নমস্কারজি!
আজকের এই কর্মসূচিতে উপস্থিত কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় আমার সহকর্মীবৃন্দ, বিভিন্ন রাজ্যের মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীগণ, সাংসদ ও বিধায়কগণ, অন্যান্য বিশিষ্টজন এবং ভদ্রমহিলা ও ভদ্রমহোদয়গণ।
আজকের এই কর্মসূচিতে আপনাদের সঙ্গে উপস্থিত রয়েছে পদ্ম পুরস্কার জয়ী বহু ব্যক্তিত্বই। আমি তাঁদের সকলকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্বাগত ও অভিনন্দন জানাই। আকাশবাণীতে এফএম সার্ভিসের সম্প্রসারণ সর্বভারতীয় এফএম গড়ে তোলার লক্ষ্যে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপবিশেষ। আকাশবাণীর ৯১টি এফএম ট্রান্সমিটারের সূচনার অর্থই হল দেশের ৮৫টি জেলার ২ কোটি মানুষের জন্য এক বিশেষ উপহার। শুধু তাই নয়, এই অনুষ্ঠান ভারতের রঙিন বৈচিত্র্যকেই আমাদের সামনে মেলে ধরেছে। এই ৮৫টি জেলার মধ্যে রয়েছে বেশ কিছু উচ্চাকাঙ্ক্ষামূলক ব্লক ও জেলা। এই সার্ভিসের সুযোগ গ্রহণ করে সেগুলি নিঃসন্দেহে উপকৃত হবে। এই সাফল্যের জন্য আমি অভিনন্দন জানাই আকাশবাণী কর্তৃপক্ষকে। উত্তর-পূর্ব ভারতে আমাদের ভাই-বোনেরা তথা তরুণ বন্ধুরা এর ফলে বিশেষভাবে উপকৃত হবেন। এই নতুন সার্ভিস চালু হওয়ায় আমি তাঁদের বিশেষভাবে অভিনন্দন জানাই।
বন্ধুগণ,
রেডিও এবং এফএম প্রসঙ্গে একটি কথা নিঃসন্দেহে বলা চলে যে আমাদের এই প্রজন্মের সঙ্গে এই সার্ভিসের এক বিশেষ যোগ রয়েছে। কারণ, তাঁরা হলেন এই এফএম তরঙ্গের বিশেষ শ্রোতা। আকাশবাণী তথা রেডিও সম্প্রচারের সঙ্গে আমার বিশেষ সম্পর্কের জন্য আমি আনন্দিত। মাত্র কয়েকদিন পরেই বেতারে ‘মন কি বাত’-এর ১০০তম এপিসোডটি আমি উপস্থাপনা করব। ‘মন কি বাত’-এর এই অভিজ্ঞতা এবং এর সঙ্গে দেশবাসীর আবেগ যুক্ত হয়েছে বেতার তরঙ্গের মাধ্যমে। এর মাধ্যমে দেশবাসীর সম্ভাবনার বিষয়গুলি আমি জানতে পারি এবং উপলব্ধি করি জাতির মিলিত দায়বদ্ধতার কথাও। ‘স্বচ্ছ ভারত অভিযান’, ‘বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও’ বা ‘হর ঘর তিরঙ্গা’ অভিযান – যাই-ই হোক না কেন, ‘মন কি বাত’-এর মঞ্চে এই অভিযানগুলি হয়ে উঠেছে এক বিশেষ জন-আন্দোলন। সেই অর্থে আকাশবাণীর সমগ্র টিমের একটি অংশ হয়ে উঠেছি আমি নিজেও।
বন্ধুগণ,
আজকের এই অনুষ্ঠান সম্পর্কে আরও একটি বিষয় উল্লেখ করবার মতো। এর মাধ্যমে একদা সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত মানুষের অগ্রাধিকারের কথাও তুলে ধরা হয়। এতদিন যাঁরা এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত ছিলেন এবং যাঁরা বাস করতেন সুদূর এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলে তাঁরাও এখন আমাদের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার সুযোগ পাবেন। সঠিক সময়ে তথ্য পৌঁছে দেওয়া, সমষ্টিভিত্তিক কাজের প্রসার, জলহাওয়া সংক্রান্ত তথ্য, কৃষি সংবাদ, শস্য, ফল ও শাকসবজির সর্বশেষ মূল্য পরিস্থিতি সম্পর্কে কৃষক ভাইদের কাছে তথ্য পৌঁছে দেওয়া, রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় কৃষিকর্মের ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে আলোচনা, চাষবাসের কাজে আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার, নতুন নতুন বাজার সৃষ্টি সম্পর্কে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের ওয়াকিবহাল করা কিংবা প্রাকৃতিক বিপর্যয় সম্পর্কে সমগ্র অঞ্চলকে সতর্ক করে দেওয়ার ক্ষেত্রে এই এফএম ট্রান্সমিটারগুলি খুবই গুরুত্বপূর্ণ এক ভূমিকা পালন করতে চলেছে।
বন্ধুগণ,
প্রযুক্তির গণতান্ত্রিকতার লক্ষ্যে আমাদের সরকার নিরন্তরভাবে কাজ করে চলেছে। এই সম্ভাবনার পূর্ণ সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করতে কোনও ভারতবাসীকেই এর সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা উচিত নয়। এজন্য আধুনিক প্রযুক্তিকে সকলের কাছে সুলভ করে তোলা প্রয়োজন। ভারতে এখন তথ্য সংগ্রহের বিষয়টি অপটিক্যাল ফাইবারের কারণে খুবই সহজ হয়ে উঠেছে। দেশের গ্রামগুলিও এই সুযোগ থেকে এখন আর বঞ্চিত নয়। মোবাইল ফোন এবং মোবাইল ডেটার জন্য ব্যয়ের মাত্রাও এখন সকলের নাগালের মধ্যে। দেশের প্রতিটি প্রান্তেই বর্তমানে নতুন নতুন ডিজিটাল শিল্পোদ্যোগের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে। ডিজিটাল প্রযুক্তির আশ্রয় গ্রহণ করে দেশের যুব সমাজ এখন আয় ও উপার্জন বৃদ্ধির জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। গ্রামে বসবাস করেও শুধুমাত্র ডিজিটাল প্রযুক্তির কারণেই তা এখন তাঁদের কাছে অধরা নয়। অন্যদিকে, ছোট দোকানদার এবং রাস্তার হকাররাও যখন ইন্টারনেট এবং ইউপিআই-এর সুযোগ লাভ করতে পারেন, তখন তাঁরাও ব্যাঙ্ক ব্যবস্থার সুযোগকে কাজে লাগাতে শুরু করেন। দেশের মৎস্যজীবীরা বর্তমানে সঠিক সময়ে জলহাওয়া সম্পর্কে সঠিক তথ্য লাভ করেন। একমাত্র প্রযুক্তির কল্যাণেই এটি সম্ভব হয়েছে। ক্ষুদ্র শিল্পোদ্যোগীরা এখন তাঁদের উৎপাদিত পণ্য প্রযুক্তির সাহায্যেই দেশের যে কোনও স্থানে পৌঁছে দিতে পারেন। সরকারি ই-মার্কেটগুলির সাহায্যও তাঁরা এখন পেতে পারেন।
বন্ধুগণ,
গত কয়েক বছরে দেশে যে প্রযুক্তি বিপ্লব ঘটে গেছে তা এখন রেডিও এবং বিশেষ করে এফএম-কে এক নতুন অবতারে আমাদের সামনে উপস্থিত করেছে। ইন্টারনেটের কারণে রেডিও এখন কোনভাবেই পিছিয়ে নেই বরং, অনলাইন এফএম এবং ব্রডকাস্টের মাধ্যমে উদ্ভাবনী পথে এগিয়ে এসেছে তারাও। ‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’ সৃষ্টি করেছে রেডিও-র নতুন নতুন শ্রোতা। নতুন নতুন চিন্তাভাবনার সুযোগ এনে দিয়েছে ‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’ কর্মসূচি। সত্যি কথা বলতে কি, সংযোগ ও যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রতিটি ক্ষেত্রেই এখন বিপ্লব ঘটে গেছে। ডিডি ফ্রি ডিশ-এর সুযোগ এখন পৌঁছে গেছে দেশের ৪ কোটি ৩০ লক্ষ পরিবারে। বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তের খবর এখন দেশের কোটি কোটি পরিবারে নিয়মিতভাবে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। সীমান্তবর্তী গ্রামগুলিও এই সুযোগ থেকে এখন আর বঞ্চিত নেই। সমাজের যে সমস্ত মানুষ বহু দশক ধরে দুর্বল ও বঞ্চিত অবস্থায় দিন কাটাচ্ছিলেন, তাঁরাও এখন ডিডি ফ্রি ডিশ-এর সাহায্যে শিক্ষা ও বিনোদনের সুযোগ লাভ করতে পারছেন। এর ফলে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের মধ্যে ফারাক বা বৈষম্য এখন অনেকাংশে দূর হয়েছে। উন্নতমানের তথ্য এখন পৌঁছে যাচ্ছে প্রতিটি মানুষের কাছে। ডিটিএইচ চ্যানেলগুলিতে নানা ধরনের শিক্ষাক্রম বা পাঠ্যসূচি ইতিমধ্যেই চালু হয়ে গেছে। দেশের প্রধান প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়গুলির অভিজ্ঞ অধ্যাপকদের ক্লাস করার সুযোগ এখন সম্প্রসারিত প্রতিটি মানুষের বাড়িতে। করোনা পরিস্থিতিকালে এই ব্যবস্থার সাহায্য উপকৃত হয়েছে দেশের কোটি কোটি ছাত্রছাত্রী। ডিটিএইচ বা এফএম রেডিও – যাই-ই হোক না কেন, তা ভবিষ্যৎ ভারতের জানালা আমাদের সামনে উন্মুক্ত করে দিয়েছে এবং সেই ভবিষ্যতের লক্ষ্যেই এখন চলছে আমাদের প্রস্তুতিপর্ব।
বন্ধুগণ,
এফএম ট্রান্সমিটারের মাধ্যমে সংযোগ ও যোগাযোগ প্রসারের আরও একটি বিশেষ মাত্রাও রয়েছে। এই এফএম ট্রান্সমিটারগুলি থেকে দেশের সবক’টি ভাষায় বিশেষত, ২৭টি উপ-ভাষায় সম্প্রচারিত হবে বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান। অন্যভাবে বলতে গেলে, এই সংযোগ ও যোগাযোগ শুধুমাত্র যোগাযোগের ক্ষেত্রেই নয়, মানুষের সঙ্গে মানুষের সংযোগ গড়ে তোলার ক্ষেত্রেও সমানভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। আমাদের সরকারের কর্মপদ্ধতির এ হল এক বিশেষ প্রতীক চিহ্ন। যখনই আমরা সংযোগ বা যোগাযোগের কথা বলি তখন রেল, সড়ক বা বিমানবন্দরের ছবি আমাদের সামনে ফুটে ওঠে। কিন্তু ব্যবহারিক পরিকাঠামো ছাড়াও সামাজিক যোগাযোগ গড়ে তোলার ওপরও আমাদের সরকার সমান গুরুত্ব দিয়েছে। দেশের জনসাধারণের মধ্যে যাতে সাংস্কৃতিক তথা বুদ্ধিদীপ্ত সমন্বয়সাধন সফল হয়ে উঠতে পারে সেই লক্ষ্যে আমাদের সরকার নিরন্তরভাবে কাজ করে চলেছে।
পদ্ম পুরস্কার, সাহিত্য পুরস্কার এবং শিল্পকলার পুরস্কারের মাধ্যমে গত ৯ বছরে প্রকৃত কর্মযোগী ও নায়কদের আমরা সম্মানিত করেছি। অতীতের মতো পদ্ম পুরস্কার এখন শুধুমাত্র সুপারিশের ভিত্তিতে দেওয়া হয় না, তা দেওয়া হয় দেশ ও সমাজের প্রতি সেবাকর্মের স্বীকৃতিতে। যে সমস্ত পদ্ম পুরস্কার জয়ী আমাদের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন তাঁরা সকলেই এই বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত। ধর্মীয় স্থান তথা তীর্থস্থানগুলিকে নতুন করে গড়ে তোলার ফলে সাধারণ মানুষ এখন একটি রাজ্য থেকে যাত্রা করছেন আরেকটি রাজ্যের উদ্দেশ্যে এবং এইভাবেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে তাঁরা এখন যাতায়াত করছেন। দেশের পর্যটন স্থানগুলিতে পর্যটকদের সংখ্যা বৃদ্ধি একথাই প্রমাণ করে যে দেশে সাংস্কৃতিক যোগাযোগ ও বন্ধন আরও নিবিড় হয়ে উঠেছে। আদিবাসী স্বাধীনতা সংগ্রামীদের স্মরণে গড়ে তোলা মিউজিয়াম বা বাবাসাহেব আম্বেদকরের উদ্দেশে শ্রদ্ধা জানাতে ‘পঞ্চতীর্থ’-এর পুনর্নিমাণ, প্রধানমন্ত্রী সংগ্রহশালা কিংবা জাতীয় যুদ্ধ স্মারক – যাই-ই হোক না কেন, এই উদ্যোগগুলি দেশের আবেগ ও মেধার বন্ধনকে আরও নিবিড় করে তুলেছে।
বন্ধুগণ,
আমার মতে, সংযোগ ও যোগাযোগের অর্থ হল সারা দেশকে একসূত্রে বেঁধে ফেলা। ১৪০ কোটি ভারতবাসীকে পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত করা। আকাশবাণীর মতো সমস্ত যোগাযোগ চ্যানেলের লক্ষ্য ও দৃষ্টিভঙ্গী হওয়া উচিত এটাই। এই লক্ষ্য ও দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে আপনারা সামনের দিকে এগিয়ে যাবেন এবং বেতার তরঙ্গের এই সম্প্রসারণ দেশকে নতুন নতুন শক্তি যোগাবে, একথা নির্দ্ধিধায় উচ্চারণ করতে পারি। আমি আরও একবার আকাশবাণী এবং দূরদুরান্তের ভাই-বোনদের জানাই আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
ধন্যবাদ!