মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
সবার আগে আমি রাষ্ট্রপতি মহোদয়াজীকে তাঁর অভিভাষণের জন্য ধন্যবাদ জানাই। আমার সৌভাগ্য যে এর আগেও আমি কয়েকজন রাষ্ট্রপতিজীর অভিভাষণের প্রত্যুত্তরে জবাবী ধন্যবাদজ্ঞাপক ভাষণ দিতে পেরেছি। কিন্তু, এবার ধন্যবাদের পাশাপাশি, রাষ্ট্রপতি মহোদয়াজীকে অভিনন্দনও জানাতে চাই। তাঁর দূরদৃষ্টিসম্পন্ন ভাষণের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি মহোদয়াজী আমাদের সকলকে এবং কোটি কোটি দেশবাসীকে আলোকবর্তিকা দেখিয়েছেন। গণতন্ত্রের এই সর্বোচ্চ পদে তাঁর উপস্থিতি যেমন ঐতিহাসিক, তেমনই দেশের কোটি কোটি বোন ও কন্যাদের জন্য অত্যন্ত প্রেরণাদায়ক।
মাননীয় রাষ্ট্রপতি মহোদয়া আমাদের দেশের জনজাতি সমাজের গৌরব বৃদ্ধি করেছেন। আজ স্বাধীনতার এত বছর পর দেশের জনজাতি সমাজ যে গর্ব অনুভব করছে, তাঁদের আত্মবিশ্বাস যেভাবে বেড়েছে, তার জন্য এই সংসদ তথা দেশ মাননীয় রাষ্ট্রপতি মহোদয়ার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবে। রাষ্ট্রপতি মহোদয়াজী তাঁর ভাষণে ‘সংকল্প থেকে সিদ্ধি’ পর্যন্ত যাত্রাপথের এত সুন্দর খসড়া এঁকে দিয়েছেন, যা দেশকে প্রেরণা যোগাবে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, এই আলোচনায় যেসব মাননীয় সদস্যরা অংশগ্রহণ করেছেন, অনেক তথ্য ও পরিসংখ্যান দিয়ে নিজের নিজের রুচি ও প্রবৃত্তি অনুসারে নিজেদের বক্তব্য রেখেছেন, এই কথাগুলি কেউ যখন মনোযোগ দিয়ে শুনেছেন, বোঝার চেষ্টা করেছেন, তখন তাঁরা বুঝতে পেরেছেন যে, কার ক্ষমতা ও যোগ্যতা কতটা, কার উদ্দেশ্য কী ছিল। দেশবাসীও খুব ভালোভাবে তাঁদের মূল্যায়ন করতে পেরেছেন। এই আলোচনায় অংশগ্রহণকারী সকল মাননীয় সদস্যদের আমি হৃদয় থেকে কৃতজ্ঞতা জানাই। কিন্তু আমি দেখছিলাম, গতকাল কয়েকজনের ভাষণের পর সমগ্র সংসদীয় বাস্তু ব্যবস্থা ও তাঁদের সমর্থকরা উৎফুল্ল হয়ে উঠেছিলেন, তাঁরা রাতে হয়তো এত ভালোভাবে শান্তিতে ঘুমিয়েছেন যে, আজ উঠতেই পারেননি। এই ধরনের মানুষদের জন্য কয়েকটি খুব সুন্দর পঙক্তি রয়েছে –
ইয়ে কহ- কহকর হম দিল কো বহলা রহে হ্যায়ঁ,
ইয়ে কহ- কহকর হম দিল কো বহলা রহে হ্যায়ঁ, ও অব চল চুকে হ্যায়ঁ,
ও অব চল চুকে হ্যায়ঁ, ও অব আ রহে হ্যায়ঁ।
অর্থাৎ,
একথা বলে বলে আমরা মনকে বোঝাচ্ছি,
একথা বলে বলে আমরা মনকে বোঝাচ্ছি, তাঁরা এখন রওনা দিয়েছেন,
তাঁরা এখন রওনা দিয়েছেন, তাঁরা এখন আসছেন।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
রাষ্ট্রপতি যখন বক্তব্য রাখছিলেন, তখন কেউ কেউ চুপিসাড়ে চলে গিয়েছিলেন। একজন বড় নেতা মহামান্য রাষ্ট্রপতিজীকে অপমানও করে ফেলেছেন। জনজাতি সম্প্রদায়ের প্রতি ঘৃণা প্রদর্শন করেছেন। এ থেকে বোঝা যায় যে, আমাদের জনজাতি সমাজকে নিয়ে তিনি কী ভাবেন! যখন এই ধরনের বক্তব্য টিভি ক্যামেরার সামনে বলতে শুরু করেন, তখন তাঁর ভেতরের ঘৃণা প্রকাশিত হয়ে পড়ে। আমি খুশি যে, তার অব্যবহিত পরেই তিনি চিঠি লিখে ক্ষমা চেয়ে বাঁচার চেষ্টা করেছেন।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
আমি যখন মাননীয় রাষ্ট্রপতিজীর বক্তব্য শুনছিলাম, তখন মনে হচ্ছিল যে, অনেক কথা সবাই মৌন থেকে স্বীকার করে নিয়েছেন। কারও কোনও আপত্তি নেই। রাষ্ট্রপতিজী তাঁর ভাষণে বলেছিলেন যে, ভারত কোনও এক সময়ে তার অধিকাংশ সমস্যা সমাধানের উপর পরনির্ভরশীল ছিল, সেই দেশ আজ বিশ্বের অনেক সমস্যার সমাধানের মাধ্যম হয়ে উঠেছে। রাষ্ট্রপতিজী একথাও বলেছেন যে, দেশের একটি বৃহৎ সংখ্যক মানুষ যে মৌলিক পরিষেবাগুলির জন্য দশকের পর দশক ধরে অপেক্ষা করেছেন, গত কয়েক বছরে তাঁরা সেই পরিষেবা পেয়েছেন। বড় বড় কেলেঙ্কারি ও সরকারি প্রকল্পে দুর্নীতির সমস্যা থেকে দেশ এতদিনে মুক্তি পেয়েছে। পলিসি প্যারালিসিস – এর আলোচনা থেকে বেরিয়ে আজ দেশ ও তার পরিচয় দ্রুত উন্নয়ন ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন সিদ্ধান্তগুলির মাধ্যমে উজ্জ্বল হয়েছে। আমার আশঙ্কা ছিল যে, অনেকেই হয়তো মাননীয় রাষ্ট্রপতি মহোদয়ার এই কথাগুলি শুনে আপত্তি তুলবেন, বিরোধিতা করবেন। রাষ্ট্রপতিজী কি এভাবে বলতে পারেন? কিন্তু, আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে, কেউ বিরোধিতা করেননি, সকলেই মেনে নিয়েছেন। মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, ১৪০ কোটি দেশবাসীর কাছে আমি কৃতজ্ঞ যে, তাঁদের প্রচেষ্টার পরিণাম রাষ্ট্রপতি মহোদয়ার বক্তব্যের মাধ্যমে সংসদের সকলে মেনে নিয়েছেন। এর থেকে বড় গর্বের বিষয় আর কী হতে পারে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, সমস্যা ছাড়া জীবন হয় না। সমস্যা থাকে, কিন্তু তা থেকেও বেশি সামর্থ্য থাকে ১৪০ কোটি দেশবাসীর উৎসাহে। আবার ১৪০ কোটি দেশবাসীর এই সামর্থ্য এসব সমস্যা থেকেও অনেক বেশি শক্তিশালী ও বড়। এত বড় ভয়ঙ্কর মহামারী আর যুদ্ধের ফলে অনেক দেশে বিনাশ ও অস্থিরতার আবহ জনগণকে ব্যতিব্যস্ত করে তুলেছে। অনেক দেশে দ্রব্যমূল্য আকাশছোঁয়া, বেকারত্ব ও খাদ্যসঙ্কটে মানুষ নাজেহাল। এমনকি আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলির অবস্থাও শোচনীয়! এরকম পরিস্থিতিতে প্রত্যেক ভারতবাসী গর্বের সঙ্গে বলতে পারেন যে, ভারত এখন বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশে পরিণত হয়েছে। আজ সারা পৃথিবীতে ভারত একটি ইতিবাচক আশা-ভরসার স্থল হয়ে উঠেছে। আর এই সময়েই ভারত বিশ্বের সমৃদ্ধ দেশগুলির গোষ্ঠী জি-২০’র সভাপতিত্বের দায়িত্ব পেয়েছে।
এটা দেষের জন্য অত্যন্ত গর্বের বিষয়। ১৪০ কোটি ভারতবাসীর জন্য অত্যন্ত গর্বের বিষয়। কিন্তু আমার মনে হয়, আগে এমন মনে হতো না, কিন্তু এখন বুঝতে পারি; আর এতেও অনেকেই অখুশি হয়েছেন দেখে আমি অবাক। ১৪০ কোটি দেশবাসীর এতে দুঃখ হওয়ার কথা নয়, তাঁরা যেন আত্মনিরীক্ষণ করেন যে, কারা এতে অখুশি।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, আজ বিশ্বে প্রতিটি স্বীকৃত সংস্থা ও আন্তর্জাতিক প্রভাবগুলি নিয়ে যাঁরা গভীরভাবে অধ্যয়ন করেন, সেই সমস্ত বিশেষজ্ঞরা ভারতের প্রতি বিশ্বাস রাখছেন। কেন? আজ এর উত্তর লুকিয়ে আছে ভারতের রাজনৈতিক স্থিরতা ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতায়, ভারতের ক্রমবর্ধমান সামর্থ্য আর সম্ভাবনায়।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে যা চলছে, তাকে যদি কিছু উদাহরণ দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করি, তা হলে আপনারা বুঝতে পারবেন। আপনারা দেখেছেন, বিগত দুই – তিন দশক ধরে ভারতে রাজনৈতিক অস্থিরতা ছিল। কিন্তু, আজ ভারতে একটি স্থির ও সাহসী পদক্ষেপ গ্রহণকারী সরকার রয়েছে। সংখ্যাধিক্যের সমর্থনে গড়ে ওঠা এই সরকারের প্রতি সকলের ভরসা থাকা স্বাভাবিক। এই সরকার বাধ্য হয়ে কোনও সংস্কারের পথে হাঁটছে না, আগে থেকে যে সংস্কারগুলির পরিকল্পনা ছিল, সেগুলিকেই বাস্তবায়িত করা হচ্ছে। আর আমরা সেই পথ থেকে সরে আসবো না। আমরা পূর্বনির্ধারিত পথেই এগিয়ে যাব। দেশকে সময়ের চাহিদা অনুসারে, যা যা প্রয়োজন, তা দিতে থাকব।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
আমি আরেকটি উদাহরণ দেব। করোনার সঙ্কটকালে আমরা ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’ টিকা তৈরি করেছি। ভারতে বিশ্বের সর্ববৃহৎ টিকাকরণ অভিযান চালিয়েছি। শুধু তাই নয়, দেশের কোটি কোটি নাগরিককে বিনামূল্যে টিকাকরণ করিয়েছি। পাশাপাশি, ১৫০টিরও বেশি দেশে প্রয়োজনীয় জীবনদায়ী ওষুধ ও টিকা পাঠিয়েছি। আজ বিশ্বের অনেক দেশ অত্যন্ত গর্বের সঙ্গে অনেক আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতকে ধন্যবাদ জানায়। ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বের জন্য গর্ব বোধ করে। এর একটি তৃতীয় দিকও রয়েছে। এই সঙ্কটকালে ভারতের ডিজিটাল পরিকাঠামো যত দ্রুতগতিতে শক্তিশালী হয়ে উঠেছে, তা দেশকে আধুনিকতার নতুন মাত্রা দিয়েছে। গোটা বিশ্ব যে এই বিষয়টি গভীর মনোযোগ দিয়ে অধ্যয়ন করছে, তা আমি সম্প্রতি জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনেও অনুভব করেছি। সবাই একথা জানতে আগ্রহী ছিলেন যে, ভারত ডিজিটাল ক্ষেত্রে এত দ্রুতগতিতে কিভাবে এগিয়ে চলেছে। করোনা সঙ্কটকালে বিশ্বের অনেক সমৃদ্ধ দেশ তাদের নাগরিকদের আর্থিক সাহায্য পৌঁছে দিতে চাইছিল, নোট ছাপছিল, কিন্তু বিতরণ করতে পারছিল না। অথচ, ভারত এক সেকেন্ডেরও কম সময়ে কয়েক লক্ষ কোটি টাকা তার দেশবাসীর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পৌঁছে দিতে পেরেছে। একটা সময় ছিল, যখন ছোট ছোট প্রযুক্তির জন্য আমাদের দেশে হাহাকার ছিল। কিন্তু, আজ দেশের সবাই পার্থক্য অনুভব করতে পারছেন। প্রযুক্তির ক্ষেত্রে দেশের শক্তি কতটা, তা বোঝা যায়, যখন বিশ্বের বড় বড় দেশ টিকাকরণের পর তার নাগরিকদের শংসাপত্র দিতে পারছিল না। কিন্তু আমাদের দেশ কো-উইন এর মাধ্যমে টিকা নেওয়ার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই সুবিধাভোগীর মোবাইল ফোনে শংসাপত্র পাঠাতে পেরেছে। এই শক্তি আমরা দেখিয়েছি।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
ভারতে অনেক নতুন সম্ভাবনা রয়েছে। এই করোনার কালখন্ডে ভারতের শক্তিশালী মূল্য ও সরবরাহ-শৃঙ্খল বিশ্বের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। অনেকে এই বিষয়টি দেরীতে বুঝবেন। ভারত আজ এই লক্ষ্যে একটি ‘ম্যানুফ্যাকচারিং হাব’ রূপে উঠে আসছে আর বিশ্ব ভারতের এই সমৃদ্ধিকে নিজেদের সমৃদ্ধি রূপে দেখছে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
নিরাশায় ডুবে থাকা কিছু মানুষ এদেশের প্রগতিকে স্বীকার করতে পারছেন না। তাঁরা ভারতের জনগণের সাফল্যকে দেখতে পারছেন না। এটি ১৪০ কোটি দেশবাসীর সামর্থ্যের উপর আস্থার পরিণাম, যার ফলে আজ বিশ্বে দামামা বাজানো শুরু হয়েছে। ভারতের জনগণের পরিশ্রমের মাধ্যমে অর্জিত সাফল্য তাঁদের চোখে পড়ে না।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
বিগত ন’বছরে ভারতে ৯০ হাজার স্টার্টআপ চালু হওয়ার মাধ্যমে আজ দেশ স্টার্টআপ বিশ্বে তৃতীয় স্থানে পৌঁছে গেছে। একটি অনেক বড় স্টার্টআপ ইকো সিস্টেম আজ দেশের ২-টিয়ার ও ৩-টিয়ার শহরগুলিতেও পৌঁছে গেছে। ভারতের প্রত্যেক প্রান্তে পৌঁছে গেছে। ভারতের নবীন প্রজন্মের সামর্থ্যের পরিচয় উজ্জ্বল হচ্ছে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
এত কম সময়ে আর করোনার কঠিন সময়ে দেশের ১০৮টি স্টার্টআপ ইউনিকর্নে পরিণত হয়েছে। যে স্টার্টআপগুলি বছরে ৬-৭ হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য করে, তাদের ইউনিকর্ন বলা হয়। ভারতের নবীন প্রজন্ম তাঁদের এই সামর্থ্য গড়ে তুলেছে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
আজ ভারত বিশ্বে মোবাইল ফোন উৎপাদনের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশে পরিণত হয়েছে। অন্তর্দেশীয় বিমান যাত্রার নিরিখে ভারত এখন বিশ্বের তৃতীয় স্থানে পৌঁছেছে। শক্তির ব্যবহারকে বিশ্বে একটি উন্নয়নের একটি মাপদন্ড বলে মনে করা হয়। আজ ভারত শক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম ভোক্তা দেশে পরিণত হয়েছে। পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির ক্ষমতায় আমরা বিশ্বে চতুর্থ স্থানে পৌঁছেছি। ক্রীড়া ক্ষেত্রে একটা সময় আমাদের তেমন আন্তর্জাতিক পরিচয় ছিল না। আজ ক্রীড়া বিশ্বের প্রতিটি স্তরে ভারতীয় খেলোয়াড়রা তাঁদের পারদর্শিতা ও সামর্থ্য দেখাচ্ছেন।
শিক্ষা সহ প্রতিটি ক্ষেত্রে আজ ভারত এগিয়ে চলেছে। প্রথমবার উচ্চ শিক্ষা ক্ষেত্রে ভর্তির সংখ্যা ৪ কোটিরও বেশি হয়েছে। শুধু তাই নয়, শিক্ষার সমস্ত ক্ষেত্রে মেয়েদের অংশীদারিত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশে ইঞ্জিনিয়ারিং ও মেডিকেল কলেজ এবং অন্যান্য প্রফেশনাল কলেজের সংখ্যা দ্রুতগতিতে বাড়ছে। ক্রীড়া ক্ষেত্রে কমনওয়েলথ থেকে শুরু করে অলিম্পিক সর্বত্র আমাদের ছেলেমেয়েরা অসাধারণ সাফল্য আনছে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
রাষ্ট্রপতি মহোদয়া তাঁর ভাষণে এরকম অনেক বিষয় উল্লেখ করেছেন। দেশ এখন আত্মবিশ্বাসে ভরপুর। স্বপ্ন ও প্রতিজ্ঞা নিয়ে যেভাবে এগিয়ে চলেছে, যাঁরা নিরাশায় ডুবে রয়েছেন, তা কেমনভাবে উপলব্ধি করবেন। আমার এই প্রসঙ্গে কাকা হাথরসীর একটি কবিতার লাইন মনে পড়ছে। তিনি লিখেছিলেন – “আগা – পিছা দেখকর কিউ হতে গমগীন, জ্যায়সি জিসকি ভাবনা অ্যায়সা দিখে সিন”। অর্থাৎ, “সামনে – পিছনে দেখে দুঃখ কেন পাও, যাঁর যেমন ভাবনা, সে তেমনই দেখেন”।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
এই হতাশার পেছনে একটি কারণ রয়েছে। তা হ’ল জনগণের রায়। বারবার প্রত্যাখ্যাত হয়ে তাঁরা আরও হতাশায় ডুবে যাচ্ছেন। বিগত ১০ বছরে অর্থাৎ ২০০৪-২০১৪ সালের মধ্যে ভারতের অর্থনীতি সবচেয়ে দুর্দশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছিল। দ্রব্যমূল্য ডবল ডিজিটে ছিল। সেজন্য বর্তমান সরকারের সাফল্য তাঁদের তো নিরাশ করবেই। তাঁরা যে দারিদ্র ও বেকারত্ব দূর করার প্রতিশ্রুতি দিয়েও তা রাখতে পারেননি!
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
একবার দুই যুবক বনে শিকার করতে গেল এবং তারা গাড়িতে বন্দুক রেখে কিছুক্ষণ ধরে হাঁটাহাঁটি শুরু করল। তারা ভাবে, একটু হাত-পায়ের জড়তা ছাড়িয়ে নেওয়া যাক। কিন্তু তারা তো বাঘ শিকার করতে গিয়েছিল আর ভেবেছিল যে আরও এগিয়ে গেলে তারা বাঘ দেখতে পাবে। কিন্তু এমন হল যে তারা গাড়ি থেকে নামার একটু পরেই একটি বাঘ সেখানে হাজির হয়। কিন্তু তাদের বন্দুক যে গাড়িতে পড়ে রয়েছে । বাঘ এসে গেছে, এখন তারা কী করবে? তখন তারা পকেট থেকে লাইসেন্স বের করে বাঘকে দেখাল যে আমার কাছে বন্দুকের লাইসেন্স আছে। জঙ্গলে বেড়াতে গেলে যদি আপনাকে বাঘ আক্রমণ করে, তাকে কি বন্দুকের লাইসেন্স দেখাবেন? তাঁরা বেকারত্ব দূর করার নামে আইন প্রণয়ন করেছিলেন, কিন্তু তা কার্যকর করেননি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে ঐ ১০ বছরে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি ও আর্থিক কেলেঙ্কারি হয়েছে। ইউপিএ সরকারের শাসনকালে ঐ ১০ বছরে কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী ভারতের সর্বত্র সন্ত্রাসবাদী হামলা মানুষকে সন্ত্রস্ত করে রেখেছিল। জম্মু – কাশ্মীর থেকে শুরু করে উত্তর-পূর্ব – সর্বত্র দেশবাসী হিংসার শিকার হয়েছিলেন। সেই ১০ বছরে সমস্ত আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতের কন্ঠস্বর এত দুর্বল ছিল যে, কেউ আমাদের কথা শুনতে প্রস্তুত ছিল না।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
তাঁদের হতাশার আরেকটি কারণ হ’ল – ১৪০ কোটি ভারতবাসীর সামর্থ যেভাবে প্রস্ফুটিত হচ্ছে, ২০০৪ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত এ ধরনের প্রস্ফুটনের সুযোগ তাঁরা করে দিতে পারেননি। তাঁরা প্রতিটি সুযোগকে সমস্যায় রূপান্তরিত করেছেন। তথ্য প্রযুক্তি যখন দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছিল, সেই সময় তাঁরা টু-জি’তে আটকে ছিলেন। সুযোগগুলিকে সমস্যায় রূপান্তরিত করলেন। যখন অসামরিক পরমাণু চুক্তি নিয়ে আলোচনা হয়েছিল, তখন তাঁরা টাকা দিয়ে ভোট কেনার চেষ্টা করেছেন।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
২০১০ সালের কমনওয়েলথ গেমস্ ভারতে হওয়া সত্ত্বেও তাঁরা সেটাকে ক্রীড়ার উন্নতিতে কাজে লাগাতে পারেননি। সেই সময় তাঁরা কমনওয়েলথ কেলেঙ্কারিতে ফেঁসে বিশ্ব মঞ্চে বদনাম কুড়োলেন।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
যে কোনও দেশের উন্নতি ক্ষেত্রে শক্তি উৎপাদনের একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে। কিন্তু, এর বিপরীতে এই শতাব্দীর প্রথম ও দ্বিতীয় দশকের ঐ দশ বছরে ভারতে ব্ল্যাক আউট নিয়ে আলোচনা হ’ত। গোটা বিশ্বে তখন ভারতের ব্ল্যাক আউট নিয়ে আলোচনা হ’ত। সেই সময় দেশ কয়লা কেলেঙ্কারির জন্য বদনাম হ’ল।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
সেই সময়ে সারা দেশে সন্ত্রাসবাদ তুঙ্গে। ২০০৮ – এর সন্ত্রাসবাদী হামলার কথা কেউ ভুলতে পারবেন না। কিন্তু সরকার সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে বুক ফুলিয়ে চোখে চোখ রেখে লড়াই করা সাহস দেখায়নি বলেই তাঁদের আমলে সন্ত্রাসবাদীরা এত সাহসী হয়ে উঠেছিল। সারা দেশে ১০ বছর ধরে রক্তগঙ্গা বয়ে গেছে, অসহায় নির্দোষ মানুষরা প্রাণ হারিয়েছেন। এমন দুর্দিন এসেছিল।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
যখন এলওসি এবং এলএসি-তে ভারতীয় সৈনিকদের সামর্থের শক্তি দেখানোর সুযোগ এসেছিল, সেই সময় ভারত সরকার প্রতিরক্ষা চুক্তি কেলেঙ্কারি থেকে শুরু করে হেলিকপ্টার কেলেঙ্কারির জন্য বদনাম হয়েছে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
এজন্য ২০১৪’র আগের দশকটিকে দেশের জন্য ‘দ্য লস্ট ডেকেড’বা ‘হারিয়ে যাওয়া দশক’ হিসাবে মনে রাখা হবে। আর আজ ২০২০ থেকে ২০৩০ – এর দশককে গোটা বিশ্ব ভারতের দশক রূপে দেখছে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
গণতন্ত্রে সমালোচনার গুরুত্বকে আমি স্বীকার করি। ভারত যেহেতু গণতন্ত্রের জননী, কয়েক শতাব্দী ধরে আমাদের শিরা-ধমনীতে গণতন্ত্র অঙ্কুরিত হয়ে চলেছে, সেজন্য আমরা গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করার জন্য সমালোচনাকে একটি অগ্নিশুদ্ধির উপায় বলে মনে করি। কিন্তু, দুর্ভাগ্যবশত অনেক দিন ধরেই দেখছি যে, আমাদের বিরোধীরা ভালোভাবে প্রস্তুতি নিয়ে আসেন না, সুন্দরভাবে বিশ্লেষণ করে সমালোচনা করেন না। সমালোচনার বদলে গত ৯ বছর ধরে তাঁরা শুধু অভিযোগ ও দোষারোপ আর গালিগালাজ করে গেছেন। নির্বাচনে হারলে ইভিএম খারাপ, নির্বাচন কমিশনকে দোষারোপ, আদালতের সিদ্ধান্ত পক্ষে না এলে, এমনকি সুপ্রিম কোর্টকেও গালিগালাজ ও সমালোচনা করতে তাঁরা পিছপা হননি।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
দুর্নীতির তদন্ত হলে সংশ্লিষ্ট এজেন্সিকে গালিগালাজ। সেনাবাহিনী পরাক্রম দেখালে তাদের শৌর্যগাথা জনমানসে একটি নতুন বিশ্বাস জাগিয়ে তুল্বে, এই ভয়ে তাঁরা সেনাবাহিনীর প্রতিও অবিশ্বাস ব্যক্ত করেছেন।
কখনও দেশের অর্থনীতিতে অগ্রগতির খবর এলে, বিশ্বের সমস্ত স্বীকৃত প্রতিষ্ঠান ভারতের অর্থনীতির প্রশংসা করলে তাদের প্রতি অবিশ্বাস ব্যক্ত করা, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়াকে অবিশ্বাস করা – এটাই তাঁদের চরিত্র।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
বিগত ৯ বছরে আমরা কিছু মানুষকে নিঃস্ব হতে দেখেছি। তাঁরা ইতিবাচক সমালোচনার জায়গায় বাধ্যতামূলক সমালোচনার পথ বেছে নিচ্ছেন।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
দুর্নীতির তদন্তকারী বিভিন্ন সংস্থা সম্পর্কে সংসদে এমন সব মন্তব্য করা হয়েছে, আর এতে সমস্ত বিরোধী দলের লোক এমনভাবে সুর মিলিয়েছেন যে আমি অবাক হয়েছি।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
আমি ভেবেছিলাম যে, দেশের জনগণ যেভাবে তাঁদের নির্বাচনে প্রত্যাখান করেছেন, তাঁরা নিশ্চয়ই এক মঞ্চে চলে আসবেন। কিন্তু তখন তা হয়নি। কিন্তু, ইডি-কে ধন্যবাদ জানাতে হবে যে, তাদের তদন্তের ফলে এরা সবাই এখন এক মঞ্চে চলে এসেছেন।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
আমরা জানি এখানে অনেকেই আছেন, যাঁরা হার্বার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশুনাকে খুব গুরুত্ব দেন। করোনার সঙ্কটকালে কংগ্রেস থেকে বলা হয়েছিল যে, ভারতের দূরাবস্থা নিয়ে হার্ভার্ডে কেস স্টাডি হবে। এমনকি, গতকালও সংসদে একজন এরকম মন্তব্য করেছেন। কিন্তু, মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, বিগত বছরগুলিতে হার্ভার্ডে একটি খুব গুরুত্বপূর্ণ কেস স্টাডি হয়েছে আর তার বিষয়টি কী ছিল, তা আমি এই সভাকক্ষে অবশ্যই বলতে চাই। সেটি হ’ল ‘দ্য রাইজ অ্যান্ড ডিক্লাইন অফ ইন্ডিয়াজ কংগ্রেস পার্টি’ অর্থাৎ ‘ভারতে কংগ্রেস দলের উত্থান ও পতন’। আর আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে, ভবিষ্যতে শুধু হার্ভার্ড নয়, বিশ্বের বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে এই বিষয় নিয়ে অধ্যয়ন হবে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
এ ধরনের মানুষের কথা ভেবেই হয়তো দুষ্যন্ত কুমার লিখেছিলেন –
‘তুমহারে পাঁও কে নীচে, কোই জমীন নেহীঁ,
কমাল ইয়ে হ্যায় কি ফির ভী তুমহেঁ য়কীন নহীঁ’।
অর্থাৎ,
তোমার পায়ের নীচে কোনও মাটি নেই,
আর মজার কথা হ’ল যে একথা তুমি বিশ্বাস করো না।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
এই মানুষেরা অন্তঃসারশূন্য ও পরস্পরবিরোধী কথা বলতে অভ্যস্ত। ২০১৪ সাল থেকে তাঁরা বলে যাচ্ছেন, ভারত নাকি দুর্বল হয়ে পড়ছে। কিন্তু, একথা কোনও ভারতবাসীই বিশ্বাস করে না। ভারত এখন এত শক্তিশালী যে প্রয়োজনে অন্য দেশকে ধমকে সিদ্ধান্ত বদলে দিতে পারে। আরে আগে তো এটা ঠিক করো, ভারত দুর্বল হয়েছে নাকি শক্তিশালী হয়েছে?
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
যে কোনও জীবন্ত সংগঠন বা ব্যবস্থার সঙ্গে মাটির সংস্পর্শ থাকতে হয়। জনগণ কী ভাবছেন, তা থেকে শেখার চেষ্টা করতে হয়। আর প্রয়োজন অনুসারে, সময় থাকতে নিজেদের পথ বদল করতে হয়। যাঁরা অহঙ্কারে ডুবে থাকেন, আর ভাবেন যে, আমরাই সবচেয়ে বেশি জানি, আমরা যা ভাবছি, তাই ঠিক, তাঁরাই মোদীকে গালি দিয়ে ও মিথ্যে দোষারোপ করে নিজেদের পথ খোঁজার কথা ভাবতে পারেন।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
কিন্তু, মোদীর উপর দেশবাসীর এই ভরসা খবরের কাগজের হেডলাইন থেকে জন্ম নেয়নি। দেশের জনগণের জন্য, দেশের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য কঠোর পরিশ্রমই এই ভরসার উৎস।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
দেশবাসী কেন মোদীকে ভরসা করে এটা তাঁরা বুঝতে পারবেন না। মিথ্যা দোষারোপ করলে আমার দেশের যে ৮০ কোটি মানুষ প্রায় তিন বছর ধরে বিনামূল্যে রেশন পাচ্ছেন, তাঁরা কী বিরোধীদের বিশ্বাস করবেন?
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
‘এক দেশ, এক রেশন কার্ড’ – এর মাধ্যমে যাঁরা দেশের যে কোনও প্রান্ত থেকে রেশন পাচ্ছেন, যে ১১ কোটি কৃষকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে বছরে তিন বার করে পিএম কিষাণ সম্মান নিধির টাকা পৌঁছায়, তাঁরা কী আপনাদের দোষারোপ বিশ্বাস করবেন?
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
যাঁরা আপনাদের আমলে ফুটপাতে খোলা আকাশের নীচে কিংবা নোংরা বস্তিতে থাকতে বাধ্য হতেন, সেরকম ৩ কোটিরও বেশি মানুষরা আজ যখন পাকা বাড়িতে থাকতে শুরু করেছেন, তাঁরা কী আপনাদের এই গালি শুনে এই দোষারোপগুলি মেনে নেবেন?
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
যে কোটি কোটি মানুষ বিনামূল্যে রান্নার গ্যাস সংযোগ থেকে উপকৃত হয়েছেন, যে ১১ কোটি বোন ইজ্জত ঘর পেয়েছেন, উন্মুক্ত স্থানে শৌচকর্ম থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন, তাঁরা কি আপনাদের দোষারোপ মেনে নেবেন?
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
স্বাধীনতার ৭৫ বছর পর যে ৮ কোটি পরিবার আজ নলবাহিত পানীয় জল পেয়েছেন, তাঁরা কি আপনাদের দোষারোপ মেনে নেবেন? আয়ুষ্মান ভারত যোজনার মাধ্যমে যে ২ কোটি পরিবার উপকৃত হয়েছে, তাঁরা কি আপনাদের দোষারোপ মেনে নেবেন?
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
তাঁদের গালিগালাজ, তাঁদের দোষারোপ – সেইসব ভারতবাসী মেনে নেবে না, যাঁরা দশকের পর দশক ধরে নানা সমস্যায় জর্জরিত ছিলেন।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
১৪০ কোটি ভারতবাসীর আশীর্বাদ আমার সবচেয়ে বড় সুরক্ষাকবচ। গালির অস্ত্র দিয়ে, মিথ্যা দোষারোপের অস্ত্র দিয়ে এই সুরক্ষাকবচকে আপনারা নষ্ট করতে পারবেন না।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
আমাদের সরকার কিছু বিষয়ে দায়বদ্ধ। সমাজের বঞ্চিত শ্রেণীকে উন্নয়নের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার প্রদানের সংকল্প নিয়ে আমরা এগিয়ে চলেছি। অনেক দশক ধরে দলিত, পিছিয়ে পড়া ও জনজাতি সম্প্রদায়ের মানুষদের যে অসহায় অবস্থা ছিল, তা থেকে আমরা তাঁদের মুক্তি দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। না হলে, আমাদের সংবিধান প্রণেতারা সাধারণ মানুষের স্বার্থে যা যা ভেবেছিলেন, সেগুলি কখনই বাস্তবায়িত হবে না। ২০১৪ সালের পর এই পরিবারগুলি সবচেয়ে বেশি সরকারের গরীব কল্যাণ প্রকল্পগুলির মাধ্যমে উপকৃত হয়েছেন। দেশের দলিত, পিছিয়ে পড়া ও জনজাতি সম্প্রদায়ের মানুষদের আগে অনেক দূর থেকে জল আনতে হ’ত – এখন তাঁদের সেই সমস্যা দূর হয়েছে, স্বাধীনতার ৭৫ বছর পর তাঁদের বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ পৌঁছেছে। অনেক কোটি কোটি পরিবার এখন পাকা বাড়িতে থাকতে শুরু করেছেন।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
যে বস্তিগুলির কথা তাঁরা শুধু নির্বাচনের সময় ভাবতেন, আজ সেখানে ভালো সড়কপথ, বিদ্যুৎ সরবরাহ, পানীয় জল সরবরাহ এবং ৪-জি নেটওয়ার্ক সংযোগ পৌঁছে যাচ্ছে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
গোটা দেশ আজ একজন জনজাতি পরিবারের কন্যাকে মাননীয় রাষ্ট্রপতি মহোদয়া রূপে দেখে গর্ববোধ করছে। এই জনজাতি মানুষরা দেশ স্বাধীন করার জন্য লড়াই লড়েছেন, আত্মবলিদান দিয়েছেন; আজ তাঁদের যোগ্য সম্মান জানানো হচ্ছে, জনজাতি গৌরব দিবস পালন করা হচ্ছে। আর এই মহান জনজাতি পরম্পরার প্রতিনিধি রূপে একজন মহিলা আজ দেশকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এই অধিকার আমরা অর্জন করেছি।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
আমরা সকলে জানি যে, মা শক্তিশালী হলে গোটা পরিবার শক্তিশালী হয়। পরিবার শক্তিশালী হলে সমাজ শক্তিশালী হয়, আর তবেই দেশ শক্তিশালী হয়। আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে, আমাদের সরকার দেশের মা, বোন ও কন্যাদের সবচেয়ে বেশি সেবা করার সৌভাগ্য পেয়েছে। অত্যন্ত সংবেদনশীলতার সঙ্গে তাঁদের ছোট ছোট সমস্যা দূর করার চেষ্টা করেছে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
তাঁরা অনেকবার ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করেন – এ কেমন প্রধানমন্ত্রী, লালকেল্লার প্রাকার থেকে প্রদত্ত ভাষণে টয়লেটের কথা বলেন। মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, এই টয়লেট এই ইজ্জত ঘরই আমার মা-বোনেদের সুরক্ষা ও সম্মান বৃদ্ধির মাধ্যমে তাঁদের ক্ষমতা বাড়িয়েছে। শুধু তাই নয়, যখন আমি স্যানিটারি ন্যাপকিন নিয়ে কথা বলেছিলাম, তখনও অনেক ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ হয়েছে। কিন্তু, এটা সকলে জানেন যে, এই স্যানিটারি ন্যাপকিনের অভাবে দেশের গরীব বোন ও মেয়েদের কতটা অপমান সইতে হ’ত। কত অবাঞ্ছিত রোগের শিকার হতে হ’ত। একই রকমভাবে মা ও বোনেদের রান্নাঘরে ধোঁয়ার মধ্যে জীবন কাটাতে হ’ত, তা থেকে মুক্তিদানের উপায় খোঁজা ও সাফল্যের সঙ্গে তাঁদের মুক্তিদানের সৌভাগ্য আমাদের হয়েছে। দিনের অর্ধেক সময় তাঁদের পানীয় জল ও কেরোসিনের জন্য লাইনে দাঁড়াতে হ’ত, আমাদের একটি মাত্র সিদ্ধান্তের বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমরা তাঁদের সেই কষ্ট থেকেও মুক্তি দিতে পেরে আনন্দিত।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
আগে যেমন চলতো, আমরা যদি তেমনটাই চলতে দিতাম, তা হলে কেউ আমাদের প্রশ্ন করতেন না যে, মোদীজী কেন কিছু করছেন না। আমরা উজ্জ্বলা যোজনার মাধ্যমে মা ও বোনেদের ধোঁয়া থেকে মুক্তিদানের পাশাপাশি, জল জীবন মিশনের মাধ্যমে তাঁদের জন্য পানীয় জলের ব্যবস্থা করে তাঁদের ক্ষমতায়ন করেছি। ৯ কোটি বোনেদের স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত করেছি। খনি থেকে শুরু করে প্রতিরক্ষা পর্যন্ত সমস্ত ক্ষেত্র আজ মা-বোন ও মেয়েদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। এই সুযোগ উন্মোচনের কাজ আমাদের সরকার করেছে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
এই কথাটি যেন আমরা মনে রাখি যে, ভোটব্যাংকের রাজনীতি কখনো কখনো দেশের সম্ভাবনাকে অনেক বেশি ক্ষতিগ্রস্থ করেছে। আর তার ফল হলো দেশে যা হওয়া উচিত ছিল, যা যা যথাসময়ে হওয়া উচিত ছিল, তা বিলম্বিত হয়েছে। আপনারা দেখুন, দীর্ঘকাল ধরে দেশে মধ্যবিত্তদের সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করা হয়েছিল। তাঁদের দিকে কেউ ফিরেও তাকায়নি। তাঁরাও একরকম ধরেই নিয়েছিলেন যে আমাদের কেউ নেই, নিজেদের ক্ষমতায় যা যা করা সম্ভব আমাদের তা-ই করতে হবে। তিনি তাঁদের সমস্ত শক্তি রোজগারের পেছনে ব্যয় করতেন। কিন্তু আমাদের সরকার, এনডিএ সরকার মধ্যবিত্তের সততার স্বীকৃতি দিয়েছে। আমরা তাঁদের নিরাপত্তা দিয়েছি এবং আজ আমাদের পরিশ্রমী মধ্যবিত্তরা দেশকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছে। সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প থেকে মধ্যবিত্তরা কতটা যে উপকৃত হয়েছেন তা বোঝাতে মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, আমি ২০১৪ সালের আগের জিবি ডেটার উদাহরণ দিচ্ছি কারণ আজ যুগ পাল্টেছে। অনলাইন দুনিয়া চলছে। সবার হাতে মোবাইল ফোন। কারো কারো পকেট ছেঁড়া থাকলেও তাঁদের কাছে মোবাইল ফোন থাকে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, ২০১৪ সালের আগে এক জিবি ডেটার দাম ছিল ২৫০ টাকা, আর আজ তা মাত্র ১০ টাকা। মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, আমাদের দেশের একজন নাগরিক গড়ে ২০ জিবি ডেটা ব্যবহার করেন। আমি যদি সেই হিসাবটি প্রয়োগ করি, তাহলে একজন মানুষের গড়ে ৫০০০টাকা করে সাশ্রয় হয়েছে মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
আজ সারা দেশে, জন ঔষধি স্টোরগুলি একটি আকর্ষণের কেন্দ্র হয়ে দাঁড়িয়েছে, কারণ একটি মধ্যবিত্ত পরিবারে যদি একজন প্রবীণ নাগরিক থাকেন, আর তাঁর যদি মধুমেহর মতো রোগ থাকে, তবে তাদের প্রতি মাসে ১,০০০/-, ২,৫০০/-,৩,০০০/- টাকা মূল্যের ওষুধ খেতে হয়। বাজারে যে ওষুধটি ১০০ টাকায় পাওয়া যায়, সেই ওষুধটি জন ঔষধি কেন্দ্রে ১০,২০টাকায় পাওয়া যায়। তাই আজ জন ঔষধি স্টোরগুলির মাধ্যমে সারা দেশে মধ্যবিত্ত মানুষের প্রায় ২০হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
প্রতিটি মধ্যবিত্ত পরিবারের একটি স্বপ্ন থাকে তাঁদের নিজস্ব বাড়ি তৈরি করার। এই স্বপ্ন বাস্তবায়নে সাহায্য করতে আমরা শহরাঞ্চলে একটি গৃহঋণের বড় ব্যবস্থা করেছি, আর রেরা (RERA) আইন প্রণয়নের কারণে, যে প্রোমোটাররা এতদিন মধ্যবিত্তের কষ্টোপার্জিত অর্থ নিয়ে বছরের পর বছর ঝুলিয়ে রাখতো, তাঁদেরকে নানাভাবে প্রতারিত করতো, তা থেকে মুক্ত করে নতুন বিশ্বাস দিতে পেরেছি এবং সে জন্য তাঁদের নিজস্ব বাড়ি তৈরির সুবিধা বেড়েছে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
প্রতিটি মধ্যবিত্ত পরিবার তাঁদের সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে তাঁদের উচ্চ শিক্ষার জন্য মনে একটি পরিকল্পনা রাখে। তাঁদের এই চাহিদার কথা মাথায় রেখে আমাদের সরকার ইতিমধ্যেই দেশে মেডিকেল কলেজ, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ও প্রফেশনাল কলেজের সংখ্যা বাড়িয়েছে, সেগুলিতে আসন সংখ্যা বাড়িয়েছে। এভাবে আমাদের সরকার মধ্যবিত্তের আশা-আকাঙ্খা বাস্তবায়নের কাজটি খুব ভালোভাবে শুরু করেছে। তাঁরা এখন বিশ্বাস করতে শুরু করেছেন যে তাঁদের সন্তানদের ভবিষ্যত উজ্জ্বল হবেই।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
দেশকে যদি এগিয়ে নিয়ে যেতে হয়, তাহলে ভারতকে আধুনিকতার দিকে নিয়ে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই। এটি সময়ের দাবি যে, এখন আমরা আর সময় নষ্ট করতে পারি না এবং সেই কারণেই আমরা পরিকাঠামো নির্মাণে অনেক বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। আমরা এটা মানি যে, কয়েকশো বছরের পরাধীনতার আগে ভারত একসময় পরিকাঠামোর ক্ষেত্রে বিশ্বে শীর্ষে ছিল। তার একটা স্বতন্ত্র শক্তি ছিল, একটা পরিচয় ছিল। পরাধীনতার সময় প্রায় সবকিছু ধ্বংস হয়ে গেছে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আবার সেই পরিচয় ফিরে আসবে বলে আশা ছিল, কিন্তু দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেছে। যা হওয়া উচিত ছিল, যে গতিতে এটি হওয়া উচিত ছিল, যে মাত্রায় হওয়া উচিত ছিল তা আমরা করতে পারিনি। আজ এই দশকে একটি বড় পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। সড়কপথ থেকে শুরু করে সমুদ্রপথ, ব্যবসা - বাণিজ্য, জলপথ, সমস্ত ক্ষেত্রেই আজ পরিকাঠামোর পুনরুজ্জীবন হতে দেখা যাচ্ছে। মহাসড়ক নির্মাণে রেকর্ড পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ হচ্ছে, মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, আগে বিশ্বের উন্নত দেশগুলিতে গেলে যেরকম চওড়া রাস্তা দেখা যেত, আজ ভারতে সেরকম চওড়া রাস্তা, হাইওয়ে, এক্সপ্রেসওয়ে, দেখতে পাচ্ছে দেশের নতুন প্রজন্ম। আমরা ভারতে আন্তর্জাতিক মানের উন্নত হাইওয়ে এবং এক্সপ্রেসওয়ে নির্মানের কাজ করছি। এতদিন আমরা রেলওয়ের পুরোনো পরিকাঠামো নিয়ে সন্তুষ্ট ছিলাম, যা ব্রিটিশরা দিয়ে গিয়েছিল, সেটাকেই আমরা ভালো বলে মনে করতাম। তাতেই রেলগাড়ি চলছিল।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
সেই সময় ছিল, ব্রিটিশরা যে অবস্থায় ছেড়ে গিয়েছিল, সেই মনোভাব নিয়েই আমরা চলছিলাম, আর তাই রেলওয়ের কী পরিচয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল? রেল মানেই ধাক্কাধাক্কি, রেল মানেই দুর্ঘটনা, রেল মানেই দেরিতে পৌছোনো, এরকমই একটা অবস্থা তৈরি হয়েছিল, একটা প্রবাদ তৈরি হয়েছিল, রেল মানেই বিলম্ব। একটা সময় ছিল যখন প্রতি মাসেই দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটত বারবার। একটা সময় ছিল যখন এই দুর্ঘটনাগুলিকে দুর্ভাগ্য বলে মনে করা হয়েছিল। কিন্তু এখন অত্যাধুনিক ‘বন্দে ভারত’ ট্রেন এত জনপ্রিয় হয়েছে যে, প্রত্যেক সাংসদ আমাকে নিয়মিত চিঠি লিখতে থাকেন, আমার সংসদীয়এলাকায় ‘বন্দে ভারত’ ট্রেন চালু করুন। আজ দেশের রেলস্টেশনগুলোকে নতুন করে সাজানো হচ্ছে। আজ বিমানবন্দরগুলোকেও নতুন করে সাজানো হচ্ছে। স্বাধীনতার পর সত্তর বছরে সত্তরটি বিমানবন্দর ছিল আর গত নয় বছরে তৈরি হয়েছে সত্তরটি বিমানবন্দর। দেশে নতুন নতুন নৌপথও তৈরি করা হচ্ছে। আজ নৌপথে পণ্য ও যাত্রী পরিবহন হচ্ছে। মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,আমরা আধুনিক পরিকাঠামোর ওপর জোর দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি যাতে দেশ আধুনিকতার পথে এগিয়ে যায়।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
আমার জীবনে জনসেবার ৪-৫ দশক হয়ে গেছে এবং আমি ভারতের অসংখ্য গ্রাম পেরিয়ে আসা একজন মানুষ। ৪-৫ দশক ধরে, তার মধ্যে একটি দীর্ঘ সময় পরিব্রাজক হিসাবে ঘুরে বেড়িয়েছি। আমি প্রত্যেক স্তরের পরিবারের সঙ্গে বসে কথা বলার সুযোগ পেয়েছি এবং তাই আমি ভারতের প্রতিটি অংশের সমাজের প্রত্যেক অনুভূতির সঙ্গে পরিচিত। আর এই প্রেক্ষিত থেকেই অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলতে পারি যে ভারতের সাধারণ মানুষ ইতিবাচকতায় পরিপূর্ণ। ইতিবাচকতাই ভারতীয়দের প্রকৃতি, ইতিবাচকতা আমাদের সংস্কৃতির অংশ। ভারতীয় সমাজ নেতিবাচকতা সহ্য করে, গ্রহণ করে না, এটি তার স্বভাব নয়। ভারতীয় সম্প্রদায়ের প্রকৃতি প্রফুল্ল, এটি একটি স্বপ্নবিভোর সমাজ, এটি এমন একটি সমাজ যা ভাল কাজের পথে এগুতে থাকে। সৃজনকর্মের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে আমাদের সমাজ। আজ আমি বলতে চাই যারা এই স্বপ্ন নিয়ে এখানে বসে আছেন যে, তাঁরা আগে যেভাবে এখানে বসতেন, তাঁরা আবার সেভাবে বসার সুযোগ পাবেন, এই জাতীয় লোকদের ৫০ বার চিন্তা করা উচিত, নিজেদের আচার ব্যবহার ও কর্মপদ্ধতি পুনর্বিবেচনা করা উচিত। গণতন্ত্রে, আপনাকেও আত্মদর্শন করতে হবে। আধার আজ ডিজিটাল লেনদেনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে। আপনারা সেটাকেও ভিত্তিহীন করে রেখেছিলেন। তারপর তো এর পেছনে পড়ে গিয়েছিলেন। এমনকি এটাকে আটকাতে আদালতেও গিয়েছিলেন। জিএসটি নিয়ে আপনারা না জানি কতরকম মন্তব্য করেছিলেন!
জানি না, কিন্তু আজ জিএস্টি ভারতের অর্থনীতি এবং সাধারণ মানুষের জীবনকে সহজ করতে একটি বড় ভূমিকা পালন করেছে। সে যুগে এইচএএলকে কত গালি দেওয়া হয়েছে, কিভাবে এই ধরণের আরও বড় বড় সংস্থার অপব্যবহার হয়েছে। আজ এটি এশিয়ার বৃহত্তম হেলিকপ্টার উত্পাদন কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। সেখান থেকে আজ শত শত তেজস বিমান তৈরি হচ্ছে, আজ ভারতীয় সেনাবাহিনীর হাজার, হাজার, কোটি টাকার অর্ডার আজ এইচএএল-এর কাছে রয়েছে। ভারতের মধ্যেই স্পন্দিত প্রতিরক্ষা শিল্পোদ্যোগগুলি এগিয়ে আসছে। আজ ভারত প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম রপ্তানি শুরু করেছে। মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, ভারতের প্রত্যেক যুবক আজ গর্বিত, কিন্তু হতাশায় নিমজ্জিত মানুষের কাছ থেকে তাঁদের কোনও প্রত্যাশা নেই।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
আপনারা ভালো করেই জানেন, সময় প্রমাণ করছে যে, যারা একসময় এদিকে বসে থাকতেন তাঁরা ওদিকে গিয়েও ব্যর্থ হয়েছেন। কিন্তু দেশ সমস্ত বাঁধাবিপত্তি অতিক্রম করছে, স্বাতন্ত্র্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। সেজন্যেই আজ সময়ের দাবি হল, আজ নিরাশায় ডুবে থাকা মানুষেরা একটু সুস্থ মনে আত্মবিশ্লেষণ করুন।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
জম্মু-কাশ্মীর নিয়েও এখানে কত সমালোচনা করা হয়েছিল, সম্প্রতি যারা জম্মু-কাশ্মীর ঘুরে এসেছেন, তাঁরা নিশ্চয়ই দেখেছেন যে এখন কত সুন্দরভাবে জম্মু-কাশ্মীরে যেতে পারেন, নিশ্চিন্তে ঘুরে বেড়াতে পারেন!
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
গত শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে, আমিও জম্মু ও কাশ্মীরে একটি যাত্রা করেছিলাম এবং লাল চৌকে ভারতের ত্রিবর্ণরঞ্জিত জাতীয় পতাকা উত্তোলনের প্রতিশ্রুতি নিয়েছিলাম। তখন সন্ত্রাসবাদীরা পোস্টার লাগিয়েছিল, সে সময় তারা বলেছিল যে, দেখি কে তাঁর মায়ের দুধ পান করেছে যে লাল চৌকে এসে ত্রিবর্ণরঞ্জিত জাতীয় পতাকা উত্তোলনের স্পর্ধা দেখাবে! পোস্টার লাগানো হয়েছিল এবং সেই দিনটি ছিল ২৪ শে জানুয়ারি, আমি জম্মু শহরে একটি সমাবেশে বলেছিলাম, মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, আমি গত শতাব্দীর কথা বলছি। আমি সন্ত্রাসবাদীদের উদ্দেশে বলেছিলাম, কান দিয়ে শোনো, আমি ২৬ জানুয়ারি ঠিক সকাল ১১টায় লাল চৌকে পৌঁছব, নিরাপত্তা ছাড়াই আসব, বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট ছাড়াই আসবো, এবং দেখা যাবে লাল চৌকে গিয়ে, কারা মায়ের দুধ পান করেছে। সেও একটা সময় ছিল!
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
আর সেদিন যখন শ্রীনগরের লালচৌকে তেরঙ্গা উত্তোলন করা হল, তারপর যখন সংবাদ মাধ্যমের বন্ধুরা আমাকে প্রশ্ন করতে শুরু করেন, আমি তখন বলেছিলাম যে, সাধারণতঃ ১৫ আগস্ট এবং ২৬ জানুয়ারি যখন ভারতের ত্রিবর্ণরঞ্জিত জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়, তখন ভারতের সেনারা তাঁদের বন্দুক নিয়ে গান স্যালুট দেয়, কুচকাওয়াজ করে, আর আজ আমি যখন লালচৌকে ত্রিবর্ণরঞ্জিত জাতীয় পতাকা উত্তোলন করছি, তখন শত্রু দেশের বন্দুকও গান স্যালুট দিচ্ছে, গুলি ছুড়ছে,বোমা ফাটিয়ে সম্মান জানাচ্ছে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
আজ শান্তি এসেছে, আজ মানুষ নিশ্চিন্তে যাওয়া আসা করতে পারে, শত শত মানুষ যাতায়াত করতে পারে; বহু দশক পর জম্মু ও কাশ্মীর- এ এই পরিবেশ ফিরে এসেছে, পর্যটনের ক্ষেত্রে সব রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। আজ জম্মু ও কাশ্মীরে পালিত হচ্ছে গণতন্ত্রের উৎসব।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
আজ জম্মু-কাশ্মীরে ‘হর ঘর তেরঙ্গা’ বা প্রত্যেক বাড়িতে তেরঙ্গার সফল কর্মসূচি সফলভাবে পালিত হয়, আমি আনন্দিত যে, যাঁরা একসময় বলতেন যে জম্মু-কাশ্মীরে ভারতের ত্রিবর্ণরঞ্জিত জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হলে শান্তি বিঘ্নিত হতে পারে! সময় দেখুন, সময়ের মজা দেখুন- এখন তাঁরাও দেখছি ‘তেরঙ্গা যাত্রা’য় অংশগ্রহণ করছেন।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
পত্রপত্রিকায় একটা খবর ছাপা হয়েছিল সেটা হয়তো অনেকের নজরে পড়েনি। মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, এই মানুষগুলো যখন যে কোনভাবে টিভিতে উপস্থিতি বাড়াতে, নিজেদের ছবি উজ্বল করার চেষ্টা করছিল, তখনই কাশ্মীর নিয়ে সংবাদপত্রে একটি খবর এসেছে। খবরটি হল যে, এখন কিন্তু কয়েক দশক পর শ্রীনগরের থিয়েটার হাউসগুলি পূর্ণ হচ্ছে, হাউস ফুল চলছে এবং সন্ত্রাসবাদীদের কোথাও ধারে কাছে দেখা যাচ্ছে না। এখন তো বিদেশি পর্যটকরাও দেখছে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
একটু আগেই আমাদের বন্ধুরা, আমাদের সম্মানিত সদস্যরা উত্তর-পূর্ব ভারতের কথা জিজ্ঞেস করছিলেন। আমি বলব শুধু একবার উত্তর-পূর্বে ঘুরে আসুন। আপনাদের যুগের উত্তর-পূর্ব ভারত এবং আজকের যুগের উত্তর-পূর্ব –এর মধ্যে পার্থক্য দেখে আসুন যাক। আধুনিক চওড়া হাইওয়ে তৈরি হয়েছে, রেলে আরামদায়ক সফর করা যাচ্ছে। তাছাড়া আপনারা আয়েস করে প্লেনেও যেতে পারবেন। আজ উত্তর-পূর্বের প্রতিটি কোণে, আমি গর্ব করে বলতে পারি, যখন স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তি উৎসব পালিত হচ্ছে, তখন আমি গর্বের সঙ্গে বলতে পারি যে, বিগত ৯ বছরে বিচ্ছিন্নতাবাদের শিকার হয়ে যে প্রায় ৭৫০০ মানুষ অস্ত্রের পথে হেঁটেছিলেন, তারা ইতিমধ্যেই আত্মসমর্পণ করেছেন, বিচ্ছিন্নতাবাদী পথ ছেড়ে মূলধারায় ফিরে এসেছেন।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
আজ ত্রিপুরার লক্ষাধিক পরিবার পাকা বাড়ি পেয়েছে, আমি সেদিন তাঁদের সুখের মুহুর্তে অংশ নেওয়ার সুযোগ পেয়েছি। আমি যখন আগে ত্রিপুরায় হীরা প্রকল্পের কথা বলেছিলাম, তখন বলেছিলাম হাইওয়ে-আইওয়ে-রেলওয়ে এবং এয়ারওয়ে হীরা, আজ এই সার্বিক হীরা সফলভাবে ত্রিপুরার মাটিতে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। ত্রিপুরা ইতিমধ্যেই দ্রুতগতিতে ভারতের উন্নয়ন যাত্রায় অংশীদার হয়েছে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
আমি জানি সত্য শুনতেও অনেক শক্তি লাগে। মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, মিথ্যা, নোংরা অভিযোগ শুনতেও অনেক ধৈর্য লাগে এবং যারা ধৈর্য নিয়ে নোংরা কথা শোনার শক্তি দেখিয়েছেন তাঁদের আমি অভিনন্দন জানাই, তাঁরা সবাই অভিনন্দন পাওয়ার যোগ্য। কিন্তু সত্য শোনার ক্ষমতা না থাকলে তাঁরা আজ যে কতটা হতাশায় তলিয়ে যেতেন তার প্রমাণ আমাদের দেশ প্রত্যক্ষ করছে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
আমাদের রাজনৈতিক মতভেদ থাকতে পারে, মতবাদের পার্থক্য থাকতে পারে, কিন্তু এই দেশ অমর। চলুন – ২০৪৭ সালে, আমরা সবাই যখন স্বাধীনতার ১০০ বছর পূর্তি উৎসব উদযাপন করব, তার আগেই আমরা ভারতকে একটি উন্নত ভারতে পরিণত করি। স্বপ্ন নিয়ে হাঁটুন, সংকল্প নিয়ে এগিয়ে যান, পূর্ণ সামর্থ নিয়ে এগিয়ে যান এবং যাঁরা গান্ধীজির নামে বারবার রুটি সেঁকতে চান- আমি তাঁদের বলতে চাই, একবার গান্ধীজির লেখা পড়ুন। মহাত্মা গান্ধীকে একবার পড়ুন, মহাত্মা গান্ধী বলেছিলেন, - আপনি যদি আপনার দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করেন, তাহলে এর মাধ্যমেই অন্যের অধিকার রক্ষিত হয়। আজ আমরা স্পষ্টভাবে প্রত্যক্ষ করছি কর্তব্য আর অধিকারের লড়াই, দেশ হয়তো প্রথমবারের মতো এমন অবোধগম্যতা দেখল।
আর মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
আমি আবারও মাননীয় রাষ্ট্রপতি মহোদয়াকে অভিনন্দন জানাই, তাঁকে ধন্যবাদ জানাই, আর বলতে চাই যে, আজ এখান থেকে দেশ একটি নতুন উদ্যম, নতুন বিশ্বাস এবং নতুন সংকল্প নিয়ে যাত্রা শুরু করেছে।
অনেক অনেক ধন্যবাদ।