আমি আপনাদের সঙ্গে কথা বলতে পেরে খুবই আনন্দিত। যদিও আমি সবার সঙ্গে কথা বলতে পারিনি,তবুও আজ সমগ্র দেশের মানুষ আপনাদের আবেগ এবং উৎসাহ অনুধাবন করতে পারছে। এই আলাপচারিতা কর্মসূচিতে আমার সঙ্গে উপস্থিত রয়েছেন দেশের ক্রীড়ামন্ত্রী শ্রী অনুরাগ ঠাকুর। ঠিক একইভাবে আমাদের বর্তমান আইনমন্ত্রী শ্রী কিরেন রিজিজু’জী, যিনি কিছুদিন আগে পর্যন্ত ক্রীড়ামন্ত্রী হিসেবে আপনাদের জন্য অনেক কাজ করেছেন। কনিষ্ঠতম ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী শ্রী নিতীশ প্রামাণিক’জী আমাদের সঙ্গে রয়েছেন। সমস্ত ক্রীড়া সংস্থার প্রধান, তাঁদের সদস্য এবং টোকিও অলিম্পিকে অংশ নিতে চলেছেন আমার সহকর্মী ও খেলোয়াড়ের পরিবারের সদস্যদ- তাঁদের সকলের সঙ্গে আজ এক ভার্চুয়াল মাধ্যমে আমার কথোপকথন হয়েছে। তবে আমি আপনাদের সকলকে আমার দিল্লীর বাড়িতে আমন্ত্রণ জানাতে পারলে আরও ভালো লাগত এবং আমি আপনাদের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে দেখা করতে পারতাম। এর আগেও আমি এই ধরণের কাজ করেছি। আমার কাছে এই ধরণের অনুষ্ঠান খুবই আনন্দদায়ক। তবে এবার করোনার কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না। তদুপরি অর্ধেকের বেশি খেলোয়াড় ইতিমধ্যেই বিদেশে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। কিন্তু আপনাদের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি যে, আপনারা ফিরে এলে আমি অবশ্যই দেখা করবো। করোনা পরিস্থিতির অনেক কিছুর পরিবর্তন ঘটিয়েছে। অলিম্পিকের বছরও বদলেছে, যেভাবে আপনারা প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, তারও বদল ঘটিয়েছে। অলিম্পিক শুরু হতে এখন আর মাত্র ১০ দিন বাকি রয়েছে। আপনারা টোকিওতে এক ভিন্ন ধরণের পরিবেশ দেখতে চলেছেন।
বন্ধুগণ,
আজ আপনাদের সঙ্গে কথোপকথনের সময় দেশবাসী জানতে পেরেছে যে আপনারা এই কঠিন সময়ে দেশের জন্য কতটা পরিশ্রম করেছেন এবং কিভাবে ঘাম ঝরিয়েছেন। আমি আপনাদের কয়েকজন সহকর্মীর এই কঠোর পরিশ্রমের কথা ‘মন কি বাত’এর শেষ পর্বে আলোচনা করেছি। আপনাদের মনোবল বাড়াতে দেশবাসীর কাছে খেলোয়াড়দের উৎসাহ যোগানোর আহ্বান জানিয়েছি। আজ দেশবাসী আপনাদেরকে উৎসাহিত করছে, তা দেখে আমি খুব খুশি। সম্প্রতি ‘চিয়ার ফর ইন্ডিয়া’ হ্যাশট্যাগের সঙ্গে আমি অনেকগুলি ছবি দেখেছি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ আপনাদের সমর্থন জুগিয়েছে। ১৩৫ কোটি ভারতবাসীর এই শুভেচ্ছাই আপনাদের কাছে ক্রীড়াঙ্গনে প্রবেশের আগে দেশবাসীর আর্শীবাদ স্বরূপ। আমার পক্ষ থেকেও আপনাদের সবাইকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। নমো অ্যাপে একটি বিশেষ সুবিধা রয়েছে, সেখানে আপনারা সকলে দেশবাসীর কাছ থেকে শুভেচ্ছা পেতে থাকবেন। সাধারণ মানুষ আপনাদের উৎসাহিত করছে, নমো অ্যাপের মাধ্যমে আপনাদের বার্তা পাঠাচ্ছে।
বন্ধুগণ,
আপনাদের সঙ্গে সমগ্র দেশের আবেগ জড়িয়ে রয়েছে। আমি যখন আপনাদের সবাইকে একসঙ্গে দেখছি তখন সাহস, আত্মবিশ্বাস এবং ইতিবাচক দিক দেখতে পাচ্ছি। আমি আপনাদের মধ্যে একটি সাধারণ বিষয় দেখতে পাচ্ছি, তা হল শৃঙ্খলাপরায়ণ, আত্মোৎসর্গ এবং সংকল্পপরায়ণ । আপনারা প্রতিযোগিতার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এই গুণগুলিই হল নতুন ভারতের বৈশিষ্ট্য। এই কারণেই আপনারা সবাই নতুন ভারতের প্রতিচ্ছবি এবং দেশের ভবিষ্যতের প্রতীক। আপনারা কেউ কেউ দক্ষিণ, উত্তর, পূর্ব এবং উত্তরপূর্ব রাজ্য থেকে এসেছেন। কেউবা গ্রামের মাঠ থেকে খেলা শুরু করেছেন, আবার অনেক বন্ধু শৈশব থেকেই কোনো না কোনো ক্রীড়া প্রশিক্ষণ সংস্থার সাথে যুক্ত। তবে এখন আপনারা সবাই ‘টিম ইন্ডিয়া’র অঙ্গ। আপনারা সবাই দেশের হয়ে খেলতে যাচ্ছেন। এই বৈচিত্র্যই, ‘টিম স্পিরিট’ হল ‘এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারত’ এর পরিচয়।
বন্ধুগণ,
আপনারা প্রত্যেকেই প্রত্যক্ষদর্শী যে, দেশ কিভাবে তার প্রতিটি খেলোয়াড়ের সঙ্গে এক নতুন চিন্তাভাবনা এবং নতুন পদ্ধতির মাধ্যমে পাশে দাঁড়িয়েছে। আজ আপনার অনুপ্রেরণা দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনাদের সর্বাধিক অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে, যাতে আপনারা নির্দ্বিধায় খেলাধুলা করতে, ক্রীড়া ক্ষেত্রে মানোন্নয়ন ঘটাতে এবং কৌশলে বিকাশ সাধন করতে পারেন। আপনাদের মনে থাকতে পারে যে, অলিম্পিকের জন্য অনেক আগেই একটি উচ্চস্তরীয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। 'লক্ষ্য অলিম্পিক মঞ্চ প্রকল্প', এর আওতায় সমস্ত খেলোয়াড়দের জন্য সম্ভাব্য সবরকম সহায়তা বৃদ্ধি করা হয়েছে। এর মাধ্যমে আপনারা এক অভিজ্ঞতাও অর্জন করেছেন। আপনারা আগের তুলনায় নতুন পরিবর্তনগুলি অনুভব করতে পারছেন।
আমার বন্ধুগণ,
দেশের জন্য আপনারা ঘাম ঝরাবেন, দেশের হয়ে পতাকা বহন করবেন; অথএব আপনাদের পাশে দৃঢ়ভাবে দাঁড়ানো দেশের দায়িত্ব। আমরা খেলোয়াড়দের আরও ভালো প্রশিক্ষণ শিবির এবং আরও ভালো সরঞ্জাম সরবরাহের চেষ্টা করছি। আজ খেলোয়াড়দের আরও বেশিকরে আন্তর্জাতিক স্তরের প্রচারের আলোয় নিয়ে আসা হয়েছে। ক্রীড়া সংস্থাগুলি আপনাদের পরামর্শগুলিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে এবং এতো অল্প সময়ের মধ্যে এই পরিবর্তন নিয়ে এসেছে।
বন্ধুগণ,
খেলার মাঠে কঠোর পরিশ্রমের সঙ্গে সঠিক কৌশল যেমন জয় সুনিশ্চিত করে তেমনই একটি জিনিস মাঠের বাইরেও প্রযোজ্য।দেশ মিশন মোডে ‘খেলো ইন্ডিয়া’ এবং ‘ফিট ইন্ডিয়া’র মতো প্রচার চালিয়ে সঠিক কৌশল গ্রহণ করে কাজ করে চলেছে বলে আজ আপনারা এই ফলাফল দেখতে পাচ্ছেন। এই প্রথমবার এতো বেশি সংখ্যক খেলোয়াড় অলিম্পিকের জন্য যোগ্যতা অর্জন করেছেন। এমনকি এই প্রথমবার ভারত থেকে এতো বেশি সংখ্যক খেলোয়াড় এতোগুলি প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছেন। এমন অনেক প্রতিযোগিতা রয়েছে, যেখানে ভারত এই প্রথম যোগ্যতা অর্জন করেছে।
বন্ধুগণ,
আমাদের দেশকে বলা হয়- 'অভ্যাসত্ জয়তে নৃণাম্' অর্থাৎ যেমন আমরা অনুশীলন করবো, চেষ্টা করবো ধীরে ধীরে তা আমাদের অভ্যাসের অঙ্গ হয়ে উঠবে। আপনারা সবাই জয়ের জন্য এতোদিন অনুশীলন করে এসেছেন। আপনার এবং আপনাদের শক্তির দিকে তাকালে সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। আপনাদের উৎসাহ এবং দেশের যুব সমাজকে দেখে আমি বলতে পারি যে, সেই দিন খুব বেশি দূরে নয়, যখন জয়লাভ করা নতুন ভারতের অভ্যাসে পরিণত হবে। এটি শুরু হতে চলেছে। আপনারা যখন টোকিও গিয়ে দেশের পতাকা উত্তোলন করবেন তখন সমগ্র বিশ্ব তা দেখতে পাবে। তবে আপনাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, জয়ের জন্য খেলতে হবে বলে আপনাদের কখনোই কোনো চাপের মধ্যে থাকতে হবে না। আপনাদের হৃদয় এবং মনকে কেবল একটি জিনিসই বলুন- আমাকে আমার সেরাটা দিতে হবে। আমি আবারও দেশবাসীকে ‘চিয়ার ফর ইন্ডিয়া’র জন্য আহ্বান জানাবো। আমার দৃঢ় বিশ্বাস আছে যে, আপনারা সবাই দেশের হয়ে খেলবেন ও দেশের গৌরব বৃদ্ধি করবেন এবং দেশকে এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দেবেন। এই দৃঢ় প্রত্যয়ের সঙ্গে আমি আপনাদেরকে অনেক ধন্যবাদ জানাচ্ছি! আপনাদের পরিবারের সদস্যদের জন্যও আমার বিশেষ শুভেচ্ছা রইলো! অনেক ধন্যবাদ।