অনুষ্ঠানে উপস্থিত আমার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সকল শ্রদ্ধেয় সহযোগীগণ, বায়োটেক বা জৈব প্রযুক্তি ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত সকল বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত ও বিদেশ থেকে আসা অতিথিগণ, বিশেষজ্ঞগণ, বিনিয়োগকারীগণ, সকল এসএমই বা ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগ এবং স্টার্ট-আপ সহ শিল্প জগতের প্রতিনিধিত্বকারী সমস্ত বন্ধুগণ, ভদ্রমহিলা ও ভদ্রমহোদয়গণ!
দেশের প্রথম বায়োটেক স্টার্ট-আপ এক্সপো-র আজ এখানে শুভ উদ্বোধন হল। এই জৈব প্রযুক্তি ভিত্তিক স্টার্ট-আপগুলিকে নিয়ে এই সুন্দর আয়োজনের জন্য, এতে অংশগ্রহণকারীদের আমন্ত্রণের জন্য, আর ভারতের এই জৈব প্রযুক্তি শক্তিকে বিশ্ববাসীর সঙ্গে পরিচিত করানোর জন্যও আমি আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই। এই এক্সপো ভারতের জৈব প্রযুক্তি ক্ষেত্রেরএক্সপোনেন্সিয়াল গ্রোথ বা দ্রুতগতিতে উন্নয়ন কর্মধারার প্রতিবিম্ব। বিগত আট বছরে ভারতের বায়ো-ইকনমি বা জৈব-অর্থনীতি আটগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ১০ লক্ষ কোটি মার্কিন ডলার থেকে বৃদ্ধি পেয়ে আমরা ইতিমধ্যেই ৮০ লক্ষ কোটি মার্কিন ডলারে পৌঁছে গিয়েছি। জৈব প্রযুক্তির ক্ষেত্রে ভারতের গ্লোবাল ইকো-সিস্টেমে বা আন্তর্জাতিক ব্যবস্থায় সর্বোচ্চ সাফল্য অর্জনকারী ১০টি দেশের তালিকায় নাম লেখাতে আর বেশিদিন লাগবে না। নতুন ভারতের এই নতুন উল্লম্ফনে আমাদের বায়োটেকনলজি ইন্ডাস্ট্রি রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট কাউন্সিল বা ‘বিরাক’-এর অনেক বড় ভূমিকা রয়েছে। বিগত বছরগুলিতে ভারতে বায়ো-ইকনমির গবেষণা ও উদ্ভাবন প্রক্রিয়া যে অভূতপূর্ব বিস্তার লাভ করেছে তাতেও এই বিরাক-এর গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। আমি আপনাদের সবাইকে বিরাক-এর ১০ বছরের সফল এবং সুফলদায়ক যাত্রাপথের জন্য এই গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই। এখানে যে প্রদর্শনী শুরু হয়েছে, এতে ভারতের নবীন প্রতিভাদের অসামান্য অবদানের কথা, ভারতের জৈব-প্রযুক্তি নির্ভর স্টার্ট-আপগুলির অংশগ্রহণ, তাদের সামর্থ্য এবং জৈব-প্রযুক্তি ক্ষেত্রের জন্য ভবিষ্যতের রোডম্যাপ খুব ভালোভাবে, অত্যন্ত সুন্দরভাবে এখানে তুলে ধরা হয়েছে। এমন সময়ে এটির আয়োজন হয়েছে যখন ভারত তার স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসব পালন করছে। এমন সময়ে এটির আয়োজন হয়েছে যখন ভারত আগামী ২৫ বছরের জন্য যখন ভারত নতুন লক্ষ্য নির্ধারণ করছে, তখন জৈব-প্রযুক্তি ক্ষেত্র দেশের উন্নয়নে নতুন গতি প্রদান করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এই প্রদর্শনীতে অত্যন্ত সুন্দরভাবে তাদের সামর্থ্য এবং জৈব-প্রযুক্তি ক্ষেত্রের জন্য ভবিষ্যতের রোডম্যাপ শো-কেস করা হয়েছে। জৈব-প্রযুক্তি স্টার্ট-আপগুলি, জৈব-প্রযুক্তি ইনভেস্টররা ও জৈব-প্রযুক্তির ইনকিউবেশন সেন্টারগুলি নতুন ভারতের আশা-আকাঙ্ক্ষা সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে এসেছে। আজ এখানে একটু আগেই যে জৈব-প্রযুক্তি সম্পর্কিত ই-পোর্টালটি উদ্বোধন করা হয়েছে, এতে আমাদের ৭৫০টি জৈব-প্রযুক্তির মাধ্যমে উৎপাদিত পণ্য তালিকাভুক্ত হয়েছে। এটি ভারতের জৈব-অর্থনীতির সামর্থ্য এবং এর বিস্তারের ক্ষেত্রেও আরও বৈচিত্র্য তুলে ধরবে।
বন্ধুগণ,
এই সুন্দর হল-এ দেশের জৈব-প্রযুক্তি কেন্দ্রগুলির সঙ্গে যুক্ত প্রায় প্রত্যেক ক্ষেত্রের মানুষেরা রয়েছেন। আমাদের সঙ্গে এখানে বড় সংখ্যায় জৈব-প্রযুক্তি প্রফেশনালরাও অনলাইনে যুক্ত হয়েছেন। আগামী দু’দিনে আপনারা এই এক্সপো-তে দেশে ও বিশ্বে জৈব-প্রযুক্তি ক্ষেত্রের সামনে উঠে আসা নতুন নতুন সুযোগ এবং সমস্যা নিয়েও আলাপ-আলোচনা করবেন। বিগত দশকগুলিতে আমরা বিশ্বের সর্বত্র নিজেদের চিকিৎসকদের সুনাম বাড়তে দেখেছি, আমাদের দেশের স্বাস্থ্য পেশার সঙ্গে যুক্ত সমস্ত ধরনের কর্মীদের কর্মদক্ষতার সুনাম বৃদ্ধি পেতে দেখেছি। বিশ্বে আমাদের তথ্যপ্রযুক্তি পেশাদারদের দক্ষতা এবং উদ্ভাবন ক্ষমতা নিয়েও যে আস্থার আবহ গড়ে উঠেছে, তা আজ একটি নতুন উচ্চতায় পৌঁছে গেছে। এই বিশ্বাসযোগ্যতা, এই সুনাম এই দশকে ভারতের জৈব-প্রযুক্তি ক্ষেত্রে কর্মরত মানুষদের, ভারতের বায়ো-প্রফেশনালদের জন্য যেমন গর্বের কথা, তেমনই আমাদের সকলের জন্যও অত্যন্ত গর্বের বিষয়। আমি এই কথাগুলি বলছি আপনাদের ওপর আমার গড়ে ওঠা বিশ্বাস থেকে। ভারত এখন তার জৈব-প্রযুক্তি ক্ষেত্রের ক্ষমতার ওপর বিশ্বাস করে। এই বিশ্বাস কেন ও কিভাবে গড়ে উঠেছে? এই বিশ্বাসের কারণও আমি বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করতে চাইব।
বন্ধুগণ,
আজ যদি ভারতকে জৈব-প্রযুক্তি ক্ষেত্রে একটি অপার সম্ভাবনা ও সুযোগের ভূমি বলে মনে করা হয় তার পেছনে অনেক কারণের মধ্যে পাঁচটি বড় কারণকে আমি আমার আজকের বক্তব্যে তুলে ধরছি। প্রথমত, বৈচিত্র্যময় জনসংখ্যার দেশ, বৈচিত্র্যময় ও বিবিধ আবহাওয়ার ক্ষেত্র বা ক্লাইমেটিক জোন। দ্বিতীয়ত, ভারতের মেধাবী ‘হিউম্যান ক্যাপিটাল পুল’। তৃতীয়ত, ভারতে ‘ইজ অফ ডুয়িং বিজনেস’-এর জন্য সকল ক্ষেত্রে ক্রমবর্ধমান প্রচেষ্টা। চতুর্থত, ভারতে জৈব-প্রযুক্তি দ্বারা উৎপাদিত পণ্যের চাহিদা ক্রমাগত বাড়তে থাকা, আর পঞ্চমত, ভারতের জৈব-প্রযুক্তি ক্ষেত্র অর্থাৎ, আপনাদের সাফল্যগুলির ইতিবাচক ট্র্যাক রেকর্ড – এই পাঁচটি বড় কারণ মিলেমিশে ভারতের জৈব-প্রযুক্তি শক্তিকে অনেকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।
বন্ধুগণ,
বিগত আট বছরে সরকার দেশের এই শক্তিকে বাড়ানোর জন্য ক্রমাগত কাজ করে চলেছে। আমরা হলিস্টিক এবং ‘হোল অফ গভর্নমেন্ট অ্যাপ্রোচ’-এর ওপর জোর দিয়েছি। যখন আমি বলি – ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ’, তখন এটা ভারতের ভিন্ন ভিন্ন ক্ষেত্রের ওপরও প্রযোজ্য। একটা সময় ছিল যখন দেশে এই ভাবনা সকলের মনে শঙ্কা সৃষ্টি করেছিল, যখন হাতেগোনা কিছু সুবিধাজনক ক্ষেত্রকেই শক্তিশালী করা হত, আর বাকি ক্ষেত্রগুলিকে নিজেদের অবস্থায় ছেড়ে দেওয়া হত। আমরা এই ভাবনা বদলে দিয়েছি, এই দৃষ্টিকোণকে বদলে দিয়েছি। আজকের নতুন ভারতে প্রত্যেক ক্ষেত্রে তাদের উন্নয়নের মাধ্যমেই দেশের উন্নয়নে গতি সঞ্চারের চেষ্টা আমরা সফলভাবেই করে চলেছি। সেজন্য প্রত্যেক ক্ষেত্রের সঙ্গে থাকা, আর প্রত্যেক ক্ষেত্রের উন্নয়ন – এটাই আজ দেশের প্রয়োজন। সেজন্য আমরা প্রতিটি সম্ভাব্য পথকে এক্সপ্লোর বা আবিষ্কারের চেষ্টা করছি - যেগুলি আমাদের উন্নয়নের কর্মধারাকে মোমেন্টাম এনে দিতে পারে, গতিপ্রদান করতে পারে। ভাবনা এবং দৃষ্টিকোণে এই যে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনগুলি এসেছে, সেগুলি দেশকে সাফল্যও এনে দিচ্ছে। আমরা নিজেদের শক্তিশালী পরিষেবা ক্ষেত্রটিকে আরও শক্তিশালী করার ওপর জোর দিয়েছি। তেমনই পরিষেবা রপ্তানির ক্ষেত্রেও ২০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের নতুন রেকর্ড করেছি। আমরা পণ্য রপ্তানির ওপর জোর দেওয়ার ফলে ৪০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানির রেকর্ডও তৈরি করেছি। এই সবকিছুর পাশাপাশি আমাদের প্রচেষ্টা অন্যান্য ক্ষেত্রের জন্যও ততটাই গুরুত্ব দিয়ে কাজ করার মাধ্যমে এগিয়ে চলেছে। সেজন্যই আমরা বস্ত্র উৎপাদন ক্ষেত্রে পিএলআই স্কিম চালু করে সাফল্য পেয়েছি, তেমনই আমরা ড্রোন, সেমি-কন্ডাক্টর এবং হাই এফিশিয়েন্সি সোলার পিভি মডিউলার্স বিষয়েও বেশ কিছু প্রকল্প এগিয়ে নিয়ে চলেছি। জৈব-প্রযুক্তি ক্ষেত্রের উন্নয়নের জন্যও ভারত আজ যত পদক্ষেপ নিচ্ছে তা সত্যিই অভূতপূর্ব।
বন্ধুগণ,
সরকারের নানা প্রচেষ্টার মাধ্যমে গড়ে ওঠা আমাদের স্টার্ট-আপ ইকো-সিস্টেমে আপনারা খুব ভালোভাবেই সেই ইতিবাচক উদ্যোগগুলিকে অত্যন্ত বিস্তারিতভাবে অনুভব করতে পারেন। বিগত আট বছরে আমাদের দেশে স্টার্ট-আপগুলির সংখ্যা কয়েকশ’ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ইতিমধ্যেই ৭০ হাজারে পৌঁছে গেছে। আর এই ৭০ হাজার স্টার্ট-আপ প্রায় ৬০টি ভিন্ন ভিন্ন শিল্পক্ষেত্রে তৈরি হয়েছে। এগুলির মধ্যেও ৫ হাজার থেকেও বেশি স্টার্ট-আপ আজ জৈব-প্রযুক্তির সঙ্গে যুক্ত। অর্থাৎ, ভারতে প্রত্যেক চতুর্দশতম স্টার্ট-আপ জৈব-প্রযুক্তি ক্ষেত্রে গড়ে উঠছে। এগুলির মধ্যেও ১ হাজার ১০০-রও বেশি তো গত বছরই যুক্ত হয়েছে। আপনারা অনুমান করতে পারেন যে দেশের কত বেশি মেধাবী মানুষ দ্রুতগতিতে জৈব-প্রযুক্তি ক্ষেত্রের দিকে এগিয়ে চলেছে!
বন্ধুগণ,
বিগত বছরগুলিতে আমরা ‘অটল ইনোভেশন মিশন’, ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ আর ‘আত্মনির্ভর ভারত’ অভিযানের মাধ্যমে যে যে পদক্ষেপ নিয়েছি, সেগুলির মাধ্যমে দেশে জৈব-প্রযুক্তি ক্ষেত্রের সঙ্গে জড়িত সকলেই উপকৃত হয়েছেন। ‘স্টার্ট-আপ ইন্ডিয়া’ অভিযান শুরু করার পর থেকেই ক্রমে আমাদের জৈব-প্রযুক্তি ক্ষেত্রের স্টার্ট-আপগুলিতে বিনিয়োগকারীর সংখ্যা অভূতপূর্বভাবে নয়গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। জৈব-প্রযুক্তি ক্ষেত্রে ইনকিউবেটর্সদের সংখ্যা এবং মোট বিনিয়োগ বা টোটাল ফান্ডিং-ও সাতগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৪ সালে আমাদের দেশে যেখানে মাত্র ছয়টি বায়ো-ইনকিউবেটর ছিল, সেখানে আজ এগুলির সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ৭৫টি হয়ে গেছে। আট বছর আগে আমাদের দেশে মোট ১০টি জৈব-প্রযুক্তি প্রকল্প ছিল, আজ এগুলির সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ৭০০-রও অধিক হয়েছে। ভারত নিজের ফিজিক্যাল ইনফ্রাস্ট্রাকচারে এবং ডিজিটাল ইনফ্রাস্ট্রাকচারে অভূতপূর্ব বিনিয়োগ করছে। এই ক্রমাগত ফিজিক্যাল ও ডিজিটাল পরিকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমেও আমাদের দেশে বিগত বছরগুলিতে এই জৈব-প্রযুক্তি ক্ষেত্রটি অনেক উন্নত হয়েছে।
বন্ধুগণ,
আমাদের যুবশক্তির মধ্যে এই নতুন উৎসাহ, এই নতুন উদ্দীপনা সঞ্চারিত হওয়ার পেছনে একটি বড় কারণ রয়েছে। এই ইতিবাচকতা এজন্যই এসেছে কারণ দেশে এখন উদ্ভাবনের, রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের একটি আধুনিক সাপোর্ট সিস্টেম তাঁরা পাচ্ছেন বা তাঁদের জন্য তৈরি করে দেওয়া হচ্ছে। দেশে নীতি প্রণয়ন থেকে শুরু করে পরিকাঠামো উন্নয়ন পর্যন্ত সমস্ত ক্ষেত্রে সব ধরনের প্রয়োজনীয় সংস্কার আনা হচ্ছে। সরকারই সবকিছু জানে, সরকার একলাই সবকিছু করবে – এই ধরনের কর্মসংস্কৃতিকে পেছনে ফেলে এখন দেশ ‘সবকা প্রয়াস’-এর ভাবনাকে এগিয়ে নিয়ে চলেছে। সেজন্য ভারতে আজ অনেক ইন্টারফেস তৈরি করা হচ্ছে, আর বিরাক-এর মতো প্ল্যাটফর্মগুলিকে আরও শক্তিশালী করা হচ্ছে। স্টার্ট-আপ-এর জন্য যেমন ‘স্টার্ট-আপ ইন্ডিয়া’ অভিযান, মহাকাশ ক্ষেত্রের জন্য তেমনই আমরা ‘ইন-স্পেস’ কর্মসূচির আয়োজন করেছি, তেমনই ডিফেন্স স্টার্ট-আপদের জন্য ‘iDESK’ আইডেস্ক কর্মসূচির আয়োজন করেছি, তেমনই সেমি-কন্ডাক্টরের জন্য ভারতী সেমি-কন্ডাক্টর অভিযান শুরু করেছি, যুবক-যুবতীদের মনে উদ্ভাবনকে উৎসাহ যোগানোর চেষ্টা করেছি, তাহলে ভারতীয় সেমি-কন্ডাক্টর মিশন কিংবা নবীন প্রজন্মকে উদ্ভাবনে উৎসাহিত করার জন্য ‘স্মার্ট-আপ ইন্ডিয়া হ্যাকাথন’-এর আয়োজন কিংবা এই বায়োটেক স্টার্ট-আপ-এর মতো এক্সপোর আয়োজন – এই ধরনের নানা উদ্যোগের ভাবনাকে এগিয়ে নিয়ে নতুন নতুন সংস্থার মাধ্যমে সরকার শিল্প জগতের শ্রেষ্ঠ মেধাগুলির সঙ্গে সেগুলিকে একসঙ্গে, এক প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসছে। এতে দেশের আরও একটি বড় উপকার হচ্ছে। সাধারণতঃ, নিবিড় গবেষণা এবং অ্যাকাডেমিয়ার মাধ্যমেই যে কোনও দেশ নতুন নতুন ব্রেক-থ্রু পায়, যা প্রকৃতপক্ষে রিয়েল ওয়ার্ল্ড ভিউ হয়। সেক্ষেত্রেও শিল্প জগৎ সাহায্য করে, আর সরকার প্রয়োজনীয় পলিসি এনভায়রনমেন্ট এবং প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো প্রদান করে।
বন্ধুগণ,
আমরা বিশ্বব্যাপী মহামারী কোভিড-১৯-এর সম্পূর্ণ কালখণ্ডে দেখেছি যে যখন এই তিনটি মিলেমিশে একসঙ্গে কাজ করে তখন কেমন কম সময়ে অপ্রত্যাশিত পরিণাম আসে। প্রয়োজনীয় মেডিকেল ডিভাইস বা চিকিৎসা সাজসরঞ্জাম থেকে শুরু করে ক্রমে ম্যানুফ্যাকচারিং বা উৎপাদন এবং তারপর টিকাকরণ পর্যন্ত ভারতের ধারাবাহিক সাফল্য এটাই প্রমাণ করে দিয়েছে যা কেউ আগে কল্পনাও করতে পারেনি। তখন দেশে নানা ধরনের প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছিল। টেস্টিং ল্যাব নেই তাহলে পরীক্ষা-নিরীক্ষা কোথায় করাব? ভিন্ন ভিন্ন দপ্তর এবং বেসরকারি ক্ষেত্রের মধ্যে কো-অর্ডিনেশন কিভাবে হবে, ভারত কবে টিকা পাবে, টিকা পেলেও এত বড় দেশে সবাইকে টিকাকরণ করতে তো অনেক বছর লেগে যাবে! এরকম অনেক প্রশ্ন আমাদের সামনে বারবার উঠে এসেছে। কিন্তু আজ আপনাদের সকলের প্রচেষ্টায়, সকলের শক্তিতে ভারত সমস্ত আশঙ্কাগুলির যথাযথ উত্তর দিচ্ছে। আমরা ইতিমধ্যেই দেশবাসীকে প্রায় ২০০ কোটি ভ্যাক্সিনের ডোজ দিয়েছি। জৈব-প্রযুক্তি থেকে শুরু করে অন্যান্য ক্ষেত্রের মধ্যে সামঞ্জস্য রক্ষা করা, সরকার, শিল্পোদ্যোগ এবং অ্যাকাডেমিয়ার মধ্যে সামঞ্জস্য গড়ে তোলা, এই সকল ক্ষেত্রে সুপরিকল্পিত ও সময়ানুগ পদক্ষেপ ভারতকে বড় বড় সঙ্কট থেকে বাইরে বের করে এনেছে।
বন্ধুগণ,
আজ ভারতে জৈব-প্রযুক্তি ক্ষেত্রটি সবচাইতে বেশি চাহিদা সঞ্চালিত ক্ষেত্রগুলির মধ্যে অন্যতম। বিগত আট বছরে ভারতে ‘ইজ অফ লিভিং’সুনিশ্চিত করার জন্য যত অভিযান হয়েছে, সেগুলিও এই জৈব-প্রযুক্তি ক্ষেত্রের জন্য নতুন নতুন সম্ভাবনা তৈরি করেছে। আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের মাধ্যমে গ্রাম এবং গরীবের জন্য যেভাবে চিকিৎসা ব্যবস্থাকে সস্তা এবং সুলভ করে তোলা হয়েছে, এর ফলে দেশে স্বাস্থ্য পরিষেবা ক্ষেত্রের চাহিদা অনেকগুণ বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। বায়ো-ফার্মার জন্যও নতুন নতুন সুযোগ তৈরি হয়েছে। এই সাফল্যগুলিকে আমরা টেলি-মেডিসিন, ডিজিটাল হেলথ আইডি এবং ড্রোন টেকনলজির মাধ্যমে ব্যাপক করে তুলছি। আগামী বছরগুলিতে জৈব-প্রযুক্তির জন্য দেশে অনেক বড় কনজিউমার বেস গড়ে উঠতে চলেছে।
বন্ধুগণ,
ভারতে সেনাবাহিনীর পাশাপাশি কৃষি এবং শক্তিক্ষেত্রে যে বড় বড় পরিবর্তন আসছে তাও এই জৈব-প্রযুক্তি উৎপাদন ক্ষেত্রের জন্য নতুন আশা জাগিয়ে তুলেছে। ‘কেমিকেল ফ্রি’ বা রাসায়নিক মুক্ত কৃষিকে উৎসাহ যোগানোর জন্য ভারতে আজ বায়ো-ফার্টিলাইজার এবং অর্গ্যানিক ফার্টিলাইজার ক্ষেত্রকে অভূতপূর্ব উৎসাহ যোগানো হচ্ছে। কৃষিক্ষেত্রে আবহাওয়া পরিবর্তনের প্রভাবকে ন্যূনতম করার জন্য, দেশের সর্বত্র অপুষ্টি দূর করার জন্য বায়ো-ফর্টিফায়েড সিডস-এর উৎপাদনকে উৎসাহ যোগানো হচ্ছে। বায়ো-ফুয়েল এবং জৈব-জ্বালানি ক্ষেত্রে যে চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে, যে রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ইনফ্রাস্ট্রাকচার বিস্তার লাভ করছে, তা জৈব-প্রযুক্তির সঙ্গে যুক্ত ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগগুলির জন্য, স্টার্ট-আপগুলির জন্য একটি অনেক বড় সুযোগ গড়ে তুলছে। সম্প্রতি আমরা পেট্রোলে ইথানলের ব্লেন্ডিং বা মিশ্রণের লক্ষ্যমাত্রা যে ১০ শতাংশ রেখেছিলাম তা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সফল হয়েছি। ভারতে পেট্রোলে এখন ২০ শতাংশ ইথানল মিশ্রণের লক্ষ্য পূরণের নির্ধারিত সময় ২০৩০ থেকে পাঁচ বছর কম করে এখন ২০২৫ করে দেওয়া হয়েছে। এই সকল প্রচেষ্টা জৈব-প্রযুক্তির ক্ষেত্রে রোজগারেরও নতুন নতুন সুযোগ তৈরি করবে। এই সকল প্রচেষ্টা জৈব-প্রযুক্তি প্রফেশনালদের জন্য নতুন নতুন সুযোগ গড়ে দেবে। সরকার সম্প্রতি যে সুফলভোগীদের স্যাচুরেশন বা দরিদ্র থেকে দরিদ্রতম মানুষদের ১০০ শতাংশ ক্ষমতায়নের অভিযান শুরু করেছে, যেভাবে শুরু করেছে তা-ও জৈব প্রযুক্তি ক্ষেত্রটিকে নতুন শক্তি প্রদান করতে পারে। অর্থাৎ, জৈব প্রযুক্তি ক্ষেত্রের উন্নয়নের জন্য আমাদের সামনে অসীম সুযোগ ও সম্ভাবনা রয়েছে। ভারতে উৎপাদিত জেনেরিক ঔষধি, ভারতের টিকাকরণে ওপর যে আস্থা সারা বিশ্বে গড়ে উঠেছে, যত বড় লেভেলে আমরা কাজ করতে পারি তা জৈব-প্রযুক্তি ক্ষেত্রের জন্য একটি বড় অ্যাডভান্টেজ। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আগামী দু’দিন ধরে আপনারা এই জৈব-প্রযুক্তি ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত প্রতিটি সম্ভাবনা নিয়ে বিস্তারিতভাবে চুলচেরা বিশ্লেষণ করবেন। এখন বিরাক তার ১০ বছর পূরণ করেছে। আপনাদের সকলের প্রতি আমার অনুরোধ যাতে এই বিরাক যখন তার ২৫ বছর পূর্তি পালন করবে, তখন জৈব-প্রযুক্তি ক্ষেত্রটি কোন উচ্চতায় পৌঁছবে তা নির্ধারণ করতে নিজেদের লক্ষ্যগুলি এবং অ্যাকশনেবল পয়েন্টস-এর ওপরও এখন থেকেই কাজ করা উচিৎ। এই অসাধারণ অনুষ্ঠানটি আয়োজনের জন্য আমি দেশের যুব সম্প্রদায়কে এই জৈব-প্রযুক্তি ক্ষেত্রের দিকে আকর্ষিত করার জন্য আর দেশকে দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে বিশ্বের সামনে সম্পূর্ণ সামর্থ্য নিয়ে প্রস্তুত করার জন্য আমি আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই, অনেক অনেক শুভকামনা জানাই।
অনেক অনেক ধন্যবাদ!