নমস্কার,
বন্ধুগণ,
বৈশাখী অভিনন্দন! এই পুণ্যলগ্নে কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে ৭০ হাজারেরও বেশি যুবক-যুবতী চাকরি পেলেন। তাঁদের অভিনন্দন জানাই।
বন্ধুগণ,
যুবসমাজের সামনে সম্ভাবনার দরজা খুলে দিয়ে বিকশিত ভারতের লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে চাই আমরা। কেন্দ্রীয় সরকার ছাড়াও বিজেপি শাসিত বিভিন্ন রাজ্যে কর্মসংস্থানে গতি এসেছে। গতকালই মধ্যপ্রদেশে ২২ হাজার শিক্ষক চাকরি পেয়েছেন।
বন্ধুগণ,
ভারত বিশ্বের দ্রুততম অর্থনীতির দেশ। কোভিড পরবর্তী পর্যায়ে সারা বিশ্ব মন্দার মুখোমুখী। ভারত এক্ষেত্রে এক উজ্জ্বল ব্যতিক্রম। সরকারের নতুন নানা নীতির ফলে নতুন ভারতে উন্মুক্ত হচ্ছে একের পর এক সম্ভাবনার পরিসর। ২০১৪ সাল থেকে এক্ষেত্রে কর্মতৎপরতা অনেক বেড়েছে। একবিংশ শতকের তৃতীয় দশকে কর্মসংস্থান এবং স্বনিযুক্তির যে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, তা আগে কল্পনাও করা যেত না। স্টার্টআপ – এর কথাই ধরা যাক। এই বিষয়টিতে ভারতের যুবক-যুবতীদের মধ্যে দারুণ উৎসাহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ৪০ লক্ষ প্রত্যক্ষ ও অপ্রত্যক্ষ কর্মসংস্থান সম্ভব হয়েছে স্টার্টআপ-গুলির কল্যাণে। একই কথা প্রযোজ্য ড্রোন শিল্প, কৃষি, প্রতিরক্ষা সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে। দেশের ক্রীড়া ক্ষেত্র বিগত ৮-৯ বছরে যেভাবে উজ্জীবিত হয়ে উঠেছে, তা নিশ্চয়ই আপনারা প্রত্যক্ষ করেছেন। তৈরি হচ্ছে একের পর এক নতুন স্টেডিয়াম ও ক্রীড়া অনুশীলন কেন্দ্র। দরকার আরও প্রশিক্ষক, প্রযুক্তি কুশলী এবং সহায়ক কর্মীর।
বন্ধুগণ,
‘স্বদেশী’ এবং ‘ভোকাল ফর লোকাল’-ই আত্মনির্ভর ভারত অভিযানের শেষ কথা নয়। এখানে অন্যতম লক্ষ্য হ’ল – গ্রাম থেকে শহর সর্বত্র নতুন কাজের সুযোগ সৃষ্টি করা। আধুনিক কৃত্রিম উপগ্রহ থেকে সেমি-হাইস্পীড ট্রেন সবই আজ তৈরি হচ্ছে ভারতে। বিগত ৮-৯ বছরে দেশে তৈরি হয়েছে ৩০ হাজার নিরাপদ এলএইচবি কোচ। খেলনা শিল্পের উদাহরণ দেওয়া যাক। দশকের পর দশক ধরে ভারতের শিশুরা আমদানি করা খেলনাতে অভ্যস্ত ছিল। সেইসব খেলনার গুণমান ভালো ছিল না। ভারতীয় শিশুদের কথা মাথায় রেখে সেইসব তৈরিও হয়নি। কিন্তু, এখন ছবিটা বদলেছে। প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের ক্ষেত্রে দেশ অনেকটাই আমদানির উপর নির্ভরশীল ছিল - এক্ষেত্রেও পরিস্থিতি বদলেছে। আজ ভারত বরং বিভিন্ন দেশে ১৫ হাজার কোটি টাকার প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম রপ্তানি করছে।
বন্ধুগণ,
একটা কথা ভুললে চলবে না। ২০১৪ সালে আমরা ক্ষমতাসীন হওয়ার সময় ভারতে ব্যবহৃত মোবাইল ফোনগুলির বেশিরভাগই ছিল আমদানি করা। পরিস্থিতি তেমন থাকলে আজ বিদেশি মুদ্রায় আমাদের অনেক টাকা খরচ করতে হ’ত। সৌভাগ্যবশত, এক্ষেত্রেও এসেছে পরিবর্তন। আমরা এখন মোবাইল ফোন রপ্তানি করছি।
বন্ধুগণ,
কর্মসংস্থানের প্রশ্নে একটি বড় দিক হ’ল পরিকাঠামো খাতে সরকারের বিনিয়োগ। মূলধনী খাতে সরকারের ব্যয় বৃদ্ধি পেলে তৈরি হয় নতুন সড়ক, রেলপথ কিংবা বন্দর। ফলে, চাহিদা বাড়ে ইঞ্জিনিয়ার, প্রযুক্তি কৌশলী, হিসাব রক্ষক, শ্রমিক – সবধরনের মানুষের। গত ৮-৯ বছরে মূলধনী খাতে সরকারের ব্যয় চার গুণ বেড়েছে। ভারতীয় রেলের কথাই ধরা যাক। ২০১৪’র আগে দেশে প্রায় ২০ হাজার কিলোমিটার রেলপথ বিদ্যুৎ চালিত ছিল। গত ৯ বছরে প্রায় ৪০ হাজার কিলোমিটার রেলপথের বৈদ্যুতিকীকরণ হয়েছে। ২০১৪ সালের আগে এক মাসে গড়ে মাত্র ৬০০ মিটার নতুন মেট্রো লাইন পাতা হ’ত। আজ প্রতি মাসে গড়ে ৬ কিলোমিটার মেট্রো রেলপথের কাজ সম্পন্ন হচ্ছে। ২০১৪’য় ৭০টিরও কম জেলায় রান্নার গ্যাসের সংযোগ ছিল। আজ তা আছে ৬৩০টি জেলায়। গ্রামীণ এলাকায় সড়কের মোট দৈর্ঘ্য ২০১৪’র ৪ লক্ষ কিলোমিটার থেকে বেড়ে আজ ৭.২৫ লক্ষ কিলোমিটারে দাঁড়িয়েছে।
বন্ধুগণ,
উড়ান ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। দেশে বিমানবন্দরের সংখ্যা ৭৪ থেকে বেড়ে হয়েছে ১৪৮। স্বাভাবিকভাবেই বেড়েছে কাজের সুযোগ। আপনারা দেখেছেন, রেকর্ড সংখ্যক বিমান কেনার বরাত দিয়েছে এয়ার ইন্ডিয়া। বন্দর ক্ষেত্রের চিত্রটাও একই রকম। সমুদ্র উপকূল এবং দেশের বন্দরগুলির উন্নয়নের ফলে বন্দরে পণ্য ওঠা-নামা দ্বিগুণ হয়েছে, সময়ও লাগছে অনেক কম – অর্ধেক।
বন্ধুগণ,
কর্মসংস্থানের প্রসারে প্রশ্নে বড় একটি উদাহরণ হয়ে উঠছে স্বাস্থ্য ক্ষেত্র। দেশে মেডিকেল কলেজের সংখ্যা ২০১৪’য় ছিল ৪০০রও কম। আজ দেশে ৬৬০টি মেডিকেল কলেজ রয়েছে। ডাক্তারি পড়ুয়াদের আসন সংখ্যা ৫০ হাজার থেকে বেড়ে ১ লক্ষ ছাড়িয়েছে। আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের কল্যাণে দেশে তৈরি হচ্ছে একের পর এক নতুন হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কেন্দ্র।
বন্ধুগণ,
গ্রামীণ অর্থনীতির বিকাশে সরকার দায়বদ্ধ। স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে দেওয়া হচ্ছে কোটি কোটি টাকার আর্থিক সাহায্য। কৃষি পণ্য সংরক্ষণের ব্যবস্থাও আরও জোরদার হয়ে উঠছে। গ্রামে গ্রামে বাড়ছে অপ্টিকাল ফাইবার সংযোগ। বিগত কয়েক বছরে শৌচালয় নির্মাণ, স্বাস্থ্য ও কল্যাণ কেন্দ্র গঠন কিংবা পঞ্চায়েত ভবন নির্মাণের উদ্যোগে কাজ পেয়েছেন গ্রামের লক্ষ লক্ষ মানুষ।
বন্ধুগণ,
ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের পাশে দাঁড়িয়ে এবং ঔদ্যোগীকতার প্রসার ঘটিয়ে সরকার স্বনিযুক্তির পালে হাওয়া লাগিয়েছে। বিগত ৮ বছরে প্রধানমন্ত্রী মুদ্রা যোজনার আওতায় ব্যাঙ্ক গ্যারান্টি ছাড়াই ২৩ লক্ষ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে। এর ৭০ শতাংশই পেয়েছেন মহিলারা। এই প্রকল্প ৮ কোটি নতুন উদ্যোগপতি তৈরি করেছে।
বন্ধুগণ,
আজ যাঁরা নিয়োগপত্র হাতে পাচ্ছেন, আমি তাঁদের কয়েকটি পরামর্শ দিতে চাই। ২০৪৭ সালে এই দেশের স্বাধীনতার ১০০ বছর পূর্ণ হবে। উন্নত দেশ গঠনের লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে হবে দ্রুতগতিতে। কাজেই আপনাদের কাঁধে অনেকটাই গুরু দায়িত্ব।
আরেকটি কথা, কঠোর পরিশ্রম করে সাফল্য পেয়েছেন আপনারা। কিন্তু, সরকারি চাকরি পাওয়ার পর শেখার কাজ থামিয়ে দেবেন না। আপনাদের দক্ষতা বিকাশে সহায়তা করতে রয়েছে আইগট কর্মযোগী মঞ্চ। আমি নিজে সবসময় নতুন কিছু শিখতে চাই। আপনাদের জীবনে নতুন এক অধ্যায় শুরু হতে চলেছে। আমার শুভেচ্ছা রইল
(প্রধানমন্ত্রীর মূল ভাষণটি হিন্দিতে ছিল)