আমার মন্ত্রিসভার সদস্যবৃন্দ, শ্রী গিরিরাজ সিং জি, শ্রী অর্জুন মুন্ডা জি, শ্রী মনসুখ মাণ্ডব্য জি এবং দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিপুল সংখ্যায় আসা বোনেরা। ভিডিওর মাধ্যমেও এই অনুষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন দেশের লক্ষ লক্ষ নারী। এই প্রেক্ষাগৃহের চারদিকে তাকিয়ে আমার মনে হচ্ছে, এটা যেন ক্ষুদ্র ভারত। দেশের সমস্ত প্রান্তের এবং ভারতের সমস্ত ভাষাভাষী মানুষের এখানে প্রতিনিধিত্ব রয়েছে। আমি আপনাদের সবাইকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাই!
নারী ক্ষমতায়নে আজকের এই অনুষ্ঠান এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত। নমো ড্রোন দিদি কর্মসূচির অধীনে মহিলাদের স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে আমি ১ হাজার আধুনিক ড্রোন প্রদান করেছি। বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে দেশের ১ কোটির বেশি বোনকে ‘লাখপতি দিদি’-তে পরিণত করেছি। এটি একটি ক্ষুদ্র পদক্ষেপ মাত্র। কিছুক্ষণ আগে ১ বোনের সাথে কথা বলেছি। তিনি গর্বের সঙ্গে জানিয়েছেন, প্রতি মাসে ব্যবসার মাধ্যমে তিনি ৬০,০০০ থেকে ৮০,০০০ টাকা আয় করেন। তাঁর এই দৃষ্টান্তকে সামনে তুলে ধরে আমরা দেশের তরুণ প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করতে পারি। আমি ৩ কোটি ‘লাখপতি দিদি’ তৈরির অঙ্গীকার করেছি। এই সব নারীদের অ্যাকাউন্টে আজ ১০,০০০ কোটি টাকা হস্তান্তর করা হয়েছে।
মা ও বোনেরা,
যে কোন দেশ বা সমাজে অগ্রগতি তখনই সম্ভব, যখন সেখানে মহিলাদের মর্যাদা বৃদ্ধি এবং তাঁদের নতুন নতুন সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হয়। দুঃখজনকভাবে আমাদের পূর্বতন সরকার এই বিষয়গুলিকে অগ্রাধিকার দেয়নি। আমিই হলাম দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী, যিনি মা ও বোনেদের জন্য শৌচাগার এবং তাঁদের দৈনন্দিন জীবনের কষ্টের কথা ভেবেছেন। আমিই হলাম প্রথম প্রধানমন্ত্রী, যিনি কাঠের উনুনে রান্নার ফলে মহিলাদের স্বাস্থ্যজনিত বিপদের কথা ভেবেছেন। আমিই প্রথম প্রধানমন্ত্রী, যিনি প্রত্যেক মহিলার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন।
বন্ধুগণ,
একেবারে তৃণমূল স্তরের অভিজ্ঞতা থেকেই মোদীর এই উপলব্ধি এবং নীতিবোধ গড়ে উঠেছে। তাই মা, বোন এবং অন্যদের চ্যালেঞ্জ দূর করার লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।
আমার মা ও বোনেরা,
নারী ক্ষমতায়নের নামে আমাদের পূর্ববর্তী সরকারগুলি একটি বা দুটি প্রকল্প চালু করেছিল। ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার পর আমরা বৈপ্লবিক দৃষ্টিভঙ্গী গ্রহণ করি। নারীর জীবনচক্রের প্রতিটি স্তরের কথা ভেবে বিভিন্ন প্রকল্প সফলভাবে রূপায়িত করি। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত একজন নারীর সেবায় বিভিন্ন ধরনের প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। গর্ভাবস্থায় সঠিক পুষ্টির জন্য প্রত্যেক নারীকে ৬,০০০ টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। কন্যাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের লক্ষ্যে আকর্ষণীয় সুদে সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনা চালু করা হয়েছে। মুদ্রা যোজনার মাধ্যমে তাঁদের ব্যবসায়িক কাজে পর্যাপ্ত সাহায্য করা হচ্ছে। মাতৃত্বকালীন ছুটির মেয়াদ বাড়িয়ে আমরা ২৬ সপ্তাহ করেছি। আয়ুষ্মান যোজনায় ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনা খরচে চিকিৎসা ব্যবস্থা করেছি। জন ঔষধি কেন্দ্রগুলিতে ৮০ শতাংশ ছাড়ে ওষুধের ব্যবস্থা করা হয়েছে, যার মাধ্যমে আমাদের মা, বোন এবং কন্যারা উপকৃত হচ্ছেন।
মা ও বোনেরা,
মোদী চ্যালেঞ্জ নিতে ভয় পায় না। আমি মনে করি, ভারতের মহিলাদের ক্ষমতায়ন করতে গেলে, তাঁদের অবশ্যই আর্থিক ক্ষেত্রে অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে। এতদিন জমি, দোকান বা বাড়ির মালিকানা পুরুষদের হাতে ছিল। পিএম আবাস যোজনায় এখন মহিলাদেরও বাড়ির মালিকানা দেওয়া হচ্ছে। আমাদের কন্যা এবং বোনেদের ড্রোন প্রযুক্তির সঙ্গেও যুক্ত করা হয়েছে। আধুনিক ড্রোনের মাধ্যমে আমাদের বোনেরা চাষাবাদের ক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তির প্রয়োগ ঘটাচ্ছেন। মন কি বাত অনুষ্ঠানে আমি একজন ড্রোন দিদির সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পেয়েছিলাম। তিনি জানিয়েছিলেন, গোটা দিন ধরে বিভিন্ন কাজের মাধ্যমে তিনি ভালো অর্থ উপার্জন করেন। আগে তিনি সাইকেলও চালাতে পারতেন না। এখন ড্রোন চালাতে পারেন। গ্রামের লোক তাঁকে পাইলট হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন।
বন্ধুগণ,
ড্রোন প্রযুক্তির ব্যবহার আগামী দিনে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে। ওষুধপত্র সরবরাহ থেকে শুরু করে ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহের ক্ষেত্রে ড্রোন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে।
মা ও বোনেরা,
মহিলাদের স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলি নারী ক্ষমতায়নে নতুন ভাবনার জন্ম দিয়েছে। তাঁদের পরিশ্রমী উদ্যোগ দেশ গড়ার কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিচ্ছে। এই ধরনের গোষ্ঠীতে যুক্ত হওয়া নারীর সংখ্যা ১০ কোটি ছা়ড়িয়ে গিয়েছে। গত ১০ বছরে আমাদের সরকার শুধু স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির অগ্রগতিই ত্বরান্বিত করেনি, সেইসঙ্গে তাঁদের ৯৮ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় ১০০ শতাংশ ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট চালু করেছে। এছাড়া স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির জন্য আর্থিক সহায়তার পরিমাণ ৮ লক্ষ কোটি থেকে বাড়িয়ে ২০ লক্ষ কোটি টাকা করা হয়েছে। গ্রামাঞ্চলে রাস্তা ও সড়কের উন্নতির ফলে এই গোষ্ঠীগুলির সুযোগ-সুবিধা বেড়ে গিয়েছে। এখন লাখপতি দিদিরা সহজেই তাঁদের পণ্য শহরে বিক্রি করতে পারেন। গত ৫ বছরে স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির আয় ৩ গুণ বেড়ে গিয়েছে।
বন্ধুগণ,
গ্রামাঞ্চলগুলিতে এখন নতুন নতুন সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে। হাজার হাজার ব্যাঙ্ক সখী, কৃষি সখী, পশু সখী, মৎস্য সখী এবং দিদিরা তাঁদের পরিষেবা প্রদান করছেন। দিদিরা স্বাস্থ্য পরিষেবা থেকে বিভিন্ন জাতীয় উদ্যোগকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী গ্রামীণ ডিজিটাল সাক্ষরতা অভিযানে সুবিধাপ্রাপকদের মধ্যে ৫০ শতাংশের বেশি মহিলা।
এছাড়া, আমি দেখেছি যে, বহু বোন, স্বনির্ভর গোষ্ঠী বিভিন্ন উদ্যোগের পাশাপাশি তাঁদের নিজেদের গ্রামে ব্যবসার সঙ্গেও যুক্ত হয়েছেন। তাঁরা ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করছেন এবং অন্য স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে উৎসাহিত করছেন। পড়ুয়াদের শিক্ষায় সহায়তা করছেন। আমি দেখেছি, কিছু কিছু বিদ্যালয়ে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর এইসব মহিলাদের বক্তব্য পেশের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়। সেখানে তাঁরা তাঁদের সাফল্যের রহস্য তুলে ধরছেন এবং শিক্ষক ও পড়ুয়ারা আগ্রহের সঙ্গে তা শুনছেন।
আমি ‘পিএম সূর্যঘর’ প্রকল্প চালু করেছি। এই প্রকল্পের উল্লেখযোগ্য দিক হল, বিনামূল্যে বিদ্যুৎ। আপনারা কি এই কাজ করতে পারবেন না? প্রতিটি বাড়ির ছাদে সৌর প্যানেল বসানো উচিত, যার মাধ্যমে সূর্য থেকে বিদ্যুৎ তৈরি হবে এবং তা বাড়ির কাজে ব্যবহার করা হবে। খুব কম সংখ্যক বাড়িতেই ৩০০ ইউনিটের বেশি বিদ্যুৎ খরচ হয়ে থাকে। যদি বিদ্যুৎ খরচ ৩০০ ইউনিটের মধ্যে রাখা যায়, তাহলে বিদ্যুৎ বিল পুরোপুরি শূন্যে নেমে আসবে। আপনি অতিরিক্ত যে বিদ্যুৎ উৎপাদন করবেন, তা সরকার কিনে নেবে। এর ফলে আমাদের বোন এবং তাঁদের পরিবারের সদস্যদের অতিরিক্ত আয়ের সংস্থান হবে।
আপনি আপনার বাড়ির কাছাকাছি কোনো সাধারণ গ্রাহক কেন্দ্রে গিয়ে আবেদন জানাতে পারেন। স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সব বোনদের কাছে এই প্রকল্পের সুবিধা নেওয়ার জন্য আবেদন জানাচ্ছি। দেখুন, আমাদের বোনেরা বিদ্যুৎ-সম্পর্কিত কাজকর্ম সম্পন্ন করতে পারেন। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, যখন প্রত্যেক বাড়িতে বিদ্যুৎ বিল শূন্য আসবে, তখন তাঁরা আশীর্বাদ করবেন এবং যে টাকা তাঁরা বাঁচাবেন, তা কি তাঁদের পরিবারের উপকার করেনি? আমি এই শূন্য বিদ্যুৎ বিলের প্রচারকে এগিয়ে নিয়ে যেতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। আমি আবার আপনাদের শুভেচ্ছা জানাই। আপনাদের অসংখ্য ধন্যবাদ।
প্রধানমন্ত্রী মূল ভাষণটি দিয়েছেন হিন্দিতে।