আজকের এই গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচিতে উপস্থিত কর্ণাটকের রাজ্যপাল ও মুখ্যমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রী শ্রী রাজনাথ সিং-জি, মন্ত্রিসভায় আমার অন্যান্য সদস্যবৃন্দ, বিদেশের বিভিন্ন রাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রীবৃন্দ, শিল্প সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দ, অন্যান্য বিশিষ্টজন, ভদ্রমহিলা ও ভদ্রমহোদয়গণ!
এরো ইন্ডিয়ার চাঞ্চল্যকর এই মুহূর্তটি চাক্ষুষ করার জন্য যে সহকর্মীরা আজ এখানে উপস্থিত রয়েছেন তাঁদের সকলকেই আমার অভিনন্দন জানাই। বেঙ্গালুরুর আকাশপথ আজ প্রত্যক্ষ করছে নতুন ভারতের সম্ভাবনাকে। নতুন ভারতের বাস্তবতার শিখর কতটা উঁচু হতে পারে তাও আজ পরিলক্ষিত হচ্ছে বেঙ্গালুরুর আকাশে। কারণ, দেশ আজ এক নতুন উচ্চতাকে শুধুমাত্র স্পর্শই করছে না, তাকে আরও, আরও ওপরে নিয়ে যেতে চাইছে।
বন্ধুগণ,
এরো ইন্ডিয়ার এই অনুষ্ঠান ভারতের ক্রমবর্ধমান সম্ভাবনার এক বিশেষ দৃষ্টান্ত। এরো ইন্ডিয়ার আজকের এই প্রদর্শনীতে বিশ্বের প্রায় ১০০টি দেশের প্রতিনিধি এখানে উপস্থিত। ভারতের ওপর বিশ্ববাসীর আস্থা ও বিশ্বাস এখন কতখানি তা এথেকেই প্রমাণিত। দেশ-বিদেশের ৭০০টিরও বেশি সংস্থা আজকের এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করছে যা অতীতের সমস্ত রেকর্ডকে ম্লান করে দিয়েছে। এরো ইন্ডিয়ার অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করছে ভারতের বিভিন্ন ক্ষুদ্র, মাঝারি ও অণু শিল্প সংস্থা, দেশের নানা স্টার্ট-আপ সংস্থা এবং বিশ্বের পরিচিত বিশেষ বিশেষ সংস্থাগুলি। সংক্ষেপে বলতে গেলে, এরো ইন্ডিয়ার থিম হিসেবে ‘রানওয়ে টু বিলিয়ন অপরচুনিটিজ’ আজ প্রতিভাত হচ্ছে মাটি থেকে আকাশ – সর্বত্রই। আত্মনির্ভর ভারতের এই সম্ভাবনা আগামীদিনে আরও প্রসারিত হোক এই কামনা জানাই।
বন্ধুগণ,
এরো ইন্ডিয়ার সঙ্গে প্রতিরক্ষা মন্ত্রীদের সম্মেলন এবং সিইও-দের রাউন্ড টেবিল বৈঠকও আজ এখানে আয়োজিত হচ্ছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সিইও-দের সক্রিয় অংশগ্রহণ এরো ইন্ডিয়ার আন্তর্জাতিক সম্ভাবনাকেও আরও প্রসারিত করতে সাহায্য করবে। বন্ধু দেশগুলির সঙ্গে ভারতের বিশ্বাসযোগ্য সম্পর্ককে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে তা হয়ে উঠবে এক বিশেষ মাধ্যম। এই ধরনের উদ্যোগগুলির জন্য প্রতিরক্ষা মন্ত্রক এবং বিভিন্ন শিল্প সংস্থার সহকর্মীদের জানাই আমার অভিনন্দন।
বন্ধুগণ,
এরো ইন্ডিয়ার গুরুত্ব আরও একটি কারণে বিশেষভাবে তাৎপর্যময়। কারণ, এই অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়েছে কর্ণাটকের মতো একটি রাজ্যে যা বিশ্ব প্রযুক্তিকে পথ দেখিয়ে নিয়ে গেছে। প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রের আকাশপথে নতুন নতুন সুযোগ সৃষ্টি হবে এই উদ্যোগের মধ্য দিয়ে। প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রের বর্তমান মূল শক্তিই হল প্রযুক্তি। তাই, কর্ণাটকের যুব সমাজের কাছে আমি আবেদন জানাই এই বিশেষ ক্ষেত্রটিতে পারদর্শিতা অর্জনের। প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে নতুন নতুন উদ্ভাবনী প্রচেষ্টা আরও সাফল্য এনে দিতে পারে যদি তোমরা সকলে এই সুযোগগুলির পূর্ণ সদ্ব্যবহারে আগ্রহী হয়ে ওঠো।
বন্ধুগণ,
কোনও দেশ যখন নতুন নতুন চিন্তাভাবনা ও দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আরও এগিয়ে যেতে থাকে তখন তার সার্বিক ব্যবস্থাতেও দ্রুত পরিবর্তন ঘটতে শুরু করে। এরো ইন্ডিয়ার আজকের এই অনুষ্ঠানসূচির মধ্যে প্রতিফলন ঘটছে এক নতুন ভারতের। এক সময় এই ধরনের প্রদর্শনী ছিল আক্ষরিক অর্থেই একটি প্রদর্শনীমাত্র কিংবা ভারতের কাছে বিপণনের একটি মাধ্যম মাত্র। কিন্তু গত কয়েক বছরে এই ধারণা ও দৃষ্টিভঙ্গির আমূল পরিবর্তন ঘটেছে। তাই, এরো ইন্ডিয়া আজ আর শুধুমাত্র একটি প্রদর্শনী নয়, বরং তা হল ভারতের শক্তি ও ক্ষমতার এক বহিঃপ্রকাশ। ভারতের প্রতিরক্ষা শিল্পের পরিধি কতটা প্রসারিত তা শুধু দেখানোর জন্যই এই ধরনের অনুষ্ঠান এখন আয়োজিত হয় না বরং, ভারত এখন কতটা আত্মবিশ্বাসী ও আত্মনির্ভর হয়ে উঠেছে তারই প্রতিফলন ঘটে এর মধ্য দিয়ে। এর কারণ হল বিশ্বের প্রতিরক্ষা সংস্থাগুলির কাছে ভারত এখন আর একটি বাজার মাত্র নয়, বরং প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে ভারত হল তাদের সম্ভাবনাপূর্ণ এক বিশেষ অংশীদার। প্রতিরক্ষা সম্পর্কিত সাজসরঞ্জাম উৎপাদনের ক্ষেত্রে বিশ্বের যে সমস্ত দেশ এগিয়ে রয়েছে তাদের কাছে ভারত এখন এক বিশ্বস্ত অংশীদার বিশেষ। কারণ, আমাদের প্রযুক্তি এখন শুধুমাত্র ব্যয়সাশ্রয়ীই নয়, বিশ্বের অন্যান্য দেশের কাছে তা এখন নির্ভরযোগ্যও বটে। সেরা উদ্ভাবন পদ্ধতির খোঁজ মেলে এখন আমাদের দেশেই। শুধু তাই নয়, এর পেছনে ভারতের সদুদ্দেশ্যই ফুটে ওঠে।
বন্ধুগণ,
‘প্রত্যক্ষম কিং প্রমাণম’ – প্রচলিত এই আপ্তবাক্যটির অর্থ হল, যা কিছুর মধ্যে তার স্বরূপটি দৃশ্যমান হয়, তাকে আবার নতুন করে তার বৈশিষ্ট্যের প্রমাণ দিতে হয় না। আমাদের সাফল্যের মধ্যেই ভারতের ক্ষমতা ও সম্ভাবনা কতখানি তার প্রমাণ মেলে। ভারতের ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ কর্মসূচির ক্ষমতা কতটা হতে পারে তার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হল তেজস যুদ্ধবিমান যা আকাশে বিভিন্ন সময়ে চক্কর কাটে। ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ কর্মসূচি আজ কতখানি প্রসারিত তার আরও একটি প্রমাণ হল ভারত মহাসাগরে বিমানবাহী জাহাজ আইএনএস বিক্রান্ত-এর উপস্থিতি। গুজরাটের ভদোদরায় সি-২৯৫ বিমান তৈরির সুযোগ-সুবিধা বা তুমাকুরুতে হ্যাল-এর হেলিকপ্টার ইউনিট – যাই হোক না কেন, তার মধ্যে আত্মনির্ভর ভারতের সম্ভাবনাপূর্ণ পরিচয়টি ফুটে ওঠে। এইভাবেই ভারত তথা সমগ্র বিশ্বের কাছে আজ উন্নততর সুযোগ-সুবিধার পাশাপাশি পছন্দ করা বা বেছে নেওয়ার নতুন স্থানটিও আবিষ্কৃত হয়েছে।
বন্ধুগণ,
একবিংশ শতকের নতুন ভারতে কোনও সুযোগকেই আমরা নষ্ট হতে দেব না। বিফল হতে দেব না আমাদের কোনও প্রচেষ্টাকেই। আমাদের উন্নয়ন প্রচেষ্টায় গতি ক্রমান্বয়ে সঞ্চারিত হতে থাকবে। সংস্কার প্রচেষ্টার ক্ষেত্রে প্রতিটি বিষয়ে আমরা বিপ্লব ঘটাব। এক সময় আমাদের দেশ ছিল প্রতিরক্ষা সাজসরঞ্জামের ক্ষেত্রে বৃহত্তম আমদানিকারক একটি দেশ। কিন্তু বর্তমানে বিশ্বের ৭৫টি দেশে রপ্তানি করা হচ্ছে ভারতে উৎপাদিত প্রতিরক্ষা সামগ্রী। গত পাঁচ বছরে আমাদের প্রতিরক্ষা রপ্তানি বৃদ্ধি পেয়েছে ছ’গুণ। শুধুমাত্র ২০২১-২২ সালেই ১.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি মূল্যের প্রতিরক্ষা সাজসরঞ্জাম ভারত রপ্তানি করেছে বিশ্বের অন্যান্য দেশে।
বন্ধুগণ,
আপনারা সকলেই হয়তো জানেন যে প্রতিরক্ষা হল এমন একটি ক্ষেত্র যেখানে প্রযুক্তি, বিপণন এবং বাণিজ্যিক প্রচেষ্টাকে খুবই জটিল একটি প্রক্রিয়া বলে মনে করা হয়। তা সত্ত্বেও গত ৮-৯ বছরে ভারত তার প্রতিরক্ষার দৃশ্যপটটি আমূল বদলে দিয়েছে। আমরা মনে করি যে এটি একটি সূচনা মাত্র। আগামী ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের মধ্যে ভারতের রপ্তানি বাণিজ্যের পরিমাণ ১.৫ বিলিয়ন থেকে ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে আমাদের। এই সময়কালে আমাদের সকল প্রচেষ্টারই লক্ষ্য হবে এক বিশেষ ক্ষেত্র প্রস্তুত করা যার মধ্য দিয়ে ভারত দ্রুত বিশ্বের বৃহত্তম প্রতিরক্ষা উৎপাদনকারী দেশগুলির সঙ্গে পাল্লা দিতে পারবে। এই প্রচেষ্টায় দেশের বেসরকারি ক্ষেত্র অর্থাৎ, বিনিয়োগকারীরা এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছেন। এই পরিস্থিতিতে দেশের বেসরকারি ক্ষেত্রের কাছে আমি আহ্বান জানাব ভারতের প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে সাধ্যমতো বিনিয়োগ করার জন্য। দেশের প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে আপনাদের এই বিনিয়োগ নতুন নতুন বাণিজ্যের পথ প্রসারিত করবে আপনাদের সামনে যার সদ্ব্যবহারের মাধ্যমে শুধু ভারতেই নয়, বিদেশের অন্যান্য দেশের সঙ্গেও বাণিজ্যিক লেনদেনে আপনারা আগ্রহী হয়ে উঠবেন। আপনাদের কাছে নতুন নতুন সুযোগ ও সম্ভাবনার দ্বার এখন উন্মুক্ত। তাই, এই সুযোগকে কোনভাবেই অবহেলা করা উচিত নয় অন্যান্য দেশের প্রতিরক্ষা শিল্প সংস্থাগুলির।
বন্ধুগণ,
একটি যুদ্ধবিমানের মতোই দ্রুতগতিতে এবং নির্দিষ্ট লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে চলেছে ভারতের ‘অমৃতকাল’। ভারত হল এমন একটি দেশ যে নতুন নতুন শিখরে আরোহণ করতে কখনই ভীত নয় বরং, আরও ওপরে ওঠার মধ্যেই সে তার প্রাণশক্তিকে খুঁজে পায়। বর্তমান ভারত দ্রুত চিন্তাভাবনা করতে পারে কারণ আমাদের চিন্তাশক্তি সুদূরপ্রসারিত। তাই, আকাশে যুদ্ধবিমান যেভাবে দ্রুততার সঙ্গে এগিয়ে যেতে থাকে, ঠিক ততটাই দ্রুততার সঙ্গে যে কোনও মুহূর্তে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা রাখি আমরা। সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হল, ভারতের গতি যাই হোক না কেন, তার শিকড়টি কিন্তু সব সময় থেকে যায় আমাদের এই মাটিতেই। কারণ, মূল থেকে সে কখনই বিচ্ছিন্ন হতে চায় না। এতটাই সে সজাগ ও সতর্ক। আমাদের বিমান চালকরাও ঠিক এই ভূমিকাই পালন করে থাকেন।
এরো ইন্ডিয়ার কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে প্রতিধ্বনিত হয় ভারতের ‘সংস্কার, কর্মপ্রচেষ্টা তথা রূপান্তরের অক্ষপথ’-এর দিকে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান। ভারতে বর্তমানে রয়েছে এমন এক সরকার যে কোনও বিষয়েই দৃঢ় সিদ্ধান্ত গ্রহণে পিছপা হয় না। আমাদের রয়েছে এমন কিছু নীতি যা যথেষ্ট স্থিতিশীল এবং আমাদের নীতিগুলির মধ্যে রয়েছে এক সুস্পষ্ট উদ্দেশ্য। এক কথায় যার তুলনা মেলা ভার। ভারতের এই অনুকূল পরিবেশের পূর্ণ সুযোগ গ্রহণ করা উচিত প্রত্যেক বিনিয়োগকর্তারই। বাণিজ্যিক কাজকর্মকে আরও সহজ করে তোলার লক্ষ্যে ভারত যেভাবে সংস্কার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে তা এখন আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে বিশ্বের সর্বত্র। বিশ্বের বিনিয়োগ তথা ভারতের উদ্ভাবন প্রচেষ্টা পরিবেশকে আরও অনুকূল করে তুলতে বেশ কয়েক কদম এগিয়ে গেছে বর্তমান ভারত। দেশের প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ প্রস্তাবের দ্রুত অনুমোদনের জন্য এ সম্পর্কিত নীতিগুলিকেও আরও সরল করে তোলা হয়েছে। বর্তমানে স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থাতেই ভারতের বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ অনুমোদন লাভ করছে। শিল্প সংস্থাগুলিকে লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রেও প্রক্রিয়াকরণের কাজকে আমরা সরল করে তুলেছি যাতে একই প্রক্রিয়ার আশ্রয় গ্রহণ করার জন্য তাদের বারংবার ছুটে আসতে না হয়। নির্মাণ ও উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত শিল্প সংস্থাগুলিকে কর-এর ক্ষেত্রে আরও বেশি সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার প্রস্তাব আনা হয়েছে দেশের বাজেটে। ১০-১২ দিন আগে তা কার্যকরও হয়েছে। প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত অন্যান্য সংস্থাগুলিও এর ফলে উপকৃত হবে।
বন্ধুগণ,
স্বাভাবিক নীতি-নিয়ম অনুযায়ী, কোনও দেশের শিল্প আরও প্রসারিত হতে পারে যখন চাহিদা, ক্ষমতা ও অভিজ্ঞতার প্রসার ঘটে। ভারতের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করে তোলার বিষয়টি আরও দ্রুততার সঙ্গে বৃদ্ধি পাবে বলে আমি আপনাদের আশ্বাস দিতে পারি। সেই লক্ষ্যেই আমাদের সকলকে একসাথে এগিয়ে যেতে হবে। একইসঙ্গে আমি এ বিষয়ে নিশ্চিত যে ভবিষ্যতে এরো ইন্ডিয়ার আরও বড় বড় ঘটনাকে আমরা প্রত্যক্ষ করতে পারব। আপনাদের সকলকেই আরও একবার ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা জানিয়ে আমার বক্তব্য এখানেই শেষ করছি। ভারতমাতার জয়!