নমস্কার।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার আমার সমস্ত সহযোগী, সকল রাজ্য সরকারের প্রতিনিধিগণ, বিভিন্ন সামাজিক সংস্থার সঙ্গে যুক্ত বন্ধুগণ, বিশেষ করে উত্তর-পূর্ব ভারতের দূরদুরান্তের এলাকা থেকে যে বন্ধুরা এই ওয়েবিনারের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন!
ভদ্রমহিলা ও ভদ্রমহোদয়গণ,
বাজেটের পর বাজেট ঘোষণাগুলিকে বাস্তবায়িত করার লক্ষ্যে আজ আপনাদের মতো সমস্ত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে এই বার্তালাপ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়। ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ, সবকা বিশ্বাস অউর সবকা প্রয়াস’ – ই আমাদের সরকারি নীতি আর কাজের এই মূলমন্ত্র । আজকের মূল ভাবনা – ‘লিভিং নো সিটিজেন বিহাইন্ড’। অর্থাৎ, কোনও নাগরিককে পেছনে থাকতে না দেওয়া । এই ভাবনাও আমাদের মূল মন্ত্র থেকেই উৎসারিত। স্বাধীনতার অমৃতকালের জন্য আমরা যে সঙ্কল্প নিয়েছি তা সকলের প্রচেষ্টাতেই বাস্তবায়িত হওয়া সম্ভব। সকলের প্রচেষ্টা তখনই সম্ভব যখন উন্নয়ন সকলের জন্য হবে। প্রত্যেক ব্যক্তি, প্রত্যেক শ্রেণী, প্রত্যেক ক্ষেত্র উন্নয়ন দ্বারা সম্পূর্ণভাবে উপকৃত হবে। সেজন্য বিগত বছরগুলিতে আমরা দেশের প্রত্যেক নাগরিক, প্রত্যেক ক্ষেত্রের সামর্থ্য বৃদ্ধির জন্য নিরন্তর চেষ্টা করে যাচ্ছি। দেশের গ্রাম এবং গরীবের জন্য পাকা বাড়ি, শৌচাগার, রান্নার গ্যাস, বিদ্যুৎ সরবরাহ, নলের মাধ্যমে জল, সড়ক – এরকম মৌলিক সুবিধাগুলির সঙ্গে যুক্ত করার প্রকল্পগুলির উদ্দেশ্য এটাই। এই প্রকল্পগুলির মাধ্যমে দেশ অনেক সাফল্য অর্জন করেছে। কিন্তু এখন সময় এসেছে এই প্রকল্পগুলির ‘স্যাচুরেশন’ হওয়া বা সম্পৃক্তায়নের। এগুলিকে ১০০ শতাংশ লক্ষ্যে পৌঁছে দেওয়ার। এর জন্য আমাদের নতুন রণনীতিও গ্রহণ করতে হবে। মনিটরিং বা তদারকির জন্য, অ্যাকাউন্টেবিলিটি বা দায়বদ্ধতার জন্য, প্রযুক্তির ভরপুর ব্যবহারের মাধ্যমে নতুন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের সম্পূর্ণ শক্তি প্রয়োগ করতে হবে।
বন্ধুগণ,
এই বাজেটে সরকার দ্বারা স্যাচুরেশনের এই বড় লক্ষ্য অর্জন করার জন্য একটি স্পষ্ট রোডম্যাপ দেওয়া হয়েছে। বাজেটে ‘পিএম আবাস যোজনা’, ‘গ্রামীণ সড়ক যোজনা’, ‘জল জীবন মিশন’, উত্তর-পূর্ব ভারতের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, গ্রামগুলিতে ব্রডব্যান্ড যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন – এই ধরনের প্রত্যেক প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্থান করা হয়েছে। এগুলি গ্রামীণ এলাকা, উত্তর-পূর্ব ভারতের সীমান্ত এলাকা আর দেশের উচ্চাকাঙ্ক্ষী জেলাগুলিতে সমস্ত পরিষেবাকে স্যাচুরেশনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টারই অঙ্গ। বাজেটে যে ‘ভাইব্র্যান্ট ভিলেজ প্রোগ্রাম’ ঘোষণা করা হয়েছে তা আমাদের সীমান্তবর্তী গ্রামগুলির উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ‘প্রাইম মিনিস্টার্স ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ ফর নর্থ ইস্ট রিজিয়ন’ অর্থাৎ, ‘পিএম ডিভাইন’ প্রকল্প উত্তর-পূর্ব ভারতের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে উন্নয়ন প্রকল্পগুলিতে ১০০ শতাংশ বাস্তবায়ন সুনিশ্চিত করার ক্ষেত্রে অত্যন্ত সহায়ক হবে।
বন্ধুগণ,
গ্রামগুলির উন্নয়নের ক্ষেত্রে সেখানে বাড়ি এবং জমির যথাযথ ডিমার্কেশন অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এক্ষেত্রে ‘স্বামীত্ব যোজনা’ অত্যন্ত সহায়ক প্রমাণিত হয়েছে। এখনও পর্যন্ত এর মাধ্যমে ৪০ লক্ষেরও বেশি ‘প্রপার্টি কার্ড’ জারি করা হয়েছে। ল্যান্ড রেকর্ডস-এর রেজিস্ট্রেশনের জন্য একটি ন্যাশনাল সিস্টেম আর একটি ‘ইউনিক ল্যান্ড আইডেন্টিফিকেশন পিন’ অনেক বড় পরিষেবা প্রদান করবে। রাজস্ব দপ্তরের ওপর সাধারণ গ্রামবাসীদের নির্ভরতা হ্রাস করা আমাদের সুনিশ্চিত করতে হবে। ল্যান্ড রেকর্ডস-এর ডিজিটাইজেশন এবং ডিমার্কেশনের সঙ্গে যুক্ত সমাধানগুলিকে আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে যুক্ত করা আজকের প্রয়োজন। আমি মনে করি, সমস্ত রাজ্য সরকার যদি নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ করে কাজ করে , তাহলে গ্রামগুলির উন্নয়নে আরও বেশি গতি সঞ্চারিত হবে। এটা এমন একটা সংস্কার যা গ্রামগুলিতে পরিকাঠামো নির্মাণের প্রকল্পগুলি এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার গতি বাড়াবে আর গ্রামগুলিতে বাণিজ্যিক গতিবিধিকে আরও উৎসাহিত করবে। ভিন্ন ভিন্ন প্রকল্পে ১০০ শতাংশ লক্ষ্য পূরণের জন্য আমাদের নতুন প্রযুক্তিকে গুরুত্ব দিতে হবে, অগ্রাধিকার দিতে হবে যাতে দ্রুতগতিতে প্রকল্পগুলি সম্পূর্ণ হয় আর গুণবত্তার ক্ষেত্রেও কোনরকম কমপ্রোমাইজ না করতে হয়।
বন্ধুগণ,
এ বছরের বাজেটে ‘পিএম আবাস যোজনা’র জন্য ৪৮ হাজার কোটি টাকার সংস্থান রাখা হয়েছে। এ বছর ৮০ লক্ষ বাড়ি বানানোর যে লক্ষ্য, নির্দিষ্ট সময়ে এই লক্ষ্যপূরণের জন্য দ্রুতগতিতে কাজ করতে হবে। আপনারা সবাই জানেন যে আজ দেশের ছয়টি শহরে ‘অ্যাফোর্ডেবল হাউজিং’-এর জন্য নতুন প্রযুক্তি প্রয়োগ করে ছয়টি ‘লাইট হাউজ’ প্রোজেক্টের কাজ চলছে। এ ধরনের প্রযুক্তি গ্রামের বাড়িগুলিতে কিভাবে উপযোগী হবে, আমাদের ইকো-সেন্সিটিভ জোনেও যে সমস্ত বাড়ি বানানোর কাজ চলছে, সেখানেও আমরা এই নতুন প্রযুক্তিগুলি কিভাবে ব্যবহার করতে পারি তার সমাধান নিয়ে একটি সার্থক এবং সুগভীর চিন্তাভাবনা ও আলাপ-আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে। গ্রামে গ্রামে পাহাড়ি এলাকাগুলিতে উত্তর-পূর্ব ভারতের সড়কপথগুলির রক্ষণাবেক্ষণ একটি অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। স্থানীয় ভৌগোলিক পরিস্থিতি অনুসারে দীর্ঘ সময় ধরে টিকে থাকবে, এরকম উপাদান চিহ্নিত করে তারপরই এইসব সমস্যার সমাধান করা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
বন্ধুগণ,
‘জল জীবন মিশন’-এর মাধ্যমে প্রায় ৪ কোটি বাড়িতে নলের মাধ্যমে পানীয় জলের সংযোগ দেওয়ার লক্ষ্য আমরা রেখেছি। এই লক্ষ্য পূরণ করার জন্য আপনাদের পরিশ্রম আরও বাড়াতে হবে। প্রত্যেক রাজ্যের প্রতি আমার অনুরোধ, যে পাইপলাইন পাতা হচ্ছে, যে জল আসছে, তার গুণমান সুনিশ্চিত করার ক্ষেত্রেও আমাদের লক্ষ্য দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। গ্রামস্তরে জনগণের মনে যাতে একটি ‘সেন্স অফ অনারশিপ’ আসে, ‘ওয়াটার গভর্ন্যান্স’ যেন জোরদার হয়, এটাও এই প্রকল্পের একটি লক্ষ্য। এই সকল বিষয় মাথায় রেখে আমাদের ২০২৪ সালের মধ্যে দেশের প্রত্যেক বাড়িতে নলের মাধ্যমে জল পৌঁছে দিতে হবে।
বন্ধুগণ,
গ্রামে গ্রামে ডিজিটাল সংযোগ এখন আর একটি উচ্চাকাঙ্ক্ষা নয়, এটি আজ একটি প্রয়োজন। ব্রডব্যান্ড কানেক্টিভিটির মাধ্যমে গ্রামগুলির শুধু সুবিধাই হবে না, প্রত্যেক গ্রামের দক্ষ যুবক-যুবতীর একটি বড় পুল তৈরি করার ক্ষেত্রেও সহায়ক হবে। গ্রামে গ্রামে ব্রডব্যান্ড কানেক্টিভিটি গড়ে তুলতে পারলে সার্ভিস সেক্টর বা পরিষেবা ক্ষেত্র যতটা সম্প্রসারিত হবে, সেটা দেশের সামর্থ্য আরও বেশি বাড়িয়ে দেবে। অপটিক্যাল ফাইবার কানেক্টিভিটির মাধ্যমে যদি কোথাও সমস্যা আসে সেগুলিকে চিহ্নিত করা, এবং সেগুলির সমাধান আমাদের খুঁজে বের করতে হবে। যে যে গ্রামে কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে, সেখানকার গুণবত্তা আর যথাযথ ব্যবহারের প্রতি সচেতনতা বৃদ্ধিও ততটাই প্রয়োজনীয়। ১০০ শতাংশ ডাকঘরকেও কোর ব্যাঙ্কিং সিস্টেমের অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্তও একটি বড় পদক্ষেপ। ‘জন ধন যোজনা’র মাধ্যমে ‘ফিনান্সিয়াল ইনক্লুশন’ বা আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকরণের যে অভিযান আমরা শুরু করেছি, তাকেও স্যাচুরেশনে পৌঁছে দিতে এই পদক্ষেপ অত্যন্ত সহায়ক হবে।
বন্ধুগণ,
গ্রামীণ অর্থনীতির একটা বড় ভিত্তি হল আমাদের মাতৃশক্তি, আমাদের মহিলা শক্তি। আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকরণের মাধ্যমে পরিবারগুলিতে মহিলাদের আর্থিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে অধিক অংশীদারিত্ব সুনিশ্চিত করা হয়েছে। স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির মাধ্যমে মহিলাদের এই অংশীদারিত্ব আরও বিস্তারিত করার প্রয়োজন রয়েছে। এই গ্রামীণ ক্ষেত্রগুলিতে অধিকাংশ স্টার্ট-আপকে কিভাবে নিয়ে যাওয়া যাবে, এক্ষেত্রেও আপনাদের প্রচেষ্টা বাড়াতে হবে।
বন্ধুগণ,
এই বাজেটে ঘোষিত সকল কর্মসূচিকে আমাদের নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে আমরা কিভাবে পূরণ করব তা সমস্ত মন্ত্রক, সংশ্লিষ্ট সকলের কনভার্জেন্স কিভাবে সুনিশ্চিত করতে পারবেন, তা নিয়ে এই ওয়েবিনারে বিস্তারিত আলাপ-আলোচনা হবে বলে আমি প্রত্যাশা করি। আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে, এভাবে চেষ্টা করলেই ‘লিভিং নো সিটিজেন বিহাইন্ড’-এর লক্ষ্য আমাদের দেশে পূরণ করা সম্ভব হবে। আমি আরও একটি অনুরোধ জানাচ্ছি। এ ধরনের শীর্ষ সম্মেলনে আমরা সরকারের পক্ষ থেকে বেশি কিছু বলতেই চাই না, আমরা আপনাদের থেকে শুনতে চাই, আমরা আপনাদের অভিজ্ঞতাকে জানতে চাই, আমরা জানতে চাই আমাদের গ্রামগুলির ক্ষমতা কিভাবে বাড়বে। প্রথমত, প্রশাসনের দৃষ্টিকোণ থেকে, আপনারা ভাবুন, কখনও কী কোনও গ্রামস্তরে সরকারি এজেন্সিগুলি নিজের নিজের ভূমিকা সঠিকভাবে পালন করে চলেছে? গ্রামস্তরে কখনও ২-৪ ঘন্টা একসঙ্গে বসে, সেই গ্রামের মানুষের সঙ্গে কথা কী করতে পারেন, তা নিয়ে কী আলোচনা করেছেন? আমি দীর্ঘকাল একটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ছিলাম। আমার অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি যে গ্রামে কর্মরত সরকারি প্রতিনিধিদের এই অভ্যাস নেই। কিন্তু আমি চাই যে একদিন গ্রামে কৃষি বিভাগের ব্যক্তি যাবেন, দ্বিতীয় দিন সেচ বিভাগের প্রতিনিধি যাবেন, তৃতীয় দিন স্বাস্থ্য বিভাগের প্রতিনিধি যাবেন, চতুর্থ দিন শিক্ষা বিভাগের প্রতিনিধি যাবেন। কিন্তু এখন কে কবে যাবেন সেটা অন্য কেউ জানে না। আমরা কি এখন থেকে গ্রামের মানুষদের সঙ্গে কথাবার্তা বলে সংশ্লিষ্ট সমস্ত এজেন্সিকে একসঙ্গে বসিয়ে গ্রামের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে এটা ঠিক করতে পারি যে তাঁরা কে কবে আসবেন? আমাদের গ্রামের উন্নয়নের জন্য অর্থের সমস্যা ততটা নেই, যতটা সমস্যা রয়েছে এই ঢিমেতালে কাজ করার প্রক্রিয়াকে সমাপ্ত করার, এই কনভারজেন্স হওয়া এবং তা থেকে গ্রামবাসীদের উপকৃত করার।
এখন আপনারা হয়তো ভাবছেন, ভাই, ন্যাশনাল এডুকেশন পলিসির সঙ্গে গ্রামীণ বিকাশের কী সম্পর্ক? এখন আপনারা ভাবুন, ন্যাশনাল এডুকেশন পলিসি-তে একটি বিষয় রয়েছে, ছাত্রছাত্রীদের স্থানীয় দক্ষতার সঙ্গে পরিচিত করানো। আপনারা ছাত্রছাত্রীদের স্থানীয় এলাকা থেকে দূরে নিয়ে যান। কখনও কী এটা ভেবেছেন, আমাদের যে ‘ভাইব্র্যান্ট ভিলেজ’ গড়ার কল্পনা রয়েছে, আমরা সেই দিকে লক্ষ্য দিতে যত স্কুল রয়েছে সেগুলিকে চিহ্নিত করি, কখনও সেখানকার অষ্টম শ্রেণীর শিশুদের, কখনও নবম শ্রেণীর ছেলে-মেয়েদের আবার কখনও দশম শ্রেণীর ছেলে-মেয়েদের দু’দিনের জন্য দেশের সীমান্তবর্তী কোনও গ্রামে বসবাসের সুযোগ করে দিই, তাহলে তাদের মনে সেই গ্রামটি অনেক প্রভাব বিস্তার করবে। তারা গ্রাম দেখবে, গ্রামের গাছপালা দেখবে, সেখানকার মানুষের জীবন দেখবে, সেগুলি নিয়ে লিখবে। অবলীলায় দেখবেন তাদের মধ্যে স্পন্দন আসা শুরু হয়েছে।
কোনও তহশিলের কেন্দ্রে যে ছেলে-মেয়েরা থাকে, তারা যদি ৫০-১০০ কিলোমিটার দূরে গিয়ে প্রান্তিক সীমান্তবর্তী গ্রামটি দেখে, নিজেদের সীমান্তকে দেখে, তখন তাদের মনে কী স্পন্দন তৈরি হবে কল্পনা করুন। এখন তো এটা তাদের শিক্ষার পাঠক্রমের অন্তর্গত হয়েছে। আমরা কী সত্যিই সত্যিই এরকম কিছু ব্যবস্থা বিকশিত করতে পারি?
এখন আমরা ঠিক করব যে তহশীল স্তরে কোন ধরনের প্রতিযোগিতা চালু করা যায়! ছেলে-মেয়েদের জন্য আমরা সেই প্রতিযোগিতাগুলি ওই গ্রামে গিয়ে করব। আপনারা দেখবেন স্পন্দিত হওয়া শুরু হয়ে যাবে। তেমনই আমরা কখনও ভাবতে পারি আমাদের গ্রামে এরকম কত মানুষ আছেন যাঁরা কোথাও না কোথাও সরকারি চাকরি করেন বা সরকারের হয়ে কাজ করেন। কত মানুষ আছেন যাঁরা আমাদের গ্রামে থাকেন, যাঁরা সরকারি চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন, বা গ্রামের মানুষ তাঁরা অবসর নিয়ে কাছাকাছি কোনও শহরে থাকেন। যদি এরকম ব্যবস্থা চালু করা যায় যে কখনও সরকারের সঙ্গে যুক্ত কিংবা সরকারি পেনশনভোগী ব্যক্তিদের সকলকে বছরে একবার গ্রামের মধ্যে একত্রিত করা যায়, আর তাঁরা ভাবনাচিন্তা করেন যে এটা আমাদের গ্রাম, আমি তো চলে গিয়েছি, চাকরি করছি, শহরে বসবাস করছি, কিন্তু আসুন সবাই একসঙ্গে বসি। আমাদের গ্রামের জন্য আমরা কী করতে পারি, আমরা সরকারি চাকরি করেছি, সরকারকে জানি, কাজেই বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নিতে আমরা সাহায্য করতে পারব। চলুন সবাই মিলে কাজ করি। অর্থাৎ, আমরা এরকম নতুন রণনীতি তৈরি করতে পারি। মনে করুন আমাদের গ্রামের একটা জন্মদিন ঠিক করলাম। আমরা ভাবলাম যে অমুক দিনে গ্রামের জন্মদিন পালন করব। গ্রামের মানুষ ১০-১৫ দিন ধরে উৎসবের আয়োজন করে গ্রামের বিভিন্ন প্রয়োজন পূরণের জন্য এগিয়ে আসবেন। গ্রামের সঙ্গে এই সম্পর্ক সেই গ্রামগুলিকে সমৃদ্ধ করবে। যতটা বাজেটে থাকবে তার থেকেও বেশি এটা সকলের প্রচেষ্টায় বাস্তবায়িত হবে।
আমরা নতুন রণনীতি নিয়ে এগিয়ে যাব। এখন যেমন আমাদের কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্র রয়েছে। আমরা কি ঠিক করতে পারি যে ভাই আমাদের গ্রামে ২০০ কৃষক রয়েছেন। চলো এবার ৫০ জন কৃষককে আমরা প্রাকৃতিক কৃষির দিকে নিয়ে যাব। কখনও আমরা এরকম ভাবতে পারি কি? আমাদের এখানে যে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে তাতে অধিকাংশ ক্ষেত্রে গ্রামীণ পরিবেশ থেকে ছেলে-মেয়েরা পড়াশোনা করতে আসে। কখনও কি গ্রামোন্নয়নের সম্পূর্ণ চিত্র আমরা এই বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে এই ছাত্রছাত্রীদের সামনে রেখেছি? তারা যখন লম্বা ছুটির সময় নিজেদের গ্রামে যাবে, তখন তারা গ্রামের মানুষের সঙ্গে বসবে, একটু লেখাপড়া জানা গ্রামবাসীদের সরকারি প্রকল্পগুলির সম্পর্কে জানাবে, নিজেরাও বুঝবে আর গ্রামের জন্য কাজ করবে। অর্থাৎ, আমরা কিছু নতুন রণনীতি ভাবতে পারি কি? আমাদের জানা থাকা উচিৎ যে ভারতের অধিকাংশ রাজ্যগুলিতে আউটপুট থেকে বেশি আউটকামের দিকে লক্ষ্য দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। অর্থাৎ, কতটা কাজ করছে তা নয়, সেই কাজ কতটা ফলদায়ক হচ্ছে সেটা ভাবতে হবে। আজ গ্রামে যথেষ্ট পরিমাণ টাকা আসে। সেই টাকাকে সঠিক সময়ে যদি ব্যবহার করা যায় তাহলে আমাদের গ্রামগুলির পরিস্থিতি বদলাতে পারে।
আমাদের গ্রামগুলির মধ্যে এক ধরনের ‘ভিলেজ সেক্রেটারিয়েট’ গড়ে তুলতে হবে। আজ যখন আমি ‘ভিলেজ সেক্রেটারিয়েট’-এর কথা বলছি তখন নিঃসন্দেহে একটি বিল্ডিং থাকতে হবে। সেজন্য সকলের জন্য বসার যে চেম্বার থাকতে হবে এমন নয়, আমি শুধু সেটার কথাই বলছি না। আজ আমরা গ্রামে যেখানে দশজন একসঙ্গে বসি, এরকমই কোনও ছোট জায়গায় আমরা সবাই মিলে বসব, আর শিক্ষার জন্য কিছু নতুন পরিকল্পনা করতে পারব। তেমনই আপনারা হয়তো লক্ষ্য করেছেন, ভারত সরকারের উচ্চাকাঙ্ক্ষী জেলাগুলিতে ভারত সরকার একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এত অদ্ভূত সব অভিজ্ঞতা হচ্ছে যে জেলায় জেলায় এখন একটি প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেছে। প্রত্যেক জেলার মনে হচ্ছে যে আমি উন্নয়নে রাজ্যের গড় মান বা অন্য জেলার থেকে পিছিয়ে থাকব না। অনেক জেলার মনে হচ্ছে যে আমরা জাতীয় গড় থেকে এগিয়ে যেতে চাই। আপনারা কি নিজেদের তহশিলের জন্য ৮ কিংবা ১০টি প্যারামিটার ঠিক করতে পারেন? সেই ৮ কিংবা ১০টি প্যারামিটারের প্রতিযোগিতায় প্রত্যেক তিন মাসে প্রতিযোগিতার যে ফল পাবেন সেখান থেকে কোন গ্রামটি এগিয়ে যাচ্ছে, কোন গ্রাম পিছিয়ে পড়েছে, আজ আমরা কোথায় রয়েছি, আমরা এখন কী করছি, শ্রেষ্ঠ গ্রাম হলে রাজ্যস্তরে পুরস্কার দেওয়া হয়, শ্রেষ্ঠ গ্রাম হলে জাতীয় স্তরে পুরস্কার দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে প্রয়োজন হল তহশিল স্তরে যদি ৫০ থেকে ১০০, ১৫০ কিংবা ২০০টি গ্রামের মধ্যে প্রতিযোগিতা হয় আর তারা প্যারামিটার ঠিক করে যে এই ১০টি বিষয় নিয়ে প্রতিযোগিতা হবে, ২০২২-এ এই ১০টি বিষয় নিয়ে প্রতিযোগিতা হবে। আমরা সবাই দেখবো যে, এই ১০টি বিষয় নিয়ে কাজে কোন গ্রাম এগিয়ে যায়। আপনারা দেখুন পরিবর্তন শুরু হয়ে যাবে আর যখন এরকমভাবে প্রতিযোগিতায় জিতে ব্লক স্তরে প্রতিযোগিতায় যাবেন, তখন আরও পরিবর্তন হবে আর সেজন্য আমি বলব যে বাজেট কোনও ব্যাপার নয়। আজ আমাদের আউটকামটাই বড় কথা, আর তা থেকে তৃণমূল স্তরে পরিবর্তন আনার সমস্ত ধরনের চেষ্টা করা উচিৎ।
আমরা কি গ্রামের মধ্যে একটা পরিবর্তনের মেজাজ তৈরি করতে পারি না? আমরা কি এটা ঠিক করতে পারি না যে আমাদের গ্রামে কোনও বালক যেন অপুষ্টিতে না ভোগে? আমি বলছি যে সরকারি বাজেটের পরোয়া না করে একবার নিজেদের মনে কথাটা বসিয়ে নিন। গ্রামের মানুষ গ্রামের কোনও শিশুকে অপুষ্টিতে ভুগতে দেবেন না। আজও আমাদের দেশে একটা সংস্কার রয়েছে। আমরা যদি এটা বলি যে আমাদের গ্রামে একজনও ছাত্র-ছাত্রীও স্কুলছুট হবে না, তাহলে দেখবেন সমস্ত গ্রামের মানুষ এই অভিযানে যুক্ত হবেন। আমরা তো এটা দেখেছি! অনেক গ্রামের নেতারা এরকম রয়েছেন, অনেক পঞ্চায়েতের প্রতিনিধি রয়েছেন, অনেক পঞ্চায়েত প্রধান রয়েছেন যাঁরা কখনও গ্রামের স্কুলেই যাননি আর গেলে কবে গেছেন? তাঁরা পতাকা তুলতে গেছেন। তারপর আর কখনও যাননি। এই স্কুলগুলিতে নিয়মিত যাওয়ার অভ্যাস আমরা কিভাবে তৈরি করব? আমাদের ভাবতে হবে যে এটা আমার গ্রাম। আমার গ্রামের এই ব্যবস্থা আমাদেরকেই ঠিক করতে হবে। আমাদেরকে গ্রামের প্রত্যেক প্রান্তে যেতে হবে – এই নেতৃত্ব সরকার প্রত্যেক ইউনিটকে দিতে হবে। যদি আমরা নেতৃত্ব না দিই আর যদি শুধু মুখে মুখে বলি আর চেক কেটে দিই বা টাকা পাঠিয়ে দিই আর ভাবি কাজ হয়ে যাবে, তাহলে কিন্তু পরিবর্তন আসবে না। আমরা যখন স্বাধীনতার ৭৫তম বর্ষপূর্তি পালন করছি, তখন জাতির পিতা মহাত্মা গান্ধীর সঙ্গে কিছু কথা, তাঁর কিছু আকাঙ্ক্ষা কি আমরা বাস্তবায়িত করতে পারি? তিনি বলে গেছেন পরিচ্ছন্নতার কথা, তিনি বলেছেন ভারতের আত্মা গ্রামে বসবাস করে। মহাত্মা গান্ধীর এই বক্তব্যকে আমরা কি বাস্তবায়িত করে পারি না?
বন্ধুগণ,
রাজ্য সরকার, কেন্দ্রীয় সরকার, স্থানীয় প্রশাসন এবং স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলি মিলেমিশে, আমাদের সকল বিভাগের ঢিলেমি সমাপ্ত করে আমরা যদি নিজেদের লক্ষ্য নির্ধারণ করি, তাহলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে আমরা নির্দিষ্ট সময়ে পরিণাম পেতে পারি। স্বাধীনতার ৭৫তম বর্ষে আমাদের সকলকেই দেশের জন্য কিছু দিতে হবে, দেশের জন্য কিছু করতে হবে - এই মেজাজ নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে। আজ গোটা দিন এই বিষয় নিয়ে অনেক আলাপ-আলোচনা হোক। এবারের বাজেটকে যথাযথ ব্যবহার করে কিভাবে গ্রামের জীবনে পরিবর্তন আনা যাবে, ‘অপটিমাম ইউটিলাইজেশন অফ ইচ অ্যান্ড এভরি পেনি’ অর্থাৎ, প্রতিটি পয়সার সর্বোৎকৃষ্ট ব্যবহার, এটা আমরা কিভাবে করতে পারব! যদি আমরা করতে পারি, তাহলে আপনারা দেখবেন কোনও নাগরিক পিছিয়ে থাকবেন না, আমাদের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে। আপনাদের সবাইকে আমার অনেক অনেক শুভকামনা!
অনেক অনেক ধন্যবাদ!