“যদি তোমার লক্ষ্য স্থির থাকে, তা হলে প্রত্যাশার চাপকেও নিয়ন্ত্রণ করা যায়”
“দিনের শুরুতেই কম ভালো লাগার বা কঠিন বিষয়গুলি নিয়ে পড়াশুনা করা উচিৎ”
“টোকাটুকির মাধ্যমে কখনই জীবনে সাফল্য আসবে না”
“গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে সাফল্যের জন্য দৃঢ়তার সঙ্গে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে”
“অধিকাংশ মানুষই সাধারণ মানের, কিন্তু যখন এইসব সাধারণ মানের মানুষগুলি অসাধারণ কাজ করেন, তখনই তাঁরা নতুন উচ্চতায় পৌঁছে যান”
“সমৃদ্ধশালী গণতন্ত্রের মূল শর্ত হ’ল সমালোচনা, যা বিভিন্ন বিষয়কে বিশুদ্ধ করে তোলে”
“অভিযোগ ও সমালোচনার মধ্যে বিস্তর ফারাক রয়েছে”
“ঈশ্বর আমাদের মুক্ত চিন্তা এবং ব্যক্তিস্বত্ত্বা দিয়েছেন, আমরা যাতে যন্ত্রের দাস না হয়ে পড়ি, সে বিষয়ে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে”
“বাছাই করার প্রক্রিয়ার সময় বৃদ্ধি পাওয়ার বিষয়টি উদ্বেগজনক”
“একটি পরীক্ষার ফলাফল কোনও জীবনকে শেষ করে দেয় না, পাশাপাশি দৈনন্দিন জীবনের ক্ষেত্রে পরীক্ষার ফল নিয়ে বেশি ভাবনাচিন্তাও করা উচিৎ নয়”
“একটি আঞ্চলিক ভাষা শেখার উদ্যোগের মাধ্যমে তুমি শুধুমাত্র সেই ভাষার সাহায্যে কোনও কিছু প্রকাশ
প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী পরীক্ষা পে চর্চার ষষ্ঠ সংস্করণে আজ দিল্লির তালকাটোরা স্টেডিয়ামে ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং অভিভাবক-অভিভাবিকাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন।
এ বছর ১৫৫টি দেশ থেকে প্রায় ৩৮ লক্ষ ৮০ হাজারটি নাম নিবন্ধিত হয়েছে।
“এই প্রশ্নগুলি আমার কাছে সম্পদের সমতুল”। এই প্রশ্নগুলি যদি সমাজ বিজ্ঞানীরা আগামী দিনে মূল্যায়ন করেন, তা হলে তাঁরা কিশোরমতি ছাত্রছাত্রীরা কি ভাবছে, সে বিষয়ে সম্যক ধারণা পাবেন।

নয়াদিল্লি, ২৭ জানুয়ারি, ২০২৩

সম্ভবতঃ এত ঠান্ডায় প্রথমবারের মতো ‘পরীক্ষা পে চর্চা’ অনুষ্ঠান হচ্ছে। সাধারণতঃ ফেব্রুয়ারি মাসে এই আয়োজন করা হয়। কিন্তু এবার ভাবলাম যে আপনারা সবাই যেন ২৬ জানুয়ারির অনুষ্ঠান দেখার সুবিধা পান! বাইরে থেকে যাঁরা এসেছেন তাঁরা কাল সেই আনন্দ পেয়েছেন, তাই না? গিয়েছিলেন সবাই কর্তব্য পথে? কেমন লাগলো? খুব ভালো লাগলো? আচ্ছা, বাড়ি ফিরে কী বলবেন? কিছুই বলবেন না? আচ্ছা বন্ধুরা, আমি বেশি সময় নিই না, তবে আমি অবশ্যই বলব যে ‘পরীক্ষা পে চর্চা’অনুষ্ঠান আমার জন্যেও পরীক্ষা। আজ দেশের কোটি কোটি শিক্ষার্থী আমার পরীক্ষা নিচ্ছে। এখন আমি এই পরীক্ষা দিতে পেরে খুশি, আমি এটি উপভোগ করি, কারণ আমি প্রশ্ন পাই কয়েক লক্ষ। ছাত্রছাত্রীরা অত্যন্ত সক্রিয়ভাবে প্রশ্ন করে, তাদের সমস্যার কথা বলে, তাদের ব্যক্তিগত কষ্টের কথাও বলে। আমার দেশের তরুণ মন কী কী ভাবছে, তারা কী কী বিভ্রান্তির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে, দেশের কাছে তাদের কী কী প্রত্যাশা, সরকারের কাছ থেকে কী প্রত্যাশা, স্বপ্ন ও সিদ্ধান্ত কী কী - এসব জানতে পারা আমার জন্য বড় সৌভাগ্যের বিষয়। তার মানে এই আয়োজন আমার জন্য সত্যিই অনেক বড় গুপ্তধন। আর আমি আমার সিস্টেমকে বলে রেখেছি এই সমস্ত প্রশ্ন একসাথে রাখতে। ১০-১৫ বছর পরে, আমরা যদি সুযোগ পাই, আমরা সমাজ বিজ্ঞানীদের মাধ্যমে এগুলি বিশ্লেষণ করব এবং কীভাবে প্রজন্ম পরিবর্তন হতে থাকে, পরিস্থিতি পরিবর্তন হতে থাকে, কীভাবে তাদের স্বপ্ন, তাদের সিদ্ধান্ত, তাদের চিন্তাভাবনা অত্যন্ত সুক্ষ্ম উপায়ে পরিবর্তিত হয় – তা বুঝতে পারবো। এরকম বড় একটি থিসিস বা গবেষণাপত্র সম্ভবতঃ এত  সহজে কেউ তৈরি করতে পারবেন না! আপনারা আমাকে নিয়মিত প্রশ্ন লিখে পাঠান! তাই আমিও মনে মনে চেষ্টা করি যাতে আমাকে বেশিক্ষণ কথা না বলতে হয়। আমি কোথাও থেকে শুরু করতে চাই, কারণ, প্রত্যেকবারই আমি অভিযোগ পাই যে সাহেব, এই অনুষ্ঠানটি খুব দীর্ঘ হয়। এই বিষয়ে তোমাদের মতামত কী? দীর্ঘক্ষণ ধরে চলতে থাকে। দীর্ঘ পথ হাঁটতে হবে। আচ্ছা, আমার আর কিছু করার নেই। ঠিক আছে, শুধু তোমাদের জন্যই বসে থাকবো। বলো কী করবে, কে আগে জিজ্ঞেস করবে।

উপস্থাপক – কেউ যদি বিশ্বকে বদলাতে চান, যদি আপনার মনে বিশ্বকে পরিবর্তন করার ইচ্ছাশক্তি জাগে, তাহলে বিশ্বকে নয়, নিজেকে বদলাতে শিখুন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীজি, আপনার অনুপ্রেরণামূলক এবং তথ্যপূর্ণ বক্তৃতা সর্বদাই আমাদের ইতিবাচক শক্তি এবং আত্মবিশ্বাসে ভরিয়ে দেয়, আমরা সবাই অধীর আগ্রহে আপনার অপরিসীম অভিজ্ঞতা এবং জ্ঞানপূর্ণ পথপ্রদর্শন শোনার জন্য অপেক্ষা করছি।

মাননীয়, আপনাদের আশীর্বাদ ও অনুমতি নিয়ে আমরা এই অনুষ্ঠান শুরু করতে চাই। আপনাদের ধন্যবাদ জানাই। 

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীজী, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ এবং স্থাপত্য ও সৌন্দর্য্যের জন্য বিখ্যাত শহর মাদুরাই থেকে অশ্বিনী একটি প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে চায়। অশ্বিনী তোমার প্রশ্ন জিজ্ঞেস করো।

অশ্বিনী – মাননীয় প্রধানমন্ত্রী স্যর, নমস্কার। আমার নাম অশ্বিনী। আমি তামিলনাডুর মাদুরাইয়ে অবস্থিত কেন্দ্রীয় বিদ্যালয় নম্বর-২ এর ছাত্র। আমার প্রশ্ন হ’ল – ফলাফল ভালো না হলে আমি আমার পরিবারের হতাশাকে কিভাবে মোকাবিলা করবো। ভালো নম্বর না পেলে কী হবে, আমি অধীর অপেক্ষায় আছি। একজন ভালো ছাত্র হওয়াটাও সহজ কাজ নয়। বড়দের প্রত্যাশা এত বেশি হয়ে যায় যে, পরীক্ষার্থী ভীষণ চাপে থাকে এবং কখনও বিষন্নতা গ্রাস করে। আজকাল ছাত্ররা বিরক্ত হয়ে হাতের শিরা কেটে ফেলে এবং কাউকে পায় না, যাকে তারা মনের কথা বিশ্বাস করে বলতে পারে। দয়া করে আমাকে এই বিষয়ে পথ দেখান। ধন্যবাদ স্যর।

উপস্থাপক – ধন্যবাদ অশ্বিনী। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী স্যর, রাজধানী দিল্লির প্রাণকেন্দ্র থেকে নবোদেশ জাগুর এই ধরনের একটি প্রশ্ন করছে। যে নগরীতে মহান মধ্যযুগীয় ইতিহাস এবং আশ্চর্যজনক স্থাপত্যশৈলী তার কমনীয় ব্যাপ্তি সহ বেশ কয়েকটি সাম্রাজ্যের বীজ বপণ করেছে। নবোদেশ এই সভাঘরে বসে আছে, তার প্রশ্নের মাধ্যমে সে একটি সমতুল বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে চায়। নবোদেশ তোমার প্রশ্ন জিজ্ঞেস করো।

নবোদেশ – সুপ্রভাত মাননীয় প্রধানমন্ত্রী স্যর। আমি দিল্লির পিতমপুরার কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ের ছাত্র নবোদেশ জাগুর। স্যর আমার প্রশ্ন হ’ল – যদি আমার পরীক্ষার ফল খারাপ হয়, তা হলে আমি পরিবারে কিভাবে মুখ দেখাবো? 

উপস্থাপক – ধন্যবাদ নবোদেশ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীজী বিশ্বে শান্তি ও করুণার বার্তা দিয়ে গেছেন ভগবান বুদ্ধ, গুরু গোবিন্দ সিং ও বর্ধমান মহাবীর – এই তিন শান্তির দূতের জন্মভূমি প্রাচীন নগর পাটনার প্রিয়াঙ্কা কুমারী এ ধরনেরই কিছু সমস্যায় ভুগছে, সেও আপনার পরামর্শ জানতে চায়। প্রিয়াঙ্কা তোমার প্রশ্ন বলো।

প্রিয়াঙ্কা – নমস্কার, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীজী। আমার নাম প্রিয়াঙ্কা কুমারী। আমি পাটনা রাজেন্দ্রনগরের রউন বালিকা প্লাস-২ বিদ্যালয়ের একাদশ শ্রেণীর ছাত্রী। আমার প্রশ্ন হ’ল – আমার পরিবারে সবাই খুব ভালো নম্বর নিয়ে পাশ করেছেন। আমাকেও ভালো নম্বর পেতে হবে। সেজন্য আমি খুব চাপে আছি। এই চাপ থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য আমাকে পথ দেখান। ধন্যবাদ। 

উপস্থাপক – ধন্যবাদ প্রিয়াঙ্কা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীজী, অশ্বিনী, নবোদেশ এবং প্রিয়াঙ্কা অনুভব করছে যে, এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি অনেক ছাত্রছাত্রীকে চাপে ফেলছে। আর এই পরিস্থিতি থেকে নিজেদের মুক্ত করতেও তারা আপনার পরামর্শ চায়।

প্রধানমন্ত্রী – অশ্বিনী তুমি কি ক্রিকেট খেলো? ক্রিকেটে গুগলি বল বলে একটা কথা আছে। এক্ষেত্রে লক্ষ্য একদিকে থাকে আর বলটা অন্যদিকে ঘোরে। আমার মনে হয়, তোমরা প্রথম বলেই আমাকে আউট করতে চাও। তোমাদের থেকে পরিবারের সদস্যদের অনেক প্রত্যাশা থাকা অত্যন্ত স্বাভাবিক। আর এটা অন্যায় কিছু নয়। কিন্তু, যদি পরিবারের সদস্যদের প্রত্যাশা আর সামাজিক মর্যাদার কারণে নম্বর পেতে হয়, তা হলে এটা তো ভীষণ চিন্তার বিষয়। তাঁদের সামাজিক মর্যাদা তাঁদের উপর এত চাপ সৃষ্টি করে, যে তাঁরা অত্যন্ত প্রভাবিত হয়ে পড়েন। তাঁরা ভাবেন যে, ছেলেমেয়ের পরীক্ষার নম্বর কম হলে সমাজে কিভাবে মুখ দেখাবেন। যদি ছেলেমেয়েরা পড়াশুনায় দুর্বল হয়, তা হলে আত্মীয়-স্বজনকে কিভাবে বলবেন! কখনও কখনও বাবা-মা নিজেদের ক্ষমতা সম্পর্কে জানা সত্ত্বেও সামাজিক মর্যাদার কারণে চাপে পড়েন। তাঁদের চারপাশের আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, ক্লাব-সোসাইটি বা সাধারণ পরিবারের কেউ পুকুরে কাপড় ধুতে গিয়ে অন্যদের সঙ্গে ছেলেমেয়েদের বিষয়ে কথা বলেন। তাঁদের মনে একটা হীনমন্যতা কাজ করে। সেজন্য বাড়ির বাইরে ছেলেমেয়েদের নিয়ে বড় বড় কথা বলেন, আর সেই কথাগুলি ক্রমে তাঁদের নিজেদের মনেই বসে যায় আর বাড়ি ফিরে সেই প্রত্যাশা করতে থাকেন। সমাজ জীবনে ছেমেয়েদের থেকে এই প্রত্যাশা একটা সহজ প্রবৃত্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর তোমরা যত ভালোই করো না কেন, প্রত্যেকে তোমাদের চেয়ে আরও ভালো ফল প্রত্যাশা করবে। আমরা যেমন রাজনীতিতে আছি। নির্বাচনে যত ভালোই ফল করি না কেন, এত চাপ সৃষ্টি করা হয় যে, যেন আমাদের হারতে নেই। ২০০ ভোট বেশি পেলে বলা হয় ২৫০টি ভোট কেন পাওনি। চারিদিক থেকে এরকম চাপ সৃষ্টি করা হয়। কিন্তু আমাদের এই ধরনের চাপে পর্যুদস্ত হলে চলবে না! কয়েক মুহূর্তের জন্য ভাবো যে, তোমাদের সারা দিন যা বলা হয়, তা শুনতে শুনতেই যদি দিন কাটিয়ে দাও তা হলে পড়াশুনা কখন করবে। তোমরা নিজেদের ভেতরে তাকাও, নিজেদের ক্ষমতা, অগ্রাধিকার, নিজস্ব প্রয়োজনীয়তা এবং একান্ত নিজস্ব ইচ্ছাশক্তিকে ব্যক্তিগত প্রত্যাশার সঙ্গে যুক্ত করো। তোমরা কখনও যদি ক্রিকেট ম্যাচ দেখতে গিয়ে থাকো, তা হলে হয়তো দেখেছো যে, কিছু ব্যাটস্ম্যান মাঠে নামতেই হাজার হাজার দর্শক প্রত্যাশায় চিৎকার করতে শুরু করেন,- চার চার – ছয় ছয়! কিন্তু কোনও ব্যাটস্ ম্যান কি দর্শকদের চাহিদা অনুযায়ী তাঁদের খেলা খেলেন। যাঁরা চিৎকার করছেন, তাঁদের চিৎকার করতে দাও। ব্যাটস্ ম্যানের লক্ষ্য থাকবে বোলারদের দিকে। প্রতিটি বলের দিকে সে নজর রাখবে। সেই মুহূর্তে বোলারের মনে কী চলছে, তা নিয়ে ভাববে। সেই অনুযায়ী তিনি খেলবেন। তিনি দর্শকের চিৎকারে ফোকাস না রেখে নিজের গতিবিধির দিকে ফোকাস রাখবেন। তবেই তাঁকে নিয়ে দর্শকদের যত প্রত্যাশা, তা কখনও কখনও পূরণ করতে পারবেন। এভাবেই তোমরাও নিজের পড়াশোনার দিকে ফোকাস রেখে এ ধরনের সঙ্কট থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে। আর সেজন্য আমার অনুরোধ যে, তোমরা কোনও চাপ নিও না। হ্যাঁ, কখনও কখনও চাপকে অবশ্যই বিশ্লেষণ করবে। এমন তো নয় যে, তুমি নিজেই হীনমন্যতায় ভুগছো। তোমার ক্ষমতা হয়তো অনেক। কিন্তু, নিজেই যদি এত হতাশায় ভোগো, তা হলে নতুন কিছু করার কথা তোমার মাথায় আসবে না। কখনও কখনও অন্যদের প্রত্যাশাও অনেক বড় শক্তিতে পরিণত হয়। সেজন্য বাবা-মা কী ধরনের প্রত্যাশা করেন, সেকথা আমি আগেই বলেছি। সামাজিক মর্যাদার কথা ভেবে বাবা-মায়ের এই প্রত্যাশার চাপ ছেলেমেয়ের মাথার উপর চাপানো উচিৎ নয়। কিন্তু, ছেলেমেয়েদেরও উচিৎ নিজস্ব ক্ষমতা থেকে কখনও নিজেদের কম না ভাবা। এই দুটি দিকে যদি আমরা সমানভাবে জোর দিই, আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে, এই ভারসাম্য তোমাদের এ ধরনের সমস্যা থেকে মুক্তি দেবে। আরে অ্যাঙ্কার কোথায় গেলেন?

উপস্থাপক – মাননীয় প্রধানমন্ত্রীজী, আপনাকে কোটি কোটি ধন্যবাদ। আপনার প্রেরণাদায়ী বক্তব্য শুনে ছাত্রছাত্রীদের পাশাপাশি অভিভাবকরাও নিজেদের চাপমুক্ত হওয়ার পথ খুঁজে পেলেন। মান্যবর, আমরা চাপে থাকবো না, আমরা নিজেদেরকে সংহত করে পরীক্ষার জন্য উৎসাহ বজায় রাখবো। আপনাকে ধন্যবাদ। 

উপস্থাপক – মাননীয় প্রধানমন্ত্রীজী, পার্বত্য নগরী চম্বা প্রকৃতির স্পর্শাতীত সৌন্দর্যকে বুকে নিয়ে ভারতের প্যারিস রূপে প্রসিদ্ধ । হিমাচল প্রদেশের সেই চম্বা থেকে প্রযুক্তির মাধ্যমে আরুষি ঠাকুর আমাদের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে। আরুষি অনুগ্রহ করে তোমার প্রশ্ন জিজ্ঞেস করো। 

আরুষি – মাননীয় প্রধানমন্ত্রীজী নমস্কার। আমার নাম আরুষি ঠাকুর। আমি চম্বা জেলার ডালহৌসির বনিখেতে অবস্থিত কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ের একাদশ শ্রেণীর ছাত্রী। আমার প্রশ্ন হ’ল – পরীক্ষার সময় যে বিষয়টি আমাকে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় ফেলে, তা হ’ল – কোথা থেকে পড়া শুরু করবো। প্রায়শই আমার মনে হয়, সব কিছু ভুলে যাচ্ছি। আর ক্রমে তা নিয়েই ভাবতে শুরু করি। অত্যন্ত উত্তেজিত হয়ে পড়ি। অনুগ্রহ করে আমাকে পথ দেখান। ধন্যবাদ স্যর। 

উপস্থাপক – ধন্যবাদ আরুষি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীজী, ভারতের ধানের পাত্র নামে প্রসিদ্ধ রাজ্য ছত্তিশগড়ের রাজধানী রায়পুর। সেই রায়পুরের অদিতি দেওয়ান একই ধরনের সমস্যা নিয়ে আপনার কাছে সমাধান জানতে চায়। অদিতি তোমার প্রশ্ন বলো। 

অদিতি দেওয়ান – মাননীয় প্রধানমন্ত্রীজী, নমস্কার। আমার নাম অদিতি দেওয়ান। আমি ছত্তিশগড় রাজ্যের রায়পুরে অবস্থিত কৃষ্ণা পাবলিক স্কুলের দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্রী। আমি আপনার কাছে একটা পরামর্শ চাই, সবসময় মনে হয়, আমাকে অনেক কিছু করতে হবে। কিন্তু, শেষ পর্যন্ত কিছুই করে উঠতে পারি না। কারণ, আমার হাতে অনেক কাজ থাকে। এর মধ্যে কোনও কাজ যথা সময়ে সম্পূর্ণ করে নিলেও সমস্যা থাকে। কারণ, অন্য কাজগুলি করতে দেরী হয়ে যায়। আর সেগুলি বাকি থেকে যায়। আমি জানতে চাই যে, আমার সমস্ত কাজ কিভাবে যথাসময়ে সম্পূর্ণ করবো? ধন্যবাদ।

উপস্থাপক – ধন্যবাদ অদিতি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীজী, আরুষি ও অদিতি তাদের পরীক্ষার প্রস্তুতি এবং সময়ের সদ্ব্যবহার নিয়ে আপনার পরামর্শ চায়। অনুগ্রহ করে তাদের সমস্যার সমাধান করুন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীজী।

প্রধানমন্ত্রী – দেখো আমি যা বলছি, তা শুধু পরীক্ষার কথা ভেবে বলছি না। আমাদের জীবনে সময়ের সঠিক ব্যবস্থাপনার প্রতি সচেতন থাকতে হবে। তা সে পরীক্ষা থাকুক কি না থাকুক – তোমরা হয়তো লক্ষ্য করেছো যে, অনেক কাজ কেমন করে যেন বাকি থেকে যায়! কাজ বাকি  থাকার মূল কারণ হ’ল যথাসময়ে সেই কাজটা না করা। একটা কথা জেনে রাখো, কাজ করলে কখনও ক্লান্তি আসে না। কাজ করলে সন্তুষ্টি আসে। কাজ না করলেই বরং ক্লান্তি আসে। সামনে দেখা যাচ্ছে, আরে এত কাজ, অথচ আমি শেষ করতে পারছি না – এই ভাবনা থেকেই ক্লান্তি আসে। কাজ করতে শুরু করো। কখনও কাগজে কিংবা ডায়েরিতে কলম বা পেনসিল দিয়ে একথা লিখবে না যে কী কী কাজ বাকি। বরং, একথা লিখতে পারো যে, সারা সপ্তাহ তুমি কোথায় কিভাবে সময় কাটিয়েছো। যদি পড়াশুনা করে কাটিয়ে থাকো, তা হলে কোন বিষয় পড়তে কতটা সময় দিয়েছো, শর্টকাট মেরেছো কিনা – এইভাবে নিজের কর্মপদ্ধতির মূলে যাও। সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্মভাবে নিজের কৃতকর্মের বিশ্লেষণ করো। তবেই দেখতে পাবে যে, কোন কোন বিষয় তোমার খুব পছন্দ, যেখানে তুমি বেশি সময় দাও, আর তা নিয়েই ডুবে থাকো। আমি মনে করি, এই বিশ্লেষণ অত্যন্ত জরুরি, এটা দেখা যে কোন তিনটি বিষয় আমার কম পছন্দ। তা হলেই বুঝতে পারবে যে, কোথা থেকে তোমার চাপ তৈরি হচ্ছে। আমি ২ ঘন্টা পরিশ্রম করেছি, কিন্তু শেষ করতে পারিনি। সেজন্য আরও ২ ঘন্টা পড়তে থাকবো – এটা ঠিক নয়। বিশ্রাম নাও। তারপর আবার পড়া শুরু করো। তখনই দেখবে যে, যেটা কম পছন্দের বিষয়, সেটাও ভালো বুঝতে পারছো। যে বিষয়গুলি বেশি কঠিন মনে হয়, সেগুলি৩০ মিনিট পড়ো, তারপর যেটা পছন্দ সেটা ২০ মিনিট পড়ো, তারপর আবার যেটা কম পছন্দ সেটা ৩০ মিনিট পড়ো। এভাবে পড়ার সময়টাকে ভাগ করে নাও। তা হলে দেখবে যে, অনেকটা মজা পাবে এবং ধীরে ধীরে কম পছন্দের বিষয়গুলির প্রতিও আকর্ষণ বাড়বে। শুধু নিজের পছন্দের বিষয়গুলিতে ডুবে থাকলে চলবে না। তোমরা হয়তো লক্ষ্য করেছো যে, তোমাদের মধ্যে যারা ঘুড়ি ওড়ায়….আমি ছোটবেলায় খুব ঘুড়ি ওড়াতাম। ঘুড়ির সুতোয় যে মাঞ্জা দেওয়া হয়, তা কখনো জড়িয়ে গিয়ে জট পাকিয়ে যায়। যে বুদ্ধিমান সে তখন কী করবে? সে কি তখন শক্তি দিয়ে সেই জট খোলার চেষ্টা করবে? করবে না তো? ধীরে ধীরে একটি একটি করে সুতো টেনে জট খোলার পথ বের করবে। তা হলেই মাঞ্জা অক্ষত রেখে জট খুলে যাবে। টানাটানি করলে চলবে না। কোনও সমস্যার সমাধানও এভাবেই ধীরে ধীরে করতে হয়। বাড়িতে মা কিভাবে কাজ করেন, সেটা কি কখনও দেখেছো? তুমি সকালে স্কুলে যাবে, কিন্তু তার আগেই মা সবকিছু তৈরি করে রাখেন। কী ভালো লাগে না! কিন্তু, মা কিভাবে তাঁর সময় ব্যবস্থাপনা করেন, তা কি লক্ষ্য করেছো? তিনি জানেন, ছেলেমেয়েরা সকালে স্কুলে যাবে, তাই ভোর ৬টায় আমাকে এই কাজ করতে হবে, সাড়ে ছ’টায় এই কাজ করতে হবে, ১০টায় যখন ছেলেমেয়ে ফিরে আসবে তখন কী করতে হবে -  যথাযথ সময় ব্যবস্থাপনা! মায়েরা জানেন যে, কোন কাজ কখন করতে হবে। তাই, কোনও কাজের জন্যই তাঁরা চাপে থাকেন না। ক্লান্ত হয়ে পড়েছি, অনেক কাজ – এরকম ভেবে চললে তাঁরা ঘন্টার পর ঘন্টা কাজ করে যেতে পারতেন না। তারপরও যেটুকু সময় বাঁচে তখনও তাঁরা চুপ করে বসেন না। ছুঁচ-সুতো দিয়ে কিছু না কিছু সৃষ্টিশীল কাজ করতে থাকেন – এটাই যেন তাঁদের অবসরযাপন। মায়ের কাজ খুব ভালোভাবে লক্ষ্য করলে তোমরা ছাত্রছাত্রীরা সময় ব্যবস্থাপনার গুরুত্বকে ভালোভাবে বুঝতে পারবে। ২-৩-৪ ঘন্টা কিভাবে কাজ করবে – এভাবে না ভেবে মায়ের মতো মাইক্রো ম্যানেজমেন্ট করো। তা হলেই দেখবে কোন বিষয়কে কতটা সময় দেবে, তা ভালোভাবে বুঝতে পারবে। ৬ দিন ধরে শুধু এই বিষয়টাই পড়বো – এরকম ভাবলে চলবে না। নিজের মতো করে সময়কে ভাগ করে নাও। তা হলেই লাভবান হবে। ধন্যবাদ।

উপস্থাপক – ধন্যবাদ, প্রধানমন্ত্রী স্যর। একজন কার্যকর ছাত্র হয়ে উঠতে আমাদের ছেলেমেয়েদের  পদ্ধতিগত এবং নিয়মানুগ হওয়ার পরামর্শ দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী স্যর, মনোমুগ্ধকর চিত্রকূট জলপ্রপাত, উৎকৃষ্ট মানের বাঁশ এবং বিশিষ্ট জনজাতি হস্তশিল্পের জন্য বিখ্যাত ছত্তিশগড়ের বস্তার জেলার বাসিন্দা রূপেশ কাশ্যপ আমাদের সঙ্গে রয়েছে। সে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আপনার পরামর্শ চায়। রূপেশ তোমার প্রশ্ন জিজ্ঞেস করো।

রূপেশ – মাননীয় প্রধানমন্ত্রী স্যর, আমার নাম রূপেশ কাশ্যপ। আমি ছত্তিশগড়ের বস্তার জেলার দ্রাভা শহরের স্বামী আত্মানন্দ গভর্নমেন্ট ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের নবম শ্রেণীর ছাত্র। আমার প্রশ্ন হ’ল – আমি কিভাবে নকল না করে পরীক্ষায় সাফল্য পাবো। ধন্যবাদ স্যর। 

উপস্থাপক – ধন্যবাদ রূপেশ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মহোদয়, ওডিশার আধ্যাত্মিক রাজধানী, রথযাত্রা ও নির্মল সৈকতভূমির জন্য জগৎ বিখ্যাত জগন্নাথ পুরীর ঐতিহ্যবাহী শহর থেকে তন্ময় বিসওয়াল একটি সমতুল বিষয়ে আপনার পরামর্শ চায়। তন্ময় তোমার প্রশ্ন জিজ্ঞেস করো। 

তন্ময় – মাননীয় প্রধানমন্ত্রী স্যর, নমস্কার। আমি তন্ময় বিসওয়াল। আমি ওডিশার কোনারক পুরী জওহর নবোদয় বিদ্যালয়ের ছাত্র। স্যর, আপনার কাছে আমার প্রশ্ন হ’ল – পরীক্ষার সময় ছাত্রছাত্রীদের কিভাবে নকল থেকে দূরে থাকা সম্ভব। দয়া করে এ বিষয়ে আমাকে পথ দেখান। ধন্যবাদ স্যর।

উপস্থাপক – মাননীয় প্রধানমন্ত্রীজী, রূপেশ ও তন্ময় আপনার কাছ থেকে পরীক্ষায় নকল না করে কিভাবে ভালো ফল করতে পারে, তা নিয়ে জানতে চায়। শ্রদ্ধেয় প্রধানমন্ত্রীজী।

প্রধানমন্ত্রী – আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে, আমাদের ছাত্রছাত্রীরা নকল করাকে অন্যায় বলে ভাবছে। কেন নকল করতে হবে? বিশেষ করে, যারা পরিশ্রমী ছাত্রছাত্রী, তারা ভাবে, আমি পরিশ্রম করে এই ফল করি আর কেউ কেউ চুরি করে কৃতকার্য হয়। তোমাদের বলছি, চিরকালই এই চুরি বা নকল ছিল। ছাত্রছাত্রীরা চুপি চুপি এইসব কাজ করে গর্বের সঙ্গে বলতো যে, পরীক্ষার গার্ডকে বোকা বানিয়ে দিয়েছি। কিন্তু, এই যে কারও মনে মূল্যবোধের পরিবর্তন এটা অত্যন্ত বিপজ্জনক। তা সত্ত্বেও এই সামাজিক সত্যকে অস্বীকার করা যায় না। এ নিয়ে সকলের ভাবনাচিন্তা করার সময় এসেছে। আরেকটা অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়তো আমরা হচ্ছি যে, ছেলেমেয়েরা যে স্কুলে পড়ে, সেই স্কুলেরই  অনেক শিক্ষক-শিক্ষিকা হয়তো বাড়িতে ব্যাচে ছাত্র পড়ান। বাবা-মা ভাবেন যে, তাঁদের কাছে পড়তে দিলে আমার ছেলেমেয়ে ভালো ফল করবে। একথা ভেবে তাঁরা জলের মতো টাকা খরচ করেন। আর সেই কোচিংগুলিতে এমন শিক্ষকও থাকেন, যাঁরা ছাত্রছাত্রীদের নকল করতে সাহায্য করে। থাকে তো? না থাকলে বলুন যে,নেই! আরেকটা জিনিস আমি দেখেছি, কিছু ছাত্রছাত্রী পড়ার পেছনে তেমন সময় ব্যয় করে না, কিন্তু নকল করার নতুন নতুন পথ খুঁজে বের করতে অত্যন্ত সৃষ্টিশীল হয়। ঘন্টার পর ঘন্টা নকল তৈরি করে। কখনও আমার মনে হয় যে, নকলের নানা সৃষ্টিশীল পদ্ধতি খুঁজে বের করতে সময় নষ্ট না করে, সেই বুদ্ধিমান ছাত্রছাত্রীরা যদি তাদের মেধাকে পড়াশুনার জন্য কাজে লাগাতো – তা হলে অনেক ভালো ফল করতো। কারো উচিৎ ছিল, তাদের সেভাবে পথ দেখানো। এটা ভেবে চলতে হবে যে, এখন জীবন অনেক বদলে গেছে। আমাদের চারপাশের জগৎ-ও বদলে গেছে। সেজন্য পরীক্ষায় কৃতকার্য হলেই যে কেউ জীবনে কৃতকার্য হবে, তার কোনও মানে নেই। আজ পড়ুয়াদের সব জায়গায় কোনও না কোনও পরীক্ষায় বসতে হয়। কত জায়গায় সে কত ধরনের নকল করবে?  সেজন্য বলি, যারা নকল করে, তারা দু-একটা পরীক্ষায় নকল করে পার পেলেও জীবনের সব পরীক্ষায় নকল করে পার পাবে না। নকল দিয়ে জীবন তৈরি করা যায় না। পরিশ্রম করে পরীক্ষা দিলে নম্বর কম-বেশি হতে পারে। কিন্তু, আত্মবিশ্বাস থাকে। নকল করে খুব ভালো নম্বর পেলেও সেই ছাত্রছাত্রীরা এমন একটা আবহে ক্রমে নিজেদেরকে জড়িয়ে ফেলে যে, পরবর্তীকালে তা থেকে উদ্ধার পাওয়া মুশকিল হয়। সেজন্য আমি ছাত্রছাত্রীদের বলব, যত কঠোর পরিশ্রম করবে, সেই পরিশ্রম তোমাদের জীবনকে রঙিন করে তুলবে। কেউ নকল করে তোমার চেয়ে ২-৪ নম্বর বেশি পেলেও জীবনের পরীক্ষায় তোমরা অনেক বেশি সফল হবে। তোমার ভেতরের যে শক্তি, সেই আন্তরিক শক্তিই তোমাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। তাই অনুগ্রহ করে ভুল পথে যেও না। পরীক্ষা আসবে-যাবে। কিন্তু, জীবন থেমে থাকবে না। জীবনের প্রতিটি লড়াইকে লড়ে জিততে হবে। শর্টকাটের দিকে কখনও যাবে না। তোমরা তো জানো যে, রেল স্টেশনে যে রেল লাইন থাকে, তার উপর দিয়ে যাতায়াত না করে কষ্ট করে ওভারব্রিজ দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। যারা এই কষ্ট করে না, রেল লাইন পেরিয়ে শর্টকাটে যেতে চায়, তাঁরাই বেশি দুর্ঘটনার সম্মুখীন হয়। তোমরা লক্ষ্য করে থাকবে যে, রেল স্টেশনে লেখা থাকে ‘শর্টকাট উইল কার্ট ইউ শর্ট’। আর যাঁরা শর্টকাট নেয়, তাঁরাই বেশি চাপে থাকে। তোমরা পরিশ্রমের পথ অবলম্বন করো, আর শর্টকাটের চাপ থেকে নিজেদের মুক্ত রাখো। তা হলেই দেখবে, ভালো ফল আসাবে। ধন্যবাদ।

উপস্থাপক – ধন্যবাদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীজী, আপনার বক্তব্য সরাসরি আমাদের হৃদয়ে প্রবেশ করেছে। আপনাকে ধন্যবাদ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীজী, কেরলের ঐতিহ্যবাহী মালয়ালম সঙ্গীতের ধ্বনি, ফসলের ক্ষেতে মৃদু গ্রীষ্মে কাটা ফসলের সুবাস যে অঞ্চলকে মথিত করে রাখে, সেই পালাক্কাডের ছাত্র সুজয়. কে আপনার পরামর্শ চায়। সুজয় তোমার প্রশ্ন জিজ্ঞেস করো। 

সুজয় – নমস্কার, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মহোদয়। আমার নাম তেজস সুজয়। আমি কেরলের পালাক্কাড়ের কর্নাকুলাম সম্ভার কোঞ্জিকোড়ে অবস্থিত কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণী ছাত্র। আমার প্রশ্ন হ’ল – হার্ড ওয়ার্ক এবং স্মার্ট ওয়ার্কের মধ্যে কোনটা বেশি জরুরি। পরীক্ষায় ভালো ফল পেতে হলে কি দুটিরই প্রয়োজন রয়েছে? অনুগ্রহ করে আপনার পরামর্শ দিন। ধন্যবাদ মাননীয়। 

উপস্থাপক – ধন্যবাদ সুজয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীজী।

প্রধানমন্ত্রী – ওর প্রশ্নটা কী? কী জানতে চায়?

উপস্থাপক – স্যর, হার্ডওয়ার্ক আর স্মার্ট ওয়ার্ক নিয়ে জানতে চায়। 

প্রধানমন্ত্রী – হার্ডওয়ার্ক আর স্মার্টওয়ার্ক?

উপস্থাপক – হ্যাঁ স্যর, ধন্যবাদ।

প্রধানমন্ত্রী – আচ্ছা আচ্ছা। তোমরা হয়তো ছোটবেলায় একটা গল্প পড়েছো। সকলেই হয়তো পড়েছো। এই গল্পটা থেকেই বোঝা যায় স্মার্টওয়ার্ক কী, আর হার্ডওয়ার্ক-ই বা কী। আমিও ছোটবেলায় পড়েছি একটি কাক ও এক কলসি জলের গল্প। কলসির গলাটা সরু হওয়ায় কাক কলসির নীচে থাকা জল পান করতে পারছিল না। তখন সে ঠোঁট দিয়ে ছোট ছোট নুড়ি তুলে সেই কলসিতে ফেলতে থাকে। তারপর ধীরে ধীরে জল উপরে উঠে আসে, আর সে খুব ভালোভাবে জল পান করতে পারে। এখন তোমরা কাকের এই সাফল্যকে হার্ডওয়ার্ক বলবে না স্মার্টওয়ার্ক? যখন এই গল্প লেখা হয়েছে, তখন কোনও স্ট্র ছিল না। না হলে কাকটা হয়তো বাজার থেকে স্ট্র নিয়ে আসতো! দেখো, কিছু মানুষ সবসময়েই কঠোর পরিশ্রম করেন আর কিছু মানুষ থাকেন, যাঁরা জীবনে কঠোর পরিশ্রমের দিকে যান না। কিছু মানুষ ‘হার্ডলি স্মার্টওয়ার্ক’ করেন, আবার কিছু মানুষ ‘স্মার্টলি হার্ডওয়ার্ক’ করেন। আমাদের নীতিকথার কাকটি আমাদের শেখায় যে, কিভাবে স্মার্টলি হার্ডওয়ার্ক করতে হবে। সেজন্য আমাদের প্রতিটি কাজ করার আগে সেটিকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বুঝতে হবে। অনেকেই লক্ষ্য করবেন যে, কাজটা না বুঝেই সরাসরি নিজেদের বুদ্ধি প্রয়োগ করতে শুরু করেন। তখন তাঁরা অনেক পরিশ্রম করেও প্রত্যাশা মতো সুফল পান না। আমার মনে পড়ে, আগে আমি যখন জনজাতি এলাকায় কাজ করতাম, অনেক প্রত্যন্ত অঞ্চলে যেতে হ’ত, তখন কেউ আমাকে একটি পুরনো জীপ গাড়ির ব্যবস্থা করে দেন। একদিন সকাল ৫টা ৩০ মিনিটে বেরনোর কথা, কিন্তু আমাদের জীপ স্টার্ট-ই নিচ্ছিল না। আমরা অনেক চেষ্টা করলাম, ধাক্কা মারলাম, কিন্তু চালক ও আমার শত পরিশ্রম সত্ত্বেও জীপ স্টার্ট নিল না। ৭টা ৩০ মিনিট নাগাদ একজন মিস্ত্রীকে ডাকা হ’ল। সেই মিস্ত্রী মাত্র দু’মিনিটের মধ্যেই গাড়ি ঠিক করে দিল। তারপর ২০০ টাকা চাইল। আমি বললাম, আরে দু’মিনিটে ২০০ টাকা। সে বললো, সাহেব দু’মিনিটের জন্য ২০০ টাকা নয়, আমার ৫০ বছরের অভিজ্ঞতার জন্য ২০০ টাকা। আমি ভাবলাম, ঠিকই তো, আমি আর ড্রাইভার মিলে এতক্ষণ ধরে চেষ্টা করছিলাম, কিন্তু জীপ চালু হয়নি। আর তিনি এসে দু’মিনিটের মধ্যে দু-একটা বোল্ট টাইট করে জীপ ঠিক করে দিলেন আর গাড়ি চলতে শুরু করলো! আমি এই উদাহরণ এজন্য দিচ্ছি যে, সবকিছু শুধু পরিশ্রম দিয়ে হয় না। তোমরা হয়তো লক্ষ্য করেছো যে, খেলাধূলার ক্ষেত্রে অনেক পালোয়ান থাকেন, যাঁদের খুব পেশীবহুল হতে হয়। তেমনই প্রশিক্ষকদেরও জানতে হয় যে, কোন খেলায় খেলোয়াড়দের কোন পেশীগুলিকে বেশি শক্তিশালী করে তুলতে হবে। যেমন – যিনি উইকেট কিপার, তাঁকে ঘন্টার পর ঘন্টা ঝুঁকে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। তোমরা হয়তো লক্ষ্য করেছো যে, কিছু অন্যায় করলে শিক্ষক কান ধরে ক্লাসে নী ডাউন করে বসিয়ে দিলে কত কষ্ট হয়। কিন্তু, উইকেট কিপারকে এরকম ঘন্টার পর ঘন্টা ঝুঁকে থাকতে হয়। হ্যাঁ, তোমাদের মতো তাঁকে মানসিক শাস্তি পেতে হয় না ঠিকই, কিন্তু কষ্ট তো হয়। আর সেই ঝুঁকে থাকাটা উইকেট কিপারের প্রশিক্ষণের অঙ্গ। ধীরে ধীরে তাঁর সেই পেশীগুলো শক্তিশালী হয়ে ওঠে। কিন্তু, বোলারের জন্য অন্যরকম প্রশিক্ষণ দিতে হয়। একই খেলায় যাঁর যেরকম ভূমিকা, সেই অনুযায়ী খেলোয়াড়কে তৈরি করেন প্রশিক্ষকরা। এমনিতে প্রত্যেকের জন্য দৌড়ানো, নিয়মিত ব্যায়াম তো করাতেই হয়। কিন্তু, বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে সাফল্য পেতে হলে তার মতো করে প্রস্তুতি নিতে হবে। যাঁরা এই জিনিসটা বুঝতে পারেন আর সেই অনুযায়ী কাজ করেন, তাঁরা দ্রুত সাফল্য পান। একজন বোলার কিংবা উইকেট কিপারের প্রশিক্ষণ আর একজন ভারোত্তলোকের প্রশিক্ষণ ভিন্ন হবেই। আর সেজন্য তাঁদের কঠোর পরিশ্রম করতে হয়। কিন্তু, সেই কঠোর পরিশ্রম তাঁরা স্মার্টলি করেন। আর এই স্মার্টলি হার্ডওয়ার্ক-ই অধিক সুফলদায়ক হয়। অনেক অনেক ধন্যবাদ।

উপস্থাপক – ধন্যবাদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীজী। আপনি যেভাবে ছাত্রছাত্রীদের জীবনে কনসিস্ট্যান্ট হার্ডওয়ার্ক বেছে নেওয়ার অন্তর্দৃষ্টিমূলক পরামর্শ দিয়েছেন, তা সকলের কাজে লাগবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীজী। গুরু দ্রোণাচার্যের নামে বিখ্যাত হরিয়ানার প্রসিদ্ধ শিল্পনগরী সাইবার সিটি গুরুগ্রামের ছাত্রী জোভিতা পাত্র এই সভাঘরে উপস্থিত আছে। সে আপনাকে একটি প্রশ্ন করতে চায়। জোভিতা অনুগ্রহ করে তোমার প্রশ্ন জিজ্ঞেস করো।

জোভিতা পাত্র – নমস্কার, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী স্যর। আমি হরিয়ানার গুরুগ্রামে অবস্থিত জওহর নবোদয় বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্রী। এটা আমার সৌভাগ্য যে, আজকের এই ‘পরীক্ষা পে চর্চা ২০২৩’ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে পারছি। এটা আমার জন্য অত্যন্ত সম্মানের। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী স্যর, আমি একজন সাধারণ ছাত্রী, আপনার কাছে জানতে চাই যে, কিভাবে পড়ায় মন দেবো। অনুগ্রহ করে আমাকে পরামর্শ দিন। ধন্যবাদ স্যর।

উপস্থাপক – ধন্যবাদ জোভিতা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীজী, জোভিতা পাত্র একজন সাধারণ ছাত্রী হিসাবে কিভাবে পরীক্ষায় সাফল্য পেতে পারে, তা নিয়ে আপনার পরামর্শ চেয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীজী।

প্রধানমন্ত্রী – সবার আগে আমি তোমাকে শুভেচ্ছা জানাই। তুমি নিজে জানো যে, তুমি একজন সাধারণ ছাত্রী। অধিকাংশ ক্ষেত্রে অনেকেই নিজেরা ‘বিলো অ্যাভারেজ’ হওয়া সত্ত্বেও নিজেদেরকে বিচক্ষণ বলে মনে করে। নিজেদেরকে মহাজন বলে মনে করে। আমি সবার আগে তোমাকে ও তোমার বাবা-মা’কে শুভেচ্ছা জানাই। একবার যখন তুমি নিজের এই শক্তিকে স্বীকার করে নিয়েছো যে হ্যাঁ, আমার ক্ষমতা এতটা, আমাকে এখন নিজের ক্ষমতা অনুযায়ী, অনুকূল বিষয়গুলিকে খুঁজে নিতে হবে। আমার এত বিচক্ষণ হওয়ার প্রয়োজন নেই। আমরা যখনই নিজেদের এই সামর্থ্য বুঝতে পারি, সেদিন থেকেই আমাদের সামর্থ্য বেড়ে যায়। যারা নিজেদের সামর্থ্য জানে না, তাদের সমর্থ হয়ে উঠতে অনেক প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হয়। সেজন্য তুমি যে নিজেকে বুঝতে পেরেছো, সেই শক্তি যে ঈশ্বর তোমাকে দিয়েছেন, তোমার শিক্ষক শিক্ষিকা ও পরিবারের সদস্যরা যে তোমাকে সেই শক্তি অনুধাবন করতে সাহায্য করেছে – এটা কম কথা নয়। আমি চাই যে, আমার দেশের প্রত্যেক বাবা-মা এভাবেই তাঁদের সন্তান-সন্ততিদের যথার্থ মূল্যায়ন করুন। তাঁদের মনে হীনমন্যতা জন্ম নিতে দেবেন না। কিন্তু, যথার্থ মূল্যায়ন করুন। কখনো কখনো আপনারা তাদের অনেক দামী জিনিস কিনে দেন। এটা না করে তাদের বোঝান যে, আমাদের এত টাকা নেই, আমরা এই জিনিস এনে দিতে পারবো না। দু’বছর অপেক্ষা করো। এরকম বলার মধ্যে কোনও অন্যায় নেই। বাড়ির আর্থিক পরিস্থিতি সম্পর্কে ছেলেমেয়েদের অবহিত করানোর মধ্যে কোনও অন্যায় নেই। কারণ, আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষই সাধারণ বিত্তশালী। অতিরিক্ত বিত্তশালী মানুষ খুব কমই রয়েছেন। অধিকাংশ মানুষই সাধারণ কাজ করেন। আর যখন কোনও সাধারণ মানুষ অসাধারণ কাজ করেন, তখন তিনি অনেক উচ্চতায় চলে যান। সাধারণের মাপকাঠি ভেঙে বেরিয়ে যান। সেজন্য আমাদের এটাও ভাবতে হবে যে, আপনারা বিশ্লেষণ করে দেখবেন, বিশ্বের যতজন মানুষ খুব সফল হয়েছেন, তাঁরা কারা? দেখবেন, তাঁরা অধিকাংশ সাধারণ ঘরের ছেলেমেয়ে। নিজেরা অসামান্য কাজ করে অসাধারণ ফল পেয়েছেন। যদি সাম্প্রতিক বিশ্বের দিকে তাকান, লক্ষ্য করবেন যে, বিশ্বের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে খুব আলোচনা চলছে। কোন দেশ কতটা এগিয়ে রয়েছে, কোন দেশের আর্থিক পরিস্থিতি খুব খারাপ, বিশেষ করে করোনা মহামারীর পর সারা পৃথিবীতে নতুন নতুন মাপকাঠি তৈরি হয়েছে। এমন নয় যে বিশ্বে মেধাবী অর্থনীতিবিদের অভাব রয়েছে। বড় বড় নোবেল পুরস্কার বিজেতা রয়েছেন, যাঁরা পথ দেখাতে পারেন যে, এমনটা করলে আর্থিক পরিস্থিতি শুধরাবে। অনেক উন্নত দেশের প্রত্যেক অলিগলিতে এরকম জ্ঞানী মানুষ রয়েছেন। এই বিদ্বান মানুষরা বিশ্ব ও মানবতাকে অনেক কিছুই দিয়েছেন। কিন্তু আমরা দেখেছি যে, আজ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের তুলনামূলক অর্থনৈতিক অগ্রগতির বিচারে ভারতকে একটি আশার কিরণ হিসাবে দেখা হচ্ছে। আপনারা হয়তো দু-তিন বছর আগে দেখেছেন, আমাদের সরকারের সম্বন্ধে খবরের কাগজগুলিতে লেখা হ’ত যে, এদের কাছে কোনও নামী অর্থনীতিবিদ নেই। সবাই সাধারণ মানের। প্রধানমন্ত্রীরও অর্থনীতি সম্বন্ধে কোনও জ্ঞান নেই। এমনটাই লেখা হ’ত তাই না? কিন্তু, আজ বিশ্বে সেই সাধারণ মেধার সরকারের পরিচালনায় যে দেশ চলছে, সেই ভারতই বিশ্বকে আশার কিরণ দেখাচ্ছে। সেজন্য বলছি, তুমি অসাধারণ নও – একথা ভেবে চাপ নিও না। একথা ভাবো, যাঁরা সাধারণ, তাঁদের মধ্যেই কিছু না কিছু অসাধারণ গুণ থাকে। আবার যাঁরা অসাধারণ হন, তাঁদের মধ্যেও অনেক খামতি থাকে। এটা মনে রাখবে যে, ঈশ্বর প্রত্যেককেই কিছু অভূতপূর্ব ক্ষমতা দিয়ে রাখেন। তোমাকে সেই ক্ষমতাকে চিনতে হবে। তাকে সার ও জল দিয়ে লালন-পালন করতে হবে। তবেই তুমি দ্রুতগতিতে মহীরূহ হয়ে উঠবে – এটাই আমার বিশ্বাস ধন্যবাদ।

উপস্থাপক – ধন্যবাদ, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী স্যর। আপনি অনেক ছাত্রছাত্রী ও দেশবাসীকে মূল্যবান এবং ব্যবহারিক জ্ঞান দিয়ে অত্যন্ত উৎসাহিত করেছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী স্যর, কিংবদন্তী স্থপতি নেকচাঁদের অনুপম সৃষ্টি মনোরম রক গার্ডেন ও আধুনিক স্থাপত্যের সুপরিকল্পিত শহর চন্ডীগড়ের ছাত্রী মান্নত বাজোয়া আমাদের মধ্যে রয়েছে, সে কিছু মৌলিক বিষয়ে আপনার পরামর্শ চায়, সে বিষয়টি তার মতো অনেক ছাত্রছাত্রীকে প্রভাবিত করে। মান্নত তোমার প্রশ্ন করো।

মান্নত বাজোয়া – মাননীয় প্রধানমন্ত্রীজী, নমস্কার। আমার নাম মান্নত বাজোয়া। আমি চন্ডীগড়ের সেন্ট জোসেফ সিনিয়র সেকেন্ডারি স্কুলের ছাত্রী। আপনাকে আমার প্রশ্ন যে, আমি যখন নিজেকে আপনার মতো প্রতিষ্ঠিত স্থানে রেখে কল্পনা করি, যেখানে ভারতের মতো বিশাল ও বিপুল জনসংখ্যার দেশকে নেতৃত্ব দেওয়া এবং নিজের মতামত রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। আপনার সম্পর্কে নেতিবাচক ভাবেন – এরকম অনেক মানুষও রয়েছেন। তাঁদের সেই ভাবনাগুলি আপনাকে প্রভাবিত করে? যদি প্রভাবিত করে, তা হলে আপনি কিভাবে নিজেকে সন্দেহের ঊর্ধ্বে নিয়ে যেতে পারেন, কোন আত্মবিশ্লেষণ আপনাকে উত্তরণের পথ দেখায় – এ বিষয়ে জানতে চাই। ধন্যবাদ।

উপস্থাপক – ধন্যবাদ মান্নত। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী স্যর। তুষার শুভ্র হিমালয়ের পাদদেশে নির্মল বাতাস, চা বাগান এবং অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঋদ্ধ দক্ষিণ সিকিমের বাসিন্দা অষ্টমী সাইন একটি সমতুল বিষয়ে আপনার কাছ থেকে জানতে চাইছে। অষ্টমী তোমার প্রশ্ন জিজ্ঞেস করো। 

অষ্টমী সাইন – মাননীয় প্রধানমন্ত্রীজী নমস্কার। আমার নাম অষ্টমী সাইন। আমি দক্ষিণ সিকিমের রঙ্গিতনগরে অবস্থিত ডিএভি পাবলিক স্কুলের একাদশ শ্রেণীর ছাত্রী। আমি আপনার কাছে জানতে চাই যে, যখন বিরোধী পক্ষ এবং সংবাদ মাধ্যম আপনার সমালোচনা করে, তখন আপনি কিভাবে এর সম্মুখীন হন। যেখানে আমি বাড়িতে নিজের অভিভাবকদের নানারকম অভিযোগ এবং হতাশাজনক বকাবকির সম্মুখীন হতে পারি না। আমাকে পথ দেখান। ধন্যবাদ।

উপস্থাপক – ধন্যবাদ অষ্টমী। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীজী, জাতির জনক মহাত্মা গান্ধী, সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল এবং স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতীর মতো মহাপুরুষের জন্মভূমি গুজরাটের কুমকুম প্রতাপ ভাই সোলাঙ্কি প্রযুক্তির মাধ্যমে আমাদের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে। তার মনেও এ ধরনের কিছু দ্বিধা আছে। কুমকুম আপনার পরামর্শ চায়। কুমকুম তোমার প্রশ্ন করো।

কুমকুম – মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মহোদয়, আমার নাম সোলাঙ্কি কুমকুম। আমি গুজরাটের আমেদাবাদ জেলার শ্রী হডালা বাঈ হাইস্কুলের দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্রী। আমার প্রশ্ন হ’ল – আপনি এত বড় গণতান্ত্রিক সাধারণতন্ত্রের প্রধানমন্ত্রী। যাঁকে প্রতিনিয়ত অসংখ্য প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হয়। আপনি এই প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে কিভাবে লড়াই করেন। অনুগ্রহ করে আমাকে বলুন। ধন্যবাদ। 

উপস্থাপক – ধন্যবাদ কুমকুম। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী স্যর, ঐতিহ্যবাহী এবং আধুনিক উভয় ধরনের ক্রিয়াকলাপে ঋদ্ধ কর্ণাটকের রাজধানী ব্যাঙ্গালুরু বা ভারতের সিলিকন ভ্যালি রূপে পরিচিত মহানগরী থেকে আকাশ দারিরা এ ধরনেরই কিছু প্রশ্ন নিয়ে আপনার কাছে জানতে চায়। আকাশ তোমার প্রশ্ন জিজ্ঞেস করো।

আকাশ – নমস্কার মোদীজী, আমি বেঙ্গালুরুর হোয়াইট ফিল্ড গ্লোবাল স্কুলের দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র। আমার দিদিমা শ্রীমতী কবিতা এ মাখিজা আমাকে সর্বদাই বলেন যে, আমাদের প্রধানমন্ত্রী কিভাবে বিরোধী পক্ষের সমস্ত অভিযোগ ও সমালোচনাকে নিজের জীবনে মহৌষধি এবং সুযোগ হিসাবে ব্যবহার করেন, তা থেকে তুমি শিক্ষা নাও। আপনার কাছে আমার প্রশ্ন, সত্যি সত্যি আপনি কিভাবে এমনটি করেন। অনুগ্রহ করে আমাদের মতো নবীন ছাত্রছাত্রীদের বলুন, যাতে আপনার কাছ থেকে প্রেরণা নিয়ে আমরা জীবনের প্রত্যেক পরীক্ষায় সফল হতে পারি। ধন্যবাদ। 
উপস্থাপক – ধন্যবাদ আকাশ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীজী, আপনার জীবন নবীন প্রজন্মের কোটি কোটি ছাত্রছাত্রীর জন্য প্রেরণার উৎস। আজ আমাদের মান্নত, অষ্টমী, কুমকুম এবং আকাশ তাঁদের জীবনে সম্ভাব্য প্রতিকূলতাগুলির বিরুদ্ধে কিভাবে ইতিবাচক থেকে সাফল্য অর্জন করবে, সেই বিষয়ে আপনার অভিজ্ঞতা জানতে চায়। অনুগ্রহ করে তাঁদের পথ দেখান, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীজী।

প্রধানমন্ত্রী – তোমরা পরীক্ষায় বসো, তারপর বাড়ি ফিরে পরিবারের সদস্য কিংবা বন্ধুদের সঙ্গে বসো। কারও যদি কোনও শিক্ষকের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকে, তা হলে তাঁর কাছেও যাও। যে প্রশ্নের সঠিক উত্তর লিখতে পারোনি, তা নিয়ে তোমার প্রতিক্রিয়া জানাও যে, এটা সিলেবাসের বাইরে থেকে এসেছে। তাই তো? তোমাদের চার জনের এই প্রশ্নটা আজ আমার জন্য তেমনি সিলেবাসের বাইরে থেকে আসা প্রশ্ন। কিন্তু, আমি বুঝতে পারছি যে, তোমরা কি জানতে চাইছো! এই অনুষ্ঠানে আমাকে যুক্ত না করলে তোমরা হয়তো এই প্রশ্নগুলি আরও ভালোভাবে জিজ্ঞেস করতে পারতে বা নিজেরাই জবাব দিতে পারতে। কিন্তু, তোমরা জানো যে তোমাদের পরিবারের সদস্যরাও কথাগুলি শুনছেন, সেজন্য মন খুলে বললে বিপদ। তাই অত্যন্ত চালাকির সঙ্গে আমাকে এর মধ্যে জড়িয়ে নিয়েছো। দেখো, আমার কথা বলতে গেলে, আমার একটা দৃঢ় বিশ্বাস আছে আর এটা আমার আস্থার বিষয়ও। আমি বিশ্বাস করি, সমৃদ্ধ গণতন্ত্রের জন্য সমালোচনা একটি অগ্নিশুদ্ধির উপায়। সমালোচনাই যে কোনও গণতন্ত্রের পূর্বশর্ত। প্রযুক্তির ক্ষেত্রে তোমরা লক্ষ্য করে থাকবে যে, ‘ওপেন সোর্স টেকনোলজি’তে যে কোনও ত্রুটি-বিচ্যুতি ও খামতিকে সমালোচনার মাধ্যমে তুলে ধরার অনুমতি থাকে। এই বিশ্লেষণের মাধ্যমেই আমরা ধীরে ধীরে নিজেদের প্রযুক্তির সঙ্গে অভ্যস্ত করে তুলি। আর অনেক মানুষের প্রচেষ্টায় সমৃদ্ধ সফট্ওয়ার গড়ে ওঠে। এই ওপেন সোর্স টেকনোলজিকে আজকাল অত্যন্ত শক্তিশালী একটি ইন্সট্রুমেন্ট বলে মনে করা হয়। তেমনই কিছু কোম্পানি নিজেদের পণ্য বাজারে ছেড়ে চ্যালেঞ্জ জানায় যে, যাঁরা এর ত্রুটি খুঁজে বের করতে পারবেন, তাঁদের পুরস্কৃত করা হবে। ‘এরকম বাউন্ড সিস্টেম’ – এর ব্যবস্থা আধুনিক প্রযুক্তিকে আরও ঋদ্ধ করে। অর্থাৎ, উদ্ভাবকরাও চান যে, কেউ না কেউ আমার উদ্ভাবিত পণ্যের ত্রুটিগুলি খুঁজে বের করুক, যাতে সেই পণ্যকে আরও বেশি উপযোগী করে তোলা যায়। যে কোনও সমালোচনাই আমাদের মুক্তির পথ দেখায়। কখনও কখনও কে সমালোচনা করছেন, তাঁকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। যেমন – তোমার স্কুলে কোনও ফ্যান্সি ড্রেসের কম্পিটিশন উপলক্ষে তুমি একটা দারুণ ফ্যান্সি পোশাক পরে গেছো, তখন তোমার প্রিয় বন্ধুটি যার প্রতিটি কথা তোমার ভালো লাগে, সে যদি তোমাকে বলে – এই পোশাক তোমাকে মানাচ্ছে না, তখন তোমার একরকম প্রতিক্রিয়া হবে। আর যে বন্ধুটি হামেশাই নেতিবাচক কথা বলে, তাই তুমি তাকে একটু কম পছন্দ করো, সে যদি বলে যে, তোমার পোশাকটি ভালো লাগছে না, তা হলে দেখবে অন্যরকম প্রতিক্রিয়া হয়। এর মানে যিনি আপনজন তিনি সমালোচনা করলেও আমরা তাকে ইতিবাচকভাবে নিই। আর যার কথা শুনলেই তোমার রাগ হয়, সে সমালোচনা করলে তুমি তা নিয়ে মাথা ঘামাবে না। তাই,বাড়িতে সমালোচনা হলে বুঝবে যে তোমার কোথাও ভুল হচ্ছে! যাদের বাড়িতে কোনও সমালোচনা হয় না, তারা দুর্ভাগা। সমালোচনা করার জন্য বাবা-মা ও প্রিয়জনদের তোমাকে অনেক নিবিড়ভাবে জানতে হয়। তাঁরা তোমাদের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সঙ্গে কথা বলেন, বন্ধু-বান্ধবের স্বভাব সম্পর্কে বিশ্লেষণ করেন, তোমার দৈনন্দিন কাজকে বোঝার চেষ্টা করেন, তুমি মোবাইল ফোন বা টিভি দেখে কতটা সময় কাটাও – তোমার বাবা-মা নিবিড়ভাবে এই সবকিছুই দেখেন। যখন তোমরা ভালো মেজাজে থাকো, যখন তাঁরা তোমাদের একা পান, তখন তাঁরা আদর করে তোমাদের বোঝান যে, তোমার মধ্যে কতটা ক্ষমতা রয়েছে, কতটা সামর্থ্য রয়েছে, তোমার শক্তি ও দুর্বলতা কোথায় – তাঁদের এই কথাগুলি তোমরা খুব ভালোভাবে বোঝার চেষ্টা করবে। আজকাল বাবা-মায়ের কাছেও সময়ের অনেক অভাব। তাঁরা হয়তো ভালোভাবে না বুঝিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করেন, তখন তোমাদেরও রাগ হয়। খেলেও সমালোচনা, না খেলেও সমালোচনা - যাই করো না কেন, তা নিয়ে যদি সমালোচনা হয় – এটাকে আমি সমালোচনা বলে মনে করি না। বাবা-মা’কে এটা বলবে। ঠেস দিয়ে কথা বলাটা ইতিবাচক সমালোচনা নয়। বাবা-মায়ের প্রতি আমার বিনীত অনুরোধ যে, দয়া করে আপনারা ছেলেমেয়েদের ভালোর জন্য হলেও তাঁদের ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করে ঠেস দিয়ে কথা বলবেন না। আপনারা এর মাধ্যমে তাদের জীবনে ইতিবাচক কাজ করার কাজ করার উৎসাহ যোগাতে পারবেন না। বরং, তারা যদি কিছু ভালো করার কথা ভেবেও থাকে, সেই মেজাজ নষ্ট হয়ে যাবে। সে হয়তো মনযোগ দিয়ে পড়ছে, আর আপনি বললেন, দুধ ঠান্ডা হয়ে গেছে, তুই খেলি না কেনো? আর বকাবকি শুরু করে দিলেন। অমুকে মায়ের কথা শুনে কী সুন্দর দুধ খেয়ে নেয়, ইত্যাদি… – এই বকা শুনে তার মেজাজ বিগড়ে গেলো। সারা দিন সে যতটা পড়াশুনা করবে বলে ভেবেছিলো, সেই উৎসাহই হয়তো চলে গেলো! 

সেজন্য দেখবেন, আমরা যখন সংসদে বসি, তর্ক-বিতর্ক করি – আপনারা হয়তো পার্লামেন্ট টিভির মাধ্যমে লক্ষ্য করে থাকবেন যে, কিছু বক্তা খুব ভালো প্রস্তুতি নিয়ে সংসদে বক্তৃতা দিতে আসেন। সংসদের টিভিতে কেউ কেউ খুব ভালো প্রস্তুতি নিয়ে সংসদে বক্তব্য দিতে আসেন। কিন্তু স্বভাবতই আপনার সামনে থাকা বিরোধী দলের লোকেরা আপনার মনস্তত্ত্ব জানেন। তাই কিছু কিছু ক্ষেত্রে কেউ বসে বসে এমন সব মন্তব্য করতে থাকেন এবং তিনি জানেন যে মন্তব্যটি এমন যে তিনি অবশ্যই প্রতিক্রিয়া জানাবেন। আমাদের বক্তা সাংসদও সেই ফাঁদে পা দিয়ে ঠিক তাই করেন, এখনই এ বিষয়ে মন্তব্য করা জরুরি বলে মনে করেন তিনি। সেজন্য তিনি যে বিষয়ে প্রস্তুতি নিয়ে এসেছেন তা ভুলে গিয়ে বিপক্ষের মন্তব্যের উত্তর দিতে থাকেন এবং নিজের সময় শেষ করে ফেলেন। আর যদি মন্তব্যটিকে মজা করে হেসে উড়িয়ে, ছোট করে জবাব দিয়ে তিনি তাঁর বিষয়ে ফিরে যেতে পারেন, তাহলে তিনি নিজের ফোকাস ঠিক রেখে বলা বক্তব্যের সঠিক ফল পান। এবং তাই আমাদের মনোযোগ হারানো উচিত নয়। দ্বিতীয় কথা হলো, দেখুন সমালোচনা করতে হলে অনেক পরিশ্রম করতে হয়, অনেক পড়াশোনা করতে হয়। এটা বিশ্লেষণ করতে হবে। তুলনা করতে হবে। অতীত দেখতে হবে, বর্তমান দেখতে হবে, ভবিষ্যৎ দেখতে হবে, অনেক চেষ্টা করতে হবে, তবেই সমালোচনা সম্ভব। কিন্তু  আজকাল শর্টকাটের সময়। বেশির ভাগ মানুষই অভিযোগ করে, সমালোচনা করে না। অভিযোগ আর সমালোচনার মধ্যে বিশাল ব্যবধান। আমরা যেন অভিযোগকে সমালোচনা হিসাবে বিবেচনা না করি। সমালোচনা এক ধরনের পুষ্টি যা আমাদের সমৃদ্ধ করে। অভিযোগগুলি যদি এমন হয় যে আমাদের অভিযোগকারীদের গুরুত্ব সহকারে নেওয়ার দরকার নেই ,তাহলে সেগুলির পেছনে সময় নষ্ট করার প্রয়োজন নেই। তবে সমালোচনাকে কখনই হালকাভাবে নেওয়া উচিত নয়। সমালোচনাকে সর্বদা মূল্যবান মনে করা উচিত। এটা আমাদের জীবন গড়তে অত্যন্ত সহায়ক ভূমিকা পালন করে। আর আমরা যদি  সৎ হই, তাহলে আমরা যাচাইযোগ্য সততার সঙ্গেই কাজ করে থাকি। সমাজের জন্য কাজ করি। তুমি  যদি একটি নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে কাজ করে থাকো তাহলে অভিযোগের পরোয়া করবে না বন্ধুরা। কিন্তু আমি মনে করি সমালোচনা তোমাদের জন্য একটি মহান শক্তি হয়ে উঠবে। অনেক অনেক ধন্যবাদ।

উপস্থাপক- মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনার ইতিবাচক প্রাণশক্তি কোটি কোটি দেশবাসীকে নতুন পথ দেখিয়েছে। ধন্যবাদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, তালার শহর ভোপালের দীপেশ আহিরওয়ার, ভার্চুয়াল মাধ্যমে আমাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্ন করতে চায়, দীপেশ তোমার প্রশ্ন করো।

দীপেশ- মাননীয় প্রধানমন্ত্রীজি, নমস্কার! আমার নাম দীপেশ আহিরওয়ার। আমি ভোপালের সরকারি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্র। আজকাল ফ্যান্টাসি গেমস এবং ইনস্টাগ্রাম আসক্তি শিশুদের মধ্যে একটি সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমন সময়ে আমরা কীভাবে আমাদের পড়াশোনায় মনোনিবেশ করব? মাননীয় মহোদয়, আপনার কাছে আমার একটি প্রশ্ন আছে যে, আমরা কীভাবে বিভ্রান্ত না হয়ে আমাদের পড়াশোনায় মনযোগ দেব? এ ব্যাপারে আপনার পরামর্শ চাই। ধন্যবাদ।

উপস্থাপক – ধন্যবাদ দীপেশ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীজী, অদিতাব গুপ্তার প্রশ্নটি ইন্ডিয়া টিভি নির্বাচন করেছে। অদিতাব আমাদের সঙ্গে প্রযুক্তির মাধ্যমে যুক্ত হচ্ছে। অদিতাব তোমার প্রশ্ন জিজ্ঞেস করো।

অদিতাব গুপ্তা – আমার নাম অদিতাব গুপ্তা। আমি দশম শ্রেণীতে পড়ি। যেভাবে প্রযুক্তির উন্নতি হচ্ছে, সেভাবেই আমাদের মন আরও বেশি বিক্ষিপ্ত হচ্ছে। পড়াশুনার উপর ফোকাস কমছে। সামাজিক মাধ্যমের দিকে মন ঝুঁকছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মহোদয়, আপনার কাছে জানতে চাই, আমরা কিভাবে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে মন সরিয়ে পড়াশুনায় মন বসাতে পারবো? আপনাদের সময়ে এত বিক্ষিপ্ত হওয়ার উপকরণ ছিল না, যা আমাদের সময়ে আছে। 

উপস্থাপক – ধন্যবাদ অদিতাব। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী স্যর, পরবর্তী প্রশ্নটি আমরা শুনবো কামাক্ষী রাইয়ের কাছ থেকে। প্রশ্নটি এমন একটি বিষয়ে যা নিয়ে অনেক ছাত্রছাত্রী জানতে চায়। এই প্রশ্নটি রিপাবলিক টিভি নির্বাচন করেছে। কামাক্ষী তোমার প্রশ্ন জিজ্ঞেস করো।

কামাক্ষী রাই – মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও সকলকে শুভেচ্ছা। আমি দিল্লির কামাক্ষী রাই দশম শ্রেণীতে পড়ি। আপনার কাছে আমার প্রশ্ন হ’ল – পরীক্ষার সময় সহজে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য ছাত্রছাত্রীরা কোন কোন উপায় অবলম্বন করতে পারে? ধন্যবাদ।

উপস্থাপক – ধন্যবাদ কামাক্ষী। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীজী এবার আমরা একটা প্রশ্ন শুনবো, যেটি জি-টিভি নির্বাচন করেছে। প্রশ্নকর্তা মনন মিত্তল আমাদের সঙ্গে প্রযুক্তির মাধ্যমে যুক্ত হচ্ছে। মনন তোমার প্রশ্ন জিজ্ঞেস করো। 

মনন মিত্তল – নমস্কার প্রধানমন্ত্রীজী। আমি মনন মিত্তল, ডিপিএস – এর বেঙ্গালুরু সাউথ – এর ছাত্র। আপনাকে একটি প্রশ্ন জিজ্ঞেস করবো। অনলাইন পড়াশুনা করার সময় অনলাইন গেমিং ইত্যাদির মাধ্যমে আমরা অনেক বিক্ষিপ্ত হই। এগুলি থেকে কিভাবে বাঁচবো। 

প্রধানমন্ত্রী – তোমরা কেমন ছাত্র, যারা গেজেটের মধ্যেই হারিয়ে যেতে থাকো!

উপস্থাপক – ধন্যবাদ মনন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীজী। দীপেশ, অদিতাব, কামাক্ষী এবং মনন পরীক্ষার সময় নানাভাবে বিক্ষিপ্ত হওয়া থেকে কিভাবে বাঁচবে, সে বিষয়ে আপনার পরামর্শ চাইছে। আপনি পথ দেখান, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীজী।

প্রধানমন্ত্রী – সবার আগে তো এটা ঠিক করতে হবে যে, তুমি স্মার্ট না তোমার গেজেটটি স্মার্ট। কখনও কখনও মনে হয় যে, তোমরা নিজেদের থেকে গেজেটগুলিকে বেশি স্মার্ট বলে মনে করো। আর ভুল সেখান থেকেই শুরু হয়। তোমরা বিশ্বাস করো, ঈশ্বর তোমাদের অনেক শক্তি দিয়েছেন। তোমারই বেশি স্মার্ট। গেজেট তোমাদের থেকে বেশি স্মার্ট হতে পারে না। তোমার মধ্যে যতটা স্মার্টনেস থাকবে, ততটাই যথাযথভাবে গেজেটকে ব্যবহার করতে পারবে। গেজেটগুলি তো একেকটা যন্ত্র, যেগুলি তোমাদের গতিতে নতুন দ্রুততা আনতে পারে। যদি এই ভাবনা নিয়ে চলো, তা হলে আমি মনে করি, আর বিক্ষিপ্ত হবে না। অন্যদিকে, দেশে একটি নতুন চিন্তার বিষয় হয়ে উঠেছে, কেউ একজন আমাকে বলছিলেন যে, ভারতীয়রা গড়ে ৬ ঘন্টা স্ক্রিনের সামনে বসেন। যাঁরা নানা গেজেটের ব্যবসা করেন, তাঁদের জন্য তো এটা অত্যন্ত আনন্দের কথা। যখন মোবাইল ফোনে টক টাইম হয়, তখন এতে আমরা গড়ে ২০ মিনিট করে কথা বলতাম। কিন্তু যখন থেকে স্ক্রিন এল আর তার মধ্যে ‘রিল’ এল, তখন কী হ’ল? একবার শুরু করার পর আমরা কি তার থেকে বেরোতে পারি? তোমরা সবাই তো রিল দেখো। দেখো তো, তা হলে বলতে লজ্জা পাচ্ছো কেন। দেখো, আমাদের সৃষ্টিশীল বয়স আর আমাদের সৃষ্টির সামর্থ্য যদি প্রতিদিন ৬ ঘন্টা করে স্ক্রিনের পেছনে চলে যায়, তা হলে এটা অত্যন্ত চিন্তার বিষয়। এর মানে গেজেট আমাদের দাস করে রাখছে। আমরা গেজেটের দাস হয়ে বাঁচতে পারি না। ঈশ্বর আমাদের একটি স্বতন্ত্র অস্তিত্ব দিয়েছেন, স্বতন্ত্র ব্যক্তিত্ব দিয়েছেন আর সেজন্য আমাদের সচেতন থাকতে হবে যে, আমরা কারও দাস হয়ে পড়ছি না তো! তোমরা হয়তো লক্ষ্য করেছো যে, হাতে মোবাইল ফোন থাকলে সেটা তোমরা খুব সামনে রাখো। আমি যেহেতু খুবই ছোটাছুটি করতে হয়, সেজন্য আমি ঠিক করেছি যে, নির্দিষ্ট সময়ের বাইরে মোবাইল ফোন ব্যবহার করবো না। আমি দেখেছি, অনেক গুরুত্বপূর্ণ মিটিং – এর সময়ও অনেকে হয়তো ভাইব্রেশনে টের পেয়েছেন যে কল এসেছে, আর তারা পকেট থেকে মোবাইল বের করে স্ক্রিন দেখেন। আমি মনে করি, এভাবে আমি গেজেটের দাস হবো না। আমি একজন স্বতন্ত্র ব্যক্তি, আমার স্বতন্ত্র অস্তিত্ব আছে। প্রযুক্তি আমার যতটা কাজে লাগে, আমি তার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখবো। আমি অবশ্যই প্রযুক্তির সাহায্য নেবো। কিন্তু, তা আমার প্রয়োজন অনুসারে। মনে করো, তুমি অনলাইনে ধোসা বানানোর ভালো রেসিপি পড়েছো। ঘন্টাখানেক ধরে শুনেছো যে কোন কোন উপাদান লাগবে, সেগুলিও লিখে নিয়েছো। কিন্তু, এতে কি পেট ভরবে? ভরবে না তো। পেট ভরার জন্য ধোসা রান্না করে খেতে হবে। সেজন্য গেজেট যা দেয়, সেটা পূর্ণতা নয়। পূর্ণতা দেয় আমাদের মনের সামর্থ্য। আগেকার দিনে ছেলেমেয়েরা সহজে নামতা বলতে পারতো। আমি এটাও দেখেছি যে, ভারতীয় ছেলেমেয়েরা বিদেশে গিয়ে নামতার মাধ্যমে দ্রুত অঙ্ক করে ফেলতেন বলে বিদেশিরা অবাক হয়ে যেতেন। কিন্তু, এখন নির্ভুলভাবে নামতা বলতে পারা বাচ্চাদের খুঁজতে হবে। এর মানে গেজেট এসে আমাদের ক্ষমতা কমিয়ে দিচ্ছে। আমাদেরকে ঐতিহ্যগত ক্ষমতা না হারিয়ে ক্ষমতাকে বাড়ানোর জন্য সচেতনভাবে চেষ্টা করতে হবে, না হলে ধীরে ধীরে সেই ক্ষমতাগুলিও হারিয়ে যাবে। আমাদের নিয়মিত চেষ্টা করে দেখতে হবে যে আমরা কী কী পারি! না হলে, আজকাল কৃত্রিম মেধার এত প্ল্যাটফর্ম এসেছে যে, তোমাদের কিছুই করার প্রয়োজন নেই। সেই প্ল্যাটফর্মে গিয়ে চ্যাট করতে শুরু করো আর যা কিছু জানতে চাও – সব বলে দেবে। এখন তো তারা গুগল থেকেও এক পা এগিয়ে গেছে। তোমরা যদি প্রলোভনে পা দাও, তা হলে তোমাদের সমস্ত সৃষ্টিশীলতা বিনষ্ট হবে। সেজন্য আমার অনুরোধ যে, তোমরা পুরনো পদ্ধতিগুলিকে ভুলে যেও না। প্রাচীন ভারতের যে আরোগ্য শাস্ত্র রয়েছে, সেখানে উপবাসের পরম্পরা আছে। প্রত্যেকেরই নির্দিষ্ট সময়ের পর উপবাস করা উচিৎ। আমাদের দেশে কিছু ধর্মীয় রীতি-নীতিতেও উপবাসকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এখন সময় বদলে গেছে। আমি তোমাদের বলবো, সপ্তাহে কয়েকটা দিন বা দিনের মধ্যে কয়েকটি ঘন্টা তোমরা প্রযুক্তি থেকে উপবাস করতে পারো কি? মনে মনে ঠিক করে নাও, আমরা ঐ নির্দিষ্ট কয়েক ঘন্টা প্রযুক্তিকে স্পর্শ করবো না। 

তোমরা হয়তো দেখেছো যে, অনেক পরিবারে ছেলেমেয়েরা দশম কিংবা দ্বাদশ শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হলেই উদ্বেগ শুরু হয়। বাড়ির সকলেই ভাবতে থাকেন যে, এইসব কাজকর্মগুলি এ বছর করা যাবে না। টিভিতে কোনও অনুষ্ঠান দেখা চলবে না, কাপড় দিয়ে টিভি ঢেকে দেওয়া হয়। আমরা যদি এতটাই সচেতন যে, টিভিকে পর্দা দিয়ে ঢাকতে পারি, তা হলে এটা ঠিক করতে পারি না যে সপ্তাহে একদিন ‘ডিজিটাল ফাস্টিং’ হবে। সেদিন বাড়ির কেউ কোনও প্রযুক্তি ব্যবহার করবেন না। আমার এই কথা শুনলে কত যে লাভ হবে, সেটা একবার চেষ্টা করে দেখো। দেখবে, ধীরে ধীরে তোমাদের মনে হবে যে, ঐ ডিজিটাল উপবাসের সময়কে আরও বাড়াই। বাড়ির ছোটরা ডিজিটাল বিশ্বে যেভাবে ডুবে যাচ্ছে, তাঁর মূল কারণ হল তাদের পরিবেশ! একই বাড়িতে মা-বাবা, ভাই-বোন সবাই নিজের নিজের মোবাইল ফোনে হোয়াটস্অ্যাপ ব্যবহার করছেন। মা বাবার সঙ্গে একই ঘরে বসে হোয়াটস্অ্যাপ – এ চ্যাট করছেন। তোমরা এরকম দেখেছো তো? পাশাপাশি বসে আছো, তবু বাড়ির সবাই নিজেদের মোবাইল ফোনে ব্যস্ত আছো, কেউ কারও সঙ্গে কথা বলছো না! আমাকে বলো, তা হলে পরিবার কিভাবে চলবে? আগে তো বাসে-ট্রেনে যাওয়ার সময়ও সহযাত্রীরা পরস্পরের সঙ্গে গল্প করতেন। কিন্তু, এখন কানেক্টিভিটি পেলে সবাই মোবাইল ফোনে ব্যস্ত থাকেন। যেন তিনিই বিশ্বের সবচেয়ে ব্যস্ততম ব্যক্তি। তিনি ফোনে ব্যস্ত না থাকলে বিশ্ব থেমে যাবে! এই রোগটাকে আমাদের চিহ্নিত করতে হবে। আমরা যদি নিজেদের এই রোগটাকে চিহ্নিত করতে পারি, তবেই আমরা এই রোগ থেকে মুক্ত হতে পারবো। আমার অনুরোধ, তোমরা একটা দিক ভেবে নাও। পরিবারে ফিরে গিয়ে আজই সিদ্ধান্ত নাও। বাড়িতে একটা জায়গাকে ‘নো টেকনোলজি জোন’ হিসাবে চিহ্নিত করো। সেখানে প্রযুক্তিকে ঢুকতে দেওয়া হবে না। বাড়ির অন্য কোনও জায়গায় মোবাইল ফোন রেখে ‘নো টেকনোলজি জোন’ – এ পরিবারের সদস্যরা বসে কথাবার্তা বল। বাড়িতে যেমন ঠাকুরঘর থাকে, তেমনই প্রযুক্তির জন্যও একটা আলাদা ঘর বানিয়ে নাও। এর ঘরের বাইরে প্রযুক্তিকে বের করো না। তা হলেই দেখবে, ধীরে ধীরে তোমাদের জীবনে বাঁচার আনন্দ খুঁজে পাবে। আর যত আনন্দ পাবে, ততই তোমরা ধীরে ধীরে প্রযুক্তির দাসত্ব থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে। অনেক অনেক ধন্যবাদ। 

উপস্থাপক – ডিজিটাল ফাস্টিং – এর মন্ত্র দিয়ে এত সহজভাবে সমস্যার সমাধানের উপায় বলে দেওয়ার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী স্যর। 

উপস্থাপক – মাননীয় প্রধানমন্ত্রীজী, হিমালয় পর্বতমালার পাদদেশে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে ভরপুর কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল জম্মু থেকে নিদা আমাদের সঙ্গে প্রযুক্তির মাধ্যমে যুক্ত হচ্ছে। সে আপনাকে একটি প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে চায়। নিদা তোমার প্রশ্ন জিজ্ঞেস করো। 

নিদা – মাননীয় প্রধানমন্ত্রী স্যর, নমস্কার। আমি জম্মুর সুঞ্জওয়ানে অবস্থিত সরকারি মডেল উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্রী নিদা। স্যর, আমার প্রশ্ন হ’ল – আমরা যখন কঠোর পরিশ্রম করেও কাঙ্খিত ফলাফল পাই না, তখন সেই মানসিক চাপকে কিভাবে ইতিবাচক দিকে নিয়ে যেতে পারি? শ্রদ্ধেয় মহোদয়, আপনি নিজে কি কখনও এমন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গেছেন? ধন্যবাদ।

উপস্থাপক – ধন্যবাদ নিদা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীজী, ভগবান শ্রীকৃষ্ণের উপদেশ ভূমি, ক্রীড়াজগতে বিখ্যাত নীরজ চোপরার মতো খেলোয়াড়দের রাজ্য হরিয়ানার পলওয়ল থেকে প্রশান্ত আপনাকে সমতুল প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে চায়। প্রশান্ত তোমার প্রশ্ন করো।

প্রশান্ত – মাননীয় প্রধানমন্ত্রীজী নমস্কার। আমার নাম প্রশান্ত। আমি হরিয়ানার পলওয়ল জেলার হাথিনে অবস্থিত শহীদ নায়ক রাজেন্দ্র সিং রাজকীয় মডেল সংস্কৃতি বরিষ্ঠ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দ্বাদশ শ্রেণীর বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র। আপনাকে আমার প্রশ্ন, চাপ পরীক্ষার ফলকে কিভাবে প্রভাবিত করে? এক্ষেত্রে আমি আপনার পরামর্শ চাই। ধন্যবাদ শ্রদ্ধেয়।

উপস্থাপক – ধন্যবাদ প্রশান্ত। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীজী, নিদা ও প্রশান্তের মতো সারা দেশের কোটি কোটি ছাত্রছাত্রী আপনার কাছ থেকে পরীক্ষার ফল নিয়ে চাপ থেকে মুক্ত হওয়ার পরামর্শ চাইছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীজী।

প্রধানমন্ত্রী – দেখো, পরীক্ষায় যে ফলই আসুক না কেনো, তার জন্য যে চাপ, তার মূল কারণ হ’ল যে, পরীক্ষা দিয়ে বাড়িতে ফিরে আমরা বলেছি যে, আমি দারুণ পরীক্ষা দিয়েছি। এই এই বিষয়ে ৯০ তো পাবোই। একথাগুলি এজন্য বলো যে, তোমাদের মনে হয়, বকা খেলে মাসখানেক পরে খাবো, এখন তো বলে দিই। পরীক্ষার ফল বেরোনোর আগে ছুটিটা ট ভালোভাবে উপভোগ করি। পরিবারের সদস্যরাও ভেবেই নিয়েছেন যে, তুমি সত্যি কথা বলেছো। আর তাঁরা তাঁদের বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-পরিজনদেরও বলতে শুরু করে দেন যে, না না এবার ও খুব পরিশ্রম করেছে। নিশ্চয়ই ভালো ফল করবে। এভাবে ফল বেরোনোর আগে তোমাদের চারপাশে এমন একটা আবহ তৈরি হয় যে, তোমারও মনে হতে শুরু হয় যে, তুমি ফার্স্ট বা সেকেন্ড হতে পারো। এরপর, যখন ফল বের হয়, তখন যদি দেখা যায় যে তুমি ৪০-৪৫ শতাংশ নম্বর পেয়েছো – তখন তো ঝড় উটবেই! সেজন্য সবার আগে এটা ভেবে নিতে হবে যে, আমাদের সত্যের মুখোমুখী হওয়ার অভ্যাস ছাড়া উচিৎ নয়। আমরা কতদিন মিথ্যের আশ্রয় নিয়ে বাঁচতে পারবো! শুরুতেই স্বীকার করা উচিৎ যে, আজকের পরীক্ষাটা খুব একটা ভালো হয়নি। আমি খুব পরিশ্রম করেছি, তবুও ভালো হয়নি। যদি শুরুতেই এই কথাটা তোমরা বলে দাও, আর মনে করো, যতটা ভেবেছো তারচেয়ে ৫ নম্বর বেশি পেয়ে গেলে, তাতে তো বাড়িতে কেউ রাগ করবেন না, বরং বলবেন যে, তুই তো বলেছিলি যে খুব খারাপ হয়েছে, তার থেকে ভালো নম্বরই পেয়েছিস। মনে মনে একটা মাপদন্ড তৈরি হয়ে গেলে প্রত্যাশা তৈরি হয়। আরেকটা চাপের কারণ হ’ল – তোমাদের বন্ধুবান্ধবের কথা। তারা বলতে থাকে যে, এমন ফল হলে এটা করবো, তেমন ফল হলে ওটা করবো। ক্লাসে অনেক মেধাবী ছাত্রছাত্রী থাকে, তাদের সঙ্গে তোমার পার্থক্য হয়তো ঊনিশ-বিশ। দিনরাত তোমরা সেই প্রতিযোগিতার প্রবাহে বাঁচো। সেই প্রতিযোগিতাই চাপের কারণ হয়ে ওঠে। আসলে প্রত্যেক ছাত্রছাত্রীর উচিৎ নিজের জন্য শেখা, নিজের জন্য বাঁচা। সবার থেকে শিখবে, যাতে তোমার নিজের সামর্থ বাড়ে। তবেই দেখবে চাপ থেকে মুক্তির সম্ভাবনা বাড়বে। আর এটা ভাববে যে, জীবনের প্রতি তোমার ভাবনা কী! যেদিন আমরা মনে করি, পরীক্ষার ফল খারাপ হলে জীবনটাই নষ্ট হয়ে যাবে, সেদিন থেকেই চাপ তৈরি হতে শুরু হয়। আসলে জীবনের গাড়ি সবসময় নিয়ম করে কোনও একটি স্টেশনে থামে না। যদি একটি স্টেশনে না নামতে পারো, তা হলে জীবনের গাড়ি তোমাকে অন্য বড় স্টেশনে নিয়ে গিয়ে থামাবে। সেজন্য দুশ্চিন্তা করো না। কোনও পরীক্ষায় কারও জীবন শেষ হয় না। হ্যাঁ, জীবনে একটা লক্ষ্য থাকবে এবং সেই লক্ষ্য পূরণের চেষ্টাও থাকবে। কিন্তু, আমাদের মনে চাপমুক্তির জন্য সংকল্প করতে হবে, জীবনে যাই আসুক না কেনো, তাকে আমি জয় করবো। যদি এটা ভাবতে পারো, তা হলে দেখবে আর কোনও চাপ থাকবে না। সেজন্য আমি মনে করি যে, পরীক্ষার ফল নিয়ে মনে কোনও চাপ নেওয়ার প্রয়োজন নেই। ধন্যবাদ।

উপস্থাপক – মাননীয় প্রধানমন্ত্রীজী, আপনার কথা আমাদের নতুন চেতনায় ঋদ্ধ করেছে। আপনাকে ধন্যবাদ। এখন তেলেঙ্গানার রঙ্গারেড্ডি জেলার আর অক্ষরা সিরি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন করবে, সে আপনার পরামর্শ চায়। অক্ষরা তোমার প্রশ্ন করো। 

অক্ষরা – মাননীয় প্রধানমন্ত্রীজী, নমস্কার। আমি হায়দরাবাদের রঙ্গারেড্ডিতে অবস্থিত জওহর নবোদয় বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্রী অক্ষরা সিরি। শ্রদ্ধেয়, আমার প্রশ্ন হ’ল – অনেক ভাষা শেখার জন্য আমাদের কী করা উচিৎ? এ বিষয়ে আমি আপনার পরামর্শ চাই। ধন্যবাদ শ্রদ্ধেয়।

উপস্থাপক – ধন্যবাদ অক্ষরা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী স্যর, ভারতের হৃদয়নগরী ভোপালের ছাত্রী ঋতিকা ঘোরকেও একটি সমতুল প্রশ্ন নিয়ে এসেছে। সে আমাদের সঙ্গে এই সভাগৃহে রয়েছে। ঋতিকা তুমি তোমার প্রশ্ন জিজ্ঞেস করো।

ঋতিকা – মাননীয় প্রধানমন্ত্রীজী নমস্কার। আমি মধ্যপ্রদেশের রাজধানী ভোপালের শাসকীয় সুভাষ উৎকৃষ্ট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের স্কুল ফর এক্সেলেন্সের দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্রী। আপনার কাছে আমার প্রশ্ন যে, আমরা কিভাবে বেশি ভাষা শিখতে পারি? আর এই শেখাটা কেন প্রয়োজনীয়? ধন্যবাদ।

উপস্থাপক – ধন্যবাদ ঋতিকা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীজী অনুগ্রহ করে অক্ষরা ও ঋতিকাকে অনেক ভাষা শেখার দক্ষতা অর্জন করার পথ দেখান। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীজী।

প্রধানমন্ত্রী – তোমরা খুব ভালো প্রশ্ন করেছো। আমি শুরুতেই বলেছিলাম যে, অন্য কাজ ছেড়ে পড়াশুনার দিকে ফোকাস বাড়াও। কিন্তু, এখন তোমরা যে প্রশ্নটা করলে, সেক্ষেত্রে তোমাদের কিছুটা বহির্মুখী হতে হবে। কারণ, ভারত বৈচিত্র্যময় দেশ। আমরা গর্বের সঙ্গে বলতে পারি যে, আমাদের কয়েক-শো ভাষা আছে, হাজার হাজার কথ্যভাষা আছে। আমরা এই সমৃদ্ধি নিয়ে গর্ব করতে পারি। তোমরা হয়তো লক্ষ্য করেছো যে, কোনও বিদেশি ব্যক্তির সঙ্গে যখন আমাদের দেখা হয় আর তিনি জানতে পারেন যে, আমরা ভারতের মানুষ, সেক্ষেত্রে তিনি যদি ভারত সম্পর্কে সামান্য অবহিত হন, তা হলে তিনি আমাদের নমস্তে বলবেন। তাঁর উচ্চারণ ভিন্ন হতে পারে, কিন্তু বলবেন। যখনই তিনি তা বলেন, তখন আমাদের কান সচেতন হয়ে ওঠে। প্রথম রাউন্ডেই তাঁকে আপন বলে মনে হয়। এ থেকেই বোঝা যায় যে, কম্যুনিকেশনের কত বড় শক্তি রয়েছে! তোমরা এত বড় দেশে থাকো, তোমরা কি কখনও ভেবেছো যে শখ করে যেমন তবলা, বাঁশি, সেতার কিংবা পিয়ানো শেখার কথা ভাবো, তেমনই প্রতিবেশী কোনও রাজ্যের দু-একটি ভাষা শেখার কথাও তো ভাবা যায়! আমরা কোনও ভাষা শিখলে শুধু যে সেই ভাষাভাষী মানুষের সঙ্গে কথা বলার মতো কিছু বাক্য শিখি না, আমরা ভাষা শিক্ষার মাধ্যমে সেই ভাষার অভিজ্ঞতার নির্যাসও গ্রহণ করি। প্রত্যেক ভাষার অভিব্যক্তি কয়েক হাজার বছরের অবিরাম, অখন্ড, অবিচল একটা ধারার ফসল। ভাষার প্রেক্ষিতে সেই জনগোষ্ঠীর অভিজ্ঞতা আর উত্থান-পতনের ধারাও থাকে। সঙ্কটের মুখোমুখী হওয়ার অভিজ্ঞতা যখন সংস্কৃতিকে প্রভাবিত করে, তখন তাও একটি ভাষার অভিব্যক্তিতে মূর্ত হয়। আমরা যখন একটা ভাষা শিখি, তখন আমাদের সামনে সেই ভাষা ও সংস্কৃতির কয়েক হাজার বছর পুরনো ইতিহাসের দরজা খুলে যায়। সেজন্যই আমাদের অন্য ভাষা শেখা উচিৎ। আমরা যদি একটা ২ হাজার বছর পুরনো শিলালিপি বা স্মারক দেখতে পাই, তখন আমাদের মনে গর্ব হয় যে, আজ থেকে ২ হাজার বছর আগেও আমাদের পূর্বজরা এত উন্নত ছিলেন। তোমরা আমাকে বলো, বিশ্বের সবচেয়ে পুরনো ভাষা, শুধু ভারতের নয়, বিশ্বের সবচেয়ে পুরনো ভাষা যে দেশের কাছে রয়েছে, সেজন্য সেদেশের প্রত্যেক দেশবাসীর গর্ব হওয়া উচিৎ কিনা। বুক ফুলিয়ে বিশ্ববাসীকে বলা উচিৎ কিনা যে, বিশ্বের সবচেয়ে পুরনো জীবন্ত ভাষা আমাদের দেশে রয়েছে! তোমরা নিশ্চয়ই জানো যে, আমাদের তামিল ভাষা এখন বিশ্বের সবচেয়ে পুরনো জীবন্ত ভাষা। গোটা বিশ্বে এত বড় সম্পদ আর কারও কাছে নেই। আমি গতবার যখন রাষ্ট্রসঙ্ঘে ভাষণ দিয়েছিলাম, তখন আমি ইচ্ছে করেই কিছু তামিল শব্দ বলেছিলাম, যাতে বিশ্বকে বলতে পারি যে, তামিল বিশ্বের সর্বপ্রাচীন শ্রেষ্ঠ ভাষাগুলির অন্যতম আর আমি ভারতবাসী হিসাবে এর জন্য গর্বিত। আজ উত্তর ভারতের মানুষ খুব আনন্দ করে ধোসা, সাম্বার, বড়া – এইসব দক্ষিণ ভারতীয় খাবার খান। খাওয়ার সময় উত্তর বা দক্ষিণ কিছু টের পাওয়া যায় না। আবার দক্ষিণ ভারতে বেড়াতে গেলে তোমরা দেখতে পাবে যে, সেখানেও উত্তর ভারতের মতো পরোটা, সব্জি কিংবা পুরি সব্জি পাওয়া যায় এবং দক্ষিণ ভারতীয় মানুষরাঅ সেগুলিও বেশ মজা করে চেটেপুটে খান। জীবন যত সহজ ততটা সহজেই নিজের মাতৃভাষার পাশাপাশি দেশের অন্য কোনও ভাষা শেখার চেষ্টা করা উচিৎ। প্রথমে কিছু শব্দ ও তারপর বাক্য শেখো – তা হলে দেখবে আনন্দ পাবে। যখনই সেই ভাষাভাষী কোনও মানুষের সঙ্গে দেখা হবে, তখন তুমি যদি তাঁর ভাষায় ২টি বাক্যও বলতে পারো, দেখবে তিনি তোমাকে কত আপন ভাববেন! সেজন্য ভাষাকে বোঝা হিসাবে নিও না। আমার মনে পড়ে, অনেক বছর আগে আমি যখন সমাজসেবা করতাম, তখন আমেদাবাদের একটি শ্রমিক পরিবারের একটি শিশুর সঙ্গে আমার কথা হয়েছিল। আমি তাঁদের সঙ্গে খেতে বসেছিলাম, তখন দেখি ঐ বাচ্চা মেয়েটি অনেক ভাষায় কথা বলছিল। ঐ কলোনীর শ্রমিক পরিবারে এরকম একটি বহুভাষী মেয়েকে দেখে আমি অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। পরে শুনলাম, তার মা কেরলের মেয়ে আর বাবা বাঙালী। তাদের পাশের বাড়িতে একটি মারাঠী পরিবার রয়েছে, কলোনীতে পরস্পরের বিনিময় ভাষা হ’ল হিন্দি, আর মেয়েটি একটি গুজরাটি মাধ্যম স্কুলে পড়তো। আমি অবাক হয়ে গেলাম। সেই ৭-৮ বছর বয়সী মেয়েটি অবলীলায় বাংলা, মারাঠী, মালয়ালম এবং হিন্দিতে এত দ্রুত কথা বলছিল যে কী বলবো! অর্থাৎ, প্রতিভার এই প্রস্ফুটন চেষ্টা করলে যে কোনও বয়সেই সম্ভব। এ বছর স্বাধীনতা দিবসে লালকেল্লার প্রাকার থেকে আমার ভাষণে আমি এই ঐতিহ্যের কথা ভেবেই ‘পঞ্চ প্রাণ’ সংকল্পের কথা বলেছিলাম। আমাদের মনে নিজেদের ঐতিহ্য নিয়ে গর্ব থাকতে হবে। আমাদের পূর্বজরা আমাদের যে ভাষাগুলি দিয়ে গেছেন, ভারতের সেই প্রত্যেক ভাষার জন্য আমাদের প্রত্যেকের মনে গর্ব থাকতে হবে। অনেক অনেক ধন্যবাদ।

উপস্থাপক – মাননীয় প্রধানমন্ত্রীজী, বহুভাষিক হওয়ার জন্য আপনার এই পরামর্শ সবার কাজে লাগবে। অনেক ধন্যবাদ।

উপস্থাপক – মাননীয় প্রধানমন্ত্রী স্যর। ওডিশার ঐতিহাসিক শহর কটকের একজন শিক্ষিকা সুনয়না ত্রিপাঠী আপনাকে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে প্রশ্ন করতে চান। ম্যাডাম আপনার প্রশ্ন জিজ্ঞেস করুন।

সুনয়না ত্রিপাঠী – নমস্কার, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীজী। আমি ওডিশার কটক শহরের কৃষ্ণমূর্তি ওয়ার্ল্ড স্কুলের শিক্ষিকা সুনয়না ত্রিপাঠী। আমার প্রশ্ন হ’ল – আমরা কিভাবে ক্লাসরুমে ছাত্রছাত্রীদের পড়াশুনার প্রতি আগ্রহ তৈরি করবো আর জীবনের সার্থক মূল্যবোধ ও শ্রেণীকক্ষের অনুশাসন শেখাবো? কিভাবে পড়াকে তাদের কাছে আরও আগ্রহের বিষয় করে তুলবো? ধন্যবাদ।

উপস্থাপক – মাননীয় প্রধানমন্ত্রী স্যর। সুনয়না ত্রিপাঠী ম্যাডাম ছাত্রছাত্রীদের পড়াশুনার প্রতি আগ্রহ বাড়ানোর জন্য আপনার পরামর্শ চাইছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী স্যর।

প্রধানমন্ত্রী – একজন শিক্ষিকা এই প্রশ্ন করছেন! দেখুন, আজকাল দেখা যায় যে, শিক্ষকরা নিজেদের মধ্যেই ডুবে থাকেন। এখন আমি তো অর্ধেক কথা বললাম আর আপনি ধরে নিলেন। যে বিষয়টি আপনার পাঠক্রম অনুযায়ী ২০-৩০ মিনিটের মধ্যে শেখাতে হবে, আপনি সেটা গড়গড় করে বলে দিতে পারেন। আর তখন শ্রেণীকক্ষে কেউ নড়াচড়া করলে আপনি সেটা দেখতে পান। আমি আমার ছোটবেলার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, তখনকার শিক্ষকরা আজকালকার মতো হতেন না! আর আমার শিক্ষকদের নিয়ে সমালোচনার কোনও অধিকার নেই। কিন্তু, কখনও কখনও আমি দেখেছি যে, শিক্ষক বা শিক্ষিকা হয়তো প্রস্তুতি নিয়ে এসেছেন, কিন্তু বলার সময় কিছু ভুলে গেলেন। তিনি চান না যে ছাত্রছাত্রীরা সেটা বুঝতে পারে। তিনি সেজন্য লুকাতে চান। তখন আপনারা কী করেন? তুই ওদিকে কেন তাকাচ্ছিস, তুই এভাবে কেনো বসেছিস, তুই উঠে দাঁড়া – এসব করে ৫-৭ মিনিট নষ্ট করে দেন। ততক্ষণে যদি আপনার বিষয়টা মনে পড়ে, তা হলে গাড়ি আবার চলতে শুরু করে আর এর মধ্যে কেউ যদি হেসে দেয়, তাকে বকতে শুরু করলেন। আজকালও কি এরকম হয়? আমার মনে হয়, হয় না। আমার মনে হয়, আজকালকার শিক্ষক-শিক্ষিকারা ভালো হন। আমি শুনেছি, আজকালকার শিক্ষক-শিক্ষিকারা মোবাইল ফোনে সিলেবাস নিয়ে আসেন। মোবাইল দেখে পড়ান, কখনও আঙুল ভুল জায়গায় পড়ে গেলে খুঁজতে থাকেন। কারণ তিনি হয়তো ভালোভাবে প্রযুক্তি শেখেননি, প্রয়োজনীয় ২-৪টে জিনিস শিখেছেন। ভুল জায়গায় আঙুল পড়ায় সরে গেছে কিংবা ডিলিট হয়ে গেছে। তখন তিনি বিরাট সমস্যায় পড়ে যান। শীতকালেও ঘাম ঝড়ে। তিনি ভাবেন, পড়ুয়ারা তাঁর ত্রুটি বুঝতে পারবেন, তখন তিনি পড়ুয়াদের বকাবকি করতে থাকেন। আমি মনে করি, শিক্ষক-শিক্ষিকাদের উচিৎ ছাত্রছাত্রীদের বন্ধুর মতো করে আপন করে নেওয়া। ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে তো আর জ্ঞান নিয়ে প্রতিযোগিতা চলে না! কেউ যদি ভাবেন, আপনার পরীক্ষা নেওয়ার জন্য ছাত্রছাত্রীরা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করছে, তা হলে ভুল ভাবছেন। তার মনে কোনও জিজ্ঞাসা রয়েছে বলেই সে জিজ্ঞেস করছে। এই জিজ্ঞাসাকে আপনারা গুরুত্ব দিন। কারণ, এই জিজ্ঞাসাই পড়ুয়াদের জীবনে একটি বড় সম্পদ। সেই জিজ্ঞাসাকে শুনুন। যদি উত্তরটা না জানেন, তা হলে বলুন, দেখো বাবা তুমি খুব ভালো প্রশ্ন করেছো, কিন্তু আমি তাড়াহুড়ো করে এই প্রশ্নের জবাব দিলে খুব অন্যায় হবে। আগামীকাল তুমি টিচার্স রুমে চলে এসো, আমি তোমাকে এটা বুঝিয়ে দেবো। এই যে সময়টা নিলেন, এর মধ্যে আপনি বাড়িতে গিয়ে বই, পত্রপত্রিকা পড়ে বা গুগল দেখে উত্তরটা জেনে নিতে পারবেন। যদি ভুল জবাব দেন, তা হলে সেই ভুলটাই ছাত্রছাত্রীদের মাথায় ঢুকে যায়। এরকম করবেন না। আর শৃঙ্খলাবোধ নিয়ে আপনার যা প্রশ্ন, তার জবাবে বলবো, ক্লাসে কখনও শিক্ষকের মনে হতে পারে যে, নিজের প্রভাব সৃষ্টি করতে সবচেয়ে দুর্বল ছাত্রকে প্রশ্ন জিজ্ঞেস করবো। সে যখন পারবে না, তখন বকাবকি করবো। আমি এত পরিশ্রম করে পড়াচ্ছি আর তুমি কিছু বুঝতে পারছো না। কিন্তু আমি শিক্ষক হলে সবচেয়ে মেধাবী ছাত্রকেই বলব যে, এ বিষয়ে তুমি কি বুঝেছ, সেটা তুমি অন্যদেরকে বোঝাও। আমি মনে করি, একটি ছাত্র যে বিষয়টি বুঝেছে, সে যত ভালো করে বোঝাবে, যে ভাষায় বোঝাবে তাতে অন্য ছাত্রছাত্রীরা আরও ভালোভাবে বুঝতে পারবে। আর আপনি যখন মেধাবী ছাত্রটিকে গুরুত্ব দিলেন, ভবিষ্যতে সেই গুরুত্ব পাওয়ার জন্য অন্য ছাত্রছাত্রীদের মধ্যেও স্বাভাবিক প্রতিযোগিতা শুরু হবে। এভাবে অনুশাসনের দিকে তাদের ভাবিত না করে শ্রেণীকক্ষে কিছু না কিছু করাতে থাকুন। কেউ যদি কিছু ভুল করে, শিক্ষকের উচিৎ তাকে আলাদা করে ডেকে কথা বলা, ভালোবাসা দিয়ে বোঝানো, তার যে সাফল্যের দিকগুলি রয়েছে, সেই দিকগুলিকে উৎসাহ যোগানো। তা হলেই দেখবেন, সেই ছাত্রটি আপনার ক্লাসে আর কখনও উশৃঙ্খল হবে না। কিন্তু যদি আপনি তার ইগো-তে আঘাত করেন, সে ভবিষ্যতে আরও দুরন্ত হবে, আরও দুষ্টুমি করবে। অনেক মাস্টার মশাইরা চালাকি করে সবচেয়ে দুষ্টু ছাত্রটিকে ক্লাসের মনিটার বানিয়ে দেন। তখন সে নিজে থেকেই নিজেকে ঠিক করে নেয়, অন্য সবাইকে শুধরানোর জন্য নিজের দুষ্টুমিগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে, তার জীবন বদলে যায়, শ্রেণীকক্ষের আবহও শুধরায়। এরকম অনেক পদ্ধতি হতে পারে। কিন্তু আমি মনে করি, আমাদের কখনই শ্রেণীকক্ষে বেত হাতে নিয়ে অনুশাসন বজায় রাখা উচিৎ নয়। স্নেহ-ভালোবাসার পথটাই বেছে নেওয়া উচিৎ। অনেক অনেক ধন্যবাদ।

উপস্থাপক – মাননীয় প্রধানমন্ত্রীজী, এত সরলভাবে গভীর মূল্যবোধের কথা বলার জন্য আপনাকে কোটি কোটি ধন্যবাদ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীজী, এখন আমি এবারে ‘পরীক্ষা পে চর্চা ২০২৩’ – এর অন্তিম প্রশ্নের জবাব দেওয়ার জন্য আপনাকে অনুরোধ জানাচ্ছি। আমাদের এই সভাঘরে দিল্লির একজন অভিভাবক শ্রীমতী সুমন মিশ্রাজী রয়েছেন। ম্যাডাম, অনুগ্রহ করে আপনার প্রশ্ন জিজ্ঞেস করুন। 

সুমন মিশ্র – সুপ্রভাত মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মহাশয়। আমাদের সমাজে একজন ছাত্রের চরিত্র কেমন হওয়া উচিৎ, সে বিষয়ে আপনার কাছে জানতে চাই। ধন্যবাদ স্যর।

উপস্থাপক – ধন্যবাদ ম্যাডাম, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীজী।

প্রধানমন্ত্রী – ছাত্রদের সমাজে কেমন আচরণ হওয়া উচিত তা জানতে চাইছেন। আমি মনে করি এটাকে একটু ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে ভাবা উচিত। ছাত্রছাত্রীদের আচরণের বিষয়টি শুধুমাত্র সমাজের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না। তাদের বিকাশের জন্য একটি সার্বিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। আমরা কোন সমাজের কথা বলছি, আমাদের নিজেদের বৃত্ত কোনটা, আমরা কাদের মধ্যে ওঠ-বস করি, ভালো-মন্দ কাজে সময় কাটাই, টেলিফোনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় কাটাই, সেই সীমিত বৃত্তের কথা যদি বলি, তাহলে আমরা ছাত্রছাত্রীদেরকেও সীমাবদ্ধ করে রাখবো। আপনি বলবেন, এখানে জুতা পরে এসো, এখানে জুতা খুলে ফেলো, এখানে এভাবে আচরন করো, এখানে ওভাবে করো। আপনি আপনার সন্তানকে এগুলি বলতেই পারেন, কিন্তু বাস্তবতা হল যে তাদের ব্যক্তিত্ব বিকাশের স্বার্থে তাদেরকে ঘরের গণ্ডির মধ্যে আবদ্ধ করে রাখা উচিত নয়, যতটা সম্ভব সমাজে ছড়িয়ে দিতে হবে। আমি একসময় বলেছিলাম, হয়তো পরীক্ষার আলোচনার সময় বলেছিলাম, আর কোথায় বলেছিলাম মনে নেই। আমি বলেছিলাম যে দশম, দ্বাদশ পরীক্ষার কিছু পরে, আপনার ছেলেকে বলুন যে এই টাকা নাও, পাঁচদিন দিন অমুক জায়গা ঘুরে এসো! এভাবে,  ছাত্রছাত্রীদের ছোট একটি গণ্ডীর মধ্যে আবদ্ধ না রেখে বৃহত্তর সমাজের সঙ্গে মেলামেশার সুযোগ দিতে হবে। দ্বাদশ শ্রেণীর পরীক্ষার পর তাঁদেরকে দেশের অন্য রাজ্যে যেতে উৎসাহিত করুন। সন্তানকে বলুন, সেখান থেকে ঘুরে আসার পর সে যে ছবিগুলি সে তুলে আনবে, তার বর্ণনা লিখতে হবে। তা হলে দেখবেন যে, সে সত্যি সত্যি অনেক কিছু শিখে আসবে। জীবনকে স্বাধীনভাবে জেনে তার নিজের প্রতি বিশ্বাস বাড়বে। তা হলে সে আর আপনাকে বিরক্ত করবে না। আপনার কাছে টাকা কম থাকলে, তাকে বিনা রিজার্ভেশনে ট্রেনে পাঠান, সঙ্গে না হয় খাবার বানিয়ে দেবেন। আর বলে দেবেন, যা যা দেখবে, ফিরে এসে লিখবে। সে যেন সমাজের সমস্ত শ্রেণীর মানুষের সঙ্গে মেশে। অন্য সময় তার ক্লাসের বন্ধুদের বাড়িতে গিয়ে দেখা করার ক্ষেত্রেও উৎসাহ যোগাবেন। কোনও বন্ধু হয়তো ভালো কবাডি খেলে আবার কোনও বন্ধু হয়তো বিজ্ঞান ভালোবাসে। আপনার সন্তান যেন দু’জনের সঙ্গে দেখা করতে যায়। আর যখন যাবে, তখন তুমি এটা করবে, ওটা করবে না – এ ধরনের বাঁধনে বাঁধবেন না। নির্দেশ দিয়ে কি আকাশে ঘুড়ি ওড়ানো যায়। ঘুড়িকে ইউনিফর্ম পরানোর পেছনে কোনও যুক্তি রয়েছে কি? আমাদের ছেলেমেয়েদের মনকে প্রসারিত হতে দিতে হবে। তাদের সামনে নতুন নতুন দরজা খুলে দিতে হবে। আগেকার দিনে আমরা ছুটির সময় মামার বাড়ি যেতাম বা কোথাও বেড়াতে যেতাম। এর এটা নিজস্ব আনন্দ ছিল। ছেলেমেয়েরা নতুন নতুন সংস্কারে ঋদ্ধ হ’ত, তাদের জীবনের রচনার নতুন মাত্রা পেত। আজ আপনারা ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন বলে ছেলেমেয়েদের বন্দী করে রাখবেন না। বরং, এটা লক্ষ্য রাখবেন যে, আপনার সন্তান বন্ধ ঘরে উদাসীন হয়ে থাকছে না তো। আগে যে খেতে বসে সবসময় হাসিমজা করতো, সে এখন গম্ভীর হয়ে ওঠেনি তো। সে কোনও সমস্যার সম্মুখীন হয়নি তো! বাবা-মাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। ঈশ্বর তার একটি সম্পদকে আপনার হাতে তুলে দিয়েছে। সেই সম্পদকে যথাযথভাবে বড় করে তোলা ও সংরক্ষণ করে তোলা আপনার দায়িত্ব। এই ভাব নিয়ে সন্তানের প্রতি লক্ষ্য রাখলে সুফল পাবেন। একথা ভাববেন না যে, আমার ছেলেকে যা বলবো,  ওকে শুধু তাই করতে হবে, আমি এমন ছিলাম, তাকেও এরকম হতে হবে। খোলা মনে ভাবুন। আর সমাজের সঙ্গে মেশার জন্য তাকে ছেড়ে দিন। সে যেন সমাজ জীবন থেকে ভিন্ন ভিন্ন বিষয় নিজের জন্য খুঁজে নিয়ে বেঁচে থাকার প্রেরণা পায়। মনে করুন, আপনাদের বাড়িতে কোনও সাঁপুড়ে খেলা দেখাতে এলো, তখন কি আপনি ছেলেকে বাধা দেবেন। আমার মনে হয়, আপনার ছেলেকে সেই সাঁপুড়ের কাছে যেতে বাধা দেওয়া উচিৎ নয়। এমনকি, সে যদি সাঁপুড়েকে গিয়ে জিজ্ঞেস করে, সাপটাকে কোথা থেকে এনেছেন বা আপনি কিভাবে এই পেশায় এসেছেন, তখন সাঁপুড়ে যে উত্তর দেবেন, তা থেকে আপনার সন্তান অনেক কিছু শিখবে। তার মনে যে সংবেদনা জাগবে, সেটা তার ব্যক্তিত্বের বিকাশে কাজে লাগবে। সেজন্য আপনাদের সন্তানদের ভাবনার বিস্তারকে উৎসাহ যোগান,  তাকে উন্মুক্ত আকাশ দিন, সবার সঙ্গে মেশার সুযোগ দিন – তা হলেই সে একদিন সমাজের শক্তি ও সম্পদ হয়ে উঠবে। অনেক অনেক ধন্যবাদ।

উপস্থাপক – ধন্যবাদ প্রধানমন্ত্রী স্যর। অনেক পরীক্ষার্থী যোদ্ধাদের জন্য আপনার অনুপ্রেরণাদায়ক অন্তর্দৃষ্টি তাদের সামনে উদ্বেগহীনভাবে পরীক্ষা দেওয়ার আবহ তৈরি করেছে। পরীক্ষাকে আনন্দ ও উদযাপনে পরিণত করার পথ খুলে দিয়েছে। এই উদযাপনই আমাদের আজকের অনুষ্ঠানের মূল অনুপ্রেরণা এবং উৎসাহের সরগম তৈরি করেছে। পাশাপাশি, এই সুখস্মৃতির একটি সুর আমাদের হৃদয়ে চিরকাল অনুরণিত হতে থাকবে। আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীজীকে তাঁর উপস্থিতির মাধ্যমে এই সভাঘরকে আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য ও তাঁর উজ্জ্বল চেতনায় আমাদের উদ্বুদ্ধ করার জন্য উপস্থিত সকলের পক্ষ থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। 

প্রধানমন্ত্রীজী, আপনার এই মূল্যবান উপদেশগুলি দেশের কোটি কোটি ছাত্রছাত্রীকে  তাদের অস্থিরতা ও উদ্বেগকে হার মানাতে উৎসাহ ও উদ্দীপনা নিয়ে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে। ধন্যবাদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীজী, কোটি কোটি ধন্যবাদ। 

প্রধানমন্ত্রী - উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ। বাবা-মা, শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং অভিভাবক-অভিভাবিকরা চাপ মুক্ত পরিবেশ গড়ে তুলুন। ছাত্রছাত্রীর জন্য জীবনকে সহজ করে তুলুন, যাতে পরীক্ষার চাপ কমিয়ে তা উৎসবে পরিণত করা যায়। ফলস্বরূপ, পরীক্ষা একটি উৎসবে পরিণত হবে, যেখানে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে প্রচুর উৎসাহ থাকবে এবং এই উৎসাহ তাদের আগামী দিনে আরও ভালো ছাত্র হিসাবে গড়ে তুলতে সাহায্য করবে। এই উৎসাহ ও উদ্দীপনা নিয়ে আপনারা এগিয়ে চলুন – এটাই আমার আপনাদের প্রতি শুভ কামনা। অনেক অনেক ধন্যবাদ। 

Explore More
৭৮ তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে নয়াদিল্লির লালকেল্লার প্রাকার থেকে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ ১৫ই আগস্ট , ২০২৪

জনপ্রিয় ভাষণ

৭৮ তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে নয়াদিল্লির লালকেল্লার প্রাকার থেকে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ ১৫ই আগস্ট , ২০২৪
Modi blends diplomacy with India’s cultural showcase

Media Coverage

Modi blends diplomacy with India’s cultural showcase
NM on the go

Nm on the go

Always be the first to hear from the PM. Get the App Now!
...
Text Of Prime Minister Narendra Modi addresses BJP Karyakartas at Party Headquarters
November 23, 2024
Today, Maharashtra has witnessed the triumph of development, good governance, and genuine social justice: PM Modi to BJP Karyakartas
The people of Maharashtra have given the BJP many more seats than the Congress and its allies combined, says PM Modi at BJP HQ
Maharashtra has broken all records. It is the biggest win for any party or pre-poll alliance in the last 50 years, says PM Modi
‘Ek Hain Toh Safe Hain’ has become the 'maha-mantra' of the country, says PM Modi while addressing the BJP Karyakartas at party HQ
Maharashtra has become sixth state in the country that has given mandate to BJP for third consecutive time: PM Modi

जो लोग महाराष्ट्र से परिचित होंगे, उन्हें पता होगा, तो वहां पर जब जय भवानी कहते हैं तो जय शिवाजी का बुलंद नारा लगता है।

जय भवानी...जय भवानी...जय भवानी...जय भवानी...

आज हम यहां पर एक और ऐतिहासिक महाविजय का उत्सव मनाने के लिए इकट्ठा हुए हैं। आज महाराष्ट्र में विकासवाद की जीत हुई है। महाराष्ट्र में सुशासन की जीत हुई है। महाराष्ट्र में सच्चे सामाजिक न्याय की विजय हुई है। और साथियों, आज महाराष्ट्र में झूठ, छल, फरेब बुरी तरह हारा है, विभाजनकारी ताकतें हारी हैं। आज नेगेटिव पॉलिटिक्स की हार हुई है। आज परिवारवाद की हार हुई है। आज महाराष्ट्र ने विकसित भारत के संकल्प को और मज़बूत किया है। मैं देशभर के भाजपा के, NDA के सभी कार्यकर्ताओं को बहुत-बहुत बधाई देता हूं, उन सबका अभिनंदन करता हूं। मैं श्री एकनाथ शिंदे जी, मेरे परम मित्र देवेंद्र फडणवीस जी, भाई अजित पवार जी, उन सबकी की भी भूरि-भूरि प्रशंसा करता हूं।

साथियों,

आज देश के अनेक राज्यों में उपचुनाव के भी नतीजे आए हैं। नड्डा जी ने विस्तार से बताया है, इसलिए मैं विस्तार में नहीं जा रहा हूं। लोकसभा की भी हमारी एक सीट और बढ़ गई है। यूपी, उत्तराखंड और राजस्थान ने भाजपा को जमकर समर्थन दिया है। असम के लोगों ने भाजपा पर फिर एक बार भरोसा जताया है। मध्य प्रदेश में भी हमें सफलता मिली है। बिहार में भी एनडीए का समर्थन बढ़ा है। ये दिखाता है कि देश अब सिर्फ और सिर्फ विकास चाहता है। मैं महाराष्ट्र के मतदाताओं का, हमारे युवाओं का, विशेषकर माताओं-बहनों का, किसान भाई-बहनों का, देश की जनता का आदरपूर्वक नमन करता हूं।

साथियों,

मैं झारखंड की जनता को भी नमन करता हूं। झारखंड के तेज विकास के लिए हम अब और ज्यादा मेहनत से काम करेंगे। और इसमें भाजपा का एक-एक कार्यकर्ता अपना हर प्रयास करेगा।

साथियों,

छत्रपति शिवाजी महाराजांच्या // महाराष्ट्राने // आज दाखवून दिले// तुष्टीकरणाचा सामना // कसा करायच। छत्रपति शिवाजी महाराज, शाहुजी महाराज, महात्मा फुले-सावित्रीबाई फुले, बाबासाहेब आंबेडकर, वीर सावरकर, बाला साहेब ठाकरे, ऐसे महान व्यक्तित्वों की धरती ने इस बार पुराने सारे रिकॉर्ड तोड़ दिए। और साथियों, बीते 50 साल में किसी भी पार्टी या किसी प्री-पोल अलायंस के लिए ये सबसे बड़ी जीत है। और एक महत्वपूर्ण बात मैं बताता हूं। ये लगातार तीसरी बार है, जब भाजपा के नेतृत्व में किसी गठबंधन को लगातार महाराष्ट्र ने आशीर्वाद दिए हैं, विजयी बनाया है। और ये लगातार तीसरी बार है, जब भाजपा महाराष्ट्र में सबसे बड़ी पार्टी बनकर उभरी है।

साथियों,

ये निश्चित रूप से ऐतिहासिक है। ये भाजपा के गवर्नंस मॉडल पर मुहर है। अकेले भाजपा को ही, कांग्रेस और उसके सभी सहयोगियों से कहीं अधिक सीटें महाराष्ट्र के लोगों ने दी हैं। ये दिखाता है कि जब सुशासन की बात आती है, तो देश सिर्फ और सिर्फ भाजपा पर और NDA पर ही भरोसा करता है। साथियों, एक और बात है जो आपको और खुश कर देगी। महाराष्ट्र देश का छठा राज्य है, जिसने भाजपा को लगातार 3 बार जनादेश दिया है। इससे पहले गोवा, गुजरात, छत्तीसगढ़, हरियाणा, और मध्य प्रदेश में हम लगातार तीन बार जीत चुके हैं। बिहार में भी NDA को 3 बार से ज्यादा बार लगातार जनादेश मिला है। और 60 साल के बाद आपने मुझे तीसरी बार मौका दिया, ये तो है ही। ये जनता का हमारे सुशासन के मॉडल पर विश्वास है औऱ इस विश्वास को बनाए रखने में हम कोई कोर कसर बाकी नहीं रखेंगे।

साथियों,

मैं आज महाराष्ट्र की जनता-जनार्दन का विशेष अभिनंदन करना चाहता हूं। लगातार तीसरी बार स्थिरता को चुनना ये महाराष्ट्र के लोगों की सूझबूझ को दिखाता है। हां, बीच में जैसा अभी नड्डा जी ने विस्तार से कहा था, कुछ लोगों ने धोखा करके अस्थिरता पैदा करने की कोशिश की, लेकिन महाराष्ट्र ने उनको नकार दिया है। और उस पाप की सजा मौका मिलते ही दे दी है। महाराष्ट्र इस देश के लिए एक तरह से बहुत महत्वपूर्ण ग्रोथ इंजन है, इसलिए महाराष्ट्र के लोगों ने जो जनादेश दिया है, वो विकसित भारत के लिए बहुत बड़ा आधार बनेगा, वो विकसित भारत के संकल्प की सिद्धि का आधार बनेगा।



साथियों,

हरियाणा के बाद महाराष्ट्र के चुनाव का भी सबसे बड़ा संदेश है- एकजुटता। एक हैं, तो सेफ हैं- ये आज देश का महामंत्र बन चुका है। कांग्रेस और उसके ecosystem ने सोचा था कि संविधान के नाम पर झूठ बोलकर, आरक्षण के नाम पर झूठ बोलकर, SC/ST/OBC को छोटे-छोटे समूहों में बांट देंगे। वो सोच रहे थे बिखर जाएंगे। कांग्रेस और उसके साथियों की इस साजिश को महाराष्ट्र ने सिरे से खारिज कर दिया है। महाराष्ट्र ने डंके की चोट पर कहा है- एक हैं, तो सेफ हैं। एक हैं तो सेफ हैं के भाव ने जाति, धर्म, भाषा और क्षेत्र के नाम पर लड़ाने वालों को सबक सिखाया है, सजा की है। आदिवासी भाई-बहनों ने भी भाजपा-NDA को वोट दिया, ओबीसी भाई-बहनों ने भी भाजपा-NDA को वोट दिया, मेरे दलित भाई-बहनों ने भी भाजपा-NDA को वोट दिया, समाज के हर वर्ग ने भाजपा-NDA को वोट दिया। ये कांग्रेस और इंडी-गठबंधन के उस पूरे इकोसिस्टम की सोच पर करारा प्रहार है, जो समाज को बांटने का एजेंडा चला रहे थे।

साथियों,

महाराष्ट्र ने NDA को इसलिए भी प्रचंड जनादेश दिया है, क्योंकि हम विकास और विरासत, दोनों को साथ लेकर चलते हैं। महाराष्ट्र की धरती पर इतनी विभूतियां जन्मी हैं। बीजेपी और मेरे लिए छत्रपति शिवाजी महाराज आराध्य पुरुष हैं। धर्मवीर छत्रपति संभाजी महाराज हमारी प्रेरणा हैं। हमने हमेशा बाबा साहब आंबेडकर, महात्मा फुले-सावित्री बाई फुले, इनके सामाजिक न्याय के विचार को माना है। यही हमारे आचार में है, यही हमारे व्यवहार में है।

साथियों,

लोगों ने मराठी भाषा के प्रति भी हमारा प्रेम देखा है। कांग्रेस को वर्षों तक मराठी भाषा की सेवा का मौका मिला, लेकिन इन लोगों ने इसके लिए कुछ नहीं किया। हमारी सरकार ने मराठी को Classical Language का दर्जा दिया। मातृ भाषा का सम्मान, संस्कृतियों का सम्मान और इतिहास का सम्मान हमारे संस्कार में है, हमारे स्वभाव में है। और मैं तो हमेशा कहता हूं, मातृभाषा का सम्मान मतलब अपनी मां का सम्मान। और इसीलिए मैंने विकसित भारत के निर्माण के लिए लालकिले की प्राचीर से पंच प्राणों की बात की। हमने इसमें विरासत पर गर्व को भी शामिल किया। जब भारत विकास भी और विरासत भी का संकल्प लेता है, तो पूरी दुनिया इसे देखती है। आज विश्व हमारी संस्कृति का सम्मान करता है, क्योंकि हम इसका सम्मान करते हैं। अब अगले पांच साल में महाराष्ट्र विकास भी विरासत भी के इसी मंत्र के साथ तेज गति से आगे बढ़ेगा।

साथियों,

इंडी वाले देश के बदले मिजाज को नहीं समझ पा रहे हैं। ये लोग सच्चाई को स्वीकार करना ही नहीं चाहते। ये लोग आज भी भारत के सामान्य वोटर के विवेक को कम करके आंकते हैं। देश का वोटर, देश का मतदाता अस्थिरता नहीं चाहता। देश का वोटर, नेशन फर्स्ट की भावना के साथ है। जो कुर्सी फर्स्ट का सपना देखते हैं, उन्हें देश का वोटर पसंद नहीं करता।

साथियों,

देश के हर राज्य का वोटर, दूसरे राज्यों की सरकारों का भी आकलन करता है। वो देखता है कि जो एक राज्य में बड़े-बड़े Promise करते हैं, उनकी Performance दूसरे राज्य में कैसी है। महाराष्ट्र की जनता ने भी देखा कि कर्नाटक, तेलंगाना और हिमाचल में कांग्रेस सरकारें कैसे जनता से विश्वासघात कर रही हैं। ये आपको पंजाब में भी देखने को मिलेगा। जो वादे महाराष्ट्र में किए गए, उनका हाल दूसरे राज्यों में क्या है? इसलिए कांग्रेस के पाखंड को जनता ने खारिज कर दिया है। कांग्रेस ने जनता को गुमराह करने के लिए दूसरे राज्यों के अपने मुख्यमंत्री तक मैदान में उतारे। तब भी इनकी चाल सफल नहीं हो पाई। इनके ना तो झूठे वादे चले और ना ही खतरनाक एजेंडा चला।

साथियों,

आज महाराष्ट्र के जनादेश का एक और संदेश है, पूरे देश में सिर्फ और सिर्फ एक ही संविधान चलेगा। वो संविधान है, बाबासाहेब आंबेडकर का संविधान, भारत का संविधान। जो भी सामने या पर्दे के पीछे, देश में दो संविधान की बात करेगा, उसको देश पूरी तरह से नकार देगा। कांग्रेस और उसके साथियों ने जम्मू-कश्मीर में फिर से आर्टिकल-370 की दीवार बनाने का प्रयास किया। वो संविधान का भी अपमान है। महाराष्ट्र ने उनको साफ-साफ बता दिया कि ये नहीं चलेगा। अब दुनिया की कोई भी ताकत, और मैं कांग्रेस वालों को कहता हूं, कान खोलकर सुन लो, उनके साथियों को भी कहता हूं, अब दुनिया की कोई भी ताकत 370 को वापस नहीं ला सकती।



साथियों,

महाराष्ट्र के इस चुनाव ने इंडी वालों का, ये अघाड़ी वालों का दोमुंहा चेहरा भी देश के सामने खोलकर रख दिया है। हम सब जानते हैं, बाला साहेब ठाकरे का इस देश के लिए, समाज के लिए बहुत बड़ा योगदान रहा है। कांग्रेस ने सत्ता के लालच में उनकी पार्टी के एक धड़े को साथ में तो ले लिया, तस्वीरें भी निकाल दी, लेकिन कांग्रेस, कांग्रेस का कोई नेता बाला साहेब ठाकरे की नीतियों की कभी प्रशंसा नहीं कर सकती। इसलिए मैंने अघाड़ी में कांग्रेस के साथी दलों को चुनौती दी थी, कि वो कांग्रेस से बाला साहेब की नीतियों की तारीफ में कुछ शब्द बुलवाकर दिखाएं। आज तक वो ये नहीं कर पाए हैं। मैंने दूसरी चुनौती वीर सावरकर जी को लेकर दी थी। कांग्रेस के नेतृत्व ने लगातार पूरे देश में वीर सावरकर का अपमान किया है, उन्हें गालियां दीं हैं। महाराष्ट्र में वोट पाने के लिए इन लोगों ने टेंपरेरी वीर सावरकर जी को जरा टेंपरेरी गाली देना उन्होंने बंद किया है। लेकिन वीर सावरकर के तप-त्याग के लिए इनके मुंह से एक बार भी सत्य नहीं निकला। यही इनका दोमुंहापन है। ये दिखाता है कि उनकी बातों में कोई दम नहीं है, उनका मकसद सिर्फ और सिर्फ वीर सावरकर को बदनाम करना है।

साथियों,

भारत की राजनीति में अब कांग्रेस पार्टी, परजीवी बनकर रह गई है। कांग्रेस पार्टी के लिए अब अपने दम पर सरकार बनाना लगातार मुश्किल हो रहा है। हाल ही के चुनावों में जैसे आंध्र प्रदेश, अरुणाचल प्रदेश, सिक्किम, हरियाणा और आज महाराष्ट्र में उनका सूपड़ा साफ हो गया। कांग्रेस की घिसी-पिटी, विभाजनकारी राजनीति फेल हो रही है, लेकिन फिर भी कांग्रेस का अहंकार देखिए, उसका अहंकार सातवें आसमान पर है। सच्चाई ये है कि कांग्रेस अब एक परजीवी पार्टी बन चुकी है। कांग्रेस सिर्फ अपनी ही नहीं, बल्कि अपने साथियों की नाव को भी डुबो देती है। आज महाराष्ट्र में भी हमने यही देखा है। महाराष्ट्र में कांग्रेस और उसके गठबंधन ने महाराष्ट्र की हर 5 में से 4 सीट हार गई। अघाड़ी के हर घटक का स्ट्राइक रेट 20 परसेंट से नीचे है। ये दिखाता है कि कांग्रेस खुद भी डूबती है और दूसरों को भी डुबोती है। महाराष्ट्र में सबसे ज्यादा सीटों पर कांग्रेस चुनाव लड़ी, उतनी ही बड़ी हार इनके सहयोगियों को भी मिली। वो तो अच्छा है, यूपी जैसे राज्यों में कांग्रेस के सहयोगियों ने उससे जान छुड़ा ली, वर्ना वहां भी कांग्रेस के सहयोगियों को लेने के देने पड़ जाते।

साथियों,

सत्ता-भूख में कांग्रेस के परिवार ने, संविधान की पंथ-निरपेक्षता की भावना को चूर-चूर कर दिया है। हमारे संविधान निर्माताओं ने उस समय 47 में, विभाजन के बीच भी, हिंदू संस्कार और परंपरा को जीते हुए पंथनिरपेक्षता की राह को चुना था। तब देश के महापुरुषों ने संविधान सभा में जो डिबेट्स की थी, उसमें भी इसके बारे में बहुत विस्तार से चर्चा हुई थी। लेकिन कांग्रेस के इस परिवार ने झूठे सेक्यूलरिज्म के नाम पर उस महान परंपरा को तबाह करके रख दिया। कांग्रेस ने तुष्टिकरण का जो बीज बोया, वो संविधान निर्माताओं के साथ बहुत बड़ा विश्वासघात है। और ये विश्वासघात मैं बहुत जिम्मेवारी के साथ बोल रहा हूं। संविधान के साथ इस परिवार का विश्वासघात है। दशकों तक कांग्रेस ने देश में यही खेल खेला। कांग्रेस ने तुष्टिकरण के लिए कानून बनाए, सुप्रीम कोर्ट के आदेश तक की परवाह नहीं की। इसका एक उदाहरण वक्फ बोर्ड है। दिल्ली के लोग तो चौंक जाएंगे, हालात ये थी कि 2014 में इन लोगों ने सरकार से जाते-जाते, दिल्ली के आसपास की अनेक संपत्तियां वक्फ बोर्ड को सौंप दी थीं। बाबा साहेब आंबेडकर जी ने जो संविधान हमें दिया है न, जिस संविधान की रक्षा के लिए हम प्रतिबद्ध हैं। संविधान में वक्फ कानून का कोई स्थान ही नहीं है। लेकिन फिर भी कांग्रेस ने तुष्टिकरण के लिए वक्फ बोर्ड जैसी व्यवस्था पैदा कर दी। ये इसलिए किया गया ताकि कांग्रेस के परिवार का वोटबैंक बढ़ सके। सच्ची पंथ-निरपेक्षता को कांग्रेस ने एक तरह से मृत्युदंड देने की कोशिश की है।

साथियों,

कांग्रेस के शाही परिवार की सत्ता-भूख इतनी विकृति हो गई है, कि उन्होंने सामाजिक न्याय की भावना को भी चूर-चूर कर दिया है। एक समय था जब के कांग्रेस नेता, इंदिरा जी समेत, खुद जात-पात के खिलाफ बोलते थे। पब्लिकली लोगों को समझाते थे। एडवरटाइजमेंट छापते थे। लेकिन आज यही कांग्रेस और कांग्रेस का ये परिवार खुद की सत्ता-भूख को शांत करने के लिए जातिवाद का जहर फैला रहा है। इन लोगों ने सामाजिक न्याय का गला काट दिया है।

साथियों,

एक परिवार की सत्ता-भूख इतने चरम पर है, कि उन्होंने खुद की पार्टी को ही खा लिया है। देश के अलग-अलग भागों में कई पुराने जमाने के कांग्रेस कार्यकर्ता है, पुरानी पीढ़ी के लोग हैं, जो अपने ज़माने की कांग्रेस को ढूंढ रहे हैं। लेकिन आज की कांग्रेस के विचार से, व्यवहार से, आदत से उनको ये साफ पता चल रहा है, कि ये वो कांग्रेस नहीं है। इसलिए कांग्रेस में, आंतरिक रूप से असंतोष बहुत ज्यादा बढ़ रहा है। उनकी आरती उतारने वाले भले आज इन खबरों को दबाकर रखे, लेकिन भीतर आग बहुत बड़ी है, असंतोष की ज्वाला भड़क चुकी है। सिर्फ एक परिवार के ही लोगों को कांग्रेस चलाने का हक है। सिर्फ वही परिवार काबिल है दूसरे नाकाबिल हैं। परिवार की इस सोच ने, इस जिद ने कांग्रेस में एक ऐसा माहौल बना दिया कि किसी भी समर्पित कांग्रेस कार्यकर्ता के लिए वहां काम करना मुश्किल हो गया है। आप सोचिए, कांग्रेस पार्टी की प्राथमिकता आज सिर्फ और सिर्फ परिवार है। देश की जनता उनकी प्राथमिकता नहीं है। और जिस पार्टी की प्राथमिकता जनता ना हो, वो लोकतंत्र के लिए बहुत ही नुकसानदायी होती है।

साथियों,

कांग्रेस का परिवार, सत्ता के बिना जी ही नहीं सकता। चुनाव जीतने के लिए ये लोग कुछ भी कर सकते हैं। दक्षिण में जाकर उत्तर को गाली देना, उत्तर में जाकर दक्षिण को गाली देना, विदेश में जाकर देश को गाली देना। और अहंकार इतना कि ना किसी का मान, ना किसी की मर्यादा और खुलेआम झूठ बोलते रहना, हर दिन एक नया झूठ बोलते रहना, यही कांग्रेस और उसके परिवार की सच्चाई बन गई है। आज कांग्रेस का अर्बन नक्सलवाद, भारत के सामने एक नई चुनौती बनकर खड़ा हो गया है। इन अर्बन नक्सलियों का रिमोट कंट्रोल, देश के बाहर है। और इसलिए सभी को इस अर्बन नक्सलवाद से बहुत सावधान रहना है। आज देश के युवाओं को, हर प्रोफेशनल को कांग्रेस की हकीकत को समझना बहुत ज़रूरी है।

साथियों,

जब मैं पिछली बार भाजपा मुख्यालय आया था, तो मैंने हरियाणा से मिले आशीर्वाद पर आपसे बात की थी। तब हमें गुरूग्राम जैसे शहरी क्षेत्र के लोगों ने भी अपना आशीर्वाद दिया था। अब आज मुंबई ने, पुणे ने, नागपुर ने, महाराष्ट्र के ऐसे बड़े शहरों ने अपनी स्पष्ट राय रखी है। शहरी क्षेत्रों के गरीब हों, शहरी क्षेत्रों के मिडिल क्लास हो, हर किसी ने भाजपा का समर्थन किया है और एक स्पष्ट संदेश दिया है। यह संदेश है आधुनिक भारत का, विश्वस्तरीय शहरों का, हमारे महानगरों ने विकास को चुना है, आधुनिक Infrastructure को चुना है। और सबसे बड़ी बात, उन्होंने विकास में रोडे अटकाने वाली राजनीति को नकार दिया है। आज बीजेपी हमारे शहरों में ग्लोबल स्टैंडर्ड के इंफ्रास्ट्रक्चर बनाने के लिए लगातार काम कर रही है। चाहे मेट्रो नेटवर्क का विस्तार हो, आधुनिक इलेक्ट्रिक बसे हों, कोस्टल रोड और समृद्धि महामार्ग जैसे शानदार प्रोजेक्ट्स हों, एयरपोर्ट्स का आधुनिकीकरण हो, शहरों को स्वच्छ बनाने की मुहिम हो, इन सभी पर बीजेपी का बहुत ज्यादा जोर है। आज का शहरी भारत ईज़ ऑफ़ लिविंग चाहता है। और इन सब के लिये उसका भरोसा बीजेपी पर है, एनडीए पर है।

साथियों,

आज बीजेपी देश के युवाओं को नए-नए सेक्टर्स में अवसर देने का प्रयास कर रही है। हमारी नई पीढ़ी इनोवेशन और स्टार्टअप के लिए माहौल चाहती है। बीजेपी इसे ध्यान में रखकर नीतियां बना रही है, निर्णय ले रही है। हमारा मानना है कि भारत के शहर विकास के इंजन हैं। शहरी विकास से गांवों को भी ताकत मिलती है। आधुनिक शहर नए अवसर पैदा करते हैं। हमारा लक्ष्य है कि हमारे शहर दुनिया के सर्वश्रेष्ठ शहरों की श्रेणी में आएं और बीजेपी, एनडीए सरकारें, इसी लक्ष्य के साथ काम कर रही हैं।


साथियों,

मैंने लाल किले से कहा था कि मैं एक लाख ऐसे युवाओं को राजनीति में लाना चाहता हूं, जिनके परिवार का राजनीति से कोई संबंध नहीं। आज NDA के अनेक ऐसे उम्मीदवारों को मतदाताओं ने समर्थन दिया है। मैं इसे बहुत शुभ संकेत मानता हूं। चुनाव आएंगे- जाएंगे, लोकतंत्र में जय-पराजय भी चलती रहेगी। लेकिन भाजपा का, NDA का ध्येय सिर्फ चुनाव जीतने तक सीमित नहीं है, हमारा ध्येय सिर्फ सरकारें बनाने तक सीमित नहीं है। हम देश बनाने के लिए निकले हैं। हम भारत को विकसित बनाने के लिए निकले हैं। भारत का हर नागरिक, NDA का हर कार्यकर्ता, भाजपा का हर कार्यकर्ता दिन-रात इसमें जुटा है। हमारी जीत का उत्साह, हमारे इस संकल्प को और मजबूत करता है। हमारे जो प्रतिनिधि चुनकर आए हैं, वो इसी संकल्प के लिए प्रतिबद्ध हैं। हमें देश के हर परिवार का जीवन आसान बनाना है। हमें सेवक बनकर, और ये मेरे जीवन का मंत्र है। देश के हर नागरिक की सेवा करनी है। हमें उन सपनों को पूरा करना है, जो देश की आजादी के मतवालों ने, भारत के लिए देखे थे। हमें मिलकर विकसित भारत का सपना साकार करना है। सिर्फ 10 साल में हमने भारत को दुनिया की दसवीं सबसे बड़ी इकॉनॉमी से दुनिया की पांचवीं सबसे बड़ी इकॉनॉमी बना दिया है। किसी को भी लगता, अरे मोदी जी 10 से पांच पर पहुंच गया, अब तो बैठो आराम से। आराम से बैठने के लिए मैं पैदा नहीं हुआ। वो दिन दूर नहीं जब भारत दुनिया की तीसरी सबसे बड़ी अर्थव्यवस्था बनकर रहेगा। हम मिलकर आगे बढ़ेंगे, एकजुट होकर आगे बढ़ेंगे तो हर लक्ष्य पाकर रहेंगे। इसी भाव के साथ, एक हैं तो...एक हैं तो...एक हैं तो...। मैं एक बार फिर आप सभी को बहुत-बहुत बधाई देता हूं, देशवासियों को बधाई देता हूं, महाराष्ट्र के लोगों को विशेष बधाई देता हूं।

मेरे साथ बोलिए,

भारत माता की जय,

भारत माता की जय,

भारत माता की जय,

भारत माता की जय,

भारत माता की जय!

वंदे मातरम, वंदे मातरम, वंदे मातरम, वंदे मातरम, वंदे मातरम ।

बहुत-बहुत धन्यवाद।