মহোদয়গণ,
নমস্কার!
আমি প্রেসিডেন্ট ইয়ুন সুক ইওল-কে ধন্যবাদ জানাই এই উদ্যোগ চালিয়ে যাওয়ার জন্য। “সামিট ফর ডেমোক্রেসি” একটি গুরুত্বপূর্ণ মঞ্চ হয়ে উঠেছে যেখানে গণতান্ত্রিক দেশগুলি তাদের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে পারে এবং একে অপরের কাছ থেকে শিক্ষা নিতে পারে।
মহোদয়গণ,
এখন থেকে কয়েক সপ্তাহ পরে সারা বিশ্ব সাক্ষী থাকবে ভারতে গণতন্ত্রের বৃহত্তম উৎসবের। এটি মানব ইতিহাসে সবচেয়ে বড় নির্বাচনী প্রক্রিয়া হতে চলেছে, যেখানে প্রায় ১০০ কোটি ভোটদাতা ভোট দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। ভারতের মানুষ আরও একবার গণতন্ত্রের প্রতি তাঁদের আস্থা জ্ঞাপন করবেন। ভারতে এক প্রাচীন এবং অটুট গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি বর্তমান। ভারতের ইতিহাসে সহমত গঠন, উদার বক্তব্য এবং মুক্ত আলোচনার পরম্পরা বিদ্যমান। সেই কারণে আমার দেশবাসী ভারতকে গণতন্ত্রের জননী মনে করে।
মহোদয়গণ,
গত এক দশকে ভারত “সবকা সাথ সবকা বিকাশ সবকা বিশ্বাস সবকা প্রয়াস” এর মন্ত্র নিয়ে এগিয়ে চলেছে। যার অর্থ অন্তর্ভুক্তিমূলক বৃদ্ধির জন্য সমন্বিত প্রয়াস। সমাজের সকল শ্রেণীর কাছে বিশেষ করে দরিদ্র, মহিলা, যুবা এবং কৃষকদের কাছে পৌঁছনোই অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রকৃত ভাবনার মধ্যে আমাদের শীর্ষ অগ্রাধিকার। আমরা কর্মভিত্তিক প্রশাসনে রূপান্তরিত হয়েছি, যেখানে ঘাটতি, দুর্নীতি এবং বৈষম্যের স্থান নিয়েছে স্বচ্ছতা, দায়বদ্ধতা এবং সুযোগ। এই প্রয়াসে প্রযুক্তি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে অনুঘটক হিসেবে। ডিজিটাল পাবলিক ইনফ্রাস্ট্রাকচারে ভারতের দ্রুত অগ্রগতি জনপরিষেবায় বিপ্লব ঘটিয়েছে এবং আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বৃদ্ধি করেছে। যুবশক্তি এবং প্রযুক্তিতে ভর করে ভারত দ্রুত বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম স্টার্ট আপ পরিমণ্ডলে পরিণত হয়েছে। তৃণমূল স্তরে ১৪ লক্ষের বেশি নির্বাচিত মহিলা প্রতিনিধিরাই মহিলা-নির্ভর উন্নতির জন্য আমাদের পরিবর্তনের মাধ্যম।
মহোদয়গণ,
আজ ভারত যে শুধুমাত্র ১৪০ কোটি মানুষের প্রত্যাশাই পূরণ করছে তাই নয়, বিশ্বকে এই আস্থাও যোগাচ্ছে যে গণতন্ত্র পরিষেবা দেয় এবং গণতন্ত্র ক্ষমতায়ন ঘটায়। যখন ভারতের সংসদ মহিলাদের জন্য একতৃতীয়াংশ সংরক্ষণ করতে আইন পাশ করে, তখন গোটা গণতান্ত্রিক বিশ্বে মহিলাদের মনে আশার সঞ্চার হয়। গত ১০ বছরে যখন ভারত ২৫ কোটি মানুষকে দারিদ্রমুক্ত করে তখন ইতিবাচক পরিবর্তনের মাধ্যম হিসেবে গণতন্ত্রের প্রতি আন্তর্জাতিক আস্থা পুনঃস্থাপিত হয়। যখন ভারত ১৫০টির বেশি দেশকে কোভিড ওষুধ এবং টিকা দেয়, তখন গণতন্ত্রের নিরাময় শক্তি প্রতিফলিত হয়। যখন ভারত সফলভাবে চাঁদে চন্দ্রযানের অবতরণ ঘটায়, তখন তা শুধুমাত্র ভারতের গর্বের মুহূর্ত থাকে না, এটা তখন গণতন্ত্রের জয় ঘোষণা করে। যখন ভারত তার জি২০ সভাপতিত্বকালে গ্লোবাল সাউথের কণ্ঠশ্বরকে তুলে ধরে, তখন এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণের গুরুত্ব প্রকাশ করে। এখন যেখানে ভারত বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হয়ে ওঠার পথে, তখন তা বিশ্বের লক্ষ লক্ষ মানুষের কাছে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের আশা এনে দিচ্ছে। যখন ভারত ২০৪৭-এর মধ্যে উন্নত দেশ হওয়ার সংকল্প করে, তখন প্রমাণ হয় গণতন্ত্র প্রত্যাশা করতে পারে, প্রেরণা দিতে পারে এবং অর্জন করতে পারে।
মহোদয়গণ,
এই নিত্য পরিবর্তনশীল টালমাটাল সময়ে গণতন্ত্রের সামনে অনেক সমস্যা, এর জন্য আমাদের প্রয়োজন একসঙ্গে কাজ করা। আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা এবং সংস্থাগুলিকে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক, গণতান্ত্রিক, অংশীদারিভিত্তিক এবং স্বচ্ছ করে তুলতে গণতান্ত্রিক দেশগুলির প্রয়াস নেওয়া উচিত। একমাত্র এই ধরনের মিলিত প্রয়াসেই আমরা আমাদের মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবো। এবং আমরা আগামী প্রজন্মের জন্য নিরাপদ, সুস্থায়ী এবং সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের ভিত স্থাপন করতে পারবো। ভারত এই ক্ষেত্রে সকল গণতান্ত্রিক দেশগুলির সঙ্গে তার অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে প্রস্তুত।
ধন্যবাদ।