মহান নায়ক লাচিত বরফুকনজীর ৪০০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যাঁরা আজ এখানে উপস্থিত রয়েছেন এবং যাঁরা দেশের রাজধানীতে এই উপলক্ষে এসেছেন, তাঁদের সকলকে আমার আন্তরিক অভিনন্দন!
আসামের রাজ্যপাল শ্রী জগদীশ মুখীজী, জনপ্রিয় মুখ্যমন্ত্রী শ্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মাজী, কেন্দ্রে মন্ত্রী পরিষদে আমার সহকর্মী শ্রী সর্বানন্দ সোনোয়ালজী, আসাম বিধানসভার অধ্যক্ষ শ্রী বিশ্বজিৎজী, ভারতের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি রঞ্জন গগৈ, তপন কুমার গগৈজী, আসাম সরকারের মন্ত্রী পীযূষ হাজারিকাজী, সাংসদবৃন্দ এবং আসামের সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত দেশ-বিদেশের যেসব বিশিষ্ট জনরা এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত রয়েছেন।
![](https://cdn.narendramodi.in/cmsuploads/0.85575400_1669364589_1.jpg)
এই অবকাশে আমি পবিত্র আসাম ভূমিকে প্রণাম জানাই। আসাম লাচিত বরফুকনের মতো অদম্য নায়কদের ভারতমাতাকে উপহার দিয়েছে। গতকাল বীর লাচিত বরফুকনের ৪০০তম জন্মবার্ষিকী দেশ জুড়ে পালিত হয়েছে। এই উপলক্ষে দিল্লিতে তিনদিনের বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। আমি অত্যন্ত ভাগ্যবান যে, এই অনুষ্ঠানে আমিও অংশগ্রহণে সুযোগ পেলাম। অনুষ্ঠানটিতে অংশগ্রহণের জন্য আসাম থেকে বহু মানুষ এখানে এসেছেন বলে আমাকে বলা হয়েছে। এই উপলক্ষে ১৩০ কোটি দেশবাসী এবং আসামের জনসাধারণকে আমি অভিনন্দন জানাই। আপনাদের সকলকে অনেক শুভেচ্ছা।
বন্ধুগণ,
দেশ যখন স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসব উদযাপন করছে, সেই সময় বীর লাচিতের ৪০০তম জন্মবার্ষিকী উদযাপনের সুযোগ আমরা পেয়েছি। এটি আসামের ইতিহাসে একটি গৌরবোজ্জ্বল দিক। ভারতের শাশ্বত সংস্কৃতি, শৌর্য্য এবং অস্তিত্বের পরিচয় বহনকারী এই উৎসবকে আমার শ্রদ্ধার্ঘ্য। আজ দেশ জুড়ে দাসত্বের মানসিকতার উর্ধ্বে উঠে বিভিন্ন ঘটনাবলির বিষয়ে গর্ববোধ করার এক পরিবেশ গড়ে উঠেছে। ভারত আজ শুধু তার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যই উদযাপন করছে না, ইতিহাসের নায়কদের কথাও গর্বের সঙ্গে স্মরণ করছে। লাচিত বরফুকনের মতো ভারতমাতার চিরস্মরণীয় সন্তানরা অমৃতকালে গৃহীত বিভিন্ন সংকল্প পূরণের নিরন্তর অনুপ্রেরণার উৎস। তাঁদের জীবনযাত্রা থেকে আমরা আমাদের পরিচয় এবং আত্মসম্মান বোধ সম্পর্কেও ধারণা পাই। পাশাপাশি, দেশের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করার শক্তিও আমরা এদের থেকেই পেয়ে থাকি। এই পুণ্যলগ্নে বীর সাহসী এবং শৌর্য্যপূর্ণ লাচিত বরফুকনকে প্রণাম জানাই।
বন্ধুগণ,
হাজার হাজার বছরের মানবসভ্যতার ইতিহাসে পৃথিবীতে অনেক সভ্যতাই এসেছে। এই সভ্যতাগুলি সাফল্যের শিখরে পৌঁছেছে। বহু সভ্যতা চিরস্থায়ী হয়ে রয়েছে। কিন্তু, কালের নিয়মে অনেক সভ্যতা বিলুপ্ত হয়ে গেছে। আজ সেইসব সভ্যতাগুলির ধ্বংসাবশেষ থেকে ইতিহাস রচনা হচ্ছে। আমাদের পবিত্র ভারত অতীতে বিভিন্ন প্রতিকূল পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছে। বিদেশি আক্রমণকারীদের অকল্পনীয় অত্যাচার আমাদের পূর্ব পুরুষরা সহ্য করেছেন। কিন্তু, এসব সত্ত্বেও ভারত তার চেতনা, শক্তি ও সাংস্কৃতিক গর্ববোধে ভরপুর। এটি সম্ভব হওয়ার কারণ, যখনই আমরা কোনও সঙ্কটের মুখোমুখী হয়েছি, তখনই এমন কিছু ব্যক্তিত্বের আবির্ভাব ঘটেছে, যাঁরা সেই পরিস্থিতিকে সামাল দিয়েছেন। আমাদের অধ্যাত্মিক এবং সাংস্কৃতিক পরিচয়কে যুগে যুগে সাধু-সন্ন্যাসীরা রক্ষা করেছেন। অসিশক্তির মাধ্যমে যারা ভারতকে ধ্বংস করতে চেয়েছিল, তাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করার জন্য ভারতমাতার জঠোরে নায়ক-নায়িকারা জন্ম নিয়েছেন। লাচিত বরফুকন তাঁদেরই অন্যতম। তিনি দেখিয়েছেন, আতঙ্ক এবং ধর্মান্ধ শক্তিকে ধ্বংস করা যায় কিন্তু ভারতীয় জীবন সংস্কৃতির শাশ্বত জ্যোতিটি অনির্বাণ থাকে।
![](https://cdn.narendramodi.in/cmsuploads/0.57659300_1669364608_2.jpg)
বন্ধুগণ,
ভারতের সাংস্কৃতিক ইতিহাসে আসামে অমূল্য ঐতিহ্যের ইতিহাস রয়েছে। এর মধ্যেই আমরা পাই - ভাবধারা ও আদর্শ, সমাজ ও সংস্কৃতি এবং বিশ্বাস ও রীতিনীতির অদ্ভুত এক মেলবন্ধন। অহোম রাজাদের শাসনকালে শিবসাগর শিবদৌল, দেবীদৌল এবং বিষ্ণুদৌল নির্মিত হয়েছিল, যা আজও সমানভাবে পূজিত হয়ে আসছে। কিন্তু, কেউ যদি তরবারির আঘাতে আমাদের শাশ্বত ভাবনাকে পরিবর্তন করার চেষ্টা চালায়, তা হলে আমরাও জানি তাকে কিভাবে মোকাবিলা করতে হয়। আসাম ও উত্তর-পূর্ব ভারত তা দেখিয়ে দিয়েছে। আসামের জনসাধারণ তূর্কি, আফগান ও মুঘল আক্রমণকারীদের বিরুদ্ধে নানা সময়ে লড়াই চালিয়েছে এবং তাদের আসাম ছাড়া করেছে। মুঘলরা গুয়াহাটি দখল করেছিল। কিন্তু, লাচিত বরফুকনের মতো যোদ্ধারা অত্যাচারী মুঘল শাসকদের হাত থেকে আসামকে মুক্ত করেছিলেন। ঔরঙ্গজেব সেই পরাজয়ের গ্লানিকে দূর করতে বহুবারই প্রচেষ্টা চালিয়েছিল কিন্তু প্রত্যেকবারই ব্যর্থ হয়েছিল। বীর লাচিত বরফুকন সরাইঘাটের যুদ্ধে, মাতৃভূমির প্রতি তাঁর সুগভীর ভালোবাসার জন্য যে সাহস দেখিয়েছেন, তা চিরস্মরণীয়। যখনই প্রয়োজন দেখা দিয়েছে, আসাম তার প্রত্যেক নাগরিককে মাতৃভূমি রক্ষার জন্য প্রস্তুত করেছে। আসামের যুবসম্প্রদায়ের সকলেই একেকজন ভূমি সৈনিক। লাচিত বরফুকনের সাহস ও ভয়শূন্য মানসিকতা আসলে আসামেরই পরিচয়। আমরা তাই আজও বলতে পারি যে, “শুনিছানে লোরাহোত, লাচিতের কথা মোঘল বিজয়ী বীর ইতিহাসে লেখা” – অর্থাৎ, ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা তোমরা কি লাচিতের কথা শুনেছো। মোঘল বিজয়ী সেই বীর, যাঁর নাম ইতিহাসে লেখা রয়েছে।
বন্ধুগণ,
ভারতের ইতিহাস হাজার হাজার বছরের প্রাণবন্ত এক ইতিহাস। কিন্তু, আমাদের পরাজিত হওয়ার কয়েকটি শতকের কথাই শুধু বলা হয়। ভারতের ইতিহাস শুধু দাসত্বের ইতিহাসের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। ভারতের ইতিহাস বীর যোদ্ধাদের সাহসের কথা বলে, যাঁরা যুদ্ধে বিজয়ী হিসাবে আবির্ভূত হয়েছেন। ভারতের ইতিহাস নির্যাতনের বিরুদ্ধে অদম্য সাহস ও শৌর্য্যের ইতিহাস। ভারতের ইতিহাস বিজয়ের, যুদ্ধ জয়ের, আত্মবলিদানের ইতিহাস। দুর্ভাগ্যজনকভাবে স্বাধীনতার পরেও আমাদের সেই একই ইতিহাস পড়ানো হয়েছে, যে ইতিহাস দাসত্বের সময়ে রচিত হয়েছিল। যেসব বিদেশিরা আমাদের দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ করেছিল, তাদের এজেন্ডার পরিবর্তন স্বাধীনতার পরেও করা হয়নি। দেশের বিভিন্ন অংশে ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে যে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হয়েছিল, সেই তথ্য ইচ্ছাকৃতভাবে চেপে যাওয়া হয়েছে। আচ্ছা বলুন তো, লাচিত বরফুকনের সাহসের কি কোনও মূল্য নেই? দেশের জাতিসত্ত্বাকে রক্ষা করার জন্য হাজার হাজার আসামের মানুষ মুঘলদের বিরুদ্ধে যে লড়াই করেছিলেন, তার কি কোনও দাম নেই? আমরা জানি, পরাধীনতার সময় শাসকের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিজয়ী হওয়ার অনেক ইতিহাস রয়েছে। মূল ধারার ইতিহাসে অতীতের ভুলগুলিকে সংশোধন করার সুযোগ ছিল, কিন্তু তা করা হয়নি। আজ দিল্লিতে অনুষ্ঠিত এই কর্মসূচির মাধ্যমে সেই পরিবর্তন প্রতিফলিত হচ্ছে। আমি এই ধরনের একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করার জন্য হিমন্তজী ও তাঁর দলের সকল সদস্যকে অভিনন্দন জানাই।
![](https://cdn.narendramodi.in/cmsuploads/0.98123800_1669364622_3.jpg)
বন্ধুগণ,
বীর লাচিত বরফুকনের সাহসিকতার নিদর্শন তুলে ধরতে আসাম সরকার একটি সংগ্রহশালা গড়ে তোলার পরিকল্পনা করেছে। এর মধ্য দিয়ে লাচিত বরফুকন সম্বন্ধে আরও বেশি করে জানার সুযোগ হবে। আসামের ঐতিহাসিক নায়ক-নায়িকাদের সম্মান জানানোর জন্য একটি স্মারক গড়ে তোলার পরিকল্পনা করেছে হিমন্তজীর সরকার। স্বাভাবিকভাবেই এই উদ্যোগগুলি আমাদের তরুণ সম্প্রদায় ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ভারতের মহান সংস্কৃতি সম্পর্কে আরও ভালোভাবে বুঝতে সাহায্য করবে। আসাম সরকার এই উপলক্ষে নতুন যে গান মঞ্চস্থ করেছে, তার কথাগুলি খুব সুন্দর – আসামের আকাশের, আসামের আকাশের ভোতাতোরা তুমি, সাহসের শক্তির পরিভাষা তুমি। অর্থাৎ, আপনি আসামের আকাশের ধ্রুবতারা, আপনি সাহসের প্রতীক। প্রকৃত অর্থে বীর লাচিত বরফুকন আমাদের আজও দেশের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে শক্তি যোগান। ব্যক্তি স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে দেশের স্বার্থকে যে অগ্রাধিকার দিতে হবে, তা আমরা লাচিত বরফুকনের জীবন থেকেই বুঝতে পারি। অন্যকে সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার পরিবর্তে দেশের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেওয়ার জন্যই বীর লাচিত তাঁর মামাকে শাস্তি দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, মামা দেশের চেয়ে বড় নন। অর্থাৎ, ব্যক্তিগত সম্পর্কের থেকেও দেশ অনেক বড়। একবার ভাবুন, বীর লাচিতের সেনাবাহিনীর একজন সাধারণ সৈনিকও কি দারুন শিক্ষা পেয়েছেন। আর এর মধ্য দিয়েই জয় নিশ্চিত হয়েছে। আজ ‘দেশ সর্বাগ্রে’ – এই ভাবনা নিয়ে নতুন ভারত এগিয়ে চলায় আমি অত্যন্ত খুশি।
![](https://cdn.narendramodi.in/cmsuploads/0.10951900_1669364649_4.jpg)
বন্ধুগণ,
যখন কোনও জাতি তার প্রকৃত অতীত ও ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারে, তখন সে ভবিষ্যতের সঠিক দিকে এগোতে পারে। ইতিহাসকে কয়েকটি দশক ও শতকের মধ্যে আবদ্ধ না রাখা আমাদের কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। আজ আসামের বিখ্যাত গীতিকার ভারতরত্ন ভূপেন হাজারিকার গানের সেই দুটি লাইন আমি আবারও উল্লেখ করছি। “মই লাচিতে কৈছো মোর সঘনাই নাম লোরা লুইতপরীয়া ডেকা দল”। অর্থাৎ, আমি লাচিত বলছি, হে ব্রহ্মপুত্রের তীরবাসী যুবসম্প্রদায়, আপনারা আমার নাম সবসময় মনে রাখবেন। আগামী প্রজন্ম যাতে সঠিক ইতিহাস জানতে পারে, তার জন্য আমাদের উদ্যোগী হতে হবে। কিছু আগে আমি লাচিত বরফুকনজীর জীবনের উপর ভিত্তি করে আয়োজিত প্রদর্শনীটি ঘুরে দেখছিলাম। এটি সত্যিই শিক্ষণীয় ও অনুপ্রেরণাদায়ক। তাঁর সাহসিকতার ঘটনাবলি নিয়ে সঙ্কলিত একটি বই প্রকাশ করার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। এই অনুষ্ঠানগুলির মধ্য দিয়ে জনসাধারণ প্রকৃত ইতিহাস ও ঐতিহাসিক ঘটনাবলি সম্পর্কে জানতে পারবেন।
![](https://cdn.narendramodi.in/cmsuploads/0.70103200_1669364662_5.jpg)
বন্ধুগণ,
আমি যখন প্রদর্শনীটি ঘুরে দেখছিলাম, তখন লাচিত বরফুকনের জীবন গাথা নিয়ে একটি নাটক মঞ্চস্থ করা যায় কিনা, সেই বিষয়টিও ভাবছিলাম। আসাম এবং দেশের শিল্পীদের সঙ্গে ছত্রপতি শিবাজী মহারাজকে নিয়ে উদ্যোগ ‘জনতা রাজা নাট্য প্রয়োগ’ – এর সংগে পরিচয় ঘটানো প্রয়োজন। ২৫০-৩০০ জন শিল্পী, কিছু হাতি ও ঘোড়াকে যুক্ত করে দারুন একটি অনুষ্ঠান করার পরিকল্পনা করা যায়। আচ্ছা, আমরা কি দেশের প্রতিটি প্রান্তে লাচিত বরফুকনকে নিয়ে তৈরি থিয়েটার মঞ্চস্থ করতে পারি না? এক ভারত, শ্রেষ্ঠ ভারত – এর ভাবনায় এই উদ্যোগগুলি নেওয়াই যায়। আমাদের দেশের উন্নয়নকে নিশ্চিত করতে হবে। উত্তর-পূর্বাঞ্চল হবে ভারতের বিকাশের চালিকাশক্তি। আমি নিশ্চিত যে, বীর লাচিত বরফুকনের ৪০০তম জন্মবার্ষিকী আমাদের সেই লক্ষ্য পূরণে শক্তি যোগাবে। আরও একবার আমি আসাম সরকারকে, হিমন্তজীকে এবং আসামের জনসাধারণকে আমার আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই। এই পবিত্র অনুষ্ঠানে যোগদানে সুযোগ পেয়ে আমি আনন্দিত। আপনাদের সকলের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।
অনেক ধন্যবাদ।