ভারত মাতার জয়।
ভারত মাতার জয়।
আমার প্রিয় মুম্বাইয়ের মা, বোন ও বন্ধুগণ,
আমার প্রণাম!
মহারাষ্ট্রের রাজ্যপাল শ্রদ্ধেয় শ্রী ভগত সিং কোশিয়ারীজি, মুখ্যমন্ত্রী মাননীয় একনাথ শিন্ডেজি, উপমুখ্যমন্ত্রী শ্রী দেবেন্দ্র ফড়নবীশজি, আমার কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভার মাননীয় সদস্যগণ, মহারাষ্ট্র বিধানসভার অধ্যক্ষ শ্রী রাহুল নারভেকরজি, মহারাষ্ট্র রাজ্য সরকারের অন্যান্য সমস্ত মন্ত্রীগণ, বিধায়কগণ, উপস্থিত সাংসদগণ আর বিপুল সংখ্যায় সমাগত আমার প্রিয় ভাই ও বোনেরা!
আজ মুম্বাইয়ের উন্নয়ন সংক্রান্ত ৪০ হাজার কোটি টাকারও বেশি বিনিয়োগে বিবিধ প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাস এখানে হয়েছে। মুম্বাইয়ের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় মেট্রো সম্প্রসারণ থেকে শুরু করে ছত্রপতি শিবাজী টার্মিনাসের আধুনিকীকরণের কাজ, মহাসড়ক ও সড়কপথ সংস্কারের অনেক বড় প্রকল্প আর বালাসাহেব ঠাকরের নামে ‘আপলা দাওয়াখানে’ এর শুভ উদ্বোধন। এই প্রতিটি প্রকল্প মুম্বাই শহরকে উন্নত এবং সুগম করে তুলতে অনেক বড় ভূমিকা পালন করতে চলেছে। কিছুক্ষণ আগে মুম্বাইয়ের ঠেলাওয়ালা, রেলপথ ও সড়ক পথের দুপাশে পসরা সাজিয়ে বসা ছোট ছোট ব্যবসায়ীদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টেও পিএম স্বনিধি যোজনার মাধ্যমে মঞ্জুর করা আর্থিক ঋণ হস্তান্তর করা হয়েছে। এজন্য আমি সমস্ত সুবিধাভোগীদের আর প্রত্যেক মুম্বাইবাসীকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই।
ভাই ও বোনেরা,
স্বাধীনতার পর আজ প্রথমবার ভারত বড় বড় স্বপ্ন দেখা আর সেই স্বপ্নগুলিকে বাস্তবায়নের সাহস দেখাচ্ছে। না হলে আমাদের দেশে বিগত শতাব্দীর একটা দীর্ঘ সময়কাল শুধু দারিদ্র নিয়ে আলাপ-আলোচনা, বিশ্ববাসী থেকে সাহায্য চাওয়া আর কষ্টেসৃষ্টে দিন কাটিয়ে যেতে হয়েছে। কিন্তু আজ স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে প্রথমবার বিশ্ববাসী ভারতের বড় বড় সংকল্পগুলিকে বিশ্বাস করছেন। সেইজন্য স্বাধীনতার অমৃতকালে বিকশিত ও উন্নত ভারত গড়ে তুলতে ভারতবাসী যতটা উৎসুক ততটাই আমাদের নিয়ে বিশ্ববাসী আশাবাদী। একটু আগেই মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী শিন্ডেজি দাভোসে তাঁর অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করছিলেন। এই অভিজ্ঞতা এখন বিশ্বের সর্বত্র অনুভূত হচ্ছে। ভারতকে গোটা বিশ্বে এখন এতো ইতিবাচক ভাবনা গড়ে ওঠার কারণ হল আজ সবাই অনুভব করছেন যে ভারত এতোদিনে খুব ভালোভাবে তার সামর্থ্যকে কাজে লাগাচ্ছে। আজ প্রত্যেকেই অনুভব করছেন যে ভারত দ্রুত উন্নয়নের জন্য, দেশকে সমৃদ্ধ করার জন্য যা যা করা প্রয়োজন- আজ ভারত তাই করছে। আজ ভারত অভুতপূর্ব আত্মবিশ্বাসে টইটম্বুর। ছত্রপতি শিবাজী মহারাজের প্রেরণায় স্বরাজ এবং সুশাসনের ভাবনা আজকের ভারতে ডবল ইঞ্জিন সরকারের ক্ষেত্রে প্রবলভাবে অনুভূত হচ্ছে।
ভাই ও বোনেরা,
আমরা সেই সময়টা দেখেছি যখন গরিবের কল্যাণের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ দুর্নীতি ও আর্থিক কেলেঙ্কারির মাধ্যমে নয়-ছয় করা হতো। করদাতাদের মনে কর প্রদান নিয়ে বিন্দুমাত্র সংবেদনশীলতা ছিল না। এর ফলে কোটি কোটি দেশবাসীর অনেক লোকসান হয়েছে। বিগত ৮ বছরে আমরা এই দৃষ্টিকোণকে বদলেছি। আজ ভারত নানা ভবিষ্যতমুখী ভাবনা আর আধুনিক দৃষ্টিকোণ নিয়ে নিজের ব্যবহারিক এবং সামাজিক পরিকাঠামো গড়ে তোলার জন্য অর্থ বিনিয়োগ করছে। আজ দেশে একদিকে গৃহহীনদের জন্য গৃহ নির্মাণ, শৌচাগার, বিদ্যুৎ, জল সরবরাহ, রান্নার গ্যাস, বিনামূল্যে চিকিৎসা, নতুন নতুন মেডিকেল কলেজ নির্মাণ, নতুন নতুন এইমস, আইআইটি, আইআইএম-এর মতো পরিষেবা দ্রুত গতিতে নির্মিত হচ্ছে, আর অন্যদিকে আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নীতকরণে ততটাই জোর দেওয়া হচ্ছে। যে ধরণের আধুনিক পরিকাঠামোর কল্পনা এক সময় আমরা করতাম, আজ দেশে তেমন পরিকাঠামোই গড়ে তোলা হচ্ছে। অর্থাৎ দেশে আজ বর্তমানের প্রয়োজন মেটাতে আর ভবিষ্যতের সমৃদ্ধির সম্ভাবনাগুলিকে বাস্তবায়িত করতে একসঙ্গে কাজ করা হচ্ছে। বিশ্বের বড় বড় অর্থনীতির দেশ যখন আজ মন্দার শিকার, সেই কঠিন সময়েও ভারত ৮০ কোটিরও বেশি জনগণকে বিনামূল্যে খাদ্যশস্য সরবরাহ করে কখনও তাদের বাড়িতে উনুন বুজতে দেয়নি। এহেন কঠিন পরিস্থিতিতেও ভারত পরিকাঠামো নির্মাণে অভূতপূর্ব বিনিয়োগ করছে। এটা আজকের ভারতের দায়বদ্ধতাকে তুলে ধরে, আমাদের বিকশিত ভারতের সংকল্পের প্রতিবিম্ব হয়ে ওঠে।
ভাই ও বোনেরা,
উন্নত ভারত নির্মাণের ক্ষেত্রে আমাদের শহরগুলির ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রেও যদি আমরা মহারাষ্ট্রের কথা ধরি, তাহলে দেখবেন আগামী ২৫ বছরে এই রাজ্যের অনেক শহর ভারতের উন্নয়নকে গতি যোগাতে চলেছে। সেইজন্য এই ডবল ইঞ্জিন সরকারের অগ্রাধিকার হল মুম্বাইকে ভবিষ্যতের উপযোগী করে তৈরি করা। আমাদের এই দায়বদ্ধতা আজ মুম্বাইয়ে মেট্রো নেটওয়ার্কের সম্প্রসারণের মধ্যেও প্রতিফলিত। ২০১৪ সাল পর্যন্ত মুম্বাইয়ে মাত্র ১০-১১ কিলোমিটার পথে মেট্রো চলতো। কিন্তু আপনারা ডবল ইঞ্জিন সরকার গড়ে তোলার পরই এই মেট্রো রেলপথ দ্রুত গতিতে সম্প্রসারিত হয়েছে। মাঝে কিছু সময়ের জন্য কাজের গতি কমেছিল ঠিকই, কিন্তু শিন্ডেজি এবং দেবেন্দ্রজির মানিকজোড় একসঙ্গে কাজ শুরু করার পর থেকেই আবার দ্রুত গতিতে কাজ এগিয়ে চলেছে। মুম্বাইয়ে ৩০০ কিলোমিটার মেট্রো নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার দিকে আমরা দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছি।
বন্ধুগণ,
আজ সারা দেশে রেলপথকে আধুনিক করে তোলার জন্য ‘মিশন মোড’এ কাজ চলছে। মুম্বাই লোকাল এবং সার্বিকভাবে মহারাষ্ট্রের রেল যোগাযোগ ব্যবস্থাও এর ফলে উপকৃত হচ্ছে। এক সময় দেশে ধনী ও সম্পন্ন মানুষরা যে ধরণের জীবনযাপনে অভ্যস্ত ছিলেন, যে ধরণের সুযোগ-সুবিধা পেতেন, আমাদের ডবল ইঞ্জিন সরকার সাধারণ মানুষকেও একই রকম আধুনিক সুযোগ-সুবিধা, তেমনি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও দ্রুতগতির রেল যাত্রার অভিজ্ঞতা দিতে চাই। সেজন্য আজ রেল স্টেশনগুলিকেও বিমান বন্দরের মতো উন্নত করা হচ্ছে। এখন দেশের সবচাইতে প্রাচীন রেল স্টেশনগুলির মধ্যে অন্যতম ছত্রপতি শিবাজী মহারাজ টার্মিনাসকেও তেমনি অত্যাধুনিক পরিষেবা সম্পন্ন করে তোলা হবে। আমাদের এই ঐতিহ্য এখন একবিংশ শতাব্দীর ভারতের গরিমা রূপে বিকশিত হতে চলেছে। এখানে লোকাল এবং দূরগামী রেলগাড়ির আসা-যাওয়ার জন্য ভিন্ন প্রকারের পরিষেবা গড়ে উঠবে। আমরা সাধারণ যাত্রীদের উন্নত পরিষেবা প্রদানের লক্ষ্যে, তাঁদের কর্মস্থলে আসা-যাওয়াকে আরও সুগম করতে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছি। এই রেল স্টেশন শুধুই রেলওয়ে পরিষেবায় সীমাবদ্ধ থাকবে না। এটি একটি ‘মাল্টিমডেল কানেক্টিভিটি’র ‘হাব’ হয়ে উঠবে। অর্থাৎ, একই ছাদের তলায় রেলের পাশাপাশি বাস, মেট্রো, ট্যাক্সি, অটো এ রকম নানা যাতায়াত ব্যবস্থা পরস্পরের সঙ্গে সংযুক্ত থাকবে। এর ফলে যাত্রীরা একটি বাধাহীন যোগাযোগ ব্যবস্থা পাবেন। এই ‘মাল্টিমডেল কানেক্টিভিটি হাব’ আমরা দেশের প্রত্যেক শহরে বিকশিত করতে চলেছি।
বন্ধুগণ,
মুম্বাইয়ের লোকাল ট্রেনগুলি আজ আগের থেকে অনেক বেশি আধুনিক। সঙ্গে রয়েছে মেট্রোর ব্যাপক নেটওয়ার্ক। অন্যান্য শহরগুলির সঙ্গে বুলেট ট্রেন এবং বন্দে ভারত ট্রেনের মতো আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা আগামী কয়েক বছরে এই সব কাজ সম্পূর্ণ হলে মুম্বাইয়ের চেহারায় বদলে যাবে। গরিব মজুর থেকে শুরু করে সাধারণ কর্মচারী, দোকানদার এবং বড় বড় ব্যবসা-বাণিজ্য যারা চালান- প্রত্যেকের জীবন এখানে আগের থেকে অনেক বেশি সুবিধাজনক হয়ে উঠবে। চারপাশের জেলাগুলি থেকে যাদেরকে নিয়মিত মুম্বাই যাওয়া-আসা করতে হয় তাঁদের যাতায়াত আরও সুলভ হতে চলেছে। কোস্টাল রোড থেকে শুরু করে ইন্দুমিল স্মারক, নভি মুম্বাই বিমান বন্দর, ট্র্যান্স হারবার লিঙ্ক এ রকম অনেক প্রকল্প মুম্বাইয়ের যাতায়াত ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করে তুলতে চলেছে। ধারাভি এলাকার পুনর্বিকাশ, পুরনো ঘন বসতিগুলির উন্নয়ন- সব কিছুই এখন আমাদের নিয়ন্ত্রণে আসছে। সেজন্য আমি শিন্ডেজি এবং দেবেন্দ্রজিকে শুভেচ্ছা জানাতে চাই। মুম্বাইয়ের সড়কগুলির সংস্কারের জন্য আজ অনেক বড় মাত্রায় যে ভাবে কাজ চলছে- এটাও আমাদের ডবল ইঞ্জিন সরকারের দায়বদ্ধতার প্রতিফলন।
ভাই ও বোনেরা,
আজ আমরা দেশের শহরগুলির সম্পূর্ণ রূপান্তরকরণের কাজ করে চলেছি। পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ থেকে শুরু করে পরিচ্ছন্নতা অভিযানের মাধ্যমে শহরগুলি প্রতিটি সমস্যার সমাধান খোঁজা হচ্ছে। সেজন্য আমরা বিদ্যুৎ চালিত যানবাহনের ওপর এতটা জোর দিচ্ছি আর এই যান বাহন ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে তুলতে পরিকাঠামো গড়ে তুলতে প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো গড়ে তুলছি। আমরা দ্রুত গতিতে জৈব জ্বালানী ভিত্তিক যান-বাহন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চাই। হাইড্রোজেন জ্বালানী ভিত্তিক যানবাহন ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্যও সারা দেশে ‘মিশন মোড’এর কাজ চলছে। শুধু শহরগুলিতে আবর্জনা ব্যবস্থাপনার যে সমস্যা তাকেও আমরা নতুন নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে সমাধানের নানা রকম চেষ্টা করে চলেছি। সেজন্য সারা দেশে আমরা বর্জ্য থেকে সম্পদ আহরণের অনেক বড় অভিযান শুরু করেছি। শহরের নোংরা জল যেন নদীগুলিতে গিয়ে না পড়ে, তা সুনিশ্চিত করতে একের পর এক ‘ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট’ স্থাপন করা হচ্ছে।
বন্ধুগণ,
শহরগুলির উন্নয়নের জন্য দেশের আজ সামর্থ্য এবং রাজনৈতিক ইচ্ছাশক্তি- কোনটারই অভাব নেই। কিন্তু আমাদের আর একটা কথা ভালোভাবে বুঝে নিতে হবে। মুম্বাইয়ের মতো শহরে যে কোন প্রকল্পকে ততক্ষণ দ্রুত গতিতে বাস্তবায়িত করা যায়না যতক্ষণ স্থানীয় প্রশাসনগুলির উন্নয়ন কর্ম অগ্রাধিকার মেনে দ্রুত সম্পন্ন না করা যায়। যখন রাজ্যে উন্নয়নের প্রতি সমর্পিত সরকার থাকে, যখন রাজ্যের শহরগুলিতে সুশাসনের প্রতি সমর্পিত সরকারি ব্যবস্থা থাকে তখনই দ্রুত গতিতে প্রকল্পগুলি বাস্তবায়িত করা সম্ভব হয়। সেজন্য মুম্বাইয়ের উন্নয়নে স্থানীয় প্রশাসনগুলির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মুম্বাইয়ের উন্নয়নের জন্য বাজেটে কোনো অর্থাভাব নেই। শুধু মুম্বাইয়ের জন্য বরাদ্দ প্রতিটি টাকা সঠিকভাবে কাজে লাগাতে হবে। সেই টাকা যদি দুর্নীতির শিকার হয়, সেই টাকা যদি ব্যাঙ্কের লকারে জমা থাকে, যদি উন্নয়নের কাজকে নানা ভাবে থামিয়ে দেওয়ার প্রবৃত্তি থাকে, তাহলে মুম্বাইয়ের ভবিষ্যৎ কীভাবে উজ্জ্বল হবে? মুম্বাইয়ের জনগণ, এখানকার সাধারণ মানুষ নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে থাকবেন, এই শহর উন্নয়নের জন্য ছটফট করতে থাকবে- এ রকম পরিস্থিতি একবিংশ শতাব্দীর ভারতে কখনও মেনে নেওয়া যায়না। আর শিবাজী মহারাজের মহারাষ্ট্রে তো কখনোই মেনে নেওয়া যায়না। আমি মুম্বাইয়ের জনগণের প্রতিটি সমস্যা অনুভব করে অত্যন্ত দায়িত্বের সঙ্গে কথাগুলি বলছি। বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকার হলে, এনডিএ সরকার হলে, কখনও রাজনীতিকে উন্নয়নের পথে অন্তরায় হতে দেয় না। আমাদের জন্য উন্নয়নই সবচেয়ে বড় অগ্রাধিকার। নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য বিজেপি কিংবা এনডিএ সরকার কখনও উন্নয়নের কাজে ব্রেক লাগায় না। কিন্তু আমরা আগের জমানায় মুম্বাইয়ে বার বার এমনটি হতে দেখেছি। পিএম স্বনিধি যোজনা এর একটি জলজ্যান্ত উদাহরণ। আমরা দেশের সমস্ত শহরের গুরুত্বপূর্ণ অংশ ঠেলাওয়ালাদের সাহায্য করার জন্য, রেলপথ ও সড়ক পথের দুপাশে পসরা সাজিয়ে বসা ছোট ছোট ব্যবসায়ীদের সাহায্য করার জন্য এই পিএম স্বনিধি যোজনা চালু করেছি। এর মাধ্যমে আমরা এই অতিক্ষুদ্র ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কোনো রকম গ্যারান্টি ছাড়াই ব্যাঙ্ক থেকে অল্প সুদে ঋণদানের ব্যবস্থা করেছি। সারা দেশে প্রায় ৩৫ লক্ষ ঠেলাওয়ালা, রেলপথ ও সড়ক পথের দুপাশে পসরা সাজিয়ে বসা ছোট ছোট ব্যবসায়ীদের এভাবে ঋণ দিয়েছি। এর মধ্যে মহারাষ্ট্রের ৫ লক্ষেরও বেশি বন্ধুর ঋণও মঞ্জুর করা হয়েছে। আজও ১ লক্ষের বেশি বন্ধুর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে প্রত্যক্ষ অর্থ হস্তান্তরের মাধ্যমে ঋণের টাকা পৌঁছে গেছে। এই কাজ অনেক আগেই হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু মাঝে কিছু সময় এ রাজ্যে ডবল ইঞ্জিন সরকার না থাকার ফলে এই কাজে নানাভাবে বাধা দেওয়া হয়েছে, নানা রকম প্রতিকূলতার সৃষ্টি করা হয়েছে। ক্ষতি হয়েছে সমস্ত সুবিধাভোগীদের। এমনটি যেন আর না হয় তা সুনিশ্চিত করতে দিল্লি থেকে শুরু করে মহারাষ্ট্র পর্যন্ত, মুম্বাই পর্যন্ত সকলের মিলিত প্রচেষ্টা ও উন্নত বোঝাপড়া গড়ে তুলতে হবে।
বন্ধুগণ,
আমাদের মনে রাখতে হবে পিএম স্বনিধি যোজনা নিছকই ঋণ দানের প্রকল্প নয়। এটি আমাদের ঠেলাওয়ালা, রেলপথ ও সড়ক পথের দুপাশে পসরা সাজিয়ে বসা ছোট ছোট ব্যবসায়ীদের আর্থিক সামর্থ্য বাড়ানোর অভিযান। এটাই পিএম স্বনিধি অভিযানের মহৌষধি। আমাকে বলা হয়েছে যে পিএম স্বনিধির সুবিধাভোগীদের ডিজিটাল লেনদেনের প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্য মুম্বাইয়ে ৩২৫টিরও বেশি শিবির চালু করা হয়েছে। এগুলির মাধ্যমে আমাদের হাজার হাজার ঠেলাওয়ালা, রেলপথ ও সড়ক পথের দুপাশে পসরা সাজিয়ে বসা ছোট ছোট ব্যবসায়ী ডিজিটাল লেনদেন শুরু করেছেন। একথা শুনে অনেকেই হয়তো অবাক হবেন যে এতো কম সময়ে সারা দেশে শুধু পিএম স্বনিধি যোজনার সুবিধাভোগীরা প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকার ডিজিটাল লেনদেন করেছেন। যাদেরকে আমরা অশিক্ষিত বলে মনে করি, যাদেরকে আমরা যে কোন ভাষায় অপমানিত করতে থাকি, আমাদের সেই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বন্ধুরা আজ আমার সামনে বসে আছেন, এই ঠেলাওয়ালা, রেলপথ ও সড়ক পথের দুপাশে পসরা সাজিয়ে বসা ছোট ছোট ব্যবসায়ীরা অনলাইন মোবাইলের মাধ্যমে ৫০ হাজার কোটি টাকার লেনদেন করেছেন। তাঁদের এই পরাক্রম, তাঁদের পরিবর্তনের এই পথ নিরাশাবাদীদের মুখের ওপর একটি কড়া জবাব। যারা বলতেন যে এই ঠেলাওয়ালা, রেলপথ ও সড়ক পথের দুপাশে পসরা সাজিয়ে বসা ছোট ছোট ব্যবসায়ীরা ডিজিটাল পেমেন্ট কীভাবে করবেন? ডিজিটাল ইন্ডিয়ার এই সাফল্য প্রমাণ করে যখন ‘সব কা প্রয়াস’ সম্মিলিতভাবে প্রয়োগ করা হয় তখন কোনো কিছুই অসম্ভব নয়। আমি নিশ্চিত ‘সব কা প্রয়াস’এর এই ভাবনা নিয়ে আমরা সবাই মিলেমিশে মুম্বাইয়ের উন্নয়নকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবো। আর আমি আমার ঠেলাওয়ালা, রেলপথ ও সড়ক পথের দুপাশে পসরা সাজিয়ে বসা ছোট ছোট ব্যবসায়ী ভাই ও বোনেদের বলবো, আপনারা আমার সঙ্গে চলুন, আপনারা ১০ পা এগোলে আমি আপনাদের জন্য ১১ পা এগোব। আমি একথা এজন্যই বলছি, আমাদের ঠেলাওয়ালা, রেলপথ ও সড়ক পথের দুপাশে পসরা সাজিয়ে বসা ছোট ছোট ব্যবসায়ী ভাই ও বোনেরা মহাজনদের কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণ নিতেন। সারা দিন বাণিজ্য করার জন্য কারো যদি ১ হাজার টাকা প্রয়োজন হত তাহলে মহাজন আগেই ১০০ টাকা কেটে তার হাতে ৯০০ টাকা দিতেন। আর সন্ধ্যায় গিয়ে যদি ১ হাজার টাকা ফেরত না দিতেন তাহলে পরদিন ঋণ পাওয়া যেত না। আর কোনোদিন যদি পণ্য বিক্রি না হওয়ার ফলে হাজার টাকা ফেরত না দিতে পারতেন, তাহলে সুদের দর বেড়ে যেত। রাতে ছেলে-মেয়েদের নিয়ে খালি পেটে ঘুমাতে হত। এই সমস্ত সমস্যা থেকে আপনাদের বাঁচানোর জন্য আমরা এই পিএম স্বনিধি যোজনা এনেছি।
বন্ধুগণ,
আপনারা যত বেশি ডিজিটাল লেনদেন করবেন ততই মঙ্গল। যখন পাইকারিতে কিনতে যাবেন তখনও ডিজিটাল লেনদেন করুন। যাঁদের সঙ্গে এই ব্যবসা করছেন তাঁদেরকেও বলুন এই ডিজিটাল লেনদেন শিখতে, আর যাঁদেরকে পণ্য বিক্রি করছেন তাঁদেরকে ডিজিটাল লেনদেনের অনুরোধ করুন। তাহলে একদিন দেখবেন এ রকম পরিস্থিতি আসবে যে আপনাদের এক নয়া পয়সাও সুদ দিতে হচ্ছে না। আপনারা কল্পনা করতে পারেন যে আপনাদের কতো টাকা সাশ্রয় হবে। সেই টাকা দিয়ে আপনারা ছেলে-মেয়েদের শিক্ষার ব্যবস্থা ও তাদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করতে অনেক পদক্ষেপ নিতে পারবেন। সে জন্যই আমি বলেছি, বন্ধুগণ, আমি আপনাদের সঙ্গে আছি। আপনারা ১০ পা এগোলে আমি আপনাদের জন্য ১১ পা এগোব- এই প্রতিশ্রুতি দিতেই এসেছি। আপনাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য আজ আপনাদের চোখে চোখ রেখে এই প্রতিশ্রুতি দেওয়ার জন্য মুম্বাইয়ের ভূমিতে এসেছি বন্ধুগণ। আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে এই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের পৌরুষ এবং পরিশ্রম দেশকে একদিন নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দেবে। এই বিশ্বাস নিয়ে আমি আর একবার আপনাদের কাছে এসেছি, কারণ আমি জানি আপনারা দেশের হৃদস্পন্দন। আমি সমস্ত সুবিধাভোগীকে, সমস্ত মুম্বাইবাসীকে সমগ্র মহারাষ্ট্রবাসীকে ও আপনাদের মাধ্যমে সমগ্র দেশবাসীকে এই উন্নয়ন কর্মগুলির জন্য অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই। আমার দৃঢ় বিশ্বাস শিন্ডেজি ও দেবেন্দ্রজির যৌথ প্রয়াসে আপনাদের সমস্ত স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে।
আপনারা সবাই আমার সঙ্গে সমস্বরে বলুন
ভারত মাতার জয়।
ভারত মাতার জয়।
অনেক অনেক ধন্যবাদ।