মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
নতুন সংসদ ভবনে এটি প্রথম এবং একটি ঐতিহাসিক অধিবেশন। সেজন্য আমি সমস্ত মাননীয় সাংসদকে এবং সকল দেশবাসীকে অনেক অনেক শুভকামনা জানাই।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
আজ নতুন সংসদ ভবনে প্রথম দিনের প্রথম অধিবেশনে আপনারা আমাকে আমার বক্তব্য রাখার সুযোগ দিয়েছেন, সেজন্য আমি আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা জানাই। এই নতুন সংসদ ভবনে আমি আপনাদের সবাইকে, সমস্ত সংসদ সদস্যকে হৃদয় থেকে ধন্যবাদ জানাই। এই সুযোগ অনেক দিক থেকে অভূতপূর্ব। স্বাধীনতার অমৃতকালের এটি ঊষাকাল। ভারত অনেক লক্ষ্যসাধনের জন্য, অনেক নতুন সঙ্কল্প নিয়ে এই নতুন সংসদ ভবনে তার ভবিষ্যৎ নির্ধারণের জন্য এগিয়ে চলেছে। বিজ্ঞান জগতে চন্দ্রযান-৩-এর গগনচুম্বী সাফল্য প্রত্যেক দেশবাসীকে গর্বিত করেছে । ভারতের সভাপতিত্বকালে জি-২০ শিখর সম্মেলনের অসাধারণ আয়োজন বিশ্বে যে প্রভাব ফেলেছে তা ভারতের জন্য অদ্বিতীয় সাফল্যের সুযোগ এনে দিয়েছে। এই আলোতে আজ আধুনিক ভারত এবং আমাদের প্রাচীন গণতন্ত্রের প্রতীক নতুন সংসদ ভবনের শুভারম্ভ হয়েছে। আরেকটি সুখকর সংযোগ হল যে আজ গণেশ চতুর্থীর শুভ দিন। গণেশজি শুভ এবং সিদ্ধির দেবতা, গণেশজি বিবেক এবং জ্ঞানেরও দেবতা। এই পবিত্র দিনে আমাদের এই শুভারম্ভ সঙ্কল্প থেকে সিদ্ধির পথে একটি নতুন বিশ্বাস নিয়ে যাত্রা শুরু করার সুযোগ এনে দিয়েছে।
স্বাধীনতার অমৃতকালে আমরা যখন নতুন নতুন সঙ্কল্প নিয়ে এগিয়ে চলেছি তখন ..., আজ যখন গণেশ চতুর্থীর উৎসব পালিত হচ্ছে, সেই দিনে লোকমান্য বাল গঙ্গাধর তিলকজির কথা মনে পড়া অত্যন্ত স্বাভাবিক। স্বাধীনতা আন্দোলনে লোকমান্য তিলকজি গণেশ উৎসবকে একটি সার্বজনিক গণেশ উৎসব রূপে পালন করে সমগ্র দেশে এই উৎসবকে ‘স্বরাজ’-এর আকাঙ্ক্ষা জাগানোর মাধ্যম করে তুলেছিলেন। লোকমান্য তিলকজি গণেশ উৎসবের সঙ্গে ‘স্বরাজ’-এর কল্পনা করে শক্তি প্রদান করেছেন, তেমনভাবেই আজ এই গণেশ চতুর্থীর উৎসব সমৃদ্ধ ভারতের প্রেরণা যোগাবে। লোকমান্য তিলকজি ‘স্বতন্ত্র ভারত স্বরাজ’-এর কথা বলেছিলেন, আজকের গণেশ চতুর্থীর পবিত্র দিবসে তাঁর থেকে প্রেরণা নিয়ে আমরা সমৃদ্ধ ভারত - গড়ার লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে চলেছি। এই উপলক্ষে সকল দেশবাসীকে আরও একবার আমি অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
আজ ‘সম্বতসরী’ উৎসবও পালিত হচ্ছে। এটি আমাদের এমন একটি অদ্ভুত পরম্পরা, যে দিনটিকে ক্ষমাবাণীর উৎসবও বলা হয়। তাই আজ ‘মিচ্ছামী দুক্কড়ম’ উচ্চারণের দিন। এই উৎসব মন দিয়ে, কাজের মাধ্যমে, কথার মধ্য দিয়ে যদি আমরা জ্ঞাত বা অজ্ঞাতসারে কাউকে আঘাত দিয়ে থাকি, তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনার সুযোগ এনে দেয়। আমার পক্ষ থেকেও সম্পূর্ণ বিনম্রতার সঙ্গে, সম্পূর্ণ অন্তঃকরণ থেকে আপনাদের সবাইকে, সমস্ত সংসদ সদস্যদেরকে আর আপনাদের মাধ্যমে সকল দেশবাসীকে জানাই ‘মিচ্ছামী দুক্কড়ম’। আজ যখন আমরা একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করছি তখন আমাদের অতীতের সমস্ত তিক্ততা ভুলে এগিয়ে যেতে হবে। সম্পূর্ণ ইচ্ছাশক্তি দিয়ে আমরা এখান থেকে আমাদের আচরণ, আমাদের বাণী এবং আমাদের অনেক সঙ্কল্পের মাধ্যমে যাই-ই করব, তা যেন দেশের জন্য, রাষ্ট্রের প্রত্যেক নাগরিকের জন্য প্রেরণার কারণ হয়ে ওঠে। আর আমাদের প্রত্যেকেরই উচিত এই দায়িত্ব পালনের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করা।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
এই সংসদ ভবন নতুন, এখানে সবকিছু নতুন। সমস্ত ব্যবস্থা নতুন। এমনকি, এখানে আপনারা নিজেদেরকে নতুন ভাবে উপস্থাপিত করেছেন। সবকিছু নতুন। কিন্তু এখানে গতকাল ও আজ-কে যুক্ত করার একটি অনেক বড় ঐতিহ্যের প্রতীকও উপস্থিত রয়েছে, সেটি নতুন নয়, সেটি পুরনো। সেটি স্বাধীনতার প্রথম সূর্যকিরণের সাক্ষী ছিল, আর আজও আমাদের সকলের মধ্যে উপস্থিত রয়েছে। সেটি আমাদের সমৃদ্ধ ইতিহাসের সঙ্গে যুক্ত করছে আর যখন আজ আমরা এই নতুন সংসদ ভবনে প্রবেশ করছি, সংসদীয় গণতন্ত্রের যখন এই নতুন গৃহপ্রবেশ হচ্ছে, তখন এখানে স্বাধীনতার প্রথম সূর্যকিরণের এই সাক্ষী, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মগুলিকেও প্রেরণা যোগাবে, তা হলে এই পবিত্র ‘সেঙ্গল’। আর এটা সেই ‘সেঙ্গল’ যেটিকে স্পর্শ করেছিলেন স্বয়ং ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী পণ্ডিত নেহরুও। পণ্ডিত নেহরুর হাতে এটিকে পারম্পরিক পদ্ধতিতে পুজো করার মাধ্যমে আমাদের স্বাধীনতার পর্ব শুরু হয়েছিল। আর সেজন্যই একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অতীতকে আমাদের সঙ্গে যুক্ত করছে এই ‘সেঙ্গল’। তামিলনাড়ুর মহান পরম্পরার এই প্রতীকই তো দেশকে ঐক্যবদ্ধ রাখে। এটি দেশের একতার প্রতীকও। আর আমরা সবাই সৌভাগ্যবান, যে পবিত্র ‘সেঙ্গল’ সব সময় পণ্ডিত নেহরুর হাতে শোভা পেত তা আজও আমাদের সকলকে প্রেরণা যোগাচ্ছে। এর থেকে বড় গর্বের বিষয় কী হতে পারে মাননীয় সাংসদগণ!
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
এই অনিন্দ্যসুন্দর নতুন সংসদ ভবনের সৌন্দর্য আধুনিক ভারতের গরিমাকেও মহিমামণ্ডিত করছে। আমাদের শ্রমিকরা, আমাদের ইঞ্জিনিয়াররা, আমাদের কারিগররা তাঁদের পরিশ্রম ও ঘামের বিনিময়ে করোনার সঙ্কটকালেও এর জন্য লাগাতার কাজ করে গেছেন। এই কাজ যখন চলছিল তখন আমার বারবার তাঁদের মধ্যে আসার সুযোগ হয়েছে। বিশেষ করে আমি তাঁদের স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তিত ছিলাম। সেজন্যই বারবার দেখা করতে আসতাম। কিন্তু তাঁরা যে নিষ্ঠা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছিলেন তার ফলস্বরূপ তাঁরা এত দ্রুত আমাদের এত বড় স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করে দেখিয়েছেন। আজ আমি আমাদের সেই সমস্ত শ্রমিকদের, কারিগরদের এবং তাঁদের নেতৃত্ব প্রদানকারী ইঞ্জিনিয়ারদের হৃদয় থেকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। কারণ, তাঁদের দ্বারা নির্মিত এই অনিন্দ্যসুন্দর ভবন আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মগুলিকেও প্রেরণা যোগাবে। ত্রিশ হাজারেরও বেশি শ্রমিক বন্ধু মাথার ঘাম পায়ে ফেলে পরিশ্রম করেছেন এই অনিন্দ্যসুন্দর ভবনকে গড়ে তুলতে। আর এমন অসাধারণ ভবন তৈরি করেছেন যে কয়েক প্রজন্ম তাঁদের অবদানে উপকৃত হবে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
আমি সেই শ্রমযোগীদেরও প্রণাম জানাই, কিন্তু একটি নতুন পরম্পরা শুরু হয়েছে যার জন্য আমি অত্যন্ত আনন্দিত। এই নতুন সংসদ ভবনে একটি ‘ডিজিটাল বুক’ রাখা হয়েছে। সেই ডিজিটাল বইটিতে সেই সমস্ত শ্রমিকের পরিচয় লেখা রয়েছে যাঁদের পরিশ্রমে এই অনিন্দ্যসুন্দর ভবনটি গড়ে উঠেছে। এই শ্রমিক, কর্মী ও ইঞ্জিনিয়াররা ভারতের কোন প্রান্ত থেকে এসে এই অনিন্দ্যসুন্দর ভবনটি তৈরি করেছেন তা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম জানতে পারবে। অর্থাৎ, তাঁদের পরিশ্রম ও ঘামকে অমরত্ব প্রদানের একটি প্রচেষ্টা এই সংসদ ভবনে হচ্ছে। এটি একটি নতুন সূত্রপাত, শুভ সূচনা এবং আমাদের প্রত্যেকের জন্য অত্যন্ত গর্বের সূচনা। এই উপলক্ষে আমি ১৪০ কোটি ভারতবাসীর পক্ষ থেকে, ভারতের গণতন্ত্রের মহান পরম্পরার পক্ষ থেকে আমাদের এই শ্রমিক, কর্মী ও ইঞ্জিনিয়ারদের অভিনন্দন জানাই।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
আমাদের শাস্ত্রে বলা হয় – ‘য়দ ভাবং তদ ভবতি’। অর্থাৎ, আমাদের মনোভাব যেমন, তেমনই সবকিছু হতে থাকে। ‘য়দ ভাবং তদ ভবতি’ - আর সেজন্যই আমরা যেরকম ভেবেছি, আর যে মনোভাব নিয়ে আমরা এই অনিন্দ্যসুন্দর ভবনে প্রবেশ করেছি, আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আমরা যা ভেবে এসেছি সেরকমভাবেই আমরা নিজেরা হতে থাকব, আর এটাই স্বাভাবিক। সংসদ ভবন বদলেছে। আমি চাইব যে আমাদের মনোভাবও যেন বদলায়, ভাবনাও যেন বদলায়। সংসদ ভবন দেশসেবার সর্বোচ্চ স্থান। এই সংসদ ভবন দলহিতের জন্য নয়, জনহিতের জন্য। আমাদের সংবিধান রচয়িতারা এই পবিত্র সংস্থাটিকে দলহিতের জন্য গড়ে তোলেননি, তাঁরা এটিকে শুধু এবং শুধুমাত্র দেশহিতের জন্য গড়ে তুলেছেন। নতুন সংসদ ভবনে আমরা সবাই যেন নিজেদের বক্তব্য, ভাবনা-চিন্তা এবং আচার-ব্যবহারের মাধ্যমে সংবিধানের মূল উদ্দেশ্যকে মাথায় রেখে কাজ করতে থাকি। সংবিধানের আত্মাকে মানদণ্ড হিসেবে নিয়ে, নতুন সঙ্কল্প অনুসরণ করে, নতুন ভাবনা ও মনোভাব নিয়ে এগিয়ে যাই। অধ্যক্ষ মহোদয়, আমি আশা করি আপনি গতকাল আমাদের সাংসদদের আচার-ব্যবহার সম্পর্কে যেরকম বলছিলেন, আজও বলছিলেন, কিছু কথা স্পষ্টভাবেই বলছিলেন, আর কিছু কথা অন্যান্য প্রসঙ্গে বলছিলেন, আমাদের সাংসদদের আচার-ব্যবহার সম্পর্কে। আমি নিজের পক্ষ থেকে আপনাকে আশ্বস্ত করছি যে আমি আপ্রাণ চেষ্টা করব আর চাইব যে এই সংসদ ভবনের নেতা হিসেবে আপনার আশা পূরণ হবে। আমরা সমস্ত সাংসদরা যেন আপনার প্রত্যাশা পূরণ করি। আমরা যেন সংসদের মর্যাদা ও অনুশাসন পালন করে চলি। দেশবাসী আমাদেরকে দেখছে। সেজন্য আপনি যেভাবে পথনির্দেশ করছেন, সেভাবেই যেন আমরা সবাই চলি।
কিন্তু মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
এখন নির্বাচন অনেক দূরে। এই সংসদ ভবনে বর্তমান সভার হাতে যতটা সময় রয়েছে, আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে আমরা সবাই তার সদ্ব্যবহার করব, আর আমাদের ব্যবহার থেকেই বোঝা যাবে কারা এদিকে বসার জন্য এটিকে ব্যবহার করছেন আর কারা ওদিকে বসার জন্য একে ব্যবহার করছেন। যাঁরা ভবিষ্যতে ওদিকে বসতে চান তাঁদের ব্যবহার কেমন হবে আর যাঁরা ভবিষ্যতে এদিকে এসে বসতে চান তাঁদের ব্যবহার কেমন হবে, তার পার্থক্য আগামী কয়েক মাস ধরে দেশবাসী দেখবে আর তাঁদের মনোভাব থেকেই সবকিছু স্পষ্ট হবে বলেই আমার বিশ্বাস।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
আমাদের বেদ-এ বলা হয়েছে - ‘সংমিচ, সব্রতা, রুতবা, বাচঁম বদত’ – অর্থাৎ, আমরা যেন সবাই একমত হয়ে একরকম সঙ্কল্প নিয়ে সবসময় কল্যাণের জন্য সার্থক বার্তালাপ করি। এখানে আমাদের ভাবনা ভিন্ন হতে পারে, মত ভিন্ন হতে পারে, দৃষ্টিকোণ ভিন্ন হতে পারে, কিন্তু আমাদের সঙ্কল্প যেন ঐক্যবদ্ধই থাকে, ঐক্যবদ্ধই থাকে। আর সেজন্য আমাদের প্রত্যেকেরই এই ঐক্যবদ্ধতার স্বার্থেও আপ্রাণ চেষ্টা করে যেতে হবে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
এই ভাবনাই আমাদের সংসদে দেশের স্বার্থে যত পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে সব ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। সেই সময় কেউ এটা দেখেননি যে তাঁরা এদিকে বসেন না ওদিকে। প্রত্যেকেই দেশের স্বার্থে কাজ করেছেন। আমি আশা করি, এই নতুন সূত্রপাতের সময়ও আমরা এই পারস্পরিক বার্তালাপের আবহে এই সংসদ ভবনের সমস্ত তর্কে-বিতর্কে এই মনোভাবকেই আরও বেশি শক্তিশালী করে তুলব, যাতে আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকেও প্রতিনিয়ত প্রেরণা যোগাতে পারি। সংসদীয় পরম্পরার যে লক্ষ্মণরেখা রয়েছে, আমাদের প্রত্যেকেরই সেই লক্ষ্মণরেখা মেনে চলা উচিত। আমাদের সাংসদদের প্রত্যেকেরই উচিত আচার-ব্যবহারের ক্ষেত্রে মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়ের প্রত্যাশা পূরণের চেষ্টা করা।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
গণতন্ত্রে রাজনীতি, নীতি এবং শক্তির ব্যবহার সমাজে কার্যকরী পরিবর্তন আনার একটি অনেক বড় মাধ্যম। আর সেজন্য মহাকাশ থেকে শুরু করে খেলাধূলা, স্টার্ট-আপ থেকে শুরু করে স্বনির্ভর গোষ্ঠী - প্রতিটি ক্ষেত্রে আজ বিশ্ববাসী ভারতীয় মহিলাদের ক্ষমতাকে প্রত্যক্ষ করছেন। জি-২০ সভাপতিত্বেও আমরা ‘উইমেন লেড ডেভেলপমেন্ট’ বা মহিলাদের নেতৃত্বে উন্নয়নের আলোচনাকে যেভাবে তুলে ধরেছি তাকে আজ গোটা বিশ্ব স্বাগত জানাচ্ছে, স্বীকৃতি দিচ্ছে। আজকের বিশ্ব বুঝতে পারছে যে শুধু মহিলাদের উন্নয়নের কথাই যথেষ্ট নয়। আমরা যদি মানবজাতির উন্নয়ন যাত্রার সেই নতুন পর্যায়কে পেতে চাই, জাতির উন্নয়ন যাত্রায় যদি আমরা নতুন নতুন লক্ষ্যসাধন করতে চাই, তাহলে আমাদের প্রত্যেকেরই মহিলাদের নেতৃত্বাধীন উন্নয়নের ওপর জোর দিতে হবে। জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে ভারতের এই বক্তব্যকে বিশ্ব স্বীকার করে নিয়েছে।
আমাদের এই নারী ক্ষমতায়নের প্রতিটি প্রকল্প মহিলাদের নেতৃত্ব প্রদানের লক্ষ্যে অত্যন্ত সার্থক পদক্ষেপ নিয়েছে। আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকরণের কথা মাথায় রেখে আমরা যখন সারা দেশে ‘জন ধন যোজনা’ প্রকল্প শুরু করেছিলাম, তার ৫০ কোটি সুবিধাভোগীর মধ্যেও অধিকাংশ মহিলাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। এই একটি পদক্ষেপই মহিলাদের ক্ষেত্রে অনেক বড় পরিবর্তন এনে দিয়েছে,তাঁদের মনে নতুন বিশ্বাস সৃষ্টি করেছে। যখন ‘মুদ্রা’ যোজনা চালু করা হল, দেশ গর্ব করতে পারে যে, এই ‘মুদ্রা’ যোজনায় কোনওরকম গ্যারান্টি ছাড়াই ব্যাঙ্ক থেকে ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ দেওয়া হয়েছে। এর ফলে সবচাইতে বেশি উপকৃত হয়েছেন আমার দেশের সাধারণ গরীব ও নিম্নবিত্ত মহিলারা। পাশাপাশি নতুন নতুন মহিলা শিল্পোদ্যোগীরাও এই সুযোগকে ব্যবহার করে যেভাবে উঠে এসেছেন, সেই আবহ সারা দেশে পরিলক্ষিত হয়েছে। ‘পিএম আবাস যোজনা’র মাধ্যমে যত পাকা বাড়ি গৃহহীন গরীবদেরকে দেওয়া হয়েছে, তার অধিকাংশ মহিলাদের নামে রেজিস্ট্রি হয়েছে। মহিলারাই সেগুলির মালিকানার অধিকার পেয়েছেন।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
প্রত্যেক দেশের উন্নয়ন যাত্রায় এমন সব মাইলফলক আসে যার জন্য দেশবাসী গর্ব করতে পারে, বলতে পারে যে আজকের দিনে আমরা সবাই নতুন ইতিহাস রচনা করেছি। আমাদের প্রত্যেকের জীবনেই এরকম কিছু মুহূর্ত আসে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
নতুন সংসদ ভবনের প্রথম অধিবেশনের প্রথম ভাষণে আমি অত্যন্ত বিশ্বাস ও গর্বের সঙ্গে বলছি যে আজকের এই মুহূর্ত, আজকের এই দিনটি — তা সে সম্বতসরীই হোক, গণেশ চতুর্থীই হোক, ঈশ্বরের আশীর্বাদ নিয়ে ইতিহাসে নাম লেখানোর সময় আজ এসেছে। আমাদের প্রত্যেকের জন্য এই মুহূর্তটি গর্বের মুহূর্ত। অনেক বছর ধরে মহিলা সংরক্ষণ নিয়ে অনেক আলাপ-আলোচনা, অনেক তর্ক-বিতর্ক হয়েছে। মহিলা সংরক্ষণ নিয়ে আমাদের সংসদে আগেও অনেক চেষ্টা হয়েছে। এই সংক্রান্ত প্রথম বিল সংসদে পেশ হয়েছিল ১৯৯৬ সালে। অটলজির নেতৃত্বাধীন সরকারের সময়েও কয়েকবার এই মহিলা সংরক্ষণ বিল পেশ হয়েছিল। কিন্তু সেটিকে পাশ করানোর জন্য যথেষ্ট সংখ্যা, যথেষ্ট সমর্থন আমাদের ছিল না। সেজন্য এই স্বপ্ন অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে। মহিলাদের অধিকার দেওয়ার, মহিলাদের শক্তিকে কাজে লাগানোর সপক্ষে নেওয়া এই পদক্ষেপকে বাস্তবায়িত করা, এই পবিত্র কাজের জন্য সম্ভবত ঈশ্বর আমাকেই বেছে রেখেছেন।
সেজন্যে আরও একবার আমাদের সরকার এই লক্ষ্যে উদ্যোগ নিয়েছে। গতকালই মন্ত্রিসভার বৈঠকে মহিলা সংরক্ষণ সংক্রান্ত অধিনিয়মকে মঞ্জুর করা হয়েছে। আজ ১৯ সেপ্টেম্বর তারিখটি সেজন্যই ইতিহাসের পাতায় অমর হয়ে উঠতে যাচ্ছে। আজ যখন দেশের মহিলারা প্রতিটি ক্ষেত্রে দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছেন, নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তখন দেশের নীতি নির্ধারণেও আমাদের মা, বোন ও কন্যাদের অধিক অংশগ্রহণ অত্যন্ত প্রয়োজন। তাঁরা রাজনীতিতে আরও বেশি অবদান রাখবেন। শুধু অংশগ্রহণ নয়, তাঁরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন।
আজ এই ঐতিহাসিক মুহূর্তে নতুন সংসদ ভবনের প্রথম অধিবেশনের প্রথম কাজ হিসেবে যখন এই বিল পেশ করা হয়েছে, তখন বলা যায় যে এর মাধ্যমে দেশ একটি নতুন পরিবর্তনকে আহ্বান জানিয়েছে। দেশে নারীশক্তিকে অধিক গুরুত্ব দেওয়ার জন্য আমাদের সমস্ত সাংসদরা সম্মিলিতভাবে যেন তাঁদের প্রবেশদ্বার খুলে দেন, তার সূত্রপাত আমরা সবাই এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের মাধ্যমে করতে চলেছি। আমাদের ‘উইমেন লেড ডেভেলপমেন্ট’ এই সঙ্কল্পকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি আমাদের সরকার আজ একটি গুরুত্বপূর্ণ সংবিধান সংশোধন অধ্যাদেশও রচনা করছে। এই অধিনিয়মের লক্ষ্য লোকসভা এবং দেশের বিধানসভাগুলিতে মহিলাদের অংশীদারিত্ব সম্প্রসারণ করা। আমি নিশ্চিত যে, ‘নারীশক্তি বন্দন অধিনিয়ম’ – নামের এই অধ্যাদেশটির মাধ্যমে আমাদের গণতন্ত্র আরও শক্তিশালী হবে।
আমি দেশের মা, বোন ও কন্যাদের এই ‘নারীশক্তি বন্দন অধিনিয়ম’-এর জন্য অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই। আমি সমস্ত মা, বোন ও কন্যাদের আশ্বস্ত করতে চাই যে আমরা এই বিলকে আইনে পরিণত করার জন্য সঙ্কল্পবদ্ধ। আমি এই সংসদের সমস্ত সাথীদের একান্ত অনুরোধ জানাই যে, আজ যখন একটি পবিত্র সূত্রপাত হয়েছে, একটি সুন্দর ভাবনা আমাদের সামনে এসেছে, তখন আমরা সবাই যেন সর্বসম্মতিতে এই বিলকে আইনে পরিণত করার চেষ্টা করি। এটি আইনে পরিণত হলে এর শক্তি অনেকগুণ বেড়ে যাবে। আর সেজন্যই আমি সমস্ত মাননীয় সাংসদদের, উভয় সভার সমস্ত মাননীয় সাংসদদের সর্বসম্মতিক্রমে এটিকে পাশ করার জন্য আবেদন জানাই, আর আপনাদের সবাইকে কৃতজ্ঞতাও জানাই। এই নতুন সংসদ ভবনের প্রথম অধিবেশনেই আপনারা আমাকে বক্তব্য রাখার ও মনের কথা বলার সুযোগ দিয়েছেন। তার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।