ওড়িশার মাননীয় রাজ্যপাল শ্রী রঘুবর দাসজী, মুখ্যমন্ত্রী আমার বন্ধু শ্রী নবীন পট্টনায়কজী, কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় আমার সহযোগী শ্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানজী, অশ্বিনী বৈষ্ণবজী, বিশ্বেশ্বর টুডুজী, সংসদে আমার সহকর্মী নিতেশ গঙ্গাদেবজী, সম্বলপুর আইআইএম – এর নির্দেশক প্রফেসর মহাদেব জয়সওয়ালজী, অন্যান্য সম্মানীয় ব্যক্তিবর্গ, ভদ্রমহিলা ও ভদ্রমহোদয়গণ,
আজ ওড়িশার উন্নয়ন যাত্রার ক্ষেত্রে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিন। আমি ওড়িশার জনগণকে প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে নির্মিত ও নির্মীয়মান এই উন্নয়ন প্রকল্পগুলির জন্য অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই। এতে শিক্ষা, রেল, সড়ক, বিদ্যুৎ এবং পেট্রোলিয়াম সংক্রান্ত অনেক প্রকল্প রয়েছে। এই প্রকল্পগুলির মাধ্যমে ওড়িশার গরীব, শ্রমিক, কর্মচারী, দোকানদার, ব্যবসায়ী, কৃষক অর্থাৎ সমাজের সমস্ত শ্রেণীর মানুষই লাভবান হবেন। ওড়িশায় বিভিন্ন পরিষেবা চালু হওয়ার পাশাপাশি, এখানকার নবীন প্রজন্মের হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থানও হবে।
বন্ধুগণ,
আজ দেশ তার এক মহান সুপুত্র প্রাক্তন উপ-প্রধানমন্ত্রী লালকৃষ্ণ আডবাণীজীকে ভারতরত্ন প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দেশের উপ-প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী হিসেবে তাঁর অবদান অনেক দশক ধরে একজন নিষ্ঠাবান সজগ সাংসদ হিসেবে মাননীয় আডবানীজী দেশকে যেভাবে সেবা করেছেন, তা অপ্রতিম। আডবাণীজীর এই সম্মান থেকে প্রমাণ হয় যে, দেশ সেবায় যিনি জীবনোৎসর্গ করেন তাঁকে দেশ কখনও ভোলে না। আমার সৌভাগ্য যে, আমি সর্বদা লালকৃষ্ণ আডবাণীজীর স্নেহ ও জীবন পথে চলার উপযোগী দিক-নির্দেশ পেয়েছি। আমি তাঁর দীর্ঘায়ু কামনা করি। আর ওড়িশার এই মহান ভূমিতে দাঁড়িয়ে সমস্ত দেশবাসীর পক্ষ থেকে তাঁকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই।
বন্ধুগণ,
আমরা শুরু থেকেই ওডিশাকে শিক্ষা ও দক্ষতা বিকাশের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি। বিগত দশকে ওড়িশা যত আধুনিক প্রতিষ্ঠান পেয়েছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পেয়েছে, সেগুলি এই রাজ্যের তরুণদের ভাগ্য বদলে দিচ্ছে। আইসর ব্রহ্মপুর থেকে শুরু করে ভুবনেশ্বরের ইন্সটিটিউট অফ কেমিক্যাল টেকনোলজির মতো অনেক প্রতিষ্ঠান এই রাজ্যে স্থাপন করা হয়েছে। এখন আইআইএম সম্বলপুরও ম্যানেজমেন্টের আধুনিক প্রতিষ্ঠান রূপে ওড়িশার ভূমিকাকে আরও শক্তিশালী করে তুলছে। আমার মনে আছে যে, তিন বছর আগে করোনাকালের মধ্যেই এই আইআইএম ক্যাম্পাসের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের সৌভাগ্য আমার হয়েছিল। অনেক বাধা-বিপত্তি সত্ত্বেও এখন এই অসাধারণ ক্যাম্পাসটি গড়ে উঠেছে। আপনাদের চোখেমুখে আমি যে উৎসাহ দেখতে পাচ্ছি, তা থেকে বুঝতে পারছি যে, এই ক্যাম্পাস আপনাদের কতটা ভালো লাগছে। এর নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত সমস্ত বন্ধুদের আমি প্রশংসা জানাই।
বন্ধুগণ,
বিকশিত ভারতের লক্ষ্য আমরা তখনই অর্জন করতে পারবো, যখন ভারতের প্রতিটি রাজ্য বিকশিত হবে। সেজন্য বিগত বছরগুলিতে আমরা ওড়িশাকে প্রতিটি ক্ষেত্রের উন্নয়নে আগের চেয়ে বেশি সাহায্য করেছি। কেন্দ্রীয় সরকারের প্রচেষ্টায় ওড়িশা আজ পেট্রোলিয়াম ও পেট্রোকেমিকেল ক্ষেত্রেও নতুন উচ্চতা অর্জন করছে। বিগত ১০ বছরে ওড়িশায় পেট্রোলিয়াম ও পেট্রোকেমিকেল ক্ষেত্রে ১ লক্ষ ২৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি বিনিয়োগ হয়েছে। বিগত ১০ বছরে ওডিশা আগের তুলনায় রেলের উন্নয়নে ১২ গুণেরও বেশি বাজেট বরাদ্দ করা হয়েছে। বিগত ১০ বছরে ওড়িশায় প্রধানমন্ত্রী গ্রামীণ সড়ক যোজনার মাধ্যমে প্রায় ৫০ হাজার কিলোমিটার সড়কপথ নির্মিত হয়েছে। রাজ্যে ৪ হাজার কিলোমিটারেরও বেশি নতুন জাতীয় সড়ক নির্মাণ হয়েছে। আজও এখানে তিনটি জাতীয় সড়ক সংশ্লিষ্ট বড় প্রকল্প উদ্বোধন করা হয়েছে। এগুলির মাধ্যমে ঝাড়খন্ড ও ওড়িশার মধ্যে আন্তঃরাজ্য যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও মজবুত হবে। এর ফলে, যাত্রাপথে দূরত্ব ও সময় কমবে। এই এলাকার খনি, বিদ্যুৎ এবং ইস্পাত শিল্পের সম্ভাবনা সম্পর্কে সকলেই জানেন। যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে এই গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপগুলি সম্পূর্ণ এলাকায় নতুন নতুন শিল্পোদ্যোগ স্থাপনের সম্ভাবনা তৈরি করবে, হাজার হাজার যুবক-যুবতীর কর্মসংস্থানও হবে। আজ সম্বলপুর – তালচের রেল বিভাগের রেলপথ দ্বিগুণ করা, ঝার – তরভা থেকে সোনপুর বিভাগ পর্যন্ত নতুন রেল লাইনও চালু হচ্ছে। পুরী – সোনপুর এক্সপ্রেসের মাধ্যমে সুবর্ণপুর বা সোনপুর জেলা আজ রেলপথে যুক্ত হচ্ছে। এর ফলে, এই জেলার ভক্তরা এখন সহজেই ভগবান জগন্নাথের দর্শন লাভে যেতে পারবেন। আমরা নিরন্তর চেষ্টা করে যাচ্ছি যে, যাতে ওড়িশার প্রতিটি পরিবার পর্যাপ্ত এবং সস্তায় বিদ্যুৎ পায়। আজ যে সুপার ক্রিটিক্যাল এবং আল্ট্রাসুপার ক্রিটিকাল থার্মাল প্ল্যান্টের উদ্বোধন এখানে হয়েছে, তার লক্ষ্য এটাই।
ভাই ও বোনেরা,
বিগত ১০ বছরে কেন্দ্রীয় সরকার যত নীতি প্রণয়ন করেছে, সেগুলির মাধ্যমে ওডিশা অনেক লাভবান হয়েছে। আমরা খনি ক্ষেত্রে নতুন সংস্কার এনেছি। খনি নীতি পরিবর্তনের পর ওড়িশার আয় ১০ গুণ বেড়েছে। আগে যেসব রাজ্যে খনিগুলি রয়েছে, সেই রাজ্যের মানুষরা এর দ্বারা লাভবান হ’ত না। আমরা এই নীতিও বদলেছি। কেন্দ্রের বিজেপি সরকার ডিস্ট্রিক্ট মিনারেল ফাউন্ডেশন গড়ে তুলেছে। এর ফলে, খনিজ উৎপাদনের আয়ের একটা অংশ খনি এলাকার উন্নয়নের জন্য বিনিয়োগ করা সুনিশ্চিত হয়েছে। এর ফলে, ওডিশা এখনও পর্যন্ত প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি পেয়েছে। এই অর্থ সংশ্লিষ্ট এলাকার জনগণের কল্যাণে খরচ করা হচ্ছে। আমি ওড়িশার জনগণকে আশ্বস্ত করছি যে, কেন্দ্রীয় সরকার একই সমর্পণ ভাব নিয়ে ভবিষ্যতেও ওড়িশার উন্নয়নের কাজ করে যাবে।
বন্ধুগণ,
আমি এখান থেকে একটি অনেক বড় অনুষ্ঠানে যাবো। খোলা মাঠে সেই অনুষ্ঠান হবে। সেখানকার মেজাজও অন্যরকম হবে। সেজন্য আমি এখানে আপনাদের বেশি সময় নেবো না। কিন্তু, সেখানে আমি একটু বেশি সময় নিয়ে বিস্তারিত বলবো। ১৫ মিনিট পরই আমি সেই অনুষ্ঠান-স্থলে পৌঁছবো। আরেকবার আপনাদের সকলকে এইসব উন্নয়নমূলক প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের জন্য অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই। আর আমার নবীন বন্ধুদের বিশেষ শুভেচ্ছা জানাই।
অনেক অনেক ধন্যবাদ।