নমস্কার!
বারাণসীতে আপনাদের সকলকে স্বাগত। এই স্থানটি আবার কাশী নামেও সুপরিচিত। বারাণসীতে আজ আপনারা বৈঠকে মিলিত হচ্ছেন জেনে আমি আনন্দিত কারণ, ঘটনাক্রমে এটি আমার সংসদীয় নির্বাচনী ক্ষেত্র। কাশী শুধুমাত্র বিশ্বের একটি প্রাচীনতম শহরই নয়, এরই অদূরে রয়েছে সারনাথ যেখানে ভগবান বুদ্ধ তাঁর প্রথম উপদেশটি প্রচার করেছিলেন। সুচিন্তিত জ্ঞান, ধর্ম এবং সত্যরাশির শহর হল এই কাশী। অর্থাৎ, জ্ঞান, কর্তব্য ও সত্যের মতো সম্পদগুলির এক বিশেষ ভাণ্ডার হল এই শহরটি। সেই অর্থে কাশী হল ভারতের সাংস্কৃতিক তথা আধ্যাত্মিক রাজধানী। আশা করি, আপনারা আপনাদের কর্মসূচির মধ্যেও সময় বের করে নিয়ে গঙ্গা আরতি দর্শন করবেন, সারনাথ পরিদর্শনে যাবেন এবং স্বাদ অনুভব করবেন কাশীর বিশেষ বিশেষ খাদ্যসম্ভারের।
মাননীয় অতিথিবৃন্দ,
দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ করার এক অন্তর্নিহিত সুযোগ ও সম্ভাবনার বীজ প্রোথিত রয়েছে সংস্কৃতির মধ্যে যা আমাদের পরিবেশ, পরিস্থিতি ও প্রেক্ষিতের বৈচিত্র্যকে উপলব্ধি করতে সাহায্য করে। সুতরাং, আপনাদের কাজের মধ্যে সমগ্র মানবজাতির জন্যই এক বিশেষ তাৎপর্য নিহিত রয়েছে। আমরা, অর্থাৎ ভারতবাসীরা আমাদের শাশ্বত ও বৈচিত্র্যপূর্ণ সংস্কৃতির জন্য গর্ব অনুভব করি। শুধু তাই নয়, আমাদের এই স্পর্শাতীত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে আমরা বিশেষ মূল্যবান বলেও মনে করি। ঐতিহ্যের স্বাক্ষর বহনকারী স্থানগুলির সংরক্ষণ এবং সেগুলির পুনরুজ্জীবন প্রচেষ্টায় আমরা নিরলস পরিশ্রম করে চলেছি। দেশের সাংস্কৃতিক সম্পদ ও শিল্পীদের আমরা চিহ্নিত করেছি শুধুমাত্র জাতীয় পর্যায়েই নয়, গ্রাম ভারতের আঞ্চলিক তথা স্থানীয় পর্যায়েও। সংস্কৃতির উদযাপনে আমরা বেশ কিছু কেন্দ্রও গড়ে তুলেছি। তাদের মধ্যে কয়েকটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হল দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নির্মিত আদিবাসী সংগ্রহশালা। এগুলির মাধ্যমে আদিবাসী সম্প্রদায়গুলির প্রাণময় সংস্কৃতিকে আমরা তুলে ধরব। নয়াদিল্লিতে রয়েছে আমাদের প্রধানমন্ত্রী সংগ্রহশালা যা দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সাক্ষ্য বহন করে। ‘যুগে যুগে ভারত’ নামে একটি জাতীয় সংগ্রহশালাও আমরা গঠন করছি। এটির নির্মাণ সম্পূর্ণ হলে তা হয়ে উঠবে বিশ্বের বৃহত্তম একটি সংগ্রহশালা। ভারতের ৫ হাজার বছরের সুপ্রাচীন ইতিহাস ও সংস্কৃতিকে এর মাধ্যমে সকলের সামনে তুলে ধরা হবে।
মাননীয় অতিথিবৃন্দ,
দেশের সাংস্কৃতিক সম্পদের পুনরুদ্ধার ও পুনঃপ্রতিষ্ঠা একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজের মধ্যেই পড়ে। তাই, আপনাদের সকলের মিলিত প্রচেষ্টাকে আমরা এক্ষেত্রে স্বাগত জানাই। একথা সত্য যে ইন্দ্রিয়াতীত ঐতিহ্য শুধু তার পার্থিব মূল্যের জন্যই মূল্যবান নয়, এর মধ্য দিয়ে একটি জাতির ইতিহাস ও পরিচয় প্রতিফলিত হয়। নিজস্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে উপভোগ করার অধিকার রয়েছে প্রত্যেকেরই। ২০১৪ সাল থেকে আমাদের সুপ্রাচীন সভ্যতার এমন কিছু শিল্প নিদর্শন আমরা ফিরিয়ে আনতে পেরেছি যার মধ্য দিয়ে আমাদের সভ্যতার গর্বই প্রতিফলিত হয়। ‘প্রাণময় ঐতিহ্য’ তথা ‘জীবনের জন্য সংস্কৃতি’ প্রচেষ্টায় আপনাদের অবদানেরও আমি বিশেষ প্রশংসা করি। সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য শুধু পাথরে খোদাই করা একটি নিদর্শন মাত্র নয়, এ হল পরম্পরা ও রীতিনীতি এবং উৎসবের এক বিশেষ ধারাবাহিকতা যা বহু প্রজন্ম ধরেই প্রচলিত রয়েছে। আপনাদের প্রচেষ্টা মানুষের জীবনশৈলী এবং আচার তথা রীতিনীতিকে আরও উৎসাহিত করবে বলেই আমার স্থির প্রত্যয়।
মাননীয় অতিথিবৃন্দ,
আমি বিশ্বাস করি যে ঐতিহ্য হল অর্থনৈতিক অগ্রগতি এবং তার বৈচিত্র্যকরণের ক্ষেত্রে একটি মূল্যবান সম্পদবিশেষ যা প্রতিধ্বনিত হয় আমাদের ‘বিকাশ ভি, বিরাসত ভি’ – এই মন্ত্রের মধ্যে। এর অর্থ হল উন্নয়ন তথা ঐতিহ্য – এই হল আমদের কর্মযজ্ঞের মূলমন্ত্র। ভারত তার দু’হাজার বছরের সুপ্রাচীন শিল্পকলার ঐতিহ্যের জন্য গর্ব অনুভব করে। আমাদের রয়েছে ৩ হাজারটির মতো অনুপম শিল্প নিদর্শন। ‘একটি জেলা, একটিই উৎপাদন’ – আমাদের এই উদ্যোগ ভারতে চারু ও কারুশিল্পের অনুপম বৈশিষ্ট্যকে তুলে ধরে। একইসঙ্গে স্বনির্ভরতার লক্ষ্য কিভাবে পূরণ করা সম্ভব তারও প্রতিফলন ঘটেছে এই শিল্পকর্মগুলির মধ্যে। সাংস্কৃতিক তথা সৃজনশীল শিল্প প্রচেষ্টার প্রসারে আপনাদের উদ্যোগের গভীর তাৎপর্য রয়েছে কারণ, তার মাধ্যমে অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক বিকাশ এবং সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবন প্রচেষ্টাকে উৎসাহদানের এক বিশেষ অঙ্গীকার রয়েছে। আগামী মাসে ভারতে ‘প্রধানমন্ত্রী বিশ্বকর্মা যোজনা’র সূচনা হচ্ছে। ১.১ বিলিয়ন ডলার প্রাথমিক বিনিয়োগের মাধ্যমে প্রথাগত শিল্পী ও কারিগরদের জন্য তা এক অনুকূল পরিবেশ ও পরিস্থিতি গড়ে তুলবে। তাঁরা যাতে তাঁদের শিল্প প্রচেষ্টায় মনোনিবেশ করতে পারেন এবং দেশের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে তাঁদের অবদানের নজির রাখতে পারেন, তা সম্ভব করে তুলতেই আমাদের এই উদ্যোগ।
বন্ধুগণ,
সংস্কৃতির উদযাপনে প্রযুক্তির প্রয়োগ বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। ভারতে আমাদের রয়েছে একটি জাতীয় ডিজিটাল জেলা রিপোজিটরি যার মাধ্যমে আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের কাহিনীগুলির পুনরাবিষ্কার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। আমাদের সাংস্কৃতিক স্থান ও ঐতিহ্যগুলির সংরক্ষণ নিশ্চিত করতে আমরা প্রযুক্তিকে ব্যবহার করছি। আমাদের সাংস্কৃতিক স্থানগুলি যাতে আরও পর্যটন অনুকূল হয়ে উঠতে পারে সেই লক্ষ্যে প্রযুক্তিকে আমরা কাজে লাগিয়েছি।
মাননীয় অতিথিবৃন্দ,
সংস্কৃতির পথ ধরে সকলের মধ্যে ঐক্য গঠনের লক্ষ্যে যে অভিযান আপনারা শুরু করেছেন তা আমাকে বিশেষভাবে আনন্দ দেয় কারণ, ‘বসুধৈব কুটুম্বকম’, অর্থাৎ, ‘একটিই পৃথিবী, এক অভিন্ন পরিবার তথা এক অভিন্ন ভবিষ্যৎ’ গঠনের শক্তি ও অঙ্গীকার রয়েছে তার মধ্যে। জি-২০-র কার্যসূচিকে নিশ্চিতভাবেই সফল করে তুলতে আপনাদের এই বিশেষ ভূমিকারও আমি প্রশংসা করি। সংস্কৃতি, সৃজনশীলতা, বাণিজ্য এবং সমন্বয় প্রচেষ্টা – এই চারটি বিশেষ দিক প্রতিফলিত হয়েছে আপনাদের কাজের মধ্য দিয়ে যা এক সহমর্মী, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং শান্তিপূর্ণ ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার কাজে আমাদের সাহায্য করবে। আপনাদের আলাপ-আলোচনা সফল ও ফলপ্রসূ হয়ে উঠুক, এই প্রার্থনা জানাই।
ধন্যবাদ!