কর্মসূচীতে অংশগ্রহণকারী আমার মন্ত্রিসভার সহকর্মী অনুরাগ ঠাকুরজি, সকল রাজ্যের যুব বিষয়ক ও ক্রীড়া মন্ত্রীরা, অন্যান্য বিশিষ্টজনেরা, ভদ্রমহোদয়া ও ভদ্রমহোদয়গণ,
এ বছর দেশের ক্রীড়া মন্ত্রীদের সম্মেলন মণিপুরে অনুষ্ঠিত হওয়ায় আমি অত্যন্ত আনন্দিত। উত্তর পূর্বাঞ্চলের অনেক খেলোয়াড় দেশের জন্য পদক জয়ের মাধ্যমে ত্রিবর্ণ রঞ্জিত জাতীয় পতাকাকে গৌরবান্বিত করেছেন। দেশের ক্রীড়াজগৎকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে উত্তর পূর্বাঞ্চল এবং মণিপুরের যথেষ্ট অবদান রয়েছে। শগোল কাংজৈ, থাং তা, য়ুবী লাকপী, মুকনা এবং হিয়াং তান্নব-এর মতো স্থানীয় খেলাগুলি যথেষ্ট আকর্ষণীয়। মণিপুরে ওলাওবি-র মাধ্যমে আমরা কাবাডি খেলার আনন্দ লাভ করি। হিয়াং তান্নব আমাদের কেরালার নৌকা প্রতিযোগিতার কথা মনে করিয়ে দেয়। মণিপুরের সঙ্গে পোলো খেলার এক ঐতিহাসিক যোগসূত্র রয়েছে। দেশের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যে উত্তর পূর্বাঞ্চল নতুন নতুন উপাদান যোগ করেছে। একইভাবে ক্রীড়া ক্ষেত্রেও এই অঞ্চল নতুন উদ্দীপনার সঞ্চার করেছে। আমি আশা করি দেশের প্রতিটি প্রান্ত থেকে আসা ক্রীড়ামন্ত্রীরা মণিপুর থেকে অনেক বিষয়ে শিক্ষা লাভ করবেন। আমি নিশ্চিত মণিপুরের উষ্ণ আতিথেয়তা আপনাদের ইম্ফলবাসকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলবে। এই চিন্তন শিবিরে অংশগ্রহণকারী সকল ক্রীড়া মন্ত্রী এবং অন্যান্য বিশিষ্টজনেদের আমি স্বাগত জানাই, অভিনন্দন জানাই।
বন্ধুগণ,
যে কোন চিন্তন শিবিরের শুরুটা হয় কোনো একটি বিষয় নির্বাচনের মধ্য দিয়ে, তারপর তা নিয়ে আলোচনা এবং শেষে বাস্তবায়ন নিয়ে মতবিনিময় করা হয়। অর্থাৎ কোনো একটি ভাবনার প্রতিফলন, তারপর সেটি নিয়ে চর্চা এবং পরিশেষে তা কার্যকর করার পন্থা-পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা হয়। এবারের চিন্তন শিবিরে আপনারার ভবিষ্যতের লক্ষ্য নির্ধারণ করবেন, পাশাপাশি পূর্ববর্তী সম্মেলনে গৃহীত সিদ্ধান্তগুলি কতটা বাস্তবায়িত হয়েছে তা নিয়ে পর্যালোচনা করবেন। ভবিষ্যতের কথা বিবেচনা করে এবং ক্রীড়া ক্ষেত্রের মানোন্নয়নের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ গড়ে তুলতে একটি পরিকল্পনা তৈরির বিষয়ে আমরা সহমত হয়েছি। ক্রীড়া ক্ষেত্রে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলির আরও অংশগ্রহণ নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। এই প্রসঙ্গে একটি বিষয়ে আপনাদের মনে করিয়ে দিতে চাই সেটি হল নীতি প্রণয়ন ও কর্মসূচি তৈরির মধ্যেই এই পর্যালোচনা সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না বরং গত এক বছরে পরিকাঠামো উন্নয়ন এবং ক্রীড়া ক্ষেত্রে কী কী সাফল্য অর্জিত হয়েছে তা নিয়েও আপনাদের পর্যালোচনা করতে হবে।
বন্ধুগণ,
গত এক বছর ধরে ভারতীয় খেলোয়াড়রা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় যথেষ্ট ভালো খেলেছেন। তাঁদের সাফল্যের জন্য আমরা যেমন আনন্দিত হয়েছি পাশাপাশি কীভাবে আমাদের খেলোয়াড়দের আরও বেশি করে সাহায্য করা যায় তা নিয়েও ভাবনা-চিন্তা করতে হবে। আগামীদিনে স্কোয়াশ ওয়ার্ল্ড কাপ, হকি এশিয়ান চ্যাম্পিয়ান্স ট্রফি, এশিয়ান ইয়্যুথ অ্যান্ড জুনিয়ার ওয়েটলিফটিং চ্যাম্পিয়ানশিপের মতো ক্রীড়া প্রতিযোগিতা আয়োজনের মধ্য দিয়ে আপনাদের মন্ত্রক ও দপ্তরের দক্ষতা প্রমাণিত হবে। খেলোয়াড়রা ব্যক্তিগতভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আর এখন আমাদের মন্ত্রককে বিভিন্ন ক্রীড়া প্রতিযোগিতা আয়োজন করার জন্য উদ্যোগী হতে হবে। ফুটবল এবং হকিতে যেমন বিপক্ষ দলের খেলোয়াড়দের চিহ্নিত করে পরিকল্পনা করা হয়, একইভাবে বিভিন্ন ম্যাচের ক্ষেত্রে আপনাদের আলাদা আলাদা প্রস্তুতি নিতে হবে। প্রতিটি ক্রীড়া প্রতিযোগিতাকে সফল করে তুলতে বিভিন্ন কৌশল গ্রহণ করতে হবে। প্রতিটি প্রতিযোগিতার জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো এবং প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা আপনাদের করতে হবে। এক্ষেত্রে স্বল্প মেয়াদী, মধ্য মেয়াদী এবং দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা নিতে হবে।
বন্ধুগণ,
খেলাধুলার একটি বিশেষত্ব রয়েছে। কোনো খেলোয়াড় নিজে নিজে লাগাতার অনুশীলন করে প্রয়োজনীয় ফিটনেস অর্জন করেন। কিন্তু ভালো খেলার জন্য তাকে নিয়মিতভাবে খেলতে হবে। আর তাই স্থানীয় পর্যায়ে আরও বেশি প্রতিযোগিতার আয়োজন করতে হবে। ফলস্বরূপ খেলোয়াড়রা অনেক কিছু শিখতে পারবেন। ক্রীড়া মন্ত্রী হিসেবে আপনাদের দেখতে হবে যাতে সকল ক্রীড়া প্রতিভা বিকশিত হয়।
বন্ধুগণ,
আমাদের দেশে প্রতিটি প্রতিভাবান খেলোয়াড় যাতে উন্নতমানের ক্রীড়া পরিকাঠামোর সুযোগ পান সেটি নিশ্চিত করার দায়িত্ব আমাদের সকলের। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলিকে তাই একযোগে কাজ করতে হবে। জেলাস্তরে খেলো ইন্ডিয়া প্রকল্পটি ক্রীড়া পরিকাঠামোর মানোন্নয়ন ঘটিয়েছে। আর এখন আমাদের এই উদ্যোগকে ব্লক স্তরে পৌঁছে দিতে হবে। এক্ষেত্রে বেসরকারী ক্ষেত্র সহ সকলের অংশগ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জাতীয় যুব উৎসবের ক্ষেত্রেও একই নীতি প্রযোজ্য। এগুলিকে আরও কার্যকর করে তুলতে নতুনভাবে ভাবনা-চিন্তা করা প্রয়োজন। রাজ্যস্তরে এই কর্মসূচিগুলি যাতে শুধুমাত্র নিয়ম রক্ষার জন্যই আয়োজন করা না হয় সেটি নিশ্চিত করতে হবে। যখন সর্বস্তরে উদ্যোগ নেওয়া হবে তখনই ক্রীড়া জগতে ভারত নিজেকে অগ্রণী এক দেশ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবে।
বন্ধুগণ,
উত্তর পূর্বাঞ্চলে খেলাধুলাকে নিয়ে যে উদ্যোগগুলি নেওয়া হয়েছে তার থেকে আপনারা অনুপ্রাণিত হবেন। আজ উত্তর পূর্বাঞ্চলের উন্নয়নে ক্রীড়া ক্ষেত্রে পরিকাঠামো গড়ে তুলতে ৪০০ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। ইম্ফলের জাতীয় ক্রীড়া বিশ্ববিদ্যালয় অদূর ভবিষ্যতে দেশের যুব সম্প্রদায়কে নতুন নতুন সুযোগ এনে দেবে। এক্ষেত্রে খেলো ইন্ডিয়া কর্মসূচি এবং টপস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। উত্তর পূর্বাঞ্চলের প্রতিটি জেলায় কমপক্ষে দুটি খেলো ইন্ডিয়া কেন্দ্র এবং প্রতিটি রাজ্যে খেলো ইন্ডিয়া উৎকর্ষ কেন্দ্র গড়ে তুলতে হবে। ক্রীড়া জগতে এই উদ্যোগগুলি নতুন ভারতের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলবে। এরফলে দেশ নতুন পরিচিতি পাবে। আপনাদের দায়িত্ব হল নিজ নিজ রাজ্যে গিয়ে সংশ্লিষ্ট উদ্যোগগুলিকে দ্রুত বাস্তবায়িত করা। আমি নিশ্চিত এই লক্ষ্য পূরণে বর্তমান চিন্তন শিবিরটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে, এই আশা রেখে আমি আমার বক্তব্য শেষ করলাম। অনেক অনেক ধন্যবাদ।
“উত্তর পূর্বাঞ্চল এবং মণিপুর ভারতের ক্রীড়া ঐতিহ্যকে এগিয়ে নিয়ে যেতে গুরুত্বপূর্ণ স্বাক্ষর রেখেছে”
“দেশের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যে উত্তর পূর্বাঞ্চল নতুন রঙ এবং দেশের ক্রীড়া বৈচিত্র্যে নতুন গতি সংযোজন করেছে”
“যে কোন চিন্তন শিবিরের সূচনা হয় মননের মধ্যে দিয়ে তা এগিয়ে যায় অনুধ্যানের মাধ্যমে এবং শেষ হয় রূপায়ণে”
“প্রত্যেক টুর্নামেন্টের নিরিখে ক্রীড়া পরিকাঠামো এবং প্রশিক্ষণের ওপর জোর দিতে হবে আপনাদের। সেইসঙ্গে স্বল্পকালীন মধ্য মেয়াদী এবং দীর্ঘ মেয়াদী লক্ষ্য স্থির করতে হবে”
“ক্রীড়া পরিকাঠামোর ক্ষেত্রে ৪০০ কোটি টাকারও বেশি প্রকল্প উত্তর পূর্বাঞ্চলে আজ উন্নয়ন এবং নতুন দিশার সঞ্চার ঘটিয়েছে”