ভারত মাতার জয়!
ভারত মাতার জয়!
ভারত মাতার জয়!
আজ আবুজাতে আপনারা প্রকৃত অর্থে এক মনোরম পরিবেশের সৃষ্টি করেছেন। গত সন্ধ্যা থেকে আমার মনে হচ্ছে আমি আবুজাতে নেই, ভারতের কোনো শহরে রয়েছি। আপনারা অনেকেই লাগোস, কানো, কাদুনা এবং হারকোর্ট বন্দর থেকে এই আবুজায় ছুটে এসেছেন, আপনাদের চোখেমুখে আনন্দের ছাপ স্পষ্ট। এখানে আসার জন্য আপনারা যে কতটা আগ্রহী ছিলেন তা বেশ ভালোই বোঝা যায়। আপনাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার এই সুযোগটি আমিও খুঁজছিলাম। আপনাদের ভালোবাসা আমার জন্য অমূল্য সম্পদ। আপনাদের মধ্যে থাকার প্রতিটি মূহূর্ত আমার জীবনে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
বন্ধুগণ,
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নাইজেরিয়ায় এটিই আমার প্রথম সফর। কিন্তু আমি একা আসনি। আমি নিয়ে এসেছি ভারতের মাটির সুবাস। আমি নিয়ে এসেছি কোটি কোটি ভারতবাসীর অফুরাণ শুভেচ্ছা। দেশের উন্নয়নের খবরে আপনাদের যেমন মন খুশিতে ভরে ওঠে, একইভাবে আপনাদের সাফল্যে প্রত্যেক ভারতবাসীর বুক গর্বে ফুলে ওঠে। কতটা জানেন? মাপা যাবে না – আমার তো ৫৬ ইঞ্চি ফুলে ওঠে!
বন্ধুগণ,
রাষ্ট্রপতি তিনুবু এবং নাইজেরিয়ার জনসাধারণকে আমি ধন্যবাদ জানাই, তাঁরা যেভাবে আমাকে অভ্যর্থনা জানিয়েছেন তা অতুলনীয়। কিছুক্ষণ আগেই রাষ্ট্রপতি তিনুবু আমাকে জাতীয় সম্মানে সম্মানিত করেন। এই সম্মান মোদীর জন্য নয়, এই সম্মান কোটি কোটি ভারতবাসী এবং যেসব ভারতীয় এখানে বসবাস করেন তাঁদের জন্য।
বন্ধুগণ,
এই সম্মান আমি বিনম্র চিত্তে আপনাদের উৎসর্গ করলাম।
বন্ধুগণ,
রাষ্ট্রপতি তিনুবু-র সঙ্গে আলোচনার সময়ে তিনি বার বার নাইজেরিয়ার উন্নয়নে আপনাদের অবদানের প্রশংসা করছিলেন। তাঁর সঙ্গে যখন কথা বলছিলাম, তাঁর চোখ মুখ আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে উঠছিল। বিশ্বাস করুন, গর্বে আমার বুক ভরে যাচ্ছিল। যখন পরিবারের এক সদস্যের সাফল্যের কথা জানা যায়, তখন বাকিরাও গর্ববোধ করেন। এই সাফল্য গ্রামের সকলে অথবা অভিভাবকরা যেমনভাবে নিজের মতো করে উদযাপন করেন, আমারও অনুভূতি সেই একইরকমের। আপনারা নাইজেরিয়ায় যেমন কঠোর পরিশ্রম করছেন, তার মধ্য দিয়ে এই দেশের প্রতি আপনাদের ভালোবাসা ফুটে উঠছে। নাইজেরিয়ার সুখ দুঃখের সাথী ভারতীয় সম্প্রদায়ের প্রতিটি মানুষ। যেসব নাইজিরিয়ানের বয়স ৪০ বা ৬০-এর কোঠায় তাঁরা ভারতীয় শিক্ষক শিক্ষিকাদের পাঠদানের কথা স্মরণ করেন। ভারতীয় চিকিৎসকরা এখানে এখনও কাজ করে চলেছেন। এদেশে ভারতীয় শিল্পপতিরা ব্যবসাবাণিজ্য করছেন, নাইজেরিয়ার উন্নয়নে তাঁদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। যেমন ধরুন, কিষিনচাঁদ চেল্লারামজি। ভারতের স্বাধীনতার আগে তিনি এদেশে এসেছিলেন। তখন কে জানতো তাঁর সংস্থা আজ নাইজেরিয়ার প্রথমসারির বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে। আজ নাইজেরিয়ার অর্থনীতিকে অনেক ভারতীয় সংস্থা শক্তিশালী করছে। তোলারামজির নুডুলস এদেশের প্রতিটি ঘরে ঘরে জনপ্রিয়। তুলসীচাঁদ রাইজি-র ফাউন্ডেশন নাইজেরিয়ার বহু মানুষের জীবনকে আলোকিত করেছে। এদেশের স্থানীয় মানুষের উন্নয়নে ভারতীয় সম্প্রদায় কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করছে। আজ যে একতা এবং অভিন্ন লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়ার নিদর্শন প্রতিফলিত হচ্ছে তা আসলে ভারতীয় সম্প্রদায়ের সব থেকে বড় শক্তি। আমরা যেখানেই যাই না কেন, আমাদের মূল্যবোধকেও সঙ্গে নিয়ে যাই। যুগ যুগ ধরে এই মূল্যবোধ আমাদের মজ্জায় মজ্জায় মিশে রয়েছে। আমরা সারা বিশ্বকে একটি পরিবার হিসেবে বিবেচনা করি।
বন্ধুগণ,
ভারতীয় সংস্কৃতি অনুসরণ করে আপনারা নাইজেরিয়ায় গর্বের সঙ্গে বসবাস করেন। এখানকার মানুষদের মধ্যে যোগ অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আমার তো মনে হয়, আপনাদের মতোই নাইজিরিয়ানরাও যোগাভ্যাস করে থাকেন। বন্ধুরা, অর্থ উপার্জন করা, নামযশ হওয়া, সাফল্য অর্জন করা যেমন আপনাদের লক্ষ্য, সেভাবেই আপনারা যোগাভ্যাসের জন্যও খানিকটা সময়ে ব্যয় করুন। আমি শুনেছি এদেশের জাতীয় টেলিভিশন চ্যানেলে যোগাভ্যাস নিয়ে সাপ্তাহিত একটি অনুষ্ঠান সম্প্রচারিত হয়। আপনারা হয়তো স্থানীয় টিভির পরিবর্তে ভারতীয় টিভি চ্যানেল বেশি দেখেন, যার মাধ্যমে দেশের পরিস্থিতি, দেশের খবর সম্পর্কে সর্বশেষ তথ্য পেয়ে যান। নাইজেরিয়াতে হিন্দি ভাষা ক্রমশ জনপ্রিয় হচ্ছে। তরুণ প্রজন্মের অনেক নাইজিরিয়ান বিশেষত কানোর ছাত্রছাত্রীরা হিন্দি শিখছে। কানোতে ছাত্রছাত্রীদের হিন্দি ভাষার প্রতি আগ্রহ এতটাই বেশি যে তারা দোস্তানা নামে একটি গোষ্ঠী গঠন করেছে। এই বিপুল উৎসাহের কারণে স্বাভাবিকভাবেই ভারতীয় চলচ্চিত্রের প্রতি তাঁদের মধ্যে যথেষ্ট অগ্রহ রয়েছে। আজ মধ্যাহ্নভোজের সময়ে আমি স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলছিলাম, তাঁরা দেখলাম সকলে ভারতীয় অভিনেতা অভিনেত্রী এবং চলচ্চিত্র সম্পর্কে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল। নাইজেরিয়ার উত্তরাঞ্চলের মানুষ ভারতীয় সংস্কৃতির প্রতি এতটাই অগ্রহী যে তাঁরা মাহারাওয়ালা বলে সম্ভাষণ করেন। নমস্তে ওয়াহালা – গুজরাটি অভিব্যক্তির থেকেই এই শব্দটি তৈরি হয়েছে। ভারতীয় ছবি নমস্তে ওয়াহালা এবং ওয়েবসিরিজ পোস্টকার্ডস নাইজেরিয়ায় যথেষ্ট জনপ্রিয়।
বন্ধুগণ,
গান্ধীজী আফ্রিকায় বহু বছর কাটিয়েছেন। এই মহাদেশের সুখদুঃখের সাথী ছিলেন তিনি। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে ভারতীয় এবং নাইজিরিয়ানরা নিজেদের স্বাধীনতালাভের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। সেই আন্দোলনের দিনগুলির মতোই আজও ভারত এবং নাইজেরিয়া উন্নয়নের অংশীদার হিসেবে এগিয়ে চলেছে। গণতন্ত্রের জননী ভারত এবং আফ্রিকার বৃহত্তম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নাইজেরিয়ায় গণতন্ত্র, বৈচিত্র্য এবং জনবিন্যাসের ফলে উদ্ভূত শক্তি সম্পর্কে একই মনোভাব পোষণ করে। উভয় দেশই বহুভাষিক, অনেক সংস্কৃতি রয়েছে দুটি দেশেই। নাইজেরিয়ায় লাগোসে ভগবান জগন্নাথ, প্রভূ ভেঙ্কটেশ্বর, গণপতি দাদা এবং কার্তিকেয়র মন্দিরগুলি এদেশের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের প্রতীক হিসেবে লালিত হচ্ছে। আজ আমি আপনাদের মধ্যে উপস্থিত। আমি ভারতীয় জনগণের পক্ষ থেকে নাইজেরিয় সরকারকে এই পবিত্র স্থানগুলি নির্মাণে সহায়তার জন্য ধন্যবাদ জানাই।
বন্ধুগণ,
ভারত যখন স্বাধীনতা লাভ করে তখন প্রচুর চ্যালেঞ্জ ছিল দেশের সামনে। আমাদের পূর্ব পুরুষরা সেই বাধাবিপত্তিগুলি অতিক্রম করতে নিরলসভাবে কাজ করেছেন। আর আজ সারা বিশ্ব ভারতের দ্রুত উন্নয়নের পক্ষে কথা বলছে। এই খবর কি আপনাদের কাছে পৌঁছয়নি! আর যখন এই খবর আপনাদের কাছে পৌঁছয় তখন সেখান থেকে আপনাদের হৃদয়ে। ভারতের সাফল্যে আমরা সকলেই দারুন গর্ববোধ করি। আপনারা বলুন, আপনারাও কি গর্ববোধ করেন না? চন্দ্রযান যখন চাঁদের মাটিতে অবতরণ করলো, সেই মূহূর্তে কি আপনারা গর্ববোধ করেননি? তখন কি আপনারা টিভি স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকেননি? যখন মঙ্গলযান মঙ্গল গ্রহে পৌঁছেছিল তখন আপনাদের মন কি খুশিতে ভরে ওঠেনি। তেজস যুদ্ধ বিমান অথবা দেশীয় প্রযুক্তিতে নির্মিত বিমান বহনক্ষম রণতরী আইএনএস বিক্রান্তের মতো মেড-ইন-ইন্ডিয়ার বিভিন্ন নিদর্শন যখন আপনারা দেখেন তখন কি গর্ববোধ করেন না? আজ মহাকাশ, নির্মাণ ক্ষেত্র, ডিজিটাল প্রযুক্তি এবং স্বাস্থ্য পরিষেবায় দেশের প্রথমসারির দেশগুলির মধ্যে ভারত অন্যতম। আমরা সকলেই জানি, দীর্ঘদিনের ঔপনিবেশিক শাসনের ফলে আমাদের অর্থনীতি যথেষ্ট দুর্বল হয়েছিল। প্রচুর চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও ভারতের অর্থনীতি স্বাধীনতার ছয় দশক পরে ১ লক্ষ কোটি ডলারের অর্থনীতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। ভাবতে পারছেন, কতটা সময় লেগেছিল। ছয় দশক! হ্যাঁ ছয় দশক। আমি এখানে আপনাদের কিছু শেখাতে আসিনি, মনে করাতে এসেছি। আপনারা সকলেই হাততালি দিচ্ছেন, কিন্তু আমি আপনাদের বলবো কেন আপনারা আরও বেশি জোরে হাততালি দেবেন। গত দশকে ভারত তার মূল অভ্যন্তরীণ উৎপাদনে প্রায় ২ লক্ষ কোটি ডলার যুক্ত করেছে। অর্থাৎ মাত্র ১০ বছরে আমাদের অর্থনীতি দ্বিগুণ হয়েছে। আজ বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতি হিসেবে ভারতকে বিবেচনা করা হয়। সেদিন আর বেশি দূরে নেই, যেদিন ভারত ৫ লক্ষ কোটি মার্কিন ডলারের অর্থনীতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে। বিশ্বে ভারত হবে তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনৈতিক দেশ।
বন্ধুগণ,
আমরা প্রায়শই শুনে থাকি, কেউ যখন তার প্রচলিত গণ্ডির বাইরে বেরিয়ে আসেন, তখন তিনি কিছু সাফল্য অর্জন করেন। এবিষয়ে আপনাদের কাছে নতুন করে বলার কিছু নেই কারণ আপনারা ইতোমধ্যেই সেই সাফল্য অর্জন করেছেন। ভারত এবং তার যুব সম্প্রদায় এই মানসিকতায় নতুন নতুন ক্ষেত্রে প্রবেশ করছে। ১০-১৫ বছর আগেও আপনারা স্টার্টআপ শব্দটির সঙ্গে পরিচিত ছিলেন না। একবার আমি স্টার্টআপে উৎসাহদানের জন্য একটি সম্মেলনের আয়োজন করি। সেখানে উপস্থিত মাত্র ৮ থেকে ১০ জন এই স্টার্টআপ সম্পর্কে ওয়ারিবহাল ছিলেন, আর বাকিরা এসেছিলেন জিনিসটি কি তা বুঝতে। বাংলার এক যুবতী তার অভিজ্ঞতা আমাদের সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছিলেন। কারণ আমার এই নতুন জগৎ সম্পর্কে জানাতে তার সাহায্যের প্রয়োজন ছিল। উচ্চশিক্ষিতা সেই মহিলা ভালো একটি চাকরি পেতেই পারতেন এবং যথেষ্ট বিলাসব্যাসনে জীবনযাপন করতে পারতেন। কিন্তু তিনি সেই পথে হাঁটেননি। তিনি গ্রামে গিয়ে তার মাকে জানান, তিনি তার চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন এবং ব্যবসা করার কথা ভাবছেন। তার মা এই সিদ্ধান্তের কথা শুনে এতটাই দুঃখ পেয়েছিলেন যে বলেছিলেন ওই মহিলা মহাবিনাশকে ডেকে নিয়ে আসছেন। কিন্তু আজ বর্তমান প্রজন্ম তাদের চিরাচরিত গণ্ডি থেকে বেরিয়ে এসে নতুন এক ভারত গড়ার জন্য বিভিন্ন উদ্ভাবনমূলক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হতে চান। আর এর ফল অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। এখন ভারতে দেড় লক্ষ্যের বেশি নিবন্ধিত স্টার্টআপ গোষ্ঠী রয়েছে। এক সময়ে যে মা-রা স্টার্টআপ শব্দটি শুনে মহাবিনাশ বলে চিৎকার করে উঠেছিলেন, আজ তা মহাবিকাশে পরিণত হয়েছে। গত এক দশকে ভারতে ১০০টির বেশি ইউনিকর্ণ তৈরি হয়েছে। একটি ইউনিকর্ন কোম্পানির সম্পদের পরিমাণ ৮ হাজার থেকে ১০ হাজার কোটি টাকা। ভারতের যুব সম্প্রদায় ১০০টির বেশি এধরনের কোম্পানি করেছেন। কিভাবে এটা সম্ভব হলো? কারণ, ভারত তার চিরাচরিত ভাবনাচিন্তার গণ্ডি থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছে।
বন্ধুগণ,
আপনাদের আরেকটি উদাহরণ দেই। দীর্ঘদিন ধরেই পরিষেবা ক্ষেত্রে ভারতের বিশেষ পরিচিতি রয়েছে। আমাদের অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হলো আমাদের এই পরিষেবা ক্ষেত্র। কিন্তু আমরা আমাদের চিরাচরিত গণ্ডি ছেড়ে বেরিয়ে আসছি এবং দেশকে আন্তর্জাতিক মানের উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছি। আমাদের উৎপাদন শিল্পের প্রসার ঘটছে। আজ বিশ্বে বৃহত্তম মোবাইল ফোন উৎপাদক রাষ্ট্র হিসেবে ভারত পরিচিতি লাভ করেছে। ভারতে ৩০ কোটি মোবাইল ফোন প্রতি বছর তৈরি হয়। নাইজেরিয়ার প্রয়োজনের তুলনায় যা অনেক বেশি। গত এক দশকে আমাদের মোবাইল ফোন রপ্তানি ৭৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই একই সময়কালের মধ্যে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম রপ্তানি ৩০ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। আজ আমরা ১০০টির বেশি দেশে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম রপ্তানি করছি।
বন্ধুগণ,
মহাকাশ ক্ষেত্রে ভারতের সাফল্য সম্পর্কে সারা বিশ্ব ওয়াকিবহাল। সর্বত্রই তা প্রশংসিত হচ্ছে। ভারত ঘোষণা করেছে খুব শীঘ্রই গগণযান মিশনে মহাকাশে মানুষকে পাঠানো হবে। এছাড়াও ভারত একটি স্পেস স্টেশন গড়ে তুলতে উদ্যোগী হয়েছে।
বন্ধুগণ,
চিরাচরিত ভাবনার গণ্ডি থেকে বেরিয়ে এসে উদ্ভাবনমূলক কাজকর্মে যুক্ত হয়ে নতুন পথে চলা ভারতের স্বভাবজাত হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত দশকে আমরা ২৫ কোটি মানুষকে দারিদ্রের নাগপাশ থেকে মুক্ত করেছি। সারা বিশ্বের কাছে এটি অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকেই মনে করছেন ভারত যদি করতে পারে, আমরা কেন করতে পারবো না। ভারতের মনোবল এখন তুঙ্গে। উন্নয়নযাত্রায় আমরা এগিয়ে চলেছি। ২০৪৭ সালে আমরা যখন স্বাধীনতার শতবার্ষিকী উদযাপন করবো, সেই সময়ের মধ্যে উন্নত ভারত গড়ে তোলার স্বপ্ন আমরা দেখছি। যাঁরা ভবিষ্যতে সুন্দর সময় কাটাতে চান এবং অবসরকালীন জীবনযাত্রাটি মনোরম হবে – এই স্বপ্ন দেখেন তাঁদের বলি, এই কাজের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ আমি নিয়েছি। আমরা ২০৪৭ সালে একটি উন্নত ভারত গড়ে তোলার জন্য ব্রতী হয়েছি। প্রত্যেক ভারতীয় এই উদ্যোগে সামিল হয়েছেন। আপনারা যাঁরা নাইজেরিয়ায় বসবাস করছেন তাঁরাও এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন।
বন্ধুগণ,
উন্নয়ন, শান্তি, সমৃদ্ধি এবং গণতন্ত্রের মতো বিষয়গুলিতে ভারত সারা বিশ্বের কাছে আশার দূত হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। পৃথিবীর যেখানেই আপনারা যান না কেন, সকলেই আপনাদের সম্মানের সঙ্গে দেখেন। তাই নয় কি? আপনারা আপনাদের অভিজ্ঞতার কথা বলুন? আপনারা যখন বলেন, ভারত থেকে এসেছেন – ভারত, হিন্দুস্তান বা ইন্ডিয়া যেভাবেই বলুন না কেন, আপনাদের কথা শুনে তাঁরা আপনাদের হাত শক্ত করে ধরেন যেন আপনাদের থেকে তাঁরা বাড়তি শক্তি অর্জন করতে চান।
বন্ধুগণ,
বিশ্বে কোথাও কোনো সঙ্কট দেখা দিলে ভারত সেই অঞ্চলের মানুষের পাশে সেই মূহূর্তেই উপস্থিত হয়। আমরা বিশ্ব বন্ধুর ভূমিকা অবতীর্ণ হই। আপনাদের নিশ্চয়ই করোনা ভাইরাসের কথা মনে আছে। সারা বিশ্বজুড়ে সেই সময়ে এক সঙ্কট দেখা দিয়েছিল। প্রতিটি দেশে টিকার ঘাটতি দেখা দেয়। ভারত তার সাধ্য অনুযায়ী যত বেশি সম্ভব দেশকে টিকা দিয়ে সাহায্য করেছে। এটি আসলে আমাদের দীর্ঘদিনের সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ। ভারত টিকার উৎপাদন বৃদ্ধি করেছে। নাইজেরিয়া সহ ১৫০টি বেশি দেশে টিকা এবং ওষুধ সরবরাহ করেছে। এটি কোনো ছোটখাটো সাফল্য নয়। এই উদ্যোগের ফলে নাইজেরিয়া সহ আফ্রিকার বহু দেশের অগণিত মানুষের প্রাণ বেঁচেছে।
বন্ধুগণ,
আজ ভারত ‘সবকা সাথ সবকা বিকাশ’-এর পক্ষে। আমি নাইজেরিয়া সহ আফ্রিকাকে ভবিষ্যৎ উন্নয়নের ভরকেন্দ্র বলে মনে করি। গত ৫ বছরে ভারত আফ্রিকায় ১৮টি নতুন দূতাবাস খুলেছে। আফ্রিকার কণ্ঠস্বর যাতে আরও জোড়ালোভাবে আন্তর্জাতিক মঞ্চে পৌঁছয় ভারত তার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে। গত বছর ভারতের সভাপতিত্বে জি২০ গোষ্ঠীর সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলনে আফ্রিকান ইউনিয়ন যাতে জি২০ গোষ্ঠীর স্থায়ী সদস্য হয় তার জন্য আমরা উদ্যোগী হই। আমাদের সেই প্রয়াস সফল হয়েছে। অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি জি২০ গোষ্ঠীর প্রতিটি সদস্য ভারতের সেই উদ্যোগকে সমর্থন জানিয়েছে। রাষ্ট্রপতি হিসেবে তিনুবু দায়িত্ব গ্রহণের পরে যে দেশগুলিতে তিনি সফর করেন তার মধ্যে ভারত অন্যতম। তাঁর সেই সফরকালে তিনি জি২০ গোষ্ঠীর শিখর সম্মেলনে যোগ দেন।
বন্ধুগণ,
আপনারা অনেকেই নিয়মিত ভারতে যান। আপনাদের পরিবারের বিভিন্ন অনুষ্ঠান, উৎসবে, আনন্দ বা দুঃখের সময়ে তাঁদের সঙ্গ দেন। আপনাদের আত্মীয়স্বজনেরা ভারত থেকে প্রায়শই ফোন করেন, মেসেজ পাঠান। বর্ধিত পরিবারের সদস্য হিসেবে আমি আপনাদের কাছে এসেছি। আপনাদের জন্য বিশেষ এক নিমন্ত্রণ বার্তা নিয়ে এসেছি। আগামী বছরের জানুয়ারি মাসে ভারতে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ উৎসব হবে। প্রতি বছর ২৬ জানুয়ারি আমরা দিল্লিতে সাধারণতন্ত্র দিবস উদযাপন করি। জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে প্রবাসী ভারতীয় দিবস পালন করা হয়। এবার মূল অনুষ্ঠানটি হবে প্রভূ জগন্নাথের পবিত্র ভূমি ওড়িশায়। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের বন্ধুরা এই উপলক্ষে সেখানে জড়ো হবেন। এছাড়াও প্রয়াগরাজে ৪৫ দিন ধরে মহাকুম্ভ মেলা অনুষ্ঠিত হবে। এই মেলা শুরু হবে ১৩ জানুয়ারি থেকে চলবে ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। ভারতে যাওয়া আপনাদের জন্য তখন সঠিক সময় হবে। আপনারা আপনাদের সন্তানদের নিয়ে সেই সময়ে ভারতে আসুন, আপনাদের নাইজিরিয়ান বন্ধুদেরও আমন্ত্রণ জানান ভারতে আসার জন্য। প্রয়াগরাজের খুব কাছেই অযোধ্যা, কাশীও বেশি দূরে নয়। আপনি যখন কুম্ভ মেলায় যোগ দেবেন, তখন এই পবিত্র স্থানগুলিও দর্শন করুন। কাশীতে নবনির্মিত বিশ্বনাথধাম আপনাদের সকলেরই ভালো লাগবে। ৫০০ বছর পর অযোধ্যায় ভগবান শ্রী রামের বিরাট মন্দির স্থাপিত হয়েছে। আপনারা আপনাদের সন্তানদের নিয়ে সেটিও দর্শন করুন। প্রবাসী ভারতীয় দিবসে যোগদানের মধ্য দিয়ে আপনাদের ভারত যাত্রা শুরু হোক। এর পর মহাকুম্ভ, সব শেষে সাধারণতন্ত্র দিবস। আপনাদের জন্য এ এক অনন্য ত্রিবেণী। ভারতের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধ ঐতিহ্যের মেলবন্ধন প্রত্যক্ষ করার এক দারুন সুযোগ। আমি জানি আপনারা এর আগে বহুবার ভারত সফর করেছেন। কিন্তু আমার এবারের পরামর্শ অনুযায়ী আপনি যদি ভারতে যান, তাহলে চিরস্মরণীয় কিছু মূহূর্ত আপনার জীবনে তৈরি হবে, যা অত্যন্ত আনন্দদায়ক। গতকাল আমি এখানে এসে পৌঁছেছি। আপনাদের কাছ থেকে যে ভালোবাসা ও উষ্ণ আতিথেয়তা পেয়েছি তা অনবদ্য। আপনাদের সকলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার সৌভাগ্য আমার হলো, তার জন্য আমি অত্যন্ত কৃতজ্ঞ।
আমার সঙ্গে বলুন-
ভারত মাতার জয়!
ভারত মাতার জয়!
ভারত মাতার জয়!
অনেক অনেক ধন্যবাদ!