ভারতমাতার জয়!
ভারতমাতার জয়!
ভারতমাতার জয়!
তামিলনাড়ুর রাজ্যপাল শ্রী আর এন রবিজি, মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিনজি, কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় আমার সহকর্মী জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়াজি এবং ভূমিপুত্র এল মুরুগনজি, তামিলনাড়ু সরকারের মন্ত্রীরা, সাংসদ, বিধায়ক এবং তামিলনাড়ুতে বসবাসকারী আমার পরিবারের সদস্যবৃন্দ!
ভনক্কম (নমস্কার)!
২০২৪ সাল প্রত্যেকের জীবনে শান্তি ও সমৃদ্ধি নিয়ে আসুক, এই প্রার্থনা করি। ২০২৪-এ আমার প্রথম জনসমাবেশ তামিলনাড়ুতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যা দারুণ এক বিষয়। আজ যে উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলির এখানে উদ্বোধন ও শিলান্যাস হবে তার মোট মূল্য প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা। এই প্রকল্পগুলি রাজ্যের উন্নয়নে গতি আনবে। সড়ক, রেল, বন্দর, বিমানবন্দর, জ্বালানি এবং পেট্রোলিয়াম পাইপলাইন সংক্রান্ত এই প্রকল্পগুলির জন্য আপনাদের অভিনন্দন জানাই। এই প্রকল্পগুল বাস্তবায়িত হলে যোগাযোগ ব্যবস্থায় উন্নতি ঘটবে, ফলস্বরূপ হাজার হাজার কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
বন্ধুগণ,
২০২৩-এর শেষ কয়েকটি সপ্তাহ তামিলনাড়ুর জনসাধারণের জন্য কষ্টকর ছিল। প্রবল বর্ষণের কারণে আমরা আমাদের অনেক সহ-নাগরিককে হারিয়েছি। প্রচুর সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে বিপর্যস্ত পরিবারগুলির দুর্দশার খবরে আমি মর্মাহত। সঙ্কটের এই সময়ে কেন্দ্রীয় সরকার তামিলনাড়ুর পাশে রয়েছে। রাজ্য সরকারকে আমরা সম্ভাব্য সব ধরনের সহায়তা করব। এছাড়াও, দিনকয়েক আগেই আমরা থিরু বিজয়কান্তজিকে হারিয়েছি। তিনি শুধু চলচ্চিত্র জগতের ক্যাপ্টেনই ছিলেন না, তিনি ছিলেন রাজনীতিরও ক্যাপ্টেন। চলচ্চিত্র জগতে কাজের মাধ্যমে তিনি মানুষের হৃদয় জয় করেছেন। রাজনীতিবিদ হিসেবে তিনি সর্বদাই জাতীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়ে এসেছেন। তাঁকে আমি শ্রদ্ধা জানাই। তাঁর পরিবার-পরিজন এবং গুণমুগ্ধ ভক্তদের প্রতি আমার সমবেদনা রইল।
বন্ধুগণ,
আজ যখন আমি এখানে উপস্থিত হয়েছি, তখন তামিলনাড়ুর আরও একজন সন্তান - ডঃ এম এস স্বামীনাথনজির কথাও মনে পড়ছে। আমাদের দেশের খাদ্য সুরক্ষাকে নিশ্চিত করতে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। গত বছর আমরা তাঁকেও হারিয়েছি।
আমার প্রিয় তামিল পরিবারের সদস্যবৃন্দ,
আগামী ২৫ বছর হল ‘আজাদি কা অমৃতকাল’-এর সময়। এই সময়ে ভারতকে এক উন্নত রাষ্ট্রে আমাদের পরিণত করতে হবে। যখন আমি উন্নত ভারতের কথা বলি, তখন সেটি আর্থিক এবং সাংস্কৃতিক – দুটি দিকের কথাই ভেবে বলি। এই যাত্রায় তামিলনাড়ুর একটি বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। তামিলনাড়ু, ভারতের সাংস্কৃতিক সমৃদ্ধি ও ঐতিহ্যের প্রতীক। এই রাজ্য তামিল ভাষার আঁতুড়ঘর। সন্ত থিরুভাল্লুভার থেকে সুব্রহ্মনিয়ম ভারতী - অগণিত সাধু-সন্ত এবং পণ্ডিত ব্যক্তিরা অসাধারণ সব সাহিত্য চর্চা করেছেন। সি ভি রমন থেকে বর্তমান যুগের বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক এবং প্রযুক্তি ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞরা এই মাটি থেকে উঠে এসেছেন। তাই, তামিলনাড়ুতে আমি যতবার সফর করি, প্রত্যেকবারই নতুন এক উদ্দীপনা সঙ্গে নিয়ে ফিরে যাই।
আমার প্রিয় পরিবারের সদস্যবৃন্দ,
তিরুচিরাপল্লি শহর বর্ণময় ইতিহাসের প্রতিটি স্তরকে তুলে ধরে। এখানে পল্লব, চোল, পাণ্ডিয়া এবং নায়ক যুগের সুপ্রশাসনের ছবি পাওয়া যায়। আমার অনেক তামিল বন্ধুর সঙ্গে ব্যক্তিগত যোগাযোগ থাকার সুবাদে আমি তামিল সংস্কৃতির প্রকৃত স্বাদ আস্বাদন করতে পেরেছি। তাই, যখনই আমি পৃথিবীর নানা প্রান্ত সফর করি, তখনই তামিলনাড়ুর প্রসঙ্গ তুলে ধরি।
বন্ধুগণ,
ভারতের উন্নয়ন এবং ঐতিহ্য রক্ষার ক্ষেত্রে তামিলনাড়ুর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের থেকে আমি সর্বদাই অনুপ্রাণিত হই। দিল্লির নতুন সংসদ ভবনে পবিত্র ‘সেঙ্গল’ স্থাপনের মধ্য দিয়ে তামিলনাড়ুর সুপ্রশাসনকে মান্যতা দেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে সারা দেশ অনুপ্রাণিত হবে। কাশী-তামিল সঙ্গমম এবং সৌরাষ্ট্র-তামিল সঙ্গমম-এর উদ্দেশ্যও একই। এই কর্মসূচিগুলির মাধ্যমে দেশজুড়ে তামিল ভাষা এবং সংস্কৃতির প্রতি আগ্রহ প্রতিফলিত হয়।
প্রিয় পরিবারের সদস্যবৃন্দ,
বিগত ১০ বছরে আধুনিক পরিকাঠামোর জন্য ভারতে বিপুল পরিমাণে বিনিয়োগ হয়েছে। সড়ক, রেলপথ, বন্দর, বিমানবন্দর, পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়ের জন্য আবাসন অথবা স্বাস্থ্যক্ষেত্র – ভারত সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রগুলির পরিকাঠামোর জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করেছে। আজ আন্তর্জাতিক স্তরে বিশ্বের প্রথম পাঁচটি অর্থনৈতিক শক্তির মধ্যে ভারত একটি, যার মধ্য দিয়ে নতুন আশার সঞ্চার হচ্ছে। বড় বড় আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীরা ভারতে প্রচুর পরিমাণে বিনিয়োগ করছেন। তামিলনাড়ু এবং রাজ্যের জনসাধারণ প্রত্যক্ষভাবে এই বিনিয়োগগুলির সুফল পাচ্ছেন। ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ উদ্যোগের প্রথম সারির দূত হিসেবে তামিলনাড়ু আত্মপ্রকাশ করেছে।
প্রিয় পরিবারের সদস্যবৃন্দ,
আমাদের সরকার রাজ্যের উন্নয়নের মাধ্যমে দেশের উন্নয়নের নীতিতে বিশ্বাসী। গত বছর ৪০ জনের বেশি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এই রাজ্যে ৪০০ বারের বেশি সফর করেছেন। তামিলনাড়ুর দ্রুত উন্নয়ন সার্বিকভাবে দেশের উন্নয়নে সহায়ক হয়ে উঠেছে। উন্নয়ন, ব্যবসা-বাণিজ্য এবং জনসাধারণের সুবিধার ক্ষেত্রে যোগাযোগ ব্যবস্থা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তিরুচিরাপল্লিতে আজ উন্নয়নের সেই ধারাই প্রতিফলিত হচ্ছে। ত্রিচি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নতুন টার্মিনালের ফলে এখানে যাত্রী ওঠা-নামার ক্ষমতা তিনগুণ বৃদ্ধি পাবে। এর ফলে পূর্ব এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য এবং দেশ-বিদেশের বিভিন্ন জায়গার সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও সুগম হবে। এর ফলে নতুন নতুন ক্ষেত্রে বিনিয়োগ হবে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং পর্যটনের মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রের ব্যবসা-বাণিজ্য উপকৃত হবে। বিমানবন্দরের ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি, উড়ালপুলের মাধ্যমে বিমানবন্দরের সঙ্গে জাতীয় সড়কের যোগাযোগ ঘটবে। এর ফলে, জনসাধারণ সুবিধা হবে। ত্রিচি বিমানবন্দরে স্থানীয় শিল্প, সংস্কৃতি এবং তামিল ঐতিহ্য সারা বিশ্বের কাছে প্রদর্শিত হচ্ছে, যা দারুণ এক বিষয়।
প্রিয় পরিবারের সদস্যবৃন্দ,
আজ এখানে তামিলনাড়ুর রেল যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করে তোলার জন্য পাঁচটি প্রকল্পের সূচনা হয়েছে। এই উদ্যোগগুলি সহজে যাতায়াতের পক্ষে যেমন সহায়ক হবে, পাশাপাশি এই অঞ্চলে শিল্প এবং বিদ্যুতের উৎপাদনের ক্ষেত্রেও ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে। যে সড়ক প্রকল্পগুলির উদ্বোধন করা হল তার ফলে শ্রীরঙ্গম, চিদাম্বরম, মাদুরাই, রামেশ্বরম এবং ভেল্লোরের মতো শহরগুলির সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি ঘটবে। এর ফলে, পর্যটন এবং আধ্যাত্মিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলগুলির মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হবে। ফলস্বরূপ, সাধারণ মানুষ এবং তীর্থযাত্রী - সকলেই উপকৃত হবেন।
প্রিয় পরিবারের সদস্যবৃন্দ,
গত এক দশক ধরে কেন্দ্রীয় সরকার বন্দরগুলির উন্নয়নের জন্য বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। আমরা উপকূলবর্তী অঞ্চলের পরিকাঠামোর উন্নয়ন এবং মৎস্যজীবীদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে বিপুল উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। মৎস্যচাষের জন্য এই প্রথম পৃথক একটি মন্ত্রক তৈরি করা হয়েছে। এর ফলে সেখানে আলাদাভাবে বাজেট বরাদ্দ করা হচ্ছে। গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়ার নৌকাগুলির আধুনিকীকরণের জন্য সরকার সব ধরনের সহায়তা প্রদান করছে। ‘পিএম মৎস্যসম্পদ যোজনা’য় মৎস্যচাষের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।
প্রিয় পরিবারের সদস্যবৃন্দ,
‘সাগরমালা’ প্রকল্পের আওতায় তামিলনাড়ু সহ দেশের বিভিন্ন বন্দরগুলিতে উন্নত সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকারের এই উদ্যোগগুলির মাধ্যমে ভারতের বন্দরগুলির ক্ষমতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলস্বরূপ, জাহাজগুলি খুব কম সময়ের মধ্যে পণ্য ওঠানো-নামানোর কাজ করতে পারছে। আজ দেশের দ্রুততম উন্নয়নশীল বন্দরগুলির মধ্যে কামরাজার বন্দর স্থান করে নিয়েছে। আমাদের সরকার এই বন্দরের ক্ষমতা প্রায় দ্বিগুণ করেছে। জেনারেল কার্গোর দ্বিতীয় বার্থ এবং পঞ্চম পর্যায়ের ড্রেজিং-এর কাজ শুরু হওয়ার ফলে রাজ্যের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বৃদ্ধি পাবে। ফলস্বরূপ, গাড়ি শিল্প বিশেষভাবে উপকৃত হবে। পারমাণবিক রিঅ্যাক্টর এবং গ্যাস পাইপলাইনগুলি শিল্পায়নে সহায়ক হবে। এর ফলে তামিলনাড়ুতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
প্রিয় পরিবারের সদস্যবৃন্দ,
বর্তমানে তামিলনাড়ুর উন্নয়নের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার যে অর্থ বিনিয়োগ করছে তা আগে কখনও করা হয়নি। আমাদের সরকার গত এক দশকে এই রাজ্যের জন্য ১২০ লক্ষ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। ২০১৪ সালের আগের ১০ বছরের তুলনায় আমাদের সরকার তামিলনাড়ুর জন্য আড়াইগুণ বেশি অর্থ বরাদ্দ করেছে। পূর্ববর্তী সরকারগুলির সঙ্গে তুলনা করলে বলা যায়, বর্তমান সরকার তামিলনাড়ুতে জাতীয় সড়ক নির্মাণে তিনগুণ বেশি অর্থ ব্যয় করেছে। ২০১৪ সালের আগের পরিস্থিতির সঙ্গে তুলনা করলে বলা যায়, তামিলনাড়ুর রেল যোগাযোগ ব্যবস্থার আধুনিকীকরণের জন্য আড়াইগুণ বেশি অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে। আজ কেন্দ্রীয় সরকারের থেকে তামিলনাড়ুর লক্ষ লক্ষ দরিদ্র পরিবার বিনামূল্যে রেশন ও স্বাস্থ্য পরিষেবা পাচ্ছেন। আমাদের সরকার পাকা বাড়ি, শৌচাগার, নলবাহিত পানীয় জল এবং গ্যাসের সংযোগ সহ নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা মানুষের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে।
প্রিয় পরিবারের সদস্যবৃন্দ,
উন্নত ভারত গড়ে তুলতে হলে আমাদের সকলের সম্মিলিত উদ্যোগের প্রয়োজন। তামিলনাড়ুর জনসাধারণ এবং যুব সম্প্রদায়ের ক্ষমতার প্রতি আমার অবিচল আস্থা রয়েছে। রাজ্যের যুব সম্প্রদায়ের নতুন নতুন ভাবনা এবং উৎসাহ-উদ্দীপনা আমি দেখতে পাই। উন্নত ভারত গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এই উৎসাহ চালিকাশক্তির কাজ করবে। আজ এখানে যে উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলির শিলান্যাস ও উদ্বোধন করা হয়েছে তার জন্য আপনাদের সকলকে অভিনন্দন জানাই।
ভারতমাতার জয়!
ভারতমাতার জয়!
ভারতমাতার জয়!
ভনক্কম!