नअनैवरुक्कुम् वणक्कम्
ওঁ নমঃ শিবায়! শিবায় নমঃ!
হর হর মহাদেব!
প্রথমে আমি নতমস্তকে শ্রদ্ধেয় সাধুজনদের অভিনন্দন জানাই। আপনাদের মতো সাধুসন্তরা বিভিন্ন ‘অধীনাম’-এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। আমি আজ আমার বাসভবনে আপনাদের সকলের সাক্ষাৎ পাওয়ায় নিজেকে খুবই ভাগ্যবান বলে মনে করছি। ভগবান শিবের অশেষ কৃপায় শিব সাধকদের সকলকে একত্রে দেখার এই সুযোগ আমার হয়েছে। আমি খুবই আনন্দিত যে আপনারা সকলেই আগামীকাল নতুন সংসদ ভবনের উদ্বোধনকালে সেখানে উপস্থিত থেকে আমাকে ব্যক্তিগতভাবে আপনাদের আশীর্বাদধন্য করে তুলবেন।
শ্রদ্ধেয় সাধুজন,
আমরা সকলেই জানি যে দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে তামিলনাড়ু এক বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে। বীরমাঙ্গাই ভেলু নাচিয়ার থেকে শুরু করে মারাথু ভাইয়েরা, সুব্রহ্মনিয়া ভারতী, এবং বহু তামিল মানুষ নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বোসের সহযোগী হয়েছিলেন। এইভাবেই তামিলনাড়ু বিভিন্ন যুগ ও সময়ে ভারতীয় জাতীয়তাবাদের এক বিশেষ পীঠস্থান হয়ে উঠেছিল। ভারতমাতা তথা ভারত কল্যাণের স্বার্থে তামিল জনসাধারণের সেবা ও উৎসর্গের মানসিকতার পরিচয় আমরা পেয়েছি। তাসত্ত্বেও খুবই দুর্ভাগ্যের বিষয় যে ভারতের স্বাধীনতা অর্জনের পথে তামিল জনগণের অবদানকে যথাযোগ্য গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। কিন্তু বিজেপি বর্তমানে এই বিষয়টি নিয়ে বিশেষভাবে তৎপর হয়েছে। দেশবাসী এখন উপলব্ধি করছেন যে তামিলনাড়ুর প্রতি কি ধরনের আচরণ করা হয়েছে। তামিল ঐতিহ্য ও দেশপ্রেমের এক বিশেষ দৃষ্টান্ত হল তামিলনাড়ু রাজ্যটি।
স্বাধীনতা অর্জনের সময় ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রতীকটি নিয়েও বহু প্রশ্ন উঠেছিল। আমাদের দেশ হল বহু ঐতিহ্যের দেশ। এখানে প্রথা ও রীতিনীতিও ভিন্ন ভিন্ন। সেই সময় রাজাজি এবং অধীনাম-এর সুযোগ্য নেতৃত্বে তামিল সংস্কৃতি থেকে আমরা একটি ধর্মীয় পথকে বেছে নিতে পেরেছিলাম। ‘সেঙ্গল’-এর মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তরের পথ ছিল এটি। তামিল ঐতিহ্য অনুসারে ‘সেঙ্গল’ তুলে দেওয়া হয় শাসকের হাতে। এর প্রতীকী ব্যাঞ্জনাটি হল এই যে, যিনি সেই ‘সেঙ্গল’ ধারণ করবেন, দেশের সার্বিক কল্যাণের সার্বিক দায়িত্বও বর্তাবে তাঁর ওপর এবং তিনি কোনভাবেই তাঁর কর্তব্যের পথ থেকে বিচ্যুত হতে পারবেন না। ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রতীক হিসেবে ১৯৪৭ সালে থিরু ভাদুথুরাই অধীনাম এক বিশেষ ‘সেঙ্গল’ তৈরি করেছিলেন। আজ সেই যুগের আলোকচিত্র থেকে আমরা স্মরণ করতে পারি তামিল সংস্কৃতি এবং ভারতের অদৃষ্টের মধ্যে আবেগময় এক যোগসূত্রের কথা যা জন্ম দিয়েছে আধুনিক গণতন্ত্রের। ইতিহাসের লুকিয়ে থাকা সেই অধ্যায় থেকে আজ আমরা আবার জানতে পেরেছি সেই গভীর যোগসূত্রের মহিমাকে। শুধু তাই নয়, সেই সময়কার ঘটনাবলী সম্পর্কে জানার ও বোঝার এক সঠিক প্রেক্ষিতও তৈরি হয়েছে এর মাধ্যমে। ক্ষমতা হস্তান্তরের এই বিশেষ প্রতীকটির সঙ্গে একদা কোন ঘটনা জড়িয়ে ছিল, তাও আজ আমাদের কাছে আর অজানা নেই।
প্রিয় দেশবাসী,
রাজাজি এবং অন্যান্য অধীনামদের প্রজ্ঞা ও দৃষ্টিভঙ্গিকেও আজ আমি বিশেষভাবে শ্রদ্ধা জানাই। অধীনাম-এর একটি ‘সেঙ্গল’ ভারতকে শত শত বছরের দাসত্ব শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করেছিল। দেশের স্বাধীনতার সেই সূচনা মুহূর্তেই ‘সেঙ্গল’ প্রাক্-ঔপনিবেশিক যুগ তথা স্বাধীন ভারতের সূচনা পর্বের মধ্যে সংযোগের একটি চিত্র খুব সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছিল। এই পবিত্র ‘সেঙ্গল’টি ১৯৪৭ সালে ক্ষমতা হস্তান্তরের একটি প্রতীকমাত্র ছিল না, একইসঙ্গে তা প্রাক্-ঔপনিবেশিককালের গৌরবময় ভারতের সঙ্গে স্বাধীন ভারতের ভবিষ্যতকে যুক্ত করার একটি সঙ্কেতও দিয়েছিল। স্বাধীনতা পরবর্তীকালে এই পবিত্র ‘সেঙ্গল’টিকে যদি যথাযোগ্য শ্রদ্ধা ও গর্বের চোখে দেখা হত তাহলে বোধহয় পরিস্থিতি আরও অনেক ভালো হয়ে উঠত। কিন্তু, এটি শুধুমাত্র একটি প্রদর্শ সামগ্রী হিসেবে রক্ষিত ছিল প্রয়াগরাজ-এর আনন্দভবনে। এটিকে একটি পথ চলার ছড়ি হিসেবে দেখা হত। আপনাদের এই বর্তমান সেবক তথা দেশের সরকার সেই ‘সেঙ্গল’টিকে আজ আনন্দভবন থেকে মুক্ত করে নিয়ে আসতে পেরেছে। নতুন সংসদ ভবনে তা স্থাপন করে স্বাধীনতার সেই সূচনা মুহূর্তটিকে আরও একবার অনুভব ও উপলব্ধি করার সুযোগ আমরা পেয়েছি। গণতন্ত্রের এই উপাসনালয়ে ‘সেঙ্গল’টি তার যথাযোগ্য স্থানে আজ স্থাপিত হচ্ছে। ভারতের মহান ঐতিহ্যের এক বিশেষ প্রতীক এই ‘সেঙ্গল’টি নতুন সংসদ ভবনে স্থাপনা করা হবে জেনে আমি আনন্দিত। এটি আমাদের কর্তব্যের পথে অবিচল তথা দেশবাসীর কাছে দায়বদ্ধ থাকার কথাই স্মরণ করিয়ে দেবে।
শ্রদ্ধেয় সাধুজন,
অধীনাম-এর অনুপ্রেরণাদায়ী যে মহান ঐতিহ্য রয়েছে তা প্রকৃত সাত্ত্বিক শক্তির পরিচয় বহন করে। আপনারা সকলেই শৈব ঐতিহ্যের অনুগামী। আপনাদের দার্শনিকতায় ‘এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারত’-এর শক্তি হল ভারতের নিজস্ব ঐক্য ও সংহতির এক বিশেষ প্রতিফলন। আপনাদের অধীনাম-এর অনেক নামের মধ্যে প্রতিফলিত হয়েছে এই বিশেষ শক্তিটি। অধীনাম-এর কয়েকটিকে ‘কৈলাশ’ বলে বর্ণনা করা হয়। এই পবিত্র পর্বতটি তামিলনাড়ু থেকে বহু দূরে সুউচ্চ হিমালয়ে অবস্থিত। কিন্তু তাসত্ত্বেও তা আপনাদের হৃদয় স্পর্শ করে যায়। শিবসাধনার আরও এক প্রতীক তিরুমুলার কৈলাশ পর্বতশৃঙ্গ থেকে তামিলনাড়ুতে এসেছিলেন শিবসাধনার প্রচারে - এই ধরনের একটি কথাও প্রচলিত রয়েছে। এমনকি আজও তাঁর রচনা থেকে স্তোত্র উচ্চারিত হয় ভগবান শিব-এর উদ্দেশে। আপ্পার, সামবান্দার, সুন্দরার এবং মাণিক্যভাসগড়-এর মতো বহু সাধক উজ্জয়িনী, কেদারনাথ এবং গৌরীকুণ্ডের কথা উল্লেখ করেছেন। জনসাধারণের আশীর্বাদ মাথায় নিয়ে স্বয়ং মহাদেবের বাসভূমি কাশীর আমি একজন বর্তমান সাংসদ। এই সুযোগে আমি তাই কাশী সম্পর্কেও কয়েকটি কথা আপনাদের সামনে তুলে ধরতে চাই। ধর্মপুরাণ অধীনাম-এর স্বামী কুমারগুরুপারা তামিলনাড়ু থেকে কাশী যাত্রা করেছিলেন। তিনি বেনারসের কেদারঘাটে কেদারেশ্বর মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। তামিলনাড়ুর থিরুপ্পানন্দল-এ অবস্থিত কাশী মঠ এই কাশীর নাম অনুসারেই গড়ে উঠেছে। এই মঠ সম্পর্কে একটি খুব ভালো তথ্য আমার কাছে রয়েছে। সাধারণের বিশ্বাস যে থিরুপ্পানন্দল-এর এই কাশী মঠটি থেকে তীর্থযাত্রীদের ব্যাঙ্কিং পরিষেবা দেওয়া হত। তামিলনাড়ুর এই কাশী মঠে অর্থ গচ্ছিত রেখে একজন তীর্থযাত্রী তাঁর শংসাপত্র দেখিয়ে কাশীতে সেই অর্থ আবার তুলে নিতে পারতেন। এইভাবেই শিবসাধনার অনুগামীরা শুধু শিব-এর মহিমারই প্রচার করেননি, তাঁরা আমাদের পরস্পরকে আরও কাছে নিয়ে আসতে পেরেছিলেন।
শ্রদ্ধেয় সাধুজন,
অধীনাম-এর মতো মহান এবং ঐশ্বরিক ঐতিহ্য শত শত বছরের দাসত্বের পরও তামিলনাড়ুর সংস্কৃতিকে উজ্জ্বল ও সমৃদ্ধ করে তুলতে পেরেছে। সাধুসন্তরা নিশ্চিতভাবেই এই ঐতিহ্যকে আজও অটুট রেখেছেন। তবে একইসঙ্গে এর কৃতিত্ব সেই সমস্ত শোষিত ও বঞ্চিত মানুষদেরও প্রাপ্য যাঁরা এই ঐতিহ্যকে এতদিন ধরে বহন করে এসেছেন। জাতির প্রতি অবদানের স্বাক্ষর রেখে আপনাদের সবক’টি প্রতিষ্ঠানেরই একটি গৌরবময় ইতিহাস রচিত হয়েছে। সেই ইতিহাসকে আরও সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় এখন উপস্থিত।
শ্রদ্ধেয় সাধুজন,
আগামী ২৫ বছরের জন্য দেশ কয়েকটি লক্ষ্য নির্দিষ্ট করে দিয়েছে। আমাদের লক্ষ্য হল, এক শক্তিশালী, স্বনির্ভর এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নত ভারত গঠন করা। স্বাধীনতার শতবর্ষ পূর্তির মধ্যেই এই কাজ আমাদের সম্পূর্ণ করতে হবে। ১৯৪৭ সালে যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আপনারা পালন করেছিলেন, কোটি কোটি দেশবাসী আরও একবার তার সঙ্গে নতুন করে পরিচিত হবেন। ২০৪৭ সালের সেই বিশেষ লক্ষ্যটিকে সামনে রেখে দেশ এখন এগিয়ে চলেছে। এই পরিস্থিতিতে আপনাদের ভূমিকা এখন আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে আমি মনে করি। সেবার মূল্যবোধকে আপনাদের প্রতিষ্ঠানগুলি বরাবরই তুলে ধরেছে। জনসাধারণকে পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত করার ক্ষেত্রেও এক বিশেষ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন আপনারা। শুধু তাই নয়, তাঁদের মধ্যে সমতাবোধের মানসিকতাও আপনারা গড়ে তুলেছেন। যাঁরা আমাদের অগ্রগতির পথে কোনও না কোনভাবে অন্তরায় সৃষ্টির প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে, তাঁদের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে আমাদের। ভারতের অগ্রগতিকে যারা বাধা দিতে চায়, তারা চেষ্টা করবে আমাদের ঐক্যে ভাঙন ধরাবার। কিন্তু আমি নিশ্চিত যে আধ্যাত্মিকতা এবং সমাজসেবার শক্তি ও আদর্শে বলীয়ান হয়ে আমরা প্রতিটি চ্যালেঞ্জেরই উপযুক্ত জবাব দিতে পারব। আমি আরও একবার আমার আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করি আপনাদের সকলের কাছে। সম্মান ও অভিবাদন জানাই আপনাদের। নতুন সংসদ ভবনের উদ্বোধন উপলক্ষে আপনারা এখানে সমবেত হয়ে আমাদের আশীর্বাদ করেছেন। আমরা নিজেদের এজন্য বিশেষ ভাগ্যবান বলেই মনে করি। আরও একবার সম্মান জানাই আপনাদের।
ওঁ নমঃ শিবায়!
ভনক্কম!