মঞ্চে উপস্থিত ওডিশার মুখ্যমন্ত্রী শ্রী নবীন পট্টনায়েকজী, আমার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিমণ্ডলের সহযোগী শ্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানজী, শ্রী কিরেণ রিজিজুজী, ওডিশা সরকারের মন্ত্রী শ্রী অরুণ কুমার সাহুজী, শ্রী তুষার কান্তি বেহরাজী এবং দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত যুব বন্ধুরা!!
আমি আপনাদের সঙ্গে প্রযুক্তির মাধ্যমে যুক্ত হয়েছি। কিন্তু সেখানে যে আবহ, যে উৎসাহ ও উদ্দীপনা, যে প্রাণশক্তি – তা আমি অনুভব করতে পারছি।
আজ ওডিশায় নতুন ইতিহাস সৃষ্টি হ’ল। ভারতের ইতিহাসে প্রথম খেলো ইন্ডিয়া ইউনিভার্সিটি গেমস্ – এর সূত্রপাত হ’ল।
এটি ভারতের ক্রীড়া ইতিহাসে ঐতিহাসিক পর্যায় তো বটেই, ভারতীয় ক্রীড়া ভবিষ্যতেও এটি একটি বড় পদক্ষেপ।
আজ ভারত বিশ্বের সেই দেশগুলির তালিকায় সামিল হয়েছে, যে দেশগুলিতে এই স্তরে ইউনিভার্সিটি গেমস্ – এর আয়োজন হয়।
ওডিশার জনগণ এবং সেখানকার রাজ্য সরকারকে, এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য সারা ভারত থেকে আগত ৩ হাজারেরও বেশি যুব খেলোয়াড়কে এই প্রতিযোগিতার জন্য অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই।
বন্ধুগণ,
আগামী দিনে আপনাদের সামনে ২০০-রও বেশি স্বর্ণপদক জেতার লক্ষ্য তো রয়েছেই, তারচেয়েও গুরুত্বপূর্ণ আপনাদের ক্রীড়া নৈপুণ্যে উন্নতি, আপনার নিজের সামর্থ্যকে নতুন উচ্চতা প্রদান।
ভুবনেশ্বরে আপনারা পরস্পরের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় তো নামবেনই, নিজের সঙ্গেও প্রতিযোগিতায় নামবেন।
মনে রাখবেন, ভুবনেশ্বরে আপনারা যে পরিশ্রম করছেন, তা আপনাদের স্বপ্ন, আপনাদের পরিবারের স্বপ্নকে এবং ভারতের স্বপ্নকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
আপনাদের সামনে এই সমারোহে মশালবাহক দুতি চন্দজীর মতো অনেক প্রেরণাদায়ক ব্যক্তিত্ব রয়েছেন। আপনারা পদক জিতবেন এবং দেশকে সুস্থ থাকার জন্য প্রেরণাও যোগাবেন, এই ভাবনা নিয়ে মাঠে নামতে হবে।
বন্ধুগণ,
আজকের এই দিনে শুধুই একটি ট্যু্র্নামেন্ট শুরু হচ্ছে না, ভারতের ক্রীড়া আন্দোলনে পরবর্তী পর্যায়ের সূত্রপাত হচ্ছে।
খেলো ইন্ডিয়া অভিযান দেশের কোণায় কোণায় খেলাধুলোর প্রতি আকর্ষণ এবং নবীন প্রতিভা চিহ্নিতকরণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের জন্য এহেন দেশব্যাপী অভিযানকে এখন আরেকটি পর্যায় এগিয়ে নিয়ে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে চালু করা হয়েছে।
খেলো ইন্ডিয়া অভিযানের মাধ্যমে দেশে কেমন পরিবর্তন এসেছে, তা গত মাসে গুয়াহাটিতে দেখা গেছে।
বন্ধুগণ,
২০১৮ সালে যখন খেলো ইন্ডিয়া গেমস্ শুরু হয়েছিল, তখন এতে ৩ হাজার ৫০০ জন খেলোয়াড় অংশগ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু মাত্র তিন বছরে এতে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে ৬ হাজার ছাড়িয়েছে।
শুধু সংখ্যা বৃদ্ধি নয়, খেলা এবং খেলোয়াড়দের মান ক্রীড়া পরিকাঠামোর মানেও নিরন্তর উন্নতি হচ্ছে। এ বছর খেলো ইন্ডিয়া স্কুল গেমস্ – এ ৮০টি নতুন রেকর্ড তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে ৫৬টি রেকর্ড আমাদের ছাত্রীরা গড়েছে।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হ’ল এই অভিযানের মাধ্যমে যেসব নতুন প্রতিভা উঠে আসছে, তারা অধিকাংশই গ্রাম, ছোট ছোট টিয়ার-৩ ও টিয়ার-৪ শহরের গরিব পরিবারের সন্তান।
এই প্রতিভাগুলি কখনও সঠিক ব্যবস্থাপনা ও সুযোগের অভাবে এগোতে পারতো না।
এখন এরা সঠিক সুযোগ-সুবিধা পেয়ে কম বয়সেই জাতীয় স্তরে ক্রীড়া প্রদর্শনের সুযোগ পাচ্ছেন।
বন্ধুগণ,
বিগত ৫-৬ বছরে ভারতে ক্রীড়া ক্ষেত্রে উন্নতি এবং অংশগ্রহণ বৃদ্ধির জন্য অনেক ইতিবাচক প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে। প্রতিভা চিহ্নিতকরণ, প্রশিক্ষণ, চয়ন প্রক্রিয়া প্রত্যেক ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা বৃদ্ধির ফলে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার মাঠে ভারতের প্রদর্শন অনেক ভালো হয়েছে।
খেলো ইন্ডিয়া অভিযান নবীন প্রতিভা চিহ্নিতকরণের একটি বড় মাধ্যম হয়ে উঠেছে, এতে নির্বাচিত যুব ক্রীড়াবিদদের প্রতি বছর প্রায় ৬ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত সাহায্য করা হচ্ছে। এছাড়া, তাঁদের দেশের ১০০টিরও বেশি অ্যাকাডেমিতে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। এখনও পর্যন্ত এমন প্রায় ৩ হাজার খেলোয়াড়কে বেছে নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি একটি খেলো ইন্ডিয়া মোবাইল অ্যাপ-ও চালু করা হয়েছে।
এভাবে অলিম্পিক পোডিয়াম স্কিমের মাধ্যমে দেশের প্রতিভাসম্পন্ন খেলোয়াড়দের উচ্চ স্তরে মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে ইতিমধ্যেই দেশে প্রায় ১০০ জন শীর্ষ অ্যাথলিটকে সাহায্য করা হয়েছে।
বন্ধুগণ,
এরকম অনেক খেলোয়াড় আগামী টোকিও অলিম্পিকে অংশগ্রহণ করবেন। এই প্রকল্প দ্বারা উপকৃত খেলোয়াড়েরা ইতিমধ্যেই কমনওয়েলথ গেমস্, এশিয়ান গেমস্, এশিয়ান প্যারা গেমস্ এবং ইয়ুথ অলিম্পিকের মতো প্রতিযোগিতায় দেশকে ২০০টিরও বেশি পদক এনে দিয়েছে। শুধু তাই নয়, প্রতিভাবান ক্রীড়া ব্যক্তিত্বদের জন্য আজীবন পেনশনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
বন্ধুগণ,
খেলোয়াড়েরা নিজেদের শ্রেষ্ঠ প্রদর্শনের দিকে মনোনিবেশ করুন, বাকি চিন্তা দেশ করছে। পড়াশুনার পাশাপাশি, ছাত্রছাত্রীরা যাতে খেলাধূলাতেও উন্নতি করে এবং সুস্থসবল থাকে, সেই চেষ্টা করা হচ্ছে। আমাদের যুব খেলোয়াড়েরা সবধরনের পেশার জন্য যাতে সুস্থ থাকে, সেদিকে লক্ষ্য রেখে রাষ্ট্রীয় ক্রীড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হচ্ছে।
বন্ধুগণ,
দেশে যুবসম্প্রদায়ের ফিটনেস থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক ক্রীড়ায় ভারতের সাফল্য অর্জনের জন্য আমাদের প্রত্যেককেই পূর্ণ সামর্থ্য দিয়ে চেষ্টা করতে হবে।
এখন আমি প্রথম খেলো ইন্ডিয়া ইউনিভার্সিটি গেমস্ – এর আনুষ্ঠানিক সূচনা ঘোষণা করছি!!
আপনাদের সবাইকে আরেকবার অনেক অনেক শুভেচ্ছা।
শ্রদ্ধেয় শ্রী নবীনজীর নেতৃত্বে ওডিশা সরকার এত বড় সমারোহের দায়িত্ব পালনের জন্য হৃদয় থেকে ধন্যবাদ জানাই। জয় জগন্নাথের জয়জয়কার করে তাঁদের অভিনন্দন জানাই। আসুন, জগন্নাথের কৃপা সঙ্গে নিয়ে আমরা জগৎ জয়ের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ি। এই শুভেচ্ছাই আমি আপনাদের সবাইকে জানাই।
অনেক অনেক ধন্যবাদ।