জম্মু ও কাশ্মীরের উপ-রাজ্যপাল শ্রী মনোজ সিনহা, আমার মন্ত্রিসভার সহকর্মী ডঃ জিতেন্দ্র সিং, আমার সম্মাননীয় সংসদীয় সহকর্মীরা, ভূমিপুত্র শ্রী গুলাম আলি এবং আমার প্রিয় জম্মু ও কাশ্মীরের ভাই-বোনেরা!
এই ভূস্বর্গে আসার, প্রকৃতির এই অতুলনীয় সৌন্দর্য অনুভব করার এই অনাবিল বাতাসে শ্বাস নেওয়ার এবং আমার কাশ্মীরি ভাই ও বোনেরা, আপনাদের উষ্ণ ভালোবাসার আলিঙ্গনের মধ্যে থাকার অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা যায় না!
গভর্নর সাহেব বলেছেন, গোটা জম্মু-কাশ্মীর থেকে মানুষজন আজ স্টেডিয়ামের বাইরে জড়ো হয়েছেন, ২৮৫টি ব্লকের প্রায় ১ লক্ষ মানুষ প্রযুক্তির মাধ্যমে এই অনুষ্ঠানের সঙ্গে সংযুক্ত হয়েছেন। আমি জম্মু-কাশ্মীরের মানুষকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই। এটা সেই নতুন জম্মু-কাশ্মীর, যার জন্য আমরা কয়েক দশক ধরে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেছিলাম। এটা সেই নতুন জম্মু-কাশ্মীর, যার জন্য ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি তাঁর জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। এই নতুন জম্মু-কাশ্মীরের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল; এই নতুন জম্মু-কাশ্মীর যাবতীয় চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করার আত্মবিশ্বাস রাখে। আজ আপনাদের হাসি মুখ সারা দেশ দেখতে পাচ্ছে এবং ১৪০ কোটি দেশবাসী স্বস্তি অনুভব করছেন।
বন্ধুরা,
আমরা এইমাত্র শ্রী মনোজ সিনহার বক্তব্য শুনলাম। তিনি এত চমৎকারভাবে উন্নয়নের বিষয়গুলি বলেছেন যে এরপর আর কিছু বলার থাকে না। আপনারা লক্ষ লক্ষ মানুষ আজ যেভাবে এখানে উপস্থিত হয়ে আপনাদের ভালোবাসা জানাচ্ছেন, তা আমাকে আনন্দ ও কৃতজ্ঞতায় পরিপূর্ণ করে দিচ্ছে। ভালোবাসার এই ঋণ পরিশোধ করতে মোদী চেষ্টার কোনো কসুর করবে না। ২০১৪ সাল থেকে যতবার আমি এখানে এসেছি, প্রতিবারই আমি আপনাদের হৃদয় জয় করার অঙ্গীকার প্রকাশ করেছি এবং দিনে দিনে আমি সেই লক্ষ্য অর্জনের দিকে এগিয়ে চলেছি। ভবিষ্যতেও আপনাদের মন জয়ের জন্য আমার প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। আর এটাই ‘মোদীর গ্যারান্টি’! আর আপনারা তো জানেনই, মোদীর গ্যারান্টি মানে প্রতিশ্রুতি পূরণের গ্যারান্টি।
বন্ধুরা,
কিছুদিন আগে আমি জম্মুতে গিয়ে পরিকাঠামো ও শিক্ষা সংক্রান্ত ৩২ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প চালু করেছি। আজ খুব সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য আমার শ্রীনগরে আপনাদের কাছে আসার সুযোগ হয়েছে। এখানে আমি পর্যটন ও উন্নয়ন সংক্রান্ত একগুচ্ছ প্রকল্পের শিলান্যাস ও সূচনা করেছি। এছাড়া, কৃষি সংক্রান্ত প্রকল্পগুলি কৃষকদের প্রতি উৎসর্গ করা হয়েছে এবং যুব সম্প্রদায়ের ১ হাজার জন সরকারি চাকরির নিয়োগপত্র পেয়েছেন। জম্মু-কাশ্মীরের উন্নয়নের সম্ভাবনা, পর্যটনের সম্ভাবনা, আমাদের কৃষকদের সক্ষমতা এবং যুব সমাজের নেতৃত্বদানের ক্ষমতা – এইসবই ‘উন্নত জম্মু-কাশ্মীর’ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জম্মু ও কাশ্মীর কেবলমাত্র একটি ভৌগোলিক এলাকা নয়; এটি ভারতের শিরোভাগ, ভারতের মর্যাদার প্রতীক। মাথা উঁচু থাকার অর্থ অগ্রগতি এবং সম্মান। তাই, উন্নত ভারত গড়তে গেলে উন্নত জম্মু-কাশ্মীর গড়ে তোলার প্রয়োজন।
বন্ধুরা,
একটা সময় ছিল যখন সারা দেশে যে আইন প্রযোজ্য, তা জম্মু-কাশ্মীরে প্রযোজ্য হত না। একইভাবে, গরীব মানুষের জন্য যেসব কল্যাণমূলক প্রকল্প দেশজুড়ে চলত, তার সুবিধাগুলি আমার জম্মু-কাশ্মীরের ভাই-বোনেরা পেতেন না। তবে আজ সময় পাল্টেছে। আজ শ্রীনগর থেকে এমন প্রকল্প চালু করা হয়, যার সুফল স্থানীয় বাসিন্দারা তো বটেই, সমগ্র দেশ পায়। শ্রীনগর আজ শুধু জম্মু-কাশ্মীর নয়, সারা দেশের নতুন পর্যটন উদ্যোগের নেতৃত্ব দিচ্ছে। জম্মু ও কাশ্মীরের মানুষ ছাড়াও সারা দেশের ৫০টিরও বেশি শহরের মানুষ আজ আমাদের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। অর্থাৎ, সমগ্র দেশ শ্রীনগরের সঙ্গে সংযুক্ত। আজ ‘স্বদেশ দর্শন’ প্রকল্পের পরবর্তী পর্যায়ের সঙ্গে ছ’টি প্রকল্পের সূচনা করা হয়েছে। এর আওতায় জম্মু-কাশ্মীর ও দেশের অন্যান্য অংশের জন্য ৩০টি প্রকল্পের সূচনা হয়েছে। এছাড়া, ‘প্রসাদ’ যোজনার আওতায় তিনটি প্রকল্প চালু হয়েছে, সূচনা হয়েছে ১৪টি অতিরিক্ত প্রকল্পের। মানুষের সুবিধার জন্য পবিত্র হজরতবাল দরগায় উন্নয়নের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আগামী দু’বছরের মধ্যে ৪০টিরও বেশি স্থানকে পর্যটন গন্তব্য হিসেবে গড়ে তোলার জন্য চিহ্নিত করা হয়েছে। আজ এক অনন্য প্রচারাভিযানের সূচনা করা হয়েছে, যার নাম ‘দেখো আপনা দেশ পিপলস্ চয়েস’। এর আওতায় সারা দেশের মানুষ অনলাইনে দর্শনীয় স্থানগুলি মনোনীত করতে পারবেন। সবথেকে জনপ্রিয় স্থানগুলিকে সরকার পর্যটন গন্তব্য হিসেবে গড়ে তুলবে। ‘চলো ইন্ডিয়া’ প্রচারাভিযানেরও আজ সূচনা হয়েছে। এর আওতায় অনাবাসী ভারতীয়দের অন্তত পাঁচটি বিদেশি পরিবারকে ভারত ভ্রমণের আমন্ত্রণ জানাবার অনুরোধ করা হয়েছে। একটি ওয়েবসাইটও খোলা হয়েছে যেখানে বিদেশের লোকেদের ভারত ভ্রমণে উদ্বুদ্ধ করা হবে। এইসব প্রকল্প ও প্রচারাভিযানগুলি থেকে জম্মু-কাশ্মীরের মানুষ ব্যাপক সুবিধা পাবেন। আমার আরও একটি উদ্দেশ্যও রয়েছে। আমি ভারতীয় পর্যটকদের তাঁদের ভ্রমণের সময় স্থানীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখার অনুরোধ করছি। তাঁরা যেখানেই যান না কেন, ভ্রমণের খরচের অন্তত ৫-১০ শতাংশ স্থানীয় পণ্য কেনার জন্য বরাদ্দ রাখুন। এতে স্থানীয় আয় ও কর্মসংস্থানের সুযোগ তো বাড়বেই, সেইসঙ্গে সুস্থিত পর্যটনও উৎসাহিত হবে। শুধু ঘুরলেই হবে না, স্থানীয় অর্থনীতিকে সমর্থনও করতে হবে। আমি নিজেও আজকের শ্রীনগর সফরের সময় এই প্রথা অনুসরণ করেছি। যেসব জিনিস আমার ভালো লেগেছে, সেগুলি আমি কিনব। এতে স্থানীয় অর্থনীতি শক্তিশালী হবে।
বন্ধুরা,
এইসব প্রকল্পগুলির রূপায়ণের ফলে এই অঞ্চলের পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটবে, নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এই উন্নয়ন প্রয়াসের জন্য আমি আমার জম্মু-কাশ্মীরের ভাই-বোনেদের আন্তরিক অভিনন্দন জানাই। এবার একটা নতুন উদ্যোগের কথা আপনাদের বলি। দীর্ঘদিন ধরেই এই অঞ্চল শ্যুটিং-এর জন্য চলচ্চিত্র জগতের লোকেদের বিশেষ পছন্দ। আমার এর পরের মিশন হল, ভারতে বিবাহ অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে উৎসাহ দেওয়া। বহু মানুষ বিপুল খরচ করে বিদেশে বিয়ে করতে যান। আমি ‘ওয়েড ইন ইন্ডিয়া’ ধারণার প্রস্তাব রাখছি যাতে মানুষজনকে ভারতে বিবাহ অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে উৎসাহ দেওয়া হবে। মানুষ যাতে জম্মু-কাশ্মীরে বিবাহ অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে চান, তার চেষ্টা চালাতে হবে। এখানে এসে ৩-৪ দিনের জমকালো অনুষ্ঠান করা যায়, এতে স্থানীয় মানুষের জীবিকার সুরাহা হবে। এই প্রচারাভিযানকে আমি সর্বতোভাবে এগিয়ে নিয়ে যাব।
বন্ধুরা,
উদ্দেশ্য যদি নিখাদ হয় এবং লক্ষ্য অর্জনের অঙ্গীকার থাকে, তাহলে ফল আসতে বাধ্য। সারা বিশ্ব জম্মু-কাশ্মীরে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের সফল আয়োজনের সাক্ষী থেকেছে। আগে পর্যটন স্থল হিসেবে জম্মু-কাশ্মীরের সম্ভাবনা নিয়ে মানুষের মনে সন্দেহ ছিল। আজ এই অঞ্চলে পর্যটনের সব রেকর্ড ভেঙে যাচ্ছে। শুধুমাত্র ২০২৩ সালেই ২ কোটিরও বেশি পর্যটক এখানে এসেছেন। গত এক দশকে সবথেকে বেশি সংখ্যক তীর্থযাত্রী অমরনাথ যাত্রায় অংশ নিয়েছেন। বিপুল সংখ্যক ভক্ত বৈষ্ণোদেবীতে যাচ্ছেন। বিদেশি পর্যটকদের সংখ্যাও গত বছরগুলির তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে। বহু বিখ্যাত বিদেশি ব্যক্তিত্ব কাশ্মীরের সৌন্দর্যে আকৃষ্ট হয়ে এখানে আসছেন। তাঁদের ভিডিও ও রিলে উপত্যকার সৌন্দর্য ধরা পড়ছে, নিমেষে তা ভাইরাল হচ্ছে।
বন্ধুরা,
পর্যটন ছাড়াও কৃষি ও কৃষিপণ্য জম্মু-কাশ্মীরের উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। জম্মু-কাশ্মীরের কেশর, আপেল, শুকনো ফল ও চেরি বিশিষ্ট ব্র্যান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। ৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে কৃষি উন্নয়ন কর্মসূচিগুলি আগামী পাঁচ বছরে কৃষিক্ষেত্রের বিকাশকে ত্বরান্বিত করবে, বিশেষ করে উদ্যানপালন ও পশুপালন ক্ষেত্র এর সুফল পাবে। আমার বোন হামিদার সঙ্গে কথা বলার সময় আমরা এই উদ্যোগ থেকে পশুপালন ক্ষেত্রের সম্ভাব্য উন্নতির বিষয়ে আলোচনা করেছি। এথেকে হাজার হাজার নতুন কাজের সুযোগ তৈরি হবে। ‘কিষাণ সম্মান নিধি’ প্রকল্পের আওতায় ভারত সরকার ইতোমধ্যেই প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা সরাসরি কৃষকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দিয়েছে। বিশ্বের বৃহত্তম মজুতকরণ প্রকল্প চালু হওয়ায় জম্মু-কাশ্মীরে ফল ও শস্য মজুত করে রাখার সুবিধা বাড়বে। এই প্রয়াসের অঙ্গ হিসেবে এই অঞ্চলে অসংখ্য নতুন গুদামঘর গড়ে তোলা হবে।
বন্ধুরা,
জম্মু ও কাশ্মীর উন্নয়নের পথে দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। এই অঞ্চলে একটি নয়, দুটি এইমস হাসপাতাল থাকবে। এইমস জম্মুর উদ্বোধন ইতোমধ্যেই করা হয়েছে। এইমস কাশ্মীরের কাজও এগিয়ে চলেছে। এছাড়া, সাতটি নতুন মেডিকেল কলেজ এবং দুটি বড় মাপের ক্যান্সার হাসপাতাল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আইআইটি ও আইআইএম-এর মতো আধুনিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও এখানে স্থাপন করা হয়েছে। জম্মু ও কাশ্মীরে এখন দুটি বন্দে ভারত ট্রেন চলাচল করছে। শ্রীনগর থেকে সাঙ্গালদান এবং সাঙ্গালদান থেকে বারামুলা পর্যন্ত ট্রেন পরিষেবাও চালু হয়েছে। যোগাযোগ বৃদ্ধির ফলে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডেরও বিকাশ ঘটেছে। নতুন পরিকাঠামো প্রকল্পগুলির মাধ্যমে জম্মু ও শ্রীনগরকে স্মার্ট সিটি হিসেবে গড়ে তোলার প্রচেষ্টা চলছে। ভবিষ্যতে জম্মু-কাশ্মীরের এই অগ্রগতি সারা বিশ্বের নজর কাড়বে। আপনারা হয়তো রেডিওতে শুনে থাকবেন, আমি প্রায়শই ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে জম্মু-কাশ্মীরের সাফল্যের কথা বলি। এখানকার স্বচ্ছতা অভিযান এবং সমৃদ্ধ হস্ত ও কারুশিল্প নিয়ে আলোচনা করি। যেমন ধরুন, আমি একবার ‘মন কি বাত’-এর একটি অংশে নাদ্রু বা পদ্মের ডাঁটি নিয়ে আলোচনা করেছিলাম। এখানকার সব জলাশয়ে পদ্ম দেখতে পাওয়া যায়। আর ঘটনাচক্রে পদ্ম হল বিজেপি-র প্রতীক। জম্মু-কাশ্মীরের সর্বত্রই এর উপস্থিতি। এমনকি, জম্মু-কাশ্মীর ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের লোগোতেও পদ্মফুল রয়েছে। অর্থাৎ, এই অঞ্চল ও পদ্মের মধ্যে একটা গভীর সংযোগ আছে।
বন্ধুরা,
জম্মু ও কাশ্মীরের যুব সম্প্রদায়কে প্রতিটি ক্ষেত্রে এগিয়ে নিয়ে যেতে আমাদের সরকার সর্বতো প্রয়াস চালাচ্ছে। দক্ষতা উন্নয়ন থেকে শুরু করে খেলাধূলা পর্যন্ত – সবক্ষেত্রেই নতুন নতুন সুযোগের সৃষ্টি হচ্ছে। বর্তমানে জম্মু-কাশ্মীরের প্রতিটি জেলায় খেলাধূলার আধুনিক সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। ১৭টি জেলায় বহুমুখী ইন্ডোর স্পোর্টর্স হল নির্মাণ করা হয়েছে। জম্মু-কাশ্মীরে অসংখ্য জাতীয় স্তরের ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হচ্ছে। এটি এখন দেশের শীতকালীন ক্রীড়া রাজধানী হয়ে উঠেছে – এটাই তো আমার কল্পনার জম্মু ও কাশ্মীর। সম্প্রতি ‘খেলো ইন্ডিয়া উইন্টার গেমস’-এ এখানে সারা দেশের প্রায় ১ হাজার জন প্রতিযোগী অংশ নিয়েছিলেন।
বন্ধুরা,
জম্মু ও কাশ্মীর আজ মুক্তভাবে শ্বাস নিতে পারছে, উন্নয়নের নতুন উচ্চতা স্পর্শ করছে। সংবিধানের ৩৭০ ধারা বিলোপের পর এই স্বাধীনতা এসেছে। দশকের পর দশক ধরে কংগ্রেস ও তার সহযোগী দলগুলি রাজনৈতিক লাভের জন্য ৩৭০ ধারা নিয়ে জম্মু ও কাশ্মীর এবং দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করে এসেছে। ৩৭০ ধারা থেকে জম্মু-কাশ্মীরের মানুষ কি সত্যিই উপকৃত হয়েছেন, নাকি এতে শুধুমাত্র কয়েকটি পরিবারের স্বার্থ চরিতার্থ হয়েছে – জম্মু-কাশ্মীরের মানুষ আজ সেই সত্য অনুধাবন করতে পারছেন। তাঁদেরকে যে বিভ্রান্ত করা হয়েছিল, তাঁরা তা বুঝতে পারছেন। কয়েকটি মাত্র পরিবারের সুবিধার জন্য ৩৭০ ধারা দিয়ে জম্মু-কাশ্মীরকে বেঁধে রাখা হয়েছিল। আজ এই বাঁধন খুলে দেওয়ার পর জম্মু-কাশ্মীরের যুব সমাজের প্রতিভা সারা দেশে স্বীকৃতি পাচ্ছে, তাঁদের সামনে নতুন নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হচ্ছে। আগে পাকিস্তান থেকে আসা উদ্বাস্তু, বাল্মীকি, সাফাইকর্মীদের মতো যেসব গোষ্ঠী তাঁদের অধিকার থেকে বঞ্চিত ছিলেন, আজ তাঁরা তা ফিরে পাচ্ছেন। ৭০ বছর ধরে তাঁদের ভোটের অধিকার থেকেও বঞ্চিত করা হয়েছিল। বাল্মীকি সম্প্রদায় দীর্ঘদিন ধরে তপশিলি জাতি হিসেবে নিজেদের অন্তর্ভুক্তির দাবি জানিয়ে আসছিল। আজ তা পূরণ করা হয়েছে। তপশিলি উপজাতিদের জন্য বিধানসভায় আসন সংরক্ষণ করা হয়েছে। এছাড়া, ‘পদ্দারি’, ‘পাহাড়ি’, ‘গাদ্দা ব্রাহ্মণ’, ‘কোলি’র মতো জনজাতিভুক্ত মানুষজনকে তপশিলি উপজাতি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। আমাদের সরকার পঞ্চায়েত ও পুরসভায় অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণীর জন্য আসন সংরক্ষণ করেছে। পরিবারবাদী দলগুলি দশকের পর দশক ধরে জম্মু-কাশ্মীরের মানুষকে তাঁদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করে রেখেছিল। আজ সমাজের সর্বস্তরের মানুষ তাঁদের অধিকার ফিরে পাচ্ছেন।
বন্ধুরা,
জম্মু-কাশ্মীর ব্যাঙ্ক স্বজনপোষণ ও দুর্নীতির জন্য ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আগেকার সরকারগুলি যতভাবে পেরেছে এই ব্যাঙ্ককে দুর্বল করার চেষ্টা চালিয়েছে। ব্যাঙ্কের পদে তারা তাদের নিজেদের আত্মীয়কে বসিয়েছে। এইভাবে প্রতিষ্ঠানকেই এরা দুর্বল করে দিয়েছে। ভুল পরিচালনার ফলে ব্যাঙ্কের প্রভূত ক্ষতি হয়েছে। এতে হাজার হাজার কোটি টাকা ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে – এই টাকা গরীব মানুষের টাকা, কাশ্মীরের মানুষের কষ্টার্জিত টাকা, আমার ভাই ও বোনেরা, আপনাদের টাকা। জম্মু-কাশ্মীর ব্যাঙ্ককে বাঁচাতে আমাদের সরকার একের পর এক সংস্কার করেছে। ১ হাজার কোটি টাকার আর্থিক সাহায্য দিয়েছে। দুর্নীতি দমন ব্যুরো তদন্ত করে অন্যায়ভাবে ব্যাঙ্কে নিয়োগের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে। গত পাঁচ বছরে জম্মু-কাশ্মীরের হাজার হাজার তরুণ-তরুণী স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ব্যাঙ্কে চাকরি পেয়েছেন। সরকারের ধারাবাহিক প্রয়াসে জম্মু-কাশ্মীর ব্যাঙ্ক তার হারানো শক্তি ফিরে পেয়েছে। এক সময় যে ব্যাঙ্ক ধুঁকছিল, মোদীর গ্যারান্টির ফলে সেই ব্যাঙ্কের মুনাফা আজ ১,৭০০ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। এই টাকা আপনাদের টাকা, মোদী এখানে প্রহরীর মতো দাঁড়িয়ে রয়েছে। পাঁচ বছর আগে ব্যাঙ্কের মোট ব্যবসার পরিমাণ কমে মাত্র ১.২৫ লক্ষ কোটি টাকায় নেমে এসেছিল। বর্তমানে প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে এই পরিমাণ ২.২৫ লক্ষ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। একইভাবে, পাঁচ বছর আগে এখানে আমানতের পরিমাণ নেমে এসেছিল ৮০ হাজার কোটি টাকায়। এখন তা ১.২৫ লক্ষ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। ব্যাঙ্কের অনাদায়ী সম্পত্তির অনুপাত পাঁচ বছর আগে ১১ শতাংশ ছাড়িয়ে গিয়েছিল, এখন তা ৫ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। গত পাঁচ বছরে জম্মু-কাশ্মীর ব্যাঙ্কের শেয়ারের দাম প্রায় ১২ গুণ বেড়েছে। ১২ টাকা থেকে তা পৌঁছেছে ১৪০ টাকায়। সরকার যদি সৎ হয় এবং জনকল্যাণে অঙ্গীকারবদ্ধ থাকে, তাহলে সব চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করে জনসাধারণের মঙ্গলসাধন করা যায়।
বন্ধুরা,
স্বাধীনতার পর থেকেই দীর্ঘদিন ধরে জম্মু ও কাশ্মীর পরিবারতান্ত্রিক রাজনীতির শিকার হয়ে এসেছে। যাঁরা দেশ এবং জম্মু-কাশ্মীরের উন্নয়নে অসন্তুষ্ট হচ্ছেন, তাঁরাই আজ আমাকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করছেন। তাঁরা বলেছেন, মোদীর কোনো পরিবার নেই। কিন্তু দেশ তাঁদের যোগ্য জবাব দিয়েছে। সারা দেশের মানুষ বলছেন, আমি মোদীর পরিবারের। আমি সব সময় জম্মু-কাশ্মীরকে নিজের পরিবার বলে মনে করেছি – পরিবার তো হৃদয়ের ভেতরে থাকে। সেজন্যই কাশ্মীরিরা আজ বলছেন, আমি মোদীর পরিবারের। জম্মু-কাশ্মীরের উন্নয়নের এই যাত্রা নিরলসভাবে চলতে থাকবে, এই আশ্বাস দিয়ে মোদী আজ তাঁর পরিবার ছেড়ে যাচ্ছে। আগামী পাঁচ বছরে জম্মু-কাশ্মীরের বিকাশ আরও দ্রুতগতিতে হবে।
বন্ধুরা,
প্রশান্তি ও আত্মনিবেদনের মাস রমজান খুব শীঘ্রই শুরু হতে চলেছে। জম্মু-কাশ্মীরের মাটি থেকে আমি এই মাস আসার আগে সারা দেশকে আমার শুভেচ্ছা জানাই। রমজানের মধ্যে যে শান্তি ও ঐক্যের বার্তা রয়েছে, তা সবার হৃদয়ে অনুরণিত হোক।
আর আমার বন্ধুরা,
আদি শঙ্করাচার্যের পদধূলিতে এই মাটি পবিত্র হয়েছে। আগামীকাল মহাশিবরাত্রি। এই পবিত্র মুহূর্তে আমি আপনাদের সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই। আরও একবার আজকের প্রকল্পগুলির জন্য আপনাদের সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্ছি। জম্মু-কাশ্মীরের লক্ষ লক্ষ মানুষের মধ্যে দাঁড়িয়ে আপনাদের ভালোবাসা ও আশীর্বাদ গ্রহণ করতে পেরে আমি ধন্য।
আপনাদের অসংখ্য ধন্যবাদ!
প্রধানমন্ত্রী মূল ভাষণটি হিন্দিতে দিয়েছিলেন