কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় আমার সহকর্মী শ্রী ভূপিন্দর যাদবজি, শ্রী অশ্বিনী কুমার চৌবেজি, অন্যান্য দেশের মন্ত্রীগণ, অন্যান্য রাজ্যের মন্ত্রীগণ, অন্য প্রতিনিধি, মহোদয়া এবং মহোদয়গণ!
এই অবসরে আমি আপনাদের কাছে এক ঘন্টা দেরিতে আসার জন্য ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। আমি সকাল ৬টায় বেরিয়েছি। আমি ভেবেছিলাম জঙ্গল দেখে ঠিক সময়ে ফিরে আসতে পারব। আপনাদের বসিয়ে রাখার জন্য আমি ক্ষমা চাইছি। বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে এটি একটি গর্বের মুহূর্ত। বাঘের পরিবারের বিস্তার হচ্ছে। আমি আপনাদের সকলকে দাঁড়িয়ে উঠে বাঘকে অভিবাদন জানাতে বলছি। ধন্যবাদ!
আজ আমরা একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলকের সাক্ষী থাকছি। ‘প্রোজেক্ট টাইগার’ ৫০ বছর পূর্ণ করল। ‘প্রোজেক্ট টাইগার’-এর সাফল্য শুধুমাত্র ভারতের জন্য গর্বের বিষয় নয়, এটি সমগ্র বিশ্বের। ভারত শুধু বাঘকে রক্ষা করেছে তাই নয়, এদের ভালোভাবে বাঁচার জন্য উপযুক্ত পরিবেশও দিয়েছে। এটা আমাদের কাছে আরও আনন্দের যে ভারত স্বাধীনতার ৭৫ বছরে বিশ্বের মোট বাঘের ৭৫ শতাংশের বাসভূমি। এটা একটি সমাপতন যে ভারতের ব্যাঘ্র সংরক্ষণ কেন্দ্র ৭৫ হাজার বর্গ কিলোমিটার জুড়ে ছড়িয়ে এবং গত ১০-১২ বছরে বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ৭৫ শতাংশ। এটি সম্ভব হয়েছে প্রত্যেকের প্রয়াসে এবং আমি এই সাফল্যের জন্য সমগ্র দেশবাসীকে অভিনন্দন জানাই।
বন্ধুগণ,
আজ সারা বিশ্বের বন্যপ্রাণ প্রেমীরা চমৎকৃত একথা জেনে যে যখন বাঘের সংখ্যা সারা বিশ্বে এক জায়গায় থেমে আছে বা কমছে, সেখানে ভারতের এই সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে কি করে? এর উত্তর লুকিয়ে আছে ভারতের ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির মধ্যে এবং জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশের প্রতি স্বাভাবিক আকর্ষণের মধ্যে। আমরা পরিবেশ ও অর্থনীতির মধ্যে দ্বন্দ্বে বিশ্বাস করি না, বরং উভয়ের সহাবস্থানেই আমরা সমান গুরুত্ব দিই। আমাদের বাঘ সংক্রান্ত ইতিহাস হাজার হাজার বছরের পুরনো। মধ্যপ্রদেশে ১০ হাজার বছর পুরনো প্রস্তরশিল্পে বাঘের দেখা মিলেছে। মধ্য ভারতের ভারিয়া এবং মহারাষ্ট্রের ওরলি-র মতো দেশের অনেক সম্প্রদায়ই বাঘকে পুজো করে। আমাদের দেশে অনেক উপজাতিই বাঘকে তাঁদের বন্ধু ও ভাই মনে করে। বাঘ মা দুর্গা এবং ভগবান আইয়াপ্পার বাহন।
বন্ধুগণ,
ভারত এমনই একটি দেশ যেখানে প্রকৃতিকে রক্ষা করা সংস্কৃতির অঙ্গ। সেইজন্য বন্যপ্রাণ সংরক্ষণে অনেক অভিনব সাফল্য আছে। সারা বিশ্বের মোট ভূমির মাত্র ২.৪ শতাংশ থাকতেও ভারত বিশ্বের জীববৈচিত্র্যের প্রায় ৮ শতাংশ অবদান রাখে। ভারত সারা বিশ্বের মধ্যে বৃহত্তম ব্যাঘ্র সংরক্ষণের দেশ। প্রায় ৩০ হাজার হাতি নিয়ে সারা বিশ্বে আমরাই এশিয়াটিক হাতির বৃহত্তম দেশ। আমাদের একশৃঙ্গ গণ্ডারের সংখ্যা প্রায় ৩ হাজার। বিশ্বে একমাত্র আমাদের দেশেই একশৃঙ্গ গণ্ডারের সংখ্যা বৃহত্তম। সারা বিশ্বে আমরাই একমাত্র দেশ যেখানে এশিয়াটিক সিংহ আছে। সিংহের সংখ্যা ২০১৫-তে ছিল ৫২৫ যা ২০২০-তে বেড়ে হয়েছে প্রায় ৬৭৫। আমাদের চিতাবাঘের সংখ্যা মাত্র ৪ বছরে ৬০ শতাংশ। গঙ্গার মতো নদীগুলিকে পরিষ্কার করার কাজে জীববৈচিত্র্যের উপকার হয়েছে। কিছু বিপন্ন জলজ প্রাণীর ক্ষেত্রে উন্নতি লক্ষ্য করা গেছে। এই সাফল্য মানুষের অংশগ্রহণের কারণে এবং সংরক্ষণের সংস্কৃতির জন্য, ‘সবকা প্রয়াস’ (সম্মিলিত উদ্যোগ)।
বন্যপ্রাণীর সংখ্যা বাড়াতে হলে পরিবেশেরও উন্নতি জরুরি। এটাই ঘটছে ভারতে। যখন আমরা স্বাধীনতার ৭৫ বছর পালন করছি, ভারত রামসর তালিকায় ১১টি জলাভূমিকে যুক্ত করেছে। এতে রামসর তালিকাভুক্ত স্থানের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭৫। বনসৃজন এবং বৃক্ষরোপণও বাড়ছে। ২০২১-এর মধ্যে ভারত ২,২০০ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে অরণ্য এবং গাছের সংখ্যা বৃদ্ধি করেছে ২০১৯-এর তুলনায়। গত দশকে অভয়ারণ্যের সংখ্যা ৪৩ থেকে বেড়ে হয়েছে ১০০। এক দশকে পরিবেশ সংবেদনশীল অঞ্চল হিসেবে বিজ্ঞাপিত জাতীয় উদ্যান এবং অভয়ারণ্যের সংখ্যা বেড়ে ৯ থেকে হয়েছে ৫৬৮।
বন্ধুগণ,
বন্যপ্রাণ সংরক্ষণের কাজে গুজরাটে আমার দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা আছে। যখন আমি গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলাম, আমরা সিংহের সংখ্যা নিয়ে কাজ করেছি। আমি শিখেছিলাম যে একটা ভৌগোলিক অঞ্চলে সীমাবদ্ধ করে রাখলে কোনও বন্যপ্রাণীকে রক্ষা করা যায় না। স্থানীয় মানুষ ও পশুর মধ্যে একটা সম্পর্ক তৈরি করা জরুরি এবং এই সম্পর্কের ভিত্তি হবে অনুরাগের পাশাপাশি অর্থনীতি। সেজন্য আমরা গুজরাটে শুরু করি ‘ওয়াইল্ড লাইফ মিত্র’ কর্মসূচি। এতে নগদ পুরস্কারের মতো উৎসাহভাতা দেওয়া হত পর্যবেক্ষণ করার কাজে। আমরা গির-এর সিংহের জন্য একটি পুনর্বাসন কেন্দ্রও খুলি। আমরা গির অঞ্চলে বন দপ্তরে মহিলা বিট গার্ড এবং বনরক্ষকও নিয়োগ করি। এতে ‘লায়ন হ্যায় তো হাম হ্যায়, হাম হ্যায় তো লায়ন হ্যায়’ – এই মনোভাব বৃদ্ধি পেয়েছিল। আজ আপনারা দেখতে পাবেন, গির-এ এক বিশাল ইকো-ট্যুরিজম গড়ে উঠেছে।
বন্ধুগণ,
গির-এ যেসব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল সেরকমই ‘প্রোজেক্ট টাইগার’-এর সাফল্যেরও অনেক দিক আছে। এতে পর্যটন বেড়েছে এবং আমরা যে সচেতনতা কর্মসূচি নিয়েছি তাতে ব্যাঘ্র সংরক্ষণ কেন্দ্রে মানুষে-প্রাণীতে দ্বন্দ্ব অনেকটাই কমেছে। ব্যাঘ্র সংরক্ষণ কেন্দ্রে পর্যটকের সংখ্যা বেড়েছে। এতে স্থানীয় অর্থনীতি শক্তিশালী হয়েছে। বাঘের উপস্থিতি স্থানীয় মানুষের জীবন-জীবিকায় ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
বন্ধুগণ,
কয়েক মাস আগে ভারতের জীববৈচিত্র্য বাড়াতে আমরা আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ নিয়েছি। ভারতে কয়েক দশক আগেই চিতা বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। আমরা নামিবিয়া এবং দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে এই সুন্দর প্রাণীকে এনেছি। এটি প্রথম আন্তঃমহাদেশীয় চিতার সফল স্থানান্তরকরণ। কয়েকদিন আগে কুনহো জাতীয় উদ্যানে চারটি সুন্দর বাচ্চা হয়েছে। প্রায় ৭৫ বছর আগে ভারতের মাটি থেকে চিতা বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। অন্যভাবে বলতে গেলে, ভারতের একটি চিতার বাচ্চা জন্মালো ৭৫ বছর পর। এটা খুবই পবিত্র সূচনা। এর থেকে প্রমাণ হয়, জীববৈচিত্র্য প্রসারে এবং রক্ষণে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা কতটা জরুরি।
বন্ধুগণ,
বন্যপ্রাণী রক্ষা শুধুমাত্র একটি দেশের কাজ নয়, এটা আন্তর্জাতিক বিষয়। এই সূত্রে ‘ইন্টারন্যাশনাল অ্যালায়েন্স’ সময়ের দাবি। ২০১৯-এ আন্তর্জাতিক ব্যাঘ্র দিবসে এশিয়ায় চোরাশিকারি এবং বেআইনি বন্যপ্রাণীর ব্যবসা রুখতে আমি একটি জোট গড়ার কথা বলেছিলাম। সেই সূত্রেই এই ‘ইন্টারন্যাশনাল বিগ ক্যাট অ্যালায়েন্স’। এই ব্যাঘ্র প্রজাতির পশুর জন্য সার্বিক পরিবেশগত ব্যবস্থা গড়ে তুলতে আর্থিক এবং প্রযুক্তিগত সম্পদ যোগাতে এটি সাহায্য করবে। এছাড়াও ভারত সহ বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতালব্ধ সংরক্ষণ প্রক্রিয়া রূপায়ণও সহজ হবে। ‘ইন্টারন্যাশনাল বিগ ক্যাট অ্যালায়েন্স’-এর লক্ষ্য হবে বিশ্বের সাতটি বৃহৎ আকারের পশু সংরক্ষণ। যেসব দেশগুলিতে বাঘ, সিংহ, চিতাবাঘ, স্নো লেপার্ড, পুমা, জাগুয়ার এবং চিতা আছে তারা এই জোটের অংশ হবে। এই জোটের অধীনে সদস্য দেশগুলি তাদের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে পারবে এবং সহজেই এই দেশগুলিকে আরও দ্রুত সাহায্য করতে সক্ষম হবে। এই জোটে জোর দেওয়া হবে গবেষণা, প্রশিক্ষণ এবং সক্ষমতা বৃদ্ধিতে। আমরা একসঙ্গে মিলে বিলুপ্ত হওয়ার হাত থেকে এই শ্রেণীকে বাঁচাতে পারব এবং একটি নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ তৈরি করতে পারব।
বন্ধুগণ,
মানুষের জন্য আরও ভালো ভবিষ্যৎ তখনই সম্ভব যখন আমাদের পরিবেশ থাকবে নিরাপদ এবং আমাদের জীববৈচিত্র্য বৃদ্ধি পাবে। এই দায়িত্ব আমাদের সকলের, সমগ্র বিশ্বের। আমরা আমাদের জি-২০ সভাপতিত্বকালে এই ভাবনাকে প্রতিনিয়ত উৎসাহ দিচ্ছি। জি-২০-র মূল ভাবনা ‘এক পৃথিবী, এক পরিবার, এক ভবিষ্যৎ’ – এই বার্তাই বহন করছে। সিওপি-২৬-এও আমরা আমাদের জন্য একটি উচ্চস্তরের লক্ষ্য স্থাপন করেছি। আমার পূর্ণ বিশ্বাস আছে, আমাদের পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে পরিবেশ রক্ষায় প্রতিটি লক্ষ্য আমরা অর্জন করতে পারব।
বন্ধুগণ,
আমি বিদেশি অতিথি এবং অন্যান্য রাজ্য থেকে আগত অতিথিদের আরও একটি বিষয় বলতে চাই। আপনারা এখান থেকে আরও একটি সুযোগ নিতে পারেন। পশ্চিমঘাট সহ্যাদ্রি বলে একটি জায়গা আছে যেখানে অনেক উপজাতি বাস করেন। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে তাঁরা বাঘ সহ প্রতিটি জীববৈচিত্র্যকে লালন-পালন করে আসছেন। তাঁদের জীবন এবং তাঁদের সংস্কৃতি সারা বিশ্বের কাছেই একটি ভালো উদাহরণ। আমাদের ঐ উপজাতি ঐতিহ্য থেকে শিখতে হবে কিভাবে প্রকৃতির সঙ্গে দেওয়া-নেওয়ার মধ্যে ভারসাম্য রাখা যায়। আমার আরও দেরি হল এই কারণে যে আমি এই লক্ষ্যে যাঁরা কাজ করছেন, সেই মানুষদের সঙ্গে কথা বলছিলাম। ‘দি এলিফ্যান্ট হুইসপারার্স’ তথ্যচিত্রটি অস্কার জিতেছে। তাতে প্রতিফলিত হয়েছে প্রকৃতি এবং প্রাণীর মধ্যে চমকপ্রদ সম্পর্কের আমাদের ঐতিহ্য। জনজাতি সমাজের জীবনযাত্রা ‘মিশন লাইফ’ অর্থাৎ, লাইফস্টাইল ফর এনভায়রনমেন্টের মূল উদ্দেশ্য বুঝতে প্রভূত সাহায্য করে। আমি আপনাদের আবেদন জানাচ্ছি, আপনারা আপনাদের দেশ ও সমাজের জন্য আমাদের উপজাতি সমাজের জীবন ও ঐতিহ্য থেকে কিছু নিতেই পারেন। আরও একবার আমি আপনাদের সকলকে এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত হওয়ার জন্য কৃতজ্ঞতা জানাই। আমি আপনাদের আশ্বস্ত করে বলছি যে অদূর ভবিষ্যতেই আমরা বাঘের সংখ্যা আরও বৃদ্ধি করতে পারব এবং নতুন সাফল্য অর্জন করতে পারব।
অনেক ধন্যবাদ!