্মেলনে আলোচনার ভিত্তিতে সুনির্দিষ্ট মতামত আগামী দিনে চলার পথে নতুন নক্সা তৈরি করবে।
বন্ধুগণ,
প্রত্যেকটি রাজ্য সরকার এবং রাজ্য বিধানসভার এই অমৃতকালে দেশের লক্ষ্য পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। রাজ্যগুলির অগ্রগতি হলে ভারতের অগ্রগতি সম্ভব এবং রাজ্যগুলির অগ্রগতি তখনই সম্ভব, যখন তাদের আইনসভা এবং কার্যনির্বাহী সমন্বয়ের ভিত্তিতে একসাথে কাজ করতে পারবে এবং উন্নয়ন লক্ষ্য স্থির করতে পারবে। রাজ্যের লক্ষ্য অর্জনে আইনি কার্যকলাপ সক্রিয় ভাবে কাজ করলে রাজ্য আরও অগ্রগতির পথে এগিয়ে যেতে পারবে। ফলে, আপনাদের রাজ্যের সমৃদ্ধির জন্য কমিটিগুলির সশক্তিকরণ অনুরূপ ভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
বন্ধুগণ,
আরও একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল অপ্রয়োজনীয় আইনগুলির অবসান ঘটানো। বিগত ১০ বছরে কেন্দ্রীয় সরকার ২ হাজারেরও বেশি আইন বাতিল করেছে, যা আমাদের ব্যবস্থায় প্রতিবন্ধক হয়ে উঠেছিল। আমাদের চলার পথে সেগুলি বোঝা স্বরূপ মনে হতো। আইনি ব্যবস্থার এই সরলীকরণ সাধারণ মানুষের অসুবিধাকে যেমন একদিকে কমিয়েছে, তার পাশাপাশি জীবন ধারারও স্বাচ্ছন্দ্য বিকাশ ঘটিয়েছে। প্রিসাইডিং অফিসার হিসেবে আপনারা যদি এই জাতীয় আইনগুলি খতিয়ে দেখেন এবং তার তালিকা তৈরি করেন, তদুপরি সংশ্লিষ্ট সরকার ও বিধায়কদের তা নজরে আনেন, তাহলে দেখা যাবে প্রত্যেকিই উৎসাহের সঙ্গে এই কাজে এগিয়ে আসছেন। জনসাধারণের জীবনে এর একটা সদর্থক ভূমিকা রয়েছে।
বন্ধুগণ,
আপনারা জানেন, সংসদ এই গত বছরই নারীশক্তি বন্দন অধিনিয়ম অনুমোদন করেছে। এই সম্মেলনে আলোচনার মাধ্যমে সুনির্দিষ্ট মতামত গড়ে ওঠা দরকার, যাতে মহিলা সশক্তিকরণে এবং তাঁদের প্রতিনিধিত্ব বৃদ্ধিতে আরও কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যায়। ভারতের মতো একটি তরুণ দেশে আপনাদের উচিত কমিটিগুলিতে যুবদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধির ওপরে জোর দেওয়া। আমাদের তরুণ প্রতিনিধিদের অতিরিক্ত সুযোগ ছাড়াও সভায় তাদের মতামত প্রকাশে এবং নীতি নির্ধারণে সক্রিয় ভূমিকা নিতে উৎসাহ দিতে হবে।
বন্ধুগণ,
২০২১-এ আমাদের আলোচনায় আমি এক দেশ, এক পরিষদীয় মঞ্চের কথা বলেছিলাম। আমি খুশি জেনে যে আমাদের সংসদ এবং রাজ্য বিধানসভাগুলি ই-বিধান এবং ডিজিটাল সংসদ মঞ্চের মাধ্যমে এই লক্ষ্য সম্পাদনের পথে কাজ করছে। এই অনুষ্ঠানে আমাকে আমন্ত্রণ জানানোয় আরও একবার আপনাদেরকে ধন্যবাদ জানাই। এই সম্মেলনের সফল আয়োজনের জন্য সমস্ত প্রিসাইডিং অফিসারকে আমি আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। আপনাদের অনেক ধন্যবাদ।
(প্রধানমন্ত্রীর মূল ভাষণ হিন্দিতে)