ভারত মাতা কি জয়!
ভারত মাতা কি জয়!
ভারত মাতা কি জয়!
উত্তরপ্রদেশের রাজ্যপাল আনন্দীবেন প্যাটেল, উত্তরপ্রদেশের জনপ্রিয় এবং কর্মতৎপর মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ জি, কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধারামাইয়া জি, কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় আমার সহকর্মী হরদীপ সিং পুরী জি, ভি কে সিং জি, কৌশল কিশোর জি, সম্মানীয় অতিথিবৃন্দ এবং এখানে উপস্থিত প্রিয়জনেরা,
সারা দেশের কাছেই আজকের দিনটি ঐতিহাসিক। ভারতে প্রথম দ্রুত রেল পরিষেবার অঙ্গ হিসেবে নমো ভারত ট্রেনের উদ্বোধন হল। প্রায় চার বছর আগে আমি দিল্লি-গাজিয়াবাদ-মিরাট আঞ্চলিক করিডর প্রকল্পের শিলান্যাস করেছিলাম। আজ সাহিবাবাদ থেকে দুহাই ডিপো পর্যন্ত নমো ভারত পরিষেবা চালু হয়ে গেল। আমি আগেও বলেছি যে আমরা শুধুমাত্র শিলান্যাস করি না, প্রকল্পের উদ্বোধনও করি। মিরাট অংশটির কাজও এক দেড় বছরের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে।
এই অত্যাধুনিক ট্রেনে যাত্রার অভিজ্ঞতা হল আমার। শৈশবে আমি রেল প্ল্যাটফর্মে দীর্ঘদিন কাটিয়েছি। সেজন্য এই নতুন ধরণের ট্রেন আমাকে খুবই উৎসাহিত করেছে। আমাদের ঐতিহ্য অনুযায়ী নবরাত্রির সময় অতি পবিত্র। আজ দেশের প্রথম নমো ভারত ট্রেন দেবী কাত্যায়নীর আশীর্বাদ লাভ করল। উল্লেখ্য যে, নতুন এই ট্রেনটির চালক থেকে কর্মীদের অনেকেই মহিলা। এই বিষয়টি নারীশক্তির বিকাশকে তুলে ধরে। এই নমো ভারত ট্রেন নতুন ভারতের যাত্রা এবং প্রতিজ্ঞার কথা বলে।
আমার পরিবারের সদস্যরা,
আমি সবসময় বিশ্বাস করি যে ভারতের প্রকৃত উন্নয়নের চাবিকাঠি লুকিয়ে রয়েছে রাজ্যগুলির বিকাশের মধ্যে। আজ বেঙ্গালুরুর দুটি মেট্রো লাইনেরও উদ্বোধন হল। ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি কেন্দ্র বলে পরিচিত বেঙ্গালুরুতে প্রতিদিন প্রায় ৮ লক্ষ মানুষ মেট্রোতে যাতায়াত করেন। এই নতুন মেট্রো পরিষেবা তাঁদের আরও সুবিধা করে দেবে।
আমার পরিবারের সদস্যরা,
একবিংশ শতকে প্রতিটি ক্ষেত্রেই দ্রুত এগিয়ে চলেছে ভারত। চাঁদে নেমেছে চন্দ্রযান। জি২০ শিখর সম্মেলন সফলভাবে আয়োজিত হয়েছে এই দেশে। এশিয়ান গেমস-এ ১০০-র বেশি পদক এসেছে ভারতের ঘরে। দেশের প্রতিটি প্রান্তে ৫জি পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। ডিজিটাল লেনদেন-এর প্রশ্নে ভারতের স্থান একেবারে প্রথমে। কোভিড অতিমারীর সময় ভারতে তৈরি প্রতিষেধক বিশ্বের লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রাণ বাঁচিয়েছে। মোবাইল ফোন, টিভি, ল্যাপটপ এবং কম্পিউটার প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলি এ দেশে বিনিয়োগে আগ্রহী। আজকের ভারত তৈরি করছে অত্যাধুনিক যুদ্ধ বিমান এবং বিক্রান্ত-এর মতো বিমানবাহী জাহাজ। আজ চালু হওয়া নমো ভারত ট্রেনটিও তৈরি হয়েছে ভারতেই। এই ট্রেন চলার সময় শব্দদূষণ হয় অত্যন্ত কম। এই সবে শুরু। দিল্লি-উত্তরপ্রদেশ-হরিয়ানা এবং রাজস্থানের বহু জায়গাতেই চালু হতে চলেছে নমো ভারত ট্রেন পরিষেবা। ট্রেনে দেশের অন্যান্য অংশেও এই পরিষেবার সূচনা হবে। তার ফলে শিল্পায়নের পাশাপাশি বাড়বে কর্মসংস্থানের পরিসর।
বন্ধুগণ,
এই শতকের তৃতীয় দশক হল ভারতীয় রেলকে আরও উন্নত করে তোলার দশক। আপনাদের, বিশেষত যুবক-যুবতীদের আমি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি যে এই দশকের শেষ নাগাদ ভারতে এমন সব ট্রেন চালু হবে, যা মানের নিরিখে বিশ্বের যে কোন প্রান্তের ট্রেনের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারে। যাত্রী নিরাপত্তা, পরিষেবা, পরিচ্ছন্নতা সব ক্ষেত্রেই নতুন নতুন মাইল ফলক স্পর্শ করবে ভারতীয় রেল। এ দেশের রেলপথের ১০০ শতাংশ বৈদ্যুতিকীকরণের কাজ সম্পন্ন হতে খুব দেরি নেই। নমো ভারত চালু হল, এর আগে চালু হয়েছে বন্দে ভারত। অমৃত ভারত স্টেশন অভিযানের আওতায় রেল স্টেশনগুলিকে আধুনিক করে তোলা হচ্ছে। অমৃত ভারত, বন্দে ভারত এবং নমো ভারত ত্রয়ী এ দশকের শেষ নাগাদ আধুনিক রেল পরিষেবার প্রশ্নে ভারত কোন উচ্চতায় পৌঁছবে তার একটা আভাস দেয়। ভারত মাল্টিমোডাল পরিবহন প্রণালী গড়ে তুলতে জোর কদমে এগিয়ে চলেছে। নমো ভারত ট্রেন পরিষেবার ক্ষেত্রেও সেদিকে লক্ষ্য রাখা হচ্ছে। এই ট্রেন যেসব স্টেশনের ওপর দিয়ে যাবে সেখানে রেল, মেট্রো এবং বাসে যাতায়াতের সুবিধা থাকবে পুরোদমে। দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে নাগরিকদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের বিষয়টি নিবিড়ভাবে যুক্ত। চাই পরিচ্ছন্ন বাতাস, আবর্জনা মুক্ত জনপদ, ভালো ও শিক্ষা ও চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান। সরকার বিশেষভাবে লক্ষ্য দিচ্ছে এদিকে।
বন্ধুগণ,
পরিবহনের প্রসারে জল, স্থল, আকাশ এমনকি মহাকাশ পরিসরকেও কাজে লাগাতে চায় ভারত। জলপথ পরিবহনে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। গঙ্গায় গড়ে উঠছে দীর্ঘতম জলপথ। বেনারস থেকে হলদিয়া পর্যন্ত একের পর এক জলপথ পরিবহন কেন্দ্র গড়ে তোলা হচ্ছে। কৃষকরা এখন তাঁদের উৎপাদিত ফসল জলপথের মাধ্যমে বিভিন্ন জায়গায় পাঠাতে পারেন। সম্প্রতি গঙ্গা বিলাস বিশ্বের দীর্ঘতম প্রমোদ তরণী যাত্রা সম্পন্ন করেছে। উপকূল এলাকায় বন্দর পরিকাঠামকে আরও আধুনিক করে তোলা হচ্ছে। এবার আসা যাক স্থলপথ পরিবহনের প্রসঙ্গে। আধুনিক সড়ক গড়ে তুলতে সরকার ৪ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি খরচ করছে। নমো ভারত অথবা মেট্রো ট্রেন পরিষেবার প্রসারে বিনিয়োগ করা হচ্ছে ৩ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি। উড়ান পরিষেবার ক্ষেত্রেও দ্রুত এগিয়ে চলেছে ভারত। যাঁরা হাওয়াই চপ্পল পরেন তাঁদের কাছেও প্লেনে যাতায়াত এখন আর আকাশ কুসুম নয়। বিগত ৯ বছরে দেশে বিমান বন্দরের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। আমাদের বিভিন্ন উড়ান সংস্থা সম্প্রতি ১ হাজারেরও বেশি নতুন বিমান কেনার বরাত দিয়েছে। মহাকাশ ক্ষেত্রে ভারতের অগ্রগতি চোখ ধাঁধিয়ে দেওয়ার মতো। চাঁদের মাটিতে তিরঙ্গা পতাকা পুঁতে দিয়েছে আমাদের চন্দ্রযান। মহাকাশ বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে ২০৪০ পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে। খুব শীঘ্রই ভারতের নাগরিকদের নিয়ে মহাকাশ অভিযানে সামিল হবে আমাদের গগনযান। মহাকাশে আমরা তৈরি করব নিজেদের গবেষণা কেন্দ্র। চাঁদের মাটিতে প্রথম ভারতীয়ের পদার্পন ঘটতে আর বেশি দেরি নেই। এ সবই হচ্ছে আমাদের প্রতিভাবান তরুণ প্রজন্মের কল্যাণে।
বন্ধুগণ,
বড় শহরগুলিতে দূষণ কমিয়ে বায়ুর গুণমান উন্নত করা একান্ত জরুরি। সেকথা মাথায় রেখে ইলেকট্রিক বাসের ব্যবহার বাড়ানো হচ্ছে। রাজ্যগুলিকে ১০ হাজার ইলেকট্রিক বাস দেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার একটি পরিকল্পনার সূচনা করেছে।
বন্ধুগণ,
মেডিকেল কলেজের সংখ্যা বাড়লে অসংখ্য মানুষ চিকিৎসার সুযোগ পান অনায়াসে। পাশাপাশি চিকিৎসক হতে আগ্রহী যুবক-যুবতীদের স্বপ্ন পূরণও অনেক সহজ হয়। ডিজিটাল পরিকাঠামোর বিস্তার ঘটলে দরিদ্রতম মানুষও নিজের প্রাপ্য পেয়ে যান ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট মারফৎ। বার বার বিভিন্ন দপ্তরে ছোটাছুটির হাত থেকে তাঁরা রেহাই পান। এই সব ক্ষেত্রেই বিগত দশকে দেশ অনেক দূর এগিয়েছে।
আমার পরিবারের সদস্যরা,
উৎসবের মরশুমে সাধারণ মানুষের সুবিধার্থে সরকার বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর ফলে উপকৃত হবেন কৃষক, কর্মী এবং পেনশন ভোগীরা। রবি শস্যের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য অনেকটাই বাড়ানো হয়েছে। মুশুর ডালের ক্ষেত্রে প্রতি কুইন্টাল ৪২৫ টাকা, সরষের ক্ষেত্রে প্রতি কুইন্টাল ২০০ টাকা এবং গমের ক্ষেত্রে প্রতি কুইন্টাল দেড়শ টাকা বাড়ানো হয়েছে এক্ষেত্রে। ২০১৪-য় গমের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য ছিল প্রতি কুইন্টাল ১৪০০ টাকা, এখন তা ২ হাজার টাকার বেশি। মুসুর ডালের ক্ষেত্রে ন্যূনতম সহায়ক মূল্য বিগত ৯ বছরে দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে। এই সময়কালে সরষের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য বহু পরিমানে বাড়িয়ে প্রতি কুইন্টাল ২ হাজার ৬০০ টাকা করা হয়েছে। ফসলের উৎপাদন খরচের অন্তত দেড় গুন কৃষকরা যাতে দাম হিসেবে পেতে পারেন তা নিশ্চিত করায় আমাদের দায়বদ্ধতা আরও স্পষ্ট হয়েছে। কৃষকদের কাছে সুলভে সার পৌঁছে দিতেও বিশেষভাবে উদ্যোগী কেন্দ্রীয় সরকার। বহু দেশেই ইউরিয়ার ব্যাগের দাম প্রায় ৩ হাজার টাকা। ভারতে এক ব্যাগ ইউরিয়া কেনার খরচ ৩০০ টাকার কম। কৃষকদের এই সুবিধা দিতে প্রতি বছর সরকারের খরচ হয় আড়াই লক্ষ কোটি টাকার বেশি। এই বিষয়টি মনে রাখার জন্য আপনাদের অনুরোধ জানাই।
বন্ধুগণ,
ফসলের অবশিষ্টাংশ থেকে জৈব জ্বালানি তৈরি করায় সরকার বিশেষ অগ্রাধিকার দিচ্ছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে গড়ে উঠছে জৈব জ্বালানি এবং ইথানল উৎপাদন কেন্দ্র। ৯ বছর আগের তুলনায় এখন বিশ্বে এখন ১০ গুণ বেশি ইথানল তৈরি হচ্ছে। এর ফলে কৃষকরা ইতিমধ্যেই প্রায় ৬৫ হাজার কোটি টাকা আয় করেছেন। বিভিন্ন কাজে, বিশেষত পরিবহনে ইথানলের ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ায় বিশেষভাবে উপকৃত হয়েছেন আখ চাষীরা।
বন্ধুগণ,
উৎসবের মরশুমের শুরুতে উজ্জ্বলা যোজনার আওতায় গ্যাস সিলিন্ডারের দাম ৫০০ টাকা কমানো হয়েছে। দেশের ৮০ কোটি পরিবারকে বিনা মূল্যে রেশন দিচ্ছে সরকার। কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী এবং পেনশন ভোগীদের মহার্ঘ্য ভাতা ৪ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। রেলের গ্রুপ-বি এবং গ্রুপ-সি কর্মীরা দিওয়ালীর বোনাস পেয়ে গেছেন। কৃষক এবং সরকারী কর্মীদের আয় বৃদ্ধি বাজারের চাহিদার পরিমান বাড়িয়ে ব্যবসায়ীদের সুবিধা করে দেবে।
আমার প্রিয় ভাই ও বোনেরা,
আপনাদের উন্নতি হলে দেশও এগিয়ে চলবে। আপনারা খুশি হলে আমি খুশি হব। আজ আমি আপনাদের কাছে একটা জিনিস চাইছি। দেবেন কী? আপনাদের নিজস্ব যানবাহনের যেভাবে যত্ন করেন, এই নতুন ট্রেনগুলিরও যত্ন নেবেন ঠিক একইভাবে। নেবেন তো? অনেক ধন্যবাদ!
আমার সঙ্গে জোরে বলুন,
ভারত মাতা কি জয়!
ভারত মাতা কি জয়!
ভারত মাতা কি জয়!
ভারত মাতা কি জয়!
প্রধানমন্ত্রীর মূল ভাষণটি ছিল হিন্দিতে