নমস্কার!
এই নতুন প্রজন্ম এবং প্রাণশক্তিতে ভরপুর সভায় বক্তব্য রাখা আমার জন্য আনন্দের বিষয়। আমার সামনে একটি আন্তর্জাতিক পরিবার রয়েছে যাঁরা আমাদের পৃথিবীর সমস্ত সুন্দর বৈচিত্র্যের মহিমায় পরিপূর্ণ।
আন্তর্জাতিক নাগরিক অভিযান, বিশ্বকে একসঙ্গে সম্মিলিত করার জন্য সঙ্গীত এবং সৃষ্টিশীলতাকে ব্যবহার করে। ক্রীড়ার মতো সঙ্গীতেরও মানুষকে ঐক্যসূত্রে গাঁথার অন্তর্নিহিত ক্ষমতা রয়েছে। মহান হেনরি ডেভিড থরো একবার একটা কথা বলেছিলেন, আমি তাঁর বক্তব্য থেকে উদ্ধৃতি করছি, “যখন আমি সঙ্গীত শুনি তখন কোনও বিপদের ভয় থাকে না, আমার মধ্যে অসুরক্ষার কোনও ভাবনা থাকে না, আমি কোনও শত্রুকে দেখতে পাই না। আমি সময়ের সবচাইতে পুরনো কালখণ্ড থেকে শুরু করে সময়ের সবচাইতে নবীনতম মুহূর্তের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত অনুভব করি।”
আমাদের জীবনে সঙ্গীতের শান্তিপূর্ণ প্রভাব পড়ে। সঙ্গীত মন ও গোটা শরীরকে শীতলতা প্রদান করে। ভারতে অনেক সঙ্গীত পরম্পরা রয়েছে। প্রত্যেক রাজ্যে, প্রত্যেক অঞ্চলে সঙ্গীতের বিভিন্ন শৈলী রয়েছে। আমি আপনাদের সবাইকে ভারতে আসার জন্য এবং আমাদের সঙ্গীতের সজীবতা ও বৈচিত্র্য অন্বেষণ করার জন্য আমন্ত্রণ জানাই।
বন্ধুগণ,
প্রায় দু’বছর ধরে সমগ্র মানবতা একটি দীর্ঘকালীন বিশ্বব্যাপী মহামারীর সঙ্গে লড়াই করছে। আমাদের মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের মিলিত অনুভব আমাদেরকে শিখিয়েছে যে আমরা যখন একসঙ্গে থাকি তখনই আমরা সবচাইতে বেশি মজবুত ও ভালো থাকি। আমাদের এই সামগ্রিক ভাবনার ঝলক তখনই দেখতে পাই যখন দেখি যে, আমাদের কোভিড-১৯-এর যোদ্ধারা, চিকিৎসকরা, সেবিকারা, চিকিৎসাকর্মীরা মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নিজেদের সর্বশ্রেষ্ঠ অবদান রেখেছেন। আমাদের এই ভাবনা আমাদের বৈজ্ঞানিকদের এবং নব-উদ্ভাবকদের মধ্যে দেখেছি যখন তাঁরা রেকর্ড সময়ে নতুন টিকা বানিয়েছেন। অনেক প্রজন্মের মানুষ এই প্রক্রিয়াকে মনে রাখবে যা মানুষের সহনশীলতার অবশিষ্ট সমস্ত কিছুর ওপরে ছিল।
বন্ধুগণ,
কোভিড ছাড়া অন্য সব প্রতিকূলতাও রয়েছে। দারিদ্র্য সেই প্রতিকূলতার মধ্যে অন্যতম যা আমাদের দীর্ঘকালীন একটি সমস্যা। গরীবদের সরকারের ওপর বেশি নির্ভরশীল করে তুলে দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াই সম্ভব নয়। দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে তখনই লড়াই করা সম্ভব যখন দরিদ্র মানুষরা সরকারগুলিকে বিশ্বাসযোগ্য সঙ্গী হিসেবে দেখতে শুরু করবে। তেমনই এক বিশ্বাসযোগ্য বন্ধু রূপে তাঁরা দেখবেন, যা তাঁদের দারিদ্র্যের কুচক্রকে চিরকালের জন্য ভেঙে ফেলতে সক্ষম একটি বুনিয়াদি পরিকাঠামো প্রদান করবে।
বন্ধুগণ,
যখন গরীবদের সশক্তিকরণের জন্য শাসন ক্ষমতাকে ব্যবহার করা হয়, তখনই তাঁরা দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়ার শক্তি পান। আর সেজন্য আমাদের উদ্যোগে ব্যাঙ্কিং পরিষেবার থেকে বঞ্চিত মানুষদের ব্যাঙ্কিং পরিষেবা প্রদানের উদ্দেশে কাজ করা, লক্ষ লক্ষ মানুষকে সামাজিক সুরক্ষা কভারেজ প্রদান করা, ৫০ কোটি বা ৫০০ মিলিয়ন ভারতবাসীকে বিনামূল্যে উৎকৃষ্ট স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদান এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। আপনারা একথা জেনে খুশি হবেন যে আমাদের দেশের বিভিন্ন শহর ও গ্রামগুলিতে প্রায় ৩ কোটি বা ৩০ মিলিয়ন গৃহহীনকে আমরা বাড়ি তৈরি করে দিয়েছি। আমরা মনে করি বাড়ি একটি নিছকই আশ্রয়স্থল নয়, মাথার ওপর ছাদ মানুষের মনে সম্মানের অনুভব এনে দেয়। ভারতে প্রত্যেক বাড়িতে নলের মাধ্যমে পানীয় জল সংযোগ সুনিশ্চিত করার জন্য আরেকটি গণ-আন্দোলন চলছে। সরকার অত্যাধুনিক বুনিয়াদি পরিকাঠামো নির্মাণের জন্য ১ ট্রিলিয়ন ডলারেরও বেশি অর্থ খরচ করছে। গত বছর অনেক মাস ধরে আর এখনও আমাদের ৮০ কোটি বা ৮০০ মিলিয়ন নাগরিককে বিনামূল্যে খাদ্যশস্য বিতরণ করা হচ্ছে। এই সমস্ত পদক্ষেপ এবং আরও অন্যান্য প্রচেষ্টা দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে ভারতকে শক্তি যোগাবে।
বন্ধুগণ,
আমাদের সামনে আবহাওয়া পরিবর্তনের বিপদের ঘনঘটা। বিশ্বকে এটা মেনে নিতে হবে যে আন্তর্জাতিক আবহে যে কোনও পরিবর্তনের সূত্রপাত সব সময়েই নিজেকে দিয়ে বা নিজের দেশকে দিয়ে করতে হয়। জলবায়ু পরিবর্তনকে কম করার জন্য সবচাইতে সরল এবং সবচাইতে সফল পদ্ধতি হল প্রকৃতির অনুরূপ জীবনশৈলী বেছে নেওয়া।
আমাদের মহান মহাত্মা গান্ধী শান্তি এবং অহিংসা সম্পর্কে তাঁর দর্শনের জন্য সারা পৃথিবীতে সম্মানিত। কিন্তু আপনারা কি জানেন যে তিনি বিশ্বের মহানতম আবহাওয়াবিদদের মধ্যেও যথেষ্ট জনপ্রিয়। তিনি শূণ্য কার্বন নিঃসরণসম্পন্ন জীবনশৈলীকে নিজের জীবনে বেছে নিয়েছিলেন। তিনি যা কিছু করেছেন তা আমাদের গ্রহের কল্যাণে সমস্ত কিছু ওপরে রেখেছেন। তিনি ট্রাস্টিশিপ-এর সিদ্ধান্ত নিয়েও আলোচনা করেছেন। তাঁর মতে আমরা প্রত্যেকেই এই গ্রহের ট্রাস্টি আর এর দেখভাল করা আমাদের সকলের কর্তব্য।
আজ ভারত জি-২০-র একমাত্র সদস্য দেশ যেটি প্যারিস চুক্তির সঙ্গে যুক্ত, যারা নিজেদের কথা রাখতে সমর্পিতপ্রাণ। ভারত এমন আন্তর্জাতিক চুক্তি আর বিপর্যয় প্রতিরোধী বুনিয়াদি পরিকাঠামোর জন্য গোষ্ঠীবদ্ধতার ব্যানারের নিচে গোটা বিশ্বকে একসঙ্গে নিয়ে আসতে পেরে গর্ববোধ করছে।
বন্ধুগণ,
আমরা গোটা মানবজাতির উন্নয়নের জন্য ভারতের উন্নয়নে বিশ্বাস করি। আমি ঋগ্বেদ থেকে উদাহরণ দিয়ে নিজের বক্তব্য সমাপন করতে চাই যা হয়তো বিশ্বের সর্বপ্রাচীন শাস্ত্রগুলির মধ্যে অন্যতম। এর ছন্দ এখনও আন্তর্জাতিক নাগরিকদের উন্নয়নে একটি স্বর্ণিম মানক।
ঋগ্বেদে বলা হয়েছে :
“সংগচ্ছ ধ্বংসং বোমনাং সিজানতম্
দেবা ভাগং যথা পূর্বে স্বজ্ঞানানা উপাসতে।।
সমানোমন্ত্রঃ সমিতিঃ সমানি সমানংমনঃ সহচিত্তমেষাম্।
সমানং মন্ত্রম্ অভিমন্ত্রয়েবঃ সমানেনবোহবিশাজুহোমি।।
সমানীবআকুতিঃ সমানাহৃদয়ানিবঃ।
সমানমস্তুবোমনোয়থাবঃ সুসহাসতি।।”
এর অর্থ হল – আসুন আমরা সবাই মিলে এক সূরে কথা বলে এগিয়ে যাই; আমরা সবাই একমত হই, আর যা কিছু আমাদের কাছে আছে, তাকে আমরা সেরকম পরস্পরের সঙ্গে ভাগ করে নিই, যেমনটি ঈশ্বর রা পরস্পরের সঙ্গে করেন।
আসুন, আমরা একটা মিলিত উদ্দেশ্য এবং মিলিত ভাবনা রাখি। আসুন, আমরা এমন একতার জন্য প্রার্থনা করি। আসুন, এই ভাবনাগুলি ও আকাঙ্ক্ষাগুলিকে পরস্পরের মধ্যে ভাগ করে নিই যা আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধ করবে।
বন্ধুগণ,
একজন আন্তর্জাতিক নাগরিকের জন্য এর থেকে উন্নত ঘোষণাপত্র আর কী হতে পারে। আমরা সবাই একটি দয়ালু, ন্যায়নিষ্ঠ এবং ঐক্যবদ্ধ বিশ্বের জন্য মিলেমিশে কাজ করতে থাকি।
ধন্যবাদ।
আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
নমস্তে।