শোভনা ভারতীয়াজী, হিন্দুস্থান টাইমস্ – এর সকল সদস্যবৃন্দ, উপস্থিত বিশিষ্ট জনেরা।
প্রথমেই আমি দেরীতে আসার জন্য সকলের কাছে মার্জনা চাইছি। ভোট প্রচারের কাজে ব্যস্ত ছিলাম। এখানে পৌঁছে বিমানবন্দর থেকে সরাসরি এসেছি আপনাদের কাছে। শোভনাজী যে বিষয়গুলি নিয়ে বক্তব্য রাখছিলেন, তা অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক।
বন্ধুগণ,
২০১৪’য় যখন আমাদের সরকার প্রথম গঠিত হয়, তখন এই আলোচনাসভার বিষয়বস্তু ছিল ভারতের পুনর্গঠন। ২০১৯ সালে আমরা যখন আরও সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ফিরে এলাম, তখন আপনারা উন্নততর ভবিষ্যতের জন্য আলাপচারিতা – এই বিষয়টিকে বেছে নিয়েছিলেন। আগামী বছর দেশে সাধারণ নির্বাচনের আগে ২০২৩ – এ আলোচ্য বিষয় হ’ল – সীমানা অতিক্রম। এটা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ বলে আমার মনে হয়। সাধারণত, নির্বাচনের আগে জনমত সমীক্ষায় ফলাফলের আভাস মেলে। কিন্তু, আপনারা স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, ২০২৪ – এ মানুষ সব নজির ভেঙে আমাদের সমর্থনে এগিয়ে আসবেন।
বন্ধুগণ,
ভারত পুনর্গঠন থেকে সীমানা অতিক্রম – এই পর্বটি উন্নতর ভবিষ্যতের ভিত গড়ে দিয়েছে। দীর্ঘ দিন ধরে একের পর এক বাধাবিপত্তিতে আচ্ছন্ন ছিল দেশ। ধারাবাহিক হামলা ও দীর্ঘ দিনের দাসত্ব ভারতকে বেঁধে ফেলেছিল নানাভাবে। স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় ঐক্য ও সংগ্রামের যে আবহ তৈরি হয়েছিল, তা স্বাধীনতা লাভের পরও বজায় থাকবে বলে প্রত্যাশিত ছিল। কিন্তু, তা হয়নি। বড় বাধা হয়ে দাঁড়ালো মানসিক গঠন। অর্থহীন আশঙ্কার বাঁধনে থমকে গেল উন্নয়ন। ২০১৪’র পর এইসব প্রতিবন্ধকতা দূর করে ধারাবাহিকভাবে এগিয়ে চলেছে দেশ। এখন ভাবা হচ্ছে যে, সীমানা অতিক্রান্ত করার পরবর্তী অধ্যায় নিয়ে। ভারত পৌঁছে গেছে চাঁদের সেইখানে, যেখানে আগে কেউ যেতে পারেনি। ডিজিটাল লেনদেনের প্রশ্নে এই দেশ শীর্ষস্থানে। মোবাইল উৎপাদনের ক্ষেত্রেও এই দেশ এখন প্রথম। স্টার্টআপ বাস্তুতন্ত্রের প্রশ্নে এদেশের স্থান তৃতীয়। এখানে রয়েছে দক্ষ মানবসম্পদের বৃহত্তম ভান্ডার। জি-২০’র মতো মঞ্চে ভারত হ’ল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।
বন্ধুগণ,
আগে ভাবা হ’ত এই দেশে কিছুই হবে না। দুর্নীতি দূর হবে না – মানিয়ে নিতে হবে। এই ছিল দৃষ্টিভঙ্গী। সময়ানুবর্তিতা রক্ষা করা না গেলে বিষয়টিকে বলা হ’ত ইন্ডিয়ান টাইম। সরকার কিছু তৈরি করলে আগেভাগেই ভেবে নেওয়া হ’ত, তা নীচু মানের। ডান্ডি অভিযানের সময় গান্ধীজী যখন একখন্ড নুন তুলে নিলেন, তখন সেটা শুধুমাত্র একটা প্রতীকীই ছিল না, সারা দেশ আত্মপ্রত্যয়ী হয়ে উঠেছিল। চন্দ্রযানের সাফল্য ১৪০ কোটি নাগরিককে বিজ্ঞানী করে দেয়নি, তাঁরা মহাকাশচারীও হয়ে ওঠেননি। কিন্তু, দেশে তৈরি হয়েছে আত্মপ্রত্যয়ের এক অপূর্ব আবহ। পরিচ্ছন্নতা অভিযানের কথা ধরা যাক। আগে স্যানিটারি প্যাড কথাটা আলাপচারিতায় মানুষ ব্যবহারই করতেন না। সেই দ্বিধা এখন কেটেছে। অতীতে খাদি নিয়ে কেউ আগ্রহী ছিলেন না। কিন্তু, বিগত ১০ বছরে খাদি পণ্যের বিক্রি বেড়েছে তিনগুণ। জন ধন প্রকল্প যখন চালু হ’ল, তখন অনেকেই এর সাফল্য সম্পর্কে সন্ধিহান ছিলেন। আজ এই প্রকল্পের সুবাদে ব্যাঙ্কিং পরিষেবা সম্পর্কে মানুষের মনোভাবটাই পাল্টে গেছে। বাড়িতে বসেই এই পরিষেবা পাওয়া সম্ভব বলে আগে কেউ ভাবতেই পারতেন না। আজ তা বাস্তব। দরিদ্ররা আজ অনুভব করতে পারছেন, যে পরিষেবা সম্পন্নরা পেয়ে থাকেন, তা তাঁদেরও প্রাপ্য।
আগে যখন জঙ্গীরা এদেশের মাটিতে হামলা চালাতো, আমাদের সরকার সারা বিশ্বের কাছে সাহায্য চাইতো। আর আমাদের সময়কালে হামলাকারী দেশ সারা বিশ্বের কাছে বাঁচবার আর্তি জানিয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন রোধ সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকায় রয়েছে ভারত।
বন্ধুগণ,
ভারতে সম্পদের ঘাটতি ছিল না কোনও দিনই। কিন্তু, দারিদ্র্য মোকাবিলায় শ্লোগান নয়, চাই উপযুক্ত নীতি ও সদিচ্ছা। বস্তুত, আগের সরকারগুলি দরিদ্রদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের বিষয়টিকে উপেক্ষিত করে রেখেছিল। আমি বিশ্বাস করি যে, দরিদ্র মানুষ নিজেই দারিদ্র্যের মোকাবিলা করে বিজয়ী হতে সক্ষম। দরকার আমাদের তরফে সহায়তা। সেকথা মাথায় রেখে আমাদের সরকার একের পর এক পদক্ষেপ নিয়েছে। পাঁচ বছরে দারিদ্র্য সীমার উপরে উঠে এসেছেন ১৩ কোটিরও বেশি মানুষ।
বন্ধুগণ,
স্বজন পোষণ ও পরিবারতান্ত্রিক রাজনীতি দেশের উন্নয়নের প্রশ্নে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। সাধারণ মানুষ ছিলেন উপেক্ষিত। ক্রীড়া, বিজ্ঞান – সবক্ষেত্রেই দেশের সাফল্য সম্পর্কে একটা সন্দেহের বাতাবরণ তৈরি হয়েছিল সেই সময়। আজ প্রতিটি ক্ষেত্রেই সাফল্যের সোপান বেয়ে ভারত এগিয়ে চলেছে।
বন্ধুগণ,
আধুনিক পরিকাঠামোর অভাব ছিল আরও একটি বড় বাধা। সমস্যার সমাধানে আমরা হাতে নিয়েছি বিশ্বের বৃহত্তম পরিকাঠামো নির্মাণ কর্মসূচি। ২০১৩-১৪’য় দেশে দৈনিক গড়ে ১২ কিলোমিটার রাস্তা তৈরি হ’ত। ২০২২-২৩ এ তা বেড়ে হয়েছে দৈনিক ৩০ কিলোমিটার। ২০১৪’য় ৫টি শহরে মেট্রো পরিষেবা ছিল। ২০২৩ – এ ২০টি শহরে মেট্রো পরিষেবা চালু হয়েছে। ২০১৪’য় দেশে যেখানে ৭০টি বিমানবন্দর চালু ছিল, সেখানে ২০২৩ – এ ১৫০টি শহরে মিলছে উড়ান পরিষেবা। ২০১৪’য় যোগাযোগের প্রশ্নে দেশে মাত্র ৩৫০ কিলোমিটার অপ্টিকাল ফাইবার ভরসা ছিল। আজ ৬০ লক্ষ কিলোমিটার অপ্টিকাল ফাইবার গ্রাম পঞ্চায়েতগুলিকে সংযুক্ত করেছে। প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনার কল্যাণে ৯৯ শতাংশ গ্রামে পৌঁছেছে সড়ক সংযোগ। রেল লাইন বৈদ্যুতিকীকরণের কাজ এগিয়ে চলেছে নজির বিহীনভাবে। আমরা প্রমাণ করে দিয়েছি যে, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক উৎকর্ষসাধনে মেলবন্ধন সম্ভব। কোভিড অতিমারী মোকাবিলায় দেশের সাফল্য তার প্রমাণ।
বন্ধুগণ,
বহু অমূলক চিন্তাভাবনা ও আশঙ্কা দেশের প্রশাসনকে নীতি পঙ্গুত্বে ভুগিয়েছে বহুদিন। এর একটি উদাহরণ মহিলা আসন সংরক্ষণ বিল নিয়ে টালবাহানা। সেসব দূর করে আমরা নিয়ে এসেছি নারী শক্তি বন্দন অধিনিয়ম। সংবিধানের ৩৭০ ধারা রদ করার সাহসী সিদ্ধান্ত জম্মু ও কাশ্মীরকে মূলস্রোতে ফিরিয়ে এনেছে। ২০১৩’য় ভারতীয় অর্থনীতি সম্পর্কে দেশের ও বিদেশের সংবাদ মাধ্যম হতাশাব্যঞ্জক ছবিই আঁকতো। এখন ভারতের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বৃদ্ধির হার নজর কেড়েছে সারা বিশ্বের। প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম রপ্তানী পৌঁছেছে নজির বিহীন মাত্রায়।
বন্ধুগণ,
২০৪৭ সাল নাগাদ বিকশিত ভারতের স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্য নিয়ে অমৃতকালে এগিয়ে চলেছে দেশ। নাগরিকদের আত্মপ্রত্যয় আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি। তখন হিন্দুস্থান টাইমস্ লিডারশিপ সামিট – এর বিষয়বস্তু হয়তো হবে ‘উন্নত দেশ’। এরপর?
অনেক অনেক ধন্যবাদ!
(প্রধানমন্ত্রীর মূল ভাষণটি ছিল হিন্দিতে)