প্রধানমন্ত্রী : দীপিকাজি নমস্কার!
দীপিকা : নমস্কার স্যার।
প্রধানমন্ত্রী : দীপিকাজি, গতবারের ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে আমি আপনার এবং আরও কয়েকজন সাথীর সঙ্গে কথা বলেছিলাম। সম্প্রতি প্যারিসে স্বর্ণ পদক জিতে আপনি যে অসাধারণ কৃতিত্ব প্রদর্শন করেছেন, তারপর গোটা দেশে আপনাকে নিয়ে আলোচনা চলছে। এখন আপনি র্যাঙ্কিং-এ বিশ্বের এক নম্বর হয়ে উঠেছেন। আমি জানতে পেরেছি যে আপনি ছোটবেলায় আম পাড়ার জন্য নিশানা লাগাতেন। আম পাড়া থেকে শুরু করে আপনার এই যাত্রাপথ অত্যন্ত বিশেষ। আপনার এই যাত্রাপথ সম্পর্কে দেশবাসী অনেক কিছু জানতে চায়। আপনি যদি কিছু বলেন খুব ভালো হবে।
দীপিকা : স্যার আমার যাত্রাপথ খুব ভালো ছিল। গোড়া থেকেই মজার ছিল। ছোটবেলায় আমি আম খুব ভালোবাসতাম, সেজন্য এই গল্পটাও তৈরি হয়েছে। গোড়ার দিকে কিছুটা লড়াই করতে হয়েছিল কারণ খুব ভালো ক্রীড়া সরঞ্জাম ছিল না। কিন্তু পরবর্তীকালে আর্চারিতে কৃতিত্ব অর্জন করতে পেরেছি ভালো সরঞ্জাম আর ভালো কোচ পাওয়ার ফলেই।
প্রধানমন্ত্রী : দীপিকাজি, যখন আপনি সাফল্যের এতটা উচ্চতায় পৌঁছে যান তখন আপনার প্রতি মানুষের প্রত্যাশাও বেড়ে যায়। এখন সামনে অলিম্পিকের মতো সব থেকে বড় ইভেন্ট রয়েছে। সেজন্য প্রত্যাশা এবং ফোকাসের মধ্যে আপনি কিভাবে ভারসাম্য রক্ষা করছেন?
দীপিকা : স্যার প্রত্যাশা তো থাকবেই, কিন্তু সবচাইতে বেশি প্রত্যাশা আমাদের থাকে নিজের প্রতি। আমরা এখানেই ফোকাস করছি, যতটা সম্ভব একাগ্রতা নিয়ে প্র্যাক্টিস করা যায় যাতে আমরা সর্বোত্তম প্রদর্শন করতে পারি। এটাই আমাদের সবচাইতে বড় ফোকাস।
প্রধানমন্ত্রী : ঠিক আছে, আপনাকে অনেক অনেক শুভকামনা। আপনি কোনরকম প্রতিকূলতার সামনে হার মানেননি। আপনি সমস্ত সমস্যাকে নিজের শক্তিতে রূপান্তরিত করেছেন। আর আমি দেখতে পাচ্ছি যে স্ক্রিনে আপনার পরিবারের সবাই রয়েছেন। আমি তাঁদেরকেও নমস্কার জানাই। দেশবাসীর আপনার ওপর সম্পূর্ণ ভরসা আছে যে অলিম্পিকেও এভাবেই দেশের গৌরব বৃদ্ধি করবেন। আপনাকে আমার অনেক অনেক শুভকামনা।
দীপিকা : ধন্যবাদ স্যার।
প্রধানমন্ত্রী : আসুন এখন আমরা প্রবীণ কুমার যাদবজির সঙ্গে কথা বলি। প্রবীণজি নমস্কার!
প্রবীণ : নমস্কার স্যার।
প্রধানমন্ত্রী : প্রবীণজি আমাকে বলা হয়েছে যে আগে অ্যাথলিট হয়ে ওঠার জন্যই
আপনার প্রশিক্ষণ হয়েছিল।
প্রবীণ : হ্যাঁ স্যার।
প্রধানমন্ত্রী : আজ আপনি অলিম্পিকে তীরন্দাজির ক্ষেত্রে দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে চলেছেন। এই পরিবর্তন কিভাবে এসেছে?
প্রবীণ : স্যার আমি অ্যাথলেটিক্সই খেলতাম। সরকারি অ্যাকাডেমিতে আমার নির্বাচন অ্যাথলেটিক্সের জন্যই হয়েছিল। কিন্তু সেখানকার কোচদের মনে হয় যে অ্যাথলেটিক্সে সর্বোচ্চ প্রদর্শনের উপযোগী শারীরিক সক্ষমতা আমার ছিল না। কিন্তু আমার একাগ্রতা দেখে তাঁদের মনে হয় যে আমি অন্য খেলায় ভালো প্রদর্শন করতে পারি। তখন তাঁরা আমাকে এই তীরন্দাজি খেলতে বলে। তারপরই আমি অমরাবতীতে আর্চারির প্রশিক্ষণ নিই।
প্রধানমন্ত্রী : আচ্ছা! আর এই পরিবর্তন সত্ত্বেও আপনি এই খেলায় এত ভালো প্রত্যয় এবং নিপুণতা কিভাবে অর্জন করেছেন?
প্রবীণ : স্যার, আসলে আমার বাড়ির অবস্থা ভালো নয়। অর্থাৎ আর্থিক অবস্থা ঠিক নেই।
প্রধানমন্ত্রী : আমার সামনে আপনার মা-বাবাকে দেখতে পাচ্ছি, তাঁদেরকে নমস্কার জানাই। হ্যাঁ প্রবীণভাই বলুন!
প্রবীণ : হ্যাঁ আমি জানতাম বাড়ির যা অবস্থা ফিরে এলে আমাকে মজুরের কাজ করতে হবে। সেজন্য বাধ্য হয়ে যে খেলা পেয়েছি সেটাতেই পরিশ্রম করেছি।
প্রধানমন্ত্রী : দেখুন, আপনার ছোটবেলার কঠিন লড়াই সম্পর্কে আমি অনেক তথ্য জেনেছি। আপনার বাবা-মা যেভাবে দিন এনে দিন খেয়ে আপনাকে বড় করেছেন আর আপনি আজ দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে যাচ্ছেন, এই যাত্রাপথ অত্যন্ত প্রেরণাদায়ক। এমন কঠিন জীবন কাটানো সত্ত্বেও আপনি নিজের লক্ষ্য থেকে কখনও চোখ সরাননি। আপনার জীবনের শুরুর দিকের অভিজ্ঞতাগুলি আপনাকে চ্যাম্পিয়ন খেলোয়াড় হয়ে উঠতে সাহায্য করেছে কি?
প্রবীণ : স্যার, যখনই খুব সমস্যার সম্মুখীন হতাম, তখনই ভাবতাম যে, এখনও পর্যন্ত যত পরিশ্রম করেছি, যদি হার মেনে নিই তাহলে এক নিমেষে সবকিছু শেষ হয়ে যাবে। তার চাইতে আমি আরও বেশি পরিশ্রম করে, আরও বেশি চেষ্টা করে সাফল্যের পথে হাঁটতে চেয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী : প্রবীণজি, আপনি তো একজন চ্যাম্পিয়ন বটেই, কিন্তু আমার দৃষ্টিতে আপনার মা-বাবাও চ্যাম্পিয়ন। সেজন্য আমার ইচ্ছা আপনার মা-বাবার সঙ্গে একটু কথা বলব। নমস্কার জি!
অভিভাবক : নমস্কার!
প্রধানমন্ত্রী : আপনারা মজুরি করে ছেলেকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন আর আজকে আপনার ছেলে অলিম্পিকে দেশের হয়ে খেলতে যাচ্ছে, আপনারা দেখিয়ে দিয়েছেন যে পরিশ্রম আর সততার শক্তি কেমন হতে পারে! এখন আপনারা কী বলতে চান?
অভিভাবক : …(মাতৃভাষায় বলেছেন)
প্রধানমন্ত্রী : দেখুন প্রবীণজি, আপনি প্রমাণ করে দিয়েছেন যে কোনকিছু করার ইচ্ছা থাকলে কোনও প্রতিকূলতা কাউকে আটকাতে পারে না। আপনার সাফল্য থেকে এটা স্পষ্ট হয়েছে যে তৃণমূল স্তর থেকে যদি সঠিক চয়ন হয়, তাহলে আমাদের দেশের প্রতিভারা কী না করতে পারে। প্রবীণ আপনাকে আমার অনেক অনেক শুভকামনা। আরেকবার আপনার মামা-বাবাকেও প্রণাম। জাপানে খুব ভালো খেলুন।
প্রবীণ : ধন্যবাদ স্যার।
প্রধানমন্ত্রী : আচ্ছা, এখন আমরা নীরজ চোপড়াজির সঙ্গে কথা বলব।
নীরজ : নমস্কার স্যার।
প্রধানমন্ত্রী : নীরজজি, আপনি তো ভারতীয় সেনায় কর্মরত। আপনার সেনাবাহিনীর কোন অভিজ্ঞতা, কোন ধরনের প্রশিক্ষণ আপনাকে এরকম আন্তর্জাতিক মানে পৌঁছতে সাহায্য করেছে?
নীরজ : স্যার দেখুন, আমার ছোটবেলা থেকেই ভারতীয় সেনায় যোগদানের ইচ্ছা ছিল। সেনাবাহিনীর চাকরি আমার খুব পছন্দ ছিল। আমি ৫-৬ বছর খেলার পরই ভারতীয় সেনা আমাকে যোগদানের জন্য আমন্ত্রণ জানায়। এই আমন্ত্রণ পেয়ে আমি খুব খুশি হই আর সেনাবাহিনীতে যোগদান করি। তারপর থেকে আমি নিজের দক্ষতা অর্জনের দিকেই ফোকাস করে চলেছি। ভারতীয় সেনা আমাকে প্রয়োজনীয় সমস্ত সরঞ্জাম দিয়েছে। আর এখন তো ভারত সরকার সবকিছু দিচ্ছে। আর আমি মন দিয়ে পরিশ্রম করে প্রস্তুতি নিচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী : নীরজজি, আপনার পাশাপাশি আপনার গোটা পরিবারকে দেখতে পাচ্ছি। আপনার পরিবারকেও আমি প্রণাম জানাই।
প্রধানমন্ত্রী : নীরজজি, আমাকে এটাও বলা হয়েছে যে আপনি আঘাত পেয়েছিলেন, তবুও আপনি এ বছর নিজের জাতীয় রেকর্ড স্থাপন করেছেন। আপনি কিভাবে নিজের মনোবল তুঙ্গে রেখেছেন, নিজের প্র্যাক্টিসকে কিভাবে সামলেছেন?
নীরজ : স্যার আমি মনে করি এই চোট-আঘাত পাওয়া খেলাধূলার একটা অংশ। আমি ২০১৯-এ অনেক পরিশ্রম করেছিলাম। সে বছর আমাদের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ ছিল।
প্রধানমন্ত্রী : আচ্ছা। আপনি স্পোর্টসের চোট-আঘাতেও খেলোয়াড়সুলভ প্রাণশক্তি অনুভব করেন?
নীরজ : হ্যাঁ স্যার, কারণ এভাবেই একজন খেলোয়াড়কে এগোতে হয়। আমাদের এই ক্যারিয়ার তো মাত্র কয়েক বছরের। সেজন্য নিজেদেরই নিজেদেরকে উদ্বুদ্ধ করতে হয়। এবার চোট-আঘাতের ফলে আমার এক বছর নষ্ট হয়েছে। আমি ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ এবং এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের জন্য যে প্রস্তুতি নিয়েছিলাম, তা এই চোটের জন্য খারাপ হয়েছে। কিন্তু আমি আবার নিজের ফোকাস অলিম্পিকের প্রস্তুতির ওপর রাখি আর দ্রুত কামব্যাক করি। সামনে যত প্রতিযোগিতা আসে সেগুলিতে অংশগ্রহণ করি। এর ফলেই অলিম্পিকে অংশগ্রহণের যোগ্যতা অর্জন করি। তারপর করোনার ফলে অলিম্পিক স্থগিত হয়ে যায়। তখনও নিজের প্রস্তুতি জারি রাখি। তারপর যে প্রতিযোগিতাগুলিতে অংশ নিই সেগুলিতেও নিজের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করি। এভাবেই পরিশ্রম করে জাতীয় রেকর্ড স্থাপন করি। অলিম্পিকে আরও ভালো প্রদর্শন করার চেষ্টা করব।
প্রধানমন্ত্রী : নীরজজি, আপনার সঙ্গে কথা বলে খুব ভালো লেগেছে। আমি আপনার সঙ্গে একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কথা বলতে চাই। আপনাকে প্রত্যাশার বোঝা মাথায় নিয়ে চলতে হবে না। আপনি নিজের ১০০ শতাংশ দেবেন। ব্যস, এই মেজাজেই কোনও চাপ ছাড়া সম্পূর্ণ চেষ্টা করুন। আপনাকে আমি অনেক অনেক শুভকামনা জানাই আর আপনার মা-বাবাকে প্রণাম জানাই।
প্রধানমন্ত্রী : আসুন আমরা দ্যুতি চন্দজির সঙ্গে কথা বলি।
প্রধানমন্ত্রী : দ্যুতিজি নমস্কার!
দ্যুতি : মহামান্য প্রধানমন্ত্রীজি নমস্কার!
প্রধানমন্ত্রী : দ্যুতিজি, আপনার নামের অর্থ হল চমক। দ্যুতি মানে হল আভা। আপনি খেলার মাধ্যমে নিজের চমক চারিদিকে ছড়িয়ে দিচ্ছেন। এখন আপনি অলিম্পিকে আভা ছড়ানোর জন্য প্রস্তুত। এত বড় প্রতিযোগিতাকে আপনি কিভাবে দেখছেন?
দ্যুতি : স্যার, প্রথমে আপনাকে জানাই, আমি ওড়িশার এক তাঁতি পরিবারের সদস্য। আমাদের পরিবারে তিন বোন, ভাই, মা ও বাবাকে নিয়ে নয়জন সদস্য রয়েছে। যখন আমার বাড়িতে একটার পর একটা মেয়ে জন্ম নেয়, তখন গ্রামের মানুষ আমার মা-কে সবসময় সমালোচনা করতেন। অনেক গরীব পরিবার ছিল। দু’বেলা দু’মুঠো খাবারও জুটত না। বাবার রোজগার খুব কম ছিল।
প্রধানমন্ত্রী : আপনার বাবা-মা আমার সামনেই তো রয়েছেন।
দ্যুতি : হ্যাঁ স্যার। তাই আমার মনে এমনটাই ছিল যে ভালো খেললে দেশের নাম উজ্জ্বল করতে পারব আর সরকারি ক্ষেত্রে আমি চাকরি পেয়ে যাব, আর চাকরি থেকে যে বেতন পাব তা দিয়ে পরিবারের আর্থিক পরিস্থিতি শুধরাতে পারবো! এখন আপনাকে ধন্যবাদ জানাব, আর ধন্যবাদ জানাব তাঁদের সবাইকে যাঁরা আমাকে সব সময় সমর্থন জানিয়ে এসেছেন। আমার জীবন সর্বদাই নানা রকম বিতর্কে ঘিরে থাকে। যাঁরা আমার সঙ্গে অলিম্পিকে যাচ্ছেন, তাঁদেরকে নানা বৈদ্যুতিন মাধ্যম, টিভির মাধ্যমে আরেকটি কথা বলব। আপনারা কত না সমস্যার সম্মুখীন হয়ে, কত না বিপত্তি সহ্য করে আজ এখান পর্যন্ত পৌঁছেছেন। আমার মনে এটাই রয়েছে যে যাঁরা আমার সঙ্গে অলিম্পিকে যাচ্ছেন, আমি তো দ্বিতীয়বার যাচ্ছি, আমি এটাই বলতে চাইব যে সম্পূর্ণ সাহস নিয়ে যাচ্ছি, আমি ভয় পাব না, ভারতের কোনও মহিলা দুর্বল নয় আর মহিলারা এগিয়ে গিয়ে দেশের নাম উজ্জ্বল করবেন; এই সাহস নিয়েই অলিম্পিকে খেলব আর দেশের জন্য পদক আনার চেষ্টা করব।
প্রধানমন্ত্রী : দ্যুতিজি আপনার অনেক বছরের পরিশ্রমের ফল কয়েক সেকেন্ডে নির্ধারিত হয়। চোখের পলক পড়তে না পড়তেই জয় এবং পরাজয়ের মাঝে দূরত্ব তৈরি হয়ে যায়। এই বাস্তবের সম্মুখীন হওয়া কতটা কঠিন?
দ্যুতি : মূলতঃ, ১০০ মিটার দৌড়ের ক্ষেত্রে পুরো ঘটনাটাই ১০-১১ সেকেন্ডে শেষ হয়ে যায়! কিন্তু একবারের সাফল্যের পুনরাবৃত্তি করতে প্রয়োজন হয় প্রায় এক বছরের পরিশ্রম। অনেক পরিশ্রম করতে হয়। একবার ১০০ মিটার দৌড়নোর জন্য আমাদের ১০-১২ বার পুনরাবৃত্তি করতে হয়। অনেক অনেক জিম এক্সারসাইজ, অনেক অনেক স্যুইমিং পুল এক্সারসাইজ করতে হয় আর সব সময়ই এটাকে চ্যালেঞ্জের মতো নিতে হয়। সামান্য ভুল হয়ে গেলেই আপনাকে ডিসকোয়ালিফাই করে বের করে দেওয়া হবে। এই সমস্ত কিছু মাথায় রেখে আমাদের দৌড়তে হয়। মনে অনেক ধুকপুকানি থাকে, ভয় থাকে কিন্তু আমি সাহস নিয়ে লড়াই করি। আমরা যেমন প্রত্যেকে ব্যক্তিগত জীবনে সাহসের সঙ্গে কাজ করি, তেমনই দৌড়ের ক্ষেত্রেও যত কম সময়ে সম্ভব ১০০ মিটার পার করতে চেষ্টা করি। আর এই ক্রমাগত প্রচেষ্টার ফলেই দেশের জন্য বারবার পদক আনতে পেরেছি।
প্রধানমন্ত্রী : দ্যুতিজি, আপনি দেশের জন্য অনেক রেকর্ড গড়েছেন। এবার অলিম্পিক পডিয়ামে অবশ্যই আপনার স্থান হবে – দেশ এই প্রত্যাশা করে। আপনি নির্ভীক হয়ে খেলায় অংশগ্রহণ করুন। গোটা ভারত আমাদের অলিম্পিক খেলোয়াড়দের সঙ্গে আছে। আপনাকে অনেক শুভকামনা। আপনার মা-বাবাকেও বিশেষভাবে প্রণাম জানাই।
প্রধানমন্ত্রী : আসুন, এবার আমরা আশিস কুমারজির সঙ্গে কথা বলি।
প্রধানমন্ত্রী : আশিসজি, আপনার বাবা জাতীয় স্তরের কবাডি খেলোয়াড় ছিলেন আর আপনার পরিবার থেকে আরও অনেকে কবাডি খেলতেন। আপনি কেন বক্সিং বেছে নিয়েছেন?
আশিস : স্যার, আমি যখন ছোট ছিলাম বাড়িতে খেলাধূলার পরিবেশ ছিল। আমার বাবা খুব ভালো খেলোয়াড় ছিলেন, কিন্তু তিনি চাইতেন যে আমি বক্সিং খেলি। তিনি কখনই আমাকে কবাডি খেলার জন্য জোর করেননি। আমার পরিবারে আমার দাদা কুস্তি এবং বক্সিং দুটোই খেলতেন, এবং তিনিও অনেক সাফল্য পেয়েছেন। তিনিই আমাকে এই দুটোর মধ্যে কোনও একটায় যোগদান করতে বলেন। আমি অনেক রোগা-পাতলা ছিলাম। শরীর তেমন পেশীবহুল ছিল না। সেজন্য ভাবলাম যে কুস্তি তো লড়তে পারব না, হয়তো আমার বক্সিংই করা উচিৎ। এভাবেই বক্সিং-এর প্রতি আমার ঝোঁক বাড়তে থাকে।
প্রধানমন্ত্রী : আশিসজি, আপনি কোভিডের বিরুদ্ধেও লড়াই জিতেছেন। একজন খেলোয়াড় হিসেবে আপনার জন্য এই লড়াই কতটা কঠিন ছিল। আপনার ক্রীড়া নৈপুণ্য, আপনার শারীরিক সক্ষমতা যেন বিনষ্ট না হয় সেজন্য আপনি কী কী করেছেন? আর আমি আরও জানি যে আপনি এই কঠিন সময়ে পিতৃহারা হয়েছেন। কিন্তু নিজের যে লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলেন সেখান থেকে একচুলও নড়েননি। আমি অবশ্যই এ বিষয়ে আপনার মনের ভাবনার কথা জানতে চাইব।
আশিস : হ্যাঁ স্যার। প্রতিযোগিতার ২৫ দিন আগে আমার বাবার মৃত্যু এতটাই বিধ্বস্ত করে দিয়েছিল, আমি একরকম মুষড়ে পড়েছিলাম। সেই অবস্থা থেকে আবার নিজেকে প্রতিযোগিতার জন্য তৈরি করে খুব কঠিন ছিল। সেই সময়ে আমার পরিবারের সমস্ত সদস্যরা খুব সাহায্য করেছে। আমার ভাই, বোন, আমার পরিবারের সবাই আমার পাশে দাঁড়িয়েছে। আমার বন্ধুরাও আমাকে বারবার উদ্বুদ্ধ করেছে যাতে আমি আমার বাবার স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করি। যে স্বপ্নের গোড়ায়, বক্সিং-এর শুরুর দিনগুলিতে তিনি আমাকে নিয়ে যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, নিজের সমস্ত কাজ ছেড়ে তিনি আমাকে শিবিরে যোগদানের জন্য নিয়ে গিয়েছিলেন, সেকথা মনে করিয়ে তাঁরা বলে, তুই যা আর বাবার স্বপ্ন পূরণ করে আয়! স্যার, আমি যখন স্পেনে ছিলাম তখন আমার কোভিড পজিটিভ ধরা পড়ে। সে সময় আমার যেসব লক্ষণ ছিল তা সব কোভিডেরই লক্ষণ। কিন্তু সেখানে আমার জন্য একটু বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। আমাদের চিকিৎসক ডঃ করণ নিয়মিত আমার সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছেন। অন্যান্য সাপোর্ট স্টাফরাও নিয়মিত যোগাযোগ রেখেছেন। সেখানে আমার জন্য আলাদা থাকার জায়গার ব্যবস্থা করা হয়েছিল আর আলাদা প্র্যাক্টিসেরও ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কাজেই রোগের মধ্যেও আমি নিজের ফিটনেস বজায় রাখতে পেরেছি। সুস্থ হয়ে উঠতে অনেকটা সময় লেগেছে আর সুস্থ হয়ে ওঠার পর আমি যখন ভারতে ফিরেছি, আর তারপর যখন আবার প্রশিক্ষণ শিবিরে যোগদান করেছি, সেখানে আমার কোচেরা, সাপোর্ট স্টাফরা আমাকে অনেক সাহায্য করেছেন। আমার কোচ ধর্মেন্দ্র সিং যাদব আমাকে এতটাই সাহায্য করেছেন যে আমি পুরনো ছন্দে আবার নিজের খেলায় ফিরে আসতে পেরেছি।
প্রধানমন্ত্রী : আশিসজি, আপনার পরিবারের সদস্যদের, আপনার প্রিয়জনদের প্রণাম জানাই। আপনার হয়তো মনে পড়বে, সচিন তেন্ডুলকরজি যখন বিদেশে একটি গুরুত্বপূর্ণ টুর্নামেন্ট খেলছিলেন, তখন তাঁর বাবার মৃত্যু হয়েছিল। কিন্তু তিনি খেলাকেই অগ্রাধিকার দেন, আর খেলায় সাফল্যের মাধ্যমেই বাবাকে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানান। আপনার কৃতিত্বও আমার কাছে সমতুল। আপনি আজ বাবাকে হারানো সত্ত্বেও দেশের জন্য, দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে সম্পূর্ণ মন-প্রাণ দিয়ে নিজেকে সমর্পণ করেছেন। আপনার এই সমর্পণ উদাহরণযোগ্য ও প্রেরণাদায়ক। একজন খেলোয়াড় হিসেবে আপনি প্রত্যেকবার বিজয়ী হয়েছেন। পাশাপাশি একজন ব্যক্তি হিসেবেও আপনি শারীরিক এবং মানসিক প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে জয়ী হয়েছেন। আপনি গোটা দেশের সামনে প্রত্যাশার প্রতীক হয়ে উঠেছেন। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, অলিম্পিকের বিশ্ব মঞ্চেও আপনি খুব ভালো সাফল্য পাবেন। আমার পক্ষ থেকে আপনাকে অনেক শুভেচ্ছা। আপনার পরিবারের সবাইকে অনেক অনেক প্রণাম।
প্রধানমন্ত্রী : আসুন, এখন আমাদের সকলের পরিচিত চেহারা, পরিচিত নাম আমাদের গর্বের মেরী কমজির সঙ্গে কথা বলি। মেরী কমজি নমস্কার!
মেরী কম : নমস্কার স্যার!
প্রধানমন্ত্রী : আপনি তো এমন খেলোয়াড় যাঁর সাফল্য থেকে গোটা দেশ প্রেরণা নেয়। এবারের অলিম্পিক দলেও এরকম অনেক খেলোয়াড় হয়তো আছেন যাঁদের জন্য আপনি একজন আদর্শ। তাঁরাও হয়তো আপনাকে অনেক ফোন করেন। তাঁরা ফোন করলে আপনাকে কী জিজ্ঞাসা করেন?
মেরী কম : স্যার, বাড়িতে সবাই আমার জন্য প্রার্থনা করছেন। আমার ছেলে-মেয়েরা সব থেকে বেশি আমাকে মিস করে, আর আমি বোঝাই যে মাম্মা দেশের জন্য লড়াই করতে যাচ্ছে। তোরা বাড়িতে বাবা যা বলে তা শুনে চলবি, সবার সঙ্গে খুব ভালোভাবে থাকবি। বাড়ির বাইরে বেরোবি না! কোভিডের জন্য এইসব বলি স্যার, না হলে ওদেরও বাড়িতে থাকাটা বোরিং হয়ে যাচ্ছে। অনলাইন ক্লাস চলছে ঠিকই, কিন্তু খোলা হাওয়ায় বেরোতে পারছে না। বাচ্চারা তো খেলাধূলাই পছন্দ করে স্যার! বন্ধুদের সঙ্গে খেলতে পারলে ওদের ভালো লাগে। কিন্তু কোভিডের ফলে তাদেরকে বন্ধুদের থেকে দূরে থাকতে হয়। আমি ওদেরকে বলেছি যে এই করোনা প্রতিরোধে আমাদের লড়াই করতে হবে, ভালো থাকতে হবে এবং নিরাপদ থাকতে হবে। আমি দেশের জন্য লড়াই করতে যাচ্ছি আর আমি চাই যে তোরা সবাই নিরাপদে থাক আর আমিও নিরাপদে থাকি। সেজন্য দেশের স্বার্থে ভালো কিছু করার চেষ্টা করতে থাকি। এটুকুই স্যার।
প্রধানমন্ত্রী : ওরা শুনছে, আমি ওদের সবাইকে দেখতে পাচ্ছি। আচ্ছা, এমনিতে তো আপনি প্রত্যেক ধরনের পাঞ্চেই চ্যাম্পিয়ন, কিন্তু আপনার ফেভারিট পাঞ্চ কোনটা? জব, হুক, আপার কাট নাকি অন্য কিছু? এটাও বলবেন যে ওই পাঞ্চ আপনার কেন ফেভারিট!
মেরী কম : স্যার, আমার ফেভারিট পাঞ্চ তো আমার সাউথ পোল। আর এটাই আমার সবচাইতে ফেভারিট। এই পাঞ্চ কাউকে ছাড়ে না। যার গায়ে পড়ে তাকে কুপোকাত করে।
প্রধানমন্ত্রী : আমি জানতে চাই যে আপনার প্রিয় খেলোয়াড় কে।
মেরী কম : স্যার আমার প্রিয় খেলোয়াড় বক্সিং-এর কিংবদন্তী, আমার প্রেরণা মহম্মদ আলি।
প্রধানমন্ত্রী : মেরী কমজি, আপনি বক্সিং-এর ক্ষেত্রে প্রায় সমস্ত আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় জয়লাভ করেছেন। আপনি কোথাও বলেছিলেন যে আপনার স্বপ্ন হল অলিম্পিকের সোনা। এটা আজ শুধু আপনার নয়, গোটা দেশের স্বপ্ন। সারা দেশের প্রত্যাশা যে আপনি নিজের এবং দেশের স্বপ্ন এবার অবশ্যই পূরণ করবেন। আপনাকে আমার অনেক শুভকামনা। আপনার পরিবারের সবাইকে প্রণাম।
মেরী কম : স্যার আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
প্রধানমন্ত্রী : আসুন, এবার আমরা পি ভি সিন্ধুজির সঙ্গে কথা বলি। সিন্ধুজি, আমাকে বলা হয়েছে যে আপনি টোকিও অলিম্পিকের আগেই অলিম্পিক সাইজ কোর্টে অভ্যাস করতে চাইছিলেন। এখন গৌচিবাউলিতে আপনার প্র্যাক্টিস কেমন চলছে?
পি ভি সিন্ধু : গৌচিবাউলিতে প্র্যাক্টিস খুব ভালো চলছে স্যার। আমি এটা বেছে নিয়েছি কারণ এখন অলিম্পিক স্টেডিয়াম অনেক বড় আর ভিএসি এবং অন্যান্যগুলির সঙ্গে অনেক পার্থক্য থাকে। সেজন্য আমি ভেবেছি যে সমতুল স্টেডিয়ামে অভ্যাস করার সুযোগ থাকলে কেন করব না? ফেব্রুয়ারি থেকেই আমি এখানে প্র্যাক্টিস করছি স্যার। সেজন্য আমি অবশ্যই সরকারের অনুমতি নিয়েছিলাম স্যার। অতিমারীর কারণে এই তাৎক্ষণিক অনুমতিও প্রোটোকল মেনে চলার প্রতিশ্রুতি নিয়ে আমাকে দেওয়া হয়েছিল। আমি তাঁদের কাছে অত্যন্ত কৃতজ্ঞ, কারণ তারা এই অনুমতি দিতে দেরি করেনি। সেজন্য আমি এই বড় স্টেডিয়ামে প্র্যাক্টিসের ব্যাপারটা বেছে নিয়েছি, যাতে টোকিও গিয়ে ততটা সমস্যায় না পড়তে হয়।
প্রধানমন্ত্রী : আপনার পরিবারের সবাই আমার সামনে রয়েছেন, তাঁদেরকে প্রণাম জানাই। আমার মনে আছে, গোপীচাঁদজি একবার একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, তিনি রিও অলিম্পিকের আগে আপনার ফোন নিজের কাছে রেখে দিয়েছিলেন। আপনাকে আইসক্রিম খাওয়ারও অনুমতি দেননি। এখনও কি আপনার আইসক্রিম খাওয়া মানা, নাকি সামান্য ছাড় পেয়েছেন?
পি ভি সিন্ধু : স্যার, ইচ্ছাকে কিছুটা তো নিয়ন্ত্রণ করতেই হয়! কারণ, একজন অ্যাথলিটের জন্য সুষম খাদ্যাভ্যাস অত্যন্ত জরুরি। আর এখন অলিম্পিকের প্রস্তুতি নিচ্ছি। সেই সময়ে খাবারে নিয়ন্ত্রণ তো করতেই হবে। সেজন্য আইসক্রিম তেমন খাই না। আবার মাঝেমধ্যে যে একেবারেই খাই না তা নয়!
প্রধানমন্ত্রী : দেখুন সিন্ধুজি, আপনার বাবা-মা দু’জনেই ক্রীড়া জগতের কৃতি মানুষ। সেজন্য তাঁদের সঙ্গে একটু কথা বলতে ইচ্ছা করছে। আপনাদের নমস্কার! আপনারা এটা বলুন, যখন কোনও শিশুর খেলার প্রতি ঝোঁক হয়, তখন মা-বাবাকে কী কী সমস্যায় পড়তে হয়? অনেকেই তো এই নিয়ে অনেক আশঙ্কার কথা বলেন। আপনারা এরকম মা-বাবাকে কী বার্তা দিতে চান?
অভিভাবক : স্যার, মা-বাবাদের জানা থাকা উচিৎ , যদি তাঁদের সন্তান-সন্ততির স্বাস্থ্য ভালো থাকে, যদি সুস্থ-সবল হয়, তখন একটু খেলাধূলা করলে তাঁদের স্বাস্থ্য আরও ভালো হবে আর সেক্ষেত্রে পড়াশোনার প্রতি মনোযোগও বাড়বে। প্রত্যেক ক্ষেত্রে তাঁরা এগিয়ে যাবে এবং আপনারা সাফল্যের মুখ দেখবেন।
প্রধানমন্ত্রী : আপনারা একজন সফল খেলোয়াড়ের বাবা-মা। আপনাদের মেয়েকে এত বড় খেলোয়াড় করে তুলতে বাবা-মা হিসেবে কী ধরনের ভূমিকা পালন করতে হয়েছে?
অভিভাবক : স্যার, ‘প্যারেন্টিং’ শব্দটার গোড়ায় রয়েছে ‘প্যারেন্টস’। সেজন্য তাঁদেরকে ছেলে-মেয়েকে উৎসাহ যোগানোর ক্ষেত্রে নিবেদিতপ্রাণ হতে হবে। উদ্বুদ্ধ করতে হবে। আপনি তো জানেন, সাফল্য পেলে সরকার প্রত্যেক খেলোয়াড়কে সব ধরনের সুবিধা দেয়। সেজন্য আমাদের মেয়েকে বুঝিয়েছি যে দেশের নাম উজ্জ্বল করার জন্য অনেক পরিশ্রম করতে হবে। সুনাম অর্জনের জন্য মেয়েকে আগে শিখিয়েছি কিভাবে সবাইকে সম্মান জানিয়ে কথা বলতে হয়। সবাইকে সম্মান দাও আর তাঁদের আশীর্বাদ নাও।
প্রধানমন্ত্রী : সিন্ধুজি, আপনার বাবা-মা আপনাকে একজজন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হিসেবে গড়ে তুলতে অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন। তাঁরা নিজেদের দায়িত্ব পালন করেছেন। এবার আপনার পালা। আপনাকে খুব পরিশ্রম করতে হবে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে এবারও আপনি অবশ্যই সফল হবেন। আর এই সাফল্যের পর আপনাদের সঙ্গে দেখা হলে আমি আপনার সঙ্গে আইসক্রিম খাবো।
প্রধানমন্ত্রী : আসুন এলার সঙ্গে কথা বলি। এলা নমস্কার!
এলাভেনিল : নমস্কার স্যার!
প্রধানমন্ত্রী : (গুজরাটিতে অভিবাদন) এলাভেনিল, আমাকে বলা হয়েছে যে আপনি আগে অ্যাথলিটিক্সে যেতে চেয়েছিলেন। তারপর কি হল যে আপনি শ্যুটিং-এ গেলেন?
এলাভেনিল : স্যার আমি প্রকৃতপক্ষে অনেক খেলায় পারদর্শিতা অর্জনের চেষ্টা করেছি। শ্যুটিং-এর আগে ছোটবেলা থেকেই আমার অ্যাথলিটিক্স, ব্যাডমিন্টন, জুডো – এসব খেলা পছন্দ ছিল। আমি সেগুলি অভ্যাস করেছি। কিন্তু যখন আমি শ্যুটিং অভ্যাস শুরু করি তখন অনেক বেশি মজা পাই কারণ এই খেলায় আমাদেরকে অনেক বেশি স্টেডি থাকতে হয়। অনেক বেশি শান্ত থাকতে হয়। যদিও এই শান্তভাব আমার মধ্যে ছিল না, কিন্তু আমি ভাবলাম ঠিক আছে, এ থেকে আমি অনেক কিছু শিখতে পারব! এভাবেই এই খেলার সঙ্গে বেশি যুক্ত হয়ে পড়লাম।
প্রধানমন্ত্রী : সম্প্রতি আমি দূরদর্শনে একটি অনুষ্ঠান দেখছিলাম। সেখানে আপনার মা-বাবার কথা শুনছিলাম। তাঁরা বলছিলেন, আপনি সংস্কার ধামে এই খেলা যেভাবে শুরু করেছেন। আর সেখানে গিয়ে তাঁরা অনেক গর্বের সঙ্গে আপনার কথা বলছিলেন। আচ্ছা, স্কুল জীবন থেকে অলিম্পিক পর্যন্ত আপনার এই যাত্রার কথা দেশের সমস্ত যুব সম্প্রদায় জানতে চায়। দেখুন আমি মণিনগরের বিধায়ক ছিলাম। আর আপনি মণিনগরেই থাকেন। আর যখন আমি খোখরাতে আমার বিধানসভা এলাকায় সবার আগে স্পোর্টস অ্যাকাডেমি চালু করেছিলাম তখন আপনারা সেখানে খেলতে আসতেন। তখন হয়তো আপনি খুবই ছোট ছিলেন। আর এখন তুমি করে বলি? এখন তোমাকে দেখার পর আমার ভীষণ গর্ব হচ্ছে। ঠিক আছে, নিজের সম্পর্কে কিছু বল।
এলাভেনিল : স্যার, আমার শ্যুটিং-এর পেশাদার যাত্রা এই সংস্কার ধাম থেকেই শুরু হয়েছিল। যখন আমি দশম শ্রেণীর ছাত্রী ছিলাম, তখন বাবা-মা বলেছিলেন, ঠিক আছে, খেলার প্রতি যখন এতটাই ঝোঁক, চেষ্টা করে দেখ। তখন ‘স্পোর্টস অথরিটি অফ গুজরাট’ আর ‘গন ফর গ্লোরি শ্যুটিং অ্যাকাডেমি’ থেকে যে মউ স্বাক্ষর করানো হয়েছিল, তারপর এই সংস্কার ধাম থেকেই তাঁরা জেলাস্তরের প্রতিযোগিতা শুরু করেছিল। পাশাপাশি সেখানে পড়াশোনার ব্যবস্থাও ছিল। সারাদিন আমাদের প্রশিক্ষণও সেখানেই হত স্যার। এই যাত্রাপথ খুব ভালো ছিল কারণ আমি সেখান থেকেই শুরু করেছিলাম আর এবার প্রথমবারের মতো অলিম্পিকের জন্য যাচ্ছি। সেজন্য অনেক গর্ব হচ্ছে। এত মানুষের সাহায্য, এত মানুষ আমার জন্য এত কিছু করেছেন, আমাকে পথ দেখিয়েছেন, তাঁদের কথা ভাবলে খুব ভালো লাগে স্যার।
প্রধানমন্ত্রী : এলাভেনিল, এখন আপনি গ্র্যাজুয়েশন করছেন। শ্যুটিং কেরিয়ার এবং পড়াশুনার মধ্যে ভারসাম্য কিভাবে রাখেন?
এলাভেনিল : স্যার আমি তো এর জন্য আমার গুজরাট বিশ্ববিদ্যালয় এবং আমার কলেজ রাজ কলেজকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। কারণ, একবারও এমন হয়নি যে তাঁরা আমাকে বলেছেন, তোমাকে কমপালসারি এতদিন ক্লাস করতে হবে, এই এই কাজ করতে হবে। তাঁরা আমাকে এতটাই ছাড় দিয়েছেন যে আমার পরীক্ষায় বিশেষভাবে বসার ব্যবস্থা করে দিতেন। যে কোনও সেমিনারের রেকর্ডিং আমার জন্য রেখে দেওয়া হত। সবাই খুব সাহায্য করেছে। স্কুল থেকে শুরু করে কলেজ পর্যন্ত।
প্রধানমন্ত্রী : এলাভেনিল, আপনাদের প্রজন্ম উচ্চাকাঙ্ক্ষী এবং পরিণত মনস্কও। আপনি এত কম বয়সে আন্তর্জাতিক মানের সাফল্য অর্জন করেছেন। এক্ষেত্রে আপনার ওপর দেশের বড় প্রত্যাশা। বিশ্বের সবচাইতে বড় মঞ্চে খেলতে যাচ্ছেন। আমি আপনাকে অনেক শুভকামনা জানাই। আপনার মা-বাবাকেও আমার প্রণাম। ভনক্কম।
প্রধানমন্ত্রী : আসুন এখন সৌরভ চৌধুরির সঙ্গে কথা বলি। সৌরভজি নমস্কার! আপনি এত কম সময়ে অলিম্পিকের জন্য কোয়ালিফাই করেছেন, কিভাবে এবং কখন আপনার এই মিশন শুরু হয়েছে?
সৌরভ : স্যার, ২০১৫-তে আমি শ্যুটিং-এ অংশগ্রহণ করেছি। আমাদের গ্রামেই একটি শ্যুটিং অ্যাকাডেমি আছে। সেখানেই আমার যাত্রা শুরু। আমার পরিবার থেকে অনেক সমর্থন পেয়েছি। তাঁরা আমাকে বলেছেন যে তোর যখন এতই পছন্দ, তখন চেষ্টা করা উচিৎ। তাই আমি সেখানে যাই এবং চেষ্টা করি। ধীরে ধীরে ভালো ফল পেতে শুরু করি। ক্রমে আরও ভাল ফল হয়। ভারত সরকার আমার দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়, আর আজ আমি এখানে পৌঁছেছি স্যার।
প্রধানমন্ত্রী : দেখুন আপনার বাড়ির লোকদেরও দেখতে পাচ্ছি, তাঁরা অত্যন্ত গর্বিত চেহারা নিয়ে বসে আছেন। তাঁদের চেহারায় সেই প্রত্যয় দেখতে পাচ্ছি। স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে তাঁদের চোখে বড় বড় স্বপ্ন; তাঁরা আশা করছেন - সৌরভ অনেক সফল হবে। পরিশ্রমের পাশাপাশি শ্যুটিং-এ মানসিক একাগ্রতারও অত্যন্ত প্রয়োজন হয়। সেজন্য কি আপনি যোগাভ্যাস কিংবা এ ধরনের কিছু করেন? আমি জেনে অত্যন্ত খুশি হব আর দেশের নবীন প্রজন্মও খুশি হবে।
সৌরভ : স্যার ধ্যান করি, যোগাসন করি, নিজেকে শান্ত রাখার জন্য আপনার জীবন থেকে প্রেরণা নিই। আপনি কত ঠান্ডা মাথায় গোটা ভারতকে সামলাচ্ছেন! আমার জানতে ইচ্ছা করে, আপনি কিভাবে এতসব করেন।
প্রধানমন্ত্রী : আচ্ছা সৌরভ এটা বলুন, আপনার বন্ধুবান্ধব কি আপনার কাছে এসে আপনার সঙ্গে সেলফি ক্লিক করে? তখন আপনার কেমন লাগে? তারা নিশ্চয়ই আগে এমন করত না!
সৌরভ : না স্যার। কিন্তু এখন যখন বাড়িতে যাই তখন গ্রামের প্রতিবেশী বন্ধুরা আমার কাছে আসে আর সেলফি নেয়। আমার পিস্তলটাকে নিয়েও সেলফি নেয়। তখন খুব ভালো লাগে।
প্রধানমন্ত্রী : সৌরভ, আপনার কথা শুনে বোঝা যাচ্ছে যে আপনি খুবই একাগ্র চিত্তে অভ্যাস করেন। আপনার মতো নব-যুবকের জন্য এটা খুব ভালো ব্যাপার। শ্যুটিং-এ তো একাগ্রতা এবং স্থৈর্য্যের প্রয়োজন রয়েছে। আপনাকে তো এখন অনেক দীর্ঘ যাত্রাপথে এগোতে হবে। দেশের জন্য অনেক সাফল্য আনতে হবে। আমাদের সবার দৃঢ় বিশ্বাস যে আপনি অলিম্পিকে খুব ভালো ফল করবেন আর ভবিষ্যতেও অনেক দূর যাবেন। আপনাকে ও আপনার বাড়ির সবাইকে আমার প্রণাম।
প্রধানমন্ত্রী : আসুন আমরা এখন শরৎ কমলজির সঙ্গে কথা বলি। শরৎজি নমস্কার!
শরৎ : নমস্কার স্যার!
প্রধানমন্ত্রী : শরৎজি আপনি তিনবার অলিম্পিকে অংশগ্রহণ করেছেন। আপনি একজন বিখ্যাত খেলোয়াড়। আপনি এবার যাঁরা প্রথমবার অলিম্পিকে অংশগ্রহণ করতে যাচ্ছেন, তাঁদের জন্য কী পরামর্শ দেবেন?
শরৎ : এবার যাঁরা অলিম্পিকে প্রথমবার যাচ্ছেন, তাঁদেরকে একটি নতুন ধরনের পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। কারণ, এই প্রতিযোগিতা কোভিড-১৯-এর সংক্রমণ চলাকালীন সময়ে হচ্ছে। বিগত তিনটি অলিম্পিকে এই ধরনের কোনও অভিজ্ঞতা ছিল না। সেখানে আমাদের একাগ্রতা সম্পূর্ণভাবেই খেলাধূলার দিকে ছিল। অন্যান্য নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা, সতর্কতার নিয়মাবলী পালন করতে হত না। কিন্তু এবার খেলা ছাড়াও আমাদের অন্যান্য দিকে খেয়াল রাখতে হবে। আমি এটাই বলব যে, নতুন যাঁরা যাচ্ছেন তাঁরা নিজেদের খেলার অভ্যাসের দিকে যতটা গুরুত্ব দেবেন, একইসঙ্গে সমস্ত করোনা প্রতিরোধী নিয়মাবলী মেনে চলবেন। সঠিকভাবে নিজেকে মেন্টেইন না করলে আমরা প্রতিযোগিতা থেকে বেরিয়ে পড়তে পারি। আমাদের সমস্ত নিয়মাবলী মেনে চলতে হবে। আর যেভাবে আমাদের অলিম্পিকে দেশের প্রতিনিধিত্ব করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, আমাদের সম্পূর্ণ লক্ষ্য এই খেলার দিকে দেওয়া উচিৎ। যতটা সম্ভব আমরা খেলাধূলার দিকে লক্ষ্য রেখে কোভিড নিয়মাবলী পালন করে চলব।
প্রধানমন্ত্রী : শরৎজি, আপনি যখন খেলতে শুরু করেছিলেন, তখন থেকে আজ পর্যন্ত টেবিল টেনিসের আবহে কি কোনও পরিবর্তন এসেছে? খেলা সংক্রান্ত সরকারি বিভাগগুলির দৃষ্টিভঙ্গিতে কি কোনও পরিবর্তন অনুভব করেছেন?
শরৎ : অনেক বেশি। অনেক পার্থক্য এসেছে। যেমন ২০০৬-এ যখন আমি প্রথমবার কমনওয়েলথ গেমসে স্বর্ণ পদক জিতেছিলাম আর ২০১৮-য় যখন আমরা সবাই মিলে স্বর্ণ পদক জিতেছি, এই দুটির মধ্যে এই ১২ বছরের ব্যবধান ছাড়াও অনেক পার্থক্য ছিল। বিশেষ করে, খেলাধূলা দেশে ক্রমে একটি পেশাদার ক্ষেত্র হয়ে উঠে এসেছে। ২০০৬-এ যখন আমি জিতেছিলাম, তখন খেলাধূলা এতটা পেশাদার বিষয় ছিল না। অর্থাৎ, পড়াশোনাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। খেলাধূলা ছিল একটা সাইডলাইনের বিষয়। কিন্তু এখন এমন নয়। অনেক গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। সম্পূর্ণ সরকার খেলাধূলাকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিচ্ছে। বেসরকারি ক্ষেত্রগুলিও অনেক বেশি গুরুত্ব নিয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। এর পাশাপাশি, খেলাধূলাকে পেশায় পরিণত করার ক্ষেত্রে এখন অনেক বেশি ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা এগিয়ে আসছে। তাঁদের মা-বাবাও খুব উৎসাহ দেখাচ্ছেন। তাঁরা একটা গ্যারান্টি পাচ্ছেন। এই গ্যারান্টির ফলে তাঁদের মনে প্রত্যয় বাড়ছে যে, আমার শিশুটি যদি খেলাধূলায় যায়, তাহলে সে নিজেকে সামলাতে পারবে। নিজের জীবন তৈরি করতে পারবে। তখন আমরা মানসিক দিক থেকে অনেক ইতিবাচক হয়ে উঠি।
প্রধানমন্ত্রী : শরৎজি, আপনার কাছে শুধুই টেবিল টেনিস নয়, বড় মঞ্চে খেলার অনেক বেশি অভিজ্ঞতা আছে। আমার মনে হয়, এই অভিজ্ঞতা আপনার জীবনে তো কাজে লাগবেই, পাশাপাশি টোকিও অলিম্পিকে অংশগ্রহণকারী গোটা দলের কাজে লাগবে। আপনি একটি বড় ভূমিকা পালন করতে চলেছেন। এবার এক প্রকার গোটা দলকেই একটি বিশেষ ভূমিকায় আপনারা সামনে এগিয়ে আসতে দেখতে পাচ্ছেন। আর আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে, নিজের খেলার পাশাপাশি সেই দলকে সামলানোর ক্ষেত্রেও আপনার অনেক বড় অবদান থাকবে আর আপনি তা খুব ভালোভাবেই পালন করবেন। আমার সম্পূর্ণ ভরসা আছে। আমি আপনাকে এবং আপনার গোটা দলকে অনেক শুভকামনা জানাই।
প্রধানমন্ত্রী : আসুন এবার মণিকা বাত্রাজির সঙ্গে কথা বলি। মণিকাজি নমস্কার!
মণিকা : নমস্কার স্যার!
প্রধানমন্ত্রী : মণিকাজি, আমাকে বলা হয়েছে যে আপনি টেবিল টেনিস খেলার পাশাপাশি গরীব শিশুদেরকেও এই খেলা শেখান। তাদেরকে আর্থিকভাবে সাহায্যও করেন। আপনি নিজেই একজন নবীন মানুষ। আপনার মাথায় এই ভাবনা কোথা থেকে এসেছে?
মণিকা : স্যার, প্রথমবার যখন পুণেতে খেলতে আসি, তখন দেখি যে অনাথ এবং গরীব বাচ্চারা খুব ভালো খেলছে। আর এখানে যে কেন্দ্রটি রয়েছে সেখানে যিনি শেখাতেন, তিনিও অত্যন্ত ভিন্নভাবে শেখাতেন। আমার মনে হয়, এই বাচ্চারা যেসব জিনিস পায়নি, বা যেগুলির অভাবে অনেক কিছু করতে পারে না, সেসব সরঞ্জাম দিয়ে তাদেরকে সাহায্য করলে তারা খুব ভালো খেলোয়াড় হয়ে উঠতে পারবে। তখন আমার মনে হয়, যেভাবে এই বাচ্চারা খেলে, তাদের দেখেই আমি নিজেকে উজ্জীবিত হতাম, অবাক হতাম, এত ছোট বয়সে তারা কিভাবে এই খেলা চালিয়ে যাচ্ছে, কেউ তাদের সঙ্গে নেই, তবু এত অল্প বয়সে তারা এতটাই ভালো খেলছে! তাই তাদের দেখাশোনা করে আমি নিজেকে উজ্জীবিত করি।
প্রধানমন্ত্রী : মণিকা, আমি দেখেছি যে আপনি কখনও কখনও খেলার সময় নিজের হাতে তেরঙ্গা পেইন্ট করান। এটা পেইন্ট করানোর ভাবনা; আপনার প্রেরণা সম্পর্কে বলুন।
মণিকা : একটি মেয়ে হিসেবে আমি এগুলি পছন্দ করি। ভারতের পতাকা নিজের কাছে রাখি। আর বিশেষ করে, যখন আমি সার্ভিস করি, তখন খেলার সময়েও যদি আমার বাঁ হাতের দিকে আমার চোখ যায়, কিংবা ভারতের জাতীয় পতাকা আমার চোখে পড়ে তাহলে আমি অনেক বেশি প্রেরণা পাই। কারণ, আমি যখনই ভারতের জন্য কিছু ভাবি, কিংবা দেশের জন্য খেলতে যাই, তখন আমি একটা জিনিস সঙ্গে রাখি, তা হল ভারতের জাতীয় পতাকা! যা আমার হৃদয়ের খুব কাছাকাছি, যা আমাকে হৃদয়ের সঙ্গে জুড়ে রাখে!
প্রধানমন্ত্রী : মণিকা, আমাকে বলা হয়েছে যে আপনার খুব নাচের শখ রয়েছে। আপনার এই নাচের শখ কি আপনার জীবনে স্ট্রেস বাস্টারের মতো কাজ করে?
মণিকা : হ্যাঁ স্যার! যেমন অনেকের গান শুনলে হয়, তেমনই নাচ আমার জন্য স্ট্রেস বাস্টারের কাজ করে। যখনই আমি কোনও প্রতিযোগিতায় খেলতে যাই, কিংবা কিছুক্ষণ অবসর যাপন করি, তখন কিছুটা সময় পেলে নিজের রুমে আমি নাচি। খেলাতে নামার আগেও আমি কিছুটা নাচ অভ্যাস করে যাই। কারণ, তাহলে আমার শরীর-মন খুব ভালো লাগে আর আত্মবিশ্বাসে ভরপুর থাকি।
প্রধানমন্ত্রী : আমি এমন প্রশ্ন করছি যে তোমার বাড়ির সবাই, তোমার প্রিয়জনেরা হাসাহাসি করছে। আচ্ছা মণিকা, তুমি আন্তর্জাতিক স্তরের একজন চ্যাম্পিয়ন। তুমি বাচ্চাদেরকেও নিজের খেলার সঙ্গে যুক্ত করছ। তোমার সাফল্য শুধু এই বাচ্চাদের নয়, গোটা দেশের সমস্ত টেবিল টেনিস খেলোয়াড়দের প্রেরণা যোগাবে। আমি তোমাকে অনেক অনেক শুভকামনা জানাই। তোমার সমস্ত বন্ধুরা অত্যন্ত উৎসাহের সঙ্গে আজকের এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেছে। তোমার পরিবারের সবাইকে দেখতে পাচ্ছি। তাঁদের সবাইকে আমি অনেক অনেক শুভকামনা জানাই। অনেক অনেক ধন্যবাদ।
প্রধানমন্ত্রী : আসুন এখন ভিনেশ ফোগাটের সঙ্গে কথা বলি।
ভিনেশ : স্যার নমস্কার!
প্রধানমন্ত্রী : ভিনেশ আপনি ফোগাট পরিবার থেকে এসেছেন। দেশের ক্রীড়াক্ষেত্রে আপনার গোটা পরিবারের অবদান অনস্বীকার্য। এই পরিচয়ের ফলে কি আপনাকে একটু বেশি চাপে থাকতে হয়? একটু বেশি দায়িত্ব নিজের কাঁধে চলে আসে?
ভিনেশ : ঠিক বলেছেন স্যার! দায়িত্ব তো আসেই! কারণ, পরিবারে খেলাধূলার আবহ রয়েছে। তাঁরা অলিম্পিক নিয়ে যে স্বপ্ন দেখছে, যখন আমি পদক নিয়ে আসব, তখনই হয়তো তাঁদের প্রত্যাশা পূরণ হবে। এমনিতে তো স্যার গোটা দেশই প্রত্যাশা করছে। পরিবারের সদস্যদের প্রত্যাশা তো বেশি হবেই। আর আমার মনে হয়, এই প্রত্যাশা আমাদের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন। কারণ, যখন প্রত্যাশা থাকে তখনই আমরা সামান্য অতিরিক্ত চেষ্টা করি। একটা ভিন্ন মাত্রায় পৌঁছনোর চেষ্টা করি। ভালো লাগে। কিন্তু কোনও চাপ নেই। ভালো খেললে দেশকে গর্বিত করার সুযোগ আরও পাব।
প্রধানমন্ত্রী : দেখুন গতবার চোট-আঘাতের জন্য আপনাকে রিও অলিম্পিক থেকে সরে যেতে হয়েছিল। গত বছরও আপনি অসুস্থ ছিলেন। কিন্তু এই সমস্ত প্রতিকূলতা অতিক্রম করে আপনি তারপর থেকে ক্রমাগত ভালো প্রদর্শন করে যাচ্ছেন। এত চাপকে সাফল্যে পরিবর্তিত করা একটি বড় ব্যাপার। আপনি কিভাবে এই সাফল্য পেয়েছেন।
ভিনেশ : স্যার, কঠিন অবশ্যই। কিন্তু একজন অ্যাথলিট হিসেবে এই প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াই-ই আমাদেরকে টপ লেভেলে পৌঁছতে সাহায্য করে। আমাদের মানসিকভাবে দৃঢ় করে তোলে আর একজন অ্যাথলিট হিসেবে আমি মনে করি যে এটা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। আমাদের সেই লেভেলে নিয়ে যেতে, পুশ করতে পরিবারের অনেক বড় ভূমিকা থাকে। পরিবারের সমর্থন থাকলে আমরা সমস্যার বিরুদ্ধে লড়তে পারি। আমাদের ফেডারেশনের সমস্ত সদস্যরাও সম্পূর্ণ সততার সঙ্গে আমাদের সমর্থন করেছেন। তাঁরা যেন নিরাশ না হন, সেটা দেখাও আমাদের কাজ। তাঁদের যে আশা, সেটা বাস্তবায়িত করতেই হবে। তাঁরা আমাদেরকে ক্রমাগত প্রেরণা যুগিয়ে যাচ্ছেন। আমাদের যেন সঠিক সময়ে অনেক কিছু মনে থাকে সেজন্য তাঁরা অভ্যাস করাতে থাকেন। যে কোনরকম চোট-আঘাতকে কিভাবে এড়িয়ে যাওয়া যায়, সে সম্পর্কেও প্রশিক্ষণ দিতে থাকেন।
প্রধানমন্ত্রী : আমি সম্পূর্ণ বিশ্বাস করি যে আপনি টোকিওতে খুব ভালো ফল করবেন। আমরা আশা রাখছি ভবিষ্যতে আপনার ওপর একটি সিনেমা তৈরি হতে চলেছে।
ভিনেশ : স্যার, ব্যস আপনাদের প্রার্থনা কাজে লাগবে আর আমি চাই যে যতজন অ্যাথলিট অলিম্পিকে খেলতে যাচ্ছি, প্রত্যেকেই তাঁদের সেরাটা দেবে। তাহলে নিশ্চিতভাবে মেডেল আসবে। গোটা দেশ যেভাবে প্রত্যাশায় রয়েছে, আমরা যেন তাঁদেরকে নিরাশ না করি।
প্রধানমন্ত্রী : আপনার মা-বাবাও এই বৈঠকে আছেন। আপনার বাবা-মা আপনার জীবনে এক প্রকার গুরুর ভূমিকায় রয়েছেন। আমি আপনার বাবার সঙ্গে একটু কথা বলতে চাইব। ভিনেশের মা-বাবাকে আমি সামনে দেখতে চাই। নমস্কার! আপনাদেরকে আমি একটু অন্য ধরনের প্রশ্ন করছি। যখন কেউ সুস্থ-সবল থাকে তখন আমাদের দেশবাসী বলে, কোন চাক্কির আটা খাও? তো ফোগাট পরিবার মেয়েদেরকে কোন চাক্কির আটা খাওয়ান? আর এটাও বলুন ভিনেশকে আপনারা কী মন্ত্র দিয়ে টোকিও পাঠাচ্ছেন!
অভিভাবক : দেখুন, আমাদের গ্রামের চাক্কি থেকেই গম পিষিয়ে আমরা আটা খাই। বাড়িতে গরু-মোষ রয়েছে। সেই গরু-মোষের দুধ, দই, ঘি, মাখন আর ভিনেশ ২০১৬-তে যেভাবে আঘাত পেয়ে প্রতিযোগিতা থেকে বেরিয়ে এসেছিল, আমি গোটা দেশের সমর্থকদের ধন্যবাদ জানাই যে তাঁদের আশীর্বাদেই আমাদের মেয়ে আজ আবার আপনাদের চোখের মণি হয়ে উঠেছে। আমি মেয়েকে একটাই প্রতিশ্রুতি দিয়েছি। যদি অলিম্পিকে স্বর্ণপদক নিয়ে আসিস তাহলে অবশ্যই বিমানবন্দরে নিতে যাব। না হলে যাব না। আর আজও আমি এই সিদ্ধান্তে অটল। গতবার আমাদের মেয়ে আঘাতের কারণে পারেনি, কিন্তু এবারের অলিম্পিকে সম্পূর্ণ আশাবাদী। আপনারা তার যে কোনও সাম্প্রতিক প্রতিযোগিতার দিকে তাকান। এবার আমরা সম্পূর্ণ ভরসা রেখেছি। মেয়ে এবার স্বর্ণপদক নিয়ে আসবে। আমাদের স্বপ্ন পূরণ করবে।
প্রধানমন্ত্রী : আপনার মা-বাবার বার্তা থেকে আমারও ভরসা বেড়েছে যে ভিনেশ, আপনি অবশ্যই জিতবেন। আপনি লড়াই করেন, আছাড় খান, আবার উঠে দাঁড়ান কিন্তু হার মানেন না। আপনি পরিবার থেকে যা শিখেছেন তা অবশ্যই এবারের অলিম্পিকে দেশের কাজে লাগবে। আপনাকে অনেক অনেক শুভকামনা।
প্রধানমন্ত্রী : আসুন, আমরা এবার সাজন প্রকাশজির সঙ্গে কথা বলি। সাজনজি নমস্কার! আমাকে বলা হয়েছে যে আপনার মা-ও অ্যাথলিটিক্সে দেশের গৌরব বৃদ্ধি করেছেন। মায়ের কাছ থেকে আপনি কী কী শিখেছেন?
সাজন প্রকাশ : হ্যাঁ স্যার, আমার মা আমার জীবনে সবকিছু। তিনি খেলোয়াড় ছিলেন। তিনি আমাকে লড়তে এবং যুঝতে, সব ধরনের প্রতিকূলতা অতিক্রম করে সাফল্যের পথে এগিয়ে যাওয়ার শিক্ষা দিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী : আমাকে বলা হয়েছে যে আপনার বড় চোট লেগেছিল। আপনি কিভাবে সেই আঘাত সারিয়ে উঠেছেন?
সাজন প্রকাশ : সবার আগে ১৮ মাস স্যুইমিং পুল বন্ধ থাকায় আমি অভ্যাস করতে পারিনি। তারপর আঘাত পাওয়ায় কিছুদিন পুলে যেতে পারিনি। আমি খুবই হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। কিন্তু আমার কোচ গৌরি আন্টি এবং কেরালা পুলিশের সহকর্মীদের সমর্থনে আবার সুস্থ হয়ে ফিরে এসেছি। ভারতের সাঁতার জগতের প্রত্যেক ব্যক্তি আমাকে সমর্থন করেছেন, যাতে আমি মানসিকভাবে দৃঢ়তার সঙ্গে আন্তর্জাতিক মানের সাফল্য আনার জন্য প্রস্তুতি নিতে পারি।
প্রধানমন্ত্রী : সাজন, আপনি অলিম্পিকে যাওয়ার আগে ভারতীয় ক্রীড়া জগতে সোনার ইতিহাস রচনা করেছেন। আমার আশা যে আপনার এই সাফল্য অলিম্পিকে আরও সোনালী সাফল্য এনে দেবে।
প্রধানমন্ত্রী : এবার আমরা মনপ্রীতের সঙ্গে কথা বলব। মনপ্রীত, আমাকে বলা হয়েছে যে করোনার প্রথম ঢেউয়ে আপনারা, সমস্ত সাথীরা একসঙ্গে বেঙ্গালুরুতে ছিলেন আর সবাই মিলে করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। এতে কি টিম স্পিরিটে কোনও প্রভাব পড়েছে?
প্রধানমন্ত্রী : এবার আমরা মনপ্রীতের সঙ্গে কথা বলব। মনপ্রীত, আমাকে বলা হয়েছে যে করোনার প্রথম ঢেউয়ে আপনারা, সমস্ত সাথীরা একসঙ্গে বেঙ্গালুরুতে ছিলেন আর সবাই মিলে করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। এতে কি টিম স্পিরিটে কোনও প্রভাব পড়েছে?
মনপ্রীত : স্যার সেই সময়ের কথা আমি বলতে চাই, সরকার খুব বড় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল। আমরা ভাবছিলাম, নিজেদের দলের মনোবল কিভাবে দৃঢ় করব? আমরা সবাই মিলেমিশে কাজ করেছি। আমরা খেলোয়াড়রা পরস্পরের প্রেক্ষাপট সম্পর্কে জেনেছি, কিভাবে তাঁদের পরিবার অনেক কষ্ট করে তাঁদেরকে এই জায়গায় পৌঁছে দিয়েছে! এসব সম্পর্কে আলোচনার ফলে আমাদের টিম বন্ডিং আরও দৃঢ় হয়। আর স্যার আমরা জানতাম যে এক বছর বাকি আছে। কাজেই আমরা নিজেদেরকে আন্তর্জাতিক মানের প্রতিযোগিতার জন্য তৈরি করে ফেলতে পারব। আমরা সেজন্য অন্যান্য দেশের দলের শক্তি ও দুর্বলতাগুলি নিয়েও আলাপ-আলোচনা করেছি। কিভাবে আমরা তাঁদের আক্রমণ করতে পারি? এই দীর্ঘ অনুশীলন আমাদের সহায়ক হবে বলে আমার বিশ্বাস।
প্রধানমন্ত্রী : অলিম্পিক হকির ক্ষেত্রে আমাদের দেশের উজ্জ্বল ইতিহাস রয়েছে। এক্ষেত্রে একটু বেশি দায়িত্ব নিয়ে খেলতে হবে আর পূর্বজদের রেকর্ডকে স্পর্শ করতে হবে। এসব কথা ভেবে খেলার সময় আপনাদের মাথায় কোনও অতিরিক্ত চাপ নেই তো?
মনপ্রীত : না স্যার একদম নেই। হকিতেই ভারত এখন পর্যন্ত সবচাইতে বেশি পদক জিতেছে। আটটি স্বর্ণপদক। সেজন্য আমরা গর্ববোধ করি। আমরাও সেই খেলাই খেলি। আর যখনই আমরা অলিম্পিকের মতো মঞ্চে খেলতে যাই, তখন এটাই চেষ্টা করি যাতে আমরা আমাদের সেরাটা দিতে পারি আর ভারতের জন্য পদক জিতে আনতে পারি।
প্রধানমন্ত্রী : আপনার পরিবারের সবাইকে দেখতে পাচ্ছি। তাঁদেরকে প্রণাম জানাই। তাঁদের আশীর্বাদ আপনাদের পাথেয় হবে। দেশবাসীর শুভকামনাও আপনাদের সঙ্গে রয়েছে। মনপ্রীত, আপনার সঙ্গে কথা বলার সময় আমার মেজর ধ্যানচাঁদ, কে ডি সিং বাবু, মহম্মদ সাহিদের মতো মহান হকি খেলোয়াড়দের কথা মনে পড়ছে। আপনারা হকির মহান ইতিহাসকে আরও উজ্জ্বল করবেন - এটাই আমার এবং গোটা দেশের বিশ্বাস!
প্রধানমন্ত্রী : এখন আমি সানিয়াজির সঙ্গে কথা বলব। সানিয়াজি আপনি অনেক গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতেছেন। অনেক বড় বড় খেলোয়াড়ের সঙ্গে খেলেছেন। আপনার মতে টেনিসের চ্যাম্পিয়ন হতে কী কী গুণ দরকার? কারণ, আমি দেখেছি আজকাল টিয়ার-২, টিয়ার-৩ শহরগুলিতেও আপনারা অত্যন্ত জনপ্রিয় আর সেখানকার অনেকেই টেনিস শিখতে চাইছেন।
সানিয়া : হ্যাঁ স্যার! আমার মনে হয় টেনিস একটা এমন আন্তর্জাতিক ক্রীড়া যাতে আমি যখন শুরু করেছিলাম, ২৫ বছর আগে, তখন দেশের বেশি মানুষ টেনিস খেলত না। কিন্তু আজ যেমনটি আপনি বলছেন, অনেক ছেলে-মেয়েরা টেনিস খেলতে চাইছে। টেনিসকে পেশা করে তুলতে চাইছে। তারা বিশ্বাস করে যে টেনিসের বড় খেলোয়াড় হয়ে উঠতে পারবে। সেজন্য তাদের যথাযথ সমর্থন, সহযোগিতা, একাগ্রতা এবং লক্ষ্য স্থির করে এগিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। এই ইচ্ছাশক্তিই তাদের পরিশ্রম করতে প্রেরণা যোগাবে। প্রতিভা না থাকলে কোন কিছুই হয় না - তা টেনিস হোক কিংবা অন্য যে কোনও খেলা। কিন্তু এখন সুযোগ-সুবিধা অনেক ভালো হয়েছে। ২৫ বছর আগের তুলনায় এখন অনেক ভালো স্টেডিয়াম তৈরি হয়েছে। অনেক হার্ড কোর্ট তৈরি হয়েছে। আমি আশা করি, ভারত থেকে এখন অনেক আন্তর্জাতিক মানের টেনিস খেলোয়াড় উঠে আসবে।
প্রধানমন্ত্রী : অলিম্পিকে আপনার সঙ্গী অঙ্কিতা রায়নার সঙ্গে আপনার পার্টনারশিপ কেমন চলছে? আপনাদের দু’জনের প্রস্তুতি কেমন?
সানিয়া : অঙ্কিতা একজন যুবা খেলোয়াড়। খুব ভালো খেলছে। তাঁর সঙ্গে খেলার জন্য আমি খুব উত্তেজিত। গত বছর আমরা ফেব্রুয়ারিতে ফেড কাপে একসঙ্গে খেলেছি। তখন আমরা খুব ভালো ফল করেছি। কিন্তু আমরা অলিম্পিকে আরও ভালো করতে চাই। এটা আমার চতুর্থ অলিম্পিক। অঙ্কিতার প্রথম অলিম্পিক। আমার বয়সের খেলোয়াড়ের সঙ্গে নবীন প্রজন্মের খেলোয়াড়ের জুটি বাঁধার প্রয়োজন ছিল। আমার মনে হয় অঙ্কিতা সেই প্রয়োজনীয়তা খুব ভালোভাবেই পূরণ করবে।
প্রধানমন্ত্রী : সানিয়া, আপনি আগেও ক্রীড়াক্ষেত্রে সরকারি বিভাগগুলির কাজকর্ম দেখেছেন। বিগত ৫-৬ বছরে আপনি কী ধরনের পরিবর্তন অনুভব করেছেন?
সানিয়া : যেমনটা আপনাকে বললাম, আমার মনে হয় শুধু ৫-৬ বছর নয়। যখন থেকে আমাদের দেশে কমনওয়েলথ গেমস হয়েছে, তখন থেকেই আমাদের দেশে ক্রিকেট ছাড়াও অন্যান্য খেলায় এমন অনেক ক্রীড়াবিদ উঠে এসেছেন যাঁরা দেশের মুখ উজ্জ্বল করেছেন আর খুব ভালো সাফল্য পেয়েছেন। গত ৫-৬ বছরে এই আত্মবিশ্বাস আরও বেড়েছে। আর আপনি তো সরকার থেকে সব সময়েই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে রেখেছেন। আমি যখন আপনার সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে দেখা করেছিলাম, তখন আপনি আমাকে এটাই বলেছিলেন যে, আপনি প্রত্যেক ক্ষেত্রে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবেন। তো এভাবেই গত ৫-৬ বছরে অনেক কিছু হয়েছে, যার ফলে বিগত অলিম্পিকগুলির থেকে এবারের অলিম্পিকের প্রস্তুতিতে অনেক পার্থক্য এসেছে।
প্রধানমন্ত্রী : সানিয়া, আপনি যেমন চ্যাম্পিয়ন, তেমনই ফাইটার। আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে আপনি এবারের অলিম্পিকে আরও ভালো এবং সফল খেলোয়াড় হিসেবে উঠে আসবেন। আপনাকে অনেক অনেক শুভকামনা জানাই।