নমস্কার,
মধ্যপ্রদেশের উদ্যোগী মুখ্যমন্ত্রী ডঃ মোহন যাদব, লোকসভার প্রাক্তন অধ্যক্ষ, যিনি দীর্ঘদিন ইন্দোরের দায়িত্ব সামলেছেন সেই সুমিত্রা মাসি, সংসদে আমার সহকর্মীরা, নতুন বিধানসভার নির্বাচিত বিধায়করা, অন্য বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এবং আমার প্রিয় শ্রমিক ভাই ও বোনেরা!
আজকের দিনটি আমাদের শ্রমিক ভাই-বোনদের বহু বছরের পরিশ্রম, সংকল্প ও স্বপ্নের ফসল। আমার আরও বেশি আনন্দ হচ্ছে কারণ আজ অটলজির জন্মবার্ষিকী এবং মধ্যপ্রদেশের নতুন বিজেপি সরকার ও নতুন মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে এটাই আমার প্রথম জনসভা। আমার দরিদ্র, দুঃস্থ শ্রমিক ভাই-বোনদের জন্য এখানে উপস্থিত হওয়ার সুযোগ পেয়ে আমি অত্যন্ত আনন্দিত।
আমাদের শ্রমিক পরিবারের আশীর্বাদ যে ডবল ইঞ্জিন সরকারের নতুন দলের ওপরেও বর্ষিত হবে, সে সম্বন্ধে আমি নিশ্চিত। গরিবদের আশীর্বাদ, স্নেহ ও ভালোবাসা কেমন চমকপ্রদ ঘটনা ঘটাতে পারে, তা আমি ভালো করেই জানি। আগামীদিনে মধ্যপ্রদেশের এই নতুন দল বিভিন্ন সাফল্য অর্জন করবে। আমি শুনেছি হুকুমচাঁদ মিলের শ্রমিকদের জন্য প্যাকেজ ঘোষণার পর ইন্দোরে কী রকম উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছিল। এই সিদ্ধান্ত আমাদের শ্রমিক ভাই-বোনদের আনন্দে ভরিয়ে দিয়েছে।
আজকের এই অনুষ্ঠান আরও বিশেষ হয়ে উঠেছে, কারণ আজ অটল বিহারী বাজপেয়ীজির জন্মবার্ষিকী এবং সুশাসন দিবস। আমরা সকলেই মধ্যপ্রদেশের সঙ্গে অটলজির সম্পর্ক এবং এই রাজ্যের প্রতি তাঁর ভালোবাসার কথা জানি। সুশাসন দিবসে এই অনুষ্ঠানে আপনারা যাঁরা উপস্থিত হয়েছেন, তাঁদের সবাইকে আমি অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানাই।
আমার পরিবারের সদস্যরা,
সরকারের উদ্যোগের প্রতীক হিসেবে আজ ২২৪ কোটি টাকার চেক দেওয়া হয়েছে। এই অর্থ আগামীদিনে শ্রমিক ভাই ও বোনেদের কাছে পৌঁছে যাবে। আমি জানি, আপনাদের অনেক চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে হয়েছে। কিন্তু এখন আপনাদের সামনে সোনালী ভবিষ্যতের ভোর। ইন্দোরের মানুষ ২৫ ডিসেম্বর দিনটিকে শ্রমিকদের ন্যায়বিচার পাওয়ার দিন হিসেবে মনে রাখবেন। আমি আপনাদের ধৈর্য্য ও কঠোর পরিশ্রমকে কুর্নিশ জানাই।
বন্ধুরা,
আমি বরাবরই বলে এসেছি যে, দেশের চার শ্রেণির মানুষ আমার কাছে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ। এঁরা হলেন- দরিদ্র, যুব, মহিলা এবং আমার কৃষক ভাই-বোনেরা। দরিদ্র মানুষের জীবন পরিবর্তনের জন্য মধ্যপ্রদেশ সরকার বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। দরিদ্রদের সেবা, শ্রমিকদের সম্মান জ্ঞাপন এবং সমাজের বঞ্চিত অংশকে তাঁদের মর্যাদা দেওয়া আমাদের অগ্রাধিকার। দেশের শ্রমিকদের যাতে ক্ষমতায়ন হয় এবং তাঁরা যাতে এক সমৃদ্ধ ভারত গড়তে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারেন, আমরা তা সুনিশ্চিত করার চেষ্টা চালাচ্ছি।
আমার পরিবারের সদস্য,
পরিচ্ছন্নতা ও সুস্বাদু খাবারের জন্য বিখ্যাত ইন্দোর বহু ক্ষেত্রেই নেতৃত্ব দিচ্ছে। ইন্দোরের উন্নয়নে এখানকার বস্ত্রশিল্প গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। আপনারা সকলেই এখানকার শতবর্ষ প্রাচীন মহারাজা তুকোজিরাও ক্লথ মার্কেটের ইতিহাস জানেন। শহরের প্রথম কটন মিল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন হোলকর রাজ পরিবার। এখানকার মালবের তুলো ব্রিটেন ও বহু ইউরোপীয় দেশে যেত, তা থেকে সেখানকার মিলগুলিতে কাপড় তৈরি হত। একটা সময় ছিল, যখন ইন্দোরের বাজারগুলি তুলোর দাম নির্ধারণ করতো। ইন্দোরের তৈরি পোশাকের চাহিদা দেশে-বিদেশে সর্বত্রই ছিল। এখানকার বস্ত্র মিলগুলি কর্মসংস্থানের এক গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে পরিণত হয়েছিল। এখানকার মিলগুলিতে কাজ করা বহু শ্রমিকই অন্যান্য রাজ্য থেকে আসতেন। সেই সময় ইন্দোরকে ম্যাঞ্চেস্টারের সঙ্গে তুলনা করা হত। তবে তারপর সময় বদলে গেছে, পূর্ববর্তী সরকারগুলির গৃহীত নীতির খেসারত দিতে হয়েছে ইন্দোরকে।
ডবল ইঞ্জিন সরকার ইন্দোরের সেই হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চালাচ্ছে। ভূপাল ও ইন্দোরের মধ্যে বিনিয়োগ করিডর তৈরি করা হচ্ছে। ইন্দোর-পিতমপুর অর্থনৈতিক করিডর, বহুমুখি লজিস্টিক পার্ক, বিক্রম উদ্যোগপুরিতে মেডিকেল ডিভাইস পার্ক, ধার জেলার ভেনসোলাতে পিএম মিত্র পার্ক-এর মতো বিভিন্ন প্রকল্পে সরকার কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করছে। এতে হাজার হাজার নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। এইসব উন্নয়নমূলক প্রকল্পের সুবাদে এখানকার অর্থনীতির দ্রুত বিকাশ হচ্ছে।
বন্ধুরা,
মধ্যপ্রদেশের একটা বিশাল অঞ্চল তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য ও ঐতিহাসিক ঐতিহ্যের জন্য বিখ্যাত। উন্নয়ন ও পরিবেশের মধ্যে ভারসাম্য রেখে কীভাবে চলতে হয়, ইন্দোর সহ এ রাজ্যের বহু শহর তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এশিয়ার বৃহত্তম গোবর্ধন কারখানা রয়েছে ইন্দোরে। ইলেক্ট্রিক গাড়ির ব্যবহার বাড়াতে এখানে ই-চার্জিং পরিকাঠামো গড়ে তোলা হচ্ছে।
আজ ভার্চুয়াল মাধ্যমে জালুদ সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পের ভূমি পূজন করার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। এই কারখানা চালু হলে প্রতি মাসে ৪ কোটি টাকা বিদ্যুতের খরচ বাঁচবে। এই কারখানার জন্য গ্রীন বন্ড-এর মাধ্যমে মানুষের থেকে অর্থ সংগ্রহ করা হচ্ছে জেনে আমি আনন্দিত। এই গ্রীন বন্ড পরিবেশ রক্ষায় নাগরিকদের সক্রিয় অংশগ্রহণের অন্যতম মাধ্যম হয়ে উঠবে।
আমার পরিবারের সদস্যরা,
নির্বাচনের সময়ে যেসব প্রতিশ্রুতি আমরা দিয়েছি, যেসব সংকল্প গ্রহণ করেছি, তা পূরণের জন্য রাজ্য সরকার দ্রুততার সঙ্গে কাজ করছে। সরকারি প্রকল্পগুলির সুফল যাতে প্রতিটি মানুষ পান, তা সুনিশ্চিত করতে মধ্যপ্রদেশের প্রতিটি প্রান্তে বিকশিত ভারত সংকল্প যাত্রা পৌঁছে যাচ্ছে। নির্বাচনের জন্য মধ্যপ্রদেশে এই প্রকল্প একটু দেরিতে শুরু হয়েছে। তবে উজ্জয়িনীতে এটি চালু হওয়ার কয়েকদিনের মধ্যেই এ সংক্রান্ত ৬০০রও বেশি কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে।
এই প্রয়াসের মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ মানুষ সরাসরি সুবিধা পাচ্ছেন। মধ্যপ্রদেশের প্রতিটি মানুষকে আমি অনুরোধ জানাচ্ছি, মোদীর গ্যারান্টি গাড়ি যখন আপনাদের এলাকায় পৌঁছবে, তখন আপনারা তার পুরো সদ্ব্যবহার করুন। সবাই সেখানে উপস্থিত থাকুন। সরকারি প্রকল্পগুলির সুফল থেকে একটি মানুষও যাতে বঞ্চিত না হন, আমরা তা নিশ্চিত করার চেষ্টা চালাচ্ছি।
মোদীর গ্যারান্টিতে আস্থা রেখে আমাদের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা দেওয়ার জন্য আমি আরও একবার মধ্যপ্রদেশের মানুষকে আমার কৃতজ্ঞতা জানাই। আপনাদের সবার প্রতি রইলো আমার শুভেচ্ছা। রাজ্য সরকার আজ আমাকে গরিব ও শ্রমিকদের জন্য আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের সুযোগ করে দিয়েছে। এইসব মুহুর্ত আমার কাছে সম্পদ। সেজন্যই আমি ইন্দোরের মানুষ, মধ্যপ্রদেশ সরকার এবং আমার শ্রমিক ভাই-বোনরা, যাঁরা আজ আমাদের আশীর্বাদ করতে বিপুল সংখ্যায় এসেছেন, তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞ। তাঁদের গলার মালা আমাকে বুঝিয়ে দিচ্ছে, এই অনুষ্ঠান কতটা শুভ। সুদীর্ঘ অপেক্ষার পর এমন দিন এসেছে। আপনাদের মুখের হাসি আর গলার মালার সুগন্ধ, আমাদের সমাজের উন্নতিতে এই রকম আরও কাজ করতে উৎসাহিত করবে। আপনাদের সবাইকে শুভেচ্ছা জানাই।
ধন্যবাদ।
প্রধানমন্ত্রী মূল ভাষণটি হিন্দিতে দিয়েছিলেন।