মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
নবনির্মিত সংসদ ভবনে যাওয়ার আগে দেশের ৭৫ বছরের সংসদীয় যাত্রাকে আবারও স্মরণ করার এবং ইতিহাসের সেই অনুপ্রেরণামূলক মুহূর্তগুলি এবং গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলিকে স্মরণ করে এগিয়ে যাওয়ার এটাই সুযোগ। আমরা সবাই এই ঐতিহাসিক ভবন থেকে বিদায় নিচ্ছি। এই ভবনে. স্বাধীনতার আগে ইম্পেরিয়াল লেজিসলেটিভ কাউন্সিলের সভাঘর ছিল। স্বাধীনতার পর এটি সংসদ ভবন হিসেবে স্বীকৃতি পায়। এটা ঠিক যে এই ভবনটি নির্মাণের সিদ্ধান্ত বিদেশী সংসদ সদস্যরা নিয়েছিলেন, কিন্তু আমরা এটি কখনই ভুলতে পারি না, এবং আমরা গর্বের সঙ্গে বলতে পারি, এই ভবনটি নির্মাণে আমাদের দেশবাসীর ঘাম এবং কঠোর পরিশ্রমের অবদান রয়েছে। টাকাও খরচ হয়েছে আমাদের দেশের মানুষেরই।
আমাদের ৭৫ বছরের সফরে এই ভবনে অনেক শ্রেষ্ঠ থেকে শ্রেষ্ঠতর গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য ও প্রক্রিয়া গড়ে উঠেছে। আর এই ভবনে সংসদ সদস্য হিসেবে প্রত্যেকেই সক্রিয়ভাবে এই শ্রেষ্ঠতর গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য ও প্রক্রিয়া সৃষ্টিতে অবদান রেখেছেন এবং সাক্ষী হিসেবে প্রত্যক্ষও করেছেন। আমরা নতুন ভবনে অবশ্যই যাবো, তবে এই পুরানো ভবনেও… এই ভবনটিও আগামী প্রজন্মকে সবসময় অনুপ্রাণিত করতে থাকবে। এটি ভারতের গণতন্ত্রের সোনালী যাত্রার একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়, যা এই ভবনের মাধ্যমে গোটা বিশ্ব ভারতের শিরা-উপশিরায় গণতন্ত্রের শক্তি কেমন, সেই সম্পর্কে সচেতন হতে থাকবে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
অমৃতকালের প্রথম প্রভাতের আলো, দেশে একটি নতুন বিশ্বাস, নতুন আত্মবিশ্বাস, নতুন উদ্যম, নতুন স্বপ্ন, নতুন সংকল্প, আর জাতির নতুন সামর্থ তা পূরণ করছে। চারিদিকে আজ ভারতীয়দের সাফল্যগাথা আর তা অত্যন্ত গর্বের সঙ্গে আলোচিত হচ্ছে। এটা আমাদের ৭৫ বছরের সংসদীয় ইতিহাসে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফল। সেজন্যই আজ সারা বিশ্বে সেই প্রতিধ্বনি শোনা যাচ্ছে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
চন্দ্রযান-৩-এর সাফল্যে সমগ্র ভারত, গোটা দেশ অভিভূত। আর এতে ভারতের শক্তির একটি নতুন রূপ, যা আধুনিকতার সঙ্গে যুক্ত, যা বিজ্ঞানের সঙ্গে যুক্ত, যা প্রযুক্তির সঙ্গে যুক্ত, যা আমাদের বিজ্ঞানীদের সামর্থের সঙ্গে যুক্ত, যা ১৪০ কোটি জনগণের সংকল্পের শক্তির সঙ্গে যুক্ত, যা দেশ ও বিশ্বে নতুন প্রভাব সৃষ্টি করতে চলেছে। এই সংসদ ভবন এবং এই সভার মাধ্যমে আমি আবারও দেশের বিজ্ঞানী ও তাঁদের সহকর্মীদের অনেক অনেক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, ।
অতীতে, যখন নির্জোট আন্দোলনের শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল, সেই সম্মেলনে সর্বসম্মতিক্রমে প্রস্তাব পাস হয়েছিল এবং দেশ সেই প্রচেষ্টার প্রশংসা করেছিল। আজ আপনারা সর্বসম্মতভাবে জি-২০-র সাফল্যের প্রশংসা করেছেন। আমি বিশ্বাস করি, এভাবে আপনারা দেশবাসীর গর্ব বাড়িয়েছেন, আমি আপনাদের প্রত্যেকের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। জি-২০-এর সাফল্য ১৪০ কোটি দেশবাসীর সাফল্য। এটা ভারতের সাফল্য, কোনও ব্যক্তির সাফল্য নয়, কোনও দলের সাফল্য নয়। ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো, ভারতের বৈচিত্র্য। জি-২০র সভাপতি হিসেবে ভারতের ৬০টি স্থানে ২০০ টিরও বেশি শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন হয়। এতে ভারতের নানা অঞ্চলে এবং দেশের বিভিন্ন রাজ্য সরকার ব্যাপক আড়ম্বর সহকারে নানা অনুষ্ঠান আয়োজন করে, যেখানে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ আর তার প্রভাব আজ সারা বিশ্বে অনুভূত হচ্ছে। এটি আমাদের সকলের জন্যই উদযাপনের বিষয়। এতে দেশের গর্ব বাড়বে। আর আপনি যেমন উল্লেখ করেছেন, ভারত গর্বিত হবে যে যখন ভারত জি-২০-র চেয়ারম্যান ছিল তখনই আফ্রিকান ইউনিয়ন এর সদস্য হয়েছিল। আমি সেই আবেগময় মুহূর্তটি ভুলতে পারি না যখন আফ্রিকান ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্তি ঘোষণা করা হয়েছিল, তখন আফ্রিকান ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট আমাকে আবেগাপ্লুত কন্ঠে বলেছিলেন যে আমার জীবনে এমন কিছু মুহূর্ত এসেছে, যখন কথা বলার সময় আমি সম্ভবত কেঁদেছি। আজ আবার তেমন কেঁদেছি। আপনারা কল্পনা করতে পারেন যে, আফ্রিকার দেশগুলির এত বড় আকাঙ্খা এবং আশা পূরণ করার সৌভাগ্য আমাদের হয়েছে!
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
ভারতকে সন্দেহ করার প্রবণতা অনেকের মধ্যেই রয়েছে এবং স্বাধীনতার পর থেকেই তা চলে আসছে। এবারও তাই হয়েছে। কোনও মতভেদ থাকবে না, এটা অসম্ভব। কিন্তু এটাই ভারতের শক্তি, সেটাও ঘটেছে এবং বিশ্ব সর্বসম্মতিক্রমে একটি সাধারণ ঘোষণাপত্র গ্রহণ করেছে আর এখান থেকে ভবিষ্যতের জন্য একটি রোডম্যাপ নিয়ে কাজ শুরু করেছে।
এবং মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
আপনার নেতৃত্বে, যেহেতু ভারতের জি-২০ সভাপতিত্ব এবছর নভেম্বরের শেষ দিন পর্যন্ত, তাই আমরা এখন যে সময় হাতে পেয়েছি তা কাজে লাগাতে চলেছি, এবং আপনার নেতৃত্বে, সারা বিশ্বের এই জি-২০ সদস্যরা, পি-২০ পার্লামেন্টগুলির স্পিকারদের একটি শীর্ষ সম্মেলনের কথা আপনি যেমন ঘোষণা করেছেন, তা বাস্তবায়িত করতে সরকার আপনার প্রচেষ্টাকে পূর্ণ সমর্থন ও সহযোগিতা করবে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
এটা আমাদের সকলের জন্য গর্বের বিষয়, আজ ভারত বিশ্বের বন্ধু হিসেবে নিজের জায়গা তৈরি করতে পেরেছে। সারা বিশ্ব ভারতে তাদের বন্ধু খুঁজছে, সারা বিশ্ব ভারতের বন্ধুত্ব অনুভব করছে। আর এর মূল কারণ হল আমাদের মূল্যবোধ, যা আমরা বেদ থেকে শুরু করে স্বামী বিবেকানন্দ পর্যন্ত সবার কাছে পেয়েছি, 'সবকা সাথ, সবকা বিকাশ' এর মন্ত্র আজ আমাদের একত্রিত করার মাধ্যমে বিশ্বকে সংযুক্ত করছে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
এই পুরনো সংসদ ভবন থেকে বিচ্ছেদ হওয়া একটি অত্যন্ত আবেগঘন মুহূর্ত। পরিবার যদি পুরানো বাড়ি ছেড়ে নতুন বাড়িতে যায়, তখন অনেক স্মৃতি কিছু মুহুর্তের জন্য নাড়া দেয় এবং যখন আমরা ঘর ছেড়ে চলে যাই, তখন আমাদের মন ও মস্তিষ্কও আবেগে পরিপূর্ণ থাকে। সেই আবেগ অনেক স্মৃতিমাখা। অনেক তিক্ত-মধুর অভিজ্ঞতা, অনেক ঝগড়া, অনেক সংঘাতের আবহ গড়ে উঠেছে আবার কখনও উৎসব ও উদ্দীপনার পরিবেশও তৈরি হয়েছে এই সংসদ ভবনে। এই সমস্ত স্মৃতিগুলি আমাদের সকলের সাধারণ স্মৃতি, সম্মিলিত স্মৃতি, এটি আমাদের সকলের সাধারণ ঐতিহ্য, সম্মিলিত ঐতিহ্য; আর তাই এর জন্য গর্বও আমাদের সকলের কাছে সাধারণ, সম্মিলিত গর্ব। এই ৭৫ বছরে আমরা স্বাধীন ভারতের পুনর্গঠনের সঙ্গে সম্পর্কিত অনেক ঘটনা এখানে এই সংসদে রূপ নিতে দেখেছি। আজ, যখন আমরা এই সংসদ ভবন ছেড়ে নতুন সংসদ ভবনের দিকে পা বাড়াতে যাচ্ছি, তখন ভারতের সাধারণ মানুষের অনুভূতি যে আদর ও সম্মান পেয়েছে - তা প্রকাশ করারও এটি একটি সুযোগ।
আর সেজন্যেই মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
আমি যখন প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে এই ভবনে প্রবেশ করি, তখন স্বাভাবিকভাবেই সিঁড়িতে কপাল ঠেকিয়ে প্রণাম করে এই সংসদ ভবনের দরজায় পা রেখেছিলাম, এই গণতন্ত্রের মন্দিরে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছিলাম। সেই মুহূর্তটি আমার জন্য আবেগে পরিপূর্ণ ছিল, আমি কল্পনাও করতে পারিনি, কিন্তু এটি ভারতীয় গণতন্ত্রের শক্তি, এটিই গণতন্ত্রের প্রতি ভারতের সাধারণ মানুষের বিশ্বাসের প্রতিফলন, যা রেলের প্ল্যাটফর্মে বসবাসকারী একটি দরিদ্র পরিবারের সন্তানকে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করে সংসদে পৌঁছে দেয়। আমি কল্পনাও করিনি যে দেশ আমাকে এত সম্মান দেবে, আমাকে এত আশীর্বাদ করবে, আমাকে এত ভালবাসবে - তা কখনও ভাবিনি মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
আমাদের মধ্যে অনেকেই রয়েছেন যাঁরা সংসদ ভবনের ভেতরে যা লেখা রয়েছে সেগুলি পড়তে থাকেন এবং কখনও কখনও তাঁদের বক্তব্যে সেগুলি উল্লেখও করেন। আমাদের সংসদ ভবনের প্রবেশ দ্বারে ‘লোকদ্বারম’ শীর্ষক চাঙ্গদেবের উপদেশের একটি বাক্য উৎকীর্ণ রয়েছে। এই বাক্যটির অর্থ হল – জনগণের জন্য দরজা খুলুন আর দেখুন কিভাবে তাঁরা তাঁদের অধিকার অর্জন করেন। এভাবে আমাদের ঋষি-মুনিদের লিখে যাওয়া অনেক বাক্যই আমাদের প্রবেশ দ্বারে লেখা রয়েছে। আমরা সবাই বা আমাদের আগে যাঁদের এই সংসদ ভবনে জনপ্রতিনিধি হয়ে আসার সৌভাগ্য হয়েছে, তাঁরা প্রত্যেকেই এই সত্যের সাক্ষী।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
সময়ের সঙ্গে যেভাবে যেভাবে পরিস্থিতি বদলেছে, আমাদের পুরনো সংসদ ভবনের সংস্কারও সেভাবে নিরন্তর হয়েছে। এভাবে ভারতীয় সমাজের প্রত্যেক বর্গের বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন বৈচিত্র্যগুলির প্রতিনিধিত্বে ভরা এই সংসদ ভবনের প্রতিটি কোণে অনেক ভাষা, অনেক উপ-ভাষা, কথ্যভাষা, অনেক রকম খাদ্যাভ্যাস – সবকিছু রয়েছে। আর সমাজের প্রত্যেক শ্রেণীর মানুষ তা সে সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে হোক কিংবা আর্থিক দৃষ্টিকোণ থেকে, গ্রাম থেকে হোক কিংবা শহর থেকে, তাঁদের সবাইকে আপন করার ক্ষমতা এই সংসদ ভবনের রয়েছে। এখানে এসে তাঁরা প্রত্যেকেই সাধারণ মানুষের ইচ্ছা ও আকাঙ্ক্ষাগুলি নির্দ্বিধায় প্রকাশ করতে পারেন। সময়ের সঙ্গে এ দেশের দলিত, পীড়িত, আদিবাসী, পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়ের মানুষজন এবং মহিলারা – সবার অংশগ্রহণ এই সংসদ ভবনে ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
শুরুতে মহিলাদের সংখ্যা কম ছিল। কিন্তু ধীরে ধীরে এই সংসদ ভবনে মা ও বোনেদের গরিমা বেড়েছে। আর এই সংসদ ভবনের গরিমায় অনেক বড় পরিবর্তন আনতে আমাদের মা ও বোনেদের অবদান অনস্বীকার্য।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
শুরু থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় সাড়ে সাত হাজারেরও বেশি জনপ্রতিনিধি উভয় সভায় তাঁদের অবদান রেখেছেন। এই সময়ের মধ্যে প্রায় ৬০০ মহিলা সাংসদও উভয় কক্ষের গরিমা বাড়িয়েছেন।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
আপনারা সবাই জানেন যে মাননীয় ইন্দ্রজিৎ গুপ্তজি দীর্ঘ ৪৩ বছর, হ্যাঁ আমি যদি ভুল না করে থাকি, ৪৩ বছর এই সংসদের সদস্য ছিলেন। ৪৩ বছর ধরে যত অধিবেশন হয়েছে তার সাক্ষী হওয়ার সৌভাগ্য তাঁর হয়েছে। আর এই সংসদেই শতিগুর রহমানজি ৯৩ বছর বয়স পর্যন্ত তাঁর অবদান রেখেছেন। আর মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, এটাই ভারতীয় গণতন্ত্রের শক্তি যে মাত্র ২৫ বছর বয়সে চন্দ্রমণি মুর্মু এই সংসদের সদস্য হয়েছিলেন। এখনও পর্যন্ত তিনিই সর্বকনিষ্ঠ সদস্য যিনি এই সংসদে অবদান রেখেছেন।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
তর্ক, বিতর্ক, কটাক্ষ – এসব কিছুতে আমরা সবাই অভ্যস্ত। আমরা প্রত্যেকেই কোনও না কোনো সময়ে এই ধরনের বিতর্কের সূত্রপাত করেছি। তা সত্ত্বেও আমাদের মধ্যে যে একটা পারিবারিক সম্পর্ক রয়েছে, আমাদের পূর্ববর্তী প্রজন্মের মধ্যেও ছিল, যাঁরা বিভিন্ন প্রচারমাধ্যমে সংসদের অধিবেশন দেখেন, তাঁরা হয়তো সেটা অনুভব করেছেন। কিন্তু এখান থেকে যখন আমরা বেরিয়ে যাই, তখন সেই সম্পর্ককে, দলের উর্দ্ধে উঠে অনেকেই সেই পারিবারিক সম্পর্ককে একটু ভিন্ন উচ্চতায় নিয়ে যাই। এটাই এই সংসদের শক্তি। এই পরিবারভাব থাকার ফলেই আমরা শত তর্ক, বিতর্ক, কটাক্ষ ও কলহ সত্ত্বেও পরস্পরের বিরুদ্ধে মনে কোনও তিক্ততা পোষণ করি না। সংসদের সদস্যপদ চলে যাওয়ার অনেক বছর পরও যদি কারোর সঙ্গে দেখা হয়, তখনও আমরা সেই হৃদ্যতা নিয়ে পরস্পরের সঙ্গে মিলিত হই, সেই স্নেহ-ভালোবাসাময় অতীতকে আমরা ভুলতে পারি না।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
আমাদের আগেও হয়েছে এবং এখনও আমরা অনেকবার দেখেছি যে অনেক ব্যক্তিগত সঙ্কট ও অসুবিধা থাকা সত্ত্বেও আমাদের সাংসদরা অধিবেশনের সময় সংসদ ভবনে এসেছেন। এমনকি তাঁদের শারীরিক সমস্যা থাকলেও একজন সংসদ সদস্য রূপে, জনপ্রতিনিধি রূপে নিজের কর্তব্য পালন করেছেন। এরকম অনেক ঘটনা আজও আমাদের সামনে রয়েছে। অনেক কঠিন রোগ থাকা সত্ত্বেও অনেকে হুইল চেয়ারে বসে এসেছেন, কাউকে হয়তো ডাক্তারকে বাইরে দাঁড় করিয়ে আসতে হয়েছে। কিন্তু তাঁরা সংসদের অধিবেশনে নিজের ভূমিকা ঠিক পালন করে গেছেন।
আমাদের সামনে বড় উদাহরণ হল করোনাকাল। প্রত্যেক পরিবার তাঁদের বাড়ির কোনো সদস্যকে বাইরে যেতে দিতে চাইত না। ভয় পেত যে বাইরে গিয়ে সংক্রমণের শিকার হলে মৃত্যু অসময়ে দরজায় এসে কড়া না নাড়ে। তা সত্ত্বেও আমাদের মাননীয় সাংসদরা করোনাকালেও উভয় সভায় তাঁদের উপস্থিতি বজায় রেখেছেন, তাঁদের কর্তব্য পালন করেছেন। আমরা কেউ দেশের কাজ থামতে দিইনি। প্রয়োজন হলে নির্দিষ্ট দূরত্ব রক্ষা করেছি এবং বারবার করোনা পরীক্ষার যন্ত্রণা ও ঝামেলা সহ্য করেছি। মাস্ক পড়ে সংসদে এসেছি। সভাকক্ষে বসার ক্ষেত্রেও দূরত্ব বাড়িয়েছি। প্রত্যেক পরিস্থিতির মোকাবিলা করেছি, কিন্তু দেশের কাজ থামতে দিইনি। প্রত্যেক সদস্য এই মনোভাব নিয়ে এই সংসদে নিজের কর্তব্যকে গুরুত্বপূর্ণ ভেবে কাজ করে গেছেন। সংসদের প্রতি এত আপনত্ব, এত টান, আমরা আগে কম দেখেছি। হয়তো ৩০-৩৫ বছর আগে ছিল। কিন্তু এখন প্রত্যেক সদস্য এই সেন্ট্রাল হল-এ অবশ্যই উপস্থিত হয়েছেন। যেমন, অনেকের মন্দিরে যাওয়ার স্বভাব থাকে, তেমনই আজকের প্রত্যেক সংসদ সদস্যের সংসদ ভবনে আসার স্বভাব গড়ে উঠেছে। এই সংসদের সঙ্গে তাঁদের একটা আপনত্ব গড়ে উঠেছে। একটা আত্মীয়ভাব নিয়ে তাঁরা এর সঙ্গে জুড়ে গেছেন। আর যাঁরা আজ এই সংসদের সদস্য নন, এমনকি জনপ্রতিনিধিও নন, তাঁদের এলাকায় গেলে আমরা তাঁদের সঙ্গে দেখা করি, আর তাঁদের এলাকার কোনও সমস্যা যদি তাঁরা তুলে ধরেন, আমাদের সামর্থ্য মতো তা পূরণ করার চেষ্টা করি।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
স্বাধীনতার পর অনেক বড় বড় বিদ্বান ব্যক্তিরা আশঙ্কা ব্যক্ত করেছিলেন, না জানি দেশটার কী হবে, দেশের নেতারা চালাতে পারবেন কি পারবেন না, ঐক্যবদ্ধ রাখতে পারবেন, নাকি টুকরো টুকরো হয়ে যাবে, গণতন্ত্র টিকে থাকবে কিনা - এরকম অসংখ্য দ্বিধা ও আশঙ্কা তাঁদের মনে ছিল। কিন্তু এ দেশের সংসদের সামর্থ্য এমনই যে গোটা বিশ্বের তাবড় তাবড় বিদ্বানদের আশঙ্কাকে ভুল প্রমাণ করে দিয়েছে। আর এই দেশ পূর্ণ সামর্থ্য নিয়ে সামনে এগিয়ে গেছে। এই বিশ্বাস নিয়েই আমরা ভবিষ্যতে আমরা এগিয়ে যাব। এখনও অনেক আশঙ্কা থাকবে, ঘন কালো মেঘ থাকবে, কিন্তু সাফল্য আমরা পাবই। আমাদের পুরনো প্রজন্মের মানুষরা যেমন মিলেমিশে কাজ করে সাফল্য এনেছেন, আমরাও তেমনই আনব। আমাদের সংসদ ভবনের গৌরব প্রচার করার এই সুযোগকে আমরা হাতছাড়া করব না।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
এই সংসদ ভবনে দু’বছর এগারো মাস ধরে সংবিধান সভার বৈঠক হয়েছে। সেই বৈঠক থেকেই ১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর রচিত হয়েছে আমাদের সংবিধান, যে সংবিধান বাস্তবায়িত হয়েছে ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি। এই ৭৫ বছরে সবচাইতে বড় সাফল্য যেটা এসেছে তা হল, এই সংসদের ওপর দেশের সাধারণ মানুষের বিশ্বাস ক্রমে বেড়েছে। গণতন্ত্রের সবচাইতে বড় শক্তি এটাই যে এই মহান প্রতিষ্ঠানের প্রতি, এই ব্যবস্থার প্রতি তাঁদের বিশ্বাস অটুট রয়েছে। এই ৭৫ বছরে আমাদের সংসদ যেভাবে এখানে সাধারণ মানুষের ভাবনার অভিব্যক্তিকে তুলে ধরেছে তা এই সংসদকে গণ-ভাবনার অভিব্যক্তির ভবনে পরিণত করেছে। আমরা দেখেছি, রাজেন্দ্রবাবু থেকে শুরু করে ডঃ কালাম, রামনাথ কোবিন্দজি এবং দ্রৌপদী মুর্মু পর্যন্ত – এই সকলের অভিভাবকত্ব ও পথ প্রদর্শন এই সংসদকে ঋদ্ধ করেছে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
পণ্ডিত নেহরুজি, শাস্ত্রীজি থেকে শুরু করে অটলজি, মনমোহনজি পর্যন্ত অনেক মহান নেতা এই সংসদের নেতৃত্ব দিয়েছেন। আর এই সংসদের মাধ্যমে তাঁরা দেশকে পথ দেখিয়েছেন। দেশকে নতুন রঙ ও রূপে রূপান্তরিত করার জন্য তাঁরা অনেক পরিশ্রম করেছেন, দিন-রাত এক করে কাজ করেছেন। আজ তাঁদের সকলের গৌরবগান করার দিন।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল, লোহিয়াজি, চন্দ্রশেখরজি, আদবানীজির মতো অসংখ্য নাম আমাদের সামনে রয়েছে যাঁরা এই সংসদকে সমৃদ্ধ করেছেন, এর আলোচনাকে উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছেন। দেশের সাধারণ মানুষের কন্ঠকে শক্তি যোগানোর কাজ এই সংসদ করেছে। বিশ্বের অনেক মহান রাষ্ট্রাধ্যক্ষ আমাদের এই সংসদে এসে বক্তব্য রেখে দেশবাসীকে উদ্বুদ্ধ করেছেন। তাঁদের বক্তব্যে ভারতের গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধা ব্যক্ত হয়েছে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
উৎসাহ-উদ্দীপনার পাশাপাশি এই সদনে অনেকের চোখের জলও পড়েছে। এই সদন অনেক দুঃখে কাতর হয়েছে যখন দেশের তিন তিনজন প্রধানমন্ত্রী তাঁদের শাসনকালেই প্রাণ হারিয়েছেন। নেহরুজি, শাস্ত্রীজি, ইন্দিরাজির মৃত্যুর পর এই সংসদ ভবনের সমস্ত সদস্যরা অশ্রুসজল চোখে তাঁদের বিদায় জানিয়েছেন।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
অনেক সমস্যা থাকা সত্ত্বেও লোকসভার প্রত্যেক অধ্যক্ষ, রাজ্যসভার প্রত্যেক সভাপতি অসাধারণভাবে নিজেদের সভাকে পরিচালনা করেছেন। তাঁদের কার্যকালে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এই সিদ্ধান্তগুলি মাওলঙ্কারজির সময় থেকে শুরু করে সুমিত্রাজির সময়কাল হয়ে আজকের ওম বিড়লাজি পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে সংসদকে সমৃদ্ধ করেছে। আজও তাঁদের সিদ্ধান্তগুলিকে ‘রেফারেন্স পয়েন্ট’ হিসেবে মানা হয়। এখনও পর্যন্ত প্রায় ১৭ জন অধ্যক্ষ এই লোকসভায় তাঁদের আসন অলঙ্কৃত করেছেন। এঁদের মধ্যে দু’জন মহিলা অধ্যক্ষ ছিলেন। প্রত্যেকেরই নিজস্ব কর্মশৈলী ছিল। কিন্তু তাঁরা সবাইকে সঙ্গে নিয়ে সংবিধান নির্দেশিত নিয়ম পালন করে সংসদকে সবসময় প্রাণশক্তিতে ভরিয়ে রেখেছেন। আমি আজ সেই সকল লোকসভার অধ্যক্ষদেরও স্মরণ করি, অভিনন্দন জানাই।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
এটা ঠিক যে আমরা জনপ্রতিনিধিরা নিজের নিজের ভূমিকা পালন করি, কিন্তু অত্যন্ত তৎপরতার সঙ্গে আমাদের মাঝে বসে যাঁরা কাজ করেন, সেই কর্মচারীদের প্রজন্মও বদলে গেছে। আগে যাঁরা ছিলেন তাঁরা প্রয়োজনে কাগজ নিয়ে দৌড়ে আসতেন। তাঁদেরও অবদান কম নয়। আমাদেরকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পৌঁছে দেওয়ার জন্য তাঁরা যেমন ছুটতেন, তেমনই সংসদে কোনও ভুল কিছু না হয়ে যায়, কোনও সিদ্ধান্ত যেন ভুল না নেওয়া হয়, তা দেখার ক্ষেত্রেও তাঁরা সতর্ক থাকতেন। তাঁদের এই কাজের মাধ্যমেও সংসদের ‘কোয়ালিটি অফ গভর্ন্যান্স’ ত্বরান্বিত করার ক্ষেত্রে অনেক সুবিধা হয়েছে। আমি সেই সমস্ত বন্ধুদের এবং তাঁদের পূর্বে যাঁরা ছিলেন তাঁদেরকেও হৃদয় থেকে অভিনন্দন জানাই। শুধু তাই নয়, সংসদ মানে শুধু এই বাড়িটাই নয়, এই গোটা পরিসরে এমন অনেকে রয়েছেন যাঁরা আমাদের চা খাইয়েছেন, জল খাইয়েছেন, অনেক সময় মাঝরাত পর্যন্ত সংসদের কাজ চলেছে তখন কাউকে ক্ষুধার্ত থাকতে দেননি, এরকম পরিষেবা যাঁরা দিয়েছেন, তাঁদেরকেও আমি কৃতজ্ঞতা জানাই। যে মালিরা এই সংসদ ভবন এলাকার পরিবেশকে সুন্দর করে রেখেছেন, যে সাফাই কর্মীরা সবসময় সংসদ ভবনকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রেখেছেন, এরকম অসংখ্য মানুষ সততার সঙ্গে আমাদের দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে নিজেদের কাজ করে গেছেন, তাঁদের অবদানও কম নয়। এখানে কাজের উপযুক্ত পরিবেশ বজায় রাখা, সমস্ত ব্যবস্থাকে সুচারুভাবে চলতে দেওয়ার ক্ষেত্রে যাঁদের যাঁদের অবদান রয়েছে, আমার পক্ষ থেকে তাঁদের সকলকে আমি বিশেষভাবে প্রণাম জানাই।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
ভারতের এই সংসদ ভবনে সন্ত্রাসবাদী হামলা হয়েছিল। গোটা বিশ্বে এ এক অভাবনীয় ঘটনা। এই হামলা এই ভবনের ওপর ছিল না, আমাদের দেশের গণতন্ত্র যাকে ‘গণতন্ত্রের জননী’ বলা হয়, তার ‘জীবাত্মা’র ওপর হামলা ছিল। এই দেশ সেই ঘটনাকে কখনও ভুলতে পারবে না। যাঁরা সেদিন সেই সন্ত্রাসবাদীদের আক্রমণ থেকে এই সংসদ ভবনকে বাঁচানোর জন্য লড়াই করেছেন, সংসদে কর্মরত প্রত্যেক সদস্যের জীবন বাঁচানোর জন্য নিজেদের বুককে গুলিবিদ্ধ করেছেন, তাঁদের সবাইকে আজ আমি প্রণাম জানাই। তাঁরা আমাদের মধ্যে নেই, কিন্তু তাঁরা আমাদের অনেকের জীবন বাঁচিয়েছেন।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
আজ যখন আমরা এই সংসদ ভবন ছেড়ে যাচ্ছি, তখন সেই সাংবাদিক বন্ধুদেরও স্মরণ করছি যাঁরা জীবনের অনেকটা সময় এই সংসদ ভবনে কাটিয়েছেন। অনেক সাংবাদিক তো এমন ছিলেন যাঁরা তাঁদের সম্পূর্ণ সাংবাদিক জীবনই এই সংসদের অধিবেশন রিপোর্ট করতে করতে কাটিয়ে দিয়েছেন। তাঁরাই এক প্রকার এই সংসদের জীবন্ত সাক্ষী। এখানকার প্রতিটি মুহূর্তের খবর তাঁরা দেশের জনগণের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন, তখন এত প্রযুক্তি ছিল না। তবুও তাঁরা এখানকার সমস্ত খবর সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার সামর্থ্য রাখতেন। অনেক ভেতরের খবর তাঁরা পৌঁছে দিতে পারতেন। অনেক গুহ্য খবরও তাঁরা পৌঁছে দিয়েছেন। তাঁদের এই অবদান ভোলার মতো নয়। শুধু সংবাদ পরিবেশনের জন্য নয়, ভারতের এই উন্নয়ন যাত্রায় সংসদ ভবনকে বোঝার জন্য তাঁরা নিজেদের সমস্ত শক্তিকে উৎসর্গ করে দিয়েছিলেন। আজও যখন সেইসব পুরনো সাংবাদিক বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হয় যাঁরা কখনও সংসদ ভবন থেকে রিপোর্টিং করতেন, তাঁরা এমন সব অজানা তথ্য তুলে ধরেন যা তাঁরা নিজেদের চোখে দেখেছেন, কানে শুনেছেন; আশ্চর্য সব ঘটনা। তাঁরা যেন এই সংসদ ভবনের দেওয়ালের মতো, তাঁদের কলম যেন আয়নার মতো - যার মাধ্যমে দেশবাসী সংসদের প্রতি, সংসদ সদস্যদের সঙ্গে একটি যোগসূত্র অনুভব করতেন। আমি আজ এই আবেগঘন সময়ে সেই সাংবাদিক বন্ধুদের স্মরণ করছি যাঁরা আজ আমাদের মধ্যে নেই। কিন্তু যাঁরা রয়েছেন, আমি নিশ্চিত যে সেই সাংবাদিক বন্ধুদের জন্যও এই সংসদ ভবন ছেড়ে যাওয়া ততটাই আবেগমথিত মুহূর্ত রচনা করছে। অনেক সাংবাদিক খুব অল্প বয়স থেকেই এই সংসদ ভবনের সংবাদ পরিবেশনের দায়িত্ব পালন করছেন। গণতন্ত্রের শক্তিকে মজবুত করার জন্য তাঁদের অবদান রাখছেন। আজ তাঁদের সবাইকে কৃতজ্ঞতা জানানোর সময়।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
যখন আমরা সংসদ ভবনের ভেতরে আসি, তখন ব্রহ্মকে কল্পনা করি। এই সংসদের নিয়ন্তাও সেই ব্রহ্ম, আমাদের শাস্ত্র তাই মনে করে। যে কোনও একটা স্থানে অনেকবার যখন একই লয়ে কারোর নাম উচ্চারিত হয়, তখন সেটা তপোস্থল হয়ে ওঠে। তার একটি ‘পজিটিভ ভাইভ’ থাকে। নাদ-এর একটি শক্তি রয়েছে যা যে কোনও স্থানকে সিদ্ধ স্থানে রূপান্তরিত করে দেয়। আমি মনে করি, এই সংসদ ভবনে সেই সাড়ে সাত হাজার জনপ্রতিনিধিরা যে শব্দগুলি বারবার উচ্চারণ করেছেন, তাঁদের যে দাবিগুলি গুঞ্জরিত হয়েছে, তাঁরা এই সংসদ ভবনে বসে যেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন অথবা করেননি, তাঁদের সেইসব ভাবনার অনুরণন এই সংসদ ভবনকে তীর্থক্ষেত্রে পরিণত করেছে, একটি স্পন্দিত, জাগ্রত স্থানে পরিণত করেছে। গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধা রয়েছে এমন প্রত্যেক মানুষ আজ থেকে ৫০ বছর পরেও যখন এই সংসদ ভবন দেখতে আসবেন, তখনও তাঁরা সেই অনুরণনকে অনুভব করবেন যে কখনও ভারতের আত্মার আওয়াজ এখানে গুঞ্জরিত হত।
আর সেজন্যই অধ্যক্ষ মহোদয়,
এটা সেই সংসদ ভবন যেখানে কখনও ভগৎ সিং, বটুকেশ্বর দত্তরা তাঁদের বীরত্ব, সামর্থ্য দিয়ে বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ভিত্তিকে নাড়িয়ে দিয়েছিলেন। দেশের স্বার্থে তাঁদের সেই বীরত্ব, তাঁদের সেই বোমার আওয়াজ এমনই ছিল যা এরপর থেকে ইংরেজ শাসকদের ঘুমোতে দেয়নি।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
এটা সেই সংসদ ভবন যেখানে পণ্ডিতজিকে আমাদের স্মরণ করতে হবে … তাঁর অনেক গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্যের জন্য স্মরণ করতে হবে। এই সংসদ ভবনে পণ্ডিত নেহরুর ‘অ্যাট দ্য স্ট্রোক অফ মিডনাইট’-এর ভাষণ আমাদের সবাইকে প্রেরণা যোগাতে থাকবে। আর এই সংসদেই অটলজি যা বলে গেছেন, সেসব কথা আজও এই সংসদে গুঞ্জরিত হয়। তিনি বলেছিলেন, ‘সরকারের পর সরকার আসবে, যাবে, রাজনৈতিক দল তৈরি হবে, ভাঙবে, কিন্তু এই দেশ যেন চলতে থাকে’।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
পণ্ডিত নেহরুজির প্রাথমিক মন্ত্রিসভার একজন সদস্য ছিলেন বাবাসাহেব আম্বেদকরজিও। তিনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ‘বেস্ট প্র্যাক্টিসেস’গুলিকে ভারতে চালু করার চেষ্টা করে গেছেন। কারখানা আইনে আন্তর্জাতিক পরিষেবা সামিল করার ক্ষেত্রে বাবাসাহেব আম্বেদকর সর্বাধিক আগ্রহী ছিলেন, আর এর পরিণামস্বরূপ আজ দেশ সুফল পাচ্ছে। বাবাসাহেব আম্বেদকরজি নেহরুজির সরকারের মন্ত্রী হিসেবে দেশকে ‘জলনীতি দিয়ে গেছেন। সেই ‘ওয়াটার পলিসি’ রচনায় স্বয়ং বাবাসাহেব আম্বেদকরজির অনেক বড় ভূমিকা ছিল।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
আমরা এটা জানি যে বাবাসাহেব আম্বেদকর একটি কথা প্রায়ই বলতেন যে ভারতে সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য দ্রুত শিল্পায়ন অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। কিন্তু দেশের দলিত ও পশ্চাৎপদ শ্রেণীর যে মানুষগুলির কাছে জমিই নেই, তাঁরা কী করবেন? শিল্পায়ন হওয়া উচিত। আর বাবাসাহেবের এই কথাকে মেনে পণ্ডিত নেহরুজির মন্ত্রিসভার আরও এক মন্ত্রী ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি, যিনি দেশের প্রথম বাণিজ্য ও শিল্পোদ্যোগ মন্ত্রী ছিলেন, তিনি দেশকে শিল্প নীতি’ দিয়ে গেছেন। তারপর থেকে আজ পর্যন্ত যত শিল্প নীতি রচিত হয়েছে তাতে রকমফের থাকলেও সেখানে প্রথম সরকারের আমলে রচিত সেই ‘শিল্প নীতি’র ছাপ থেকে যায়। সেজন্য তাঁদের এই গুরুত্বপূর্ণ অবদানকে মনে রাখতে হবে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
লালবাহাদুর শাস্ত্রীজি ১৯৬৫-র যুদ্ধে আমাদের দেশের সৈনিকদের উদ্বুদ্ধ করতে এই সংসদ ভবন থেকেই তাঁদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন, তাঁরা যেন নিজেদের সামর্থ্যকে সম্পূর্ণ রূপে দেশের স্বার্থে অর্পণ করেন। এই সংসদ ভবন থেকেই লাল বাহাদুর শাস্ত্রীজি প্রথম ‘সবুজ বিপ্লব’-এর শক্তিশালী ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
এই সংসদ ভবনে বসেই ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশের মুক্তি আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়েছিলেন। আবার এই সংসদ ভবনে বসেই জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে গণতন্ত্রের ওপর আঘাত হেনেছিলেন। তারপর এই সংসদ ভবনই ভারতের গণতন্ত্রের শক্তিকে অনুভবের মাধ্যমে শক্তিশালী গণতন্ত্র পুনঃস্থাপিত হতে দেখেছে। অর্থাৎ, এই সংসদ ভবন অনেক রাষ্ট্রীয় সঙ্কট যেমন দেখেছে, তেমনই তা থেকে উত্তরণের সামর্থ্যও দেখেছে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
এই সংসদ ভবন সব সময় আমাদের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী চরণ সিং-এর প্রতি ঋণী থাকবে, কারণ তিনিই প্রথম গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক স্থাপন করেছিলেন। এই সংসদেই জনগণের ভোটাধিকারের বয়স ২১ থেকে কমিয়ে ১৮ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে আর দেশের যুব প্রজন্মকে তাঁদের অবদান রাখার জন্য প্রেরিত করা হয়েছে, উৎসাহিত করা হয়েছে। আমাদের দেশ অনেক জোট সরকার দেখেছে। ভি পি সিং-জির নেতৃত্বে এবং চন্দ্রশেখরজির নেতৃত্বে জোট সরকারের উত্থান-পতনের সময় দীর্ঘকাল সীমাবদ্ধ অর্থনীতির বোঝা দেশকে নিমজ্জিত করে রেখেছিল। কিন্তু নরসীমা রাওয়ের নেতৃত্বাধীন সরকার সাহস করে পুরনো অর্থনীতিকে ত্যাগ করে নতুন পথ অনুসরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দেশ আজ তার সুফল পাচ্ছে।
আমরা এই সংসদ ভবনে অটল বিহারী বাজপেয়ীজির নেতৃত্বাধীন সরকারও দেখেছি। তাঁর আমলে চালু হওয়া ‘সর্বশিক্ষা অভিযান’ আজ দেশে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তাঁর আমলে শুরু হওয়া আদিবাসী কল্যাণ মন্ত্রক এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চল মন্ত্রক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর আমলেই যে পারমাণবিক পরীক্ষা হয়েছিল, তা ভারতের সামর্থ্যের পরিচায়ক হয়ে ওঠে। আর এই সংসদ ভবনই মনমোহনজির সরকারের আমলে ‘ক্যাশ ফর ভোট’-এর কাণ্ডও দেখেছে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ’-এর মন্ত্র, অনেক ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত, কয়েক দশক ধরে স্থগিত থাকা অনেক বিষয়ের স্থায়ী সমাধানও এই সংসদেই হয়েছে। এই সংসদ গর্বের সঙ্গে বলতে পারবে যে সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিল করার মতো কাজও এই কার্যকালেই হয়েছে। ‘এক দেশ এক কর ব্যবস্থা’ – জিএসটি-র সিদ্ধান্তও এই সংসদ নিয়েছে। প্রাক্তন সৈনিকদের ‘এক পদ, এক পেনশন’ – ওআরওপি চালু করার সিদ্ধান্তও এই সংসদ নিয়েছে। গরীবদের জন্য ১০ শতাংশ সংরক্ষণের সিদ্ধান্তও কোনরকম বিতর্ক ছাড়াই সর্বসম্মতিক্রমে এই সংসদই দেশকে উপহার দিয়েছে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
ভারতের গণতন্ত্রের অসংখ্য উত্থান-পতন আমরা দেখেছি, আর এই সংসদ গণতন্ত্রের শক্তি, গণতান্ত্রিক শক্তির সাক্ষী, গণ-বিশ্বাসের একটি কেন্দ্রবিন্দুও। এই সংসদের বৈশিষ্ট্য এমনই যা দেখে বিশ্বের অনেক মানুষ অবাক হয়ে যান যে এই সংসদে কখনও এমন সময় এসেছে যখন মাত্র চারজন সাংসদের দল ক্ষমতাসীন হয়েছে আর ১০০ সাংসদের দল বিপক্ষে বসতে বাধ্য হয়েছে। এটাও আমাদের গণতন্ত্রের একটি সামর্থ্য। এই সংসদ এরকম গণতন্ত্রের বহুবিধ শক্তির সঙ্গে পরিচয় করিয়েছে। এই সংসদেই মাত্র ১ ভোটে অটলজির নেতৃত্বাধীন সরকার পড়ে গিয়েছিল। আমি মনে করি এই ঘটনাও গণতন্ত্রের গরিমাকে বাড়িয়েছে। আজ অনেক ছোট ছোট আঞ্চলিক দলের প্রতিনিধিত্ব আমাদের দেশের বিবিধতাকে, আমাদের দেশের প্রত্যাশাকে তুলে ধরে। তাঁরা এক প্রকার আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
এ দেশে এমন দু’জন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন – মোরারজি দেশাই এবং ভি পি সিং-জি যাঁরা জীবনের অধিকাংশ সময় কংগ্রেস দলের সদস্য ছিলেন, কিন্তু কংগ্রেস বিরোধী সরকারের নেতৃত্ব দিয়েছেন। এটাও একটি বৈশিষ্ট্য। আর আমাদের নরসীমা রাওজি, তিনি তো সংসদ ছেড়ে বাড়ি ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, রাজনীতি থেকে সন্ন্যাস ঘোষণা করে দিয়েছিলেন। কিন্তু আমাদের এই গণতন্ত্রের শক্তি দেখুন যে তারপরেও তিনি প্রধানমন্ত্রী রূপে দেশকে পাঁচ বছর সেবা করেছেন।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
সকলের সম্মতিতে অনেক কঠিন কাজ সম্পন্ন হতে আমরা দেখেছি। ২০০০ সালে অটলজির নেতৃত্বাধীন সরকার এই সংসদের সর্বসম্মতিতে তিনটি নতুন রাজ্য গঠন করেছিল, আর অত্যন্ত উৎসাহ-উদ্দীপনার সঙ্গে সেই রাজ্যগুলি নিজেদের অস্তিত্ব প্রকাশ করেছিল। যখন ছত্তিশগড় রাজ্য তৈরি হয়, তখন ছত্তিশগড়ে যেমন উৎসব পালিত হয়েছে, মধ্যপ্রদেশেও তেমনই উৎসব পালিত হয়েছে। যখন উত্তরাখণ্ড রাজ্য তৈরি হয়, তখন সেই রাজ্যে যেমন উৎসব পালিত হয়েছে, তেমনই উত্তরপ্রদেশেও উৎসব পালিত হয়েছে। যখন ঝাড়খণ্ড রাজ্য তৈরি হয়, তখন ঝাড়খণ্ডেও যেমন উৎসব পালিত হয়েছে, বিহারেও তেমন উৎসব পালিত হয়েছে। সর্বসম্মতির আবহ গড়ে তুলে এভাবে কাজ করার সামর্থ্য আমাদের এই সংসদের রয়েছে। পাশাপাশি এই সংসদের কিছু তিক্ত স্মৃতিও রয়েছে। যেভাবে তেলেঙ্গানার অধিকারকে দাবিয়ে রাখার চেষ্টা হয়েছে, রক্তের নদী প্রবাহিত হয়েছে, আর তেলেঙ্গানা রাজ্য গড়ে ওঠার পরও সে রাজ্যে উৎসব পালিত হয়নি আর অন্ধ্রপ্রদেশেও উৎসব পালিত হয়নি। একটি তিক্ততার বীজ বপন করা হয়েছিল কিন্তু সর্বসম্মতিক্রমে এই কাজটি হলে, উৎসাহ ও উদ্দীপনার সঙ্গে তেলেঙ্গানা রাজ্য গড়ে উঠলে এতদিনে সেই রাজ্যটি নতুন উচ্চতায় পৌঁছে যেতে পারত।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
এই সংসদের পরম্পরা অনুসারে সংবিধান সভা সেই সময় দৈনিক ভাতা ৪৫ টাকা থেকে কমিয়ে ৪০ টাকা করে দিয়েছিল। কারণ, তাঁদের মনে হয়েছিল যে তাঁদের নিজেদের ভাতা কমানো উচিত।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
এই সংসদের ক্যান্টিনে যে ভর্তুকিতে সস্তায় খাবার পাওয়া যেত, এই সংসদের সমস্ত সদস্যরা সর্বসম্মতিক্রমে সেই ভর্তুকি সমাপ্ত করেছে, আর এখন তাঁরা পুরো টাকা দিয়ে ক্যান্টিনে খান।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
করোনাকালে যখন প্রয়োজন হয়েছে তখন আমাদের সাংসদরা এমপি ল্যাড তহবিল ছেড়ে দিয়েছেন। এভাবে তাঁরা দেশকে সেই সঙ্কট থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য অবদান রেখেছেন। শুধু তাই নয়, করোনাকালে এই সংসদ দেখেছে যে তার সাংসদরা তাঁদের বেতন থেকে ৩০ শতাংশ কাটিয়ে দেশবাসীকে সেই সঙ্কট থেকে উদ্ধার করার স্বার্থে দান করে অনেক বড় দায়িত্ব পালন করেছেন।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
আমরা গর্বের সঙ্গে বলতে পারি, এই সংসদে বসে আমরাও বলতে পারি, আমাদের আগে যাঁরা সংসদে বসতেন, তাঁরাও বলতে পারেন যে আমরাও নিজেদের ওপর নিয়মানুবর্তিতা চালু করার জন্য বিভিন্ন সময়ে জনপ্রতিনিধিত্ব আইনকে কঠোর করেছি, নতুন নতুন নিয়ম নিজেদের ওপর প্রয়োগ করেছি। আমি মনে করি, এটাই জীবন্ত গণতন্ত্রের একটা বড় উদাহরণ। সমস্ত মাননীয় সাংসদ, তা সে পুরনো প্রজন্মের সাংসদরা হোন কিংবা বর্তমান প্রজন্মের, তাঁদের এই অবদানের কথা আমাদের সকলকেই মনে রাখতে হবে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
আমরা যাঁরা বর্তমান সাংসদ তাঁরা অত্যন্ত সৌভাগ্যবান। তাঁদের জন্য এটা অত্যন্ত সৌভাগ্যের বিষয় যে তাঁরা ইতিহাস এবং ভবিষ্যৎ উভয়ের অংশ হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। গতকাল এবং আজকের সঙ্গে ভবিষ্যতকে যুক্ত করার সুযোগ আমরা পাচ্ছি। ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার জন্য নতুন বিশ্বাস, নতুন উদ্দীপনা, নতুন উৎসাহ নিয়ে আমরা এখান থেকে বিদায় নিতে চলেছি।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
আজকের দিনটি শুধু এবং শুধু এই সংসদ ভবনে যে সাড়ে সাত হাজার জনপ্রতিনিধি কাজ করে গেছেন, তাঁদের গৌরব গান করার দিন। এই দেওয়ালগুলি থেকে আমরা যে প্রেরণা পেয়েছি, যে নতুন বিশ্বাস পেয়েছি, সেই বিশ্বাসকে এখান থেকে আমরা নিয়ে যাব। এরকম অনেক বিষয়, এরকম অনেক কথা, সংসদে প্রত্যেকের হাততালির যোগ্য ছিল। কিন্তু হয়তো রাজনীতি মাঝখানে আসায় আমরা তাঁদের হাততালি দিয়ে প্রশংসা করতে পারিনি। নেহরুজির অবদানের গৌরব গান যদি এই সংসদে হয়, তখন এখানে এমন কে রয়েছেন যাঁর হাততালি দেওয়ার ইচ্ছা করবে না? কিন্তু তা সত্ত্বেও দেশের গণতন্ত্রের স্বার্থে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় আমরা যেন প্রত্যেকেই আশা নিয়ে কাজ করি। মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে আপনার নেতৃত্বে, আপনার নির্দেশ অনুসারে আর মাননীয় অভিজ্ঞ সাংসদদের সামর্থ্যে আমরা যখন নতুন সংসদ ভবনে যাব, তখন এখান থেকে নতুন বিশ্বাসও নিয়ে যাব।
আজকের সারা দিন আপনাদের সবাই পুরনো স্মৃতি তাজা করার জন্য রেখেছেন, একটি সুস্থ আবহে সবাইকে স্মরণ করার সুযোগ দিয়েছেন। সেজন্য আমি আপনাদের সবাইকে আরও একবার হৃদয় থেকে কৃতজ্ঞতা জানাই। আর আমি সমস্ত সদস্যদের অনুরোধ জানাই যে আপনাদের জীবনের সুখস্মৃতিগুলি অবশ্যই এখানে তুলে ধরুন যাতে তা দেশবাসীর কাছে পৌঁছয় আর তাঁরা অনুভব করেন যে প্রকৃতই আমাদের সংসদে যাঁদেরকে পাঠাই, যাঁরা আমাদের জনপ্রতিনিধি, তাঁদের সমস্ত কর্মকাণ্ড প্রকৃত অর্থে দেশের জন্য সমর্পিত। এই মনোভাব যেন জনগণের কাছে পৌঁছয় সেই প্রত্যাশা নিয়ে আরও একবার এই মাটিকে প্রণাম জানাই, এই সংসদকে প্রণাম জানাই। ভারতের যে শ্রমিকদের পরিশ্রমে এই ভবনের দেওয়ালগুলি গড়ে উঠেছে, তার প্রত্যেকটি ইঁটকে প্রণাম জানাই। আর বিগত ৭৫ বছরে ভারতের গণতন্ত্রকে নতুন সামর্থ্য ও শক্তি প্রদানকারী প্রত্যেক গুরুকে, সেই নাদ ব্রহ্মকে প্রণাম জানিয়ে আমার বক্তব্য শেষ করছি ।
অনেক অনেক ধন্যবাদ!