ওঁ শান্তি!
মাননীয়া রাজযোগিনী দাদি রতন মোহিনীজি, ব্রহ্মকুমারী বর্ষীয়ান সদস্যবৃন্দ এবং ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসা আমার প্রিয় ভাই ও বোনেরা!
এটা আমার নিদারুণ সৌভাগ্য যে আপনাদের মধ্যে বহুবার আমি আসার সুযোগ পেয়েছি। যখনই আমি আপনাদের মধ্যে আসি, আমার মধ্যে এক আধ্যাত্মিক অনুভূতির জন্ম নেয়। গত কয়েক মাসে এই নিয়ে দ্বিতীয়বার ব্রহ্মকুমারীদের অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার সুযোগ আমার হল। গত ফেব্রুয়ারি মাসে আপনারা যখন ‘জল জন অভিযান’-এর সূচনা করলেন তখন আমাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। আমি তখন বিস্তারিত বলেছিলাম যে ব্রহ্মকুমারীদের সঙ্গে আমার সম্পর্ক উত্তরোত্তর কিভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এটা ভগবানের আশীর্বাদে এবং রাজযোগিনী দাদিজির স্নেহের জন্যই।
আজ সুপার স্পেশালিটি চ্যারিটেবল গ্লোবাল হাসপাতালের এখানে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হল। সেইসঙ্গে শিবমণি হোম এবং নার্সিং কলেজের সম্প্রসারণের সঙ্গে যুক্ত কাজও চালু হল। ব্রহ্মকুমারী সংগঠন ও তার সমস্ত সদস্যবৃন্দকে এজন্য আমি আন্তরিক অভিনন্দন জানাই।
বন্ধুগণ,
স্বাধীনতার ‘অমৃতকাল’-এ ভারতের সমস্ত সামাজিক ও ধর্মীয় সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। স্বাধীনতার এই ‘অমৃতকাল’ দেশের প্রত্যেক নাগরিকের দায়িত্বের সঙ্গে সম্বন্ধযুক্ত। এই কর্তব্যের অর্থ, আপনার দায়িত্বভারের শতকরা ১০০ শতাংশ আপনাকে দিতে হবে! সেইসঙ্গে, দেশ এবং সমাজের স্বার্থে আপনাদের চিন্তা এবং দায়বদ্ধতার সম্প্রসারণের বিষয়টিও সম্পৃক্ত। এর অর্থ হল, আমাদেরকে ভাবতে হবে পূর্ণ নিষ্ঠার সঙ্গে কর্তব্য পালনের পাশাপাশি দেশের জন্য আমরা আর কি করতে পারি।
আপনারা সকলেই এই সময়কালের দায়িত্বভার পালনের এক উৎসাহস্বরূপ। আধ্যাত্মিক সংগঠন হিসেবে ব্রহ্মকুমারীদের সমাজের নৈতিক মূল্যবোধকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে কাজ করতে হবে। সেইসঙ্গে, সমাজসেবা, বিজ্ঞানের প্রসার, শিক্ষা এবং সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আপনাদেরকে সম্পূর্ণভাবে নিয়োজিত হতে হবে। আপনাদের মাউন্ট আবু-তে এই গ্লোবাল হাসপাতাল গবেষণা কেন্দ্রটি এক দৃষ্টান্তস্বরূপ। আমি জানতে পেরেছি যে এই সংগঠন স্থানীয় গ্রামগুলিতে স্বাস্থ্য শিবির এবং রক্তদান শিবিরের আয়োজন করে থাকে। এখন এই এলাকায় সুপার স্পেশালিটি চ্যারিটেবল গ্লোবাল হাসপাতাল স্বাস্থ্য পরিষেবার উন্নতিসাধনে সহায়ক হবে। মানবতার এই প্রয়াসের জন্য আপনাদের সকলকে ধন্যবাদ।
বন্ধুগণ,
আজ সমগ্র দেশ প্রত্যক্ষ করছে যে স্বাস্থ্য পরিষেবার ক্ষেত্রে এক রূপান্তর ঘটেছে। গত ৯ বছরে এই প্রথমবার দেশের দরিদ্রতম মানুষ অনুভব করেছেন যে দেশের হাসপাতালগুলি তাঁদের জন্যও খোলা। ‘আয়ুষ্মান ভারত যোজনা’ এক্ষেত্রে এক বিরাট ভূমিকা পালন করেছে। ‘আয়ুষ্মান ভারত যোজনা’ কেবলমাত্র সরকারি হাসপাতালেই নয়, বেসরকারি হাসপাতালের দরজাও দরিদ্রদের জন্য খুলে দিয়েছে।
আপনারা নিশ্চয়ই এটা জানেন যে এই প্রকল্পে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত চিকিৎসার খরচ সরকার বহন করে। এই প্রকল্পে দেশের ৪ কোটিরও বেশি মানুষ উপকৃত হয়েছেন। ‘আয়ুষ্মান ভারত’ প্রকল্প যদি না থাকত তাহলে তাঁদের ৮০ হাজার কোটি টাকা চিকিৎসার জন্য নিজেদের পকেট থেকে খরচ করতে হত। ঠিক তেমনই, দরিদ্র এবং মধ্যবিত্ত মানুষ জনঔষধি কেন্দ্রগুলিতে সুলভ মূল্যে ওষুধ পাওয়ায় প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় করতে পারবেন।
আপনাদের ব্রহ্মকুমারী সংস্থান শাখা যা দেশের গ্রামে-গ্রামে ছড়িয়ে রয়েছে, তারা যদি দরিদ্রদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সেবাকর্ম করতে পারে, যদি তারা দরিদ্র মানুষদের জানায় যে কোথায় সুলভ মূল্যের ওষুধ পাওয়া যায়, তাহলে তারা একটি বড় ভূমিকা পালন করতে পারবে। যে ওষুধের মূল্য বাজারে ১০০ টাকা, এসব কেন্দ্রগুলিতে তা ১০-১৫ টাকার মধ্যে পাওয়া যায়। তাহলে বুঝতেই পারছেন এক্ষেত্রে গরীবদের কি অসাধারণ সেবাকর্ম করা সম্ভব। ফলে, আমাদের ব্রহ্মকুমার এবং ব্রহ্মকুমারীরা সারা দেশজুড়ে গড়ে ওঠা জনঔষধি কেন্দ্র সম্বন্ধে মানুষের মধ্যে সচেতনতার জায়গা তৈরি করুন, এটাই কামনা করি। যাঁরাই আপনাদের সংস্পর্শে এসে একথা জানতে পারবেন, তাঁরা আপনাদের আশীর্বাদ করবেন।
উদাহরণস্বরূপ, ধরুন পরিবারের একজন প্রবীণ মানুষ মধুমেহ রোগে ভুগছেন। তাহলে তাঁর ওষুধের খরচ ১,২০০-১,৫০০-২,০০০ টাকা পর্যন্ত হওয়া কাম্য। এই ওষুধই যদি জনঔষধি কেন্দ্র থেকে কেনা যায়, তাহলে সেই খরচ ১,০০০-১,৫০০ টাকা থেকে কমে ১০০ টাকায় দাঁড়াবে। তাহলে বুঝুন, তাঁর জীবনে এটা কতটা উপকারে লাগতে পারে। এই বার্তাই আপনারা সর্বত্র পৌঁছে দিন।
বন্ধুগণ,
স্বাস্থ্য পরিষেবা ক্ষেত্রে আপনারা দীর্ঘদিন ধরে যুক্ত আছেন। আপনারা জানেন যে স্বাস্থ্যক্ষেত্রে ডাক্তার, নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মীর অভাবের ফলে এই ক্ষেত্রটিকে কি ধরনের চ্যালেঞ্জের সামনে দাঁড়াতে হয়। গত ৯ বছরে এই অভাব পূরণ করার অভূতপূর্ব কাজ হয়েছে। গড়ে গত ৯ বছরে প্রত্যেক মাসে একটি করে নতুন মেডিকেল কলেজ খোলা হয়েছে। ২০১৪-র আগের ১০ বছরে ১৫০টিরও কম মেডিকেল কলেজ তৈরি হয়েছিল।
গত ৯ বছরে ৩০০-রও বেশি নতুন মেডিকেল কলেজ দেশে তৈরি হয়েছে। ২০১৪-র আগে যেখানে এমবিবিএস-এ আসন সংখ্যা ছিল ৫০ হাজারের মতো, আজ দেশে সেই আসন সংখ্যা ১ লক্ষ ছাড়িয়ে গেছে। ২০১৪-র আগে স্নাতকোত্তর আসন ছিল ৩০ হাজারের মতো যা এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৫ হাজারেরও বেশি। অর্থাৎ, উদ্দেশ্য যদি মহৎ হয়, সমাজে যদি সেবার অনুভূতি থেকে থাকে, তাহলে সঙ্কল্প গ্রহণ এবং তা সম্পাদন করা কঠিন কিছু নয়।
বন্ধুগণ,
স্বাস্থ্যক্ষেত্রে ভারত সরকার যেসব প্রয়াস নিচ্ছে আগামীদিনে তার প্রভাব প্রত্যক্ষ করা যাবে। স্বাধীনতার পর সাত দশকে দেশে যত ডাক্তার তৈরি হয়েছে, সেই পরিমাণ ডাক্তার আগামী এক দশকে তৈরি হবে। আমাদের লক্ষ্য কেবলমাত্র মেডিকেল কলেজ বা ডাক্তার তৈরি করাই নয়, নার্সিং কলেজগুলির সম্প্রসারণও শুরু হয়েছে।
ভারত সরকার নার্সিং ক্ষেত্রে যুব সম্প্রদায়কে নতুন সুযোগ করে দিচ্ছে। সম্প্রতি সরকার দেশে ১৫০টিরও বেশি নতুন নার্সিং কলেজ তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর মধ্যে ২০টিরও বেশি নতুন নার্সিং কলেজ তৈরি হবে রাজস্থানে। এর ফলে, সুপার স্পেশালিটি চ্যারিটেবল গ্লোবাল হাসপাতালও অনুরূপভাবে উপকৃত হবে।
বন্ধুগণ,
ভারতে হাজার হাজার বছর ধরে শিক্ষা, দরিদ্র সেবা এবং সমাজের অসহায়দের পরিষেবা যোগানোর দায়িত্ব নিয়েছে আমাদের ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক সংগঠনগুলি। গুজরাটে ভূমিকম্পের সময় এবং তার পূর্বেও আমাদের ভগিনীদের নিষ্ঠা এবং কঠোর পরিশ্রমের চিত্র আমি প্রত্যক্ষ করেছি। আমি খুব কাছ থেকে আপনাদের কাজ দেখেছি। কচ্ছ ভূমিকম্পে আপনাদের সেবাকর্ম আজও আমি স্মরণ করি যা আজও উৎসাহের সঞ্চার করে।
একইভাবে নেশামুক্তি ঘটানো, পরিবেশ সংরক্ষণ অথবা ‘জল জন অভিযান’ – এই সমস্ত ক্ষেত্রেই আপনাদের প্রচারাভিযান দেখিয়েছে যে একটা সংগঠন জনসচেতনতা তৈরিতে কতখানি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। বিশেষত, যখনই আমি আপনাদের কাছে এসেছি, দেশের জন্য আমার প্রত্যাশা পূরণে কোনও চাহিদা আপনারা অপূর্ণ রাখেননি।
দেশজুড়ে স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসব পালনে আপনারা নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে দেশের জন্য কাজ করতে মানুষকে আপনারা যেমন উদ্বুদ্ধ করেছেন, ঠিক তেমনই বিশ্বজুড়ে যোগ শিবির অথবা দাদি জানকিজি যখন ‘স্বচ্ছ ভারত অভিযান’-এর দূত হলেন, তখন আপনারা ভগিনীরা সমবেত হয়ে ‘স্বচ্ছ ভারত’-এর দায়িত্বভার নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন।
আপনাদের উদ্যোগ এবং নিষ্ঠার কারণেই ব্রহ্মকুমারীদের প্রতি আমার বিশ্বাস বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু জানেন তো, বিশ্বাস যখন বাড়ে তখন প্রত্যাশাও বাড়ে। স্বভাবতই আপনাদের কাছে আমার প্রত্যাশাও বেশ খানিকটা বৃদ্ধি পেয়েছে। আজ শ্রী অন্ন অর্থাৎ, মোটা দানাশস্য নিয়ে বিশ্বব্যাপী ভারত এক আন্দোলন গড়ে তুলছে। দেশজুড়ে আমরা প্রাকৃতিক চাষের অভিযানকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। নদীগুলিকে আমাদের পরিষ্কার রাখতে হবে ও ভূগর্ভস্থ জল আমাদের সংরক্ষণ করা দরকার। এই সমস্ত বিষয়গুলি আমাদের হাজার বছরের সংস্কৃতি ও ধারার সঙ্গে কোনও না কোনভাবে সম্পৃক্ত। ফলে, এইসব ক্ষেত্রে আপনাদের কাছ থেকে যত বেশি সহযোগিতা পাওয়া যাবে, দেশের সেবাকর্মের কাজ ততই সর্বাত্মক হয়ে উঠতে পারবে।
আমি বিশ্বাস করি যে দেশ গড়ার কাজে উদ্ভাবনী চিন্তার সঙ্গে সম্পৃক্ত নতুন নতুন বিষয়গুলিকে ব্রহ্মকুমারীরা এগিয়ে নিয়ে যাবেন। উন্নত ভারত গড়ে তোলার মধ্য দিয়েই ‘সর্বে ভবন্তু সুখিনঃ’ - এই মন্ত্র বিশ্বের জন্য আমরা সম্পাদন করতে পারব। জি-২০ শিখর সম্মেলনে এখানে আমরা তা নিয়ে আলোচনা করেছি। বিশ্ব যখন মহিলাদের উন্নতির কথা বলছে, জি-২০ শিখর সম্মেলনে আমরা তখন মহিলা-চালিত উন্নয়নের ওপর জোর দিচ্ছি। অর্থাৎ, মহিলা-চালিত উন্নয়নের লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। আপনাদের সংগঠনের প্রতি আমার পূর্ণ নিষ্ঠা রয়েছে। আপনাদের সংগঠন সর্বত্র ছড়িয়ে রয়েছে। দেশের অগ্রাধিকারগুলিকে সামনে রেখে পূর্ণ শক্তি ও উদ্যমের সঙ্গে আপনারা কাজ করুন যাতে দেশের উন্নতিসাধন হয়।
এই কামনা নিয়েই আমি আমাকে এখানে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য আপনাদের সকলকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। আমার পক্ষে যতটা সম্ভব আমি আপনাদের মধ্যে থাকার চেষ্টা করব কারণ, প্রত্যেকবারই আমি এখানে এসে নতুন কিছু অর্জন করি। আপনাদের আশীর্বাদ, উৎসাহ ও শক্তি দেশের জন্য কাজ করতে আমাকে নতুনভাবে প্রাণশক্তি যোগায়। এখানে আসবার এই সুযোগ করে দেওয়ার জন্য আপনাদেরকে ধন্যবাদ।
ওঁ শান্তি!
প্রধানমন্ত্রী মূল ভাষণটি হিন্দিতে দিয়েছিলেন