নমস্কার, বন্ধুগণ!
আজ ভারত সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে ৭০ হাজারেরও বেশি তরুণ নিয়োগপত্র পেতে চলেছেন। আপনারা কঠিন পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে এই সাফল্য অর্জন করেছেন। আমি আপনাদের ও আপনাদের পরিবারের সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। কিছুদিন আগে গুজরাটেও একই ধরনের ‘রোজগার মেলা’ (চাকরি মেলা) অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এই মাসে আসামেও এরকম চাকরি মেলার আয়োজন করা হচ্ছে। ভারত সরকার এবং বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে তরুণদের প্রতি দায়বদ্ধতা পূরণে এ ধরনের চাকরি মেলার আয়োজন করা হচ্ছে।
বন্ধুগণ,
গত ৯ বছরে সরকারি চাকরি নিয়োগের ক্ষেত্রে অনেক স্বচ্ছতা আনা হয়েছে। আগে স্টাফ সিলেকশন বোর্ড নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ১৫-১৮ মাস সময় নিত। এখন ৬-৮ মাসের মধ্যে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হচ্ছে। আগে সরকারি চাকরিতে আবেদনের প্রক্রিয়া অনেক কঠিন ছিল। আবেদনপত্র সংগ্রহ, গেজেটেড অফিসারকে দিয়ে নথিপত্রের প্রত্যয়িত করা এবং ডাকে আবেদনপত্র পাঠাতে গিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাঁড়াতে হ’ত। আজ অনলাইনের মাধ্যমে গোটা প্রক্রিয়া অনেক সহজ হয়ে গেছে। গ্রুপ-সি এবং গ্রুপ-ডি নিয়োগের ক্ষেত্রে ইন্টারভিউ প্রক্রিয়া তুলে দেওয়া হয়েছে।
বন্ধুগণ,
আজকের দিনটি অন্য একটি কারণে বিশেষ হয়ে উঠেছে। ৯ বছর আগে আজকের দিনে লোকসভা নির্বাচনের ফল ঘোষিত হয়েছিল। ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ’ – এই মন্ত্র নিয়ে ভারত এখন এগিয়ে চলেছে। আজকের দিনটি অন্য একটি কারণে অন্য একটি কারণে গুরুত্বপূর্ণ। আজ হিমালয়ের কোলে অবস্থিত রাজ্য সিকিমের প্রতিষ্ঠা দিবস।
বন্ধুগণ,
গত ৯ বছর ধরে নতুন কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা তৈরির লক্ষ্যে সরকার নানা নীতি গ্রহণ করে চলেছে। আধুনিক পরিকাঠামো নির্মাণ, গ্রামাঞ্চলের উন্নয়ন কিংবা সরকারের পরিকল্পনা ও নীতির ক্ষেত্রে তরুণদের জন্য নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির উপর জোর দেওয়া হয়েছে।
বন্ধুগণ,
গত ৯ বছরে মৌলিক সুযোগ-সুবিধা তৈরির জন্য ভারত সরকার ৩৪ লক্ষ কোটি মূলধন ব্যয় করেছে। এই বছরের বাজেটেও ১০ লক্ষ কোটি টাকা মূলধনী ব্যয়ের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে। এই টাকা দিয়ে নতুন হাইওয়ে, বিমানবন্দর, রেলপথ ও সেতু নির্মাণ করা হবে এবং সেইসঙ্গে নতুন কর্মসংস্থানও সৃষ্টি হবে। বর্তমানে যে গতিতে ভারত এগোচ্ছে, স্বাধীনতার ৭৫ বছরের ইতিহাসে তার নজির নেই। বিগত ৭০ বছরে দেশে ২০ হাজার কিলোমিটারের মতো রেলপথের বৈদ্যুতিকীকরণ হয়েছিল। আর, গত ৯ বছরে আমাদের শাসনকালে ৪০ হাজার কিলোমিটার রেললাইনের বৈদ্যুতিকীকরণ করা হয়েছে। ২০১৪ সালের আগে প্রতি মাসে আমাদের দেশে মাত্র ৬০০ মিটার নতুন মেট্রো লাইন পাতা হয়েছিল। বর্তমানে প্রতি মাসে তা বেড়ে হয়েছে ৬ কিলোমিটার।
২০১৪ সালের আগে দেশে ৪ লক্ষ কিলোমিটারেরও কম গ্রামীণ সড়ক নির্মাণ করা হয়েছিল। এখন তা ৭.২৫ লক্ষ কিলোমিটার ছাড়িয়ে গেছে। ২০১৪’র আগে দেশে বিমানবন্দরের সংখ্যা ছিল মাত্র ৭৪টি। এখন তা ১৫০-এ পৌঁছে গিয়েছে। প্রতিটি গ্রামে ৫ লক্ষেরও বেশি কমন সার্ভিস সেন্টার খোলা হয়েছিল এবং তা কর্মসংস্থানের প্রধান ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে। গ্রামগুলিতে ৩০ হাজারেরও বেশি পঞ্চায়েত ভবন তৈরি করা হয়েছে। ৯ কোটির বেশি বাড়িতে নলবাহিত জল সংযোগ দেওয়া হয়েছে।
বন্ধুগণ,
গত ৯ বছরে অত্যন্ত দ্রতগতিতে চাকরির প্রকৃতিও বদলে গেছে। বর্তমান যুগে নতুন চাকরির ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। গত ৯ বছরে স্টার্টআপ সংস্কৃতি নতুন বিপ্লবের সাক্ষী হয়ে আছে। বর্তমানে স্টার্টআপ শিল্পে কমপক্ষে ১০ লক্ষ তরুণের কর্মসংস্থান হয়েছে। গত ৯ বছরে দেশের শহরগুলিতে অ্যাপের মাধ্যমে ক্যাব পরিষেবা চালু হয়েছে। অনলাইন ডেলিভারি ক্ষেত্রেও নতুন মাত্রা এসেছে, যেখানে লক্ষ লক্ষ তরুণের কর্মসংস্থান হচ্ছে। রান্নার গ্যাসের সরবরাহ ৬০টি শহর থেকে বেড়ে ৬০০ ছাড়িয়ে গেছে।
বন্ধুগণ,
গত ৯ বছরে মুদ্রা যোজনায় ২৩ লক্ষ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে। ৮-৯ কোটি মানুষ মুদ্রা যোজনার সাহায্যে স্বাধীনভাবে কাজ করছেন। ‘আত্মনির্ভর ভারত’ কর্মসূচিতে উৎপাদন শিল্পে বহু কাজের সুযোগ তৈরি হচ্ছে। পিএলআই প্রকল্পের অধীনে সরকার উৎপাদন শিল্পে প্রায় ২ লক্ষ কোটি টাকা সহায়তা দিচ্ছে।
বন্ধুগণ,
২০১৪-২২ সালের মধ্যে দেশে প্রতি বছর নতুন নতুন আইআইটি এবং আইআইএম গড়ে তোলা হয়েছে। আমাদের সরকার ক্ষমতায় আসার আগে দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ছিল ৭২০। এখন তা ১ হাজার ১০০ ছাড়িয়ে গেছে। ২০১৪ পর্যন্ত দেশে যেখানে ৪০০টি মেডিকেল কলেজ ছিল, এখন তা বেড়ে হয়েছে প্রায় ৭০০। ২০১৪’র আগে দেশে এমবিবিএস এবং এমডি-র আসন সংখ্যা ছিল ৮০ হাজার। এখন তা ১.৭০ লক্ষ ছাড়িয়ে গেছে।
বন্ধুগণ,
দক্ষতা সৃষ্টিতে আমাদের আইটিআই-গুলিও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। গত ৯ বছরে প্রায় প্রতিদিনই একটি করে নতুন আইটিআই চালু করা হয়েছে। প্রায় ১৫ হাজার আইটিআই – এ নতুন নতুন পাঠক্রম চালু করা হয়েছে। পিএম কৌশল যোজনার অধীনে ১.২৫ কোটি তরুণকে দক্ষতা প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
বন্ধুগণ,
সরকারের চেষ্টার ফলে বহু নতুন নতুন ক্ষেত্রে কাজের সুযোগ তৈরি হচ্ছে। ইপিএফও-র তথ্য থেকে জানা যায় ২০১৮-১৯ বর্ষে সারে চার কোটির বেশি মানুষ চাকরি পেয়েছেন। কয়েকদিন আগে আমি ওয়ালমার্টের সিইও-র সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলাম। তিনি আগামী ৩-৪ বছরে ভারত থেকে ৮০ হাজার কোটি টাকার পণ্য আমদানির ব্যাপারে তাঁর আত্মবিশ্বাসের কথা জানিয়েছেন। সিসকো-র সিইও তাঁর ভারত সফরকালে আমাকে বলেছিলেন, তাঁর কোম্পানি ভারতে তৈরি ৮ হাজার কোটি টাকার পণ্য আমদানির লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছে। বিশ্বের বিখ্যাত সেমিকন্ডাক্টার কোম্পানি এনএক্সপি-র সঙ্গেও আমার সম্প্রতি কথা হয়েছে। ঐ সংস্থাও ভারতে সেমিকন্ডাক্টরের সম্ভাবনা নিয়ে ইতিবাচক মনোভাব ব্যক্ত করেছে।
বন্ধুগণ,
দেশে বর্তমান উন্নয়নের ‘মহাযজ্ঞে’ আপনাদেরও প্রত্যক্ষ ভূমিকা থাকবে। আগামী ২৫ বছরের উন্নত ভারতের যে অঙ্গীকার নেওয়া হয়েছে, তা পূরণ করার জন্য আপনাদেরও দায়িত্ব নিতে হবে। সবরকম সুযোগ-সুবিধা সদ্ব্যবহারের জন্য আমি আপনাদের কাছে আর্জি জানাচ্ছি। আজ থেকে আপনাদের জীবনে শিক্ষার এক নতুন অধ্যায়েরও সূচনা হ’ল। একথা মাথায় রেখে iGoT কর্মযোগী নামে একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করা হয়েছে। জীবনের যাত্রাপথে এই নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করার জন্য আমি আপনাদের সকলকে আবার অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। আপনাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করছি। সবাইকে আবার অনেক অনেক ধন্যবাদ।