মাননীয় উপরাষ্ট্রপতি! মাননীয় অধ্যক্ষ! মঞ্চে উপস্থিত প্রবীণ অতিথিবৃন্দ এবং ১৪০ কোটি নাগরিকের প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত মাননীয় সাংসদ সদস্যগণ,
গণেশ চতুর্থী উপলক্ষে আমি আপনাদের এবং দেশবাসীকে আমার উষ্ণ অভিনন্দন জানাচ্ছি। আজ আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে নতুন সংসদ ভবনে এক উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে নতুন যাত্রা শুরু করছি। আজ আমরা উন্নত ভারতের প্রতি আমাদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করছি এবং নতুন ভবনে যাওয়ার আগে অত্যন্ত নিষ্ঠা এবং সংকল্পের সঙ্গে এটি অর্জনের জন্য নিজেদেরকে উৎসর্গ করছি। মাননীয় সদস্যগণ এই ভবনটি বিশেষ করে এই সেন্ট্রাল হল আমাদের আবেগে পরিপূর্ণ। এই জায়গা গভীর অনুভূতি জাগিয়ে তোলে এবং আমাদের দায়িত্ব পালনেও অনুপ্রাণিত করে। স্বাধীনতার আগে এটি ছিল পাঠাগার, কিন্তু পরে তা গণপরিষদের সভার স্থান হয়ে ওঠে। এখানেই বৈঠকে আমাদের সংবিধানের উপর সূক্ষ্মভাবে আলোচনা হয় এবং সংবিধানকে রূপ দেওয়া হয়। এখানেই ব্রিটিশ সরকার ভারতের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে। সেন্ট্রাল হল সেই উন্নয়নের সাক্ষী। এই সেন্ট্রাল হলেই ভারতের ত্রিবর্ণরঞ্জিত জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়েছিল এবং আমাদের জাতীয় সঙ্গীত গৃহীত হয়েছিল। স্বাধীনতালাভের পর বহু ঐতিহাসিক অনুষ্ঠানে উভয়কক্ষ আলোচনা করতে, ঐক্যমতে পৌঁছতে এবং ভারতের ভাগ্য নির্ধারণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে এই স্থানে সমবেত হয়েছে।
১৯৫২ সাল থেকে বিশ্বের প্রায় ৪১ জন রাষ্ট্রপ্রধান এই সেন্ট্রাল হলে আমাদের মাননীয় সদস্যদের উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন। আমাদের রাষ্ট্রপতিগণ ৮৬ বার এই হলে ভাষণ দিয়েছেন। গত সাত দশকে যাঁরা এই দায়িত্ব সামলেছেন তাঁরা একাধিক আইন ও তার সংশোধনী এবং বিভিন্ন উন্নয়নের অংশীদার হয়েছেন। এপর্যন্ত লোকসভা এবং রাজ্যসভা সম্মিলিতভাবে ৪ হাজার আইন পাশ করেছে। এমনকি যখন প্রয়োজন পড়েছে যৌথ অধিবেশনের মাধ্যমে আইনও পাশ করার কৌশল তৈরি করা হয়েছে, তা সে পণপ্রথার বিরুদ্ধে আইনই হোক কিংবা ব্যাঙ্কিং সার্ভিস কমিশন বিল অথবা সন্ত্রাসদমনের আইন। যখন আমাদের মুসলিম মহিলা ও বোনেদের প্রতি অবিচার করা হচ্ছিল এবং শাহবানু মামলার কারণে পরিস্থিতি জটিল পর্যায়ে পৌঁছেছিল, এই সংসদ সেই ভুলগুলি সংশোধন করে এবং তিন তালাক প্রথার বিরুদ্ধে আইন পাশ করে। রূপান্তরকামীদের ন্যায় বিচার দেওয়ার জন্য সংসদ গত কয়েক বছর আগে আইন প্রণয়ন করে। তাঁরা যাতে সম্মান এবং মর্যাদার সঙ্গে কর্মসংস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য পরিষেবা এবং অন্য সুযোগ সুবিধা পান সেই লক্ষ্যেই আমরা কাজ করেছি। আমরা এমন আইনও পাশ করেছি যা আমাদের দিব্যাঙ্গজন নাগরিকদের চাহিদা এবং আকাঙ্ক্ষা বিবেচনা করে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের পথ গড়ে তুলেছে। সংবিধানের ৩৭০ ধারা প্রত্যাহারের বিষয়ে কয়েক দশকে কোনো আলোচনা, দাবি, উদ্বেগ প্রকাশ এবং ক্ষোভ বিক্ষোভও দেখানো হয়নি। কিন্তু আমরা ভাগ্যবান যে এই কক্ষে ৩৭০ ধারা বিলুপ্ত করতে পেরেছি। যা বিচ্ছিন্নতাবাদ এবং সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। আর এই গুরুত্বপূর্ণ প্রয়াসে মাননীয় সাংসদদের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। জম্মু-কাশ্মীরের জন্য এই কক্ষে তৈরি সংবিধান যা আমাদের পূর্বপুরুষরা দিয়েছিলেন, তা এক অমূল্য দলিল। যখন জম্মু-কাশ্মীরে এটি কার্যকর হয়, আমি ওই ভূমিকে প্রণাম জানাই।
আজ জম্মু-কাশ্মীর শান্তি ও উন্নয়নের পথ অনুসরণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং জম্মু-কাশ্মীরের জনগণ নতুন উদ্যম, নতুন আগ্রহ এবং নতুন সংকল্প নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ হাতছাড়া করতে চায়না। এতে বোঝা যায়, সংসদ ভবনে সাংসদরা কতটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছেন। মাননীয় সদস্যগণ, লালকেল্লা থেকে আমি যা বলেছিলাম, এই হচ্ছে সেই সময়, সঠিক সময়। যদি আমরা একের পর এক ঘটনার দিকে তাকাই তাহলে প্রতিটি ঘটনাই এই সত্যের প্রমাণ দেয় যে ভারত আজ নতুন চেতনায় জেগে উঠেছে। ভারত নতুন শক্তিতে ভরপুর এবং এই চেতনা, এই শক্তি দেশের কোটি কোটি মানুষের স্বপ্নকে সংকল্পে রূপান্তর করতে পারে এবং কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে সেই সংকল্পে পৌঁছতে পারে। আমরা এটি ঘটতে দেখছি। আমি বিশ্বাস করি যে, দেশ যে দিকে এগোচ্ছে তাতে অবশ্যই কাঙ্ক্ষিত ফল অর্জিত হবে। আমরা যত দ্রুত অগ্রসর হবো, তত তাড়াতাড়ি আমরা ফলাফল অর্জন করতে পারবো।
আজ ভারত বিশ্বের পঞ্চম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ হয়ে উঠেছে। তবে, আমরা প্রথম তিন শীর্ষ অর্থনীতর দেশের মধ্যে পৌঁছনোর প্রত্যয় নিয়ে এগিয়ে চলেছি। আমি যেখানে যেখানে গিয়েছি, বিশ্বের বিভিন্ন বিখ্যাত ব্যক্তিদের সঙ্গে কথোপকথন থেকে যে তথ্য পেয়েছি, তার উপর ভিত্তি করে দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে পারি যে, আমাদের মধ্যে কেউ কেউ হতাশ হয়েছেন। তবে, বিশ্ব নিশ্চিত ভারত অর্থনীতির নিরিখে প্রথম তিনটি দেশের মধ্যে পৌঁছবেই। ভারতের ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্র শক্তির কারণে আবারও বিশ্বের ইতিবাচক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। ভারতের সরকারি ব্যবস্থাপনা, ইউপিআই, ডিজিটাল ব্যবস্থাপনা বিশ্বব্যাপী প্রশংসনীয়। আমি জি২০ সম্মেলনে তা লক্ষ্য করেছি এবং ইন্দোনেশিয়ার বালিতেও তা দেখেছি। প্রযুক্তি ক্ষেত্রে ভারতের তরুণরা যেভাবে এগিয়ে চলেছে, তা শুধু কৌতুহলের বিষয় নয়, বিশ্বের কাছে আকর্ষণীয় এবং গ্রহণযোগ্যও বটে। আমরা এমনই এক সময়ের মধ্যে রয়েছি। আমি বলবো আমরা ভাগ্যবান মানুষ। এই সৌভাগ্যজনক সময়ে আমরা কিছু দায়িত্ব পালন করার সুযোগ পেয়েছি এবং আমাদের সবচেয়ে বড় সৌভাগ্য যে আজ ভারতবাসীর আকাঙ্ক্ষা এমন এক উচ্চতায় পৌঁছেছে, যা সম্ভবত গত হাজার বছরেও পৌঁছয়নি। দাসত্বের শৃঙ্খল সেই আকাঙ্ক্ষাগুলিকে চাপা দিয়ে রেখেছিল, সেই অনুভূতিগুলিকে ভেঙে দিয়েছিল। কিন্তু স্বাধীন ভারতে স্বপ্নগুলি লালিতপালিত হয়েছে। সমস্যার সঙ্গে লড়াই করেছে। এখন এমন এক পর্যায় পৌঁছেছে, এখন তা আর থামছেনা। এখন সে উচ্চাকাঙ্ক্ষী সমাজের সঙ্গে নতুন লক্ষ্য নির্ধারণ করতে চায়। উচ্চাকাঙ্ক্ষী সমাজ যখন স্বপ্নগুলি লাপনপালন করে, সংকল্প স্থির করে তখন আমরা সকলে সাংসদ হিসেবে এক বিশেষ দায়িত্ব রয়েছে নতুন আইন তৈরি করে অপ্রচলিত আইন থেকে মুক্তির মাধ্যমে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের পথ প্রশস্ত করা। আমরা সংসদে নানা আইন তৈরি করি, আমরা সংসদে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করি, প্রকৃত পক্ষে সংসদ থেকে প্রেরিত প্রতিটি বার্তাই ভারতীয়দের আকাঙ্ক্ষাকে উন্নীত করার জন্য হওয়া উচিত। এটি আমাদের অনুভূতি, আমাদের কর্তব্য এবং আমাদের কাছে প্রতিটি নাগরিকের কাছে প্রত্যাশা। আমরা যে সংস্কারই করি না কেন, তার মূলে ভারতীয় আকাঙ্ক্ষা থাকা উচিত এবং সে ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া দরকার। তবে আমি এই কথাটি সতর্কতার সঙ্গে বলতে চাই, কেউ কি ছোট ক্যানভাসে একটি বড় ছবি তৈরি করতে পারে? ছোট ক্যানভাসে যেমন বড় ছবি তৈরি করা যায় না, ঠিক তেমনি আমাদের চিন্তার ক্যানভাসকে প্রসারিত করতে না পারলে গৌরবময় ভারতের ছবি আঁকা সম্ভব নয়। আমাদের ৭৫ বছরের অভিজ্ঞতা আছে। আমাদের পূর্বপুরুষের পথ থেকে শিক্ষা নিয়েছি। আমাদের সমৃদ্ধ ঐতিহ্য আছে। বন্ধুগণ, এই ঐতিহ্যের সঙ্গে আমাদের স্বপ্নগুলি যদি সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়, আমাদের চিন্তাভাবনা সম্প্রসারণের যদি সুযোগ থাকে, আমাদের ক্যানভাসকে যদি বড় করতে পারি, তাহলে আমরা ভারতের সেই মহিমান্বিত চিত্র ফুটিয়ে তুলতে পারি, তার রূপরেখা আঁকতে পারি, রঙে রাঙিয়ে তুলতে পারি এবং আগামী প্রজন্মকে ভারতমাতার আশীর্বাদে ক্ষমতাশালী করে তুলতে পারি।
‘অমৃতকাল’-এর আগামী ২৫ বছরে ভারতকে আরও বড় পরিসরে কাজ করতে হবে। আমাদের ছোটখাটো বিষয়গুলিকে অতিক্রম করার সময় এসেছে। আমাদের প্রাথমিক লক্ষ্য হওয়া উচিত ভারতকে আত্মনির্ভর করে তোলা। এই যাত্রা আমাদের সঙ্গে, প্রত্যেক ব্যক্তির সঙ্গে শুরু হয়েছে। একটা সময় ছিল, যখন লোকেরা আমাকে বলতো যে মোদী যখন আত্মনির্ভরতার কথা বলেন, তখন এটি বহুপাক্ষিকতার জন্য সমস্যার কারণ হতে পারে। তাঁরা বলতেন যে বর্তমান অর্থনৈতিক যুগে এটি যথাযথ নাও হতে পারে। তবে যাই হোক ৫ বছরের মধ্যে আমরা দেখেছি, সারা পৃথিবী ভারতের আত্মনির্ভরতার মডেল নিয়ে আলোচনা করছে। ভারতে কে না চাইবে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে, শক্তি ক্ষেত্রে এবং ভোজ্যতেল ক্ষেত্রে আমরা আত্মনির্ভর হই? আমরা বলি, আমাদের কৃষিপ্রধান দেশ। দেশ কী ভোজ্যতেল আমদানি অব্যাহত রাখবে? আত্মনির্ভর ভারতের দাবি বহু দিনের। আমাদের সকলের দায়িত্ব দলীয় সীমারেখার ঊর্ধ্বে, যে কোনো কিছুর ঊর্ধ্বে উঠে এই সম্পর্কে দেশের জন্য ভাবনা-চিন্তা করা।
আমাদের এখন উৎপাদন ক্ষেত্রে বিশ্বের সেরা হওয়ার জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে। আমি একবার লালকেল্লার প্রাকার থেকে বলেছিলাম যে, উৎপাদন পদ্ধতি নিখুঁত এবং পরিবেশের পক্ষে ক্ষতিকারক যেন না হয় - এটিই আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত। বিশ্বের অন্যান্য দেশের উৎপাদন ক্ষেত্রে এই প্রয়াস নিয়ে্ছে, সেই দিকেই আমাদের এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। আমাদের নকশাবিদ, এখানে উৎপাদিত পণ্য, আমাদের সফটওয়ার, আমাদের কৃষিপণ্য, আমাদের হস্তশিল্প – প্রতিটি ক্ষেত্রে আমাদের উদ্দেশ্য থাকা উচিত আন্তর্জাতিক মানকে ছাপিয়ে যাওয়া। তবেই আমরা গর্বের সঙ্গে সারা বিশ্বে আমাদের পতাকা তুলে ধরতে পারবো। আমার গ্রামে, আমার রাজ্যে সেরা হওয়ার জন্য এটি যথেষ্ট হবে না। আমাদের শ্রেষ্ঠত্ব আমাদের দেশে যথেষ্ট নাই হতে পারে, তবে আমাদের পণ্য বিশ্বের দরবারে সেরা হওয়া উচিত। এই চেতনা আমাদের গড়ে তুলতে হবে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলি বিশ্বের শীর্ষ স্থানের মধ্যে থাকা উচিত। এখন এই ক্ষেত্রে আর পিছিয়ে থাকতে হবে না। আমরা এক নতুন জাতীয় শিক্ষানীতি পেয়েছি যা মুক্তচিন্তার বিষয়ে প্রচার করে এবং সর্বোতভাবে অনুমোদন পেয়েছে। এই সমর্থন নিয়ে আমাদের এখন এগিয়ে যেতে হবে এবং বিশ্বের শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশ হয়ে উঠতে হবে। সম্প্রতি জি২০ সম্মেলনের সময় আমি নালন্দার একটি ছবি বিশ্ব নেতাদের দেখিয়েছিলাম। তাঁরা অবাক হয়েছিলেন যখন তাঁদের আমি বলেছিলাম যে বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রায় ১ হাজার ৫০০ বছর আগে আমাদের দেশে ছিল। আমাদের অবশ্যই সেই ইতিহাস থেকে অনুপ্রেরণা নিতে হবে, যাতে আমরা অবশ্যই এখন তা অর্জন করতে পারি। এটিই আমাদের সংকল্প।
আজ আমাদের দেশের যুবরা ক্রীড়া জগতে নিজেদের নাম তৈরি করেছে। দেশের টায়ার-২ এবং টায়ার-৩ শহরে, গ্রামের গরিব পরিবার থেকে উঠে আসা যুবক-যুবতীরা ক্রীড়া জগতে খ্যাতি লাভ করেছে। কিন্তু আমাদের দেশের জনগণ চায় এবং সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে আমাদের ত্রিবর্ণরঞ্জিত পতাকা যেন প্রতিটি ক্রীড়ামঞ্চে উড়বে। আমাদের এখন অবশ্যই গুণমানের দিকে মনোনিবেশ করতে হবে, যাতে আমরা কেবল বিশ্বের প্রত্যাশাই নয়, সাধারণ ভারতীয়দের জন্য একটি উন্নতমানের জীবনযাপন এবং চাহিদা পূরণ করতে পারি। আমি যেমন উল্লেখ করেছিলাম, আমরা এমন এক সময়ে কাজ করতে পেরে সৌভাগ্যবান বলে মনে করছি, যখন আমাদের সমাজ প্রকৃতির বিষয়ে উচ্চাকাঙ্ক্ষী। আমরা ভাগ্যবান যে ভারত তারুণ্যের দেশ। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যা আমাদের রয়েছে। কিন্তু যে বিষয়টি আমাদের আরও ভাগ্যবান করে তোলে, তা হল সবচেয়ে বেশি যুব সম্প্রদায় আমাদের দেশে রয়েছে। একটি দেশের জন্য এই যুব শক্তি, এই তারুণ্যের সক্ষমতা আমাদের আত্মবিশ্বাসের উৎস। তাদের দৃঢ় সংকল্প, সাহসিকতার প্রতি আমাদের আস্থা রয়েছে। তাই আমরা চাই দেশের তরুণরা বিশ্বে এগিয়ে থাকুক। এটি বাস্তবে পরিণত হওয়া উচিত। আজ বিশ্বের দক্ষ কর্মীর প্রয়োজন। ভারত নিজেকে প্রস্তুত করতে ও সেই চাহিদাগুলি পূরণ করতে পারে এবং বিশ্বে তার ছাপ ফেলতে পারে। অতএব বিশ্বের কীধরণের কর্মী প্রয়োজন? কীধরণের মানবসম্পদ প্রয়োজন? দক্ষতা ম্যাপিং-এর মাধ্যমে এই কাজ চলছে। আমরা দেশের ভেতরে দক্ষতা উন্নয়নে মনোনিবেশ করছি। আমরা দক্ষতা উন্নয়নে যত বেশি জোর দেবো, আমাদের তরুণরা বিশ্ব মঞ্চে তত বেশি পারদর্শী হয়ে উঠবে। ভারতীয়রা যেখানেই যান, সেখানেই তারা কৃতিত্বের ছাপ রাখে। এই ক্ষমতা আমাদের অন্তর্নিহিত। ইতিমধ্যেই সেই ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আপনারা হয়তো লক্ষ্য করেছেন, আমরা সম্প্রতি ১৫০টি নার্সিং কলেজ খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বিশ্বে নার্সিং ক্ষেত্রে এক বিশাল চাহিদা রয়েছে। আমাদের ছেলে – মেয়েরা এই ক্ষেত্রে শীর্ষে পৌঁছতে পারে, সহজেই তাঁদের ছাপ বিশ্বের দরবারে রাখতে পারে। বিশ্বজুড়ে প্রয়োজনও রয়েছে এর। এই চাহিদা পূরণ করা মানবিক দিক থেকে আমাদের কর্তব্য। আমরা পিছিয়ে পরবো না। আজ আমাদের অবশ্যই দেশে মেডিকেল কলেজগুলির চাহিদা পূরণ করতে হবে এবং বিশ্বের চাহিদাতেও অবদান রাখতে হবে। মোট কথা হল, আমাদের অবশ্যই ছোটখাটো, খুঁটিনাটি বিষয়ের উপর নজর দিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। ভবিষ্যতের জন্য আমাদের সঠিক সময়, সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আমরা সিদ্ধান্ত নিতে বিলম্ব করতে পারি না। আমরা রাজনৈতিক লাভ-ক্ষতির বেড়াজালে আটকে থাকতে পারি না। দেশবাসীর আশা-আকাঙ্ক্ষার জন্য নতুন সিদ্ধান্ত নেওয়ার সাহস থাকতে হবে। আজ সফল সৌরশক্তি আন্দোলন আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য শক্তি ক্ষেত্রে স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছে। ‘মিশন হাইড্রোজেন’ পরিবর্তিত প্রযুক্তির সঙ্গে পরিবেশের ক্ষতিকর সমস্যার সমাধান করেছে। আমাদের জীবনযাপনের জন্য যেমন হৃদয় অপরিহার্য, তেমনই আজ প্রযুক্তি চিপ ছাড়া চলতে পারেনা। এর জন্য সেমিকন্ডাকটর প্রয়োজন। আমাদের অবশ্যই এই দিকেই এগিয়ে যাওয়া উচিত এবং আমরা গুরুত্ব সহকারে এক্ষেত্রে কাজ করে চলেছি। ‘জলজীবন মিশন’, প্রতিটি জেলায় ৭৫টি আমৃত সরোবর নির্মাণ আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য উদ্বেগ কমিয়েছে। আমরা কখনই চাই না যে, আমাদের শিশু এবং তাদের শিশুরা জল সঙ্কটের সম্মুখীন হোন। প্রতিযোগিতামূলক শক্তির সঙ্গে বিশ্ব বাজারে আমাদের উপস্থিতি বোঝাতে পণ্য পরিবহন ব্যবস্থাপনাকে সাশ্রয়ী ও দক্ষ করে তুলতে আমরা একাধিক নীতি প্রণয়ন করেছি। জ্ঞান, উদ্ভাবনমূলক মানসিকতায় দেশ গড়া সময়ের দাবি, আর এই পথ ধরেই সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। তাই জাতীয় শিক্ষা নীতির পাশাপাশি প্রযুক্তির উন্নয়নে গবেষণা ও উদ্ভাবনের জন্য একটি আইনও পাশ করেছে। চন্দ্রযান-৩ –এর সাফল্যের পর আমাদের তরুণদের মনে বিজ্ঞানের প্রতি আকর্ষণ বেড়েছে। আমরা এই সুযোগ হাতছাড়া করতে পারি না। আমাদের তরুণ প্রজন্মকে গবেষণা ও উদ্ভাবনের সব সুযোগ সুবিধা দিতে হবে। এই ব্যবস্থাপনা তৈরি করতে আমরা একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের ভিত্তি স্থাপন করেছি।
মাননীয় বন্ধুগণ,
সামাজিক ন্যায় বিচার আমাদের প্রধান শর্ত। সামাজিক ন্যায় বিচার ছাড়া, ভারসাম্য ছাড়া, সমতা ছাড়া আমরা কাঙ্ক্ষিত ফলাফল অর্জন করতে পারি না। সামাজিক ন্যায় বিচারের বিষয়ে আলোচনা কমই হয়েছে। আমাদের এবিষয়টিকে আরও ব্যাপক আকারে দেখতে হবে। দরিদ্রদের সুযোগ সুবিধা দান, সমাজের প্রান্তিক ব্যক্তিদের সহায়তা প্রদান এগুলি প্রকৃত পক্ষে সামাজিক ন্যায় বিচারেরই প্রক্রিয়া। এমনকি এক্ষেত্রে কঠিন পথ নির্মাণও সামাজিক ন্যায় বিচারের একটি রূপ। শিশুদের জন্য কাছাকাছি বিদ্যালয় খোলা সামাজিক ন্যায় বিচারকে শক্তিশালী করে। যখন প্রয়োজন তখন বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরিষেবার সুযোগ দেওয়াই হল প্রকৃত পক্ষে সামাজিক ন্যায় বিচার। তাই সমাজ ব্যবস্থাপনায় যেমন সামাজিক ন্যায় বিচারের প্রয়োজন রয়েছে, তেমনই জাতীয় ব্যবস্থায়ও সামাজিক ন্যায় বিচারের প্রয়োজন আছে। এখন দেশের কোনো অংশ যদি পিছিয়ে পড়ে, অনুন্নত থাকে সেটিও সামাজিক ন্যায় বিচারের পরিপন্থী। দুর্ভাগ্যবশত আমাদের দেশের পূর্বাঞ্চল যা সম্পদে সমৃদ্ধ হলেও সেখানকার যুবরা অন্য অঞ্চলে কর্মসংস্থান খুঁজছে। আমাদের এই অবস্থার পরিবর্তন করতে হবে। সামাজিক ন্যায় বিচারকে শক্তিশালী করতে আমাদের অবশ্যই দেশের অনুন্নত পূর্বাঞ্চলকে শক্তিশালী করতে হবে। শরীর যতই সুস্থ থাকুক না কেন, একটি আঙুল যদি পঙ্গু হয়, তাহলে শরীর সুস্থ বলে গণ্য হয়না – এটিই হল ভারসাম্য বিকাশ। দেশের বাকি অংশ যতই সমৃদ্ধ হোক না কেন, একটি অংশ দুর্বল থেকে গেলে তা ভারতের জন্য দুর্বলতা বলে বিবেচিত হবে। তাই সামগ্রিক উন্নয়নের লক্ষ্যে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে − তা সে ভারতের পূর্বাঞ্চলই হোক কিংবা উত্তরপূর্ব। আমাদের সর্বত্রই উন্নয়ন সুনিশ্চিত করতে হবে। এই কৌশল সফল হয়েছে যখন আমরা ১০০টি উচ্চাকাঙ্ক্ষী জেলার প্রতি জোর দিয়েছিলাম, যেখানে তরুণ আধিকারিকদের নিয়োগ করা হয়েছিল। আজ বিশ্ব এই মডেল নিয়ে আলোচনা করছে। ১০০টি জেলা একসময় পিছিয়ে ছিল এবং তা বোঝা হিসেবে ভাবা হতো। এখন এমন পরিস্থিতি যে সেই ১০০টি জেলা এখন সংশ্লিষ্ট রাজ্যের উন্নয়নের গড় হারকে ছাড়িয়ে গেছে। এই সাফল্যের প্রেক্ষিতে এবং সামাজিক ন্যায় বিচারের অনুভূতিকে শক্তিশালী করার জন্য আমরা ৫০০টি উচ্চাকাঙ্ক্ষী জেলার ব্লককে চিহ্নিতি করা হয়েছে যেখানে তৃণমূল স্তরে উন্নয়ন পৌঁছে দেওয়া হবে। আমি বিশ্বাস করি এই উচ্চাকাঙ্ক্ষী ব্লকগুলি দেশের উন্নয়নে এক নতুন মডেল হয়ে উঠবে। দেশের উন্নয়নে তাদের একটি নতুন শক্তি কেন্দ্রে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এবং আমরা সেই দিকেই এগিয়ে চলেছি।
মাননীয় সাংসদ সদস্যগণ,
আজ বিশ্বের নজর ভারতের দিকে। শীতল যুদ্ধের সময়ে আমাদের পরিচয় ছিল জোট নিরপেক্ষ দেশ হিসেবে। আমরা সেই সময় থেকে অনেক দূরে এগিয়ে এসেছি এবং প্রয়োজন ও সুবিধাগুলিও বিকশিত হয়েছে। আজ বিশ্বে ভারত আলাদা স্থানে রয়েছে। তখন নিশ্চয়ই জোট নিরপেক্ষতার প্রয়োজন ছিল, কিন্তু আজ আমরা একটি নীতি অনুসরণ করছি, যদি আমাদের এই নীতিকে স্বীকৃতি দিতে হয়, তবে আমরা ‘বিশ্বমিত্র’ হিসেবে এগিয়ে চলেছি। আমরা বিশ্বের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তুলেছি। বিশ্ব ভারতের বন্ধুত্বকে খুঁজে পেয়েছে। ভারত বিশ্বের অন্য দেশের থেকে দূরে না থেকে ক্রমশই নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। আমরা বিশ্বমিত্র হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে আমাদের ভূমিকা সফলভাবে এগিয়ে নিয়ে চলেছি। আমি মনে করি ভারত এই পদ্ধতি থেকে উপকৃত হচ্ছে। ভারত বিশ্বের জন্য এক স্থিতিশীল সরবরাহ শৃঙ্খল হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে। জি২০ তে ভারত দক্ষিণী বিশ্বের কণ্ঠস্বর হয়ে উঠেছে। এটি উল্লেখযোগ্য সাফল্য। জি২০ সম্মেলনে এই যে বীজ বপণ করা হয়েছে, আমার দেশবাসী আগামী দিনে এটিকে বটবৃক্ষ হিসেবে দেখতে পাবেন। এটি বিশ্বাসের এমন এক বটবৃক্ষ যার ছায়ায় আগামী প্রজন্ম শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে গর্বের সঙ্গে বসে থাকতে পারবে। আমি দৃঢ়ভাবে এটা বিশ্বাস করি।
জি২০ –তে আমরা উল্লেখযোগ্য উদ্যোগ নিয়েছি এবং তা হল জৈব জ্বালানী জোট। আমরা বিশ্বকে নেতৃত্ব দিচ্ছি এবং দিশা দেখিয়েছি। বিশ্বের সমস্ত বন্ধুত্বপূর্ণ দেশ জৈব জ্বালানি জোটের সদস্য পদ গ্রহণ করছে এবং একটি বিশাল আন্দোলন তৈরি হতে চলেছে, যার নেতৃত্ব দিচ্ছে ভারত। আমরা ছোট দেশগুলির সঙ্গে অর্থনৈতিক করিডোর নির্মাণের দিকেও দৃঢ় পদক্ষেপ নিয়েছি।
মাননীয় বন্ধুগণ, উপরাষ্ট্রপতি, অধ্যক্ষ মহাশয়,
আজ আমরা এখান থেকে বিদায় নিয়ে সংসদের নতুন ভবনে চলে যাচ্ছি। আমরা নতুন সংসদ ভবনে আমাদের আসন গ্রহণ করতে চলেছি। গণেশ চতুর্থীর দিনে এই ঘটনা সত্যিই শুভ। আপনাদের সবার কাছে আমার অনুরোধ এবং একটি পরামর্শ আছে। আমি আশা করি, উভয় কক্ষের সদস্যরা মিলে তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করবেন এবং এবিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। আমি প্রার্থনা করি, আমি পরামর্শ দিচ্ছি যে নতুন সভাকক্ষে এখন আমরা চলে যাচ্ছি, তার মর্যাদা যেন কখনই হ্রাস না পায়। আমাদের কখনই এটিকে ‘পুরনো সংসদ’ হিসেবে উল্লেখ করা উচিত নয়। আর তাই আমি অনুরোধ করছি, ভবিষ্যতে যদি আপনারা সমবেত হন তাহলে এটিকে ‘সংবিধান সদন’ নামে ডাকবেন। এভাবেই এটি চিরকাল আমাদের জীবনে অনুপ্রেরণাদায়ক হয়ে থাকবে। আর এটিকে আমরা যখন ‘সংবিধান সদন’ বলবো, তখন সেইসব মহাপুরুষের স্মৃতি উঠে আসবে যাঁরা একসময় গণ পরিষদে বসতেন। তাই ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে এই উপহার দেওয়ার সুযোগ আমাদের হাতছাড়া করা উচিত নয়।
আরও একবার এই পবিত্র ভূমিকে প্রণাম জানাই। এখানে যে সব তপস্যা করা হয়েছে, জনগণের কল্যাণের জন্য সংকল্প নেওয়া হয়েছে, সাত দশকের বেশি সময় ধরে সেগুলি পূরণ করার জন্য যে প্রয়াস চালানো হয়েছে, তার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আমার বক্তব্য শেষ করছি এবং নতুন কক্ষের জন্য আমি আপনাদের সকলকে অভিনন্দন জানাই। আপনাদের জন্য শুভ কামনা রইলো।
আপনাদের সকলকে ধন্যবাদ।