সুধীবৃন্দ,
ভদ্রমহোদয়া ও ভদ্রমহদয়গণ, নমস্কার!
আমি আপনাদের সকলকে 'নাম্মা বেঙ্গালুরুতে' স্বাগত জানাই। এই শহর বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং শিল্পোদ্যোগের ভাবনার কর্মভূমি। তাই ডিজিটাল অর্থনীতি নিয়ে আলোচনা করার সব থেকে ভাল জায়গা তো বেঙ্গালুরুই হবে।
বন্ধুগণ,
গত ৯ বছর ধরে ভারতে ডিজিটাল ক্ষেত্রে যে পরিবর্তন হয়েছে তা অভূতপূর্ব। ২০১৫ সালে আমাদের ডিজিটাল ইন্ডিয়া উদ্যোগের মাধ্যমে এর সূচনা। উদ্ভাবনের প্রতি আমাদের যে অবিচল আস্থা রয়েছে তার শক্তিতে এই উদ্যোগ বলীয়ান । একে দ্রুত বাস্তবায়নের অঙ্গীকার আমরা করেছি। আমরা সমন্বয়ের ভাবনায় কাজ করি, যাতে এর সুফল থেকে কেউ বঞ্চিত না হন। যে গতিতে এই পরিবর্তন সাধিত হয়েছে তা অবিশ্বাস্য। আজ ভারতে ৮৫ কোটি ইন্টারনেট ব্যবহারকারী। বিশ্বে সব থেকে সস্তায় এদেশেই ডেটা পাওয়া যায়। আমরা প্রযুক্তির সাহায্যে প্রশাসনিক ক্ষেত্রে পরিবর্তন এনেছি। প্রশাসনকে আরও দক্ষ, সমন্বিত, গতিশীল এবং স্বচ্ছ করে তুলতে প্রযুক্তির ব্যবহার করা হয়। আমাদের অনন্য ডিজিটাল পরিচিতি ‘আধার’ ১৩০ কোটির বেশি নাগরিকের কাছে রয়েছে। আমরা ভারতে আর্থিক সমন্বয়ের বিপ্লব আনার জন্য ‘জ্যাম’ ত্রিধারা, অর্থাৎ জনধন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট, আধার এবং মোবাইলের ক্ষমতাকে কাজে লাগাচ্ছি। প্রতি মাসে ইউপিআই-এর মাধ্যমে প্রায় এক হাজার কোটি আর্থিক লেনদেন হয়। সারা বিশ্বে ডিজিটাল পদ্ধতিতে মোট আর্থিক লেনদেনের ৪৫ শতাংশই এদেশে হয়ে থাকে। সরকারের প্রত্যক্ষ সুবিধা হস্তান্তরের মাধ্যমে অপচয় রোধ করা সম্ভব হয়েছে। এরজন্য ৩,৩০০ কোটি মার্কিন ডলার সাশ্রয় হয়েছে। ভারতে কোভিড টিকাকরণের সময় কো-উইন পোর্টাল বিশেষ সহায়ক হয়েছে। এর সাহায্যে ২০০ কোটি টিকার ডোজ যেমন দেওয়া হয়েছে, পাশাপাশি আমরা সকলকে ডিজিটাল পদ্ধতিতে যাচাই করে শংসাপত্রও দিয়েছি। গতিশক্তি প্ল্যাটফর্মে প্রযুক্তি এবং পরিকল্পনাকে একযোগে ব্যবহার করে পরিকাঠামোর উন্নয়ন এবং পণ্য আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে গতি এসেছে। পরিকল্পনা গ্রহণে সহায়তা করা, ব্যয় হ্রাস করা এবং কাজে গতি আনার ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা হয়েছে। আমাদের অনলাইনের মাধ্যমে সরকারি স্তরে পণ্য সংগ্রহের মঞ্চ গভর্মেন্ট ই-মার্কেট প্লেস পুরো প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা এনেছে। ডিজিটাল পদ্ধতিতে ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য ওপেন নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা ই-কমার্সকে আরও স্বচ্ছ ও মুক্ত করে তুলেছে। বর্তমানে কর ব্যবস্থায় সম্পূর্ণ ডিজিটাল পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়। এর ফলে স্বচ্ছতা এবং ই-গভর্ন্যান্স নিশ্চিত হয়েছে। আমরা কৃত্রিম মেধার সাহায্যে অনুবাদের একটি প্ল্যাটফর্ম ‘ভাষিণী’ উদ্ভাবন করেছি। ভারতের বৈচিত্রপূর্ণ ভাষাগুলি এরফলে ডিজিটাল পদ্ধতিতে সমন্বিত হবে।
সুধীবৃন্দ,
ভারত ডিজিটাল পদ্ধতিতে সরকারি পরিকাঠামোর সহায়তায় আন্তর্জাতিক স্তরে বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে দ্রুত, নিরাপদ এবং সমন্বিত সমাধানের ব্যবস্থা করেছে। ভারত বৈচিত্রের দিক থেকে অতুলনীয়। আমাদের দেশে প্রচুর ভাষা ও উপভাষা রয়েছে। বিশ্বের প্রতিটি ধর্মের অনুসারীর এদেশে বাস। এখানে অগণিত সংস্কৃতির সন্ধান মেলে। প্রাচীন যুগের রীতি-নীতি থেকে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি — প্রত্যেকের জন্য এখানে কিছু না কিছু রয়েছে। এই বৈচিত্রপূর্ণ দেশে বিভিন্ন সমস্যার সমাধানের পরীক্ষা নিরীক্ষার ক্ষেত্রে ভারত আদর্শ এক গবেষণাগার। এদেশে যে সমাধানসূত্র বের হয়ে আসে, তা সহজেই বিশ্বের যে কোন জায়গায় প্রয়োগ করা সম্ভব। ভারত সারা বিশ্বের সঙ্গে তার অভিজ্ঞতাকে ভাগ করে নিতে আগ্রহী। কোভিড অতিমারীর সময়ে সারা পৃথিবীর কল্যাণে আমরা কো-উইন প্ল্যাটফর্মকে সকলের সঙ্গে ভাগ করে নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছি। আমরা বর্তমানে আন্তর্জাতিক স্তরে ডিজিটাল পণ্য সংক্রান্ত একটি ভান্ডার গড়ে তুলেছি। আমাদের মূল উদ্দেশ্য একটিই - কেউ যাতে এই সুযোগের থেকে বঞ্চিত না হন, বিশেষত উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের ভাই-বোনেরা।
সুধীবৃন্দ,
আন্তর্জাতিক স্তরে ডিজিটাল পদ্ধতিতে সরকারি পরিকাঠামো সংক্রান্ত একটি ভান্ডার জি-২০ গোষ্ঠী গড়ে তুলতে উদ্যোগী হয়েছে জেনে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। এই ধরনের পরিকাঠামো সকলের জন্য স্বচ্ছ, দায়বদ্ধ এবং ডিজিটাল ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে যথাযথ হবে। বিভিন্ন দেশের ডিজিটাল দক্ষতাকে যাচাই করার যে ব্যবস্থাপনা আপনারা গড়ে তুলতে উদ্যোগী হয়েছেন, তাকে স্বাগত জানাই। ডিজিটাল দক্ষতার একটি ভার্চুয়াল উৎকর্ষ কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে। ভবিষ্যতের কথা বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় মানবসম্পদ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এই উদ্যোগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আজ বিশ্বজুড়ে ডিজিটাল অর্থনীতির প্রসার ঘটছে। একই সঙ্গে এই অর্থনৈতিক ব্যবস্থা নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। এই প্রেক্ষিতে একটি সুরক্ষিত, আস্থাশীল এবং প্রাণবন্ত ডিজিটাল অর্থনীতির জন্য জি-২০র শীর্ষ পর্যায়ে নীতিগত ক্ষেত্রে সহমত গড়ে তোলা অত্যন্ত প্রয়োজন।
বন্ধুগণ,
বর্তমানে যে ভাবে প্রযুক্তি আমাদের সকলের সঙ্গে যোগাযোগ ঘটিয়েছে, তা আগে হয়নি। এর মাধ্যমে আমাদের সকলের জন্য একটি সমন্বিত ও সুস্থায়ী উন্নয়ন নিশ্চিত হয়েছে। একটি সমন্বিত, সমৃদ্ধ এবং আন্তর্জাতিক স্তরে সুরক্ষিত ডিজিটাল ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার জন্য ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করার অনন্য এক সুযোগ জি-২০ গোষ্ঠীর সামনে উপস্থিত। সরকারি ডিজিটাল পরিকাঠামোর মধ্যদিয়ে আর্থিক সমন্বয় ও উৎপাদনশীলতার মাধ্যমে আমরা অগ্রসর হতে পারি। কৃষক এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা যাতে ডিজিটাল প্রযুক্তিকে ব্যবহার করেন, আমরা এবিষয়ে তাঁদের উৎসাহ যোগাবো। আন্তর্জাতিক স্তরে ডিজিটাল পদ্ধতিতে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য আমরা প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে পারি। কৃত্রিম মেধার নিরাপদ ও দায়িত্বশীল প্রয়োগের জন্যও আমরা একটি ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে পারি। মানব জাতি যেসব সমস্যাগুলির সম্মুখীন সেগুলি সমাধানের জন্য আমরা প্রযুক্তি ভিত্তিক একটি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারি। এক্ষেত্রে চারটি সি-কনভিকশন (দৃঢ় বিশ্বাস), কমিটমেন্ট (প্রতিশ্রুতি), কো-অর্ডিনেশন (সমন্বয়) এবং কোলাবরেশন (যৌথ উদ্যোগ)-এর প্রয়োজন। কর্মীগোষ্ঠী যে আমাদের সঠিক দিকে নিয়ে যাবে সে বিষয়ে আমার কোন সন্দেহ নেই। আমি এই সম্মেলনে একটি ফলপ্রসূ আলোচনা প্রত্যাশা করি।
ধন্যবাদ!
অনেক অনেক ধন্যবাদ!