নমস্কার!
আপনাদের সবাইকে আমার পক্ষ থেকে জয় স্বামী নারায়ণ! আমার কচ্ছ-এর ভাই ও বোনেরা, কেমন আছেন? আনন্দে আছেন তো? আজ এখানে আপনাদের সেবায় কে কে প্যাটেল সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের শুভারম্ভ হচ্ছে।
আপনাদের সবাইকে আমার অনেক অনেক শুভকামনা।
গুজরাটের জনপ্রিয়, মৃদুভাষী কিন্তু কর্মে অটল মুখ্যমন্ত্রী শ্রী ভূপেন্দ্র ভাই প্যাটেলজি, মহন্ত স্বামী পূজনীয় ধর্মনন্দন দাসজি, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রী শ্রী মনসুখ মাণ্ডব্যজি, গুজরাট বিধানসভার অধ্যক্ষ নীমাবেন আচার্যজি, গুজরাট সরকারের অন্যান্য মন্ত্রীগণ, সংসদে আমার সঙ্গী শ্রী বিনোদ ছাবরাজি, অন্যান্য জনপ্রতিনিধিগণ, সেখানে উপস্থিত শ্রদ্ধেয় সাধু - সন্ন্যাসীগণ, কছীয় লেওয়া প্যাটেল এডুকেশন অ্যান্ড মেডিকেল ট্রাস্টের চেয়ারম্যান শ্রী গোপালভাই গোরছিয়াজি, অন্যান্য সকল ট্রাস্টি, সমাজের বিভিন্ন অংশ থেকে প্রতিনিধিত্ব করা বিশেষ ব্যক্তিত্বগণ, দেশ এবং বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসে উপস্থিত হওয়া সকল দানী, সজ্জন মহানুভব ব্যক্তিগণ, চিকিৎসকগণ এবং সমস্ত সেবারত চিকিৎসাকর্মী ও অন্যান্য কর্মচারীগণ আর আমার কচ্ছ-এর প্রিয় ভাই ও বোনেরা!
আরোগ্যের সঙ্গে যুক্ত এত বড় কর্মসূচির জন্য কচ্ছবাসীদের অনেক অনেক শুভেচ্ছা। গুজরাটবাসীদেরও অনেক অনেক শুভেচ্ছা। ভূমিকম্পে যে প্রলয় এসেছিল, সেই দিনগুলিকে পেছনে ফেলে ভুজ এবং কচ্ছ-এর মানুষ এখন নিজেদের পরিশ্রমে এই অঞ্চলের নতুন ভাগ্য রচনা করছেন। আজ এই এলাকায় অনেক আধুনিক মেডিকেল বা চিকিৎসা পরিষেবা গড়ে উঠেছে। এই প্রক্রিয়ায় আজ ভুজ একটি আধুনিক সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল পাচ্ছে। এটি কচ্ছ-এর প্রথম চ্যারিটেবল সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল। এই অত্যাধুনিক স্বাস্থ্য পরিষেবার জন্য কচ্ছবাসীদের অনেক অনেক শুভেচ্ছা। ২০০ শয্যাবিশিষ্ট এই সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল কচ্ছ-এর লক্ষ লক্ষ মানুষকে সুলভ এবং উন্নত চিকিৎসা পরিষেবা প্রদান করতে চলেছে। এই পরিষেবা আমাদের সামরিক এবং আধা-সামরিক বাহিনীর পরিবার-পরিজনদের জন্য এবং ব্যবসা জগতের অনেক মানুষের জন্য উত্তম চিকিৎসার গ্যারান্টি হয়ে সামনে আসতে চলেছে।
বন্ধুগণ,
উন্নত স্বাস্থ্য পরিষেবা শুধুই রোগের চিকিৎসা পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাকে না। এটি সামাজিক ন্যায়কে উৎসাহিত করে, প্রতিষ্ঠিত করে। যখন কোনও গরীবের সামনে সস্তা এবং উন্নতমানের চিকিৎসা সুলভ হয়ে ওঠে, তখন তাঁর মনে দেশের শাসন ব্যবস্থার ওপর ভরসা আরও মজবুত হয়। চিকিৎসার খরচের চিন্তা থেকে গরীব যখন মুক্তি পায় তখন সে নিশ্চিন্ত হয়ে দারিদ্র্য থেকে বেরিয়ে আসার জন্য পরিশ্রম করে। বিগত বছরগুলিতে স্বাস্থ্যক্ষেত্রে যত প্রকল্প চালু হয়েছে তার প্রেরণা এই ভাবনা থেকেই এসেছে। আয়ুষ্মান ভারত যোজনা এবং জন ঔষধি যোজনার মাধ্যমে প্রত্যেক বছর গরীব এবং মধ্যবিত্ত পরিবারগুলির চিকিৎসা খাতে লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা সাশ্রয় হচ্ছে। হেলথ অ্যান্ড ওয়েলনেস সেন্টার, আয়ুষ্মান ভারত হেলথ ইনফ্রাস্ট্রাকচার প্রকল্পের মতো অভিযান এই দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত – সকলের জন্য চিকিৎসাকে সুলভ করে তুলতে সাহায্য করছে।
আয়ুষ্মান ভারত ডিজিটাল হেলথ মিশনের মাধ্যমে রোগীদের জন্য চিকিৎসা পরিষেবা আরও বৃদ্ধি পাবে। আয়ুষ্মান হেলথ ইনফ্রাস্ট্রাকচার মিশনের মাধ্যমে আধুনিক এবং ক্রিটিকাল হেলথ কেয়ার ইনফ্রাস্ট্রাকচারকে জেলা এবং ব্লক স্তরে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। দেশে আজ কয়েক ডজন এইমস হাসপাতালের পাশাপাশি অসংখ্য সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালও গড়ে তোলা হচ্ছে। দেশের প্রত্যেক জেলায় মেডিকেল কলেজ নির্মাণের লক্ষ্য নির্ধারণ থেকে শুরু করে মেডিকেল এডুকেশনকে সকলের আয়ত্ত্বের মধ্যে রাখার প্রচেষ্টা, এ থেকে আগামী ১০ বছরে দেশে রেকর্ড সংখ্যক নতুন চিকিৎসক পাশ করে বেরোবে।
এক্ষেত্রে আমাদের কচ্ছ এলাকাও অনেক লাভবান হবে। একটু আগেই এখানে গোপাল ভাই আমাকে বলছিলেন, আপনি যে লালকেল্লার প্রাকার থেকে বলেছিলেন যে স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসবে প্রত্যেক নাগরিকের কিছু না কিছু অবদান রাখা উচিৎ, এখানে আজ দেশ ও বিদেশের অনেক দানি মহানুভব আপনার বক্তব্যে অনুপ্রাণিত হয়ে তাঁদের গ্রহণ করা সঙ্কল্প বাস্তবায়িত করছে। সেজন্য প্রকৃতপক্ষে এই কর্তব্য ভাবনা, সমাজের প্রতি নিষ্ঠাভাব, সমাজের প্রতি সদ্ভাবনা, সংবেদনা যা মানবতার একটি বড় পুঁজি আর যা আমাদের কচ্ছবাসীর একটি প্রধান চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। আপনারা যেখানেই যান না কেন, যেখানেই পরস্পরের সঙ্গে দেখা হোক না কেন, নিজেদের কচ্ছী ভাষায় কথা বলেন। তারপর কেউ জিজ্ঞাসা করেন না যে তিনি কোন গ্রামের মানুষ, কোন জাতির মানুষ বা অন্য কোনও কিছু। আপনারা দ্রুত একে অপরের হয়ে যান। এটাই কচ্ছ-এর মানুষের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য আর কচ্ছ-এর মানুষের কর্তব্য ভাবনার একটি নির্দিষ্ট পরিচয় গড়ে উঠেছে। এভাবে আপনারা নিজেদের পদক্ষেপ রাখছেন আর সেজন্য আপনারা সবাই, এবং আপনারা ছাড়াও যেমনটি আপনাদের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্র ভাই বলেছেন যে এটি প্রধানমন্ত্রীর সবচাইতে প্রিয় জেলা! বাস্তবে যখন আমরা কোনও সমস্যা বা বিপর্যয়ের মুখোমুখি হই, তখন যাঁরা আমাদের কাজে লাগেন আর এই কাজের মাধ্যমে যাঁদেরকে আমরা পছন্দ করে ফেলি, তাঁদের সঙ্গে যে অটুট সম্পর্ক গড়ে উঠবে, তা বলাই বাহুল্য। কচ্ছ ভূমিকম্পের ফলে যে কঠিন পরিস্থিতি গড়ে উঠেছিল, সেই পরিস্থিতিতে আপনাদের সঙ্গে আমার যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে উঠেছে, তারই পরিণাম এই সম্পর্ক। আমিও এই জীবনে আর কচ্ছ-কে ভুলতে পারব না, ছাড়তে পারব না, কচ্ছ-ও আমাকে ছাড়তে পারবে না। সার্বজনিক জীবনে এরকম সৌভাগ্য নে
ক কম মানুষেরই হয় আর আমার জন্য এটা অত্যন্ত গর্বের বিষয়। গুজরাট আজ চারিদিকেই প্রগতি করছে, উন্নতি করছে।
গুজরাটের উন্নয়নের কথা শুধু গুজরাটে নয়, দেশের অন্যান্য স্থানেও সজ্ঞানে অনুসরণ করা হয়। আপনারা ভাবুন, দুই দশক আগে গুজরাটে মাত্র নয়টি মেডিকেল কলেজ ছিল। দুই দশক আগে মাত্র নয়টি মেডিকেল কলেজ! আর গুজরাটের নবীন প্রজন্মের ছেলে-মেয়েরা যদি ডাক্তার হতে চায় তাহলে মাত্র ১,১০০ আসন ছিল। আর আজ? আজ গুজরাটে একটি এইমস হাসপাতাল আছে, আর তিন ডজনেরও বেশি মেডিকেল কলেজ। আর দুই দশক আগে মাত্র হাজার খানেক ছেলে-মেয়ে ডাক্তারি পড়ার সুযোগ পেত। এখন ছয় হাজারের বেশি ছেলে-মেয়েরা ডাক্তারি পড়ার সুবিধা পাচ্ছে। ২০২১ সালে ৫০টি আসন নিয়ে রাজকোটে এইমস শুরু হয়েছে। আমেদাবাদ, রাজকোটে মেডিকেল কলেজের আপগ্রেডেশনের কাজ চলছে। ভাবনগরের মেডিকেল কলেজের আপগ্রেডেশনের কাজ প্রায় সম্পূর্ণ হয়ে গেছে। আমেদাবাদে একটি ১,৫০০ শয্যাবিশিষ্ট অসামরিক হাসপাতাল গড়ে উঠেছে। আমার দৃষ্টিতে এটা খুব বড় কাজ। মা এবং শিশু, মা এবং বালকদের জন্য প্রকৃত অর্থে একটি উন্নত ব্যবস্থাসম্পন্ন স্বয়ংসম্পূর্ণ পরিকাঠামো আমাদের রাজ্যে গড়ে উঠেছে। কার্ডিওলজি থেকে শুরু করে অন্যান্য আনুষঙ্গিক বিষয়ের গবেষণার জন্য ৮০০ শয্যাবিশিষ্ট স্বতন্ত্র হাসপাতাল গড়ে উঠেছে, যেখানে বিভিন্ন হৃদরোগ নিয়ে গবেষণা ও চিকিৎসার কাজ চলছে। গুজরাটে ক্যান্সার অনুসন্ধানের কাজও বড় মাত্রায় শুরু হয়েছে এবং চলছে। শুধু তাই নয়, আমরা গোটা দেশে বৃক্কের চিকিৎসার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করেছি। আমরা যখন কেন্দ্রীয় সরকারের দায়িত্ব নিয়েছি, তখন সারা দেশে বৃক্ক সংক্রান্ত নানা রোগে আক্রান্তদের সংখ্যা যেমন ক্রমবর্ধমান ছিল, তেমনই ডায়ালিসিসের প্রয়োজনও বাড়ছিল। কিন্তু এই প্রয়োজনের তুলনায় চিকিৎসা পরিকাঠামো না থাকায় সাধারণ মানুষকে অনেক সঙ্কটের মুখোমুখি হতে হচ্ছিল। যেখানে কোনও রোগীকে সপ্তাহে দু’বার ডায়ালিসিস করানোর প্রয়োজন, সেখানে তাঁরা মাসে দু’বার করানোর সুযোগও পাচ্ছিলেন না। তাহলে তাঁদের শারীরিক অবস্থার কত দ্রুত অবনতি ঘটছিল তা অনুমান করা যায়। আজ আমরা জেলায় জেলায় বিনামূল্যে ডায়ালিসিসের পরিষেবা শুরু করেছি আর এই কাজ এখন সারা দেশে বড় মাত্রায় চলছে।
কিন্তু আজ আপনাদের মতো আমার প্রিয় ভাই-বোনেদের সামনে আমি একটি কথা তুলে ধরতে চাই। এখন স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসব চলছে। আমরা যত হাসপাতালই তৈরি করি না কেন, যতই তৈরি করি না কেন, লক্ষ লক্ষ নতুন শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল তৈরি করি না কেন, কিন্তু তা দিয়ে কী কখনও সমস্যার সমাধান হবে? এর ভেতরে আমরা যদি সমাজে এমন একটা জাগৃতি আনতে পারি যে আমরা সবাই নিজের নিজের কর্তব্য পালন করব, আমরা যদি আপামর সাধারণ মানুষের মনে নিজেদের কর্তব্য সম্পর্কে সচেতনতা জাগাতে পারি, তাহলে যে আদর্শ আবহ গড়ে উঠবে, তখন এমন পরিস্থিতি গড়ে উঠবে যে মানুষকে হাসপাতালেই যেতে হবে না। এই সকল সমস্যার এটাই প্রকৃত সমাধান। আমাদের যেন হাসপাতালেই যেতে না হয়, এমন পরিস্থিতি সৃষ্টির কাজ করা। আজ এখানে অত্যন্ত সুন্দর একটি হাসপাতাল উদ্বোধন হচ্ছে। কিন্তু, আপনাদেরকে যদি আমি শুভকামনা জানাই, তাহলে সেই শুভকামনায় কী কামনা করব? আমি আপনাদেরকে শুভকামনা জানাব যে আপনারা যে কে কে প্যাটেল চ্যারিটেবল ট্রাস্টে এত এত কোটি টাকা খরচ করেছেন, এত সুন্দর হাসপাতাল গড়ে তুলেছেন, সেসব ঠিক আছে। কিন্তু আমি ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করব, কাউকে যেন হাসপাতালে যেতে না হয়, আর আপনাদের হাসপাতাল যেন খালিই থাকে। আমি তো এমন দিনই দেখতে চাই। আর হাসপাতাল কখন খালি থাকবে? যখন আমরা ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে পরিচ্ছন্নতার ওপর জোর দেব। পরিচ্ছন্নতা নিয়ে মানুষের মনে সচেতনতা বাড়লে যাঁরা পরিবেশকে পরিচ্ছন্ন রাখবে না, তাঁদের বিরুদ্ধে মানুষের মনে আক্রোশ জাগবে। বাড়িতে কিংবা বাড়ির চারপাশে কোথাও নোংরা, আবর্জনা থাকবে না। নোংরা, আবর্জনা ফেলার বিরুদ্ধে মানুষের মনে ঘৃণা থাকবে। এরকম আবহ যদি আমরা গড়ে তুলতে পারি তাহলে কী রোগ আমাদের শরীরের ঢোকার পথ খুঁজে পাবে? পাবে না। তেমনই আমরা যদি জলকে নির্মল রাখি, শুদ্ধ পানীয় জল পান করি, তাহলেও আমরা নিজেদেরকে নিরাময় রাখার পথে অনেকটা এগিয়ে থাকব। আপনারা দেশে পরিচ্ছন্নতা সুনিশ্চিত করতে স্বচ্ছ ভারত অভিযান সফল করেছেন। গ্রামে গ্রামে, শহরে, বস্তিতে শৌচালয় নির্মাণের অভিযানে অংশগ্রহণ করেছেন, উন্মুক্ত স্থানে শৌচকর্ম থেকে মুক্তির জন্য অভিযান চালিয়েছেন আর সমাজও গোটা দেশে সহযোগিতা করেছে। আমরা সবাই জানি যে এই করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমরা যে জয়লাভ করছি তার মূল কারণ আমরা আমাদের শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়েছি। শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারলে এরকম অনেক লড়াইয়ে আমরা জয় পেতে পারব। এত বড় বড় ঝড়-তুফান এসেছে, তবুও আমরা লড়ে যাচ্ছি। এখনও লড়ছি কারণ করোনা কিন্তু চলে যায়নি। আমাদের কোনও ভুল করলে চলবে না। আরও সতর্ক থাকতে হবে। কেন্দ্রীয় সরকার জল জীবন মিশন শুরু করে দেশের সর্বত্র বাড়িতে বাড়িতে নলের মাধ্যমে জল পৌঁছে দেওয়ার কাজ শুরু করেছে। মানুষ যদি শুদ্ধ পরিশ্রুত জল পান করেন, তেমনই শরীরে যদি ভারসাম্যযুক্ত পুষ্টি বজায় রাখেন, জাঙ্ক ফুড খাওয়া থেকে বিরত থাকেন, পোস্ট অফিসে যেমন টাকা জমানো হয়, তেমনভাবেই সচেতন হয়ে যদি নিজেদের শরীরের প্রতি লক্ষ্য রাখেন, তখন শরীর লাভবান হবে, স্বাস্থ্য ভালো থাকবে, চিকিৎসকেরও প্রয়োজন হবে না। এখানে যে চিকিৎসকেরা বসে আছেন তাঁরা আমার কথা শুনে মিটি মিটি হাসছেন কারণ আহার নিয়ে আমাদের দেশে শাস্ত্রেও বলা হয়েছে, প্রতিদিনকার আহারে যতটা নিয়ম রক্ষা করার গুরুত্ব রয়েছে, রেগুলারিটি রক্ষা করার গুরুত্ব রয়েছে, ততটাই সংযম রক্ষারও গুরুত্ব রয়েছে। এই বিষয় নিয়ে আচার্য ভিনোবা ভাবেজি যা বলেছিলেন তা নিশ্চয়ই আপনারা পড়েছেন। তিনি অত্যন্ত সুন্দর একটি কথা বলেছেন। আচার্য ভিনোবা ভাবেজি বলেছেন - “ব্রত করা সহজ, আপনারা সহজেই ব্রত করতে পারেন, কিন্তু সংযমপূর্ণ ভোজন করা অত্যন্ত কঠিন কাজ। সকলের সঙ্গে টেবিলে বসে আছেন, সেই সময়েই চারটি নতুন কথা মাথায় এলে তখন মনও ব্যতিব্যস্ত হয়ে ওঠে।”
এখন আজ সকলের চিন্তা হল যে তাঁদের ওজন বাড়ছে। এখানে যত বেশি ওজনসম্পন্ন মানুষ বসে আছেন তাঁরা লজ্জা পাবেন না, যাঁদের ওজন বাড়ছে তাঁদের বাড়িতে অতি সন্তর্পণে ওজনের সঙ্গে ডায়াবেটিস বা মধুমেহ রোগ পৌঁছে যাচ্ছে। এই মধুমেহ এমন একটি রোগ, এমন খারাপ রোগ যা দুনিয়ার আরও অনেক রোগকে নিমন্ত্রণ করে ডেকে আনে। এখন আমাদের অনেককেই ওজন কমানোর জন্য এই কে কে হাসপাতালের অপেক্ষায় থাকতে হবে। কিন্তু আমরা যদি এই ডায়াবেটিস থেকে বাঁচতে চাই, তাহলে সকালে কিছুটা হাঁটা, কিছুটা চলাফেরা করা, কিছুটা শারীরিক কসরত করলেই হয়ে যায়। আমরা যদি এগুলি করি তাহলে স্বাস্থ্যের যে মৌলিক সম্পদ, সেটাই আমাদের রক্ষা করবে। আমাদের আর হাসপাতাল যেতে হবে না। এসব কথা মাথায় রেখেই আমরা যখন আন্তর্জাতিক যোগ দিবস পালনের প্রস্তাব রেখেছিলাম, তখন গোটা বিশ্ব একে স্বীকার করে নিয়েছিল। আমরা সারা পৃথিবীতে যোগ-এর প্রচার ও প্রসারে অভিযান শুরু করেছি। তারপর পৃথিবীতে যখন করোনার প্রাদুর্ভাব হল তখন আপনারা হয়তো লক্ষ্য করেছেন, সারা পৃথিবীর মানুষ এখন করোনা থেকে মুক্তির জন্য আমাদের আয়ুর্বেদ চিকিৎসার ঝুঁকছেন। বিশ্বের প্রতিটি দেশে কোনও না কোনভাবে আমাদের যোগ ও আয়ুর্বেদের অনেক কিছু রপ্তানি হয়েছে। সবচাইতে বেশি রপ্তানি হয়েছে আমাদের হলুদ। করোনা আসায় সারা পৃথিবীর মানুষ জানতে পেরেছেন, ভারতে যে জড়িবুটি রয়েছে - সেগুলি স্বাস্থ্যের জন্য কতটা লাভদায়ক। কিন্তু আমরা নিজেরাই যদি এসব বিষয় সম্পর্কে উদাসীন থাকি, তাহলে কিভাবে চলবে? আমি আমার কচ্ছ-এর জনগণকে বলতে চাই যে এবার যখন জুন মাসে আন্তর্জাতিক যোগ দিবস আসবে, তখন আপনারা একটা কাজ করতে পারবেন? তখন কি আমার কচ্ছ-এর জনগণ একটি বিশ্ব রেকর্ড তৈরি করতে পারবে? এত বড় একটি জেলা, এত বিশাল কচ্ছ-এর সর্বত্র কি এই যোগ কর্মসূচি চলতে পারে? আমি চাই যে কচ্ছ-এর এমন কোনও গ্রাম বাকি না থাকুক, এখনও হাতে দেড় থেকে দু’মাস সময় বাকি রয়েছে, এই বিশ্ব রেকর্ড করার জন্য আপনাদের প্রতি আমার অনুরোধ, এতটাই পরিশ্রম করুন, এত পরিশ্রম করুন যে এই আন্তর্জাতিক যোগ দিবস কর্মসূচিতে কচ্ছ বিশ্ব রেকর্ড করতে পারে। যদি এটা করতে পারেন তাহলে দেখবেন কখনও হাসপাতাল যাওয়ার প্রয়োজন হবে না। আমার যা ইচ্ছা, আমি যে শুভেচ্ছার কথা একটু আগে বলেছিলাম যে, কাউকে যেন কে কে হাসপাতালে রোগী হয়ে আসতে না হয়, এই ইচ্ছা আপনারা নিজেদের সুস্থ রেখে পূরণ করুন। হ্যাঁ, অ্যাক্সিডেন্ট হয়ে যদি যেতে হয় সেটা অন্য কথা। দুর্ঘটনার ওপর তো আর আমাদের হাত থাকে না! কিন্তু আমি মনে করি, আপনারা যদি আগ্রহ সহকারে যোগাভ্যাস করেন তাহলে সাধারণ অবস্থায় হাসপাতালে যেতেই হবে না।
আজ যখন আমি কচ্ছ-এর ভাই ও বোনেদের সঙ্গে কথা বলছি, তখন আমার তো অধিকার বর্তায় আপনাদের কাছে কিছু চাওয়ার, আর আমি চাইলে আপনাদের তো দিতেই হবে। আমি নিজের অধিকার বোধ থেকে বলছি … এখন দেখুন, বিশ্বের এত দেশে আমার কচ্ছী ভাই ও বোনেরা থাকেন। আমাদের কচ্ছ-এর রানোৎসব দেখতে গোটা দেশের মানুষ চলে আসেন। আজকাল তো নিজে থেকেই চলে আসেন। এই পর্যটন কচ্ছ-এর ‘জাহো জালালি’বা আর্থিক সমৃদ্ধি বাড়াচ্ছে, কচ্ছ-এর আর্থিক ব্যবস্থাকে সম্প্রসারিত করছে। এর থেকে বড় কথা হল, কচ্ছ-এর ‘মেহমান নাওয়াজি’ বা আতিথেয়তার প্রশংসা সারা ভারত তথা গোটা বিশ্বে সুবিদিত। ভাই! ‘কচ্ছ’ মানে এখন কচ্ছ-এর জনগণ বোঝায়। এখন আমাকে বলুন, কচ্ছ রানোৎসব সফল করার জন্য সরকার এত পরিশ্রম করে, কচ্ছ-এর জনগণ ‘মেহমান নাওয়াজি’র এত উচ্চ আদর্শ স্থাপন করে বলেই তো এর এত জয়জয়কার হয়। কিন্তু বিদেশি অতিথিরা যদি কচ্ছ-এর রানে আসা ছেড়ে দেন তাহলে কিভাবে চলবে? আমাদের হেলথ ট্যুরিজম বা স্বাস্থ্য পর্যটনের ব্যবস্থাপকরা সেজন্য এগিয়ে আসুন। তাঁরা যেমন অত্যাধুনিক হাসপাতাল তৈরি করছেন, তেমনই পর্যটনের জন্যও এগিয়ে আসুন, এর সূত্রপাতও করুন। কচ্ছ-এর ভাই ও বোনেদের প্রতি আমার সনির্বন্ধ অনুরোধ, বিশেষ করে আমার লেওয়া প্যাটেল সমাজের ভাই ও বোনেরা এখানে বসে আছেন, তাঁরা সারা ভারতে ছড়িয়েও রয়েছেন, এমনকি বিশ্বের সর্বত্র তাঁদের দেখা যায়, আমি চাই যে প্রত্যেক বছর আপনারা এখানে আসুন। আপনারা হিসাব রাখবেন, আর আমার গোপাল ভাই তো এই হিসাবনিকাশ রাখারই মানুষ। আপনারা কেমন হিসাব রাখবেন, সেটাও উনি সুনিশ্চিত করতে পারবেন। সেজন্য আপনাদের সকলের প্রতি আমার সনির্বন্ধ অনুরোধ, বিশেষ করে ভিন রাজ্যে বা বিদেশে বসবাসকারী প্রত্যেক কচ্ছী পরিবারের কাছে আমার অনুরোধ, আপনারা প্রতি বছর কমপক্ষে পাঁচজন বিদেশি নাগরিককে আমাদের কচ্ছ-এর রান দেখতে আসার জন্য উৎসাহ যোগান, তাঁদেরকে এখানে পাঠান। আপনারা আমাকে বলুন, তাঁরা যদি আসেন তাহলে আমাদের কচ্ছ-এর রান আরও জাঁকজমকপূর্ণ হয়ে উঠবে। সারা পৃথিবীতে প্রকৃত অর্থে কচ্ছ-এর প্রকৃত পরিচয় তৈরি হবে। এটা অনেক কঠিন কাজ নয়, বিশেষ করে আপনাদের মানুষদের জন্য যাঁরা বিদেশে বসে হাঁচি পেলে প্লেনে করে ভুজ-এ চলে আসেন হাঁচার জন্য। বিদেশে অসুস্থ হলে আপনারা পরস্পরকে বলেন যে কিছুদিন কচ্ছ-এর ভুজ-এ গিয়ে থাকলে, সপ্তাহখানেক জল-হাওয়া পরিবর্তন করলে স্বাস্থ্য ঠিক হয়ে যাবে আর আপনারা চলে আসেন। আসলে এটা আপনাদের কচ্ছ-এর প্রতি ভালোবাসা। আর যখন এই ভালোবাসা আছে তখন প্রতি বছর কম করে পাঁচটি বিদেশি পরিবারকে ভারতে পাঠান। ভারতীয় হলে চলবে না। বিদেশিদের কচ্ছ-এর রান-এ নিয়ে আসুন। এ বছরেই আগামী ডিসেম্বর মাসেই তাঁদেরকে পাঠান আর স্বাধীনতার এত দশক পর আমরা গুজরাটের সুসন্তান সর্দার প্যাটেল সাহেবকে এত বড় শ্রদ্ধাঞ্জলি দিয়েছি, সর্দার সাহেবের যে এত বিশাল স্মারক তৈরি হয়েছে তার জন্য নিশ্চয়ই আপনাদের গর্বের সীমা নেই। আপনারা তো আমার প্রশংসা খুব করছেন, সাবাসী দিচ্ছেন, বা বা মোদী সাহেব! আপনি তো খুব ভালো কাজ করেছেন। আপনারা গুজরাট সরকারকে অভিনন্দন দিচ্ছেন যে খুব ভালো কাজ করেছে। কিন্তু এই প্রশংসায় চিড়ে ভিজবে না। আমার অনুরোধ আপনাদের রাখতেই হবে।
ভাই ও বোনেরা,
আমার ইচ্ছা, সারা পৃথিবী থেকে কচ্ছ-এর রান-এ যেমন আপনারা পাঁচটি পরিবার পাঠাবেন, তেমনই পাঁচটি পরিবার আপনারা স্ট্যাচু অফ ইউনিটি-তেও পাঠাবেন। আপনারা দেখবেন, গুজরাটের পর্যটন অনেক বিকশিত হবে আর পর্যটন এমন একটা ব্যবসা যা গরীব মানুষকে রোজগার দেয়। ন্যূনতম পুঁজি বিনিয়োগে অধিকতম লাভের ব্যবস্থা করে। আপনারা হয়তো দেখে থাকবেন, কচ্ছ-এর রানোৎসবে অনেকে ছোট ছোট জিনিস তৈরি করে বিক্রি করেন। এতে তাঁদের যা লাভ হয়, তা দিয়েই তাঁদের বাকি বছর চলে যায়। অর্থাৎ, দুই মাসের পরিশ্রমে ১২ মাস সংসার চলে যায়। পর্যটকরা এলে রিকশাওয়ালার রোজগার হয়, ট্যাক্সিওয়ালার রোজগার হয়, চাওয়ালার রোজগার হয়। সেজন্য আপনাদের সকলের প্রতি আমার সনির্বন্ধ অনুরোধ, আপনারা আমাদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন, আমরা কচ্ছ-কে একটি বিশাল পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে চাই, আর সেজন্য আমার প্রত্যাশা, বিদেশে বসবাসকারী আমার কচ্ছী ভাই ও বোনেরা এবার দৃঢ় সঙ্কল্প নিন যে প্রত্যেক পরিবার, প্রত্যেক বছর পাঁচটি বিদেশি পরিবারকে ঠিকভাবে বোঝাবেন আর ভারতে পাঠানোর জন্য উৎসাহিত করবেন। তাঁদেরকে সঠিকভাবে পথ নির্দেশ দেবেন। কিভাবে আসতে হবে, কোথায় থাকবেন, আমাদের এখানে আতিথেয়তা কিরকম হয়, সব বিস্তারিত বলবেন। চলুন, করে দেখি! আমি আপনাদেরকে ১০০ শতাংশ গ্যারান্টি দিচ্ছি যে এখন ভারতের জন্য সারা পৃথিবীতে আকর্ষণ তৈরি হয়েছে, আগামী দিনগুলিতে ভারতের নানা প্রান্ত আন্তর্জাতিক পর্যটকদের গন্তব্য হয়ে উঠতে চলেছে। এখানে করোনা মহামারী শুরু হওয়ার আগে অনেক পর্যটক আসা শুরু করেছিলেন। কিন্তু করোনা বিশ্বব্যাপী মহামারীর কারণে সব বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। গত ৫-৬ মাসে আবার শুরু হয়েছে। আপনারা সাহায্য করলে পৃথিবীর সমস্ত মহাদেশ থেকে পর্যটক আসতে শুরু করবেন। তাঁরা ফিরে গিয়ে আপনাদের জয়জয়কার করবেন। আমার ইচ্ছা যে আপনারা অবশ্যই এ কাজ করুন।
কচ্ছ-এর ভাই ও বোনেদের প্রতি আমার আরও একটি প্রত্যাশা, আরও একটি অনুরোধ আমি রাখব। এখন দেখুন, আমাদের মালধারী ভাইরা কচ্ছ-এ দুই থেকে চার মাস থাকেন, তারপর ছয় থেকে আট মাস তাঁরা পশুধন নিয়ে সড়কপথে বেরিয়ে পড়েন। মাইলের পর মাইল পায়ে হেঁটে চলতে থাকেন। আমাদের কচ্ছ-এর সাধারণ মানুষের এই কষ্ট আমরা আর কত দেখব? এটা কি কচ্ছ-এর শোভা বাড়াচ্ছে? যে সময়ে আপনাদের কচ্ছ ছেড়ে বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় যেতে হয়েছিল, তখনকার কথা ভাবুন। কেন যেতে হয়েছিল? জলের অভাবে তখন আপনাদের কচ্ছ-এ থাকা কঠিন হয়ে উঠেছিল। সন্তান-সন্ততি নিয়ে সংসার করা দুষ্কর হয়ে উঠেছিল। এহেন পরিস্থিতিতেই কোনও না কোনও এক বছরে আপনারা কচ্ছ ছেড়ে, এই রাজ্য ছেড়ে দেশের নানা প্রান্তে বা বিশ্বের নানা প্রান্তে গিয়ে পরিশ্রম করে নিজেদের অন্ন সংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন। কিন্তু আপনারা কারোর সামনে ভিক্ষার হাত বাড়াননি। আপনারা পরিশ্রমের মাধ্যমেই নিজেদের পায়ের ওপর নিজেরা দাঁড়িয়েছেন। যেখানেই গেছেন নিজেদের এবং সমাজের ভালো করেছেন। আজ আপনারা কেউ স্কুল চালাচ্ছেন, কেউ গোশালা চালাচ্ছেন। যেখানেই গেছেন কচ্ছী মাণ্ডুরা কোনও না কোনও ধরনের কাজই করেছেন। এই সামর্থ্য আপনাদের আছে বলেই, এত কাজ আপনারা করতে পারেন বলেই, আপনাদের প্রতি আমার এই অনুরোধ। বিশেষ করে, আমার মালধারী ভাইদের প্রতি অনুরোধ। আগেকার সময়ে আপনাদের বাধ্য হয়ে পশুধন নিয়ে ভিন রাজ্যে পাড়ি দিতে হত। কিন্তু এখন তো কচ্ছ-এ জল এসে গেছে। এখন তো কচ্ছ সবুজ হয়ে উঠেছে, সুজলা-সুফলা হয়ে উঠেছে।
এখন কচ্ছ-এ জিরার ফসল হয়। শুনলেও আনন্দ লাগে! কচ্ছ-এ জিরার ফসল হয়! এখন কচ্ছ-এর আম বিদেশে রপ্তানি হয়। শুনলে কত আনন্দ হয়। আমাদের কচ্ছ-এর কমলম-এর পরিচয়ও এখন বিশ্ববাসী জানতে পারছেন। আমাদের খেজুরের স্বাদই বা কোন দিক থেকে কম! তারপরেও যদি আমার কচ্ছ-এর মালধারী ভাইদের ‘হিজরত’ করতে হয়, পদব্রজে পশুধন নিয়ে ভিন রাজ্যে যেতে হয়, এটা মেনে নিতে পারছি না। এসব করলে আর চলবে না! বাইরে গেলে আপনারা যে মানের ঘাস পাবেন, পশুধনদের জন্য যে খাবার পাবেন, তা এখন কচ্ছ-এও পাওয়া যাচ্ছে। এখন আপনাদের কচ্ছ-এই স্থায়ী হতে হবে। এখন তো কচ্ছ-এ ডেয়ারি ফার্মও গড়ে উঠেছে আর আপনাদের জন্য ‘পাঁচো উঙলিয়া ঘি মে’ বা সম্পন্ন হয়ে ওঠার সুযোগ এসেছে। সেজন্য আমার মালধারী ভাইদের প্রতি অনুরোধ, আর আপনারা যাঁরা রয়েছেন, তাঁরাও মালধারী ভাইদের বোঝান যে, আর পশুধন নিয়ে ভিন রাজ্যে যাওয়া চলবে না। তাঁরা এখানেই থাকতে শুরু করুন, এখানে কোনও সমস্যা নেই। আপনারা এখানে স্থায়ীভাবে থাকুন, ছেলে-মেয়েদের স্কুলে ভর্তি করুন কারণ, যাঁরা ‘হিজরত’ করেন, সেই যাযাবর পশুপালকদের ছেলে-মেয়েরা পড়াশোনার সুযোগ পায় না। এই বিষয়টা আমাকে অনেক কষ্ট দেয়। এক্ষেত্রে আমি আপনাদের সাহায্য চাইছি।
আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ আপনারা করুন। আমার প্রত্যাশা যে আমরা যেন স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসবে দেশের প্রত্যেক জেলায় ৭৫টি করে পুকুর খনন করি। আমাদের কচ্ছ-এ ২-৩ বছরে পুকুর ভরে উঠবে - এতটা জল এখন আসে। অনেকবার এরকম হয় যে পাঁচ বছর বৃষ্টি হয় না। অনেক শিশুকে আমি দেখেছি, জন্ম হওয়ার পর থেকে চার বছর বয়স হয়ে গেছে, কিন্তু সে কখনও বৃষ্টি দেখেনি। আমাদের কচ্ছ-এর জনগণ এরকম দিন দেখেছেন। সেজন্যই আপনাদের সকলের প্রতি আমার সনির্বন্ধ অনুরোধ যে আমাদের কচ্ছ-এও কী আমরা ৭৫টি সুন্দর পুকুর খনন করতে পারি? সেজন্য ভারতের সর্বত্র যত কচ্ছী ভাই ও বোনেরা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছেন বিশেষ করে, মুম্বাইয়ে তো আপনারা অনেকেই থাকেন, কেরলে থাকেন, আসামে অনেকে থাকেন, ভারতের যে কোনও প্রান্তেই এখান আপনাদের দেখা যায়। ভারতের অর্ধেকেরও বেশি জেলায় কচ্ছী ভাইদের সামাজিক গুরুত্ব রয়েছে। আপনারা চাইলে সবাই মিলে কচ্ছ-এ ৭৫টি পুকুর তৈরি করতেই পারেন। মনে করুন, ছত্তিশগড়ে যে কচ্ছী সমাজ রয়েছে, তাঁরা একটি পুকুর খনন করলেন। মুম্বাইয়ে যে কচ্ছী সমাজ রয়েছে তাঁরা যেহেতু সংখ্যায় বেশি, তাঁরা পাঁচটি পুকুর খনন করলেন, সেগুলির রক্ষণাবেক্ষণ করলেন। আর আপনারা যখন কাজটা করবেন, তখন ওই পুকুরের আকার যেন ছোট না হয়। আমাদের নীমাবেনের ৫০টি ট্রাক সেই পুকুরে ঢুকে পড়লে যেন ওপর থেকে দেখা না যায়, এতটা গভীর হওয়া উচিৎ। আপনারা দেখবেন, জল সংরক্ষিত হবে, হয়তো দু’বছর তিন বছর লেগে যাবে, হয়তো তিন বছরে ২ ইঞ্চি করে জল জমবে, কিন্তু যখন এই পুকুরগুলি ভরে যাবে তখন কচ্ছ-এর শক্তি অনেক বৃদ্ধি পাবে। কচ্ছ-এর জন্য আমি যা করেছি তার থেকে অনেক বেশি আমার কথা শুনে কচ্ছ-এর ভাই ও বোনেরাই করেছেন আর যখন আমরা বেশি করে কাজ করি তখন আমাদের মনে আরও বেশি কাজ করার ইচ্ছা জাগে। আপনারা কিছু করলেই আমি যদি নমস্তে বলে বেরিয়ে যেতাম, তাহলে এত কিছু সম্ভব হত না। আপনারা কিছু করেন বলেই এত কিছু অনুরোধ করার ইচ্ছা জাগে। সেজন্য আপনাদের সকলের প্রতি আমার অনুরোধ যে আমাদের কচ্ছ-এর সকলের মনে কর্তব্যভাব জাগিয়ে তুলতে পারলে কচ্ছ তার উচ্চতায় নতুন নতুন মাত্রা যোগ করতে পারবে আর পর্যটন থেকে শুরু করে জল সংগ্রহ, জল সংরক্ষণ – উভয় ক্ষেত্রেই বিশ্ববাসীর প্রশংসা পাবে। কচ্ছ-এ বসবাসকারী সাধারণ মানুষ হোন কিংবা ভারতের যে কোনও প্রান্তে বসবাসকারী কচ্ছী ভাই ও বোনেদের প্রতি আমার আহ্বান আসুন, আমরা সবাই মিলে ভূপেন্দ্র ভাইয়ের নেতৃত্বে গুজরাট যে দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে তাকে সমর্থন জানাই আর আমরাও নিজেদের কর্তব্য পালনের মাধ্যমে সেই কর্মযজ্ঞে অংশগ্রহণ করি।
এগুলিই আমার প্রত্যাশা। সবাইকে জয় স্বামী নারায়ণ! সকলকে আমার অনেক অনেক শুভকামনা। ধন্যবাদ।